আযদাহা সিজন ২ পর্ব ১৯
সাবিলা সাবি
ফিওনা পুরো প্রাসাদ জুড়ে একা।চারপাশে নৈঃশব্দ্য,কেবল বাতাসের মৃদু শব্দ কানে আসে।জ্যাসপার যাওয়ার আগে সদর দরজার পাসকোড শক্তভাবে লক করে গেছে,যেন তার বেরোনোর কোনো সুযোগই না থাকে।
সে একবার,দু’বার,কয়েকবার পুরো প্রাসাদ চষে বেড়িয়েছে, পালানোর পথ খুঁজেছে।কিন্তু কোথাও কোনো জানালা, কোনো গোপন দরজা,কোনো পথ নেই।এটি এক বিস্তীর্ণ সোনার খাঁচা,যার ভেতরে সে বন্দী।
তবে একদম প্রাসাদের শেষ প্রান্তে এসে সে একটি সরু সিঁড়ি দেখতে পেলো।নিচের দিকে নেমে গেছে সিঁড়িটি,অন্ধকারে ঢাকা,গুপ্ত কোনো কক্ষের দিকে ইঙ্গিত করছে।
ফিওনা ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো।যদি এখানেই কোনো রহস্য লুকিয়ে থাকে?যদি এখান দিয়েই পালানো সম্ভব হয়?
তার পা সিঁড়ির প্রথম ধাপে পড়তেই—
‘ধপাস!’
প্রাসাদের বাইরে ভারী কিছু নামার শব্দ হলো।
ফিওনার শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে এলো।
সে মুহূর্তেই বুঝতে পারলো—জ্যাসপার ফিরে এসেছে!
ফিওনার গলা শুকিয়ে গেল। পালানোর ইচ্ছেটা যেন মুহূর্তেই উবে গেল, কারণ জ্যাসপার তাকে ধরে ফেললে কী হবে, সেটা ভেবে সে কাঁপতে লাগলো। ধীরে ধীরে দরজার লক খোলার শব্দ শোনা গেল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ফিওনা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল।জ্যাসপার প্রাসাদে প্রবেশ করার আগেই সে দ্রুত নিজের কক্ষে চলে যায়।রাতের নরম চাঁদের আলো তার মুখে পড়ছিল,চোখ দুটো এক অজানা চিন্তায় বিভোর।
হঠাৎ পেছন থেকে ভারী বুটের মৃদু শব্দ শোনা গেল।সে ঘুরে দাঁড়াতেই তার হৃদস্পন্দন এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল।
জ্যাসপার ধীর পায়ে এগিয়ে এলো।তার পরনে ছিল গভীর কালো ব্লেজার,যেটা সে কিছুক্ষণ আগেই কিনে একেবারে পড়েই এসেছে।ব্লেজারের প্রতিটি ভাঁজে রাজসিক আভিজাত্য।বুকের ওপর রূপালি চেইন জড়ানো,কাঁধের পাশে ঝুলছিল ধাতব অলংকার,মনে হলো এক অদ্ভুত ক্ষমতার প্রতীক।তার শার্প জ-লাইন,নিখুঁত ভ্রু,আর তীক্ষ্ণ সবুজ চোখ—সব মিলিয়ে সে যেন অন্ধকারে জ্বলতে থাকা এক রহস্যময় দেবদূত।
তার চোখের গভীরতা ফিওনাকে শিকলের মতো বেঁধে ফেলছিল।চাঁদের আলোর নিচে তার গলায় থাকা সেই সবুজ ড্রাগন ট্যাটু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল,ঠিক একটি জীবন্ত ড্রাগনের মতো তার ত্বকের নিচে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।কানের এক পাশে দুল ঝুলছিল,বাতাসে হালকা দুলে উঠছিল সেটা।
জ্যাসপার হাসলো—একটা ধীর,গভীর, বিদ্রূপাত্মক হাসি।
“তুমি কি আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছো হামিংবার্ড?” তার কণ্ঠস্বর ছিল রেশমের মতো মসৃণ,কিন্তু তাতে এক অদৃশ্য হুমকি লুকিয়ে ছিল।
ফিওনার শ্বাস দ্রুত হয়ে উঠলো।এই ড্রাগন পুরুষটা শুধু বিপজ্জনক নয়—এক সজীব আগুন,যা একবার স্পর্শ করলেই সবকিছু গ্রাস করে নিতে পারে।
তার ধীরে ধীরে এগিয়ে আসা,প্রতিটি পদক্ষেপে আত্মবিশ্বাস, তার পোশাকের উজ্জ্বলতা—সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছিল, সে এক রাজা,যে নিজের শিকারকে সামনে দাঁড় করিয়ে উপভোগ করছে তার ভয়।
কিন্তু এরপর হঠাৎ সে একপাশে রাখা কয়েকটা শপিং ব্যাগ ফিওনার সামনে রাখলো।
ফিওনা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো।
“এগুলো কী?”
জ্যাসপার চোখ সরু করে বললো, “তোমার জন্য শপিং। আমার রাজ্যের রানিং করে রাখার জন্য যা যা দরকার সব এনেছি।”
জ্যাসপার ফিওনার হাত ধরে ধীরে ধীরে সোফায় বসালো। তারপর একে একে সব শপিং ব্যাগ তার সামনে রাখলো। “সব খুলে দেখো, সব ঠিক আছে কিনা,” তার কণ্ঠে ছিল এক অদৃশ্য আদেশের সুর।
ফিওনা কৌতূহল নিয়ে ব্যাগগুলো খুলতে লাগলো। একটার পর একটা বেরিয়ে এলো দামি ওয়েস্টার্ন ড্রেস, ঐতিহ্যবাহী চীনা পোশাক, রাজকীয় গাউন, আর কয়েকটা মিডি ফ্রক। তার সঙ্গে মানানসই অলংকার আর দামি কসমেটিকস।
ফিওনা কসমেটিকের বাক্সগুলো হাতে নিয়ে পরীক্ষা করছিল। হঠাৎ একটা মাসকারার প্যাকেট খুলে বিরক্তির সুরে বললো, “এই ব্র্যান্ডের মাসকারাটা তেমন ওয়াটারপ্রুফ না, পানি লাগলেই উঠে যাবে।”
জ্যাসপার ঠোঁটের কোণে একরকম ধীর হাসি নিয়ে বললো, “I won’t let your mascara ruin(আই ওউন্ট লেট ইয়োর মাসকারা রুইন)
ফিওনা ব্যঙ্গের সুরে বললো, “হ্যাঁ, জানি। আপনার তো উদ্দেশ্য আমার লিপস্টিক নষ্ট করা।”
জ্যাসপার একটু ঝুঁকে এসে তার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো, “No, I’ll ruin your ability to walk for a week (নো,আই’ল রুইন ইয়োর অ্যাবিলিটি টু ওয়াক ফর আ উইক)
ফিওনা কথাটার অর্থ বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।গাল দুটো গরম হয়ে উঠলো, চোখ নামিয়ে ফেললো নিচের দিকে।
কিন্তু জ্যাসপার যেনো কিছুই ঘটেনি, এমন স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বসে ছিল,সে মনে হলো একদম সাধারণ কিছু বলেছে।
ফিওনা দ্রুত মনোযোগ সরিয়ে বাকি শপিং ব্যাগ খুলতে লাগলো।কিন্তু পরের মুহূর্তেই তার মুখ লাল হয়ে গেলো—জ্যাসপার তার জন্য ইনারও কিনে এনেছে! শুধু তাই নয়, ব্যাগের এক পাশে রাখা ছিল সেনেটারি ন্যাপকিন।
সে হতবাক হয়ে ব্যাগের দিকে তাকিয়ে রইলো, কিছুক্ষণ কিছুই বলার সাহস পেল না। মাথার ভেতর হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল—এগুলো ওনার কেনার দরকারটাই বা কী ছিল?
জ্যাসপার এক হাত সোফার ব্যাকরেস্টে রেখে আরেক হাত ঠোঁটে ছুঁইয়ে হালকা হাসলো, “কী হলো? এতো চুপ কেন? এগুলোও তোমার দরকার,নেই ?”
ফিওনা বিস্ময়ে মুখ তুললো, কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হলো না। লজ্জায় গলা পর্যন্ত লাল হয়ে গেছে তার।
ফিওনা ভ্রু কুঁচকে বললো, “মেয়েদের দরকারি জিনিসপত্র খুব ভালোই তো জানেন! অভিজ্ঞতা বেশ ভালো মনে হচ্ছে।”
জ্যাসপার হালকা হাসলো, চোখেমুখে একরকম আত্মতৃপ্তির ছাপ। “তোমার জন্য সবকিছু শিখছি,” সে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো। “এই প্রথমবারের মতো কোনো মেয়ের জন্য শপিং করলাম, তাও আবার ব্যক্তিগত জিনিস পর্যন্ত কিনেছি। ভাবতে পারো?”
ফিওনা ঠোঁট কামড়ে একটু বিব্রত হয়ে গেলো। জ্যাসপার যে তার জন্য এতটা চেষ্টা করছে, সেটা সে কিছুতেই অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু তবুও, সে এই মুহূর্তে কী বলবে বুঝতে পারছিল না।
জ্যাসপার সোফা থেকে উঠে যেতে যেতে বললো, “আমি টায়ার্ড। আজকের রাতের ডিনার তুমি তৈরি করবে।”
ফিওনা ভ্রু কুঁচকে তাকালো, “আমি?আপনি কি সত্যি আশা করছেন যে আমি রান্না করবো?”
জ্যাসপার এক মুহূর্তের জন্য থেমে পিছনে ফিরে তাকালো, ঠোঁটের কোণে হালকা বিদ্রূপাত্মক হাসি। “হ্যাঁ, হ্যাঁ। তুমি পারবে না?”
ফিওনা হাত গুটিয়ে বললো, “আমি যদি রান্না করতে না চাই?”
জ্যাসপার ধীরপায়ে এগিয়ে এসে তার সামনে দাঁড়ালো, চোখে রহস্যময় দৃষ্টি। “তাহলে আমাকে না খেয়েই থাকতে হবে। তুমি কি সত্যিই চাইছো, আমি অভুক্ত থাকি?”
ফিওনা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সে জানতো, এই পুরুষকে না বলা সহজ কিছু নয়।
লিউ ঝান মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করল। ক্লান্ত শ্বাস ফেলল একবার। চারপাশের যান্ত্রিক শব্দ, কম্পিউটারের স্ক্রিনের আলো—সব কিছু যেন মুহূর্তের জন্য অর্থহীন হয়ে গেল।
তার কণ্ঠস্বর নরম অথচ দৃঢ়, যেন প্রতিজ্ঞা বাঁধা আছে প্রতিটি শব্দে।
“আমি তোমাকে খুঁজে বের করবোই, আমার ক্যামেলিয়া।”
তার কণ্ঠ বাতাসে মিশে গেল, কিন্তু প্রতিধ্বনি রয়ে গেল তার হৃদয়ে।
জাইরন আর এলিজিয়ার প্রেম কাহিনী অসমাপ্ত থেকে গিয়েছিল। তাদের ভাগ্যে যা ছিল না, এই জন্মে তা পূর্ণ হবে।
“এই জন্মে লিউ ঝান আর ফিওনার প্রেমের সমাপ্তি ঘটবেই।”
তার মুষ্টি শক্ত হয়ে গেল। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আবার কোড লিখতে শুরু করল। জ্যাসপারের রিপ্লাই আসবে, আসতেই হবে। আর সেই দিন ফিওনা তার কাছেই ফিরবে।
রাতের খাবার শেষে জ্যাসপার অনেক আগেই উঠে গেছে। ফিওনা একা একা সব গোছগাছ করতে করতে সময় কাটাচ্ছিল। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে যখন সে ফ্রেশ হতে নিজের কক্ষে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, হঠাৎ কানে এল একটি অদ্ভুত কণ্ঠস্বর গান।
“খামোশিয়া,আওয়াজ হ্যায়….
তুম শুননে তো আয়ো কভি…
ছু কে তুমহে খিল জায়েঙ্গে….
ঘর ইনকো বুলায়ো কভি”…….
আওয়াজের উৎস খুঁজতে সে ডানপাশের কক্ষের দিকে পা বাড়াল।
ফিওনা নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইল দরজার সামনে। বুকের ভেতর ধুকপুক শব্দ বাড়ছিল।
কক্ষের ভেতরে নরম আলো ছড়িয়ে আছে। বিশাল সাদা পিয়ানোটা ঠিক মাঝখানে রাখা, আর তার সামনে বসে আছে জ্যাসপার। সে গভীর মনোযোগে বাজাচ্ছে, আঙুলগুলো মসৃণ দক্ষতায় পিয়ানোর কী-বোর্ডে নাচছে। তার কণ্ঠস্বর গভীর, সংযত, অথচ প্রতিটি সুরের সঙ্গে মিলিয়ে তাতে এক ধরনের আবেগ ঝরে পড়ছে।
“কেয়া উস গালি মে কাভি তেরা জানা হুয়া…,
“জাহাসে যামানে কোন গুজরে যামানা হুয়া।….
“মেরা সামায় তো ওহি পে হ্যা ঠেহরা হুয়া”….
“বাতাও তুমহে কেয়া মেরে সাথ কেয়া কেয়া হুয়া।….”
ফিওনা বোঝার চেষ্টা করল—এই ভাষা কোন দেশের? চাইনিজ হলে এতক্ষণে সে বুঝে ফেলত।কিন্তু এটা কিছুটা অচেনা, অথচ মোহময়। শব্দগুলো হাওয়ায় ভেসে আসছে, এক ধরণের রহস্যময় অনুভূতি তৈরি করছে।
জ্যাসপারের চোখ বন্ধ,সে অন্য কোনো জগতে হারিয়ে গেছে। গানের প্রতিটি শব্দ তার কণ্ঠে অন্যরকম রঙ ছড়াচ্ছে।
ফিওনার গলা শুকিয়ে এল।
এই পুরুষটা এতটা অপ্রতিরোধ্য কেন?একদিকে নি*ষ্ঠুর, একদিকে এতটা আকর্ষণীয়—তার প্রতিটি দিকেই একধরনের মাদকতা লুকিয়ে আছে।
জ্যাসপার ফিওনার আগমন অনুভব করেই পিয়ানো ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো,তার গান থামানোর কোনো ইচ্ছেও ছিল না।সে ফিওনার হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে গেল,যেখানে চাঁদ, মহাসমুদ্র আর আকাশের এক অনবদ্য মেলবন্ধন দেখা যাচ্ছিল।সেখানে দাঁড়িয়ে,জ্যাসপার ফিওনাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে,সেই চমৎকার সুরেলা কণ্ঠে গাইতে শুরু করলো।
“নাদিয়াকা পানি খামোশ বেহতা ইয়া……
তখন সমুদ্রের গর্জন যেন আরও গভীর হতে থাকল।পলক ফেলা ঢেউয়ের মতো,সমুদ্রের বিশালতা তার কাছে ছোট মনে হচ্ছিল,কিন্তু গানের সুরে যেন সে এক নতুন জীবন পেয়ে যাচ্ছিল।
“খিলি চাঁদনি মে ছিপি লাখ খামোশিয়া।…….
আর তখন,আকাশে চাঁদ এক নতুন আভায় উদিত হতে শুরু করলো।চাঁদের আলো তখন সমুদ্রের সাথেও এক অদ্ভুত সম্পর্ক তৈরি করলো,সোনালি রঙের চুম্বন দিয়ে সমুদ্রকে আলোকিত করছিল।সাদা আলোটা সমস্ত প্রকৃতিকে এক অনুপম মাধুর্যে ঢেকে ফেলেছিল।
“বারিশ কি বন্দোকি, হোতি কাহা হ্যাঁ জুবান,…
তখন হালকা বৃষ্টির ঝাপটা সারা বারান্দায় পড়তে শুরু করল, এক নতুন অনুভূতির জন্ম দিলো। বৃষ্টির ছোঁয়া ছন্দ হয়ে প্রকৃতির সবকিছুতেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছিল। এই মুহূর্তে,জ্যাসপারের গান, সমুদ্রের গর্জন, বৃষ্টির টিপটিপ আর চাঁদের আলো—সব কিছু মিলিয়ে পৃথিবী এক অদ্ভুত সুরে গুনগুন করছিল।
“সুলাগ দিলো মে হে খামোশ উঠতা ধূয়া।
ফিওনা অনুভব করল,শ্বাসের প্রতিটি টানে যেন একটা রহস্যময় আগুন পোড়ছে।এ যেন ধীরে ধীরে পুড়ে যাওয়া সুররিল পৃথিবী,আর সে এক রহস্যময় সুখে হারিয়ে যাচ্ছে।
“খামোশিয়া আকাশ হ্যাঁ তুম উড়নে তো আও কাভি,……
এখন,আকাশে রঙিন মেঘের বালিকা যেন আরো ঘনিয়ে উঠছিল।র—এটা ফিওনার হৃদয়ের প্রতি প্রত্যুত্তর জানাচ্ছিল।
“খামোশিয়া এহেসাস হ্যাঁ তুমহে মেহসুস হোতি হ্যাঁ কেয়া।”
তার পর, ফিওনা অনুভব করতে শুরু করল, সেই অনুভূতি যা জ্যাসপার তার কণ্ঠের মাধুরী দিয়ে উপহার দিচ্ছে।ফিওনা শান্তি আর তৃপ্তি এক অপার্থিব জগতের সঙ্গে মিশে যাচ্ছিল।
এই পুরো মুহূর্তে, প্রকৃতির প্রতিটি ধ্বনি, প্রতিটি আছড়ে পড়া ঢেউ, চাঁদের তলে হালকা বাতাস—সব কিছু এক মহামিলনে গেয়ে উঠছিল,যেখানে প্রতিটি সুরের সাথে প্রকৃতি নিজেকে সমন্বয় করে ছিল।
গান গাওয়া শেষ হতেই ফিওনা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “এটা কোন গান?”
জ্যাসপার হেসে বললো, “বলিউড,কেনো তুমি হিন্দি বোঝো না?”
ফিওনা কিছুটা লজ্জিত হয়ে বললো, “একটু একটু বুঝি।”
জ্যাসপার তখন গানটির লিরিক্স বোঝাতে শুরু করলো,তার মিষ্টি কণ্ঠে কথাগুলো যেন ফিওনাকে আরও বেশি আকৃষ্ট করছিল।ফিওনা অবাক হয়ে শুনছিল,যদিও গাওয়ার সময় সে পুরোপুরি বুঝতে পারছিল না, তবুও গানটার সুর আর মাধুর্য তাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিল।তার মনে হচ্ছিল, জ্যাসপারের সঙ্গে এই মুহূর্তগুলোই সবকিছুর ঊর্ধ্বে।
ফিওনা তখন কৌতূহলী দৃষ্টিতে জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, “আপনি হিন্দি কিভাবে জানেন?”
জ্যাসপার চোখে একধরনের আত্মবিশ্বাসী ঝলক এনে মৃদু হেসে বললো, “আমি ড্রাগন, ভেনাসের প্রিন্স। আমাদের ব্রেইনে অটোমেটিক ভাষা অনুবাদ ব্যবস্থা আছে। সব ড্রাগনেরই এই ক্ষমতা থাকে,তুমি অর্ধেক মানবী তাই তোমার আই ফাংশন নেই।”
ফিওনা বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো। জ্যাসপার তখন ব্যালকনির রেলিংয়ে হালকা ভর দিয়ে তাকিয়ে থাকলো সমুদ্রের দিকে, স্মৃতির গভীরে হারিয়ে যেতে চাইলো।তারপর ধীরে ধীরে বললো,“এই গানটা আমি একবার এক বারে শুনেছিলাম। তখনই ভালো লেগেছিলো।আর এখন—” সে ফিওনার দিকে তাকালো,গভীর চোখে,“আমাদের সামনে চাঁদ,সমুদ্র,আকাশ—সবকিছু একসাথে।তাই মনে হলো,এই গানটাই আমার মনের কথা প্রকাশ করতে পারবে।”
ফিওনা এক মুহূর্তের জন্য কিছু বলতে পারলো না।সমুদ্রের ঢেউয়ের মৃদু শব্দ,চাঁদের আলোয় জ্যাসপারের রহস্যময় অভিব্যক্তি,আর সেই অজানা অনুভূতি—সব মিলিয়ে মুহূর্তটা যেনো অলৌকিক হয়ে উঠলো।
ফিওনা ভ্রু কুঁচকে আরেকটা প্রশ্ন ছুড়ে দিল, “আচ্ছা, আপনি কি অলরাউন্ডার? সবকিছুই পারেন?”
জ্যাসপার হালকা হাসলো,তারপর এক ঝটকায় ফিওনার কপালে আলতো করে টোকা মেরে বললো, “জি না, আমি ডান্স তো পারি না।”
ফিওনা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, “সত্যি ডান্স করতে পারেন না?”
জ্যাসপার কাঁধ ঝাঁকিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো, “ড্রাগনদের নাচার দরকার পড়ে না। আমরা বাতাসে উড়ি,মাটিতে লাফ দিই, পানিতে সাঁতার কাটতে পারি—কিন্তু নাচ? সেটা শিখিনি।”
জ্যাসপার একপাশে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি এনে বললো, “একদিন তুমি নিজেই আমাকে কাপল ডান্স শিখিয়েছিলে, মাউন্টেন গ্লাস হাউজে।”
ফিওনা বিস্ময়ে থমকে গেল। তার চোখ বড় হয়ে গেলো, যেন এক মুহূর্তের জন্য কথাটা বিশ্বাসই করতে পারছে না।
“আমি?” ফিসফিস করে বললো সে।
জ্যাসপার ধীর পায়ে ফিওনার সামনে এল, তার গভীর সবুজ চোখে একধরনের অদ্ভুত স্মৃতি খেলা করছিলো।
“হ্যাঁ,” নরম স্বরে বললো সে, “তুমি তখন আমার হাত ধরে বলেছিলে—‘তুমি যদি উড়তে পারো, তাহলে নাচতেও পারবে। শুধু বিশ্বাস রাখতে হবে।’”
ফিওনা কিছুতেই মনে করতে পারছিলো না। মাউন্টেন গ্লাস হাউজ… ডান্স… তার মনে এক অস্পষ্ট ধোঁয়ার মতো কিছু ছবি ভেসে উঠছিলো,কিন্তু কিছুই স্পষ্ট হচ্ছিলো না।
সে নিঃশব্দে জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে থাকলো,তার কথাগুলোর মানে খুঁজে বের করার চেষ্টা করলো।
লিউ ঝান অপারেশন টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে মেডিকেল স্টুডেন্টদের সার্জারির জটিল বিষয়গুলো বোঝাচ্ছিল।তার গভীর,মনোযোগী চোখগুলো স্ক্যালপেলের ধারালো ব্লেডের মতোই শার্প দেখাচ্ছিল।
কিন্তু ‘ইয়ান জিয়াও’ (Yan Xiao) … সে যেন অন্য কোনো জগতে ছিল।লিউ ঝানের প্রতিটি কথা শোনার বদলে তার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল সে।এই লোকটার কাঁধে থাকা নিখুঁত ফিটিং ব্লেজার, স্লিভ গুটানো শার্টের নিচে শক্তপোক্ত হাত,আর মুখের শীতল অথচ আকর্ষণীয় ভাবটা তার দৃষ্টি সরাতে দিচ্ছিল না।
হঠাৎ, ঠক করে শব্দ হলো।
লিউ ঝান অপারেশনের একটা ছোট যন্ত্র নিয়ে হালকা করে কাঠের টেবিলে আঘাত করলো। তারপর ঠান্ডা কণ্ঠে বললো, “এখানে পড়তে এসেছো, নাকি অন্য কিছু?”
ইয়ান জিয়াও ধপ করে বাস্তবে ফিরে এলো।ভয় পেয়ে একটু পিছিয়ে গেলো সে,মুখটা লাল হয়ে উঠলো লজ্জায়।
“স্যারের চেহারা তো হ্যান্ডসাম,কিন্তু ব্যবহার এতটা রুড কেন?” মনে মনে বিড়বিড় করলো সে।
লিউ ঝান তার বিস্মিত মুখের দিকে একঝলক তাকিয়েই অন্যদিকে ফিরলো।একসময় সে বিনয়ী,ধৈর্যশীল একজন মানুষ ছিল।কখনোই এভাবে রূঢ় ব্যবহার করতো না।কিন্তু ফিওনার চিন্তায় দিনকে দিন তার ব্যক্তিত্ব বদলে যাচ্ছে।
মাঝে মাঝে নিজেকে পাগল মনে হয়।
কারণ,তার পুরো পৃথিবী এখন শুধু এলিসন ফিওনা।
ভেনাসের অন্য এক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলভা লেখাপড়া করে। তবে আজ তাদের ফাইনাল পরীক্ষা ছিল এথিরিয়নের বিশ্ববিদ্যালয়ে।পরীক্ষা শেষ করে বের হওয়ার পর,সিলভা হঠাৎ দেখতে পেল এথিরিয়ন দুর থেকে হেঁটে হেঁটে আসছে। তার কাঁধে ব্যাগ ঝুলছে আর সাদা ফুল স্লিভ টি শার্ট পরা, পুরো চেহারা যেন একদম দৃষ্টি আকর্ষণকারী।
সিলভা তার বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলে উঠল, “ওই যে আমার ক্রাশটা!”
তার বন্ধুরা চোখ মেলে এথিরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোর ক্রাশ!তাহলে তো তুই নিশ্চয়ই প্রপোজ করেছিস,একসেপ্ট করেছে?”
সিলভা মুচকি হেসে বলল, “আরে দূর না আজকে দু’বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছি পটানোর।”
এটা শুনে তার বন্ধুরা হাসি থামাতে পারল না। একে একে বলল,”তুই ওর পেছন পেছন ঘুরিস,তাই পাত্তা দেয় না,ছেলেরা এমন মেয়েদের লাইক করেনা যারা তাদের পেছনে পড়ে থাকে।”
সিলভা তখন কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,”তাহলে কি করতে হবে?”
তার বন্ধুদের কেউ একজন হেসে বললো, “ওটা পরে একদিন শিখিয়ে দেবো, এখন প্রাসাদে যাবো।”
সিলভা একটুখানি বিরক্ত হয়ে বললো, “আরে, রাখ না, একটু দেখতে তো দে!ওই তো,কাছেই আসছে!”
হঠাৎ, সিলভা লক্ষ্য করলো যে এথিরিয়নের চোখ সিলভার দিকে পড়েছে।এথিরিয়ন কিছুটা থেমে গিয়ে ঘুরে হাঁটা শুরু করেছিল,কিন্তু কিছু একটা ভাবতেই আবার সামনে এগিয়ে আসলো।সিলভা দ্রুত হাত নেড়ে হাই এথিরিয়ন! বললো।
এথিরিয়ন তার দিকে তাকিয়ে একটুখানি হাসি দিয়ে,সেলফ কন্ট্রোল রেখে নির্বিকারভাবে চলে গেলো।
সিলভা তখন তার পেছনে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, এথিরিয়নের চলে যাওয়া দৃশ্যটাকে চোখে চোখে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছিল।
“যাক, যতদিন পরীক্ষা আছে, ওর সাথে দেখা হবে।” মনে মনে একটু স্বস্তি পেলো সে।
সে ভাবলো, “হয়তো এথিরিয়ন একদিন আমার ভালোবাসা বুঝবে।” সিলভার হৃদয়ে এক ধরনের আশাবাদ জন্ম নিলো, যদিও এখনো অনেক কিছু স্পষ্ট ছিল না, তবুও তার মনে আশা ছিল যে,একদিন তার অনুভূতিগুলো আরো জোড়ালো ভাবে প্রকাশ করতে পারবে,আর সেই দিনটা যখন এথিরিয়ন তার দিকে চোখ তুলে দেখবে।
মিস্টার চেন শিং তার চিন্তায় গভীর হয়ে বসে ছিলেন। ফিওনাকে নিয়ে তার মনে অনেক প্রশ্ন ছিল।তিনি জানতেন যে,জ্যাসপার ফিওনাকে গভীরভাবে ভালোবাসে,তবে একইভাবে লিউ ঝানও ফিওনার জন্য অনেক যত্নশীল।
তবে, তিনি দ্বিধায় পড়ে গেছেন,কারণ তিনি বুঝতে পারছিলেন না,তার নাতনির জন্য কোনটা সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।
এমন সময় মিস ঝাং শান্ত কণ্ঠে বললেন, “মিস্টার চেন শিং, চিন্তা করবেন না। ষফিওনা এখন যথেষ্ট বড় হয়ে গেছে আর সে তার নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারবে।ও জানে, যার সাথে সে সুখী আর যে ওর জন্য যোগ্য,তাকেই সে বেছে নিবে।”
মিস ঝাংয়ের কথায় কিছুটা সান্ত্বনা পেলেন মিস্টার চেন শিং, তবে তার মনে এক রকম উদ্বেগ থেকেই গেল।
তিনি জানতেন, ফিওনার জন্য এই দ্বিধার পরিস্থিতি অবশেষে এক লড়াইয়ে পরিণত হবে—এক ধরনের যুদ্ধ,যেখানে দুটি ভিন্ন হৃদয়,দুটি আলাদা দৃষ্টি,দুটি ভিন্ন রাস্তায় চলা পুরুষ ফিওনাকে নিজের করে নিতে চাইবে।কিন্তু যুদ্ধে কেবল শক্তিই নয়,ভালোবাসা,বোধ,সম্পর্কের গভীরতা,প্রতিশ্রুতি—এসবই নির্ধারণ করবে কিসে জয়ী হবে।
মিস্টার চেন শিং এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেলেন, তারপর মিস ঝাংয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, “এটা কোনো সাধারণ যুদ্ধ নয়।ফিওনার হৃদয়ই হবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। যে তার মন জয় করতে পারবে,সেই তাকে পাবে।তবে,এই যুদ্ধের ফলাফল কী হবে,সেটাই বড় প্রশ্ন।”
মিস ঝাং মুখে কিছু না বললেও,তার চোখের গভীরতা যেন সব বোঝানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।
ফিওনা নিঃশব্দে শুয়ে ছিল,তার শরীরের প্রতিটি অংশ বিশ্রামে, কক্ষের অন্ধকারে সময় থেমে গিয়েছিল।তার নিঃশ্বাস গভীর ছিল,মনে হচ্ছিল সে এক অন্য জগতে চলে গেছে।কিন্তু হঠাৎ,তার ঘাড়ের কাছে এক উষ্ণ নিঃশ্বাস পড়ল। সেই নিঃশ্বাস যে সময়ের গতি থামিয়ে দেয়,তার সমস্ত সত্তাকে এক অদ্ভুত স্নিগ্ধতায় ভরিয়ে দিয়ে গেল।
ফিওনা কিছু বুঝে ওঠার আগেই,পেছন থেকে একটি শক্তিশালী,অথচ পরিচিত হাত তার কোমরকে জড়িয়ে ধরল। তার চোখ বন্ধ ছিল,কিন্তু সে জানতো,কে তাকে ঘিরে শুয়ে আছে—জ্যাসপার। তার গা থেকে উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ছিল ফিওনার ত্বকে। এক এক মুহূর্তে, ফিওনা অনুভব করলো তার শরীরের প্রতিটি রক্তকণিকা জেগে উঠছে।
ফিওনার শরীরে,যেখানে ড্রাগন ট্যাটু ছিল,এখন আর নেই। তার শরীরে,সেটা ছিলো শুধুমাত্র পুনর্জন্মের পরিচয় পাওয়ার জন্য।সে অর্ধেক মানবী আর এখন সে তার পুর্বের অতীতের পরিচয় পেয়ে গেছে তাই আর ড্রাগনের চিহ্ন থাকবে না।
অন্যদিকে জ্যাসপারের ড্রাগন ট্যাটু যেটা তার প্রিন্সলি চিহ্ন সেটা কখনও মুছে যাবে না—একশো বছর আগে যেমন প্রিন্স ছিল,এখনো তেমনি প্রিন্স।তার পুর্বের পৈতৃক চিহ্নের মতোই,পরিস্কার ও অমোচনীয়।তাই তার চিহ্ন এটা সারাজীবন থাকবে।
ফিওনার শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ ছড়িয়ে পড়ল। তার সমস্ত মনোযোগ জ্যাসপারের কাছেই,তার নিঃশ্বাস,তার গাঢ় উপস্থিতি।কিন্তু যখন সে অনুভব করলো,তার শরীর অস্থির হয়ে উঠছে,এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ অনুভব করছে,তখন ফিওনা নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করছিল।তার শরীরের প্রতিটি অংশ জ্যাসপারের স্পর্শের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিল, কিন্তু মনটা ছিল অস্থির।
ফিওনা দ্রুত হাতটা সরাতে চাইলো,কিন্তু তার আগেই, জ্যাসপার তার দিকে ঝুঁকে এসে ফিসফিস করে বললো, “আমি স্পর্শ করলে তুমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারো না, তাই না?বোকা মানবী… সরি,অর্ধ বোকা মানবী?”
ফিওনার শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলো।তার ঘাড়ের কাছ থেকে আরেকবার উষ্ণ নিঃশ্বাস পড়ল,জ্যাসপারের কথাগুলো তার আত্মায় গভীরভাবে প্রভাব ফেললো।সে জানতো,এই কথাগুলো মজা করে বলা হয়নি,বরং এক ধরনের গভীর সত্য ছিল এতে।
ফিওনার মুখে কোনো শব্দ বের হয়নি,শুধু তার চোখে অদ্ভুত এক ঝলক ছিল—একদিকে ক্ষোভ,অন্যদিকে অবশ,সে নিজের অনুভূতিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করছিল।
ফিওনা শ্বাস টেনে নিল,জ্যাসপারের কথাগুলো তার কাছে পাগলাটে শখের মতো লাগলো।তার ভেতর কিছু উথাল-পাথাল হচ্ছিল,মন চাইছিল কিছু বলতে, কিন্তু গলা শুষ্ক হয়ে এসেছিল।
জ্যাসপার আবার তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,”কালকে তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি,তাই আজকে ছাড় দিয়ে দিলাম।তোমার ছোট্ট শরীর,আমার থেকে এতটা উন্মাদনা সহ্য করতে পারবেনা।কিন্তু আজকে ছাড় দিয়েছি বলে কালকেও দেবো,এটা ভেবো না।”
ফিওনা কিছু না বলেই চোখে চোখ রেখে তার দিকে তাকালো।জ্যাসপারের কথা তার মধ্যে একটা চিরন্তন উত্তেজনা সৃষ্টি করছিল।তার প্রতিটি শব্দ, বাক্যে ফিওনার মনে এক এক করে পুঞ্জীভূত হচ্ছিল।এমনকি সে চাইলেও, সে এতো কিছুর মধ্যে দিয়ে নিজেকে বোঝাতে পারছিল না।
ফিওনা হালকা অস্বস্তিতে তার চোখে তাকিয়ে রইলো,যখন দেখলো জ্যাসপার শার্টলেস। তার শরীরের মসৃণ গঠন আর শক্তপোক্ত পেশীগুলো সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ পাচ্ছিল।এই দৃশ্যটা ফিওনার চোখে কিছুটা অস্বস্তি দিচ্ছিলো,তবে সে চেষ্টা করলো নিজের মনোযোগ সামলাতে।
“আপনি খালি গায়ে কেনো?যান কিছু পড়ে আসুন,” ফিওনা লাজুকভাবে বললো,তার কণ্ঠে একটু শঙ্কা ছিল।
ফিওনা আর কিরূপ বলার আগেই এক ঝটকায় জ্যাসপার তাকে নিজের বাহুতে তুলে নিয়ে বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরলো। তার শরীরের উষ্ণতা ফিওনার ত্বককে ছুঁয়ে গেলো অদ্ভুত অনুভূতি তাকে ঘিরে ফেলেলো,তার হৃদস্পন্দন স্পষ্টভাবে ফিওনার কানে আসছিল,একরকমের কোমল আর গভীর।
“আমি চাই তুমি আমার উষ্ণ বুকে মাথা রেখেই ঘুমাও,” জ্যাসপার বললো,তার কণ্ঠে এক ধরনের মিষ্টি,শক্তিশালী আদেশ ছিলো।
ফিওনার মনে একদম কিছু বলার ইচ্ছা ছিল না,তবে তার চোখে এক ধরনের অস্পষ্ট শিহরণ তৈরি হচ্ছিল।সারা পৃথিবী কিছু সময়ের জন্য থমকে গিয়েছিল।সে নিজের মতো করে শ্বাস নিতে চেষ্টা করছিলো,তবে জ্যাসপার তাকে আরও বেশি কাছাকাছি টেনে নিয়ে গেলো।
ফিওনার মাথা তার বুকের মধ্যে আস্তে আস্তে ঠেস দিয়ে রাখলো,আর জ্যাসপার তাকে নিজের উষ্ণ আর শক্তিশালী বাহুতে আরও গভীরভাবে আঁকড়ে ধরলো।তারপর জ্যাসপার তার চোখ বন্ধ করে নিল,মনে হলো এক শান্ত সমুদ্রে ভেসে চলেছে।
আযদাহা সিজন ২ পর্ব ১৮
সেই মুহূর্তে,ফিওনা কি অনুভব করছিল?তাতে হয়তো কোনো নির্দিষ্ট ভাষা ছিল না,তবে তার ভিতরে যা হচ্ছিল,তা ছিল অজানা এক অনুভূতির সমাহার।