প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭২

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭২
Drm Shohag

চোখের উপর আলো এসে পড়ায়, মাইরা চোখমুখ কুঁচকে নেয়। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালে বুঝল সে বেডের উপর। নড়াচড়া করতে নিলে শরীরের জায়গায় জায়গায় কেমন চিনচিনে ব্য’থায় চোখমুখ কুঁচকে নেয়। কানে ভেসে আসে ইরফানের কণ্ঠ। কারো সাথে ইংলিশে অনবরত কথা বলছে। মাইরা বন্ধ চোখের পাতা মেলে ডানদিকে তাকায়। ইরফান ডিভানে বসে পায়ের উপর পা তুলে কোলের উপর ল্যাপটপ রেখেছে। আর একটু পর পর ইংলিশে কথা বলছে।

রাতের কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য চোখের সামনে ভাসতেই মাইরা ল’জ্জায় কেঁপে ওঠে। ল’জ্জামাখা চোখজোড়া নামিয়ে নেয়। সে রাগী ইরফানকে দেখেছিল,, সেই উগ্র, বদমেজাজি ইরফানের অনুভূতি পূর্ণ ভালোবাসা দেখেছিল,, তবে উম্মাদ ইরফানকে গতরাতে দেখেছে।
গতরাতে প্রায় সারারাত ঝিরঝির বৃষ্টি হয়েছে। তার উপর ইরফান দোলনার উপরের ছাউনি উঠিয়ে দিয়েছিল। বৃষ্টির পানি, ঠাণ্ডা বাতাস, সাথে ইরফানের উম্মাদনা সবমিলিয়ে মেয়েটাকে কাবু করে নিয়েছে। মাইরা কতবার যে বলেছিল, ঘরে আসতে,, ইরফান শুনেছিল কি-না! শুধু লালিত চোখ দিয়ে তার দিকে চেয়ে এলোমেলো কণ্ঠে বলেছিল,
– ইউ আর মাই ফেবারিট ডিস। এতো নড়াচড়া করলে খেতে প্রবলেম হয়। শান্ত থাকো জান।
কথাটা ভাবতেই মাইরা কেঁপে ওঠে। এলোমেলো ইরফান আর স্বাভাবিক ইরফান দু’টো মানুষকে মেলাতে মাইরা হিমশিম খায়। চোখ বুজে বিড়বিড় করে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– মিথ্যাবাদী লোক একটা। জেন্টেলম্যান হওয়ার কথা বলে আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে জলহস্তী হয়েছে।
ইরফান চোখ ছোট ছোট করে মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
– কি বিড়বিড় করছ?
ইরফানের গলা পেয়ে মাইরা ইরফানকে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, ইরফানের চোখে চোখ পড়লে সাথে সাথে চোখমুখ খিঁচে নেয়। দ্রুত চাদরের নিচে মুখ লুকায়। ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
– উঠে এসো।
মাইরা চাদরের নিচেই চোখ বড় বড় করে তাকায়। তার মাথা খারাপ না-কি! আগামী কয়মাস সে ইরফানের সামনেই পড়বেনা, মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে। ইরফান আবারও বলে,
– উঠতে বলেছি আমি।
মাইরা তবুও কথা বলল না। ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
– ওকে। এগেইন স্টার্ট করছি। একরাতেই এতো এডিকটেড হয়েছ, যে সকাল হতে না হতেই হাসবেন্ড কে ইনডিরেক্টলি ডাকছ। ভেরি গুড।
মাইরা দ্রুত মুখের উপর থেকে চাদর সরিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে,

– না না। আমি ডাকছি না।
ইরফান শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলে,
– নো প্রবলেম, আমি তোমার মনের কথা পড়ে নিয়েছি।
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরফান সত্যি সত্যিই তার পরনের শার্ট খুলে রাখল, মাইরা ঢোক গিলে চাদর সহ বেড থেকে নামতে চায়, কিন্তু মাথাটা কেমন ঘুরে ওঠে, সে ঠিক করে বসতেই পারছে না।
ইরফান ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে মাইরার দিকে। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
– টাইম ফাইভ সেকেন্ড। বডিতে কিছু জড়াতে চাইলে ফাস্ট কর। নয়তো উইথআউট ড্রেসেই আমার সামনে দাঁড়াতে হবে।
মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আশেপাশে খুঁজে তার কাপড়ের অস্তিত্ব পায় না। ইরফানের খুলে রাখা শার্ট-টুকুই টেনে নিল কাঁপা হাতে। এরপর ইরফানের দিকে চেয়ে মিনমিন করে বলে,

– আপনি যান।
ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলে,
– সব দেখা শেষ। এখন ফালতু টাইম ওয়েস্ট করবে না আমার।
মাইরা ল’জ্জায় চোখমুখ খিঁচে নেয়। বহু কষ্টে চাদরের ভিতরেই শার্টটি পরে নিল। অর্ধেক বোতাম লাগাতেই ইরফান এগিয়ে গিয়ে মাইরাকে কোলে তুলে নেয়। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে। ইরফান পাত্তা দিল না। দ্রুতপায়ে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে মাইরাকে নামিয়ে দেয়। মাইরা দু’হাতে চাদর খামচে দাঁড়িয়ে আছে। মাথা নিচু করে রেখেই মিনমিন করে করে বলে,
– আপনি যান প্লিজ!
ইরফান মাইরার গলায় হাত দিয়ে উল্টোপিঠে চেক করে। অসহায় কণ্ঠে বলে,
– জ্বর আসলো কেন তোমার?
মাইরা রে’গে যায়। মাথা উঁচু করে ব্যঙ্গ করে বলে,
– অ’স’ভ্য লোক, আদর করেছেন আমায়, তাই জ্বর এসেছে।
ইরফান চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– আদর-ই তো করেছি। এতে কোনো ডাউট আছে? তুমি টলারেট করতে না পারলে আমার কি দোষ?
ইরফানের কথায় মাইরা থতমত খেয়ে যায়। মাথা নিচু করে নেয়। তার মাথা ঘুরছে। চাদরের ভেতরে হাত রেখেই ইরফানকে ঠেলে বলে,

– আপনি যান।
ইরফান মাইরার পিছনে হাত দিয়ে টান দিয়ে চাদর ছুঁড়ে ফেলে। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে। ল’জ্জা ঢাকতে দ্রুত ইরফানকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে। ইরফান ঢোক গিলে। দু’হাতে মাইরাকে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
– এভাবে কাছাকাছি ঘেঁষলে এগেইন ল’জ্জা ভাঙানোর মিশনে নামবো।
মাইরা বারবার শুকনো ঢোক গিলে। ইরফানকে ছেড়ে দাঁড়ায়। দু’হাতে পরনের শার্ট টেনে ধরে। মাথা নিচু করে বলে,
– এখান থেকে যান।
ইরফান এগিয়ে আসতে নিলে মাইরা দ্রুত ডান দিকে যায়। এই লোক কি শুরু করেছে? তার কান্না পাচ্ছে। ইরফান মাইরার মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলায়। তার শার্ট বার বার কাঁধ বেয়ে পড়ে যাচ্ছে, আর মাইরা টেনে তুলছে। হাঁটুর উপর পর্যন্ত শার্টে অবস্থান। ইরফান বিড়বিড় করে,

– ভেরি লিটল গার্ল।
মাইরা এখনও ইরফানকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে মাথা উঁচু করে থেমে থেমে বলে,
– এগোচ্ছেন কেন?
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
– তোমার শাওয়ার নিতে হেল্প লাগবে। কাম।
মাইরা চোখ বড় বড় করে বলে,
– জীবনেও লাগবে না। আপনি যান অ’স’ভ্য লোক।
ইরফান তবুও এগোয় মাইরার দিকে। মাইরা আর এক পা পিছন দিকে দিলে পা বেঁধে ঠাস করে বাথটবের ভিতর পড়ে যায়। বাথটব ভর্তি পানি। মাইরার সারা শরীর জ্বলে উঠল। সাথে গায়ে জ্বর থাকায় শীত লাগলো একটু একটু। মাইরা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে।
ইরফান এগিয়ে এসে টলটলে পানির ভেতরে ভেজা,

স্বচ্ছ, জ্বলজ্বল করা মাইরাকে দেখে কেমন ঘেমে যায়। শুকনো ঠোঁটজোড়া জিভ দিয়ে ভেজায়। মাইরা ইরফানের শার্টটুকু টেনে টেনে ঠিক করে, পানির ভেতর থেকে উঠার জন্য দাঁড়াতে নিলে ইরফান মাইরাকে নিয়ে ঠাস করে শুয়ে পড়ে। মাইরা বুঝতেই পারেনি। বেচারি চেঁচিয়ে ওঠে। ঠেলে ইরফানকে সরাতে চায়। ইরফান মাইরার গলায় নাক ঘষে বিড়বিড়িয়ে বলে,
– তুমি এতো বিউটিফুল কেন বার্ডফ্লাওয়ার?
মাইরার দেহজুড়ে রাতের মতো সেই অনুভূতিরা আবারও এসে ভিড় করে। ইরফান ডান হাতে মাইরার পরনের শার্টের বোতাম গুলো খুলতে শুরু করে। মাইরা দু’হাতে ইরফানের হাত আটকে কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
– দয়া করে আমাকে ছাড়ুন।
ইরফান মাইরার দিকে তাকায়। মাইরাও তাকায় ইরফানের দিকে। এটুকু সময়ে ইরফানের চোখ দু’টো কেমন লাল হয়েছে দেখে মাইরার অবাক লাগে। কাল রাতেও ইরফানের চোখ ভীষণ লাল ছিল।
ইরফান মাইরার দু’চোখের পাতায় চুমু আঁকলো। মাইরা চোখ বুজে নেয়। ইরফান মাইরার হাত সরিয়ে মাইরার শার্টের বোতাম গুলো খুলে দেয়। দু’হাতে মাইরাকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে যাওয়া কণ্ঠে বলে,

– মাই বার্ডফ্লাওয়ার, আমি তোমাকে একটি মেডিসিনের দোকান কিনে এনে দিব, ইউ’ল রিকাভার সুন।
কথাটা বলে মাইরার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে। মাইরাও যেন তার সব ব্য’থা ভুলতে বসল। শরীরের জ্বলুনি, জ্বরে কাবু মেয়েটা দ্বিতীয়বার ইরফানকে সামলাতে হিমশিম খায়। সময়ের সাথে সাথে ইরফানের উম্মাদনায় মাইরা এক পর্যায়ে ফুঁপিয়ে ওঠে। ইরফান মাইরাকে ছেড়ে দেয়। মাইরা গুটিয়ে নেয় নিজেকে। ইরফান মাইরাকে টেনে জড়িয়ে ধরল। বহুকষ্টে উচ্চারণ করল,
– ইট’স ওকে। স্টপ করেছি।
মাইরা ইরফানের বুক থেকে মাথা তুলে ইরফানের দিকে তাকায় ভেজা চোখে। ইরফান অসহায় চোখে চেয়ে আছে মাইরার দিকে। মাইরার মায়া হলো। মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলে,
– এখানে না। ঘরে চলুন।
ইরফান মাইরার আশকারা পেয়ে দ্রুত মাইরাকে টেনে নেয় নিজের দিকে। মাইরার উম্মুক্ত কাঁধে গাঢ় চুমু এঁকে বিড়বিড়িয়ে বলে,

– নো নিড, টাইম ওয়েস্ট হবে।
কথাটা বলে মাইরাকে আর কিছু বলার সুযোগ-ই দিল না। আবারও মাইরাতে মত্ত হয়। এলোমেলো কণ্ঠে বেশ কয়েকবার উচ্চারণ করে,
– ইউ আর আ গুড গার্ল। তোমাকে অনেকগুলো ডক্টর দেখাবো। অ্যান্ড মেডিসিনের মাঝে ডুবিয়ে রাখবো, ওকে জান?
ইরফানের এই নতুন নেওয়া নামটায় মাইরা তীব্র অনুভূতির জোয়ারে ভাসে। ইরফানের পা’গ’লামিতে ঘেরা কথাগুলো শুনে মাইরা ব্য’থাতুর মুখেই না চাইতেও হেসে ফেলে।
ইরফান দ্বিতীয়বারের মতো বেসামাল হলো। স্থান, কাল, পাত্র সব ভুলে শুধু তার বার্ডফ্লাওয়াকে নিঁখুত ভালোবাসা ঢেলে দিতে উদগ্রীব হলো।

শাওয়ার শেষে ইরফান মাইরাকে কোলে করে বেডে শুইয়ে দেয়। মাইরা কম্বলের মাঝে নিজেকে লুকিয়ে ফেলে। জ্বর ভালোই এসেছে বোধয়৷ মাথা ব্য’থা করছে।
ইরফান শার্ট, প্যান্ট পরে রুম থেকে বেরিয়ে রিতাকে খাবার দিয়ে যেতে বলে। বেশ কিছুক্ষণের মাথায় রিতা নুডুলস রান্না করে ইরফানের হাতে দিয়ে যায়। ইরফান দরজা আটকে দেয়। হাতে নুডুলস বাটি নিয়ে মাইরার পাশে বসে। মৃদুস্বরে ডাকে,
– বার্ডফ্লাওয়ার?

মাইরার কোনো সাড়া পায় না। কোনো নড়াচড়াও পায় না। হাতের বাটি বেডসাইড টেবিলের উপর রেখে মাইরার মুখ থেকে কম্বল সরিয়ে দিলে দেখল, মাইরা ঘুমিয়ে গিয়েছে। চোখমুখ কেমন ফোলা ফোলা। নাকের পাটা লাল। পুরো মুখ, সহ গলার জায়গায় জায়গায় লাল দাগ। ঠোঁটের কোণে ক্ষ’ত। ইরফান অসহায় চোখে মাইরাকে অবলোকন করল। মাইরার পাশে শুয়ে মাইরাকে জড়িয়ে নিল নিজের সাথে। যদিও বেশ গরম পড়েছে, ইরফান ঘেমেও গিয়েছে। তবুও কম্বলের মাঝে গিয়ে মাইরাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল। মাইরা একটু নড়েচড়ে ওঠে। চোখমুখ কোঁচকায়। ইরফান মাইরার মুখে ছোট ছোট চুমু আঁকলো। ঠোঁটের কোণে চুমু আঁকলো। মাইরার ঘুম হালকা হয়, চোখের পাতা টেনে খুলে মাইরার সামনে ইরফানকে দেখে ল’জ্জায় চোখমুখ খিঁচিয়ে বুজে নেয়। ইরফান বোধয় বুঝল, ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। মাইরাকে কম্বলের ভেতর পেঁচিয়ে, সেভাবেই মাইরাকে নিয়ে উঠে বসল। মাইরা মিনমিন করে বলে,

– আমাকে ছেড়ে দিন।
ইরফান তার কোলে মাইরার পিঠ ঠেকিয়ে বসায়। বেডসাইড টেবিলের উপর থেকে নুডুলস এর বাটি হাতে নিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– ফাস্ট হা কর। মেডিসিন নিতে হবে।
মাইরা তার দুর্বল শরীরটাকে নিয়ে মোচড়ামুচড়ি করে বলে,
– আপনি এখান থেকে যান। আমি একা খাবো।
ইরফান মাইরাকে তার সাথে শক্ত করে ধরে বলে,
– নো।
কথাটা বলে মাইরার মুখের সামনে নুডুসল ধরে।
মাইরার শরীর খারাপ লাগছে। কথা বাড়ালো না আর। এই লোকটাকে বলেও লাভ নেই। চুপচাপ ইরফানের হাত থেকে খাবার মুখে পুড়ে। জ্বরের মুখে এতো বিশ্রী স্বাদ লাগলো, মুখে হাত দিয়ে উকি করে,, ইরফান দ্রুত বা হাত মাইরার কপালে ঠেকিয়ে তার কাঁধে মাইরার মাথা ঠেকিয়ে রাখে। মাইরা চোখ বুজে রেখেছে, গালের একপাশে খাবারটুকু জমিয়ে রেখেছে। ইরফানের চোখেমুখে অসহায়ত্ব। ভীষণ গিল্টি ফিল হলো তার। মাইরার গালে ঠোঁট চেপে অপরাধী গলায় বলে,

– স্যরি বার্ডফ্লাওয়ার!
মাইরা মুখ থেকে খাবার টুকু বের করে বাটিতে রেখে দেয়। এরপর ইরফানের দিকে তাকায়। উকি করায় চোখের কোণের পানি চলে এসেছে। চোখ নামিয়ে মিনমিন করে বলে,
– আমি কিছু খাবো না। আপনি এখান থেকে যান।
ইরফান বিরক্ত হয়। বারবার এই কথা শুনতে ভালো লাগছে না তার। হাতের বাটি বেডের উপর রেখে দু’হাতে মাইরাকে জড়িয়ে নেয়। মৃদুস্বরে বলে,
– কি খেতে চাও? এনে দিচ্ছি আমি।
মাইরা ছোট করে বলে,
– কিছু না।
– খেতে হবে। খালি পেটে মেডিসিন নেয়া যাবে না।
মাইরা জেদী স্বরে বলে,

– আমি কিছু খেতে চাই না।
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
– মা হতে চাও?
মাইরা ইরফানের ঘোরানো প্রশ্ন না বুঝেই ঠাস করে বলে ফেলে,
– হ্যাঁ অবশ্যই।
ইরফান হেসে ফেলল। মাইরা জিভ কাটে। না বুঝেই ভুলভাল বলে ফেলেছে। ইরফান মাইরার চুলের ভাঁজে চুমু এঁকে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
– মেডিসিন না নিলে হয়ে যাবে। বাট, আমি এখন বাবা হতে চাইছি না। কজ, ইউ আর আ ভেরি লিটল গার্ল।
মাইরার এতো ল’জ্জা লাগছে! ইরফান মাইরাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। এগিয়ে গিয়ে টেবিলের উপর থেকে ওয়ালেট নিয়ে প্যান্টের পকেটে রাখতে রাখতে বলে,
– বার্ডফ্লাওয়ার দেখতে লিটল গার্ল হলেও মনের দিক থেকে অনেক বড়। অ্যা’ম ইমপ্রেসড্।
মাইরার কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এই লোকটা তাকে সারাদিন ল’জ্জা দেয়। হাতের কাছে একটা কুশন পেয়ে ইরফানের দিকে ছুঁড়ে মেরে বলে,

– অ’স’ভ্য লোক, আপনি বের হন এই ঘর থেকে।
ইরফান বা হাতে কুশনটি কেচ ধরে নেয়। বাইরে যেতে যেতে হাতের কুশনটি ডিভানের উপর রেখে দেয়। একবার পিছু ফিরে বলে,
– পাঁচ মিনিটে আসছি। ওয়েট।
মাইরা কম্বলের ভেতর থেকে মুখ বাঁকায়। এই লোক বেরোলেই সে দরজা আটকে দিবে। অ’স’ভ্য লোক একটা।
ইরফান চলে গেলে মাইরা উঠে বসে। সাথে সাথে তার মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। দুর্বল শরীর নিয়ে আর বেড থেকে নামলো না। কম্বল মুড়ি দিয়ে আবারও শুয়ে পড়ে। অনেকদিন পর এমন জ্বর এসেছে তার। তাই বেশি খারাপ লাগছে।

ইরফান প্রায় দশ মিনিটের মাথায় আবারও তার ঘরে আসে। এতো সকালে সেরকম কিছু পাচ্ছিল না। তবুও বেশ কয়েকটা ঝাল ঝাল আইটেম কিনে এনেছে। হাতের প্যাকেট গুলো টেবিলের উপর রেখে মাইরার দিকে এগিয়ে গেলে দেখল মাইরা ঘুমিয়েছে আবারও। সে বুঝল, মাইরার উইকনেস এর কারণে এমন হচ্ছে।
খাবারগুলো একটা বাটিতে ঢেলে মাইরার পাশে বসে মৃদুস্বরে ডেকে মাইরাকে জাগায়। মাইরা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। মাইরার চোখমুখ লাল হয়ে গিয়েছে। অসুস্থতায় মেয়েটা ঠিক করে তাকাতে পারছে না।
ইরফান দু’হাতে মাইরাকে উঁচু করে জড়িয়ে নিল। কানের পিঠে চুমু এঁকে বলে,

– অ্যা’ম রিয়েলি স্যরি বার্ডফ্লাওয়ার!
মাইরার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ডান হাত ইরফানের পিঠে রাখে। ইরফান মাইরাকে তার কোলে বসিয়ে খাবারটুকু মাইরাকে খাইয়ে দেয়, মেয়েটি বেশ কসরত করে সময় নিয়ে খায়। এরপর ইরফান যা যা ঔষধ দিল, সবগুলো খেয়ে নেয়। ইরফান সব ঠিক করে রেখে মাইরাকে নিয়ে শুয়ে পড়ে কম্বলের মাঝে। মাইরা ইরফানকে ঠেলে বলে,
– আপনি পা’গ’ল না-কি? এখন তো গরম। আর আপনি ফ্যান ছাড়া, উল্টে কম্বলের মধ্যে আমার গরম হওয়া শরীরের সঙ্গে লেপ্টে থাকছেন। সরুন। পাশের রুমে গিয়ে ফ্যান দিন।
ইরফান মাইরাকে আরও শক্ত করে ধরে মৃদুস্বরে বলে,
– ডোন্ট টক। ঘুমাও। আমাকেও ঘুমাতে দাও। এমনিতেই সারারাত ঘুমাতে দাওনি।
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। কত্ত বড় খারাপ লোক। তার উপর দোষ চাপাচ্ছে! বিড়বিড় করে,
– অ’স’ভ্য লোক একটা।

ঘড়ির কাটা ১:৪০ এর ঘরে। ইরফান ঘুম থেকে উঠে দেখল সে পুরো ভিজে গিয়েছে। মাইরার গলা চেক করলে, দেখল মাইরাও ঘেমে গিয়েছে। ইরফান তাদের উপর থেকে কম্বল সরিয়ে ফেলে। মাইরার কপাল চেক করলে দেখল জ্বর নেই। ইরফান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। বেড থেকে নেমে ঘরের ফ্যান ছেড়ে দেয়। এসি দিল না, মাইরার সহ্য হয় না বলে।
এরপর সে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নেয়। বেরিয়ে এসে জোহর নামাজ পড়ে নিয়ে রেডি হয়। ৩ টা থেকে ভার্সিটিতে ক্লাস আছে। এরপর অফিস যেতে হবে। পুরোপুরি রেডি হয়ে মাইরার গলা আরেকবার চেক করে। মুখ নামিয়ে মাইরার কপালে একটা চুমু এঁকে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
ডায়নিং টেবিলে তারেক নেওয়াজ খাচ্ছিল। ইরফান তার বাবার পাশের চেয়ারে বসলে রুমা নেওয়াজ ইরফানের প্লেটে খাবার তুলে দেয়। রুমা নেওয়াজ মাইরার কথা জিজ্ঞেস করলে ইরফান বলে,

– ও ঘুমিয়েছে। উঠলে ওকে খাইয়ে দিও আম্মু।
রুমা নেওয়াজ সম্মতি দিয়ে রান্নাঘরের দিকে যায়। ইরফান দ্রুত খাবার খেতে শুরু করে। তারেক নেওয়াজ খাওয়ার মাঝেই ইরফানের দিকে চেয়ে ভাবে, মাইরার জ্বর কেন আসলো? তার ছেলে আবার মারলো না তো! ইরফানকে একদম বিশ্বাস নেই।
অতঃপর তারেক নেওয়াজ চিন্তিত কণ্ঠে বলেন,
– মাইরা আম্মুকে আবার মে’রেছ না-কি? জ্বর বাঁধল কিভাবে?
ইরফান মুখের খাবার টুকু গিলে ভাবলেশহীনভাবে বলে,
– তোমাকে দাদা বানানোর মিশনে নেমেছিলাম, দিস কজড্ দ্যা ফিভার।
তারেক নেওয়াজ ছেলের কথায় খুকখুক করে কেশে ওঠে। চোখ বড় বড় করে বলে,

– মানে?
ইরফান তার বাবার দিকে চেয়ে বলে,
– তুমি চাইলে আমার পার্সোনাল কোচিং-এ ভর্তি হতে পারো। দাদা কিভাবে হয়, এটার ক্লাস করানো হবে।
তারেক নেওয়াজ হতভম্ব চোখে তাকালেন ছেলের দিকে। ইরফানের সেসব হেলদোল নেই। যেন সে খুব সিরিয়াস কথা বলছে। তারেক নেওয়াজ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– অ’স’ভ্য ছেলে, তুমি আমার ছেলে হয়ে আমাকে ক্লাস করাতে চাইছ? আমি না জানলে তুমি জন্মালে কিভাবে?
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
– জানো, তাহলে মানে মানে করছিলে কেন? স্ট্রেঞ্জ!
তারেক নেওয়াজ হতাশ চোখে তাকিয়ে রইল নিজ ছেলের পানে। বিড়বিড় করল,
– ছেলেটা আমার। আর হয়েছে পাশের বাসার বে’য়া’দ’ব ডিপজলের মতো। এসব মানা যায় না!
রুমা নেওয়াজ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে তারেক নেওয়াজকে খাওয়া বাদ দিয়ে বসে থাকতে দেখে বলে,
– কি হয়েছে? খাচ্ছো না কেন?
ইরফান তার খাওয়া শেষ করে দ্রুত বেরিয়ে যায়। তারেক নেওয়াজ ছেলেকে দেখল। এরপর তার স্ত্রীর পানে চেয়ে বলে,

– আচ্ছা রুমা, হসপিটালে বাচ্চাদের যে নিউবর্ন নার্সারি রুমে রাখা হয়, ওখান থেকে কোনোভাবে আমাদের ছেলে কারো সাথে বদল-টদল হয়নি তো?
রুমা নেওয়াজ অদ্ভুদ চোখে তাকালেন স্বামীর পানে। রে’গে বলেন,
– একদম আজেবাজে কথা বলবে না। আমি আমার ছেলেকে পেটে ধরেছি। আর তুমি তাকে অস্বীকার করতে চাইছো? নিশ্চয়ই আমার ছেলেটা অফিসে একটু লেট করেছে বলে এসব ফালতু কথা বলছো। তোমাকে খেতে হবে না, দাও।
কথাটা বলতে বলতে তারেক নেওয়াজ এর সামনে থেকে ভাতের প্লেট নিয়ে চলে যায়। তারেক নেওয়াজ হতভম্ব চোখে তাকালেন। হতাশ কণ্ঠে বলে,
– ছেলে, বউ সবাই আমার সাথে এমন শত্রুদের মতো আচরণ করছে কেন?

শুদ্ধ গ্রামে ছিল। আগামীকাল তার বিয়ে। মূলত গ্রাম থেকেই সে আসবে। এখন বাজে রাত ১০ টা, অথচ সে ফারাহ’র বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এই বিয়ের চক্করে সে দু’দিন ফারাহকে দেখতেই পারেনি। আর সহ্য করা যাচ্ছে না। এসব কি শাস্তি ভাই? কালকে বিয়ের সময় বিয়ে করবে, আজ দেখতেই হবে তার বউটাকে। কিন্তু সে বাড়ির ভেতর যাবে কিভাবে? জামাই বিয়ের আগের দিন রাত্রে বাড়িতে এসেছে, এটা জানলে সবাই তাকে কি ভাববে! নাহ নাহ, ফারাহ’র কত কাজিন আছে। তার একটা মানসম্মান আছে না? ভাবনা রেখে সে প্রাচী টপকানোর বুদ্ধি আঁটলো। সেই বুদ্ধি অনুযায়ী সত্যি সত্যিই শুদ্ধ প্রাচী টপকে ফারাহদের বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে। ফারাহ থাকে দোতলায়। বেলকনির উপরের অংশ টা ফাঁকা। শুদ্ধ বেশ কসরত করে বেলকনিতেও পৌঁছালো। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, ফারাহ’র ঘরে ফারাহ সব কাজিনদের নিয়ে বসেছে। শুদ্ধ অসহায় চোখে তাকালো।
পকেট থেকে ফোন বের করে ফারাহ’র নাম্বারে একটা মেসেজ দেয়,
– পাখি একটু বেলকনিতে আসো তো!

ফারাহ’র পাশেই ফোন ছিল। টুং করে মেসেজ বাজলে ফারাহ ফোন চেক করে। শুদ্ধর মেসেজ দেখে ভাবলো, হয়তো কথা বলবে কলে, এজন্য বলছে। ফারাহ’র বা হাতে মেহেদী দেয়া। ডান হাতে দিত এখন। ভাবলো শুদ্ধর সাথে কথা বলে এসে দিবে। ডান হাতে ফোন নিয়ে তার কাজিনদের মাঝ থেকে উঠে বেলকনিতে পা রাখে, সাথে সাথে শুদ্ধ ফারাহ’কে টেনে দরজার আড়ালে নিয়ে কোনো কথা ছাড়াই ফারাহ’র ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে। ফারাহ চোখ বড় বড় করে তাকায়। ছটফট করে। হাত থেকে ফোন পড়ে যায়, দু’হাতে শুদ্ধকে ঠেলে সরাতে চায়, কিন্তু ব্যর্থ। যখন বুঝল এটা শুদ্ধ, তখন একটু শান্ত হয়। শুদ্ধ বেশ অনেকটা সময় পর ফারাহকে ছেড়ে দেয়। ফারাহ ছাড়া পেয়ে সমানে কাশতে থাকে। কাশতে কাশতে তার চোখ থেকে পানি গড়ায়। তার কাজিনরা এগিয়ে আসার আগেই শুদ্ধ দ্রুত বেলকনির দরজা আটকে দেয়। এগিয়ে গিয়ে ফারাহ কে জড়িয়ে ধরে অপরাধীর ন্যায় ফিসফিসিয়ে বলে,

– স্যরি পাখি!
ফারাহ স্বাভাবিক হতেই পারছে না। শুদ্ধ অসহায় চোখে তাকালো। টেনশনে সে অনেকগুলো সিগারেট খেয়ে ফেলেছিল, এরপর নিজেকে যে ফ্রেশ করবে তার খেয়াল ছিল না।
দরজার ওপাশ থেকে ফারাহ কাজিন দরজা ধাক্কিয়ে বলে,
– এই ফারাহ কি হয়েছে? ঠিক আছিস?
ফারাহ বহুকষ্টে নিজেকে সামলে বলে,
– ঠিক আছি। তোরা ছাদে যা। আমি একটু পর আসছি।
ওপাশ থেকে আবারও বলে,
– কিন্তু তুই…
ফারাহ বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– যা তোরা।

ফারাহ’র কাজিনরা আর কিছু বলল না। সব রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ফারাহ রে’গে শুদ্ধকে গায়ের জোরে ধাক্কা দেয়। এতো রাগ লাগছে তার! কাশতে কাশতে গলা ছিলে গিয়েছে তার। শুদ্ধ কিছু বলার আগেই ফারাহ দরজা খুলে ঘরের ভেতর গিয়ে দরজা আটকাতে চায়, কিন্তু শুদ্ধর শক্তির সাথে পারলো না।শুদ্ধ দরজা ধাক্কা দেয়। ফারাহ দু’পা পিছিয়ে যায়। শুদ্ধ ঘরের ভেতর গিয়ে আগে ফারাহ’র ঘরের দরজা আটকে দেয়। এরপর ঘরের লাইট অফ করে দেয়। ফারাহ চিৎকার করে বলে,
– তুমি যাবে এখান থেকে?
শুদ্ধ দ্রুত ফারাহকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– স্যরি পাখি! এই যে কান ধরেছি, আর জীবনে এমন ভুল হবে না। তোমার টেনশনে সব ভুলে গিয়েছিলাম।
ফারাহ মোচড়ামুচড়ি করে। এই লোকটা জীবনেও শোধরাবে না। শুদ্ধ ফারাহকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তুমি চাইলে কান ধরে উঠবস করব। আমার কথা শোনো। আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। এতো রাতে গ্রাম থেকে চলে এসেছি। ভালোবাসি তো পাখি!
ফারাহ বোধয় একটু শান্ত হলো। শুদ্ধ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কতবড় কেলেঙ্কারি করে ফেলেছে! এমনিতেই তার বউ একটুতেই ধানিলঙ্কার মতো জ্বলে ওঠে। এর উপর আবার সে ভুলভাল কাজ করেছে।

ইরফান, মাইরা, শুদ্ধ এদের বিয়ে উপলক্ষ্যে ইরফান, শুদ্ধদের কাজিন ইরফানদের বাসায় এসেছে।
গতকাল রাতে মাইরা ইরফানের কাজিনদের সাথেই ছিল। সে মূলত ভেবেছে, ইরফানের থেকে লুকিয়ে থাকতে পেরেছে। কিন্তু ইরফান ব্যবসার কাজে সিলেট গিয়েছিল, এটা মাইরা জানেনা। আগামীকাল তার বিয়ে। কিন্তু মাইরার মনে হচ্ছে তার কাজিনের বিয়ে আর সে ফাটিয়ে মজা করবে, ব্যাপারটা এমন। কালকে থেকে জ্বর আর আসেনি। তাছাড়া তার শ্বাশুড়ি যা যত্ন করে, জ্বর আসতেও ভয় পাবে। একটা ব্যাপারে মাইরার মন খারাপ, মিলা আসেনি এখানে। তার বাবা মা না-কি আসতে দেয়নি। বিয়ের দিন অর্থাৎ আগামীকাল আসবে।
রাত তখন প্রায় ১০:৩০। মাইরা রা সবাই ছাদে বসে আছে। সবাইকে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। মাইরা যেহেতু বউ, তাকে কেন্দ্র করেই বসেছে সব। মাইরা বলেছে সে সবার শেষে দিবে। মাইরার কথা মেনে ইরফানের সব কাজিনরা মেহেদী দিয়ে নিচ্ছে। হঠাৎ-ই পিছন থেকে ইরফানের গম্ভীর আওয়াজ ভেসে আসে,

– ঘরে এসো।
মাইরা দ্রুত পিছু ফিরে তাকায়। মাইরা তো ভেবেছে সে পালিয়ে পালিয়ে, লুকিয়ে থেকেছে ইরফানের থেকে। আজ ধরা পরেই গেল। ওদিকে ইরফান ছিল-ই না। থাকলে কি আর লুকিয়ে থাকতে চাইলেও পারতো! মাইরা দ্রুত বলে ওঠে,
– আমি আপুদের সাথে থাকবো।
ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকায়। বিরক্ত হয়। গতকাল যাওয়ার সময় একে খুঁজেছিল, কিন্তু পায়নি। সারাদিন বাঁদরের মতো লাফিয়ে বেড়াবে। লেট হয়েছিল বলে দ্রুত বেরিয়ে গিয়েছিল। মেজাজ গরম আছে তার। আবার বলছে তার সাথে থাকবে না। মেজাজ আরও গরম হলো। মাইরা উঠে দাঁড়িয়ে মিশকার পিছে দাঁড়িয়ে বলে,

– আমি হাতে মেহেদী দিব। আপনি যান।
ইরফান রেগে তাকায় মাইরার দিকে। মিশকা ইরফানের উদ্দেশ্যে বলে,
– ইরফান ভাই আজ ও আমাদের সাথে থাকুক। মেহেদী পরবে, আরও মজা…
ইরফানের দিকে তাকিয়ে থেমে যায়। মেকি হেসে মাইরার সামনে থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলে,
– না না, তোমার বউ। তুমি যেখানে খুশি নিয়ে যাও।
মিশকার অবস্থা দেখে সবাই মুখ টিপে হাসছে। রাতুল পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। হেসে বলে,
– হয় হয়, নিয়ে যাও নিয়ে যাও। যার বউ তার কোলে না থাকলে কি আর মানায়?
মাইরা অসহায় চোখে তাকায়। ইরফান এগিয়ে আসলে মাইরা দৌড় দিতে নেয়, তার আগেই ইরফান ঝট করে মাইরাকে কোলে তুলে নেয়। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে। ইরফান দ্রুতপায়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকে। মাইরা ছটফট করে বলে,

– আমি আপনার সাথে থাকবো না। রা’ক্ষ’স একটা।
ইরফান আড়চোখে একবার মাইরার দিকে তাকালো। তার ঘরে গিয়ে মাইরাকে নামিয়ে দিয়ে ঘরের দরজা আটকে লক করে দেয়, যাতে মাইরা খুলতে না পারে। মাইরা ঢোক গিলে। আসলে তার ইরফানের সামনে দাঁড়াতেই ভীষণ ল’জ্জা আর সংকোচ কাজ করছে। ইরফান ব্লেজার খুলে পাশে ডিভানের উপর রাখল। এরপর শার্টের বোতামগুলো খুলে মাইরার দিকে তাকিয়ে বলে,
– লুক এট মি।
মাইরা মাথা নিচু রেখেই চোখ উঠিয়ে দেখল। ইরফান তার বডিতে আঙুল দেখিয়ে বলে,
– আমি রা’ক্ষ’স হলে এগুলো কার কাজ?
মাইরা ভীষণ ল’জ্জা পায়। ইরফান তো অনেক ফর্সা। ফর্সা বডিতে নখের দাগগুলো কেমন জ্বলজ্বল করছে।
ইরফান মাইরার দিকে এগিয়ে আসলে মাইরা দ্রুত দু’পা পিছিয়ে যায়। ইরফান বিড়বিড় করে,
– স্টুপিট গার্ল।

কথাটা বলে মাইরার পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। মাইরা মুখ বাঁকায়। দরজার কাছে এসে টেনে খুলতে চাইলে পারলো না। মাইরার কান্না পায়। ইনায়ার বিয়েতেও তাকে মেহেদী দিতে দেয়নি, পরে কিভাবে যে দিয়েছে আল্লাহ-ই জানে। সে রাতেও একটু মজাও করতে দেয়নি। আজকেও ঘরে আটকে রাখলো। মাইরার অসহ্য লাগছে।
কিছুক্ষণ পর ইরফান ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে। মাইরা ডিভানের উপর মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। ইরফানকে দেখে যেমন ল’জ্জা পাচ্ছে, তেমনি ভীষণ রা’গ লাগছে। ল’জ্জা চেপে রা’গ কে প্রশ্রয় দিয়ে ডিভান থেকে নেমে ইরফানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
– আমি হাতে মেহেদী দিব। দরজা খুলে দিন আমাকে।
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
– নো।
মাইরা তার কোমড়ে দু’হাত রেখে রে’গে বলে,

– আপনি এতো খারাপ কেন? আমি একটু হাসলেই আপনার যত সমস্যা তাই না? আমি থাকবোই না এখানে। এমন অ’স’হ্য লোকের সাথে….
ইরফান টেনে মাইরাকে টেবিলের উপর বসিয়ে দেয়। ডান হাত কোমড়ে রেখে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
– কি বলছিলে?
মাইরা মিইয়ে যায়। মাথা নিচু করে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। ইরফান ঠোঁট বাঁকায়। টেবিলের উপর থেকে মেহেদীর কোণ এক হাতে নেয়, বা হাতে মাইরার কোমড় জড়িয়ে ধরে ডিভানে গিয়ে বসে। কোলের উপর মাইরাকে বসায়। মাইরা ইরফানের হাতের মেহেদীর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন করে,
– এই মেহেদী কি করবেন?
ইরফান পিছন থেকে মাইরার বা হাত ধরে ডান হাতে মাইরার হাতে আঁকতে শুরু করে। মৃদুস্বরে বলে,
– বউ আমার। মেহেদী বাইরের লোক কেন দিবে?

মাইরা ঘাড় বাঁকিয়ে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান মনোযোগ সহকারে মাইরার হাতে আঁকতে ব্যস্ত। মাইরাও মনোযোগ দিয়ে দেখছে। ইরফানের আঁকার হাত অনেক ভালো হওয়ায় মেহেদী দেয়ার ধরণ টাও খুব সুন্দর লাগছে মাইরার কাছে। ইরফান একে একে মাইরার দু’হাতের দু’পাশেই দিয়ে দেয় মেহেদী। একবারও বিরতি নেয় নি। মাইরা নিজেই ক্লান্ত হয়ে ইরফানের বুকে দু’বার ঘুমিয়ে গিয়েছিল। ইরফান হাতের মেহেদী টেবিলের উপর রেখে হেলান দিয়ে বসে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা ইরফানের দিকে ঘুরে বসে হেসে বলে,
– আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! আপনি অনেক সুন্দর মেহেদী দিতে পারেন।
আমি ভাবছি, আমি একটা পার্লার খুলব, আর আপনি এভাবে মেহেদী দিয়ে দিবেন। আইডিয়া টা দারণ না!
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,

– ফা’ল’তু আইডিয়া! আমি আমার বউ ছাড়া অন্যকারো হাতে আঁকতে পারিনা।
মাইরা মনে মনে খুশি-ই হলো। হেসে বলে,
– আচ্ছা আচ্ছা আমাকে দিয়ে দিলেই হবে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ শিসরাজ।
ইরফান শীতল দৃষ্টিতে তাকায় মাইরার দিকে। আড়াআড়িভাবে দু’হাত বুকে গুঁজে মৃদুস্বরে বলে,
– এসব ফা’ল’তু ধন্যবাদ তোমার কাছে রাখো। এটুকুতে আমার পোষায় না।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭১

মাইরা মুখ ফুলিয়ে তাকায় ইরফানের দিকে। সে কি সুন্দর করে ধন্যবাদ দিলো, আর এই লোক ফিরিয়ে দিল। ইরফান দু’হাতে মাইরাকে তার দিকে টেনে নিয়ে মাইরার গলায় মুখ গুঁজে শ্বাস টানে। মৃদুস্বরে বলে,
– নেক্সট ডে, আমার পারিশ্রমিক আমি নিজ দায়িত্বে নিয়ে নিব জান। আজ তোমার লাস্ট ছুটি।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭৩