নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ১৯ (২)
সিনথিয়া
ক্যানিয়নের আকাশজুড়ে মেঘের ঘনঘটা। রাতের শুরুটাই যেনো হলো ঝোড়ো হাওয়ার মধ্য দিয়ে। সাথে বাড়লো তুষারপাতের মাত্রাও। টিভি চ্যানেলগুলোতে ঝড়ের পূর্বাভাস।
শীতের দাপটে দোর দিয়েছে মানুষজন।
এদিকে ডিপার্টমেন্টের সবাই রেস্টহাউজের হলরুমে একসাথে হয়েছে আড্ডার আসর জমাতে। তুষারঝড়ের সম্ভাবনা থাকায় বাইরে টেন্ট লাগিয়ে স্লিপিং ব্যাগে ঘুমোনোর আইডিয়া আপতত বাদ।
তার বদলে ঠিক হলো হল রুমে বসেই ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলবে সবাই।
শীতের রাতে এক কাপ গরম কফি, ফায়ারপ্লেসের আগুনের তাপ সাথে ট্রুথ এন্ড ডেয়ার! আহা! এরচাইতে ভালো কিছু যেনো হতেই পারে না ক্যাম্পিং-এ এসে নাইট স্টে করার জন্য! অন্যন্য প্রফেসর, ডিপার্টমেন্ট হেড এমনকি প্রিন্সিপালও বাদ জাননি এই সমাগম হতে।
বাকিরা যখন হলরুমে উপস্থিত তখনই ডাক পড়লো শেহজাদের। ডিপার্টমেন্টের এই একজন প্রফেসরের উপর মেয়েরা এমনিতেই ফিদা।
“তা মিস্টার শেহজাদ কোথায়? ডাকো ওনাকে!”
পশ্চিমা ভাষায় তাগাদা দিলেন প্রিন্সিপাল। ভদ্রলোক আজকে একটুর জন্য সুগার লেভেল বাড়িয়ে পটল তোলেননি। নয়তো ওনার দায়িত্বে ক্যাম্পিং-এ এসে কোনো স্টুডেন্টের হারিয়ে যাওয়া কি চারটিখানি কথা?
আজ যদি শেহজাদ খুঁজে না পেতো আরশিকে তাহলে এতক্ষনে ওনাকেও পুলিশের হেফাজতে থাকতে হতো নির্ঘাত!
ভদ্রলোক ঠোঁট গোল করে শ্বাস ফেলতেই দৌড়ে আসলো একটা মেয়ে। হাঁটুতে হাত রেখে ঝুকলো কিছুটা। পরপর বিদেশি ভাষায় হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
“প্রফেসর শেহজাদ ওনার রুমে নেই! আশেপাশে কোত্থাও নেই! আমি খুঁজে এলাম সব জায়গায় ওনাকে!”
আরশিকে শেহজাদের কোলে তুলে ফেরার পর থেকে প্রফেসর আর স্টুডেন্টের সম্পর্ক নিয়ে চাপা গুঞ্জনটা ভালোভাবেই রটেছে প্রত্যেকের মধ্যে! বিষয়টা একেবারে উড়িয়ে দিলেন না ভদ্রলোকও।
একজন স্টুডেন্টের প্রতি কোনো প্রফেসরের এতোটা অধিকারপ্রবনতা আসলেই চোখে লাগছে ভীষণ। তারউপর সেই মানুষটা যদি হয় শেহজাদের মতো একজন ইয়ং-ডেডিকেটেড প্রফেসর! তাহলে তো কথাই নেই!
কপালে ভাজ ফেলে প্রিন্সিপাল ইতিউতি চাইলেন! হলরুমের কর্ণারে কালো হুডি পড়া একটা ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইশারায় ডাকলেন কাছে। ছেলেটা কাছে আসতেই পশ্চিমা ভাষায় জিজ্ঞেস করলেন,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আপনার নাম?”
“রেজা!”
“ওহ! ওয়েল মিস্টার রেজা! মিস আরশিকে একটু ডেকে আনুন! ইমিডিয়েটলি!”
হাঁপাতে থাকা মেয়েটা অবাক চোখে তাকাতেই দাঁত বের করলেন ভদ্রলোক। ইংরেজিতে বললেন,
“মিস আরশি এখানে আসলে প্রফেসর শেহজাদও আসবেন এখানে। আলাদা করে আর খুঁজতে হবে না তাকে!”
বদ্ধ কামরায় আরশির প্রাণ ওষ্ঠাগত। বুকের ওঠানামার গতি অস্বাভাবিক। শিহরিত মস্তিষ্কের প্রতিটা স্নায়ুকোষ। শেহজাদের ঠোঁটের ছোঁয়ায় ছটফটিয়ে উঠলো ছোট্ট শরীরটা। গলার স্বরে কাঁপন ধরলো ওর।
“আ-আপনি বললেন না তো শুধু অ্যান্টিস্যাপটিক লাগালে সারবে কি না?”
থামলো শেহজাদ। পাতলা ওষ্ঠপুট কাঁধ হতে সড়িয়ে কানের কাছে আনলো। হাস্কি স্বরে বললো,
“আপতত চুমুতে কাজ হয় কি না দেখি! তারপরে অ্যান্টিস্যাপটিক লাগাবো!”
আচমকাই ভোরে ফোঁটা সদ্য গোলাপের ন্যায় রক্তিম হলো আরশির গালদুটো। কান দিয়ে স্টিম কুকারের মতো ধোঁয়া ছুটতেই হড়বড়িয়ে বললো,
“যে চুমু দাগ সারাতে পারে না সে চুমুর দরকার নেই! আপনি অ্যান্টিসেপটিক এনে দিন আমাকে! আমি নিজেই লাগিয়ে নেবো!”
“চাঁদের গায়ে দাগ আছে?”
কেনো হঠাৎ মানুষটা এই প্রশ্ন করলে সেসব না ভেবেই ওপর-নিচে মাথা দোলালো ও। কিন্তু যখনই ভাবলো, এই বুঝি শান্ত হলো জাম্বুবানটা তখনই অন্য কাঁধের উপর হতে টি-শার্টের হাতাটা আঙুল দিয়ে স্লাইড করে নামালো শেহজাদ। সুতোহীন ফর্সা পিঠের মাঝবরাবর লাল হয়ে আছে কেমন।
শেহজাদের বুকের পাজর ভাঙে সেদিকে তাকিয়ে। আরশিকে নিজের ছায়ায় না রাখতে পারার অপরাধবোধ দলা পাকায় গলার কাছে।
তবুও শান্ত কন্ঠে বললো,
“পৃথিবীর চাঁদের গায়ে দাগ থাকা সত্ত্বেও সেই চাঁদ যেমন সুন্দর তার চাইতেও বেশি সুন্দর আমার এই ব্যক্তিগত চাঁদটা!”
আরশি হতবুদ্ধের ন্যায় ঠায় দাঁড়িয়ে। চিন্তা-চেতনা দুনিয়া ছেড়েছে ওর।
তারমধ্যেই হুট করে ছিলে যাওয়া জায়গায় মলমের মতো ঠোঁট ছোঁয়ালো মানুষটা। ক্ষতের ওপর আদরের প্রলেপ পড়তেই শিরদাঁড়া বেয়ে শঙ্কার শীতল স্রোত নামলো কিশোরীর। মাথা থেকে পায়ের তালু অবধি খেলে গেলো এক শিরশিরে অনুভূতি!
শেহজাদ মাথা তুললো। দু’কাঁধ ধরে ধীরে সুস্থে আরশিকে ফেরালো নিজের দিকে। মেয়েটার ঠোঁট কাঁপছে। বন্ধ চোখের পাতাতেও ভূমিকম্প উঠেছে যেনো। সেসব দেখে মুচকি হাসলো প্রফেসর। পরপর কোনো আগাম সতর্কতা ছাড়াই ঠোঁট ছোঁয়ালো আরশির গালের কাঁটা দাগে। গাঢ় একটা চুমু খেলো সেখানে!
মেয়েটার বন্ধ চোখ ততক্ষণে ছানাবড়া। শেহজাদ মুখ তুলে মায়া কন্ঠে বললো,
“গালের এই দাগ তোমার সাহসিকতার চিহ্ন আরশি! অন্য একটা প্রাণ বাঁচাতে নিজের লাইফ রিস্ক নিতে বুকে দম থাকা লাগে। যেটা তোমার আছে। আ’ম সো প্রাউড অফ ইউ!”
আরশিরও এবার নিজেকে নিয়ে গর্ব হলো একটু-আধটু! আনন্দে নেচে-কুঁদে উঠলো বাচ্চাদের মতো মনটা। কথায় আছে বাঙালি খেতে পেলে শুতে চায়! আরশিও প্রশংসা পেয়ে বলে বসলো,
“কিন্তু তখন যে রুমে ঢুকেই বকলেন! সেটার কি হবে? সেটার জন্য সরি কে বলবে?”
শেহজাদ হকচকালো অল্প।
“সে তো অনেক টেনশন হচ্ছিল বলে একটু বকেছি!”
বুকে হাত বাঁধলো মেয়েটা। চেহারায় গিন্নি গিন্নি ভাব স্পষ্ট। যেনো এক্ষুনি সে প্রস্তুত তার কর্তাকে শাসাতে!
“ঐটা একটু বকা? অন্য কেউ হলে নগদে কান্না করে দিতো! যাই হোক! নিন এবার তাড়াতাড়ি সরি বলুন!”
আরশি অন্য দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললেও ঠোঁট টিপে হাসলো শেহজাদ। নিজেও পেছনে হাত গুঁজে বললো,
“এতো হ্যান্ডসাম বর দিয়ে সরি বলাবে! ভেবে দেখো কিন্তু! পরে আবার আফসোস কোরো না যেনো!”
মানুষটার কথায় ফিরে চাইলো কিশোরী। কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলো আবার। চোখ আটকালো শেহজাদের সাদা শার্টের উপরের দুটো খোলা বোতামে। লোমহীন ফর্সা বুকের অল্প একটু দৃষ্টিগোচর হতেই ফের ঢাক-ঢোল পেটানো শুরু হলো বুকের ভিতর!
“ সে হলে হবে! আগে আপনি সরি বলুন!”
“বেশ!”
মেনে নিলো? জাম্বুবান এতো সহজে হার মেনে নিলো আরশি কাছে?
কিন্তু মেয়েটা যেই একটু খুশি হতে যাবে অমনি ওর চোখ ফুটবল। অধরজোড়া চলে গেলো শেহজাদের দখলে। কমলার কোয়ার ন্যায় ঠোঁটে ভাগ বসালো এক বলিষ্ঠ পুরুষ। যার এক হাত বিচরণের জায়গা করে নিয়েছে আরশির কোমরে। আর অন্য হাত গালের একপাশ আলতো করে ধরা।
কোনোমতে শ্বাস ন্যায় মেয়েটা। অধৈর্য্য হয় মানুষটার শক্ত-পোক্ত শরীরখানা দূরে সড়াতে। অস্থিরতা টের পেয়ে নিজেই সেই সুযোগটা করে দেয় শেহজাদ।
“ আপনাকে আমি সরি বলতে বললাম সেখানে আপনি এটা কি করলেন? ”
হাঁপাতে হাঁপাতে কথাগুলো আওড়ালো আরশি। মানুষটা ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে। সেভাবেই বললো,
“আমি তো সরিই বললাম! এখন আমার সরি বলার কায়দা তোমার পছন্দ না হলে কি করা যাবে বলো?”
আরশি হতবাক। পড়তে পড়তে এমন ভন্ড লোকের পাল্লায় পড়লো ও? যে কি না চুমু খেয়ে বলে সরি বলেছি! এটা নাকি সরি বলার কায়দা?
নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ১৯
আহত শ্বাস ফেললো মেয়েটা। যুক্তিতর্কে পরাজয় স্বীকার করতেই দেখলো শেহজাদ তাকিয়ে আছে ওর দিকে। চোখের দৃষ্টিতে আফিমের চাইতেও প্রখর মাদকতা। আবার কি চাইছেন উনি?
আরশি শুকনো গলায় ঢোক গিললো বারকয়েক! তবে পেছোতে নিলেই শুনতে পেলো কারোর দরজা ধাক্কানোর শব্দ। শেহজাদও ফিরে চাইলো সেদিকে। কপালে ভাজ ফেলে বললো,
“তুমি দাঁড়াও! আমি দেখছি!”