চেকমেট পর্ব ২২
সারিকা হোসাইন
এক হাতে লাল রঙের কুকাবুরা ক্রিকেট বল আরেক হাতে রূপকথার মাথা নিজের প্রশস্ত বক্ষে চেপে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সারফরাজ।গত রাতে কে টে ফালি হওয়া হাতের তালু ধেয়ে আসা বলের আঘাতে আরেকটু রঞ্জন ধারার উৎপত্তি করলো।কিন্তু তাতে ভ্রূক্ষেপ প্রকাশ করলো না সারফরাজ।বলটা ধরার জন্য যেভাবে হাত বাড়িয়ে ছিলো এখনো সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে সে।মুঠি পাকিয়ে বল খানা চেপে ধরার দরুন কাটা ঘায়ের টেনে আসা চামড়ায় টান লেগে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটলো।হাতের থাবা পেরিয়ে সেই রক্তিম তরল আঙিনার সবুজ ঘাসে টপটপ করে বিলীন হলো।এতেও নিরুত্তাপ এই অনুভূতি হীন মানব।
সারফরাজ এর আবদার ইচ্ছে থাকা সত্তেও পূরণ করলো না রূপকথা।কেমন যেনো অস্বস্তি হচ্ছে তার।মানুষটা কেমন রহস্যময়।রূপকথার মাথা তার বুকে ঠেসে রাখলে জন্ত্রনা দগ্ধ হুতাশন নিভবে কিরূপে?সারফরাজ এর আগা মাথা হীন কথা রূপকথার মস্তিষ্কে খেললো না।তাই সারফরাজ এর হাতের থাবা থেকে জোর পূর্বক নিজের মাথা তুলে সারফরাজ এর বুকে থুতনি রেখে ঠোঁট টিপে একবার পিটপিট চোখে সারফরাজ এর মুখপানে চাইলো।প্রথম দর্শনেই সারফরাজ এর ঠোঁটের নিচের কুচকুচে কালো তিলটা রূপকথার সব কিছু এলোমেলো করে দিলো।যুবক যথেষ্ট আকর্ষণীয়।কালো রঙের চারকোনা ফ্রেমের রোদ চশমা যুবকের ওভাল শেপের মুখশ্রী তে অনন্য সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে।কালচে লাল ঠোঁট দুটো টসটসে ভেজা।মৃসন মুখ মন্ডল চকচকে রোদে কেমন গ্লেস ছড়াচ্ছে।মনে হচ্ছে আঙ্গুল দিয়ে আলতো টোকা দিলেই পাতলা গাল দুটো ফেটে যাবে।যুবকের শক্ত চোয়াল আর এডাম আ্যপল রূপকথার বুকে ধড়াস ধড়াস হাতুড়ি পেটালো।এহেন আপত্তিকর পরিস্থিতি তে দৃষ্টি সরিয়ে অন্যত্র নজর দিলো রূপকথা।মানুষ টা যথেষ্ট আকর্ষণীয়।আভিজাত্য আর গাম্ভীর্য শরীর ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। যেকোনো মেয়ে এমন পুরুষ কে প্রেমিক হিসেবে প্রত্যাশা করবে।কিন্তু রূপকথার এমন মনে হলো না।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
হঠাৎ সারফরাজ এর রক্তভেজা হাতে নজর গেলো রূপকথার।বিস্ফারিত নেত্রে সারফরাজ এর হাত চেপে ধরে উত্তেজিত গলায় বলে উঠলো
“আরে আপনার হাত কে টে রক্ত গড়াচ্ছে।হসপিটালে চলুন।
রূপকথার উঁচু আওয়াজে সম্বিৎ ফিরে পেলো সারফরাজ।এদিকে ছেলে গুলো নিজেদের বল খুঁজতে খুঁজতে সারফরাজ এর গেটের সামনে এসে দাড়ালো।এরপর ডেকে বলে উঠলো
“ভাইয়া বল টা দিয়ে দিন।
ছেলেটির বল নেবার প্রস্তাবে সারফরাজ এর মুখে অশ্রাব্য গালাগাল কিলবিল করে উঠলো।আর একটু হলেই রূপকথার আঘাত লাগতো।যেই আঘাত সইতে সারফরাজ এর ই দাঁতে দাঁত চাপতে হয়েছে।সেই আঘাত রূপকথা সইতো কি করে?বল না দিয়ে সারফরাজ আরো শক্ত করে চেপে ধরে অভিকে ডেকে বলে উঠলো
“অভে….
নেলিকে ছেড়ে সারফরাজ এর সামনে এসে দাড়ালো অভি।এরপর শুধালো
“কি?
“বলটা দেবার আগে আমি ঠিক কি ধরনের কথা বলতে পারি ওই শা….মানে ছেলে গুলোকে তা সম্পর্কে তোর কোনো আন্দাজ আছে?
অভিরূপ মাথা দুলালো।সারফরাজ সন্তুষ্ট হলো বন্ধুর চতুরতায়।এরপর ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে বলে উঠলো
“যা বলে আয়।
অভিরূপ মাথা নাড়ালো।এমন শব্দ সে বলতে পারবে না।কিন্তু সারফরাজ নাছোড়বান্দা।অভিকে একপ্রকার থ্রেট দিয়েই বললো
“আমার কথা অমান্য করলে কেমন পানিশমেন্ট পাবি জানিস?ব্রাউনি কে দিয়ে টর্চার করাবো তোকে।
ব্রাউনির কথা মনে পরতেই আত্মা কেঁপে উঠলো অভিরূপের।সারফরাজ এর ড্রাগস সাপ্লাই এর সমস্ত রক্ষণাবেক্ষণ করে এই ব্রাউনি।বেচারা ছেলে নাকি মেয়ে অভিরূপ জানে না।কিন্তু সুযোগ পেলেই গায়ে ঢলে পরে কোথায় কোথায় হাত বুলায় কে জানে ?
নিজের ইজ্জত বাঁচাতে ফাঁকা ঢোক গিলে গেটের কাছে হেঁটে গেলো অভি।এরপর ছেলে গুলোর উদ্দেশ্যে ফিসফিস করে বললো
“ওই বল পাবে না শা শা শাওয়ার নাতি।আর যদি আমার কথা না শুনে জেদ ধরে দাঁড়িয়ে ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকো তবে প্যান্ট খুলে এমন জায়গায় বল ভরে দেবে বাথরুমে বসে বসে কাঁদতে হবে।বাড়ি ফিরে যাও।মানুষ টা দেখতে সুন্দর কিন্তু বড্ড ভয়ানক।
অভিরূপের কথা গায়ে মাখলো না দলনেতা।সে বুক টান করে অভিরূপ কে বলে উঠল
“উনাকে ডাকুন।আমি কথা বলতে চাই উনার সাথে।বলটা অনেক দামি।খেলতে গেলে টুকটাক গায়ে লাগবেই।এতো রিয়াক্ট করার কি আছে?
কথাটি বলেই বলের চিন্তায় তর সইলো না ছেলেটির ।সে সারফরাজ কে উদ্দেশ্য করে ডেকে উঠলো
“এই যে চশমা ওয়ালা আংকেল!বলটা দিন তো।
আংকেল সম্বোধনে সারফরাজ এর মসৃন ফর্সা কপালে ভাঁজ পরলো।ভাজটা রাগের নাকি অবজ্ঞার বুঝলো না রূপকথা।সারফরাজ রূপকথার হাত টেনে সরিয়ে আদুরে গলায় বলল
“এক মিনিট।হু?
বাধ্যের ন্যয় ঘাড় কাত করলো রূপকথা।রক্তাক্ত বল নিয়ে ব্লেজারের বাটন খুলতে খুলতে লম্বা পায়ে গেটের কাছে এগিয়ে এলো সারফরাজ।এরপর ব্লেজারের ভেতরের পকেট থেকে নিজের বন্দুক খানা হাতে নিয়ে গাল চুলকাতে চুলকাতে শুধালো
“আংকেল বলে কে ডেকেছে আমায়?আর বল কার?
সারফরাজ এর হাতে বন্দুক দেখে দলনেতার বেলুন ফুস করে চুপসে গেলো।ভয়ে আত্মারাম দেহ ছেড়ে বেরুতে চাইছে।সে সাহসের আশায় ভয়ার্ত পাংশু মুখে পেছনে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।সে একা দাঁড়িয়ে আছে।ইতোমধ্যে সকলেই সংগোপনে কেটে পরেছে।বন্ধুদের এহেন বেঈমানি তে কেমন তলপেটে হিসুর প্রচন্ড চাপ অনুভব করলো সে।মুখে অসহায়ের ছাপ ফুটিয়ে বলে উঠলো
“আমার ওয়াশ রুমে যেতে হবে ভাইয়া।দেরি হলে সর্বনাশ হবে।
সারফরাজ তির্যক হেসে বলে উঠলো
“আর বল খেলবি এভাবে?
ছেলেটি মাথা নাড়িয়ে বললো
“জীবনেও না।
সারফরাজ বন্দুকের নল দিয়ে ছেলেটির এলোমেলো চুল ঠিক করতে করতে বললো
“ঠিক আছে বারি যা।
অনুমতি পেতেই ব্যাট বুকে চেপে ভোঁ দৌড় দিলো ছেলেটা।ছেলেটা যেতেই রূপকথার সামনে পুনরায় এসে দাড়ালো সারফরাজ।এরপর শুধালো
“হ্যা কি যেনো বলছিলে?
সারফরাজ এর আকর্ষণীয় কন্ঠে কথার তালগোল পাকিয়ে গেলো রূপকথার।তবুও নিজেকে সংযত রেখে আঙ্গুলি নির্দেশ করে বললো
“আপনার হাত।
রূপকথার নির্দেশে কে টে যাওয়া হাত খানা চোখের সামনে এনে একবার পরখ করলো সারফরাজ।সাদা ব্যান্ডেজ রক্তে ভিজে একাকার।এই মুহূর্তে রক্ত বন্ধ করা প্রয়োজন।চুয়ে পরা রক্তের ধারা শিথিল করতে বার কয়েক হাত ঝাড়া দিলো সারফরাজ।রূপকথা হাতের ইশারায় বাধা দিয়ে বলে উঠলো
“দাঁড়ান আমি হেল্প করছি।বাসায় স্যাভলন আর তুলো আছে?
কথাটি বলেই সারফরাজ এর মুখ পানে দৃষ্টি তাক করলো।
এক ভ্রু উঁচিয়ে বাঁকা হাসলো সারফরাজ।এরপর বললো
“কাম উইথ মি ডক্টর।
সারফরাজ এর মুখে ডক্টর সম্বোধন কথাটা বেশ মনে ধরলো রূপকথার।লাজুক হেসে নেলিকে ডেকে বললো
“এদিকে আয় নেলি।
বেচারি নেলি এতোক্ষন চুপচাপ অবাক নয়নে পর্যবেক্ষণ করছিলো সব কিছু।ঘটনা কোথায় থেকে কোথায় যাচ্ছে তার কোনো আগা মাথা খুঁজে পেলো না সে।রূপকথার সাথে এই বদ লোকের মাখামাখি পছন্দ হলো না নেলির।এদিকে অভিরূপ তাকে কেমন ঘুর ঘুর করে দেখছে।ছেলেটির চেহারা দেখেই কেমন ভয় লাগছে।মনে হচ্ছে এখনই পকেট থেকে অজগরের মাংস বের করে বলে উঠবে
“ধর নেলি অজগর খা।ইয়াক থু ! কি বিচ্ছিরি ব্যাপার।
নেলির বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকা দেখে অভিরূপ মুখের সামনে চুটকি বাজিয়ে বলে উঠলো
“তোমার বান্ধবী ভেতরে চলে গেছে।এখানে দাঁড়িয়ে কি ভাবছো তুমি?বিশেষ অভ্যর্থনায় ভেতরে নিতে হবে তোমাকে?
অভিরূপ এর অধিক বাড়াবাড়ি তে নেলির প্রচন্ড রাগ হলো।চিকন গলায় সে অভিরূপ কে ধমকে বলে উঠলো
“এই আপনি চুপ করুন তো।সব সময় বেশি কথা বলেন।
কথাটি বলেই হনহন করে হাঁটা ধরলো।নেলির যাবার পানে তাকিয়ে অভিরূপ বলে উঠলো
“জাহ বাবা।আমি আবার কি করলাম?
সারফরাজ এর ড্রয়িং রুমে সোফায় পা ছড়িয়ে বসলো সারফরাজ।রূপকথা কে হাতের ইশারায় বসতে বললেও সে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো।কামাল কে ডেকে তুলো আর স্যাভলন দিতে বললো সারফরাজ সাথে এক বোল কুসুম গরম জল।
কামাল দৌড়ে গিয়ে সব রেডি করে সারফরাজ এর সামনে আনতেই মাথা ইশারা করে সারফরাজ বললো
“ডাক্তার সাহেবার কাছে দাও।আজকে আমার পুরোটাই উনার কাছে সপে দিয়েছি কামাল চাচা।সে আমাকে মারুক কাটুক যাই করুক আমার কোনো আপত্তি নেই।
সারফরাজ এর ঠেস দেয়া কথা বৃদ্ধ কামাল খুব করে বুঝলো।কথার মর্মার্থ বুঝে সে ঠোঁট টিপে হেসে প্রস্থান নিলো।এরপর ফিরে এলো ছোট একটা টুল নিয়ে।
কামালের থেকে টুল নিয়ে সারফরাজ এর সামনে বসলো রূপকথা।এরপর পানিতে স্যাভলন ঢেলে তুলো ভিজিয়ে পরম যত্নে টেনে ধরলো সারফরাজ এর হাত।রূপকথার স্পর্শে সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে ফেললো সারফরাজ।এই অনুভূতি বোঝানোর ভাষা তার জানা নেই।সেদিনের সেই ছোট রূপকথা এতবড় হয়ে তার সামনে দাঁড়িয়েছে অথচ নিজের পরিচয় টুকু প্রকাশ করতে পারছে না সারফরাজ।কষ্টে বুক মুষড়ে উঠছে বারবার।নিজের জন্ত্রনা দমিয়ে রেখে সোজা হয়ে বসলো সারফরাজ।রূপকথা খুব যত্ন সহকারে সারফরাজ এর ক্ষত পরিস্কার করছে।চশমার কালো কাঁচ ভেদ করে রূপকথার ফর্সা মায়াবী মুখশ্রী দেখতে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে তাকে। তবুও চশমা খুললো না সে।পাছে তার ছ্যাবলার মতো ঘুরে ঘুরে রূপকথাকে দেখা বন্ধ হয়ে যায়।
রূপকথার দিকে এক নাগারে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ সারফরাজ এর মনে হলো তার সামনে বারো বছর আগের ছয় বছরের ছোট রূপকথা বসে আছে।রূপকথার খিলখিল হাসি,চঞ্চলতা, দুস্টুমি,এলোমেলো প্রশ্ন ,কুচকুচে কালো বড় বড় পাপড়ি ওয়ালা চোখ ,চিকন চিকন দাঁত সব কেমন যেনো সারফরাজ কে ঘায়েল করলো নিমিষেই।হঠাতই কোর্টে চালানের দিন পুলিশ স্টেশনের প্রাঙ্গনে রূপকথার আহাজারি কানে জোরে করে বাড়ি খেলো সারফরাজ এর।সারফরাজ এর গলা জড়িয়ে রূপকথার হাত পা ছুড়ার দৃশ্য মনে পড়তেই ব্যাথায় বুকটা কেমন ভার হলো।পুরোনো স্মৃতি চারন করতেই কখন সারফরাজ এর গাল গড়িয়ে নোনতা জলের ধারা প্রবাহিত হলো তা খেয়ালই করলো না সারফরাজ।
সারফরাজ এর হাত পরিস্কার করতে করতে সহসাই থেমে গেলো রূপকথার হাত।নিজের কাজ ফেলে সারফরাজ এর পানে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেললো রূপকথা।এরপর মনে মনে বললো
“এতো বড় শক্ত সামথ্য মানুষটা সামান্য ব্যাথায় এভাবে কাঁদছে?
রূপকথার মনের প্রশ্ন মনে চেপে নরম গলায় বললো
“খুব লাগছে বুঝি?আমি তো আলতো হাতেই করছি।
সারফরাজ মাথা দুলিয়ে প্রত্যুত্তর করলো
“আমি ঠিক আছি।
রূপকথা আবার নিজের কাজে মনোযোগী হতেই আনমনে রূপকথার মাথায় হাত ছোঁয়াল সারফরাজ।এতে সামান্য নড়ে উঠলো রূপকথা।সম্বিৎ ফিরে পেতেই হাত সরিয়ে সারফরাজ বললো
“আম সরি।
ক্ষত পরিস্কার করে আরেকটা ব্যান্ডেজ হাতে বেঁধে উঠে দাঁড়ালো রূপকথা।এরপর ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলে উঠলো
“আপনার কাজ শেষ।এবার আমার ব্যাগ দিন।আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে।
রূপকথা চলে যাবে ভাবতেই সারফরাজ এর মন কেমন করে উঠলো।কিন্তু স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে শুধালো
“কেনো এসেছিলে এই বাড়িতে?
সারফরাজ এর প্রশ্নে মাথা নিচু করে ফেললো রূপকথা।এরপর নিভু গলায় বলল
“কাউকে খুঁজতে।
“কাকে?
“সারফরাজ কে।
“সারফরাজ কি হয় তোমার?
উত্তর দিলো না রূপকথা।বরং পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বললো
“আপনি এই বাড়িতে কি করেন?
সারফরাজ সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো
“আমার বাড়িতে আমি কি করতে পারি মিস রূপকথা?
আগন্তুক এর মুখে নিজের নাম শুনে চমকে উঠলো রূপকথা।এরপর চট করে বলে উঠলো
“আমার নাম জানেন কি করে?
“তোমার কাজিনের থেকে শুনেছি গত কাল।
রূপকথা ঠোঁট গোল করে বললো
“ওহ।
“এসো আমার সাথে
কথাটি বলেই সিঁড়ি ধরে হেটে উপরে উঠলো সারফরাজ।রূপকথা গুটি গুটি পায়ে অনুসরণ করলো সারফরাজ কে।সারফরাজ আর রূপকথা দুতলায় উঠতেই নেলি ফিসফিস করে অভিরূপ কে শুধালো
“এই দারোয়ান টা বড্ড শয়তান আর ধূর্ত।আপনি চিনেন একে?
অভিরূপ স্বাভাবিক গলায় বলল
“ওমা নিজের বন্ধুকে চিনবো না?
নেলি পাল্টা প্রশ্ন করলো
“আপনি কোন বাসার দারোয়ান?
“আমাকে দেখে কি দারোয়ান মনে হচ্ছে?কোন এঙ্গেল থেকে আমার চেহারা বা গেটপ দারোয়ান এর মতো হু?
নেলি অভিরূপ এর উঁচু গলায় ভড়কে গিয়ে বললো
“আপনার বন্ধুকে দেখেও বোঝা যায়না সে দারোয়ান।কিন্তু গত কাল লুঙ্গি উঁচিয়ে যে ভাবে লাঠি নিয়ে দৌড়ে এসেছিলো।হো মাই গড।
অভিরূপ ঘটনা বুঝতে পেরে ধেয়ে আসা হাসি রোধ করে বললো
“ও দারোয়ান নয়।লুঙ্গি পরলেই কেউ দারোয়ান হয়না মিস বোকাফুল।
নিজের নামের এমন উপমায় কপাল চোখ কুঁচকে দূরে সরে দাঁড়ালো নেলি।এরপর গজগজ করে বললো
“আপনাকে মোটেও দেখতে ইচ্ছে করছে না।
“তাহলে দেখো না
“ইচ্ছে করে দেখতে চাইছি নাকি?সব কারসাজি তো উপরওয়ালার।নয়তো এই মানুষ আমার স্বপ্নে কি করে?
অভিরূপ মাথা বাড়িয়ে শুধালো
“কিছু বললে?কার স্বপ্নে কে এসেছে?
“ধ্যাত।
বলেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো নেলি।বাইরের লিচু গাছ কেমন হাত ইশারায় তাকে ডাকছে ।কিন্তু গত কালকের দুর্ঘটনা মনে করে লোভ লালসা মাটি চাপা দিলো নেলি।নেলির পেছন পেছন অভিরূপ এসে দাঁড়ালো।এরপর প্যান্টের পকেটে দুহাত গুঁজে নিচু হয়ে শুধালো
“লিচু গুলো তোমাকে ডাকছে।
নেলি বিরক্ত হয়ে বলল
“আচ্ছা ফাজিল লোক তো আপনি।এমন জ্বালাচ্ছেন কেনো?
অমায়িক হেসে ঠোঁট কামড়ে ধরে অভিরূপ বললো
“তোমাকে জ্বালাতন করতে আমার বড্ড ভালো লাগছে।প্লিজ রাগ করো না।তুমি যেমন ভাবছো আসলে আমি মোটেও এমন না।আজ যেনো কি হয়েছে।আমার সাথের শয়তান গুলো আমাকে কেমন উস্কে চলেছে বারবার।কি করি বলোতো?
নেলি কোনো উত্তর দিলো না।চুপচাপ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো শুধু।
সারফরাজ এর বেড রুমের দেয়ালে মায়া চৌধুরী আর সাদাফ শাহজাইন এর বড় ফ্রেমের ছবি দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হলো রূপকথা।না চাইতেও ইতস্তত করে বলে উঠলো
“উনারা সারফরাজ এর বাবা মা তাই না?
সারফরাজ মাথা ঝাঁকালো।রূপকথা এবার ছবি দুটোর পানে এগিয়ে ভালো করে দেখলো।এরপর শুধালো
‘আপনি সারফরাজ কে চিনেন?
সারফরাজ দ্বিধান্বিত হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো।জবাব দিলো না।কথার প্রসঙ্গ পাল্টাতে রূপকথার ব্যাগ রূপকথার দিকে এগিয়ে বলে উঠলো
“তোমার ব্যাগ।
কম্পিত হাতে ব্যাগ খানা নিয়ে রূপকথা নিচু গলায় বলে উঠলো
“সারফরাজ যদি কখনো এখানে আসে বলবেন রূপকথা এসেছিলো তার খুঁজে।ও আমাকে কথা দিয়েছিলো ওর ঘুরে বেড়ানো শেষ হলে ফিরে আসবে।কিন্তু আসেনি।
কথা গুলো বলতে বলতে গলা ধরে এলো রূপকথার।সামনে দাঁড়ানো মানুষটার কাছে ভেতরে জমানো সকল দুঃখ উগলে দিতে ইচ্ছে করলো।তাই নিজেকে আটকে না রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো রূপকথা।এরপর ব্যাগ খানা বুকে চেপে ধরে সিক্ত গলায় রূপকথা বলে উঠলো
“আমি কিছুতেই ওকে ভুলতে পারি না।ও আমার রক্তের কেউ নয়।আমি আমার বাবা মা কে ভুলতে বসেছি প্রায়।কিন্তু সারফরাজ কে কোনো ভাবেই ভুলতে পারছি না।বুকে প্রচুর যন্ত্রণা হয়।কাউকে বোঝাতে পারি না সেই কষ্ট।একটা মানুষের পুরো পৃথিবী ঘুরতে ঠিক কতগুলো বছর সময় লাগে আপনি জানেন?
রূপকথার বাধন হারা কান্না শেল হয়ে বিধলো সারফরাজ এর বুকে।তীব্র অপরাধ বোধ আর রূপকথার অশ্রু জল সব কেমন সারফরাজ এর দিকে আঙ্গুল তুললো।নিজেকে নিষ্ঠুর থেকেও নিষ্ঠুরতম মনে হলো।ভেতরের পশু সত্ত্বা পর্যন্ত আঙ্গুল তুলে ধমকে বলে উঠলো
চেকমেট পর্ব ২১ (২)
“নির্দয় মমতাহীন পশু কোথাকার।
রূপকথার অবিরত অশ্রু ধারা সহ্য হলো না সারফরাজ এর।সদ্য ব্যান্ডেজ করা হতে চোখের রোদ চশমা খুলে বুকের নীচে পরে থাকা ছোট রূপকথাকে ছোট বাচ্চার ন্যয় দুই হাতের বাহুতে ধরে উঁচু করে নিজের চোখের সামনে তোলে ভাঙা অস্ফুট গলায় বলে উঠলো সারফরাজ
“আমার পৃথিবীর শেষ সীমা তোমাতে এসে সমাপ্তি টেনেছে রূপকথা।আমি বেড়াতে বেড়াতে ক্লান্ত।