প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭৩ (২)

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭৩ (২)
Drm Shohag

ইরফান রেগে বলে,
– আবার মানে মানে করছ? শোনো বউকে আদর করব। সেই রাতে একটু টাচ করেছিলাম। ওকে এনে দাও যাও। এই ফা’ল’তু বিয়ে ক্যান্সেল।
তারেক নেওয়াজ খুকখুক করে কেশে উঠল। ভদ্রলোক কথা বলার মতো ভাষা খুঁজে পায় না। এটা তার ছেলে? কিভাবে সম্ভব? সন্দেহ প্রকাশ করলে তো তার আবার ভাত বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সে যে তার ছেলেকে চিনতে পারছে না। মাইরার হাওয়া লেগে এমন হয়েছে? কিন্তু মাইরা তো যথেষ্ট ল’জ্জাবতী মেয়ে,, তার ছেলের এই রূপ কোন গুহায় লুকিয়ে ছিল?
তারেক নেওয়াজ কে চুপ দেখে ইরফান আবারও রেগে বলে,

– তুমি কি আমার বউকে এনে দিবে? না-কি আমি তোমার বউকে লুকিয়ে রাখার অ্যারেঞ্জ করব?
তারেক নেওয়াজ চোখ বড় বড় করে তাকায়। অটোমেটিক তার হাত বুকে চলে যায়। থেমে থেমে বলে,
– আমি কিভাবে তোমার বাবা হয়ে গেলাম?
ইরফান তার বাবার কথা বুঝলো না, বাইরে যেতে যেতে বলে,
– ওকে আমি নিজেই খুঁজে নিচ্ছি আমার বউকে। বাট তুমি প্রিপারেশন নাও, নেক্সট ওয়ান মান্থ তুমি তোমার বউ ছাড়া থাকছো। ইট’স ফাইনাল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তারেক নেওয়াজ হতভম্ব চোখে ছেলের প্রস্থান দেখলেন। মাইরা সকাল সকাল তার কাছে আবদার করেছিল, সে পার্লারে গিয়ে সাজবে। তারেক নেওয়াজ বলেছিল, বাড়িতে আসতে বলে দিয়েছে মেকাপ আর্টিস্টদের। কিন্তু মাইরা মানেনি। সে আবদার করেছে, পার্লারে গিয়েই সাজবে, ওখানে ফারাহ’ও আসবে। দু’জন একসাথে সাজবে। বাচ্চা মেয়ে। বাবার কাছে আবদার করেছে। সে বাবা হয়ে কি করে মেয়ের ওইটুকু আবদার ফেরাবে? ইরফান ঘুমিয়েছিল। কিন্তু এখন তার বউহারা হতে হচ্ছে। আহ! এই ছেলের জন্য কবে না জানি বুড়ো বয়সে তার বউকে একেবারে হারিয়ে ফেলতে হয়। বিড়বিড় করে,
– নি’র্ল’জ্জ ছেলে, বাবার পিছে লাগতে ল’জ্জা করে না তোমার? শুধু আমার বউকে দূরে ঠেলে দিলে হয়েছে। তোমাকে তোমার বউয়ের ঝাটার বারি খাওয়াবো আমি বলে দিলাম।

ইরফান আবারও পুরো বাড়িতে মাইরাকে খুঁজেছে। কিন্তুু পায় নি। কাউকেই পাচ্ছিল না। সবশেষে রাতুলকে দেখতে পেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে জানায়, মাইরাসহ তাদের সব কাজিনরা পার্লারে গিয়েছে, তবে সে ঠিকানা জানেনা। ইরফান আবারও তার বাবার কাছে আসে। তারেক নেওয়াজ তার ছেলেকে দেখেই কেমন ভীত চোখে তাকায়। মনে হচ্ছে তার জীবনে এক ভয়ংকর আতঙ্কের নাম তার ছেলে। ইরফান কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তারেক নেওয়াজ দ্রুত বলে ওঠে,
– ধানমন্ডি রোড ৫, হাউস ২৯-এর প্রথমতলায় তোমার বউ আছে।
ইরফান ছোট করে করে বলে,
– ওকে।
কথাটা বলেই ইরফান দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
তারেক নেওয়াজ অসহায় চোখে দেখল। তার ছেলে বউ পাগল হওয়ায় তার খুশি হওয়া উচিৎ না-কি,, তাকে সেকেন্ডে সেকেন্ডে আতঙ্কে ফেলছে, এরজন্য তার মারাত্মক কষ্টে জর্জরিত হয়ে শোক পালন করা উচিৎ?
এসব ভেবে ভদ্রলোক চরম হতাশার শ্বাস ফেললেন।

ইরফান বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে বাড়িতে থাকা মেহমান সহ সকলে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বিয়ের আগে বর বাড়ি দেখে সিভিল ড্রেসে কোথায় বেরিয়ে যাচ্ছে? রাতুল এগিয়ে এসে বলে,
– আরে ইরফান ভাই তোমার তো বিয়ে,, ভুলে গেলে?
ইরফান পায়ের গতি না থামিয়ে বরং বাড়িয়ে বলে,
– বিয়ে ক্যান্সেল!
ইরফানের কথাটায় বিনা মেঘে বজ্রপাত পড়লো যেন। রুমা নেওয়াজ এগিয়ে এসে বলেন,
– এসব কি বলছ বাবা? সব আয়োজন শেষ, আর তুমি বলছো বিয়ে করবেনা?
ইরফান তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

– আম্মু তোমার হাসবেন্ড আমার বউকে লুকিয়ে রেখে এসেছে। আমি ওকে আনতে যাচ্ছি। আর এসব অ্যারেঞ্জ করার জন্য আফসোস হলে, তুমি আর বাবা আরেকবার বিয়ে করে নাও।
কথাটা বলে ইরফান আর এক সেকেন্ড-ও দাঁড়ায় না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। রুমা নেওয়াজ এর পাশে তারেক নেওয়াজ এসে দাঁড়িয়েছিল। ছেলের কথা শুনে ভদ্রলোক কাশতে কাশতে সোফায় বসে পড়েছে। রুমা নেওয়াজ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। এদিকে রাতুল মাথা চুলকায়। ছেলের দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে মন চাইছে না বলে, কি সুন্দর করে বাবা মাকে বিয়ে করার অফার করলো? কত ভালো ছেলে! কতই না দয়ালু ছেলে!
কথাগুলো এক সাইড দিকে হয়েছে, যার ফলে বাইরের কেউ শুনতে পায়নি, নয়তো আজ এতো মেহমানের সামনে রুমা নেওয়াজ আর তারেক নেওয়াজ এর কি হতো! তারেক নেওয়াজ হতাশ, রুমা নেওয়াজ নিজ স্বামীর পানে চাইলে তারেক নেওয়াজ বলে,

– ও কিছুতেই আমার ছেলে নয়, হলে শুধু তোমার ছেলে। তুমি কি কোনোভাবে বিয়ের আগে এরকম নি’র্ল’জ্জ টাইপ ছিলে রুমা? হয়তো বিয়ের পর শুধরে গিয়েছে, তাই আমি বুঝতে পারিনি। তোমার কারণে আমার ভোলা ভালা ছেলের বদলে এরকম একটা ব’জ্জা’ত ছেলে হয়েছে।
রুমা নেওয়াজ কটমট দৃষ্টিতে তাকায় নিজ স্বামীর পানে। রাতুল শব্দ করে হেসে ওঠে। এগিয়ে এসে বলে,
– আরে তোমরা এতো চাপ নিচ্ছো কেন? এতো ভালো ছেলে কোথায় পাবে? কি সুন্দর বিয়ের অফার দিল!
তারেক নেওয়াজ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– তবে রে…
রাতুল এক দৌড়ে পগারপার।
রুমা নেওয়াজ কি বলবেন বুঝলেন না। তার ছেলেটা এভাবে কথা বলে কবে থেকে? ভাবনা রেখে তারেক নেওয়াজের দিকে চেয়ে বলে,

– তুমি বিয়ের আগে নিশ্চয়ই একটার পর একটা রিলেশন করেছিলে, তখন এসব নি’র্ল’জ্জ পনা করেছ, সেসব-ই আমার ছেলেটার মধ্যে ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে। এসবের মাশুল আমি তুলব, শুধু বিয়েটা একবার মিটুক।
কথাটা বলে জায়গাটি প্রস্থান করে। তারেক নেওয়াজ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। তার জীবনে এ কোন ঝড় এলো। এর চেয়ে তার ছেলে বউহীনা-ই তো ভালো ছিল!
তারেক নেওয়াজ এর এক চাচাতো ভাই এসে তার পাশে বসলে তারেক নেওয়াজ নিজেকে সামলে নেয়। আর কি কি বাকি রেখেছে তার ব’জ্জা’ত ছেলে, সেসব ভেবেই তার ঘাম ছুটছে।

তারেক নেওয়াজ এর বলা ঠিকানায় এসে ইরফান গাড়ি সাইড করে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। কোনোদিকে না তাকিয়ে দ্রুতপায়ে ভেতরে ঢুকতে গেলে দেখল মাইরা, ফারাহ সহ আরও তার আর ফারাহ’র কাজিন রা বেরিয়ে আসছে। ইরফান থেমে যায়, তার দৃষ্টি মাইরার পানে।
মাইরার পরনে কালো শাড়ি, যার উপর জরি, স্টোন আর এমব্রয়ডারির কাজ।
গতকাল ইরফান নিজেই মাইরার জন্য এই শাড়িটি কিনে এনেছিল। সে যতটা ভেবেছিল, মাইরাকে তার ভাবনায় কল্প রাণীর চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে। ইরফান কেমন স্থির চোখে মাইরার পানে চেয়ে আছে। যেন এই দিনেই জলজ্যান্ত এক নিখুঁত চাঁদ জমিনের বুকে একটু একটু করে পা ফেলছে। মাথায় কালো স্টোনের হিজাব বাঁধা, দু’হাত ভর্তি কালো চুড়ি,
মুখে অত্যধিক প্রসাধনীর ছোঁয়া।
ইরফান ঢোক গিলল। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে শার্টের দু’টো বোতাম খুলল। দৃষ্টি মাইরার পানে।
মাইরা বেশ কসরত করে সিঁড়ি বেয়ে নেমেছে। ইরফানকে দেখে সে সহ ফারাহ আর তাদের কাজিনরা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়।

ইরফান আর শুদ্ধর বিয়ে পড়ানো হবে এক জায়গায়,, আর এর জন্য তারেক নেওয়াজ আর ফারাহ’র বাবা আলোচনা করে একটি রিসিপশন বুক করে,, যেখানে ইরফান, শুদ্ধ একসাথে যাওয়ার কথা। আর মাইরা যেহেতু ফারাহ’র সাথে আছে। তাদের পার্লারের এখান থেকে একসাথে যাওয়ার প্ল্যান। কিন্তু ইরফানকে তাও আবার একদম সাদামাটাভাবে দেখে মাইরার একটুও হজম হলো না। বিস্ময় নিয়ে ছোট ছোট পায়ে হেঁটে এসে দাঁড়ায় ইরফানের সামনে। অবাক হয়ে বলে,
– আপনি এখানে কেন? আর আপনার শেরওয়ানি কোথায়?
ইরফান মাইরার দিকেই চেয়ে। তার গ্রান্ডমা মাইরাকে একটা ছোট্ট নাকফুল দিয়েছিল, মাইরার নাকে আজ সেই নাকফুল নেই, বরং ওই নাকফুলের জায়গায় গোল রিংয়ের মতো, যেটাকে নথ বলে। কপালের কাছে এসে ঠেকেছে তিকলি।

মাইরা এর আগেও সেজেছে, তবে এভাবে না।
ইরফান মাইরাকে এর আগে লেহেঙ্গা কিনে দিয়েছিল, কিন্তু শাড়িতে কেমন যেন অদ্ভুদ সুন্দর লাগছে। ইরফান আবারও ঢোক গিলে। মাইরা ইরফানকে চুপ করে থাকতে দেখে দু’হাতে ইরফানের হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বলে,
– কথা বলছেন না কেন? কি হয়েছে আপনার?
ইরফান মাইরার দিকে চেয়েই ডান হাত তুলে তার বুকের বা পাশে দেখিয়ে ছোট করে বলে,
– এখানে পেইন হচ্ছে।
ইরফান এমনভাবে কথাটা বললো, মাইরার মনে হচ্ছে ইরফান বুক ব্য’থায় কথাই বলতে পারছে না। ভীষণ বিচলিত হয়ে সেও ইরফানের বুকে হাত রেখে মালিশের মতোন করে চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
– শিসরাজ, কি হয়েছে আপনার? চলুন ডক্টরের কাছে যাই। পরে বিয়ে করা যাবে।
ইরফান মাইরার চিন্তিত মুখপানে দৃষ্টি রেখে-ই বলে,

– আমার মেডিসিন আছে।
মাইরা বিচলিত হয়ে বলে,
– তাহলে দ্রুত মেডিসিন খেয়ে নিন।
ইরফান ছোট করে বলে,
– হুম খাবো। তোমাকে আসতে হবে।
মাইরা কথা বাড়ালো না। এমনিতেই ইরফানের সেই নাক দিয়ে র’ক্ত পরার দৃশ্য মাইরা এখনো ভুলতে পারে না,, মনে হলেই তার শরীরে কেমন কাঁটা দেয়। ইরফান না বললেও সে ইরফানের সাথে যেত। পিছু ফিরে ফারাহ’দের বলার জন্য যেতে চাইলে ইরফান মাইরার হাত টেনে তার গাড়ির দিকে যায়। মাইরা দ্রুত বলে ওঠে,
– আরে আরে, দুই মিনিট দাঁড়ান। আমি ওদের বলে আসি।
ইরফান শুনলো না। মাইরা পিছু ফিরে গলা চড়িয়ে বলে,
– আপু তোমরা চলে যাও। আমি উনার সাথে যাচ্ছি।

কথাটুকু বলার মাঝেই ইরফান পিছু ফিরে মাইরাকে কোলে তুলে নেয়। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে, আবার সাথে সাথে নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরে। মানুষ কি বলবে? বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– আমাকে নামান। এখানে অনেক মানুষ। আর আপনি না অসুস্থ! উফ! নামান তো!
ইরফান দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে তার গাড়িতে গিয়ে বসে। ড্রাইভিং সিটে সে বসে মাইরাকে তার কোলে বসায়। সময় নষ্ট না করে গাড়ি স্টার্ট দেয়। মাইরা পাশের সিটে বসতে চাইলে ইরফান বাঁধ সাধে।
কয়েক মিনিট গাড়ি চালিয়ে ব্রেক কষে। মাইরা আশেপাশে তাকিয়ে দেখল এটা একদম ফাঁকা একটা জায়গা। ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
– এটা কোথায় আসলেন? বাড়ি যাবেন না? ওষুধ তো বাড়িতে তাই না? তাহলে বা……
মাইরা আর কথা বলার সুযোগ পায় না। ইরফান দু’হাতের আঁজলায় মাইরার মুখ নিয়ে ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে। মাইরা বুঝতেই পারেনি।

ক্ষণে ক্ষণে ইরফান মাইরার সব সাঁজ এলোমেলো করতে উদ্যত হয়। মাইরা ইরফানের থেকে ছাড়া পেতে চায়, ইরফান ছাড়লে তো! দু’হাতে শক্ত করে মাইরার কোমড় জড়িয়ে ধরে। মাইরা ভীষণ ছটফট করে। ইরফানকে ভীষণ এলোমেলো লাগে, মাইরা বেশ কসরত করে ঠেলেঠুলে ইরফানকে সরিয়ে রে’গে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান বিরক্ত চোখে তাকায়, মাইরাকে আবারও টেনে নিতে চাইলে মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে,
– অ’স’ভ্য লোক, আপনি না অসুস্থ? নিজের ওষুধ না খেয়ে আমার সাথে কি শুরু করেছেন? আমাকে বিয়ে করতে দিবেন না? সেই সকাল থেকে না খেয়েদেয়ে সেজেছি, আর আপনি সব এলোমেলো করে দিলেন।
বলতে বলতে মাথায় জড়ানো এলোমেলো হিজাব খুলে ফেলল। একদম যাচ্ছেতাই অবস্থা করে দিয়েছে। ইরফান কোনো কথা ছাড়াই আবারও মাইরার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে। মাইরা ছটফট করে। এতো রা’গ লাগছে তার। দু’হাতে ইরফানের দাঁড়ি ধরে টানে,, ইরফান মাইরাকে ছেড়ে মাইরার দু’হাত ধরে রে’গে বলে,

– স্টুপিট কি প্রবলেম?
মাইরা অসহায় কণ্ঠে বলে,
– আপনি আসলেই খুব খারাপ। আমার সব নষ্ট করে দিলেন। আমি বিয়েই করব না। আপনি বাড়ি গিয়ে ওষুধ খান।
ইরফান চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– বিয়ে ক্যান্সেল। আর আমার মেডিসিন আমার কাছেই আছে, বাড়ি গিয়ে কি করব?
মাইরা অবাক হয়ে বলে,
– তাহলে খাচ্ছেন না কেন?
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– খাচ্ছিলাম তো। তুমি ডিস্টার্ব করছ।
মাইরা চোখ বড় বড় করে বলে,
– আপনি কি পা’গ’ল? আপনি তো ওষুধ টা বের-ই করেননি।
ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
– মেডিসিন তো তুমি।
মাইরা চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– আপনার না বুকে ব্য’থা?

ইরফান মাইরার লিপস্টিক মেশানো ঠোঁটজোড়ায় ডান হাতের বুড়ো আঙুল চালিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
– বউ এভাবে সাজলে আমার বুকে পেইন হয়। এন্ড এট দ্যাট টাইম, বার্ডফ্লাওয়ার মেডিসিন খেতে হয়।
মাইরা ইরফানের কথা বুঝতে পেরে কেমন ল’জ্জায় মিইয়ে যায়। ইরফান মাইরার নাকের নথ ঘোরাতে ঘোরাতে বলে,
– সুন্দর লাগছে।
মাইরা আরও ল’জ্জা পায়৷ ইরফান এভাবে কখনো তার প্রশংসা করেনি। প্রথমবারের মতো এমন প্রশংসা পেয়ে মাইরার হাত-পা দিয়ে যেন ঠাণ্ডা কিছু বয়ে যায়। নিচু মাথা আরও নিচু করে নেয়। ইরফানের ফোনে কল আসে। ইরফান বিরক্ত হয়। বিরক্তি নিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখল শুদ্ধর কল। কল রিসিভ করলে ওপাশ থেকে শুদ্ধ বলে,

– শুনলাম তুই না-কি পার্লারে গিয়েছিস? তুই কি চাইছিস, আমার চেয়ে তোকে যেন বেশি সুন্দর লাগে,? সে তুই চাইতেই পারিস।
কিন্তু পার্লারে গেলে তো তোকে হি’জ’রা বানিয়ে দিবে,, ছ্যাহ! তোর কি রুচি রে!
ইরফান রে’গে বলে,
– থা’প্প’ড় খেতে না চাইলে ফালতু কথা রেখে কাজের কথা বল।
শুদ্ধ হেসে বলে,
– আমি সহ সবাই তোর জন্য বসে আছি। তাড়াতাড়ি আয়। রিসিপশনে যাবো।
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– বলেছি তো, বিয়ে ক্যান্সেল!
শুদ্ধ পাত্তা না দিয়ে বলে,

– আরে ভাই, সে তো তুই মাইরাকে ডোন্ট লাইক ইউ করতে করতে, ওকে ছাড়া এক সেকেন্ড-ও থাকতে পারিস না। সেরকম-ই এখন দেখা যাবে, বিয়ে ক্যান্সেল বিয়ে ক্যান্সেল বলে আরও ১০ বার বিয়ে করার জন্য লাফাবি।
মাইরা ইরফানের কান থেকে ফোন টেনে তার কানে নেয়। অতঃপর ইরফানের দিকে চেয়েই বলে,
– ভাইয়া আমি বিয়ে করব। আপনি যে আমার জন্য ছেলে দেখতে চেয়েছিলেন, দেখেননি?
শুদ্ধ হেসে বলে,
– হ্যাঁ হ্যাঁ মাইরা দেখে…….
আর শোনা গেল না। ইরফান রে’গে মাইরার থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ফোন সুইচ স্টপ করে দিয়ে গাড়ির ব্যাক সিটে ছুঁড়ে মারে। মাইরা দ্রুত ইরফানের কোল থেকে নেমে পাশের সিটে যেতে চাইলে ইরফান দু’হাতে মাইরাকে শক্ত করে তার সাথে চেপে ধরে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– কাকে বিয়ে করবে বলছিলে?
মাইরা মোচড়ামুচড়ি করতে করতে বলে,

– আপনাকে আপনাকে। ছাড়ুন আমায়। আমার হাড়গোড় সব ভেঙে গেল!
ইরফান হাতের বাঁধন ঢিলে করার বদলে আরও শক্ত করল। মাইরা অসহায় কণ্ঠে বলে,
– ছাড়ুন আমায়। আপনাকেই তো বিয়ে করতে চাইছি।কিন্তু আপনি-ই আমায় বিয়ে করতে চান না। গিরগিটি একটা!
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– স্টুপিট বাঁদর, বিয়ে করলে টাইম ওয়েস্ট হবে।
মাইরা অদ্ভুদভাবে তাকায় ইরফানের দিকে। মানে সময় নষ্ট হয় বলে বিয়ে করবে না? এই লোকটাকে কি বলা উচিৎ? রে’গে বলে,
– হায়রে আমার পানচুয়াল মানুষ রে! ওই সময় বাঁচিয়ে কোন মহাকাশে অভিযান চালাবেন আপনি?
ইরফান হাতের বাঁধন সামান্য ঢিলে করে একটু হেসে বলে,
– তোমার মহাকাশে।

মাইরা থতমত খেয়ে তাকায়। চোখ বুজে নেয়। মাথাটা নিচু করে থুতনি একদম গলার নিচে নামিয়ে ফেলে। ইরফানের ঠোঁটের কোণে লেপ্টে থাকা হাসি আরেকটু দীর্ঘ হয়। অতঃপর বলে,
– আমার কাছে মাস্ক আছে। তুমি চাইলে মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকতে পারো।
মাইরা রেগেমেগে দু’হাতে ইরফানের গলা চেপে ধরে বলে,
– আপনার চেয়ে একটা অ’স’ভ্য লোক-ও ভালো আছে।
ইরফান গাল চুলকায় সাথে মাইরার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে। ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি।
মাইরা আবারও ল’জ্জা পায়। দ্রুত ইরফানের কোল থেকে নেমে পাশের সিটে গিয়ে বসে। এবার ইরফান কিছু বলল না। মাইরা দেখল ইরফান সেই একই ভঙ্গিতে তার দিকে চেয়ে আছে। মাইরার কান্না পাচ্ছে। গাড়ির ড্যাশবোর্ডের উপর থেকে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে ইরফানের দিকে ছুঁড়ে মেরে বলে,

– অ’স’ভ্য লোক। আপনি একটা বখাটে,, আপনি আমাকে টিজ করছেন। আমি আপনাকে একদম ছাড়বো না বলে দিলাম।
ইরফানের তবুও কোনো পরিবর্তন নেই। বরং মাইরার অবস্থা দেখে হাসি চওড়া হয়। আর মাইরার ল’জ্জা বাড়ে। মাইরা সিটের উপর পা তুলে একদম উল্টো ঘুরে বসলো। এই অ’স’ভ্য লোকের দিকে সে আজ ম’রে গেলেও তাকাবে না।
ইরফান কিছু বললো না। চুপচাপ গাড়ি স্টার্ট দেয়। একটু পর পর আড়চোখে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা একবার ইরফানের দিকে তাকিয়েছিল, চোখাচোখি হওয়ায় মাইরা আবার সাথে সাথে ওদিক ফিরে। ইরফান ডান হাতে স্টিয়ারিং ঘোরায়, বা হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে চাপ-দাঁড়িতে স্লাইড করতে করতে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
– স্পেশাল মোমেন্টে ল’জ্জা পাওয়া উচিৎ, বাট তুমি অপজিট কেন?
মাইরা এবার এগিয়ে এসে দু’হাতে ইরফানের মুখ চেপে ধরে কান্নামাখা গলায় বলে,
– আল্লাহর দোহাই, এবার আপনি চুপ করুন।
ইরফান বা হাতে মাইরাকে তার কোলে ভালোভাবে বসিয়ে মাইরার মাথা তার বুকে রেখে স্বাভাবিক হয়ে বলে,
– ওকে। আপাতত রেস্ট কর।
মাইরা আর কিছু বললো না। ওভাবেই থাকলো।

ইরফান শুদ্ধকে কল করে জানিয়ে দিয়েছে, সে আর মাইরা এখান থেকেই রিসিপশনে যাবে। শুদ্ধদের চলে যেতে বলেছে।
মাইরাকে একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে বিরিয়ানি খাইয়েছে। এরপর ঔষুধের দোকানে গিয়ে মাইরার দুপুরের আর রাতের ঔষধ কিনেছে, সাথে একটি পানির বোতল। এগুলো কিনে গাড়িতে এসে বসে ইরফান। মাইরার দিকে ঔষধ আর পানি বাড়িয়ে দিলে মাইরা বিনাবাক্যে ঔষধ খেয়ে নেয়। তার তো মনেই ছিল না। সে বাড়িতেই ঔষধ রেখে এসেছে। ইরফান মাইরার কাছে থাকা একটি ছোট্ট ব্যাগে রাতের ঔষধ রেখে বলে,

– এটা রাতে মনে করে খাবে। আমি বিজি থাকতে পারি।
মাইরা ভীষণ আপ্লুত হলো, ইরফানের সব মনে আছে দেখে।
এরপর ইরফান বেশ কিছুক্ষণ ড্রাইভ করে একটি শপিংমলে যায়। গাড়ি থেকে নামার আগে মাইরার শাড়ি যে একটু একটু এলোমেলো হয়েছিল, তা সুন্দর করে ঠিক করে দেয়। হিজাব দিয়ে মাইরার মাথা ঢেকে দিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– ট্রায়াল রুমে গিয়ে হিজাব বেঁধে নিবে, ওকে?
মাইরা আবদার করে বলে,
– আপনি বেঁধে দিন।
ইরফান মাইরার মুখের দিকে তাকায়। সে তো কখনো হিজাব বাঁধে নি। মাইরার আবদার মানলো চুপচাপ। বেশ অনেকটা সময় নিয়ে মাইরাকে হিজাব বেঁধে দেয়। এরপর তার ফোনের সেলফি ক্যামেরা অন করে মাইরার সামনে ধরে বলে,
– পছন্দ হয়েছে?
মাইরা হেসে বলে,
– আসলেই অনেক ভালো হয়েছে। আপনি কেমন জানেন? ওই যে ক্লাস সিক্স-সেভেনে একটা গাইড পড়তাম, একের ভিতর সব,, আপনি সেই গাইডের মতো। মানুষ একটা, ভেতরে সব গুণ-ই আছে।
ইরফান ফোন পকেটে রেখে বলে,

– আর তুমি মানুষের ভেতর বাঁদর। উপরে মানুষ, ভেতরে বাঁদরামিতে ভরা।
মাইরা ভোতামুখে তাকায়। সে কি সুন্দর প্রশংসা করল, আর এই লোকটা কি করল। মাইরা একটু ঝুঁকে ইরফানের পকেট থেকে ফোন বের করে। ইরফান কিছু বোঝার আগের একদম রাস্তার মাঝে ফোন ছুঁড়ে মারে। ইরফান হতভম্ব হয়ে দ্রুত মাইরার পাশের জানালায় উঁকি দিয়ে দেখল, তার ফোন অলরেডি কয়েকটা গাড়ি পিষে দিয়ে গুড়ো গুড়ো করে দিয়েছে। ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে রে’গে বলে,
– স্টুপিট, কি করলে এটা? ওখানে আমার কত ইম্পর্ট্যান্ট থিম ছিলো, কোনো আইডিয়া আছে তোমার?
মাইরা তার সিটে বসে ভাবলেশহীনভাবে বলে,
– আপনি জানেন না? বাঁদরদের মাথায় বুদ্ধি থাকে না! ওরা হাতের কাছে যা পায়, পছন্দ না হলে সেটাই ছুঁড়ে ফেলে দেয়। বাঁদর বলবেন, আবার বাঁদরামি সহ্য করবেন না, তা তো হবে না সোনা!
ইরফান চোখ ছোট ছোট করে বলে,

– সোনা?
মাইরা থতমত খেয়ে বলে,
– ওটা একটা ডায়লগ এর মতো।
ইরফান হতাশ হয়ে আরেকবার তার গুঁড়ো হওয়া ফোনটার দিকে তাকালো। স্টুপিট টা তার কত কাজ বাড়িয়ে দিল! মাইরা মিটিমিটি হাসে। ভালোই হয়েছে। মূলত তার রা’গ হয়েছিল। অ’স’ভ্য লোক,, শুধু তার বদনাম করবে।
ইরফান বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে গাড়ি থেকে বের হয়। অপর পাশে গিয়ে গাড়ির ডোর খুললে মাইরা বেরিয়ে আসে। ইরফান মাইরার হাত ধরে সামনে এগিয়ে যায়। মাইরা একটু পর পর ইরফানের দিকে তাকায়। সে বোধয় ফোনটা ফেলে দিয়ে ঠিক করেনি। মিনমিন করে বলে,

– আপনি কি আমার উপর রা’গ করেছেন? আমি আসলে বুঝতে পারিনি।
ইরফান বা হাতে মাইরাকে তার সাথে আগলে নিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে মাইরার কপালে চুমু এঁকে মৃদু হেসে বলে,
– ইট’স ওকে। আই’ল ম্যানেজ। ডোন্ট ওয়ারি।
মাইরা কিছু বললো না। ইরফানকে তার ভীষণ অদ্ভুদ লাগে এখন। না চাইতেও আগের ইরফানের সাথে মেলাতে যায়, আর তখন তার মনে হয়, সে বর্তমানে কল্পনার জগৎে বাস করছে।
ইরফান শপিংমল থেকে ব্ল্যাক কালারের শেরওয়ানি সাথে প্যান্ট কিনে ট্রায়াল রুম থেকে বেরিয়ে আসে। মাইরা মুগ্ধ দৃষ্টিতে ইরফানকে দেখে। ইরফানের যে কালো পছন্দ তা মাইরা এতোদিনে বুঝেছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ইরফানকে কালোতেই ভীষণ সুন্দর লাগে মাইরা কাছে। আর ইরফানের চক্করে মাইরার চোখেও এখন শুধু কালো সবকিছুই সবার আগে চোখে পড়ে। ইরফান এগিয়ে এসে মাইরার হাত ধরে বাইরে বের হয়। ইরফান হঠাৎ-ই দাঁড়িয়ে যায়। মাইরা ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,

– কি হয়েছে?
ইরফান মাইরার শাড়ির এলোমেলো কুচির দিকে চেয়ে আছে। গাড়িতে ওভাবে এলোমেলো হয়ে বসার কারণে মাইরার শাড়ির কুচি একদম নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলা যায়। মাইরা আবারও কিছু বলার আগেই ইরফান হাঁটু মুড়ে বসে খুব মনোযোগ সহকারে মাইরার শাড়ির কুচি একটা একটা করে গুছিয়ে দেয়। মাইরা মাথা নিচু করে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ইরফানের পানে।
আশেপাশে অনেক পথচারী দাঁড়িয়ে পড়েছে। আবার অনেকের পথের চলাচল থামেনি, তবে দৃষ্টি ঘুরেফিরে ইরফান-মাইরার পানে আসছে।
ইরফান খুব নিখুঁতভাবে মাইরার শাড়ির সবগুলো কুচি সাজিয়ে দেয়। এরপর বসা থেকে দাঁড়িয়ে মাইরার হাত ধরে তার গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। মাইরা ইরফানের দিকে চেয়ে হাঁটছে। সে তার অনুভূতি কি করে বোঝাবে? একটু পর কাঁপা কণ্ঠে ডাকে,

– শিসরাজ?
ইরফান সামনে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলে,
– আই ডোন্ট লাইক ইউ, বার্ডফ্লাওয়ার।
মাইরা ইরফানের কথা শুনে হেসে ফেলল। শব্দ করে হেসেছে। ইরফানের মুখে এই কথাটা কেন যেন ভালোই লাগলো। একটু পর হাসি থামিয়ে দু’হাতে ইরফানের বা হাতে জড়িয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলে,
– আই হেইট ইউ শিসরাজ।
ইরফান আড়চোখে মাইরার দিকে তাকায়। সূক্ষ্ম হাসলো। কিছু বললো না। মাইরার মুখেও হাসি। এখনও অনেকেই দু’জন কপোত-কপোতীর পানে মুগ্ধতা মিশিয়ে তাকিয়ে আছে। ইরফান, মাইরা একবারের জন্যও নিজেদের রেখে অন্যদিকে মন দেয়নি। তারা হয়তো জানেও না, তাদের এমন দৃশ্য অনেকেই দু’চোখের পাতায় মুগ্ধতার সহিত ভরে নিয়ে তাদের গন্তব্যের পথে গিয়েছে।

রিসিপশন জুড়ে শুধু মানুষ আর মানুষ। ফারাহদের আত্মীয়রা এসে শুদ্ধর সাথে পরিচয় হয়, আবারও কেউ কেউ এমনভাবে তাকায়, শুদ্ধর মনে হচ্ছে সে নতুন বউ। তার মুখ ঢাকার জন্য বিছানা থেকে চাদর তুলে আনা উচিৎ ছিল।
শুদ্ধর মনটা খারাপ। সে ফারাহকে দেখতে পায়নি। রিসিপশনে এসে ইরফানের জন্য ওয়েট করতে করতেই যেন সে বুড়ো হয়ে যাবে। বেদ্দপ বিয়ে টা করে বউ কে নিয়ে যা। আর এই ফারাহ টা যে কোথায়। একেবারে দেখেনি তা নয়। একবার দেখেছিল, কিন্তু মুখ দেখতে পায়নি,, তাকে দেখেই আরও বেশি এমন করছিল, আজ যদি সে বর না হতো, তবে ফারাহ’কে থাপ্পড় দিতো একটা। তাকে মুখটা একটুখানি দেখতে দিল না, এসব নেয়া যায়?
নাছিম আর তার মা গ্রাম থেকে এসেছে। নাছিম আসবে না বলে পণ করেছিল৷ কিন্তু ফাইজ আর ইরফানের বাবা যেন পারলে তার পা ধরছিল, এরপরও যদি না আসতো, বে’য়া’দ’বি হয়ে যেত। শুদ্ধ বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলে,

– বা’ল বিয়ে করব না।
নাছিম চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– করিস না। কে তোকে ধরে বেঁধে বিয়ে দিচ্ছে?
শুদ্ধ অসহায় কণ্ঠে বলে,
– ভাই আমার মারাত্মক কষ্ট রে! ফারাহ’র মুখ দেখতে পায়নি। তুই ভাবতে পারছিস, আমি এই মুহূর্তে একটা ছ্যাঁকা খাওয়া পাবলিক!
নাছিম হেসে কিছু বলতে চাইলেও মাইরাকে দেখে থেমে যায়। ধীরে ধীরে হাসি মিলিয়ে যায়।
মাইরা ইরফানের হাত ধরে মাত্র ভেতরে প্রবেশ করল। ইরফানের গায়ে কালো শেরওয়ানি, মাইরার পরনে কালো শাড়ি। শুদ্ধ আড়চোখে নাছিমের দিকে তাকায়। নাছিম যেন টেনেহিঁচড়ে তার চোখদু’টো মাইরার থেকে সরিয়ে মেঝেতে নিবন্ধ করল।

ফারাহ যেখানে আছে, মাইরাকে সেখানে নিয়ে যায় সবাই মিলে। ইরফান এগিয়ে আসে শুদ্ধর কাছে। যেখানে মুরুব্বিরা সবাই আছে। তারেক নেওয়াজ, ফাইজের বাবা সহ আরও সব মুরুব্বীরা আছে।
শুদ্ধ ইরফানের মাথা ফাঁকা দেখে তার নিজের মাথার পাগড়ি খুলে ইরফানের মাথায় দিলে ইরফান সাথে সাথে মাথা থেকে সেটি নামিয়ে ঠাস করে শুদ্ধর মাথায় রাখে। শুদ্ধ ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,
– আরে মাথায় দে এটা। নয়তো তোকে দেখে আমি বর বর ফিল পাচ্ছি না।
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
– আমার বউ ফিল করতে পারলেই হবে।
নাছিম পাশ থেকে মৃদু হাসলো। ইরফান তার দিকে একবারও তাকায়নি, উল্টে তাকে যে ইচ্ছে করে এভোয়েড করছে, এটাও বুঝতে পারলো। নাছিম গলা ঝেড়ে বলে,
– দোস্ত কংগ্রাচুলেশনস!
ইরফান নাছিমের দিকে তাকালো না। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে ছোট করে বলে,
– থ্যাংস্
শুদ্ধ একবার ইরফানের দিকে তাকায় আরেকবার নাছিমের দিকে। নাছিমের দিকে একটু এগিয়ে এসে বলে,
– একটু সময় দে। ও ঠিক হয়ে যাবে।
নাছিম কিছু বললো না। চুপ করে থাকলো। একটা চাপা শ্বাস ফেলে।

মাইরা ফারাহ’র পাশে গিয়ে বসলে দেখল কোথা থেকে মিলা দৌড়ে এসে মাইরার উপর একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়ে। মাইরাও মিলাকে জড়িয়ে ধরে। একটু পর মিলা মাইরাকে ছেড়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
– কই ছিলি রে তুই? সেই কখন থেকে এসে বসে আছি।
মাইরা কিছু বলার আগেই মিথিলা বলে ওঠে,
– আজ আমাদের ইরফান ভাইয়ের মতো স্বামী নাই বলে কারো কোলে উঠতে পারিনা!
মাইরা ভীষণ ল’জ্জা পায়৷ ইরফানকে উল্টেপাল্টে ধুতে ইচ্ছে করল তার। অ’স’ভ্য লোক একটা। মিলা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
– তোর কাছে থেকে ছেলেদের পারফিউম এর গন্ধ পাচ্ছি ময়না, সামথিং সামথিং!
মাইরা রে’গে বলে,

– ধ্যাত বা’ল যা তো। যা খা। খেয়ে বিদেয় হো।
মিলা কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
– এই বেদ্দপ আমি খালি খেয়ে যাব কেন? সাথে বান্ধিয়াও নিয়ে যাবো।
মিলার কথায় সবাই হেসে ফেলল। মাইরাও হেসে ফেলল।
লাবিব কোথা থেকে দৌড়ে এসে মাইরার কোলের উপর হাত রেখে বলে,
– আপুই আপুই আমাকে তুমু কাও। আমি ছুকিয়ে গেচি।
লাবিবের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকায়। মাইরা লাবিবকে কোলে নিয়ে বেশ কয়েকটা চুমু খায়। পাশ থেকে ফারাহ লাবিবের গাল টেনে বলে,
– আপুই এর চুমু না খেলে তুমি শুকিয়ে যাও?
লাবিব মাথা উপর-নীচ করে। লাবিবের কান্ডে সবাই হাসছে। মিলা এগিয়ে এসে বলে,

– এই ছানা তোমাকে এতো পাকা পাকা কথা কে শিখিয়েছে?
লাবিব মিলার দিকে তাকিয়ে বলে,
– খুচিব ডুলাবাই।
মাইরা কেশে ওঠে। মিলা চোখ বড় বড় করে বলে,
– কি সাংঘাতিক শালা-দুলাভাই রে! একজন শিখিয়েছে, আরেকজন শিখে নিয়েছে।
মাইরা কপাল চাপড়ায়। এই অ’স’ভ্য লোকটা তার দুধের ভাইটাকে যে আর কি কি শিখিয়েছে, আল্লাহ জানে আর সে জানে।
ইনায়া অবাক হয়ে বলে,
– আল্লাহ! ভাইয়া এসব শিখিয়েছে? আমার তো বিশ্বাস-ই হচ্ছে না!
মাইরা বিড়বিড় করে,
– তোমাদের ভাই যে কি পরিমাণ অ’স’ভ্য সেটা যদি তোমরা জানতে! বহুরূপী একটা! উপরে উপরে ভালো সেজে থাকে!

কিছুক্ষণ পর ইরফান আর শুদ্ধর সামনে কাজি সাহেব বসে। ইরফানের পাশে তারেক নেওয়াজ বসেছে, একটু দূরে মাইরার মা বসেছে। আর শুদ্ধর পাশে বসেছে ফারাহ’র বাবা, তার পাশে ফাইজ। ফাইজ একটু পর পর ইনায়াকে গিয়ে দেখে আসে। এমনিতেই তার বউ অল্প বয়সে তার বাচ্চাটাকে পেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, ফাইজের চিন্তার শেষ নেই।
কাজি সাহেব বেশ কিছু কথাবার্তা বলে ইরফান আর তারেক নেওয়াজ এর উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করে,
– কাবিন কত?
ইরফানের এসব বিষয়ে জানা নেই। গতবার তো শুধু কোথায় যেন সাইন করেছিল, আর কবুল বলেছিল। তাই কৌতূহলী চোখে প্রশ্ন করে,
– হোয়াট ইস কাবিন?
কাজি সাহেব বোঝানোর স্বরে বলে,

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭৩

– কাবিনে যা টাকা দিবে, সেই পরিমাণ টাকা স্ত্রী কে দিতে হয়,, আর তোমাদের বিচ্ছেদ হলে, তখন এটা তোমার স্ত্রী কে পুরোপুরি পরিশোধ করে দিতে হবে।
কথাটা শুনে ইরফান কটমট দৃষ্টিতে তাকায় কাজি সাহেব এর দিকে। ভদ্রলোক হেসে কথাগুলো বলছিল। কিন্তু ইরফানের ওমন শক্ত মুখ দেখে তার মুখ থেকে হাসি সরে যায়। ভাবলো, সে কি ভুল কিছু বলে ফেলল না-কি! ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– আর ইউ ম্যাড? আমি আমার বউকে ছাড়বো কেন? এসব ফা’ল’তু রুলস্ টেনে এনে আমার বিয়ে পড়াতে এসেছেন?

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭৪