চেকমেট পর্ব ২০

চেকমেট পর্ব ২০
সারিকা হোসাইন

সারফরাজ এর বাড়িতেই রাতের খাবার শেষ করলো অভিরূপ।এরপর দুই বন্ধু মিলে খোশ গল্প করলো লম্বা সময় নিয়ে। কথায় কথায় সারাদিন কি কি অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে রূপকথা আর ন্যালির সাথে সেটাও বললো সারফরাজ।লিচু গাছে উঠে রূপকথা কেমন বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে সেটা শুনে অভিরূপ হাসতে হাসতে শেষ।কিন্তু নির্বিকার সারফরাজ।অভিরূপের উচ্চ স্বরের হাসিতে সারফরাজ এর চোয়াল শক্ত হয়ে গলার নীলচে শিরাটা ফুলে উঠলো।অভিরূপ তা খেয়াল করলো না।সে হাসতে হাসতে ফ্লোরে ঢলে পরলো।অভিরূপের পানে গরম চোখে তাকালো সারফরাজ।অভিরূপের দাঁত তুলে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে তার এই মুহূর্তে।বিষয়টা কি এতোই হাসির?বোকা অভিরূপ কি জানে রূপকথার পরিচয় জানতে পেরে সারফরাজের বুক খানা কেমন উত্তাল হয়ে উঠেছিলো?সারফরাজ এর ভয়ানক চোখ দেখে মুখের হাসি সহসাই উধাও হলো অভিরূপের।দাঁত গুলো পাতলা ঠোঁট দিয়ে যথাসম্ভব ঢেকে ভয়ার্ত গলায় বলে উঠলো

“এমন হ্যান্ডসাম হ্যাংক কে যেই মেয়ে কেয়ারটেকার ওরফে দারোয়ান ভেবেছে তাকে আমি স্বচক্ষে দেখতে চাই।মানতে হবে দম আছে ওই মেয়ের।নইলে এমন অদ্ভুত পদবি তোকে দিয়ে জ্যান্ত বাড়ি ফিরে গেছে এতো বিশাল ভয়ানক ব্যাপার সেপার।
সারফরাজ শীতল গলায় বলল
“বাড়ি ফিরে যা অভিরূপ।তোকে চটকে কাবাব করতে ইচ্ছে করছে।
কথাটি বলেই ফ্রুট বাস্কেট থেকে ফল কাটার ছুড়ি টা হাতে নিলো সারফরাজ।ধারালো চিকন ছুড়ির পানে তাকিয়ে ফাঁকা ঢোক গিললো অভিরূপ।এরপর উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো
“চলে যাচ্ছি।পরে আবার হাসবো।হু?
সারফরাজ প্রত্যুত্তর করলো না।অভিরূপ কিছুক্ষণ নিরুত্তাপ থেকে টেবিলের উপর থেকে হেলমেট নিতে নিতে বললো
“কবে ফিরছিস?
একটা আপেলে ছুড়ি বিধিয়ে সারফরাজ বলে উঠলো

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ফিরতে দেরি হবে।লুইস আর ইয়ং কে এখানে আসতে বল।
অভিরূপ কপাল কুঁচকে বললো
“ড্যান এর সাথে ওয়েপন এর ডিলিং না করে এখানে থাকাটা ঠিক হবে?
“এখানে এসে মানসিক প্রশান্তি পাচ্ছি অভি।কয়েকটা দিন থাকতে চাই।
অভিরূপ ঘাটালো না।অল্প মাথা দুলিয়ে বললো
“ঠিক আছে।
সারফরাজ মেঝের ঝকঝকে টাইলসে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললো
“দুটো গাড়ি কিনতে হবে।আমার চলাচল করতে অসুবিধা হচ্ছে।কম্ফোর্ট ফিল করছি না এসব গাড়িতে চড়ে।
“ঠিক আছে কাল শোরুমে চল।
“বাট লাইসেন্স?

“ওসব তোর ভাবতে হবে না।আমার মামা আছেন সব ব্যাবস্থা তিনিই করে নিবেন।
আর দাঁড়ালো না অভিরূপ।বাড়িতে তার বাবার খেয়াল রাখতে তাকে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে।তার মা একা অসুস্থ মানুষটার সেবা করতে পারে না।তাই সারফরাজ এর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো অভিরূপ।যাবার আগে স্বাভাবিক গলায় বলল
“মা তোকে সামনে থেকে একবার দেখতে চেয়েছেন।উনার ছেলের সেভিয়র কে একবার হাতে স্পর্শ করে দোয়া করতে চান তিনি।মন ভালো হলে একবার আসিস।যাই এখন।
অভিরূপ প্রস্থান নিলো দ্রুত পায়ে।অভিরূপ চলে যেতেই দরজা আটকে আবার সেই ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠা খুললো সারফরাজ।এরপর নিজের ফোন থেকে সেই ঠিকানার ছবি তুলে ঝটপট তৈরি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।যাবার আগে কামাল কে ডেকে বলে গেলো
“রাতে বাড়ি ফিরবো না চাচা।দরজা আটকে ঘুমিয়ে যেও।

রাতের দ্বি প্রহরে রূপকথার জ্বর মাত্রা ছাড়ালো।জ্বরের ঘোরে আবোল তাবোল বকতে শুরু করলো রূপকথা।এদিকে ন্যালি জল পট্টি দিতে দিতে কখন মেঝেতে পরে ঘুমিয়ে গেছে সে নিজেও জানেনা।অবশ্য ঘুম কাতুরে মানুষের এসব বোধ বুদ্ধি থাকেও না।ন্যালি ঘুমুতে খুব ভালোবসে।ঘুম তার এতই প্রিয় একবার ঘুমালে সারা বাড়ি ডাকাত পরলেও ন্যালি কিচ্ছুটির খবর বলতে পারবে না।ঘুমের ঘোরে ন্যালি খুব অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখলো।স্বপ্নে হুট করেই ফাঁকা রাস্তায় ন্যালির সাথে খুব সুদর্শন এক যুবকের দেখা হয়ে গেলো।যুবকের সফেদ আকর্ষণীয় মুখশ্রী,লাল ঠোঁট আর ঘন কালো চুল ন্যালির হৃদয়ে ঝড় তুললো।যুবকের সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে ন্যালি আগ বাড়িয়ে তার সাথে কথা বলতে চাইলো।কিন্তু ছেলেটি হঠাতই কোথা থেকে এক বন্দুক নিয়ে এসে ন্যালির মাথায় ঠুকে বলে উঠলো
“আমার দিকে চোখ তুলে তাকানোর অপরাধে তোমাকে অজগরের মাংসের কাবাব খেতে হবে।
কথাটি বলেই পকেট থেকে এক টুকরো অজগরের কাঁচা মাংস বের করলো যুবক।যুবকের হাতে রক্তাক্ত অজগর এর ছোট একটা পিস দেখে ন্যালির বমি পেলো।পেট গুলিয়ে উঠলো।স্বপ্নের ঘোরেই মুখ চেপে উঠে গেলো ন্যালি।ঘুম জড়ানো চোখে বেসিনে গিয়ে কতক্ষন ওয়াক ওয়াক করে দুর্বল শরীরে নিজের বেডরুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।এরপর আবার ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।ওদিকে একা পরে রইলো রূপকথা।

ঘড়ির কাটা চলতে চলতে রাত দুইয়ের ঘরে ঠেকলো।আমজাদ হায়দার এর দূতলা বিশিষ্ট বাড়িটা একদম নির্জন নিস্তব্ধ।আশেপাশে সেরকম বাড়ি ঘর না থাকায় জায়গাটা আরো ভুতুড়ে লাগছে।আশ পাশের মধ্যে কোনো সোডিয়াম লাইটের খাম্বা নেই।সন্ধ্যা নামতেই আবছা আলোয় আরো গা ছমছমে লাগে।তার মধ্যে ছাদের এক টুকরো বাগান দেখে মনে হয় ঘন জঙ্গল।বিশাল আকাশ জুড়ে কালো মেঘের ঘনঘটা।হালকা বিদ্যুতের চমকে মনে হচ্ছে এই বুঝি ভারী বর্ষণ ঝড়বে।মনের ধারণাকে সত্যে রূপান্তরিত করে ঈলসেগুড়ি বৃষ্টির সূচনা হলো।সারফরাজ যখন আমজাদ হায়দার এর বাসার নীচে এসে দাড়ালো তখন রাত দুটো বেজে দশ মিনিট।হাতে থাকা স্মার্ট ওয়াচে একবার সময় পরখ করে কালো আকাশে দৃষ্টি বুলালো সারফরাজ।পুরো আকাশ কালচে ঘন মেঘে ঢেকে গিয়েছে ইতোমধ্যে।ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছেড়ে বাড়ির পেছনের দিকে দৌড়ে চলে গেলো সারফরাজ।পেছন সাইডের বিল্ডিং এ নজর বুলাতেই লালচে ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটলো।পেছন দিকে একটা বেলকনি খোলা দেখা যাচ্চে।এটাই সারফরাজ এর জন্য এনাফ।এক বেলকনি দিয়েই পুরো বাড়ি লুট করতে পারবে সে।কিন্তু এই সামান্য বাড়িতে তার লুট করার মতো কিছুই নেই।তবে যা আছে তাকে লুট করার সাধ্যি সারফরাজ এর নেই।

মনের অযাচিত ভাবনা দূরে সরিয়ে উপরে উঠার পথ খুঁজতে লাগলো সারফরাজ।ভদ্রলোক বেশ সুকৌশলে বাড়ি খানা তৈরি করেছেন।উপরে উঠার তেমন ব্যবস্থা নেই।ড্রেইন পাইপ গুলোও বাড়ির ভেতরের দিকে বোধ হয়।পুরো ওয়াল চকচকে মসৃন।
বিরক্তিতে চ সূচক শব্দ উচ্চারণ করে কপাল কুচকালো সারফরাজ।বৃষ্টির পশলা খনে খনে বেড়ে চলেছে।সারফরাজ এর গায়ের পোশাক অর্ধেকের বেশি ভিজে গেলো।চরম বিরক্তিতে মেজাজ চটে যাচ্ছে তার।তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে পাশে থাকা বকুল গাছে বহু কসরত করে উঠতে সক্ষম হলো।এরপর লম্বা হাত বাড়িয়ে নিচ তলার জানালার সান সেট এর উপর পা বাড়িয়ে সেটার উপর দাঁড়ালো।সাবধানতা অবলম্বন করেও কোন কাজ হলো না।ধারালো কিছুর সাথে লেগে হাতের বেশ খানিকটা কেটে হা হয়ে গেলো।কিন্তু গুরুত্ব দিলো না সারফরাজ।রক্ত ঝরা হাত নিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে উঠলো দুতলার সেই খোলা বেলকনিতে।এরপর সন্তর্পণে কক্ষে ঢুকতেই এক প্রকার আত্মা বেরিয়ে যাবার উপক্রম হলো মেয়েলি চিৎকারে

“না না আমি অজগরের কাবাব কিছুতেই খাবো না।কে আছো বাঁচাও।
সারফরাজ এর চতুর মস্তিষ্ক নিমিষেই বুঝে গেলো এটা সেই আইটেম এর কক্ষ যিনি তাকে দারোয়ান উপাধি তে ভূষিত করেছেন।শব্দ হীন পা ফেলে সামান্য দূরে গিয়ে দাঁড়ালো সারফরাজ।এরপর ন্যালির আরো কিছু আবোল তাবোল অস্পষ্ট কথা শোনা গেলো।সেসব শুনে সারফরাজ বিড়বিড় করে বলে উঠলো
“যার ঘরে যাবে একদম জ্বালিয়ে মারবে।ভবিষ্যৎ বেচারার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে।এমন মেয়ে মানুষ ও হয়?কার কপালে জুটে এরা?
ন্যালি আবার বলে উঠলো
“লিচু ওয়ালা কেয়ার টেকার গুন্ডা মাস্তান।ব্যাটা শয়তান বালিশের তলায় বন্দুক রাখে।সবাইকে বলতে হবে।হু……ম।
সারফরাজ আর এক মিনিট দাঁড়াতে চাইলো না এই ঘরে।মনে মনে বললো
“এমন মানুষের সাথেই এই মেয়ের বিয়ে হোক যে সত্যিই একে অজগরের কাবাব খাওয়াবে।
কথাটি বলেই দরজা অল্প ফাঁকা করে ধীরে ধীরে অন্য কক্ষের দিকে পা বাড়ালো সারফরাজ।ভেতর থেকে দরজা আটকানো এক কক্ষের সামনে দাঁড়াতেই পুরুষালি গলায় হুংকার ভেসে এলো

“এই কে আমার বাগানের পেঁয়ারায় হাত দেয়?হাত কিন্তু কা ম ড়ে ছি ড়ে নেবো আমি।
সারফরাজ এর ইচ্ছে হলো দেয়ালে সজোড়ে মাথা বাড়ি মারতে।একই পরিবারের সব গুলো মানুষ এমন পাগল কি করে হতে পারে?এদিকে বৃষ্টির ঝাপটা বাড়লো কয়েক গুণ।এখন আর কারো শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।সারফরাজ আরো দুটো খালি কামড়া চেক করার পর রূপকথার কক্ষের সন্ধান পেলো।ধীর পায়ে সেই কক্ষের ভেতর ছোট ছোট কদম ফেলে বিছানার নিকট এগিয়ে এলো সারফরাজ।ভয় নামক বস্তু যার সাথে একদম পরিচিত নয় সারফরাজ সেই সারফরাজ এর প্রশস্ত বুকটা আজ কেমন দুরুদুরু করে কেঁপে উঠলো।নিজের বা পাশের ধুকপুকুনি ধ্বনি বেশ করে সে নিজেই শুনতে পাচ্ছে।মেরুদন্ড বেয়ে কেমন হীম স্রোত নেমে যাচ্ছে।পা দুটো মেঝের সাথে আটকে যেতে চাইছে বার বার।কিসের তাড়নায় এই ভয়ের উৎপত্তি?উত্তর জানেনা সারফরাজ।

ধীরে ধীরে রূপকথার বিছানার একদম কাছ ঘেষে দাঁড়ালো সারফরাজ।ডিম লাইটের ঝাপসা আলোয় রূপকথার ফিনফিনে ছোট মুখশ্রী স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।তবুও হাটু মুড়ে বসে বিছানায় হাত ভাঁজ করে রেখে তাতে থুতনি রাখলো সারফরাজ।এরপর খুব কাছে থেকে রূপকথার ঘুমন্ত মুখশ্রীর পানে তাকিয়ে আবেগে আপ্লুত হলো সারফরাজ।বারো বছর আগেও ঠিক এভাবেই ঘুম কুমারী রাজকুমারীর ন্যায় বুকে বালিশ জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকতো রূপকথা আর সারফরাজ বাধ্য দাসের ন্যয় সারারাত বসে পাহারা দিতো।ঘুমে দু চোখ বন্ধ হতে আসতো সারফরাজ এর।তবুও অজানা কারণে রাত ভর জেগে জেগে রূপকথার প্রতিটি নিশ্বাস গুনতো সে।নির্ঘুম সারফরাজ সারাদিন কাজ করতে গিয়ে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়তো।কিন্তু রূপকথা যখন তার ছোট ছোট কচি হাতে সারফরাজ এর বড় বড় চুলের গোছা ধরে টান দিতো নিমিষেই যেনো সমস্ত শরীর খারাপ কোথায় পালাতো।

ঘুমের তালে পাশ ফিরতে চাইলো রূপকথা।কিন্তু দুর্বল শরীর নড়তে চাইলো না।বাধ্য হয়ে ওভাবেই গুটিয়ে পরে রইলো।ঠান্ডা হীম বাতাস,বৃষ্টি আর জ্বর তিনের সমন্বয়ে রূপকথার শরীর কাটা দিয়ে কেঁপে উঠলো।সারফরাজ টের পেয়ে অনাদরে পায়ের কাছে পরে থাকা কাথাটা রূপকথার গায়ে জড়িয়ে দিলো।কাঁথার ওম পেয়ে সারফরাজ এর হাত সহ চেপে ধরলো রূপকথা।সারফরাজ এর শীতল হাত নিজের গলার ভাঁজে দুই হাতে চেপে ধরে অস্ফুট স্বরে বললো

“আরাম লাগছে সারফরাজ।
রূপকথার গায়ের উত্তাপে সারফরাজ চমকে উঠলো সহসাই।নিজের হাত সরাতে চাইলো রূপকথার গলা থেকে।কিন্তু রূপকথার হাত গলিয়ে তা ছুটাতে পারলো না।অপর হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে রূপকথার কপাল ছুলো সারফরাজ।কিছুক্ষণ রেখে আলগোছে হাত সরালো।মেয়েটার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।
“এমন অসুস্থ মেয়েকে ফেলে সবাই বেঘোরে ঘুমুচ্ছে কি করে?
রূপকথার জ্বরে রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারাতে ইচ্ছে হলো সারফরাজ এর।
“তোমার স্পর্শ আমি খুব করে চিনি সারফরাজ।তোমার ঐ শক্ত হাত জোড়া আমার যে খুব পরিচিত।মনে হচ্ছে সত্যি ই তুমি আমার পাশে বসে আছো।সব ভ্রম তাই না?
রূপকথার জ্বরের ঘোরে বলা ভাঙা অস্পষ্ট কথা গুলো সারফরাজ এর ভেতর নাড়িয়ে দিলো।এই পৃথিবীতে তাকেও ভালোবাসার মতো কেউ আছে?বিধাতা এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে তার খোঁজ নেবার জন্য এতো সুন্দর একটা মানুষ পাঠিয়েছে।অথচ সে কি না কোন দূর দেশে একাকী জীবন টেনে নিয়ে যাচ্ছে?
গম্ভীর হৃদয় হীন সারফরাজ এর কেমন ফুঁপিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হলো।কিন্তু নিজেকে যথেষ্ট শক্ত রাখলো সে।রূপকথা আবার বলে উঠলো

“ট্রেনের অদ্ভুত চোখ ওয়ালা ছেলেটা আমাকে ধরতে চায় সারফরাজ।ওকে দেখে আমার ভয় করছে।প্লিজ সেভ মি ফ্রম হিম।
রূপকথার এহেন কথায় কপাল কুঁচকে এলো সারফরাজ এর।সামান্য মাথা ঝুকে রূপকথার কানের কাছে ফিসফিস করে সারফরাজ শুধালো
“কোন ছেলে রূপকথা?
“যার চোখ দুটো প্রায় তোমার মতো।

কথাটি বলেই সারফরাজ এর গলা জড়িয়ে নিজের বেশ খানিক কাছে নিয়ে এলো রূপকথা।সারফরাজ এর লালচে ঠোঁট জোড়া প্রায় রূপকথার নাক ছুঁই ছুঁই।এমন পরিস্থিতিতে কেমন ভয়ানক অনুভূতি হলো সারফরাজ এর বুকের ভেতর।পুরো শরীর কেমন আগুনের ন্যয় উত্তপ্ত হলো সেই সাথে লাল হয়ে উঠলো কান দ্বয়।মনে হচ্ছে এক্ষনি কান দুটো ব্লাস্ট হবে।মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত হতে চাইছে।অজানা ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসতে চাইছে।হৃদ গতি ছুটছে ঘোড়ার রেসের ন্যয়।নিষিদ্ধ বাসনা খেলে গেলো শরীর জুড়ে।সারফরাজ বুঝলো আগুনের অনেক কাছে এসে দাঁড়িয়েছে সে।সামান্য অপেক্ষার পরই জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হবে সে।তাই নিজেকে বহু কষ্টে রূপকথার থেকে ছাড়িয়ে দুর্বল পায়ে উঠে দাঁড়ালো সারফরাজ।এরপর না চাইতেও মনের বিরুদ্ধে গিয়ে রূপকথার কক্ষ ত্যাগ করলো।ধীর পায়ে আবারো এসে দাড়ালো ন্যালির কক্ষে।আরামে কাঁথা মুড়িয়ে চোখ অর্ধেক খোলে ঘুমুচ্ছে ন্যালি।দমিয়ে রাখা রাগটা আবার চাঙ্গা হলো সারফরাজ এর।এরপর গলার সমস্ত আওয়াজ দিয়ে ধমকে গর্জে বলে উঠলো,―

চেকমেট পর্ব ১৯

“ওখানে জ্বরে মরছে একজন আর এখানে আরামে ঘুমানো হচ্ছে?ফাজিল মেয়ে কোথাকার!ওঠ।
বলেই ঠাটিয়ে এক চড় মারলো ন্যালির ফর্সা গালে।মুহূর্তেই ঘুম থেকে ধরফড়িয়ে উঠলো ন্যালি।কিন্তু তার আগেই ব্যালকনি ডিঙিয়ে নেমে এলো সারফরাজ।ভয়ানক স্বপ্ন,চড় আর বজ্রপাতের শব্দে হাউমাউ করে চিৎকার করে উঠলো ন্যালি।মিনিট দুইয়ের ব্যাবধানে পুরো বাড়ি জুড়ে জ্বলে উঠলো আলো।আমজাদ হায়দার, শিউলি দুজনেই দৌড়ে এলেন মেয়র কক্ষে।ন্যালির কক্ষে পা রেখে দ্রুত হাতে সুইচ জেলে ঘর আলোকিত করলেন শিউলি।ঘর আলোয় ভরতেই আলুথালু ন্যালিকে কাঁথা মুড়িয়ে বসে বসে কাঁদতে দেখা গেলো।ঘটনা জানতে চাইলেই ভেউ ভেউ করে কেঁদে ন্যালি বলে উঠলো
“অজগরের কাবাব খেতে চাইছিনা বলে আমাকে হুমকি ধমকি দিয়ে খুব মেরেছে আব্বু।এই দেখো গাল ফাটিয়ে দিয়েছে।

চেকমেট পর্ব ২১