চেকমেট পর্ব ১৯

চেকমেট পর্ব ১৯
সারিকা হোসাইন

রূপকথার ডায়েরি পড়ার পর থেকে সারফরাজ এর পুরো দুনিয়া যেনো উলটপালট হয়ে গিয়েছে।মাথাটা ইতোমধ্যে ঘিলুশূন্য হয়েছে।মস্তিষ্ক তার বোধ বুদ্ধি সব হারিয়েছে।বুকের টনটনে ব্যাথাটা আরো কয়েক গুণ টনটনে হয়ে উঠলো।এবার বোধ হয় হৃদয়ের মৃত্যু হবে।রূপকথা এভাবে সারফরাজ কে মনে রেখেছে এটা সারফরাজ এর কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পাওয়া।কই সারফরাজ তো কখনো রূপকথাকে এভাবে ভাবে নি।সারফরাজ এর ভুলভাল ভাবনাকে হঠাৎ হৃদয়ের ভেতরের আরেক সত্তা খুব করে ধমকে উঠলো সেই সাথে কড়া শাষিয়ে বলে উঠলো―
“খবরদার তুই মিথ্যে বলছিস।এই মেয়ের থেকে আরো শত গুন তুই মনে করেছিস তাকে।শুধু কি তাই?যদি নাই ভাববি তবে তাকে ঘিরে এতো আয়োজন কেনো করেছিস?কেনো মিথ্যে কল্পনায় হাজারো ক্যানভাসে পেপার ঠুসে রঙ তুলির আঁচড়ে ছবি একে ছিলি?কেনো বারবার নিজের কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে চেয়েছিলি?আছে সমস্ত কেনোর জবাব?

মনের কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না সারফরাজ।রূপকথার টানে কতো শত বার জাহাজের খালাসীর বেশে এই দেশের মাটিতে পা রেখেছে তার হিসেব কেউ রাখেনি।সারফরাজ টের পেয়েছে সুফিয়ান তাকে এড়িয়ে চলছে তবুও সারফরাজ ভিক্ষুকের মতো এটা সেটা নিয়ে সুফিয়ান এর দরজায় কড়া নেড়েছে।বহু অনুনয় বিনয় এর পর আট বছর বয়সের রূপকথাকে একবার দূর থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলো বটে।কিন্তু সুফিয়ান এর কড়া নির্দেশ ছিলো__

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ও তোকে ভুলে গেছে সারফরাজ।পুরোনো অতীত আর টেনে বার করিস না।যে ভালো আছে তাকে ভালো থাকতে দে।আর তোর সাথে আমাকে কেউ দেখে নিলে কেলেঙ্কারি হবে।তাই অনুরোধ করবো আমার কাছে আর আসিস না।
সুফিয়ান চৌধুরী কি জানে এহেন নিষ্ঠুর কথায় সারফরাজ এর বুকের ভেতর কেমন বিষাক্ত কষ্টের উৎপত্তি হয়েছিলো?রূপকথা ভালো আছে এটা ভেবেই সারফরাজ নিজেকে দমিয়ে রেখেছিলো।কিন্তু মনটা বড্ড বেয়াড়া।সে কোনো শাসন বারণ বুঝে না।মানে না।মানতে চায় ও না।সারফরাজ এর মাঝে মাঝেই মনে হয়েছে সুফিয়ান এর কাছে রূপকথাকে তুলে দেয়া তার চরম বোকামি হয়েছে।ওই বাচ্চা মেয়েটা তার সুখ শান্তির ওষধ।যেদিন থেকে ওই মেয়ে সারফরাজ কে ফেলে চলে গেছে সেদিন থেকে নিষ্ঠুর হুতাশনে জ্বলে পুড়ে মরছে সারফরাজ।কেউ দেখেনি সেই ভয়ানক আগুন।কেউ হৃদয়ের আঙিনায় এক মগ জল পর্যন্ত ঢেলে শীতল করেনি সেই দগদগে অঙ্গার।সামান্য একটা অপরিচিত বাচ্চার জন্য কিসের এতো মায়া?কিসের টান?কিসের ভালোবাসা?

সারফরাজ আবারো খুলে ডায়েরির পৃষ্ঠা।গোটা গোটা ভুলভাল লিখা গুলো আরেকবার পড়ে সে।অনিন্দ্য ভালো লাগায় হৃদয় কেমন ফুলে ফেঁপে উঠতে চাইছে।নিষ্ঠুর নির্দয় মানবটা আজ কেমন যেনো কোমল ,ভালোবাসা পরায়ণ আর দরদী হয়ে উঠলো।মনের অজান্তে সেই বাদামি মলাটের ডায়েরি বুকে চেপে ধরে সারফরাজ।চোখ বুজে গভীর শ্বাস টানে।এরপর বিড়বিড় করে আওড়ায়
“তোমার আর আমার ভেতরকার এই টানের উৎপত্তি কোথা থেকে তা আমি ঠিক খুঁজে বের করবো রূপকথা।জাস্ট গিভ মি সাম টাইমস।
হঠাৎ দরজায় নক হবার শব্দে ডায়েরি বালিশের তলায় রেখে উঠে গেলো সারফরাজ।দরজা খুলতেই নজরুলের দেখা মিললো।সারফরাজ কে দেখতে পেয়ে হাতে থাকা চাবি খানা দিয়ে বলে উঠলো
“কর্নেল সাহেবের জিপ গাড়ির চাবি নাও সারফরাজ।এখনো আগের মতোই পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটে।আব্বা আর আমি মিলে গাড়িটাকে বহুত যত্নে আগলে রেখেছি।কর্নেল সাহেবের খুব শখের গাড়ি কি না!
সারফরাজ চাবি নিয়ে কিছুক্ষণ নীরব রইলো।এরপর বললো

“এসব পুরাতন জিপ গাড়িতে আমার চলবে না নজরুল ভাই।আজকের মধ্যেই আমার নতুন গাড়ি চাই।খুজ নাও মার্কেটের সবচেয়ে দামি গাড়ি কোনটা।
নজরুল সামান্য ইতস্তত করে বলে উঠলো
“খামোখা এতো টাকা খরচের কি দরকার?তুমি না বললে দুদিন পর চলে যাবে?
“নিয়ত পাল্টেছি নজরুল ভাই।জীবনের গতি নির্ধারণ না করে আমি এক চুল নড়বো না এখান থেকে।উদ্দেশ্য হীন জীবনটার একটা লাগাম ধরার মানুষ দরকার।
নজরুল বুঝলো সারফরাজ কোন মানুষের কথা বলছে।তাই সামান্য দুস্টু হেসে বললো
“ভাবি সাহেবার দেখা খুব শীঘ্রই পাবো মনে হচ্ছে।
“ভাবি সাহেবা না নজরুল ভাই।বলো রানী সাহেবা।
নজরুল অল্প মাথা চুলকে বললো
“কোথায় সেই সাম্রাজ্য?
“ক্যালিফোর্নিয়া।

নজরুল আর কথা বাড়ালো না।সারফরাজ সম্পর্কে ইতোমধ্যে সে অনেক কিছুই জেনে গিয়েছে ।সারফরাজ এর কথাবার্তা,চালচলন কিছুই আর পাঁচ জন মানুষের মতো নয়।মুহূর্তে মুহূর্তে তার ফোনে ফোন আসে।তাদের সাথে পট পট করে ইংরেজিতে কথা বলে সারফরাজ।কথার মূল বিষয়বস্তু ই থাকে ওয়েপন,ড্রাগস আর মার্ডার নিয়ে।ইন্টার পাশ নজরুল পুরো ইংরেজি না বুঝলেও কিছুটা ঠিক বুঝতে পারে।বাঙালি মানুষের ইংরেজি উচ্চারণ এমন নয়।সারফরাজ যখন ইংরেজি তে কথা বলে নজরুল অপলক তাকিয়ে ওই লালচে ঠোঁট জোড়া আর চোখের ভঙ্গি দেখে।কি মাধুর্য তাতে।যেনো নজরুলের সামনে সারফরাজ নয় কোনো বিদেশি বসে আছে।নজরুল মনে করে সারফরাজ এর মধ্যে যেনো কর্নেল সাদাফ শাহজাইন ফিরে এসেছে।কি তেজী আর গাম্ভীর্য পূর্ন ব্যাক্তিই না ছিলো মানুষটা!হঠাৎই কর্নেল সাহেবের খন্ডিত দেহাংশের কথা মনে পড়তেই কেঁপে উঠে নজরুল।নিজের চিন্তা ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে এলোমেলো গলায় নজরূল বলে

“গাড়ি কিনতে চাইলে আমার সাথে চলো দুপুরের পর।আমি আসি।আমার কাজ আছে।
আর দাঁড়ালো না নজরুল।কর্নেল সাহেব আর মায়া চৌধুরীর জন্য তার মন ভেঙে টুকরো টুকরো হচ্ছে।মেয়ে মানুষের মতো কান্না পাচ্ছে তার।মায়ের মত মানুষ টা কোথায় এমন হারালো যে আর খুঁজেই পাওয়া গেল না?কোন অভিশাপে এমন নিঃশেষ হলো এই মায়াকুঞ্জ?এমনটি কি হবার কথা ছিলো?যেই কর্নেল এর চোখের দিকে তাকিয়ে একটা কুকুর পর্যন্ত ঘেউ করতে পারেনি তাকে এমন ভয়ানক নিষ্ঠুর মৃত্যু কেউ কিভাবে দিয়েছিলো?
নজরুল চলে যেতেই তপ্ত শ্বাস ছাড়লো সারফরাজ।এরপর বিদেশ থেকে আনা চকলেটস আর হেয়ার ব্যান্ড,ক্লিপ গুলো রূপকথা ব্যাগে রেখে চেইন আটকে কাবার্ড এর উপর রেখে দিলো।ঠোঁট কামড়ে মনে মনে কিছু একটা ভেবে মুচকি দুস্টু হাসলো সারফরাজ।এরপর চলে গেলো শাওয়ার নিতে।এই মুহূর্তে অভিরূপ এর দর্শন খুব প্রয়োজন।

সবেই মাগরিবের আজান পড়েছে।চারপাশ আবছা অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে।শীতল ফিনফিনে হাওয়া রূপকথার কক্ষের বেলকনি গলিয়ে কক্ষে এসে হানা দিচ্ছে।সেই হাওয়ার মোলায়েম স্পর্শে ঈষৎ কেঁপে উঠলো রূপকথা।ঘুমের ঘোরে কম্পিত শীতল হাতে গায়ের কথাটা আরেকটু ভালো করে গায়ে চেপে থরথরিয়ে কেঁপে উঠলো সে।শরীরটা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।জরের ঘোরে বারবার মনে হচ্ছে ওই ভয়ানক লোকটা লাঠি নিয়ে তার দিকে তেড়ে আসছে।লিচুর ডাল ভেঙে পড়ে যাবার ট্রমা থেকে এখনো বের হতে পারছে না সে।এদিকে শিউলি ন্যালির দিকে চোখ গরম করে বারবার জিজ্ঞেস করছেন
“হুট করে কি হলো বল তো?কোন বন্ধুর বাড়ি গেছিলি তোরা?
ন্যালি জবাব দিতে পারেনা।শুধু ইতিউতি তাকিয়ে আমতা আমতা করে।শিউলি কখনো যদি জানতে পারে ন্যালি লিচুর লোভে রূপকথাকে গাছে তুলেছে আর বাড়ির দারোয়ান এভাবে লাঠি নিয়ে এসেছে তবে ন্যালির পিঠের ছাল চামড়া এখনই গুটিয়ে নেবে শিউলি বেগম।এতেই শেষ নয়।জিভটা পর্যন্ত ছিঁড়ে নিতে এক মুহূর্ত কাল বিলম্ব করবেন না।তাই ভয়ে ভয়ে এক মিথ্যে সাজালো ন্যালি।

“তনয়া দের বাড়িতে গেছিলাম মা।তনয়ার ভাইয়ের ছোট বিদেশি কুকুরটা আছে না?কি যেনো নাম?ওহ হ্যা মনে পড়েছে ।সুলতান।সেই সুলতান হুট করে রূপকথা কে কামড়াতে এসেছে।এটা দেখে ভয়ে ওই বাড়িতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো সে।তুমি তো জানোই তোমার ভাতিজির এই বাতিক সম্পর্কে।পানি টানি ঢেলে হুশ তো করলাম।কিন্তু ওখানেই জ্বরটা এসে গেলো।ভয় পেয়েছে বুঝলে?
কথা গুলো ধীরে ধীরে বলে কেটে পড়তে চাইলো ন্যালি।কিন্তু শিউলি ভয়ার্ত গলায় বলল
“যদি ভাইজান ফোন দেয় কি বলবো?
ন্যালি উত্তর করার আগেই শিউলির ল্যান্ডলাইনে ফোন এলো।আকস্মিক শব্দে কেঁপে উঠলো ন্যালি শিউলি দুজনেই।এরপর কম্পিত বক্ষে ফোন কানে তুলতেই ওপাশ থেকে রেখার বিচলিত কন্ঠ পাওয়া গেলো
“রূপকথা কোথায় আপা?কতবার ফোন দিচ্ছি তুলছেই না।
রেখাকে থামিয়ে আশ্বস্ত করে শিউলি মিইয়ে আসা গলায় বললেন

“ঘরেই আছে রেখা।বাইরে ঘুরতে গেছিলো ন্যালির সাথে।মাত্র এসে ঘুমুলো।আমাকে বলেছে যাতে ডেকে ডিস্টার্ব না করি।ফোন সাইলেন্ট করে ঘুমুচ্ছে বোধ হয়।উঠলে তোমাকে কল করতে বলবো।কেমন?
মেয়ে ঘুমুচ্ছে শুনে রেখা স্বাভাবিক গলায় বলে উঠলো
“না না আপা থাক ঘুমাক।পড়াশোনার প্রেসারে এই কদিন ঘুমাতে পারে নি।আমি নাহয় কাল কথা বলে নেবো ।রাখছি।
রেখা ফোন কাটতেই স্বস্তির শ্বাস ফেললেন শিউলি।এরপর চশমার উপর দিয়ে মেয়ের দিকে বড় বড় চোখ করে বলে উঠলো
“এভাবে মিথ্যা বলা যায়?আর জাবি তনয়া দের বাড়িতে?
ন্যালি তাৎক্ষণিক মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলো
“ওই গুন্ডার বাড়িতে আর কখনো যাবো না মা!
ন্যালির কথায় শিউলি কপাল কুঁচকে বলে উঠলো
“গুন্ডা কে?
ন্যালি ধরা পড়া চোরের মতো থতমত খেয়ে বলে উঠলো
“গুন্ডি গুন্ডি।

ঢাকায় এসে নিজের দম পর্যন্ত ফেলার সুযোগ পাচ্ছে না অভিরূপ।এদিকে এসেই নিজের ফোনটা হারিয়ে ফেলেছে।ঢাকার রাস্তায় এতো চোর বাটপার ঘুরে যা দেখে রীতিমতো অবাক হয়েছে অভিরূপ।অথচ বিদেশে ফোন ফেলে রাখলে মানুষ তাকিয়ে পর্যন্ত দেখে না।এদিকে ফোনের সাথে সাথে সকলের কন্টাক্ট নম্বর ,ঠিকানা সব হারিয়ে বসে আছে সে।সারফরাজ দেশে এসেছে কি না সেই খবর টাও ফোন করে নেয়া হচ্ছে না।সারফরাজ কি ভাববে সেটা মনে করেই লজ্জায় নাক কাটা যাচ্ছে তার।তাই মনে মনে অভিরূপ ভাবলো একবার সারফরাজ এর বাড়িতে যাবে সে।বিদেশে থাকতে এমনটাই কথা হয়েছিলো।সারফরাজ নিজ বাড়িতেই থাকবে কিছুদিন এবং তার মাকে খুঁজবে।যেই ভাবনা সেই কাজ।নিজ বাসা থেকে সারফরাজ এর বাড়িতে যেতে প্রায় পঞ্চাশ মিনিটের মতো সময় লাগবে তার।গুগল ম্যাপে রাস্তার জ্যাম কন্ডিশন দেখে বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলো অভিরূপ।অভিরূপের মা অবশ্য বার বার বলে দিয়েছে অভিরূপ ফেরার পথে সারফরাজ কে যেনো সঙ্গে করে অবশ্যই নিয়ে আসে।

নিজ কক্ষে আবারো সেই ডায়েরি নিয়ে বসেছে সারফরাজ।এই পর্যন্ত কতবার পড়ে শেষ করেছে এই ডায়েরি তার হিসেব নেই।সারফরাজ তো ভেবেই নিয়েছিলো তার মতো খুনিকে কেউ মনে রাখবে না।কিন্তু সারফরাজ কে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে এই বাচ্চা মেয়েটা তাকে খুব করে মনে রেখেছে এতো গুলো বছর ধরে।কিন্তু কেনো?নেহাত ই সারফরাজ তার সেভিয়র এজন্য নাকি অন্য কিছু?ভাবনা ফেলে ডায়েরির পাতা উল্টাতে উল্টাতে ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠায় এসে অনেক গুলো ঠিকানা নোট করা দেখতে পেলো সারফরাজ।একটা সুফিয়ান চৌধুরীর বাংলোর ঠিকানা সেটা সারফরাজ চিনে।আরেকটা মেডিকেল কলেজ এর ঠিকানা।সারফরাজ এর বাড়ির ঠিকানাও স্থান পেয়েছে তাতে।আরেকটি ঠিকানা দেখা যাচ্ছে সেই পাতায়।কিন্তু এই ঠিকানা চিনেনা সারফরাজ।কিন্তু চিনে নিতে কতক্ষন?
মাথায় ঠিকানাটা ক্যাপচার করে সারফরাজ বলে উঠলো

“এই ঠিকানায় যদি কড়া নাড়ি তোমার দেখা পাওয়া যাবে রূপকথা?
এমন সময় টুং করে কলিং বেল বেজে উঠলো।ডায়েরি বিছানায় ফেলে বাইরে বেরিয়ে এলো সারফরাজ।কামাল চাচা বা নজরুল কেউ বাসায় নেই।নজরুল গেছে সারফরাজ এর এক গুরুত্বপূর্ণ কাজে আর কামাল গেছে মেয়ের বাসায়।দ্বিতীয়বার বেল বাজতেই দ্রুত পদে হেটে গিয়ে মেইন দরজার সিটকিনি খুলে দিলো সারফরাজ।দরজা খুলতেই ক্লান্ত অভিরূপ এর দেখা মিললো।অভিরূপ কে দেখে কোনো ভাব ভঙ্গির পরিবর্তন হলো না সারফরাজ এর।জুতো খুলে ভেতরে প্রবেশ করতে করতে অভিরূপ বলে উঠলো
“নাইস হাউজ।
সারফরাজ শুকনো হেসে শুধালো
“কি মনে করে?
অভিরূপ বিষন্ন মুখে বললো

“এসেই ফোন হারিয়ে ফেলেছি ডুড।নতুন ফোন নিয়েছি।কিন্তু সকলের নম্বর হারিয়ে ফেলেছি!
অভিরূপ এর এহেন কথায় শব্দ করে হেসে দিলো সারফরাজ।এরপর সন্দিহান ভরাট গলায় শুধালো
“টেকনোলজি বিষয়ক বিস্তর জ্ঞান যার তার থেকে এসব বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
অভিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালো না সারফরাজ এর তাচ্ছিল্যে।সোফায় আরাম করে শুয়ে অভিরূপ বলে উঠলো
“মা নিয়ে যেতে বলেছে তোকে।চল রেডি হ।
সারফরাজ অভিরূপ এর সামনে বসতে বসতে ব্যস্ত গলায় বলল
“আজ নয়।অন্যদিন।আজ বিশেষ কাজ আছে আমার।
অভিরূপ সারফরাজ এর ত্যাড়ামো জানে।তাই বেশি বাক্যাপচয় না করে বলে উঠলো
“তোর বাড়ি ঘুরে দেখতে চাই।
সারফরাজ বাঁকা হেসে বলে উঠলো
“পরে তো বলবি এই বাড়িটাও তোর চাই।
অভিরূপ কপাল কুঁচকে বললো
“মানে?
সারফরাজ চোখ টিপে বললো
“জাস্ট কিডিং।

এরপর অভিরূপ কে নিয়ে পুরো বাড়ি ঘুরতে ঘুরতে নিজ কক্ষে এলো সারফরাজ।সারফরাজ এর কক্ষে ঢুকেই বিছানার উপর থাকা আকর্ষণীয় ডায়েরি নজর কাড়লো অভিরূপের।দ্রুত পায়ে হেটে সেই ডায়েরি স্পর্শ করবার আগেই সারফরাজ ছো মেরে নিয়ে বলে উঠলো
“এটা স্পেশাল।এটা দেখতে পারবি না তুই।
হাত গুটিয়ে অভিরূপ তপ্ত শ্বাস ফেললো।এরপর ধীর গলায় বলল
“কি আছে এতে?
“আমার জন্য কারো হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা।
অভিরূপ চকচকে চোখে শুধালো
“ভালবেসেছিস?
ডায়েরি চেপে ধরে সারফরাজ উত্তর করলো
“এটা ঠিক ভালোবাসা নয়।এই সম্পর্কের কোন নাম নেই।সেই নাম হীন সম্পর্কের সংজ্ঞা খুঁজে বেড়াচ্ছি আমি।
প্রসঙ্গ পাল্টে অভিরূপ হঠাৎ শুধালো
“রূপকথার কোনো খুজ পেলি?
সারফরাজ চট করে মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলো
“না।

“অনেক বড় হয়ে গেছে সে। তাই না?আমার মনে হয় তুই রূপকথার রূপের যেই বর্ণনা আমাকে বলেছিস তার চাইতেও মোহনীয় সে।
কথাটি বলতে বলতে অদ্ভুত হাসলো অভিরূপ।সেই সাথে পুরো মুখশ্রী জুড়ে কিছু হাসিল করার আনন্দ ফুটে উঠলো।অভিরূপ এর হাসি আর গভীর চোখের ভাষা নজর এড়ালো না সারফরাজ এর।ঠোঁটে হাসির রেখা অব্যাহত রেখে সারফরাজ বললো
“মহা কবি আলাওলের পদ্মাবতী পড়েছিস?
আকস্মিক সাহিত্যের প্রশ্নে অভিরূপ কপাল কুঁচকে বললো
“না ।কেনো?

চেকমেট পর্ব ১৮

“পদ্মাবতীর রূপের বর্ণনা শুনেই তাকে নিজের করার জন্য উন্মাদ হয়ে উঠেছিলো আলাউদ্দিন খিলজি।কিন্তু শেষ পরিণতি ছিলো খুবই ভয়ংকর।
“এসব সাহিত্যের গল্প আমাকে কেনো বলছিস?
“গল্প করার মানুষের বড্ড অভাব ।তাই।

চেকমেট পর্ব ২০