একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ১৮

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ১৮
রনীতা তুশ্মি

পুরো চিঠিটি পড়ার সময় অঝোরে আনায়া চোখের জল ফেলেছে। সর্বশেষে ছেড়ে যাওয়ার কথা শুনে শব্দহীন ভাবে হাও মাও করে কাঁদার চেষ্টা করছে। এই অগোছালো প্রেমিক পুরুষকে সে কিভাবে ছেড়ে যাবে। সে তো এটা কল্পনাতেও কখনো ভাবতে পারে না। জীবনের অর্ধেকটাই তো শুধু তার জন্যই উৎসর্গ করা। তবে কিভাবে…….
আনায়া আর বেশি ভাবতে পারলো না। কেঁদে কেঁদে চেহারার বেহাল অবস্থা করেছে। গোসলের সময় ক্ষত ঠোঁটে জেদ করে বেশি ঘষামাজা করায় জায়গাটার ক্ষতটা আরো বেড়ে গিয়েছে। কেনীথের অনাগত ছোঁয়ায় প্রচন্ড ব্যাথাকেও আনায়া ভুলে গিয়ে আরো নিজেকে কষ্ট দিতে চেয়েছে।

আজও তার কাছে কিছু বছর আগে সেই ভার্সিটির নবীন বরণে রেহানের সাথে হওয়া প্রথম সাক্ষাৎ এখনো চোখের সামনে দৃশ্যমান। সময়টা তখন শীতকাল। সকাল সকাল ভার্সিটির নবীন বরণে খুব সাধারণ সাজগোছ করে পৌঁছে গিয়েছিলো। পরণে ছিলো আনায়ার মায়ের সাদা রংএর জামদানী শাড়ি। শাড়িতে যেমন খুব সাদামাটা কাজ, তেমনই আনায়ার সাদামাটা সাজ। বড় বড় চুল গুলো ছিলো খোলা। সঙ্গে প্রথমদিন ভার্সিটিতে যাওয়ায় ছিলো প্রচুর নার্ভাস। আর এই আঁটসাঁট হয়ে ভার্সিটিতে ঘুরাঘুরি করতে থাকা মেয়েটাকে চোখে পড়ে ভার্সিটির ক্রাশ বয় নামক সিনিয়রের।
এক নজরে দেখেই যতটা না ফিদা হয়েছিলো তার চেয়ে বেশি পাগল হয়েছিলো আনায়ার সেই হাসি মায়ায় পড়ে। এরপর যে ছেলেটা কোনো শত মেয়ের প্রপোজ রিজেক্ট করার রেকর্ড করেছিলো সে নিজেই আনায়ার পিছে পাগলের মতো ঘুরতে লাগলো ওকে মানানোর জন্য।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আনায়া প্রথমের দিকে এসবে কখনো যেতে চায়নি কিন্তু একটা সময় পর রেহানের এতোসব পাগলামি দেখে আর নিজেকে আটকাতে পারেনি। ওদের সম্পর্কটা খুব বেশি মাখোমাখো ছিলো না। সবসময় ওদের মাঝে একটা দূরত্ব বজায় থাকতো যেটা তারা বিয়ের পরই পুষিয়ে নিতে চেয়েছিলো। অথচ এই সাদামাটা জুটিটাই ভার্সিটিতে লাভ বার্ড নামে পরিচিত।
আনায়া এবার চিঠিটা রেখে দিয়ে কোনোকিছু না ভেবে সরাসরি রেহানকে ফোন করলো। এদিকে রেহান দুপুরের গোসল শেষে এইমাত্র রুমে এসেছে তখনই আনায়ার ফোন দেখে কিছুটা চমকে গেলো। বাংলাদেশে রাত তো এখন প্রায় অনেক। তবে এতো রাতে….. রেহান আর দেরী না করে দ্রুত আনায়ার ফোন রিসিভ করলো,

—“আনায়া! এতো রাতে কোনো সমস্যা……..
—“আমার তোমাকে চাই! আমার এসব আর ভালো লাগছে না।হয় তুমি আমার কাছে চলে এসো নয়তো আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও। ”
আনায়া এমন কন্ঠস্বরে আর আবদারে রেহান কিছুটা হেসে ফেললো,
—“আমাকে মিস করছিলে নাকি! তা এতো রাতে বুঝি আমার বউজানের মন গলে যায়। এখন থেকে তো ঠিক এই সময়েই তোমাকে ফোন করতে হবে। নাহলে দিনের……
—“রেহান আমি মজা করার মুডে নেই। আমার এসব কিছু অসহ্য লাগছে। এতো দায়িত্ব, এতো স্যাক্রিফাইস করার পরও আমার সাথেই কেনো এমন হচ্ছে। আমি তো সবার সুখের কথা চিন্তা করি তবুও কেউ কেনো বুঝতে চাইছে না আমি ভালো নেই, শান্তিতে নেই আমি । আমার আর এসব ভালো লাগে না।অস্তির লাগে আমার জীবন। নিজেকে অসহ্য লাগে আমার। ”
এবার রেহানের চেহারার রং কিছুটা পাল্টালো। আনায়ার কথাবার্তা আর স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। রেহান কপাল কুঁচকে অস্থির হয়ে বললো,

—“আনায়া তুমি কাঁদছো?…..আনায়া কি হয়েছে বলো আমায়। প্লিজ বলো, এভাবে আমার টেনশন বাড়িও না। তুমি জানো এখন আমার আর এখানে মন টিকবে না। প্লিজ বলো না কি হয়েছে, নয়তো আমি নিজেই টেনশনে পাগল হয়ে যাবো। ”
আনায়া রেহানের কথা শুনে এবার নিজেকে কিছুটা তটস্থ করলো। তার এই জীবনে সে করবে টা কি? এই রেহান তো আরেক পাগল, সবকিছু বলে দিলে তো আবার না জানি কোন পাগলামি করে বসে। দেখা যাবে সবকিছু ছেড়ে ছুঁড়ে তার সামনে হাজির। আনায়া আর নিজের আবেগকে বেশি প্রশ্রয় দিলো না কিন্তু নিজেকে সবসময় থামিয়ে রাখতেও তার মন চাইছে না।

—“কিছু হয়নি, তোমাকে অনেক বেশি মিস করছিলাম। তাই একটু পাগলামি করে ফেলেছি। ”
রেহান আনায়ার স্বাভাবিক কথাগুলোও স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারলো না।
—“তুমি মিথ্যা বলছো, কি হয়েছে সত্যি করে বলো।”
আনায়া রেহানের কথার কোনো উত্তর দিলো না।সে ভাবছে সবকিছু রেহানকে ঠিক এই মূহুর্তে বলে দেওয়া ঠিক হবে কিনা। যদি সবকিছু বলে দেয় তবে রেহান কি ওকে ভুল বুঝবে। আনায়ার জানা নেই তবে রেহান নিশ্চয় তাকে ভুল বুঝবে না।কিন্তু এটা মোটেও সঠিক পরিস্থিতি নয়, এসব বলার জন্য। আনায়ার মাথাব্যথা যেন এসব চিন্তায় আরো বেড়ে গেলো। কোনোকিছু আর বুঝতে না পেরে বিরক্তিতে ফোনটাই বন্ধ করে রেখে দিলো। আর এদিকে রেহান আনায়ার অসম্পূর্ণ কথায় আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না। আনায়া পরমুহূর্তে আর ফোন ধরলো না দেখে চিন্তা তরতর করে বেড়ে চললো। দূরের দেশের দূরের শহরে বসে মাথাটা তার নানান চিন্তায় পুরো গুলিয়ে গেলো।

সেই ঘটনার প্রায় সাতদিন হতে চললো। এরমাঝে আনায়া একবারও অফিসে যায়নি সঙ্গে কেনীথের সাথে তার কোনো দেখা সাক্ষাৎও হয়নি। শুধু তাই নয়, নিজের যাবতীয় কাজকর্ম থেকেও অনেকটা গুটিয়ে নিয়ে ঘরবন্দী হয়ে আছে। প্রয়োজনেই শুধু নিজের রুম থেকে বের হয়। এদিকে তারেক কোনো কিছু সন্দেহ না করে, যেন আবার টেনশন না করে তাই মাঝেমধ্যে নিচে গিয়ে বাবার সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করে আসে।
তবে এর মাঝে আবার নতুন কান্ড করেছে সে। ঠোঁটের ক্ষতটা অনেক বেশি থাকায় সবসময়ই মাক্স পড়ে থাকতো। কিন্তু এমনি এমনি তো আর বাড়ির ভেতরে মাক্স পড়ে থাকা যায় না। সেজন্য সেইদিনই ভোর রাতে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা বরফ বের করে গণহারে খেয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই ছিলো হালকা ঠান্ডা লেগে গেলেই হবে। যাতে সবাইকে বলতে পারে তার ঠান্ডা লেগেছে তাই মাক্স পড়ে থাকে।

কিন্তু পরবতীতে বিষয়টি হলো তার ধারনার উল্টো। একটু আকটু ঠান্ডা থেকে সোজা তিনদিন একটানা জ্বর, কাশি, সর্দি লাগিয়ে বেহাল অবস্থা করেছে। আজ ঠোঁটের ক্ষত আর তার অসুস্থতা অনেকটাই কমে গিয়েছে। ঠোঁটে হালকা একটু দাগ এখনো স্পষ্ট তবে বিষয়টিকে সহজেই কেউ বুঝে উঠতে পারবে না।
আনায়া এই কয়েকদিন আর ভার্সিটিতে যায়নি। রাতের বেলায় চেয়ার টেবিলে বসে বসে পড়ালেখা করতে বসেছিলো কিন্তু কোনো মতেই পড়াশোনায় মন বসছে না। এদিকে এই কয়েকদিন ইচ্ছে করেই রেহানের সাথেও কোনো যোগাযোগ করেনি কারণ সে জানে, রেহান তার সাথে কথা বলতে না পেরে নিশ্চয় ইনায়ার কাছ থেকে সকল ইনফরমেশন নেওয়ার ট্রাই করেছে। এই কারণে ইনায়ার শত রিকুয়েষ্টেও সে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কোনো কথা বলেনি।

আনায়া ডেস্কের উপর মাথা দিয়ে আবোল তাবোল বলে যাচ্ছে। বিরবির করে কখনো সবাইকে, নয়তো কখনো নিজেকে গালাগালি করে যাচ্ছে। একটা সময় বিরক্তি নিয়ে বিরবির করে বললো,
—“উফ!!! বাবা যদি ফ্রিজটাকেও বাড়ি থেকে সরিয়ে দিতো তবে না ওমন আজব বুদ্ধি মাথায় আসতো না আজ আমার এমন অবস্থা হতো।”
আনায়া এমনিতে জ্বরের সমস্যা না থাকলেও হালকা ঠান্ডা আর কাশিতে প্রচন্ড বিরক্ত সে। আর আনায়াদের বাড়িতে একসময় সব ধরনেরই জিনিসপত্র ছিলো। কিন্তু কয়েকবছর আগে তারেকে বাজে স্বভাব মূলত জুয়ার খেলায় বাড়ির অর্ধেকের চেয়ে বেশি জিনিস সে ক্রমে ক্রমে শেষ করেছে। এখন যা যা আছে তা এক সময়ের লেটেস্ট মডেলের জিনিসপত্র হলেও এই সময়ে ওসব জিনিস বড্ড বেমানান সঙ্গে অনেক পুরোনো হয়ে গিয়েছে। কিছু কিছু জিনিস পত্র হয়েছে অকেজো। এই কারণেই আক্ষেপে তার বাবার প্রতি অমন কথা বললো৷

রাত তো অনেক গভীর কিন্তু আনায়ার চোখে ঘুম নেই। তবে অতিরিক্ত চিন্তার ফলে হঠাৎ মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গিয়েছে। আনায়া যেন এতে আরেকটু বিরক্ত হলো। একবার ফোন স্ক্রিনে সময়টা দেখে মাথা থেকে হাত নামিয়ে বাথরুম যাওয়ার উদ্দেশ্যে চেয়ারে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। রাত প্রায় সারে বারোটা। এই সময় হঠাৎ কেনো যেন গোসল করতে ইচ্ছে হলো। যদিও আজ তেমন গরম পড়েনি তাই তবুও আনায়ার অস্থির লাগছে।
কিন্তু সে তার সিন্ধান্ত পাল্টে ফেললো। একে তো তার ঠান্ডা কমেইনি ঠিকমত এখন যদি আবার এতো রাতে গোসল করে তো আবার অসুখ তাকে কঠিন ভাবে ধরে বসবে। এই ভেবে যাস্ট চোখে মুখে হালকা পানি দিতে বাথরুমে চলে গেলো।

রুমের দরজা খানা বন্ধ রইলেও জালানাটা সম্পূর্ণ খোলা। এই রুমের জানালার একটি বিশেষজ্ঞ হলো রুমের সবচেয়ে বড় জানালায় কোনো গ্রিল নেই। যেটাই আনায়া একদম খুলে রেখে দিয়েছে বাহির থেকে যেন বাতাস প্রবেশ করতে পারে তাই। আনায়া যেহেতু কিছুদিন ধরেই উপর তলাতেই রইছে তাই জানালায় শুধু একটা সাদা পর্দা লাগিয়ে রেখেছে।
আনায়া চোখেমুখে পানি দিতে গিয়ে আবার মাথাতেও কিছুক্ষণ পানি ঢালে। যেকারণে বাথরুমে তার প্রায় অনেকক্ষণ সময়ই লেগে যায়। এরপর ভেজা চুলগুলো টাওয়াল দিয়ে পেঁচিয়ে রুমে এসে চুলগুলোকে ঠিকমতো না শুকিয়েই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে থাকে।
প্রথমে জানালাটা খোলা রাখতে চেয়েছিলো পরবর্তীতে ভাবলো শুধু শুধু এই জালানা খুলে রেগে লাভ নেই। বিপদ আপদ কখন হয় কে জানে। এই ভেবে জালানা বন্ধ করে রুমের লাইটটা বন্ধ করে দিয়ে সোজা বিছানায় শুয়ে পড়লো।

—“আ….না….য়া! ”
বিছানায় শুয়ে যেই না একটু চোখ বন্ধ করেছে ওমনি এক গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে তার চোখজোড়া বিস্মিত রুপে খুলে গেলো। নিজেকে বুঝাতে চাইলো সে যা শুনলো এটা তার ভ্রম নাকি সত্যি। কিছুক্ষণ স্তব্ধ চোখে অন্ধকারে চোখ খুলে রাখার পর আবারও নিজের চোখজোড়া বন্ধ করতেই শুনতে পেলো,
—-“আ….না…য়া!!!
খাটের পাশে রাখা ছোট্ট একটা টেবিল ল্যাম্পটা ত্বরিত জ্বালিয়ে দিলো। মূহুর্তেই চারপাশে খুব সামান্য আলোয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আলোকিত হলো। হঠাৎ আনায়ার গলা শুকিয়ে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে নেমে ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটটা অন করে রুমের ভেতর ধীরে ধীরে হাটতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো আওয়াজটা ঠিক কোথায় থেকে এসেছে।
—“রুমে কি কেউ আছে? ”

আনায়া প্রথমে কাঁপা কাঁপা সুরে বলার পর ভাবলো রুমে ইনায়া এসেছে কিনা। কিন্তু ও কিভাবে আসবে, দরজা জানালা তো সব বন্ধ। আনায়া কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। পরক্ষণেই মনে হলো আগে রুমের লাইটটা অন করাটা জরুরি।
মনের মধ্যে এমনিতেই হুট করে ভয়ের আভাস ঢুকে গিয়েছে। আর দেরী না করে আগে লাইট জ্বালানোটা বেশি জরুরি। আনায়া তাড়াহুড়ো করে সুইচবোর্ডের কাছে যেতে নিলেই হঠাৎ পেছন থেকে এক শক্তপোক্ত হাত তার কোমড় কেউ জড়িয়ে ধরতেই আনায়ার দম বন্ধ হয়ে গেলো।
মূহুর্তেই খানিকটা কাঁপতে শুরু করলো। আর যখনই কোনো এক অনাকাঙ্ক্ষিত নিশ্বাস তার ঘাড়ের কাছে ক্রমাগত অগ্রসর হতে নিলো ; তা অনুভব করেই আনায়া চিৎকারের জন্য প্রস্তুতি নিলো। কিন্তু তা আর সম্ভব হলো না, বরং এর আগেই তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি একহাতে আনায়ার মুখ শক্ত করে চেপে ধরলো।
এরপর আনায়া ঘাড়ের কাছে নিজের চোয়াল রেখে মুখটা আনায়ার কানের কাছে নিয়ে হাস্কি কন্ঠেস্বরে কেউ ফিসফিস করে বলে উঠলো,

—“তুমি যে এতোটা ভীতু তা জানতাম না বউপাখি!”
হঠাৎ পরিচিত কন্ঠস্বরে আনায়ার টনক নড়ে উঠলো। চোখেমুখে তার বিস্মিয়। আদোও সে যা ভাবছে তা কি সত্যিই?
আনায়া শুকিয় যাওয়া কাঠকাঠ গলায় কিছু বলতে চাইলে দেখলো কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না। তার আগেই তার পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে রাখা ব্যক্তিটি আনায়ার মুখ থেকে হাত সরিয়ে আবারও ফিসফিস করে ইনোসেন্ট সুরে বললো,
—“এতো রাগ কেউ করে নাকি? পুরো সপ্তাহ ধরে একবারও যোগাযোগ করোনি। আমার কি অবস্থা করেছো তা তুমি জানো?
এবার আনায়ার মুখ ফসকে অস্পষ্ট সুরে বেড়িয়ে এলো,
—“রেহান……!”
—“হুম! শুধু আমার বউ পাখির রাগ ভাঙ্গাতে ওতো দূর হতে চলে এসেছি।…. আচ্ছা, তুমি কি অন্য কাউকে আশা করছিলে?”

আনায়া কেশে উঠলো, ত্বরিত পিছনে ঘুরে তাকানোর জন্য নড়েচড়ে উঠলে রেহান আর বাঁধা দিলো না। তবে আনায়া তার দিকে ফিরতেই সে এবার দুইহাত দিয়ে আনায়ার কোমড় পেঁচিয়ে ধরলো।
কফি কালাদের টিশার্টের উপর ওফ হোয়াইট কালারের গেঞ্জি। সঙ্গে কালো রংএর প্যান্ট। চুল গুলো এলোমেলো করে ব্যাক ব্রাশ করা। মনে হচ্ছে সুযোগের সঠিক সন্ধান পেয়েই তড়িঘড়ি করে চলে এসেছে।
কিন্তু চোখেমুখে তার অবাধ প্রফুল্লতা। যেন সব সুখ শান্তি এসে তাকে ঘিরে ধরেছে। উঁচালম্বা বলিষ্ঠ দেহের বাঙ্গালী পুরুষের মতো চেহারার গঠন আর ফর্সা তো সে আগে থেকেই ছিলো। কিন্তু এখন যেন, বিদেশের হাওয়ায় আগের চেয়ে যেন আরেকটু ফর্সা হয়ে ফিরেছে।
এমন অপ্রত্যাশিত প্রিয় মানুষকে দেখে আনায়া যেমন বিস্মিত তেমনি তার বাঁধ ভাঙ্গা খুশির দরূন চোখজুরে পানি ছলছল করছে। তখনই রেহান অপ্রস্তুত হয়ে তড়িঘড়ি করে বলতে লাগলো,

—“কাঁদছো নাকি? আমি এসেছি, তুমি খুশি হওনি। নাকি ফিরতে এতো দেরী করে ফেলেছি তাই……সরি, সরি, আমি ফিরতে অনেক দেরী করে ফেলেছি বোধহয়। আমার আরো আগে…”
রেহানের বাকি কথাটুকু আর সম্পূর্ণ হলো না তার আগেই আনায়া তাকে শক্ত করে দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো অন্যদিকে কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর রেহানও মুচকি হেসে বললো,
—“মিস করছিলে ঠিক আছে, কিন্তু এভাবে কাঁদে কে শুনি। এসব কান্নাকাটি বাদ দেও, একে তো নিজেই ইচ্ছে করে যোগাযোগ করোনি আর এখন……
আনায়া এবার যেন আরো শক্ত করে চেপে ধরে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো। অনেকক্ষণ হওয়ার পরও যখন আনায় রেহানের কোনো কথাতেই কান্না থামিয়ে মুখ তুলে তার দিকে তাকাতে রাজি হলো না তখন রেহান ফিসফিস করে আনায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

—“বউপাখি! তুমি কিন্তু এখনো আমার বউ হওনি। এতো লং ডিস্টেন্সে থাকার পর এখন যদি বিয়ের আগে এসব করে ফেলো তবে বিষয়টি কেমন যেন হয়ে না? ”
রেহানের কথা শুনে আনায়ার যেন এবার ধ্যান ভাঙ্গলো। পাগলের মতো এটা এসব কি করতে গিয়েছে। আনায়া ত্বরিত রেহানের থেকে খানিকটা সরে গিয়ে চোখ মুছে আধ ভেজা সুরে বলতে লাগলো,
—“তুমি… এখানে কবে এসেছো। আমাকে বলোনি কেনো। ”
আনায়ার অবস্থা দেখে রেহান আবারও ওর কাছে গিয়ে দু’হাতে আনায়ার চোখমুখ মুখে দিতে দিতে মুচকি হেসে বললো,
—“বলার সুযোগটা দিয়েছিলে তুমি। ফোন বন্ধ করে বসে আছো। এই কয়েকদিন ইনায়ার কাছ থেকেই যা একটু খোঁজ খবর নিতে পেরেছি। ও যাই হোক, আমি আজই এসেছি। বাড়িতে এসে পৌঁছাতে প্রায় রাত নয়টা বেজে গিয়েছে। কিন্তু আজই মা আর বাড়ি থেকে বের হতে দিতে চাইতো না বিধায় চোরের মতো বাড়ি থেকে পালিয়ে রাতের বেলায় এখানে আসতে হলো।”
আনায়া বিস্মিত নজরে তাকিয়ে বললো,
—“তুমি এতোটা পথ জার্নি করে এসে, বাড়িতে রেস্ট না করে এখানে এসেছো কেনো? ”
—“আবার কেনো? যার জন্য এসেছি তার সাথে দেখা করবো না! এখন এখানে না আসলে এমনিতেও আজ রাতে আর ঘুম হতো না।”
—“কিন্তু তুমি এসেছো কিভাবে? দরজা জানালা তো বন্ধ ছিলো।”
রেহান মুচকি হেসে বললো,

—“তুমি যখন বাথরুমে গিয়েছিলে তখন। আজ ইনায়াকে মইয়ের ব্যবস্থা করে রাখতে বলেছিলাম। তো ও তোমার জানালার পাশে মই রেখে দিয়েছিলো আর বাকি আমাকেই কষ্ট করে আসতে হলো। ”
—“তার মানে ওই অদ্ভুত ভাবে আমার নাম ধরে তুমিই ডাকছিলে? ”
—“ইয়েস ম্যাম, তোমাকে ভয় দেখাতে গিয়ে খাটের নিচে লুকাতে হয়েছে আমায়। আচ্ছা এসব এখন বাদ দেও, আসল কথা বলো। তোমার হঠাৎ এমন চেঞ্জের কারণ কি? ”
আনায়া রেহানের প্রশ্ন শুনে চুপ হয়ে গেলো। ও এখন ওকে কি বলবে। এরই মাঝে রেহান রুমের লাইট অন করে দিয়ে এসে আবারও আনায়ার সামনে এসে দাঁড়ালো। কিন্তু আনায়া কিছু বলার জন্য ঠোঁট ভিজিয়ে নিতে লাগলে রেহান হঠাৎ ওর মুখের কাছে অগ্রসর হয়ে কপাল কুঁচকে বললো,
—“তোমার ঠোঁট এটা কিসের দাগ?”

এই কথা শুনে যেন আনায়ার শ্বাস নেওয়াই বন্ধ হয়ে গেলো। রেহানকে কি সত্যি কথা বলে দেবে। ও তবে কি ভাববে। আচ্ছা রেহানের ভাবার বিষয়টি না হয় বাদ দেওয়া যাক, ও রেহানকে ওসব বলবে কি করে।আনায়া বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য রেহানের থেকে দূরে সরে গিয়ে বিছানায় বসতে বসতে বললো,
—“ওই…টেবিলে বসে মাথা রেখে গড়াগড়ি করে গিয়ে একদিন হুট করে কেটে গিয়েছে।”
এটা শুনে রেহান অবাক সুরে আনায়া পাশে বিছানায় বসে বললো,
—“এ্যাহ….. এটা আবার কেমন কথা।”
রেহানকে এহেন চেহারায় তাকিয়ে থাকতে দেখে আনায়া অপ্রস্তুত সুরে বললো,
—“এটা এমনই কথা! ”
রেহান আনায়ার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পুনোরায় হেসে ফেললো।

—” মানুষ টেবিলে বসে পড়াশোনা করে আর তুমি কি যুদ্ধ করো নাকি।”
পরোক্ষণেই কপাল কুঁচকে বললো,
—“তোমার তো নাকি ঠান্ডা লেগেছে কিন্তু তোমার চুল কেনো ভেজা। ”
কথা বলতে বলতেই রেহান আনায়ার চুল ধরতেই বুঝতে পারলো চুল সত্যি সত্যিই ভেজা। আনায়া অপ্রস্তুত হয়ে বললো,
—“মাথা ব্যাথা করছিলো,চোখমুখে পানি দিতে গিয়ে মাথাতেও পানি ঢেলেছি। ”
—“পানি ঢেলেছো ভালো কথা কিন্তু চুল গুলো না শুকালে মাথা ব্যাথা কমবে নাকি বাড়বে? এমনিতেই ঠান্ডা লেগেছে তার উপর আবার…..এমন পাকনামি করতে কে বলে শুনি?”
এই বলেই কিছুটা বিরক্তি নিয়ে আনায়ার মাথার পেছনে হালকা চর দিতেই আনায়া বললো,
—“রেহান….!”
—“চুপ থাকো তুমি! একমিনিট ওয়েট করো।”

এই বলেই রেহান আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো চেয়ার উপর সাদা টাওয়ালটা আনায়া ছড়িয়ে রেখে দিয়েছে। ত্বরিত তা নিয়ে এসে বিছানায় আনায়ার পেছনে হাঁটু গেড়ে বসলো চুল মুছে দেবে বলে।
—“আরে কি করছো! প্রয়োজন নেই তো, আমি চুল অলরেডি মুছেছি।”
আনায়া মাথা ঘুরিয়ে কথা গুলো বলতে গেলে রেহান দুহাত দিয়ে আনায়ার মাথার দুপাশ ধরে সোজা করে বললো,
—“একদম চুপ! অলওয়েজ পাকনামি তোমার না করলেই নয়। দাঁড়াও না, বিয়েটা যাস্ট একবার করে নেই তারপর তোমাকে কিভাবে ঠিক করতে হয় তা আমার জানা আছে। ”
রেহানের কথা শুনে আনায়া হেসে ফেললো। অন্যদিকে আবার রেহানের কাজেও বাঁধা দিলো না আর রেহানও খুব যত্ন নিয়ে আনায়ার চুল গুলো মুছে দিতে লাগলো।

—“ওহে মিস্টার! এতোদিন পর এসেই সোজা হুমকি ধমকি দিয়ে দিচ্ছেন। তা বিয়ে করতে অনেক দেরী, এতোদিন না হয় আমি অগোছালোই থাকি…. এই, এই চিঠিতে তো বলছিলে অগোছালো তুমি। এখন আমি তুমি দুজনেই যদি অগোছালো হই তবে আমরা একে অপরকে ঠিক করবো কিভাবে?”
—“আরে তাই তো! আমরা নিজেরা ঠিক হতে না পারলে আমাদের ছেলে-মেয়ে গুলোতো আরো বেশি অগোছালো হয়ে যাবে। এরপর ওদের ছেলেমেয়েও এমন হবে। উফ, তাহলে তো মহা মুশকিল।”
আনায়া এবার কপাল কুঁচকে বললো,
—“এ্যাহ! বিয়েই হলো না তার আগেই বাচ্চা কাচ্চা, নাতিপুতিদের কাহিনি শুরু করে দিয়েছে।”
—“হয়নি তো কি হয়েছে। একবার বিয়ে হলে এসব হতে আর কতদিন। এই শুনো, আমি কিন্তু এসবে বেশি দেরী করবো না। ”

রেহানের বলা এহেন সব কথাবার্তা শুনে আনায়ার কাশি উঠে গেলো।
—“কি সব কথাবার্তা, বন্ধ করো এসব। আচ্ছা তুমি এটা বলো, তুমি দেশে এসেছো কি সত্যি শুধু আমার জন্যই,নাকি অন্য কিছু?”
—“তোমার কি মনে হয়? ”
—“আমার তো মনে হয় না, তুমি শুধু আমার রাগ ভাঙ্গাতে আমেরিকা থেকে কাজকর্ম সব ফেলে রেখে বাংলাদেশে এসেছো। আর যদি এমনটা হয় তবে তুমি সত্যিই একটা পাগল। ”
—-“তবে আমি সত্যিই পাগল। আমি আমার বউ পাখির জন্য পাগল।”
আনায়া এবার বিস্মিত চোখে পিছনে ঘুরে তাকিয়ে বললো,
—“তুমি সত্যিই…?”
—“হুম, তবে এছাড়া অবশ্য স্পেশাল একটা কারণ আছে কিন্তু সেটা মূলত তোমার জন্যই।”
আনায়া জিজ্ঞেসা সূচক ভাবে তাকালে রেহান বললো,
—“সেটা না হয় কালই জানতে পারবে!”

পা গুলো ঝুলিয়ে বিছানার দুইপ্রান্তে দুজনে শুয়ে শুনে নানান গল্পগুজব করে যাচ্ছে। সঙ্গে সময়ের কাটাও পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। একদম মধ্যে রাত যাকে বলে। এরই মাঝে হঠাৎ রেহানের কি যেন মনে পড়ায় চট করে উঠে বসে পড়লো। এটা দেখে আনায়াও ত্বড়ির বসে গিয়ে বললো,
—“কি হয়েছে? ”
রেহান কিছু বললো না বরং নিচে বসে খাটের নিচে উঁকি দিয়ে একটা ছোট শপিং ব্যাগ বের করে আনলো। আনায়া সেটা দেখে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রেহান একটি বক্স বের করে তা আনায়ার সামনে খুলে ধরতেই বললো,
—“দেখো তো পছন্দ হয় কিনা? ”
সোনার চেইনের সঙ্গে খুব ছোট সাইজের একটি ঝিনুকে ডিজাইন করা ডায়মন্ডের লকেট। সাধারণ এসব জিনিস দেখতে এমনতেই সুন্দর হয় যা সহজেই যে কারো পছন্দ হয়ে যাবে। আনায়ারও তার ব্যতীক্রম হলো না। তবে কিছুটা বিস্মিত হয়ে রেহানের দিকে তাকিয়ে বললো,

—“এটা…
—-“তোমার জন্য।…বেশি কথা বলবে না, পছন্দ হয়েছে কিনা শুধু এইটুকু বলো।”
আনায়া জানে এখন আর কিছু বলে লাভ নাই, তাই ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
—“হুম! ”
এটা শুনে রেহান মুচকি হেসে বললো,
—“যাক! তাহলে আমার চয়েস এতোটাও খারাপ না।”
এই বলেই আবারও আনায়ার উদ্দেশ্যে বললো,
—“আমি পড়িয়ে দেবো নাকি… তুমি..!”
আনায়া ত্বরিত বলে উঠলো,
—“তুমি…না মানে তুমিই দেও আরকি!”
রেহান আনায়ার দিকে এক ভ্রু উঁচিয়ে হেসে বললো,
—“ওক্কে মেডাম! ”
এই বলেই নিজ হাতে খুব স্বাভাবিক ভাবেই আনায়ার পেছনে গিয়ে চুল গুলো সরিয়ে চেইনটা পড়িয়ে দিলো। তবে পেছন থেকে আরো একটু চেইনের অংশ দেখে আনায়ার উদ্দেশ্যে বললো,
—“এটা কি? তুমি কি আরো একটা চেইন পড়ে রেখেছো নাকি!”
আনায়ার হঠাৎ স্টার শেইপের সেই চেইনের কথা মনে পড়তেই বললো,
—“ওহ হ্যাঁ,আচ্ছা দাঁড়াও ওটা আমি খুলে ফেলছি।”
আনায়া সেই চেইনটা খুলে ফেলতে চাইলে রেহান তাতে বাঁধা দিয়ে বললো,
—-“আরে দুটোই থাক!খোলার কি প্রয়োজন।”
আনায়া রেহানের দিকে তাকিয়ে বললো,
—“দুটোই রাখবো? কেমন লাগে না?”
—“তোমার অসুবিধা না হলেই হলো। বাকিটা তোমার ইচ্ছে।”
—“আচ্ছা তবে দুটোই থাক!”

এখন সমটা রেহানের যাওয়ার। যদিও তার যেতে মোটেও ইচ্ছে করছে না তবুও এমন ছেলেমানুষী করে লাভ নেই। এমনিতেও আনায়া থাকতে দেবে না সঙ্গে আবার কাল অনেক কাজ। ভোর হওয়ার আগে নিজের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছাতে হবে। তার মা কোনো ভাবো বুঝে গেলে কাহিনি খতম। এমনিতেই বাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই বাড়ি থেকে একপ্রকার পালিয়ে এসেছে আর এখন তার অনেকটা ক্লান্তও লাগছে।
রেহান আনায়া কাছে থেকে সকল বিদায়, কথাবার্তা বলা শেষে জানালা দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে যাবে তার আগেই হুট করে আবার পিছনে ফিরে আনায়ার উদ্দেশ্যে বললো,

—“একটা কথা বলার ছিলো।”
—“সারারাত তো কথাই বললে, আবার কি কথা।”
রেহান হুট করেই আনায়ার হাত দুটো ধরে খানিকটা অপ্রস্তুত সুরে বললো,
—“আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না তো?”
আনায়া রেহানের কথা শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে থাকার পর বললো,
—“তুমি এমনটা চিঠিতেও লিখেছিলে। বারবার এমন কেনো বলছো? ”
রেহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে আনায়ার চোখে চোখ রেখে বললো,

—” আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না আনায়া। তুমি হীনা জীবন আমার কাছে বিষাক্তময়, দমবন্ধকর। এসব আমার ভাবতেই নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। তোমার কাছে আমার জীবনের একটাই অনুরোধ, প্লিজ ভুলেও আমাকে ছেড়ে যেও না। তুমি আমার যেভাবে শুধরে যেতে বলবে আমি ঠিক ওভাবেই নিজেকে শুধরে নেবো তবুও তুৃমি…”
আনায়া রেহানকে এমন অস্থির হতে দেখে ত্বরিত নিজের হাত দিয়ে ওর হাতের মুঠো শক্ত করে বললো,
—“রেহান প্লিজ! এমনটা বলে আমাকে কষ্ট দিও না। আমার জীবনের অর্ধেকটা শুধু আমি তোমার জন্যই উৎসর্গ করেছি। তুমি ছাড়া আমার বেঁচে থাকা, না থাকা সমান। তোমাকে ছেড়ে গেলে আমার জীবন এমনিতেই নরকে পরিণত হবে। আমি কোনোদিনও এমন করবো না।”
আনায়ার কথায় রেহান নিজেকে তটস্থ করলো। এমনিতেই আনায়ার চোখে জল ছলছল করছে। কখন যে বর্ষণ হয়ে যায় কে জানে। যাওয়ার আগে এমন সিচুয়েশন ক্রিয়েট করে পুরো গাধামি কাজকর্ম হয়ে গেলো। রেহান ত্বরিত মুচকি হেসে বললো,

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ১৭

—“আরে আমি তো যাস্ট এমনিই বলছিলাম। তুমি থাকো, কাল তোমার জন্য একটা বড় সারপ্রাইজ রয়েছে, রেডি থেকো।”
এই বলেই আর একমুহূর্তও দেরী না করে ত্বরিত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো। পুরোটা সময় আনায়া জানালার পাশে দাঁড়িয়ে রেহানের কার্যকলাপ দেখলো। একটা সময় পর রেহান যখন বাড়ির সীমান্ত থেকে দাঁড়িয়ে অদৃশ্য হলো তখন আনায়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জানালাটা বন্ধ ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় এলো। তবে হুট করেই নিজের পা জোড়া থামিয়ে ওখানে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। এরপর তার জামার কারণে ঢেকে যাওয়া লকেট দুটোকে একসাথে বের করে কিছুক্ষণ অদ্ভুত নজরে তাকিয়ে থাকার পর অস্ফুট স্বরে বললো,
—“একই গলায় দুটো চেইন একসাথে?”

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ১৯