তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৪
তানিশা সুলতানা
“ভাই তোরা যাবি না?
টিশার্ট বদলে শার্ট পড়ে গিয়েছে সিয়াম। হাতের ব্যন্ডেজ এখনো খোলা হয় নি। সেটার ওপরে পলিথিন পেঁচিয়েছে যাতে না ভিজে যায়। ভাঙাচোরা একখানা ছাতাও জোগাড় করে ফেলেছে ইতোমধ্যেই।
সব শেষে বাকি বন্ধুদের নিকটে এসে বলে
” এই আবরার সুইমিং পুলে বাসর করবে আজকে। তোরা যাবি না?
আমান আহাদ কম্বল মুভি দিয়ে শুয়ে ফোন দেখছে। ইভান কথা বলছে একটা মেয়ের সঙ্গে। কিছুক্ষণ আগেই রং নাম্বার থেকে মিসকল এসেছিলো। দয়ালু ইভান কল ব্যাক করেছে। ধরেছে মিষ্টি কন্ঠের এক কন্যা। সেই থেকে মেয়েটির নাম পরিচয় জানার উসিলায় কথা বলেই চলেছে।
সিয়ামের কথা শুনে ইভান নাক মুখ কুঁচকে ফেলে। কল খানা হোল্ড করে বলে
“ছিহহহ সিয়াম ছিহহ
তুই এতোটাই অশ্লীল হয়ে গিয়েছিস যে মা বাবার বাসর দেখতে যাবি?
আমান হাই তুলতে তুলতে বলে
” আমি যেতাম ভাই। কিন্তু বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাসর দেখলে নিজেরও ক্রেভিং উঠবে। তখন কি হবে?
আহাদ বলে
“মানষের বাসর দেখে কি হবে? নিজে তো এখন পর্যন্ত একটা চুমুও খেতে পারলাম না।
সিয়াম হতাশ হয়। এরকম আনরোমান্টিক বন্ধু গুলোই কপালে জুটেছিলো?
এদের দিয়ে কি হবে? কোনো কাজের না।
মুখ বাঁকায় সিয়াম। বলে
” ভাই তোরা মেয়ে পাবি কি করে? রোমান্টিক শব্দের ক ও তো বুঝিস না।
ইভান চট করেই বলে
“শালা আগে বানান শেখ। রোমান্টিক শব্দে ক নেই।
” তোর মুখটা বন্ধ রাখ। জ্ঞানী ব্যক্তি কথা বলতে শুরু করলে কথার মধ্যে নাড়িভুড়ি ঢোকানো ব্যাড মেনার্স।
আমান বলে
“ওয়েট এ্যা মিনিট। এখানে জ্ঞানী কে? আমি সহ তোরা সবাই তো মূর্খদের বাপ।
হতাশ সিয়ামের বিরক্তি বেড়ে যায়৷ ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে
” জীবনেও বিয়ে হবে না তোদের। বাচ্চার মুখ দেখার সৌভাগ্য তোদের নেই। কলিকাতা হারবাল ছাড়া তোরা অচল।
শালার দল
বলেই সে প্রস্থান করে। যাবে না আবরারের বাসর দেখতে। মীরজাফরের দল মনটাই ভেঙে দিলো। কোথায় ভেবেছিলো সবাই মিলে যাবে। চুপিচুপি দেখবে আবরার তাসনিন কিভাবে রোমাঞ্চ করে?
কোথা থেকে শুরু করে।।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কোমর ওবদি নীল রংয়ের পানি। অবশ্য পানি নীল নয় গোটা পুলটাই নীল রং দ্বারা সাজানো হয়েছে বিধায় পানিও নীল দেখাচ্ছে।
আবরারের পরণের সাদা রংয়ের শার্ট খানা ভিজে গায়ের সঙ্গে লেপ্টে গিয়েছে। বড় বড় চুল গুলো ভিজে জবুথবু হয়ে কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। গোলাপি অধর জোড়ায় ফোঁটা ফোঁটা পানি।
আদ্রিতা শুকনো ঢোক গিলে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আবরারের মুখ পানে।
ইচ্ছে করে গভীর চুমু এঁকে দিতে ওই অধর জোড়ায়। শার্টের বোতাম খুলে উন্মুক্ত বুকে ঠোঁট ডুবিয়ে দিতে। বড় বড় চুল গুলো মুঠো করে ধরে লম্বা মানবকে নিজের দিকে ঝুকাতে।
কিন্তু পারছে না। মনের মধ্যে পুষে রাখা অসংযত রাগ বাঁধা দিচ্ছে। তীব্র ধিক্কার জানিয়ে বলছে “আদ্রিতা এই মানুষটিকে এড়িয়ে চল। তাকে কড়া কথা শুনিয়ে চলে যাহহ নিজ কক্ষে। থাকিস না তার সামনে। সে কালো জাদু জানে। এখুনি তোকে বশ করে নিবে।
আদ্রিতা নিজের মনের কথা শোনার আগেই বোধহয় কালো জাদু করে ফেললো আবরার।
উন্মুক্ত কোমরে হাতের বিচরণ গাড়ো হয়। কোমরের এক পাশ হতে অন্য পাশে বিচরণ করে। পরপরই বড্ড আয়েশের সঙ্গে হাতের বিচরণ ওপরে উঠতে থাকে।
এবং হাঙ্কি স্বরে বলে
” পাখি
ক্যান আই কিস ইউ?
আই ক্যান নট
বাকিটা শেষ করার আগেই অবিশ্বাস্য এক কান্ড ঘটিয়ে ফেলে আদ্রিতা। আবরারের শার্টের কলার ধরে টেনে একটুখানি ঝুকিয়ে নেয় তারপর তার পায়ের ওপর পা দিয়ে নিজের উচ্চতা একটুখানি বাড়িয়ে নেয় এবং কালো রংয়ের ছোট ছোট ঘন দাঁড়ির মাঝে থাকা গোলাপি অধর জোড়ায় নিজের অধর ছোঁয়ায়।
ব্যাসস এই টুকুই।
এর বেশি কিছু করার সাহস বা শক্তি কোনোটাই নেই আদ্রিতার।
আবরার হাতে। হাতের বাঁধন শক্ত করে আদ্রিতাকে শূন্যে তুলে নেয়।
ফিসফিসিয়ে বলে
“গুড জব পাখি
ডার্ক রোমাঞ্চ শিখছো তাহলে? এ’ম প্রাইড অফ ইউ।
আদ্রিতা লজ্জা পেলো বোধহয়। আঁখি পল্লব বন্ধ করে ফেলে। আটও একটা টান দেয় আবরারের শার্টের কলারে।
তারপর দুজন হারিয়ে যায় অধরসুধা প্রাণ করার এক অদ্ভুত শিহরণে।
বৃষ্টির স্রোত বাড়তে থাকে। সেই সাথে বাড়তে থাকে আবরার আদ্রিতার প্রণয়ের গভীরতা। বরাবরই আবরার তাসনিন বেপরোয়া কিন্তু আজকে আদ্রিতা চৌধুরীও একটু বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
তাল মেলাচ্ছে প্রাণ প্রিয় স্বামীর পাগলামিতে।
আবরার যখনই আদ্রিতার টপস খুলতে উদ্ধত হয়। তখনই আদ্রিতা হুশ ফেরে। আতঙ্কিত নয়নে আবরারের পানে তাকিয়ে বলে
” কেউ দেখে ফেলবে।
বেপরোয়া আবরারের সেসব শোনার সময় নেই। সে নিজ কাজে মত্ত হতে উদ্ধৃত। এই পর্যায়ে আদ্রিতা বলে
“আমার রুমে চলুন প্লিজজ। ওই তো রুম।
আবরার ভ্রু কুচকে তাকায় আদ্রিতার মুখ পানে। তারপর শব্দ করে চুমু খায় ঠোঁটে। পরপরই কোলে তুলে নেয়। রুমের দিকে পা বাড়িয়ে বলে
” ওকেহহ পাখি
একটু খুশি হয় আদ্রিতা। মাথা রাখে আবরারের বুকে।
সুইমিং পুলে সাথেই আদ্রিতার কক্ষ। কক্ষে ঢুকে পূণরায় বেপরোয়া হয় আবরার। আদ্রিতার নরম তুলতুলে খাট খানায় শুয়িয়ে দেয় আদ্রিতাকে। পরপরই নিজের শার্ট খুলে ফেলে। এবং আদ্রিতার টপস এ হাত দেয়। আদ্রিতা নিজেও সাহায্য করে টপস খুলতে। তারপর আবরার তার পাখির ছোট্ট দেহখানায় নিজের রাজত্ব চালাতে থাকে বেপরোয়া ভঙ্গিমায়।
ব্যথায় জর্জরিত আদ্রিতা আর্তনাদ করে উঠছে বারংবার। কখনো দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নেওয়াী চেষ্টা করছে। আবরার জোরে জোরে শ্বাস টানতে টানতে একটু থামে। আদ্রিতার ক্লান্ত মুখ পানে তাকিয়ে বলে
“থেমে যাবো পাখি?
ব্যাথা পাচ্ছো?
আদ্রিতা আবরারের চুলের ভাজে হাত দিয়ে আশকারা দেয়।
বৃষ্টির স্রোত কমে এসেছে। সেই সাথে ক্লান্ত দুটো মানুষ একে-অপরের সঙ্গে লেপ্টে শুয়ে আছে। এতোক্ষণ যেখানে ঘূর্ণিঝড় চলছিলো এখন সেখানে নিরবতা চলছে।
আদ্রিতা আবরারের চুলের ভাজে হাত বুলাতে বুলাতে বলে
“আবরার আমি কখনোই আম্মু আব্বুকে এক সাথে সুখে সংসার করতে দেখি নি। এক টেবিলে বসে খাবার খাই নি। কখনোই তিনজন এক সাথে ঘুরতে যাই নি৷
এগুলো আমার অপূর্ণ ইচ্ছে।
কিন্তু এখানে আসার পরে ইচ্ছে গুলো পূরণ গিয়েছে৷
আব্বু ভীষণ ভালো আছে। ওই আন্টি আর তার বাচ্চাদের সঙ্গে জি সুন্দর সময় কাটায়। দেখতে ভীষণ ভালো লাগে।
আবরার শুনলো কি কথা কথা?
সে আদ্রিতার বুকে ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে।
আদ্রিতা পূণরায় আবার বলে ওঠে
” ওদের কিছু করবেন না আবরার। আমি মাফ করে দিয়েছি আপনিও মাফ করুন।
এবার আবরার জবাব দেয়
“নো চান্স
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৩
আবরার তাসনিন মাফ করতে জানে না।
আদ্রিতা আবরারের দুই গালে হাত রেখে বলে
” আমার কসম আবরার। ওদের ছেড়ে দিন। আপনি তো শুধু ধ্বংস করতে জানেন। গড়তে জানেন না। আমার কাছে আসতে হলে ওদের ক্ষমা করতে হবে।
আবরার উঠে পড়ে, ফ্লোর হতে নিজের শার্ট খুঁজে সেটা গায়ে জড়িয়ে বলে
” আমি আবরার তাসনিন সজ্ঞানে তোকে হৃদয় থেকে সরিয়ে দিলাম। নাহহ তোর পিছু নিবো আর তোর কাছে আসবো। আজকের পর থেকে তুই শুধু আমার ধ্বংস লীলা দেখবি। আমাকে দেখার সৌভাগ্য তোর হবে না।
চলে যায় আবরার। একবারও পেছন ফিরে তাকায় না। আদ্রিতাও ডাকে না। শুধু দেখতে থাকে তার চলে যাওয়া।