তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৪ (২)
তানিশা সুলতানা
মনের দুঃখে বৃষ্টির মধ্যে বসে আছে সিয়াম। জীবনডা কেমন ছেঁড়া কাগজের মতো হয়ে গেছে। কেউ মূল্য দেয় না।
দুঃখে কাঁদতে ইচ্ছে করে তার। কিন্তু চোখ দুটোও বেইমানি করে। পানি আসে না।
হঠাৎ সিয়াম এর নজর পড়ে পাশের বিল্ডিং এ। একটা মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। মেয়েটার মুখ খানা বড্ড পরিচিত। ইশারা তাসমিন নাম তার৷ সিয়াম এর ফেসবুক ফ্রেন্ড।
ইশারার পাশে আরও একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।
মুহুর্তেই সিয়াম এর মুড ভালো হয়ে যায়। চটজলদি উঠে পড়ে। দৌড়ে রুমে যায়৷ দেখে ইভান এখনো কথা বলছে। দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে ফেলে এবং বলে
“ইভান তুই যার কথা বলছিস সেই মেয়েটাকে আমি চিনি ভাই।
মুহুর্তেই ফোন খানা মিউট করে ইভান। আমান আহাদও মনোযোগ দিয়েছে সিয়ামের পানে।
” দোস্ত তোরাহহ দেখতে চাইলে তাড়াতাড়ি আয়।
বলেই সিয়াম আবারও নিজের জায়গায় চলে যায়। আর পেছন পেছন তিন বলদও দৌড় দেয়।
ইভান কল কেটেছে মেয়েটাও কান থেকে ফোন নামিয়েছে। ভীষণ সুন্দর দেখতে মেয়েটা। ইভান আবার কল করে মেয়েটা আবার ফোন কানে নেয়।
তার মানে এই মেয়েই ইভানের সাথে এতোক্ষণ যাবত কথা বলছে।
আমান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“ভাই তোদের দুই পরির ওখানে আমাদের পরি কোথায়?
আহাদ হতাশার স্বরে বলে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” মনে হয় জন্ম নিতে ভুলে গেছে।
চারজনই ভিজে জবুথবু হয়ে গিয়েছে।
এখনই আবরার চলে আসে। বাইক থামিয়ে হেলমেট ছুঁড়ে মারে শূন্যে। বাইকে ফেলে বড়বড় পা ফেলে বাড়িতে ঢোকে।
ইভান আমান আহাদ এবং সিয়াম চারজনই আবরারের কাছে আসে।
কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পায় না।
আহাদ বলে
“আমাদের তো জামাকাপড় নেই। এখন পড়বো কি ভাই?
আমান থাপ্পড় মারে সিয়ামের পিঠে
” শালা ভেজালি এবার কি করবো?
সিয়াম ইনোসেন্ট ফেস করে বলে
“আমরাআমরাই তো। থাকি না একদিন উইথআউট ড্রেসআপে।
আবরার নিজের ওয়ালেট সিয়ামের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলে
” বিশ মিনিটে ড্রেস চাই আমার।
আমান বলে
“তুই যাহহ সিয়ামের সাথে। তোর তো বাইক আছে।
আবরার কি মনে করে বলে
” ওকেহহ
লেটস গো
বলেই পা বাড়ায়। সিয়ামও পেছন পেছন যায়। মেইন রোডে উঠতেই সিয়াম বলে
“ভাই রাত একটা বাজে। এখন শপিং মল খোলা থাকবে না।
” এনি আইডিয়া?
“তুই পাঁচ মিনিট দাঁড়া। আমি এই বাড়ি থেকে জামাকাপড় চুরি করে নিয়ে আসছি।
আবরার ভ্রু কুচকে তাকায়। সিয়াম আবার বলে
” এটা ছাড়া উপায় নেই ভাই। তুই দাঁড়া একটু।
বলেই সিয়াম দৌড়ে চলে যায়।
দেয়াল টপকে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে।
উদ্দেশ্যে ইশারার কক্ষে গিয়ে তার সাথে একটু আলাপ করবে। কিন্তু বেলকনি বেয়ে যে রুমে ঢুকতে পারে সেই রুমে কেউ ছিলো না। ছোট্ট একটা আলমারি আছে। তাতে পায়জামা পাঞ্জাবি শাড়ি ব্লাউজ এবং ম্যাক্সি খুঁজে পায়।
অসহায় সিয়াম উপায় না পেয়ে সেগুলো নিয়েই ফিরে আসে।
“শপিং করে এনেছিস?
সিয়াম এবং আবরারকে দেখে বলে ওঠে আমান। ইভান এবং আহাদ তোয়ালে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সিয়ামের হাতে কতো গুলো শপিং ব্যাগ। সে নিজের জন্য একটা রেখে বাকি গুলো ওদের দিয়ে দেয়। আবরার ইতোমধ্যেই ঢুকে পড়েছে ওয়াশরুমে। সিয়াম এখানেই শার্ট খুলে বড় সাইজের শার্ট খানা পড়ে নেয়। এবং জিন্স খুলতে খুলতে বেলকনিতে যায়।
আমান ইভান এবং আহাদ নিজেদের শপিং ব্যাগ খুলে দেখে তাতে শাড়ি ব্লাউজ পেডিকোড মেক্সি এবং থ্রি পিচ রয়েছে। ইভান চটজলদি থ্রি পিচ খানা নিয়ে নেয়। সে এটাই পড়বো। আহাদ মেক্সি নেয়। আমানের ভাগে পড়েছে শাড়ি। বিরক্ত আমান দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” ওই শালা সিয়াম এগুলো এনেছিস কেনো?
সিয়াম বেলকনি থেকেই জবাব দেয়
“ওরেহহ শালার ঘরের সুমুন্দি এতো রাতে শপিং মল খোলা নেই। পাশের বিল্ডিং থেকে চুরি করে এনেছি।
অগত্য ওরা এসবই পড়ে নেয়। আবরার ওয়াশরুম থেকে বের হয়। তার পরনে সাদা পানজাবি এবং সাদা লুঙ্গি। লুঙ্গির ওপরে বেল্ট বেঁধেছে যাতে খুলে না যায়। সিয়াম পড়েছে সাদা লুঙ্গি এবং কালো শার্ট।
বাকিদেরর বাড়ি থ্রি পিচ মেক্সি পড়া শেষ।
সিয়াম বেলকনি থেকে রুমে আসে। ওদের দেখে বড় বড় নয়নে তাকিয়ে থাকে। আমানের ডিপজলের এক খানা গান মনে পড়ে। আহহা ছোট বেলায় নাসরিন এবং ডিপজল অসাধারণ নাচের সঙ্গে গান খানার লিপসিং করছিলো।
সে শাড়ির আঁচল হাতে পেঁচাতে পেঁচাতে আবরারের দিকে এগোতে থাকে। সেই সাথে গাইতে থাকে
” ওরেহহ আমার লুঙ্গি ওয়ালা
লুঙ্গিটা তোর ভালো।
পানজাবি টা ভকলা সাদা তুই যে বড় কালো
সঙ্গে সঙ্গেই সিয়াম আমানের শাড়ির আঁচল ধরে বলে
“এতো রস তোর এই অন্তরে শেষ হবে না খাইয়া
ওই কুতকুতি মাইয়া
ইভান এবং আহাদ এবার এগিয়ে আসে। আহাদ আবরারের লুঙ্গি ধরতে যেতেই আবরার কঠিন নজরে তাকায়। তো সে লুঙ্গি বাদ দিয়ে পানজাবি ধরে এবং বলে
” প্লেনে চইড়াছি
চইড়াছি কতো গাড়িতে
আজকে আমি হাওয়াতে দুইলা আইছিরে তোর বাড়ি তে
সিয়াম আমানকে ছেড়ে আহাদের কাছে আসে। তার থুতনি ধরে বলে
“ওই নাম কি তোর?
ইভান জবাব দেয়
” কুতকুতি
“কাম কি তোর?
” কুতকুতি
“আজকে প্রেমের কুতকুত খেলমু দেখবে আবরার চাইয়া
ওই কুতকুতি মাইয়া
বিরক্ত আবরার চোখ মুখ কুঁচকে বলে
“ভাই তোরা এই ছিহহ মার্কা গান কোথা থেকে পাস?
সিয়াম বলে
” কোথা থেকে পাই মানে?
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৪
কুতকুতি মাইয়া গানের লেখক সিয়াম আহমেদ। সুর দিয়েছে আমান। মিউজিক বাজিয়েছে ইভান। আর তাল দিয়েছে আহাদ।
কি রে তোরা বল?
আবরার সেখান থেকে চলে যেতে যেতে বলে
“ফাস্ট টাইম তোর চাপাবাজী বিশ্বাস করলাম। এরকম জঘন্য গান তুই ছাড়া আর কেউ লিখতেই পারে না।