আযদাহা সিজন ২ পর্ব ১৮

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ১৮
সাবিলা সাবি

সকাল হয়ে গেছে। অরুণমণি প্রাসাদটা গভীর সমুদ্রের ঠিক কিনারায়,পানির ওপরে ভাসছে এক রহস্যময় স্বর্গের মতো। জানালা দিয়ে প্রবল সমুদ্রের গর্জন ভেসে আসছে,শো শো বাতাসে নরম পর্দাগুলো আকাশে ওড়ে,সূর্যের আলো ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে কক্ষে।
সেই আলো এসে পড়লো জ্যাসপারের মুখের ওপর। অস্বস্তিতে কপাল কুঁচকে রাখলো সে,আলো তাকে বিরক্ত করছে।কিছুক্ষণ বাদেই ঘুম ভেঙে গেলো,পাশে হাত বাড়িয়ে দিলো সে,কিন্তু বিছানা খালি।
তৎক্ষণাৎ চোখ খুলে তাকালো—ফিওনা নেই।অথচ কাল রাতের তার পড়া পোশাক এখনো মাটিতে পড়ে আছে।
জ্যাসপার ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো।বিস্ময় আর কিছুটা বিরক্তি মিশে আছে চোখে।তবে যখনই নিজেকে একটু নড়ানোর চেষ্টা করলো,বুঝতে পারলো তার গায়ে এক টুকরো সুতোও নেই!

তড়িঘড়ি করে উঠে পাশের চেয়ারে রাখা টাওয়ালটা টেনে নিলো,দ্রুত জড়িয়ে নিলো শরীরে।তারপর দেরি না করে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লো ফিওনাকে খুঁজতে।
কোথায় গেলো সে? রাতের পর এত সকালে কোথায় যেতে পারে?
জ্যাসপারের চোখে ধীরে ধীরে অস্থিরতা জমতে শুরু করলো।
ফিওনার ঘুম ভেঙেছে আজ জ্যাসপারের আগেই।
সকালে চোখ খুলতেই রাতের স্মৃতি ঝাপসা হয়ে এসে তার হৃদয়টাকে এলোমেলো করে দিলো।ঘুমের ঘোর কাটতে না কাটতেই কাল রাতের প্রতিটা মুহূর্ত স্পষ্ট হতে লাগলো। কীভাবে এটা হলো?কীভাবে সে নিজেকে জ্যাসপারের কাছে বিলিয়ে দিলো?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সেই ভাবনা মাথায় আসতেই ফিওনার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো।শরীরটা অবশ লাগছে,মনে হলো একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো এতক্ষণ।নিজের ওপরই রাগ হলো তার—কেনো সে নিজেকে সামলাতে পারলো না?
সে ধীরে পাশে তাকালো—জ্যাসপার তখনো ঘুমিয়ে আছে।
শান্ত,স্থির,গভীর ঘুমে ডুবে আছে সে।
ফিওনা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তার দিকে।
অদ্ভুত এক মায়ায় জড়িয়ে গেলো সে।
জ্যাসপারের ঘন, লম্বা পাপড়ির ছায়া চোখের নিচে পড়েছে, নিঃশ্বাসটা গভীর আর স্বাভাবিক। তার ঠোঁটজোড়া, সেই পরিচিত রক্তিম-বেগুনি আভায়,যা এক নিখুঁত শিল্পীর তুলি দিয়ে আঁকা। বরফের মতো ধবধবে ফর্সা ত্বকের ওপর সেই ঠোঁটজোড়া আরও বেশি রহস্যময় লাগে—একেবারে স্বতন্ত্র, একেবারে অদ্বিতীয়।
ফিওনা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকলো।

রূপকথার রাজপুত্ররাও কি এতটা সুদর্শন হতে পারে?
তার বুকের ভেতর ধুকপুক করতে লাগলো।
স্মৃতিগুলো এলোমেলো হয়ে ফিরে এলো—জ্যাসপারের সেই গভীর দৃষ্টি, তার স্পর্শ, তার অধিকার…
ফিওনা দ্রুত মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
ফিওনা তখন নিজেকে ধমক দিলো, মনে মনে তিরস্কার করলো নিজের এই মুহূর্তের দুর্বলতার জন্য।
“ফিওনা! তুই কী করছিস? তুই কীভাবে এই লোকটার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে পারিস? ভুলে যা সব!”
সে দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো জ্যাসপারের মুখ থেকে, বুকের ভেতর একটা তীব্র অস্বস্তি বাজতে লাগলো।
“এ লোকটা কে? তোর কি মনে নেই?”
এই লোকটাই তো তার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে।
এই লোকটাই তার গ্র্যান্ডপাকে মারার হুমকি দিয়ে জোর করে বিয়ে করেছে।
এই লোকটাই লিউ ঝানকে শেষ করে দিতে চেয়েছে।
আর সবচেয়ে বড় সত্য…
সে তো পুনর্জন্মের থেরন—এক ভয়ংকর বাস্তবতা, এক অন্ধকার নিয়তি।
ফিওনার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলো।
তার মন বলছিল পালাতে হবে, যত দ্রুত সম্ভব।
কিন্তু পা দুটো একদম জমে গেছে।

সেই গভীর সবুজ চোখের মায়া যেন তাকে অদৃশ্য শেকলে বেঁধে ফেলেছে…
ফিওনা দ্রুত নিজের গায়ে চাদর জড়িয়ে নিলো, নিজেকে লুকাতে চাইলো রাতের স্মৃতি থেকে।আলমারির দিকে এগিয়ে গিয়ে তাড়াহুড়ো করে একটা ড্রেস গায়ে চড়াল।শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল,মনে হচ্ছিলো—এই ঘর,এই পরিবেশ সবকিছু তাকে গিলে ফেলবে।
কিন্তু তার মন একটা অদৃশ্য টানে টেনে নিয়ে চললো সেই কক্ষের দিকে,যেখানে কাল রাতে জ্যাসপার তাকে নিয়ে গিয়েছিল।
যেখানে দেয়ালজুড়ে সাজানো তার নিজস্ব ছবি।
ফিওনা কক্ষে ঢুকেই ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো সেই দেয়ালের দিকে।প্রতিটা ফ্রেমে হাত বোলাতে লাগলো।
কাল রাতে রাগ আর ধাক্কাধাক্কির মধ্যে সে ভালোভাবে এগুলো পর্যবেক্ষণ করেনি।তবে আজ করছে।
একটা একটা করে ছবি দেখে যাচ্ছে,মনে হলো প্রতিটা ছবির মধ্যে লুকিয়ে থাকা অতীতের কোনো রহস্য বের করে আনতে চাচ্ছে।
জ্যাসপার বলেছিল—আগের জন্মে সে ফিওনার ছবি আঁকতো,দেয়ালে টাঙিয়ে রাখতো।
কিন্তু…

এই ছবিগুলো কেন যেন তার কাছে অচেনা মনে হচ্ছে না।
কোথাও যেনো দেখেছে আগে।
মনে করতে চাইলেই মাথার ভেতর শূন্যতা বাজে।
সে আরও ভালো করে দেখতে গিয়ে হঠাৎ যেনো একটা ঝাপটা লাগলো মনে—এক অচেনা স্মৃতি,যা ঠিক স্পষ্ট নয়, কিন্তু প্রচণ্ড বাস্তব।
এক মুহূর্তের জন্য সবকিছু দুলে উঠলো।
ফিওনার মাথার ভেতর অসম্ভব ব্যথা শুরু হলো।
সে কপালে হাত রেখে দেয়ালের পাশে গিয়ে বসল,মাথা চেপে ধরলো।
শ্বাস দ্রুত হয়ে এলো,চোখের সামনে যেন ঝাপসা অন্ধকার নেমে এলো।
এ কী হচ্ছে?
এই ব্যথা… এই অনুভূতি…
কেন মনে হচ্ছে, এই ছবিগুলোর পেছনে লুকিয়ে আছে এমন কিছু, যা সে জানে, কিন্তু মনে করতে পারছে না?
ফিওনার মাথার ব্যথা তখনো কমেনি। চোখের সামনে সবকিছু আবছা লাগছিল। দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে থাকার মধ্যেই হঠাৎ একটা তীব্র উষ্ণতা অনুভব করলো—জ্যাসপারের হাত তার কাঁধে।
“হামিংবার্ড, কী হয়েছে তোমার?”
জ্যাসপার উৎকণ্ঠিত স্বরে বললো, ফিওনার কপালে হাত রাখলো,তার শরীরের তাপমাত্রা বুঝতে চাইলো।
ফিওনা ধীরে ধীরে তাকালো তার দিকে।চোখেমুখে ক্লান্তি, কিন্তু কোনো উত্তর দিলো না।শুধু সামান্য হাত তুলে ইশারায় দেখালো যে সে ঠিক আছে,তারপর অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলো।
জ্যাসপার এবার তার মুখটা দুই হাতের মাঝে নিয়ে বললো, “তুমি ঠিক নেই। চলো,শাওয়ার নিবে।তোমার শরীরটা একটু ফ্রেশ হবে।”

ফিওনা বুঝতে পারছিল জ্যাসপার সহজে তাকে ছাড়বে না। সে হাত সরিয়ে নিতে চাইল,কিন্তু জ্যাসপার আরও দৃঢ়ভাবে ধরে ফেললো।
“ছাড়ুন! আমি নিজে যেতে পারবো!”
ফিওনার প্রতিবাদ শেষ হওয়ার আগেই জ্যাসপার হঠাৎ তাকে কোলে তুলে নিলো,মনে হলো ওজনহীন একটা পাখির পালক ধরে রেখেছে।
“প্রিন্স! কী করছেন! আমাকে নামান!”
ফিওনা পা ছোড়াছুড়ি করতে লাগলো, হাত দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করলো, কিন্তু জ্যাসপার নির্বিকার। তার চোখে একধরনের কঠোর, তবু গভীর শাসনের ছায়া।
“শান্ত হও, হামিংবার্ড। আমি ঠিক যা দরকার,তাই করছি।”
তার কণ্ঠস্বরে ছিল এক ধরনের দৃঢ়তা,এই মুহূর্তে ফিওনার ইচ্ছার কোনো মূল্য দিলো না।
ফিওনা বুঝতে পারছিল,জ্যাসপারের বাহুডোর থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব।

ফিওনা এখনও ঠিক বুঝতে পারছিল না সে কোথায় এসেছে। বিশাল কক্ষটি যেন এক ধরনের হলরুমের মতো,কিন্তু পরিবেশটা একেবারেই আলাদা।চারদিকে মার্বেলের দেয়াল, তবে একটি সম্পূর্ণ কাঁচের,যা গভীর সমুদ্রের দিকে খোলা। সেই কাঁচের দেয়ালের মাঝখানে একটি স্লাইডিং দরজা,যা খুলে দিলে মনে হয় বিশাল সমুদ্রের ঢেউ এক ঝলকেই কক্ষে ঢুকে পড়বে।
কক্ষের একদম কেন্দ্রে,উঁচুতে এক বিশাল বাথটাব ভাসমান অবস্থায় রয়েছে,যা দেখলে মনে হবে আকাশে ঝুলে থাকা এক অলৌকিক জলাশয়।একপাশে রয়েছে মার্বেল পাথরের তৈরি কয়েক ধাপ সিঁড়ি,যা বাথটাবে ওঠার জন্য বানানো।
ফিওনা বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো।এটা বাস্তব,নাকি কোনো রাজকীয় কল্পনার অংশ?
জ্যাসপার যখন তাকে আস্তে করে নিচে নামাতে গেলো, ফিওনা ধীরে ধীরে বললো, “এটা… এটা কী?”
তার কণ্ঠে বিস্ময় মেশানো সন্দেহ। এই কক্ষ,এই ভাসমান বাথটাব—এসবের উদ্দেশ্য কী?
জ্যাসপার তার চোখের গভীরে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিলো, “এটা আমাদের জন্য, হামিংবার্ড। তুমি কি সাগরের স্পর্শ অনুভব করতে চাও না?”

তার কথার মধ্যে একধরনের গোপন অর্থ ছিল, যা ফিওনাকে আরও অস্বস্তিতে ফেলে দিলো।
সমুদ্রের বুকে ভাসমান নীল জলাধার
জ্যাসপার ফিওনার হাতটি আলতো করে ধরল, যেন সে ভয়ে কেঁপে না যায়। ধীরে ধীরে তাকে নিয়ে স্ফটিকস্বচ্ছ কাঁচের দেয়ালের পাশ দিয়ে সিঁড়ির দিকে এগোল। বিশাল হলঘরের মাঝে ঝুলন্ত এক নীলাভ জলাধার, যেন আকাশের এক টুকরো সমুদ্র এখানে এসে আটকে গেছে। নিচে তাকালে যেন শূন্যে ভাসার অনুভূতি হয়, অথচ সেই গভীরতার মোহও আছে। ফিওনার মনে হলো, এক পা ফেললেই হয়তো সে অন্তহীন নীলিমায় হারিয়ে যাবে।
“এটা কী?” ফিওনার কণ্ঠে বিস্ময়।

“তোমার জন্য তৈরি করা হয়েছে,” জ্যাসপারের কণ্ঠ গম্ভীর, তবে তাতে একধরনের নরম কোমলতা লুকিয়ে আছে।
সে ফিওনার কোমর স্পর্শ করল, ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে তুলল। নীলচে স্বচ্ছ জলে প্রথম পা রাখতেই ফিওনা শিহরিত হলো। জল যেন জীবন্ত, ঠান্ডা অথচ আরামদায়ক। জ্যাসপার তাকে বসিয়ে দিলো বিশাল বৃত্তাকার বাথটাবের মাঝখানে, জল ঘিরে নরম কুয়াশার মতো বাষ্প উঠছিল, যেন সমুদ্রের কুয়াশা এখানে এসে মিশেছে।
ঠিক পেছন থেকে জ্যাসপারও নামল জলে, তার উপস্থিতি এতটাই দৃঢ় যে ফিওনার মনে হলো, পুরো জলাধারটাই যেন তার অস্তিত্বের অংশ। জ্যাসপার ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এল, ফিওনার শরীরের এতটা কাছে যে তার উষ্ণ শ্বাস পর্যন্ত স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
ফিওনার দৃষ্টি ঘরের কাঁচের দেয়ালের ওপারে অসীম সমুদ্রের দিকে, ঢেউয়ের গর্জন যেন মৃদু সংগীতের মতো কানে বাজছে। মুহূর্তটা যেন এক স্বপ্নের মতো—যেখানে বাস্তবতা আর কল্পনার সীমানা মিলেমিশে গেছে।
ফিওনা একটু নড়ে বসতেই জ্যাসপারের শরীরের উষ্ণতা যেন আরও স্পষ্ট হয়ে ধরা দিলো।তার নিঃশ্বাস ফিওনার ঘাড়ের কাছে লাগছে,আর বাষ্পাচ্ছন্ন জল ধীরে ধীরে তাদের দুজনকে ঘিরে ফেলেছে।
“আগে আমি শাওয়ার নেই,তারপর আপনি আসুন না?” ফিওনা হালকা কাঁপা কণ্ঠে বলল, আশপাশের পরিবেশ তার হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিচ্ছে।

জ্যাসপার নিঃশব্দে হাসল, সেই গভীর, রহস্যময় হাসি,মনে হলো সে ফিওনার অস্থিরতা উপভোগ করছে।
“হুঁ, একসাথেই শাওয়ার নেবো,” তার কণ্ঠে এমন দৃঢ়তা,এটাই যেনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।
ফিওনা কিছু বলতে যাবে, কিন্তু তখনই জ্যাসপার আরও কাছে সরে এসে ফিসফিস করল, “চুপ, একদম! কোনো কথা বললে এই জলে চুবিয়ে মারবো!”
তার কণ্ঠে মিশে থাকা রহস্যময় দৃঢ়তায় ফিওনার নিঃশ্বাস আটকে এল। গভীর নীল জলে চারপাশের প্রতিচ্ছবি অস্পষ্ট হয়ে গেছে, শুধু স্পষ্টভাবে টের পাচ্ছে তার পেছনে বসে থাকা জ্যাসপারকে, যার উপস্থিতি আশ্রয় আর আতঙ্কের এক অদ্ভুত মিশ্রণ তৈরি করছে।

ফিওনা স্থির হয়ে বসে রইল,শীতল নীল পানির মাঝে ডুবে থাকা তার শরীরটা যেন অতীতের ক্লান্তি আর বেদনাকে এক ফোঁটা এক ফোঁটা করে ধুয়ে নিচ্ছে।কিন্তু তার মনে এখনো এক অদ্ভুত অস্থিরতা।কাল রাতের ঘটনা তাকে এক অন্যরকম আবেশে জড়িয়ে রেখেছে, আর জ্যাসপারের স্পর্শ যেন সেই অস্থিরতাকে আরও জাগিয়ে তুলছে।
জ্যাসপার ধীর গতিতে হাত বাড়িয়ে পাশ থেকে শ্যাম্পুর বোতলটা নিলো, তারপর ফিওনার চুলের ভেজা গোছায় আঙুল চালিয়ে দিলো। নরম, মসৃণ চুলের মধ্যে সাবধানীভাবে শ্যাম্পু মাখিয়ে দিলো, তার আঙুলের প্রত্যেকটা ছোঁয়া এত যত্নশীল,এত ধৈর্যশীল যে ফিওনা অবাক হয়ে গেলো।
সে কি সত্যিই সেই জ্যাসপার,যে তার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে? যে এত গম্ভীর আর রহস্যময়? আজকের এই মুহূর্তে সে তো একদম অন্যরকম!

শ্যাম্পুর মৃদু সুগন্ধ ধীরে ধীরে পুরো কক্ষটা ভরে দিলো। বাতাসে মিলিয়ে গেলো এক অদ্ভুত প্রশান্তি,মনে হলো সমুদ্রের ঢেউগুলোও এই দৃশ্য দেখার জন্য থমকে গেছে। ফিওনা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো, হঠাৎ করেই আজ তার কোনো তর্ক করতে ইচ্ছা করলো না।
সে চোখ বন্ধ করলো। চারপাশের সবকিছু মিলিয়ে গেলো শুধু অনুভবের এক জগতে—যেখানে ছিল জ্যাসপারের আলতো হাত, সমুদ্রের বয়ে যাওয়া বাতাস, আর এক অজানা, অপ্রকাশিত টান, যা ক্রমশ তাদের দুজনকে আরও কাছে নিয়ে আসছিল।

জ্যাসপার ধীরে ধীরে ফিওনার চুলের ভেজা গন্ধে ডুবে গেলো,কোনো নেশা তাকে টেনে নিলো গভীরে। হ্যান্ড শাওয়ারের শীতল ধারায় চুল ধুয়ে দেওয়ার পর সে হঠাৎই ফিওনার গলায় মুখ গুঁজে দিলো। উষ্ণ নিঃশ্বাস ছুঁয়ে গেলো ফিওনার ত্বক, তার শরীর মুহূর্তেই শিউরে উঠলো।
ফিওনা থরথর করে কেঁপে উঠলো, মনে হলো যেন হারিয়ে যাচ্ছে এই অচেনা অনুভূতির মাঝে। সে নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইল, কিন্তু জ্যাসপার তার নরম ঘাড় থেকে ধীরে ধীরে ঠোঁট সরিয়ে কানের পাশে এসে থামলো। নিঃশ্বাস ফেললো খুব ধীর গতিতে,শব্দের বদলে অনুভূতিই যেনো তার ভাষা।
ফিওনা আবারও সরতে চাইলে, জ্যাসপার শক্ত হাতে তার কবজি দুটো ধরে বাথটাবের দুই পাশে ঠেসে ধরলো। ফিওনার হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে উঠলো, সে বুঝতে পারলো পালানোর উপায় নেই।
জ্যাসপার তার লম্বা, স্নিগ্ধ চুলের ঘ্রাণ নিলো গভীরভাবে, যেন সেই ঘ্রাণে কোনো পুরোনো স্মৃতি খুঁজে ফিরছে। তার শ্বাস যেন গরম হয়ে উঠছে, ফিওনার কোমল ত্বকে এক অদ্ভুত শিহরণ ছড়িয়ে দিচ্ছে।
এই মুহূর্তে চারপাশের সবকিছু স্তব্ধ। শুধু নীলচে আলো, বাতাসের দোলা, আর দুজনের মধ্যকার অলিখিত ভাষায় লেখা এক অভিব্যক্তি—যা হয়তো সময়ের চেয়েও প্রাচীন, যা হয়তো আগের জন্মের কোনো অমীমাংসিত অধ্যায়।
জ্যাসপার ফিওনার কানের ঠিক পাশে মুখ নিয়ে এল, তার নিঃশ্বাসের উষ্ণতা ফিওনার গালে ছুঁয়ে গেলো। ফিওনার শরীর থরথর করে উঠলো, কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে সে বলল,

“কি করছেন আপনি?”
জ্যাসপার হাসলো, সেই রহস্যময় হাসি, যা সবসময় ফিওনাকে বিভ্রান্ত করে। গভীর স্বরে,ফিসফিস করে বলল,
“আমি তো ভেবেছিলাম আজকেও তোমাকে অ*জ্ঞান অবস্থায় পাবো। যতই হোক, তুমি এখনও অর্ধেক মানবী।”
ফিওনা বিস্মিত হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো, চোখে প্রশ্ন,ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কেন? আমি অজ্ঞান অবস্থায় থাকবো কেন? আর ‘আবারও’ বলতে… তার মানে কি আমি এর আগেও কখনো অজ্ঞান হয়েছিলাম?”
তার গলায় ছিল অবিশ্বাস, একধরনের অস্থিরতা। মনে হচ্ছিল, জ্যাসপার এমন কিছু জানে যা সে নিজেই জানে না।
জ্যাসপার চুপচাপ তাকিয়ে রইল, চোখের গাঢ় সবুজ আভায় যেন আমাজনের অতল রহস্য লুকিয়ে আছে। তার ঠোঁটের কোণে একচিলতে বিদ্রুপের হাসি, যেন ফিওনাকে সে ইচ্ছা করেই ধাঁধায় ফেলছে।
জ্যাসপার গম্ভীর মুখে মাথা নাড়ল। “হ্যাঁ, আমার সামনে তুমি চারবার জ্ঞান হারিয়েছো।”
ফিওনা বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল, চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
“চারবার?” তার কণ্ঠে ছিল স্পষ্ট অবিশ্বাস।
ফিওনার কপালে ভাঁজ পড়ল। “কিন্তু কেন?”

জ্যাসপার শান্ত গলায় উত্তর দিল,একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপারের মতোই, “প্রথমবার তোমার গ্র্যান্ডপা’র ল্যাবে,যখন আমকে প্রথম ড্রাগন রুপে দেখেছিলে।”
ফিওনা ধীরে ধীরে শ্বাস ফেলল। “তারপর?”
জ্যাসপার এক মুহূর্ত ফিওনার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকল, তারপর বলল, “মাউন্টেন গ্লাস হাউজে, যখন আমাদের প্রথম ইন্টিমেট মুহূর্তটা হয়েছিল… তখন তুমি দুদিন অজ্ঞান ছিলে।”
ফিওনার শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত নেমে গেল। তার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল।
“দু-দিন?” ফিসফিস করে বলল সে।
জ্যাসপার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি নিয়ে বলল, “হ্যাঁ, তোমার মানব শরীর তখনো অভ্যস্ত ছিল না, তোমার ভেতরের কিছু জিন জাগতে শুরু করেছিল, আর সেটা সামলাতে না পেরে তুমি অজ্ঞান হয়ে গেলে।”
ফিওনার বুক ধড়ফড় করে উঠল। তার দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে গেল। সে কি সত্যিই এত দুর্বল মানবী ছিলো?
“আর বাকি দু’বার?” ফিওনা ফিসফিস করে বলল।
জ্যাসপার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, “তৃতীয়বার, যখন আমি ভেনাসে ফিরে গিয়েছিলাম। তুমি অনেক মাস অপেক্ষা করেও যখন আমার কোনো খোঁজ পাচ্ছিলে না, তখন তুমি স্পেসশিপে করে ভেনাসে চলে এসেছিলে। কিন্তু আমি তখন তোমাকে কষ্ট দিয়েছিলাম,আমি তোমাকে অস্বীকার রেখেছিলাম,বলেছিলাম যে আমি তোমাকে ভালোবাসি না। আর সেটা সহ্য করতে না পেরে তুমি জ্ঞান হারিয়েছিলে।”

ফিওনার বুকের মাঝে কেমন জানি অস্বস্তি লাগলো।
সে রাগ দেখিয়ে বললো, “ওহ! এতো কষ্ট করার পরেও আপনি আমার সাথে এমনটা করেছিলেন?তাহলে আমি যা করছি,এখন তো ভালোই হচ্ছে!প্রতিশোধ নেওয়া হচ্ছে!”
জ্যাসপার চোখের পলক না ফেলে ফিওনার দিকে তাকিয়ে রইল, তার চোখের গভীরে যেন এক রহস্য লুকিয়ে আছে।
“হ্যাঁ,” সে ধীরে ধীরে বলল, “আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, আমি তোমাকে ভালোবাসি না। কিন্তু সেটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় মিথ্যা।”
ফিওনার বুকের ভেতর কিছু একটার তীব্র ধাক্কা লাগল।
তার চোখে রাগ,অভিমান আর এক অজানা কষ্টের ছাপ।
জ্যাসপার তখন ফিওনার গাল শক্ত করে চেপে ধরে নিজের দিকে ফেরালো। তার চোখদুটো গভীর, শীতল অথচ কোথাও যেন একটা চাপা কষ্ট লুকিয়ে আছে।
“আমি যা করছিলাম, তা তোমাকে বাঁচানোর জন্য,” জ্যাসপার ধীর কণ্ঠে বললো। “দেবতা আভ্রাহার বলেছিলো, যদি আমরা একসাথে থাকি,তোমার মৃ*ত্যু অনিবার্য। তাই আমি বাধ্য হয়েছিলাম তোমাকে দূরে সরিয়ে দিতে,যাতে তুমি আমাকে ঘৃণা করো।”

তার চোখে দুঃখের ছায়া খেলে গেলো, কিন্তু মুখের রেখাগুলো কঠোর।
“অথচ তুমি তখনও আমাকে ঘৃণা করোনি, ফিওনা,” জ্যাসপার চাপা কণ্ঠে বললো। “তুমি এতোটাই ভালোবাসতে যে আমার আ*ঘাত নিতে না পেরে উল্টোপাল্টা করতে শুরু করেছিলে।আর তার ফলেই স্পেসশিপ বি*স্ফোরিত হয়েছিল। তুমি… ঝাঁপ দিয়েছিলে প্রশান্ত মহাসাগরে!”
ফিওনার শ্বাস যেন আটকে এলো। তার হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে গেলো।
সে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো জ্যাসপারের চোখের গভীরে—সেখানে কেবল একটিই সত্য স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠলো।
ফিওনা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। তার ঠোঁট কাঁপছিল, কিন্তু শব্দ বের হলো না। এক মুহূর্তের জন্য সে ভুলে গেলো শ্বাস নিতে।
“তাহলে… আমাকে কে বাঁচালো?” ফিওনা অবশেষে ফিসফিস করে প্রশ্ন করলো।
জ্যাসপার গভীর চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলো, যেন অনেক কিছু মনে পড়ছে একসঙ্গে। তারপর নিঃশ্বাস ফেলে শান্ত কণ্ঠে বললো, “আমি।”
ফিওনার হৃদয় ধাক্কা খেলো।

“তুমি ভেনাস থেকে ফিরে যাওয়ার পর,” জ্যাসপার বলে চললো, “আমি চব্বিশ ঘণ্টা ল্যাবে বসে ছিলাম, এক মুহূর্তের জন্যও চোখ সরাইনি তোমার ওপর থেকে। আমি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম, তুমি নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরতে পারবে।”
তার কণ্ঠে কঠিন দৃঢ়তা ছিল, কিন্তু কোথাও যেন একরাশ ক্লান্তিও লুকিয়ে ছিলো।
“কিন্তু যখন দেখলাম, তোমার স্পেসশিপ ব্লাস্ট হয়েছে,আমি আর অপেক্ষা করতে পারিনি।আমি আমার সবচেয়ে শক্তিশালী ক্ষমতা ব্যবহার করে তোমাকে রক্ষা করেছি।তুমি ছিলে আমার বাহুতে,এক মুহূর্তের জন্যও তোমাকে তলিয়ে যেতে দেইনি।”
জ্যাসপার একটু থামলো,মনছ হলো কোনো দুঃসহ স্মৃতি মনে পড়ছে। তারপর ধীরে বললো, “আমি তোমাকে নিয়ে পাশের একটা লুনার দ্বীপে গিয়েছিলাম, যেখানে আমরা আশ্রয় নিয়েছিলাম।”
ফিওনা নিশব্দে তাকিয়ে থাকলো তার দিকে। জ্যাসপার কি সত্যিই এতটা করেছে তার জন্য?
তার বুকের ভেতর এক অজানা অনুভূতি ঝড় তুললো।
জ্যাসপার তখন হঠাৎ করে বললো ” লুনার দ্বীপে যাওয়ার পর তুমি নিজেই আমাকে সেদিন সিডিউস করেছিলে।
ফিওনার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেলো। তার শ্বাস আটকে আসছিল, সে যেন ঠিকভাবে বোঝার চেষ্টা করছিল জ্যাসপারের বলা প্রতিটি শব্দ।

“আমি… আমি নিজেই?” ফিওনা ফিসফিস করে বললো, যেন নিজের কথা বিশ্বাস করতে পারছে না।
জ্যাসপার ফিওনার মুখটা এক হাতে ধরে তার গভীর চোখের দিকে তাকালো। “হ্যাঁ, হামিংবার্ড, তুমি নিজেই।”
তার কণ্ঠে কোনো বিদ্রুপ ছিল না, ছিল শুধু এক ধরনের স্মৃতিময়তা, যেন সে সেই মুহূর্তগুলো স্পষ্টভাবে মনে করতে পারছে।
“ওই রাতে, তুমি নিজেই আমাকে ছাড়তে চাওনি। তুমি শুধু অনুভব করতে চেয়েছিলে… তোমার শরীর, তোমার মন, সবকিছু আমাকে চাইছিলো।আমি তো স্রেফ…”
জ্যাসপার একটু থামলো, তারপর ফিওনার চোখের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললো, “ঠিক আছে, সে গল্প বাদ দিই। কিন্তু তুমি জানো, হামিংবার্ড? তখন তুমি আবার জ্ঞান হারিয়েছিলে।আর এবার,তোমাকে বাঁচাতে আমাকে হিমশিম খেতে হয়েছিল।”
ফিওনা হতভম্ব হয়ে বললো, “কিন্তু… দ্বীপে তো কিছুই ছিল না,তাই না?”
জ্যাসপার হালকা হাসলো। “ঠিক ধরেছো। দ্বীপে শুধু একটা তাঁবু ছিল,আর কিছু ছিল না। আর তোমার শরীর এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে,তোমাকে বাঁচাতে আমার সবকিছু দিতে হতো।”
সে গভীর শ্বাস নিলো, তারপর বললো, “আমার এক বন্ধু ছিল,এক পরি। সে আমাকে সাহায্য করেছিল।”
ফিওনার চোখ কুঁচকে উঠলো। “পরি?”
জ্যাসপার মাথা নাড়লো। “হ্যাঁ,সিলভেরা। সে আমাকে ঝরনার পানির সন্ধান দিয়েছিল,যেটাতে তোমার জীবন বাঁচবে।কিন্তু জানো,সেই পানি আনতে আমাকে কী কী করতে হয়েছে?”
তার কণ্ঠে এক ধরনের গোপন রহস্যের আভাস ছিল। ফিওনা বোঝার চেষ্টা করছিল, কিন্তু তার মস্তিষ্ক তখনো আগের কথাগুলোর ধাক্কা সামলাতে ব্যস্ত।

“কী করতে হয়েছে?” ফিওনা অবশেষে ধীরে ধীরে বললো।
জ্যাসপার চোখ সরু করলো, তার ঠোঁটে এক রহস্যময় হাসি ফুটে উঠলো। “তুমি শুনলে হয়তো বিশ্বাস করবে না, হামিংবার্ড। কিন্তু আমি যা করেছিলাম,সেটা ছিল শুধু তোমার জন্য।”
জ্যাসপার পুনরায় বললো ” তারপর তোমার গ্ৰান্ডপা তোমাকে নিতে এসেছিলো হেলিকপ্টার করে”।
ফিওনার হৃদয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগল। জ্যাসপারের কথাগুলো যেন তার মনে এক একটি ছবির মতো উঁকি দিচ্ছিল,কিন্তু সে পুরোপুরি বুঝতে পারছিল না।
“হেলিকপ্টার?” ফিওনা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
জ্যাসপার মাথা নাড়লো। “হ্যাঁ। তোমার গ্ৰান্ডপা তখন হেলিকপ্টার নিয়ে এসেছিল কারন আমি নিজেই সিগন্যাল দিয়েছিলাম।তবে তখন একদল বিতাড়িত ড্রাগন আমার ওপর হামলা করে।কিন্তু তুমি জানো,যখন আমি ওই ড্রাগনদের সাথে লড়াই করছিলাম,তখন তুমি আমাকে শক্ত করে আকড়ে ধরে ছিলে।বারবার তোমাকে ছাড়াতে চেষ্টা করেও পারিনি।কিন্তু আমি তোমার নিরাপত্তার কথা ভেবে বারবার তোমাকে চলে যেতে বলেছিলাম।”
“আপনি লড়াই করছিলেন,আর আমি…” ফিওনা কষ্টে কথাটা শেষ করলো, “আমি আপনাকে ছাড়তে চাইছিলাম না।”
জ্যাসপার গভীর শ্বাস নিলো। “ঠিক, কিন্তু আমার শক্তি যখন কমে আসছিল,তখন তুমি আমার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত ছিলে।তুমি হেলিকপ্টারে বসে আমার জন্য লড়াই করেছিলে।”

ফিওনা অবাক হয়ে তাকালো। “আমি কি সত্যিই তা করেছিলাম?”
“হ্যাঁ,” জ্যাসপার বললো, তার চোখে এক ধরনের প্রশংসা ছিল। “তুমি তখনকার পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে। তুমি সাহসী ছিলে,হামিংবার্ড।”
জ্যাসপার সামান্য হাসলো তারপর বললো ” তারপর আমি নিজে তোমাকে অজ্ঞান করে হেলিকপ্টারে তুলে দিয়েছিলাম আর বিদায়ের আগে তোমার গলা থেকে সেই লকেট খুলে রেখেছিলাম যেটাতে তোমার মস্তিষ্কে আমার সব স্মৃতি ক্যাপচার করে রেখেছিলাম”।
ফিওনার মনে যেনো প্রবল এক ঝড় বইতে লাগলো। তার বুক ধকধক করতে লাগলো।
“তাহলে… তাহলে আপনি ইচ্ছা করেই আমার সব স্মৃতি মুছে দিয়েছিলেন?” ফিওনার কণ্ঠ কেঁপে উঠলো,তার চোখ জলে ভরে গেলো।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে মাথা নাড়লো। “হ্যাঁ, হামিংবার্ড। আমি তোমাকে ভুলে যেতে বাধ্য করেছিলাম,কারণ আমি জানতাম, আমাদের একসঙ্গে থাকা মানে তোমার ধ্বং*স ডেকে আনা। আমি চেয়েছিলাম,তুমি নিরাপদে থাকো,স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাও।”

ফিওনার শ্বাস ভারী হয়ে উঠলো। “তাহলে এখন কেন আমার স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে চাইছেন?”
জ্যাসপার গভীর চোখে তার দিকে তাকালো, তারপর ধীরে ধীরে ফিসফিস করে বললো, “কারণ আমি ভুল করেছি। আমি ভেবেছিলাম তোমার জন্য এটাই ভালো,কিন্তু এখন বুঝতে পারছি,তোমাকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া মানে নিজের অস্তিত্বকেই হারিয়ে ফেলা।”
ফিওনা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর তার দৃষ্টি কঠোর হলো। “আর সেই লকেট? ওটা দিয়ে আমার স্মৃতি ফেরানো সম্ভব ছিল, তাই না?”
জ্যাসপার দীর্ঘশ্বাস ফেললো, ফিওনার চুলের ভেজা গোছায় আলতো করে চুমু খেলো। “সম্ভব ছিল। কিন্তু আমি নিজেই সেটা প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলে দিয়েছি।”
ফিওনার চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেলো। “কী?!আপনি আমার স্মৃতি ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায় ধ্বং*স করে ফেলেছন?”

জ্যাসপার দৃষ্টি এড়িয়ে নিলো, যেনো নিজের অপরাধ স্বীকার করছে। “হ্যাঁ… আমি চেয়েছিলাম, তুমি সত্যিই আমাকে ভুলে যাও, যাতে নতুন জীবন শুরু করতে পারো। পরে যখন বুঝতে পারলাম, তোমাকে ভুলে যাওয়া মানে নিজেকেও হারিয়ে ফেলা, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমি বহুবার চেষ্টা করেছি ওটা ট্র্যাক করতে, কিন্তু…”
জ্যাসপার থেমে গেলো, যেনো এক কঠিন বাস্তবতা স্বীকার করতে গিয়ে তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসছে। “সম্ভবত কোনো মাছ সেটাকে গিলে ফেলেছে।”
ফিওনা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। তার ভেতর রাগ, কষ্ট, ভালোবাসা—সবকিছু মিলেমিশে এক অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি করলো।
“তাহলে আপনি যা করেছেন,তার ফলাফল তো আপনাকেই ভোগ করতে হবে, জ্যাসপার। আমি আর কিছুই মনে করতে পারছি না, আর আপনি ও সেটা ফিরিয়ে আনতে পারবেন না।”
ফিওনার কণ্ঠে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ফুটে উঠলো।
জ্যাসপার তার দিকে তাকিয়ে রইলো, চোখে গভীর যন্ত্রণা। “আমি জানি। কিন্তু আমি হার মানবো না, হামিংবার্ড। আমি আবার তোমার হৃদয়ে জায়গা করে নেবো, একদম প্রথমবারের মতো।”
ফিওনা চুপ করে তাকিয়ে থাকলো, তার হৃদয় তখনও দ্বিধায় দোল খাচ্ছে।

লিউ ঝান ইতিমধ্যেই পৃথিবীতে পৌঁছে গেছে। ঠান্ডা চোখে চারপাশ দেখছে। তার শরীর এখন মানুষের মতো, কিন্তু ভেতরে সে পুরোপুরি ড্রাগনে রূপান্তরিত হয়েছে। সে জানে, তার ভাগ্যে বড় কিছু লেখা আছে—এবং সেটা শুধু জ্যাসপার আর ফিওনার সম্পর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।
তার মুঠি শক্ত হয়ে উঠলো। “এই খেলা এখানেই শেষ হবে না, জ্যাসপার। তুমি আমাকে যেটুকু জানো, সেটাই শেষ সত্যি নয়। এবার পালা আমার!”

চাঁদের আলোয় তার চোখ দুটো যেন চকচক করে উঠলো—আগুনের মতো জ্বলছে, প্রতিশোধের আগুন।
লিউ ঝান সরাসরি মিস্টার চেন শিং এর বাড়িতে যায়।লিউ ঝানের কাছে থেকে সবটা শুনলেন মিস্টার চেন শিং।
মিস্টার চেন শিং গভীর এক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।তার কপালের শিরাগুলো টানটান হয়ে উঠেছে, যেন এক মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না—লিউ ঝান এখন ড্রাগনে পরিণত হয়েছে,আবার পুনর্জন্ম নিয়েছে,আর জ্যাসপার… সে তো ফিওনাকে বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে গেছে!
কক্ষের বাতাস থমথমে হয়ে আছে। কয়েকজন বিজ্ঞানী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, কেউ সাহস করে কথা বলছে না। মিস্টার চেন শিংয়ের চিন্তার ভার যেন পুরো কক্ষকে চেপে ধরেছে।

“এটা কীভাবে সম্ভব?” তিনি ধীরে ধীরে ফিসফিস করে বললেন। তার কণ্ঠে বিস্ময়, হতাশা, আর ক্ষোভের মিশ্রণ। “ড্রাগনের পুনর্জন্ম… আবার! আর জ্যাসপার? সে এতদূর চলে গেল?”
মিস্টার চেন শিং দ্রুত তার গবেষণাগারে ফিরে আসেন। ল্যাবের সব বিজ্ঞানীদের ডেকে জরুরি মিটিং ডাকেন। তার কণ্ঠ কঠিন ও দৃঢ়, চোখে এক ধরনের শীতল জেদ।
“আমাদের যেকোনো মূল্যে ফিওনার অবস্থান খুঁজে বের করতে হবে!”
একজন বিজ্ঞানী স্যাটেলাইট ডাটা বিশ্লেষণ করতে করতে বলল, “স্যার, আমরা সমুদ্রের ওপর কিছু অস্বাভাবিক শক্তির কম্পন পেয়েছি। সম্ভবত, ওরা কোনো পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে, কিন্তু পাহাড়টা ধরা পড়ছে না।”
মিস্টার চেন শিং ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। “পাহাড়টা কীভাবে লুকানো থাকতে পারে?”
লিউ ঝান পাশে দাঁড়িয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে সবকিছু শুনছে। তারপর হঠাৎ সে এগিয়ে এসে বলল, “জ্যাসপার সাধারণ কোনো প্রাণী নয়, ও একজন রাজপুত্র, একজন শক্তিশালী ড্রাগন।সে যদি তার শক্তি ব্যবহার করে পাহাড়টা লুকিয়ে রাখে,তাহলে সাধারণ প্রযুক্তি দিয়ে সেটা ধরা সম্ভব নয়।”

মিস্টার চেন শিং তার দিকে তাকালেন, “তাহলে উপায়?”
লিউ ঝানের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল। “আপনার ল্যাবের বিজ্ঞানীরা পারবে না,কিন্তু আমি পারবো।আমি নিজেও তো এখন ড্রাগন।আমার ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আমি ওদের অবস্থান বের করতে পারবো।”
সবাই বিস্ময়ে চেয়ে রইল। মিস্টার চেন শিং একটু ভাবলেন, তারপর বললেন, “তুমি কি নিশ্চিত?”
লিউ ঝান আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলল, “শুধু সময়ের ব্যাপার, আমি ওদের খুঁজে বের করবো।আর জ্যাসপার এবার আমার হাত থেকে রক্ষা পাবে না!”

ভেনাস – এল্ড্র রাজ্যে……..
লিয়ারা যখন এল্ড্র রাজ্যে পৌঁছাল,তখন পুরো রাজ্যে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল—জ্যাসপার রাজা ড্রাকোনিসকে বন্দী করে রেখে গেছে!রাজপ্রাসাদের দরজা পেরিয়ে সিংহাসনের সামনে এসে দাঁড়াতেই সে দেখতে পেল এথিরিয়ন, থারিনিয়াস ও আলবিরাকে।তারা সবাই নির্ভার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিল,যেন এই ঘটনাগুলো তাদের কোনো ভাবেই প্রভাবিত করছে না।
এথিরিয়ন গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “আপনি এখানে কেন এসেছেন,ফুপি?”
লিয়ারার চোখ জ্বলছিল ক্রোধে। সে এক পা এগিয়ে এসে দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “আমি এসেছি তোমাদের সতর্ক করতে!তোমরা সবাই জ্যাসপারের পক্ষে আছো,আমি জানি।কিন্তু মনে রেখো,যদি ফিওনার এক চুল পরিমাণ ক্ষতি হয়,আমি তোমাদের কাউকে ছাড়ব না!”

থারিনিয়াস ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ফুটিয়ে বলল, “আপনি আমাদের হুমকি দিচ্ছন,মিস লিয়ারা?”
আলবিরা ঠান্ডা গলায় বলল, “আমরা প্রিন্সকে ফিওনার কাছ থেকে সরাবো না,কারণ সে তার সঙ্গী।আপনি কি সত্যিই মনে করেন,আপনি আমাদের থামাতে পারবেষ?”
লিয়ারা এবার এক ধাপ এগিয়ে এসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল, “আমি একা নই।পুরো ফ্লোরাস রাজ্য আমার সঙ্গে আছে। জ্যাসপার যদি আমার কথা না শোনে,তাহলে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করব!এবং তখন তোমরা কেউ এল্ড্র রাজ্যের ধ্বং*স আটকাতে পারবে না!”
এথিরিয়ন এবার একটু গম্ভীর হলো। সে জানত লিয়ারা যা বলছে,তা মিথ্যা নয়। রাজা জারেন তার পিছনে রয়েছে,আর ফ্লোরাস রাজ্যের শক্তিও কম নয়।

থারিনিয়াস একটু মাথা নিচু করে বলল, “আপনি কি সত্যিই ফিওনার জন্য যুদ্ধ করবেন?”
লিয়ারা এবার সরাসরি আলবিরার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি শুধু ফিওনার জন্য না,জ্যাসপারের জন্যও যুদ্ধ করব! কারণ তোমাদের অন্ধ আনুগত্য ওকে ধ্বং*সের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।যদি আমার মেয়েকে রক্ষা করার জন্য আমাকে তোমাদের বিরুদ্ধে যেতে হয়,তবে তাই হবে!”
এথিরিয়ন ও আলবিরা পরস্পরের দিকে তাকাল। তারা জানত, এই মুহূর্তে লিয়ারাকে থামানো সহজ হবে না। কিন্তু তারা কি সত্যিই জ্যাসপারকে একা ফেলে দেবে?
পুরো রাজপ্রাসাদে উত্তেজনার ঝড় বয়ে গেল। এই দ্বন্দ্বের শেষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা কেউই জানত না…

জ্যাসপার কিচেনে দাঁড়িয়ে একগাল বিরক্তি নিয়ে সবজি কাটছিল। আঙুল কেটে যাওয়ার কারণে ছুরি ধরতে কষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু সে নিজের জেদে রান্নাটা শেষ করতেই চেয়েছিল।সকালের ব্রেকফাস্ট বানাতে তেমন কোনো ঝামেলা মনে হয়নি।
ফিওনা কিচেনের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে একটু তাকিয়ে দেখল তার পরিস্থিতি।কিছুক্ষণ চুপচাপ দেখার পর অবশেষে বলল,
“আমাকে দিন,আমি লাঞ্চ তৈরি করছি।”

জ্যাসপার ছুরিটা হাতে গুঁজেই ফিওনার দিকে তাকাল। তারপর একটু কঠিন গলায় বলল, “দরকার নেই, আমি পারবো। তুমি শুধু আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিও।”
ফিওনা তার এই জেদের হাস্যকর দিকটা বুঝতে পারলেও কিছু বলল না। সে এক মুহূর্ত জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে থাকল, তারপর চুপচাপ ঘুরে নিজের কক্ষে চলে গেল।
জ্যাসপার তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। তারপর এক গভীর শ্বাস নিয়ে নিজের কাজে ফিরে গেল—এক হাতে সবজি কাটতে যতটা সম্ভব সাবধানতা অবলম্বন করে। কিন্তু তার মনে হচ্ছিল, হয়তো সে কিছুটা বেশি জেদ ধরছে। কিংবা হয়তো, সে চাচ্ছিল ফিওনা তার কাছে আরও কিছুক্ষণ থাকুক…
দুপুরের খাবার শেষ করে জ্যাসপার বললো, “আজকে আমি একটু বাইরে যাবো, তোমার জন্য কিছু শপিং করতে।”
ফিওনা তখন সোফায় বসে ছিলো আর বললো, “বাহ! শপিং ও করে দিবেন? সুগার ড্যাডি!”
জ্যাসপার খাবারের প্লেট গুছিয়ে উঠতে গিয়েই থমকে গেল। ফিওনার কথাটা যেন কানে বাজল। সে ধীরে ধীরে ঘুরে ফিওনার দিকে তাকাল, চোখে সন্দেহ আর ধমকের মিশ্রণ।
“কি বললে?”

ফিওনা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো, “কি আর বলবো, যা শুনলেন তাই!আপনি তো অলটাইম যেভাবে আমাকে নিয়ন্ত্রণ করেন, শাসন করেন, আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয়, আপনাকে পাপা বলে ডাকি—পাপা, ড্যাড, ড্যাডি!”
জ্যাসপার তখন হঠাৎই সোফায় বসে ফিওনার কোমর শক্ত করে চেপে ধরে তাকে সরাসরি নিজের কোলে তুলে নিলো। ফিওনা চমকে উঠে, কিছু বোঝার আগেই জ্যাসপার তার মুখের এতটা কাছে চলে আসে যে, তাদের নিঃশ্বাস এক হয়ে যায়।

“এবার আবার বলো তো, আমাকে কী ডাকতে চাও?” তার গলায় গভীরতা, চোখে এক অদ্ভুত দপদপে আগুন।
ফিওনা কিছু বলতে যাবে, কিন্তু তার আগেই জ্যাসপার এক হাতে তার গলা চেপে ধরে, অন্য হাতে মুখটা নিজের দিকে টেনে নেয়। ঠোঁট আঁকড়ে ধরে শক্তভাবে, যেন প্রতিশোধ নিচ্ছে। একসময় কা*মড় বসিয়ে দেয়,ফিওনার ঠোঁটে এক ঝটকা শিহরণ ছড়িয়ে পড়ে,ব্যথায় চোখ বন্ধ হয়ে আসে তার।
“হুম্…” ফিওনা বাঁধা দিতে চায়,কিন্তু জ্যাসপার কোনো সুযোগ দেয় না। আরো গভীরভাবে ঠোঁটের উপর অত্যাচার চালিয়ে যায়,যেন শাস্তি দিচ্ছে তার কথার জন্য।
জ্যাসপার কোনোভাবেই দমলো না। তার চোখে ছিলো একরকমের দাবিদারির ঝলক। ফিওনার গলা, ঘাড়—কিছুই বাদ রাখছিল না। ঠোঁটের ছোঁয়ার সাথে সাথে মাঝে মাঝে কা*মড় বসাচ্ছিল,প্রতিশোধ নিতে। ফিওনা শিহরিত হচ্ছিল, কিন্তু ব্যথাও লাগছিল।

এক সময় তার গাল শক্ত করে চেপে ধরে জ্যাসপার ধীর অথচ গম্ভীর কণ্ঠে বললো, “আজকে তোমাকে শেখাবো ড্যাডি আর হাজবেন্ডের পার্থক্য। তারপর দেখবে, আর কখনো এমন কথা বলার সাহস পাবে কি না!”
তারপর আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে ফিওনাকে আরেকবার নিজের দিকে টেনে আনলো। ঠোঁটে রাফলি চুম্বনের বন্যা বইয়ে দিলো,ফিওনা ধীরে ধীরে কাঁপতে লাগলো শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল।শেষমেশ আর সহ্য করতে না পেরে কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠলো, “সরি! আমি আসলে ওভাবে মিন করিনি… প্লিজ,ছাড়ুন না!”
কিন্তু জ্যাসপার তখনো থামেনি…
কিছুক্ষণ পর জ্যাসপার কঠোর কন্ঠে বললো, “এবার বলো, কি ডাকবে?ড্যাডি নাকি হাবি?”
ফিওনার হৃদয় দ্রুত ধুকধুক করতে লাগলো। সে কিছুটা অবাক হয়ে বললো,”আমি তো…”
জ্যাসপার আবার জোর দিয়ে বললো, “না, আর কোনো ‘তো’ নেই।তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।”
ফিওনার চোখে একটু দ্বিধা ছিল, তবে সে হালকা গলায় বললো, “ঠিক আছে,হাবি।”

জ্যাসপার তার কথায় সন্তুষ্ট হয়ে একটা মৃদু হাসি দিলো, যেন সে তার অধিকার অর্জন করেছে।
জ্যাসপার তখন বাইরে যাওয়ার জন্য নিজের কক্ষে প্রস্তুতি নিতে থাকে।সে হাতের আয়নায় নিজেকে দেখে কিছুক্ষণ স্টাইল ঠিক করে।তার চোখের কোণে একটি আত্মবিশ্বাসী উজ্জ্বলতা ছিল,যেন বাইরে বেরিয়ে সে নতুন একটি অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে।জ্যাসপার একটি কালো জ্যাকেট পরলো আর সিল্কের সাদা শার্টের উপর দিয়ে চড়িয়ে নিলো।
সে মিরর থেকে চোখ সরিয়ে ফিওনাকে একবার দেখলো বাইরে সোফায় বসা,যে সযত্নে তার কর্মকাণ্ড অবলোকন করছে।জ্যাসপার জানত,এই সময়টাতে ফিওনার জন্য কিছু বিশেষ কেনাকাটা করতে হবে।
যখন জ্যাসপার পারফিউম মাখতে শুরু করল, তখন ঘরটি মিষ্টি সুগন্ধে ভরে উঠল। সেই সুগন্ধ ফিওনার মনকে উন্মাদ করে দিল। তার হৃদয়ে এক অদ্ভুত আকর্ষণ অনুভূত হল; ইচ্ছে হল, জ্যাসপারের শরীরে নাক ডুবিয়ে সেই মিষ্টি ঘ্রানটি গভীরভাবে শুঁকতে।

যখন জ্যাসপার কক্ষ থেকে বেরিয়ে এল, তার সাজসজ্জা দেখে ফিওনা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেল। রাজকীয় সুটটি তার গায়ে এমনভাবে খাপ খেয়েছে, যেন এটি শুধুমাত্র তার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। সুটের প্রতিটি ভাঁজ আর কাটের মধ্যে একটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল,যা তাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছিল।
তার হেয়ার স্টাইল ছিল নিখুঁত; চুলগুলি শিল্পের মতো সাজানো ছিল,যা তার চেহারার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলছিল। এক কানে ঝুলে থাকা দুলে একটি সূক্ষ্ম ঝলক যুক্ত করেছিল, আর তার চোখের গভীরতা যেন এক রহস্য লুকিয়ে রেখেছিল।ঠোঁটের কোমলতা ছিল রোমান্টিক।
ফিওনার মনে হচ্ছিল, এই মুহূর্তে জ্যাসপার যেন রাজকুমার,আর সে তার রাজকুমারী। তার হৃদয় দ্রুত স্পন্দিত হতে লাগল, যেন সমস্ত দুনিয়া তাদের চারপাশে থমকে গেছে।
জ্যাসপার হঠাৎ করে ঝুঁকে এসে ফিওনাকে উদ্দেশ্য করে বললো, “এখন এতো দেখোনা। ফিরে আসার পর মন ভরে দেখে নিও। আর হ্যাঁ,আমি বেশিক্ষণ সময় নিবো না। তাই খালি বাড়িতে উল্টাপাল্টা কিছু করার চেষ্টা করোনা, নিজের বিপদ ডেকে এনো না।”
ফিওনার হৃদয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি ছড়িয়ে পড়লো। জ্যাসপারের কথায় যেন সতর্কতার ছাপ ছিল, তবে তার চোখে অদ্ভুত এক আগ্রহও ছিল।

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ১৭ (২)

জ্যাসপার বেরিয়ে যাওয়ার আগে ফিওনার কপালে আলতো করে একটি চুমু দিয়ে বললো, “টেইক কেয়ার।” তার ঠোঁট ফিওনার কপালে লাগতেই ফিওনার হৃদয় দ্রুত স্পন্দিত হতে শুরু করলো। জ্যাসপার তার দিকে এক মুহূর্তের জন্য তাকিয়ে রইলো, যেন সে কোনো কিছু বলার অপেক্ষায় ছিল। তারপর, হঠাৎ করে সে ফিরলো আর দরজার দিকে পা বাড়ালো,তার পিছনে ফিওনার হৃদয়ে অদ্ভুত একটি উত্থান অনুভব হলো।জ্যাসপারের চলে যাওয়ার পর,ফিওনা সেই চুমুর উষ্ণতা অনুভব করতে লাগলো,যা তার মনে অশান্তির ঝড় তুলেছিল।

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ১৯