প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭৮
Drm Shohag
ইরফান মাইরাকে নিজের থেকে ছাড়াতে চাইলে পারলো না। মাইরা সাপের মতো ইরফানের গলা পেঁচিয়ে রেখেছে। ইরফান মৃদু হাসলো। বা হাত মাইরার কোমরে রেখে ডান হাত মাইরার গলার ভাঁজে দিয়ে মৃদুস্বরে ডাকে,
– বার্ডফ্লাওয়ার?
মাইরা নাক টানে। ইরফান মাইরার গালে চুমু আঁকে। মাইরার মাথা তার গলা থেকে তুলে তার মুখোমুখি করে। মাইরা কান্নাভেজা চোখে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান অসহায় চোখে চেয়ে মাইরার মুখ মুছে দেয়। মাইরার গালে হাত রেখে মৃদুস্বরে বলে,
– কাঁদছো কেন বার্ডফ্লাওয়ার?
মাইরা ঠোঁট উল্টে বলে,
– স্যরি!
ইরফান মাইরাকে আরেকটু শক্ত করে ধরে বলে,
– স্যরি কেন?
মাইরা ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
– আপনাকে কষ্ট দিয়েছি তাই।
– কিভাবে দিয়েছ?
মাইরা মাথা নিচু করে বলে,
– আর কখনো উল্টাপাল্টা ওষুধ খাবো না। আপনার জন্য অপেক্ষা করব। আর কিছু লুকিয়ে রাখবো না। আর আপনার সব কথা শুনবো।
ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। বা হাতে মাইরার মাথা খানিক উঁচু করে বলে,
– আমার দিকে তাকাও।
মাইরা চোখ তুলে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান মাইরার গালে ডান হাতের বুড়ো আঙুলের সাহায্য স্লাইড করতে করতে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– আর কাঁদবেনা কখনো, ওকে?
মাইরা ছোট করে বলে,- হু
ইরফান মাইরার চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে বলে,
– ইউ হার্ট মি বার্ডফ্লাওয়ার। আর কখনো তোমার শিসরাজ কে হার্ট করবে না, ওকে?
মাইরার চোখের কোণে পানি জমে। ইরফান মাইরার মাথা তার বুকে চেপে মাইরার মাথায় ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,
– কাঁদতে নিষেধ করেছি আমি।
মাইরা সামান্য মাথা উঁচু করে নাক টেনে বলে,
– আমি তো ছোট মানুষ। আমি ভুল করলে ক্ষমা করবেন না? না বুঝে, ভুল করে আপনাকে আবারও কষ্ট দিলে আপনি আমাকে আর ভালোবাসবেন না?
ইরফান শীতল দৃষ্টিতে মাইরার দিকে তাকায়। ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে মাইরার চোখ বেয়ে গড়ানো পানি মুছে দেয়। কপালে শব্দ করে চুমু এঁকে মাইরার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
– বার্ডফ্লাওয়ার কষ্ট দিতে দিতে যদি আমার হৃদয় পুড়িয়ে কয়লা করে দেয়, তবে সেই পোড়া কয়লা জুড়ে-ও শুধু আমার মাইরা পরীর বিচরণ-ই থাকবে।
মাইরা চোখ থেকে টুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। তার শিসওয়ালার ভালোবাসার গভীরতা অনুভব করতে গেলে তার কান্না থামেনা।
ইরফান আবারও আলতো হাতে মাইরার মুখ মুছে দেয়। মৃদুস্বরে বলে,
– গান শিখেছ কোথা থেকে?
মাইরা বা হাত ইরফানের দাঁড়িতে বুলিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে,
– শুনে শুনে এমনি শিখেছিলাম। কিন্তু গেয়েছি আমার শিসরাজের জন্য।
ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলে,
– আচ্ছা?
ইরফানের কথা বলার ধরনে মাইরা ল’জ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নেয়। ইরফানের কাঁধে মাথা রাখে। ইরফান মৃদু হেসে বলে,
– গান শুনতে চাও না-কি শিস?
মাইরা সাথে সাথে ইরফানের কোলে সোজা হয়ে বসে ইরফানের দু’গালে হাত রেখে উৎফুল্ল মনে বলে,
– আমি দু’টোই শুনতে চাই শিসওয়ালা। আপনি শোনাবেন? আপনার গানের গলা আর শিস দু’টোই আমার খুব ভালো লাগে।
ইরফান আড়চোখে তার দু’গালে রাখা মাইরার দু’হাতের দিকে তাকায়। তার ছোট বউয়ের ছোট ছোট দু’টো হাত। মাইরার তার গালে এভাবে হাত রাখা ভীষণ ভালো লাগলো ইরফানের। মাইরাকে দু’হাতে শক্ত করে ধরে, মাইরার মুখ বরাবর তার মুখ নিয়ে মাইরার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
– তোমার শিসরাজকে একটা কিস কর তো বার্ডফ্লাওয়ার। তাহলে আমি তোমাকে ট্রিপল পারিশ্রমিক দিব।
মাইরা ভীষণ ল’জ্জা পায়। মেয়েটি সাথে সাথে ইরফানের গাল থেকে তার দু’হাত সরিয়ে নেয়। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে।
ইরফান মাইরার অবস্থা বুঝতে পেরে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। ডান হাত মাইরার চিবুকে রেখে, মাইরার মুখটা সামান্য উঁচু করে বলে,
– একবার তুমি বলো তো বউ!
মাইরা চোখ বন্ধ করে নিল। কেন যেন ভীষণ ল’জ্জা লাগছে তার। ইরফান মাইরার গালে গাল ঘষে মৃদুস্বরে বলে,
– বউ? একবার তুমি বলো।
কথাটা বলে মাইরার মুখের দিকে তাকায়। মাইরার চোখ বন্ধ। ইরফান আবারও বলে,
– বলো বার্ডফ্লাওয়ার।
মাইরা চোখ খুলে ইরফানের দিকে তাকায়। আমতা আমতা করে বলে,
– ততুমি।
ইরফান সাথে সাথে বলে,
– আবার বলো।
মাইরা মাথা নিচু করে,
– তুমি
ইরফান সাথে সাথে বলে,
– আবার বলো।
মাইরা দ্রুত তার দু’হাতে ইরফানের গলা জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে ল’জ্জা’মাখা কণ্ঠে বলে,
– আর না।
ইরফান মাইরার কাঁধে চুমু এঁকে বলে,
– এখন থেকে তুমি ডাকবে, ওকে?
মাইরা মিনমিন করে, – পারব না।
ইরফান মৃদুস্বরে বলে, – পারতে হবে। এরপর মাইরাকে সোজা করিয়ে বলে,
– কিস কর বউ।
মাইরা আবারও ইরফানকে সাপ্টে ধরে মিনমিন করে বলে,
– এমন করছেন কেন? গান শোনান।
ইরফান সূক্ষ্ম হেসে বলে,
– ওকে। বড় হলে সব আদায় করে নিব, এখন কাউন্ট করে রাখছি।
মাইরা মাথা তুলে বলে,
– আমি তো বড়-ই।
ইরফান মাইরার পিছনে হাত দিয়ে মাইরার জামার চেইন খুলে দেয়। মাইরা মাথা নিচু করে নেয়। ইরফান মাইরাকে ডিভানের উপর বসিয়ে দেয়। এরপর মাইরাকে নিয়ে ডিভানের উপর আধশোয়া হয়ে মাইরার গলায় মুখ গুঁজে বিড়বিড়িয়ে বলে,
– লিটল গার্ল, বড় হয়েছে কি-না, চেক করি, ওকে?
মাইরার শরীর শিরশির করে। ইরফান মাইরার গলায় ছোট ছোট চুমু আঁকে। মাইরা হাসফাস করে। ঢোক গিলে হঠাৎ-ই থেমে থেমে বলে ওঠে,
– ভালোবাসি শিসরাজ।
ইরফানের কান সজাগ হয়। মাথা তুলে মাইরার দিকে তাকালে দু’জনের চোখাচোখি হয়। মাইরা দ্রুত ডানদিকে ঘাড় ফিরিয়ে চোখমুখ খিঁচে নেয়।
ইরফান মাইরার গাল দু’হাতে ধরে নিজের দিকে ফেরায়। মৃদুস্বরে বলে,
– আবার বলো। শুনতে পাইনি।
মাইরা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালে দেখল ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসছে। মাইরা দ্রুত তার দু’হাতে ইরফানের চোখ দু’টো চেপে ধরে। তার ভীষণ ল’জ্জা লাগছে।
মাইরার কাণ্ড দেখে ইরফানের হাসি দীর্ঘ হয়। মাইরার পিঠের নিচে হাত রেখে মাইরাকে উঁচু করে সে ডিভানের উপর চিত হয়ে শুয়ে মাইরাকে তার উপর উঠিয়ে নেয়।
ডান হাতে তার চোখের উপর থেকে মাইরার হাত সরিয়ে দেয়। এরপর দু’হাতে মাইরাকে জড়িয়ে নিয়ে মাইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
– আই ডোন্ট লাইক ইউ বার্ডফ্লাওয়ার অ্যান্ড আই ডোন্ট লাভ ইউ।
মাইরা মুখ ফুলিয়ে তাকায় ইরফানের দিকে। ত্যাড়া লোক,, দুনিয়ার সব বলবে। শুধু ভালোবাসি আর পছন্দ করি এই দু’টো বলবে না। মাইরা ইরফানের বুকে দু’টো কিল দিয়ে বলে,
– আপনার মতো ত্যাড়া লোক আমি জীবনে দেখিনি। জীবনে স্বীকার করবে না। আমি যদি আপনার মুখ থেকে লাভ আর লাইক শব্দ বের না করিয়েছি, তাহলে আমার নাম মাইরা নয়,, শুধু দেখুন।
ইরফান চোখ ছোট ছোট করে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরা কথাগুলো বলে ইরফানের উপর থেকে উঠতে নিলে ইরফান মাইরার মাথার পিছনে হাত দিয়ে মাইরাকে টেনে তার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে। ধীরে ধীরে মাইরার জামা টেনে নামিয়ে দেয় দু’কাঁধ থেকে। মাইরাকে টেনে নেয় তার দিকে।
এরপর মুখ নামিয়ে মাইরার গলার নিচে বিদ্যমান তিলটায় কা’ম’ড় দিলে মাইরা মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে। ইরফান সাথে সাথে সেখানে ঠোঁট চেপে বলে,
– স্যরি! আমার এটা খেতে ইচ্ছে করে। কিভাবে খাবো বউ?
মাইরা বলার মতো কিছু খুঁজে পায়না। মানে এই লোকের কিসব ভিত্তিহীন কথা!
মাইরা ইরফানের বুকে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে রাখে। ইরফান মাইরার এলোমেলো অবস্থা দেখে নিজের উপর বিরক্ত হলো। মাইরার জামা টেনে ঠিক করে দিয়ে চেইন লাগিয়ে দেয়। এরপর মাইরার গলায় মুখ গুঁজে বিড়বিড়িয়ে বলে,
– বউ, ফাস্ট বড় হও, ওকে?
মাইরা কিছু বলতে নিলে ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলে,
– আমাকে টলারেট করার মতো বড় হও। জ্বর না বাঁধিয়ে, জ্বরকে তাড়ানোর মতো বড় হও। আন্ডারস্ট্যান্ড?
মাইরা ল’জ্জা পায় ভীষণ। এই লোক অ’স’ভ্যের মতো কিসব বলে।
ইরফান হতাশ কণ্ঠে বলে,
– তোমার মিনিমাম আরও থ্রি ইয়ারস্ আগে পৃথিবীতে আসা উচিৎ ছিল বার্ডফ্লাওয়ার। তুমি লেট করে এসে আমাকে হার্ট করছ। তোমার পানিশমেন্ট আমি জমিয়ে রেখেছি।
মাইরা বোকাচোখে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। আল্লাহ তাকে না পাঠালে সে কিভাবে আসবে? অদ্ভুদ তো! মাইরা অবুঝদের মতো করে বলে,
– আপনি কি পা’গ’ল?
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
– নো।
মাইরা মিটিমিটি হেসে বলে,
– চলুন ডক্টরের কাছে যাই।
ইরফান মাইরার গালে হাত দিয়ে চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
– তোমার সিক লাগছে?
মাইরা বাচ্চাদের মতো করে দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,
– আপনাকে নিয়ে যাব। আপনি পাবনার বাসিন্দা হতে যাচ্ছেন বলে আমার মনে হচ্ছে। এর আগেই আপনার ট্রিটমেন্ট করাতে হবে। বুঝেছেন?
ইরফান চোখমুখ কুঁচকে তাকায়। মাইরা মুখ লুকিয়ে হেসে ইরফানের বন্ধন থেকে ছাড়া পেতে চাইলে ইরফান শক্ত করে মাইরাকে চেপে ধরে চোখ পাকিয়ে বলে,
– স্টুপিট আবার বাঁদরামি করছ?
মাইরা ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে তাকায় ইরফানের দিকে, যেন সে ধোঁয়া তুলসীপাতা। ইরফানের বুকের উপর দু’হাতের কনুই ঠেকিয়ে তার দু’হাতের উপর চিবুক রেখে বলে,
– আমাকে গান শোনাবেন না শিসওয়ালা?
ইরফানের দৃষ্টি শীতল হয়। মৃদু হাসলো মাইরার কথা শুনে। মাইরা উপুড় শুয়ে তার দিকে ফিরে থাকায় মাইরার চুলগুলো সামনের দিকে হেলে আছে। ইরফান দু’হাতে যত্নের সহিত মাইরার চুলগুলো পিছনদিকে নিয়ে রাখলো। মাইরা মুগ্ধ হয় ইরফানের এটুকু যত্নে। ইরফান মাইরার দু’গাল আগলে নিয়ে মাইরার চোখের দিকে তাকিয়ে গায়,
– Aa Tujhe In Bahon Mein Bharke [আয় তোকে এই বুকে জড়িয়ে নিই।]
Ar Bhi Kar Loon Mein kareeb [আরও আপন করে নিব।]
Tu Juda Ho To Lage Hai [তুই দূরে থাকলে মনে হয়]
Aata Jata Har Pal Ajeeb [প্রতিটি মূহুর্ত আজব।]
এটুকু গেয়ে ইরফান থামে। মাইরার দিকে চেয়ে আদুরে স্বরে ডাকে, – বউ?
মাইরার চোখের কোণে পানি। এগিয়ে গিয়ে ইরফানের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বুজে নেয়। দু’হাতে ইরফানের গলা জড়িয়ে ধরে। এরপর ধরা গলায় ডাকে, – শিসওয়ালা?
ইরফান মৃদু হেসে বলে,
– This one’s just for you, Birdflower.
এরপর আবারও গায়,
Tere Bina Na Saans Loo [তোকে ছাড়া নিঃশ্বাস নিব না।]
Tere Bina na Main Jeo [তোকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।]
Tere Bina na Ek Pal Bhi [তোকে ছাড়া এক মুহূর্ত-ও না।]
Reh Saku [থাকতে পারি]
Reh Saku [থাকতে পারি।]
Tu Humsafar [তুই সফরের সঙ্গি]
Tu Humkadam [তুই চলার সঙ্গি]
Tu Humnava Mera [তুই জীবনসঙ্গী আমার।]
মাইরার চোখ থেকে টুপ করে কয়েক ফোঁটা পানি ইরফানের গালে পড়ে। ইরফান মাইরাকে শক্ত করে জড়িয়ে নেয়। এরপর মাইরার গলায় মুখ গুঁজে ভারী গলায় গায়,
– Tu Hi haqeeqat [তুই’ই বাস্তব]
Khawwb Tu [স্বপ্ন তুই।]
Dariya Tu Hi [সমুদ্র তুই-ই]
pyaas Tu [তৃষ্ণা তুই]
Tu hi dil ke Beqarari [তুই’ই হৃদয়ের অশান্তি]
Tu Sukun [তুই শান্তি]
Tu Sukun [তুই শান্তি]
এরপর মাইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে শিস বাজায়। মাইরা ইরফানের গলা জড়িয়ে চোখ বুজে থাকে। ইরফান মাইরার কানের পিঠে চুমু এঁকে ফিসফিসিয়ে বলে,
– মাই হার্ট।
মাইরা চোখজোড়া ভেজা। তার শিসওয়ালার ভালোবাসা নিয়ে ভাবলেই যে তার চোখ ভিজে যায়। এতো আবেগ, এতো ভালোবাসা তার শিসরাজ কোথায় পায়? ইরফানের কাছে গলা ভেজা মনে হয়। মাইরার কানের লতিতে আলতো কা’ম’ড়ে দিয়ে নরম কণ্ঠে বলে,
– কাঁদলে থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোমার।
মাইরা ইরফানের কথা শুনে কান্নামাখা মুখে হেসে ফেলল। ইরফানের এই কথাটা আর এ জীবনে যাবে না। ইরফানের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গলায় নাক ঘষল মাইরা। ইরফান মৃদু হাসলো।
মাইরা নাক টেনে বলে,
– আপনি কোথা থেকে এতো ভালোবাসতে শিখেছেন শিসরাজ? আমাকে শেখাবেন?
মাইরার কথায় ইরফান মৃদু হাসলো। আবেগঘন কণ্ঠে বলে,
– আমার মাইরা পরীর থেকে শিখেছি।
একটু থেমে বলে,
– ও যদি শেখাতে রাজি হয়, দ্যান তোমার সাথে কন্টাক্ট করে জানাবো। ফ্রিতে হবে না কিন্তু। সার্ভিস চার্জ দিতে হবে।
মাইরা ইরফানের কথায় শব্দ করে হেসে ওঠে। মাথা তুলে ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
– আপানকে গ্রামে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম, সেদিন আপনাকে ভুলে ঘুষদাতা বলেছিলাম, ওটা তুলে নিলাম। আপনি আসলে ঘুষগ্রহীতা।
ইরফান মাইরার থুতনিতে বুড়ো আঙুল দ্বারা চাপ দিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– ঘুষ যদি হয়, বউয়ের আদর। তবে সেই ঘুষ হালাল। আর আমি হালাল ঘুষ নিতে বরাবর-ই আগ্রহী।
মাইরা ল’জ্জা পেয়ে ইরফানের বুকে মুখ ঠেকিয়ে রাখলো। ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো।
পরদিন সন্ধ্যার পর পর,
ইরফানের অফিসরুমে শুদ্ধ আর ফাইজ গত এক ঘণ্টা যাবৎ বসে আছে। শুদ্ধ কতশত কথা বললো, ইরফানের কোনো হেলদোল নেই। যেন এই রুমে ইরফান ছাড়া আর কোনো মানুষ নেই। শুদ্ধ ফাইজ দু’জনেই অসহায় চোখে চেয়ে আছে। শুদ্ধ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। মুখটা ছোট্ট করে বলে,
– দেখ ভাই, নাছিম আমাদের ওই যে অন্যরা কিসব দিব্যি বলে, আমরা কসম করেছিলাম। তাহলে আমাদের কোনো দোষ থাকলো বল?
ইরফান তার মতো কাজে ব্যস্ত। ফাইজ চুপচাপ বসে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে।
শুদ্ধ আবারও বলে,
– তুই বুঝতে পারছিস, নাছিম তোকে কি সাংঘাতিক ভ’য় পায়। এইজন্য তোর থেকে দূরে থেকেছে। আমরাও ভ’য় পাই। তোর তো গর্ব হওয়া উচিৎ, সবাই তোকে কি সুন্দর ভ’য় পায়!
ইরফান তার ফোন বের করে রাকিবকে কল করে এখানে আসতে বলে।
কিছুক্ষণের মাঝেই রাকিব ইরফানের অফিসরুমে আসলে ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
– এই দু’টোকে এখান থেকে বের কর, ফাস্ট।
রাকিব একবার শুদ্ধর দিকে তাকায়, আরেকবার ফাইজের দিকে। শুদ্ধকে সে চেনে, ইরফানের ফুফাতো ভাই। তবুও এগিয়ে এসে বলে,
– স্যার আপনারা….
শুদ্ধ তার মুখের সামনে আঙুল দেখিয়ে বলে,
– চুউউউউউউপ।
রাকিব থতমত খেয়ে তার মুখ চেপে ধরে। ইরফান রে’গে বলে,
– রাকিব আমি কি বলেছি?
রাকিব শুদ্ধর দিকে তাকালে শুদ্ধ চোখ পাকিয়ে বলে,
– এ্যাই একদম আমার দিকে এগোবে না। আমি ইরফানের একমাত্র জানের ভাই জানো না?
রাকিব অসহায় চোখে ফাইজের দিকে তাকালে ফাইজ রে’গে বলে,
– আমার দিকে তাকাচ্ছো কেন? আমি কে জানো?
রাকিব ছোট করে বলে,
– স্যারের ফ্রেন্ড।
ফাইজ বিরক্ত হয়ে বলে,
– নাহ, হয়নি। আমি ওর বোনের জামাই। বুঝতে পারছো আমার কত দাম? যাও আমার জন্য দই, মিষ্টি সব নিয়ে এসো। যাও যাও।
ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে ডাকে,
– রাকিব?
রাকিব ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। আমতা আমতা করে বলে,
– জ্বি স্যার!
ইরফান চোখ গরম করে বলে,
– ওদের বের কর।
রাকিব অসহায় চোখে শুদ্ধ আর ফাইজের দিকে তাকালে দেখল দু’জনেই খেয়ে ফেলা চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রাকিবের মুখ কাঁদোকাঁদো হয়ে যায়। ইয়া আল্লাহ! সে এটা কোথায় ফেঁসে গেল। শুদ্ধ রাকিবের দিকে এগিয়ে এসে বলে,
– আমি কিন্তু তোমার চাকরি নট করে দিব রাকিব। এখনও সময় আছে এখান থেকে যাও।
ইরফানের শক্ত কণ্ঠ ভেসে আসে,
– রাকিব?
রাকিব অসহায় মুখ করে বলে,
– স্যার আমার চাকরি চলে গেলে, আমার গার্লফ্রেন্ড আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। প্লিজ স্যার আমাকে আপনারা ছেড়ে দিন।
ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলে,
– হোয়াট?
রাকিব মুখ চেপে ধরে। হায় হায়! এখন ইরফান যদি সেই ঠিকানা চায়, নিশ্চিত বিয়ে ভেঙে দিবে নয়তো পড়িয়ে দিবে। কোনোরকমে বলে,
– না মানে, আমি বলতে চাচ্ছিলাম গার্লফ্রেন্ড হলেও সে ছেড়ে চলে যাবে। আমার তো মেয়েদের সাথে এলার্জি।
অতঃপর গা চুলকে বলে,
– এইতো মেয়ে নাম মুখে নিতেই কেমন এলার্জি চাপ দিল।
ইরফান কড়া ধমক দেয়,
– সাট আপ।
রাকিব ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। শুদ্ধ, ফাইজ রাকিবের অবস্থা দেখে মুখ লুকিয়ে হাসছে। রাকিবকে ইশারায় চলে যেতে বললে বেচারা এক দৌড় দেয়।
শুদ্ধ নিজেকে সামলে বলে,
– নাছিম তোর সাথে দেখা করার জন্যই বাংলাদেশে এসেছে ইরফান। আমাদের ভুল বুঝিস না। তুই মাথা গরম মানুষ। ওর সত্যি সত্যি-ই বিয়ে দিয়ে দিতি। কিন্তু ওর সিচুয়েশন টা একটু বোঝার চেষ্টা কর।
ইরফান জ্বলন্ত চোখে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ ঢোক গিলে। ইরফান বসা থেকে দাঁড়িয়ে তার টেবিলে একটা লাথি মে’রে চিৎকার করে বলে,
– বুঝিনা আমি কারো সিচুয়েশন, বুঝব না কাউকে, সেলফিশ আমি, খারাপ মানুষ আমি, মাথা গরম মানুষ আমি, রোবট আমি। তো এই যন্ত্রমানবের কাছে তোদের কি প্রয়োজন? বের হ এখান থেকে।
কথাটা বলে হনহন করে এগিয়ে এসে শুদ্ধর কলার ধরে টেনে বের করতে নেয়। শুদ্ধ ইরফানকে গায়ের জোরে ধাক্কা দেয়। রে’গে চিল্লিয়ে বলে,
– মাথা গরম মানুষ-ই তো তুই। নিজেই নিজেকে দেখ। কখন থেকে তেল মাখছি,, হচ্ছে না তোর। একটা কথা ঠিক করে শোন, একটু বোঝ। নাহ, তোর তো সবার আগে রা’গ দেখানো চাই। বা’লের কাছে ঠিক করতে আসছি। থাক তুই। একাই থাক। তোর মতো মানুষের একা থাকাই উচিৎ।
কথাগুলো বলে শুদ্ধ মাথা নিচু করে নিল। সে সহজে রা’গে না। কিন্তু রে’গে গেলে মাথা আউলায় যায়। কিছুক্ষণ আগের বলা কথাগুলো ভাবতেই শুদ্ধ দ্রুত মাথা তুলে তাকায়। দেখল ইরফান কেমন ফ্যাকাশে মুখ করে তার দিকে চেয়ে আছে। শুদ্ধ ঢোক গিলল।
ফাইজ এগিয়ে এসে ইরফানকে জড়িয়ে ধরে। ইরফান একপা পিছিয়ে যায়, কিন্তু কিছু বললো না। দৃষ্টি শুদ্ধর পানে। একটু পর দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে দুর্বল কণ্ঠে বলে,
– ফাইজ ছেড়ে দে।
ফাইজ ইরফানকে সাপ্টে ধরেই বলল,
– রা’গ করিস না ভাই। রা’গ তো সবারই আছে বল? শুদ্ধ রে’গে উল্টাপাল্টা বলেছে। আমরা না বুঝে এমন করেছি। নাছিম-ও বুঝতে পারেনি। আমরা তোর, নাছিম দু’জনের ভালোর জন্য-ই এমন করেছি। তখন তোদের মাঝে আরও দ্বন্দ্ব লাগতো। আমরা বন্ধু না বল? বন্ধুদের মাঝে এমন দ্বন্দ্ব ভালো লাগে? এর চেয়ে একটা ডিসটেন্স ছিল, এখন সব ঠিক করে নে ভাই।
ইরফান ফাইজকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। মৃদুস্বরে বলে,
– নাছিমকে আমি যাস্ট বিয়ে দেয়ার জন্য খুঁজতাম, রাইট?
ফাইজ গলা ঝেড়ে বলে,
– হুম।
একটু থেমে আবারও বলে,
– আর নাছিমকে বিয়ে দিলে ওর সাথে সাথে অপর মেয়েটার জীবন-ও নষ্ট হতো। তুই না ভেবে কাজ করে পরে নিজেই আফসোস করতি!
ইরফান ফাইজের শেষের কথাগুলো শুনলো না বোধয়। ছোট্ট একটা উত্তর পেয়ে না চাইতেও একটু হেসে ফেলল। ফাইজ অবাক হয়ে তাকায়। ইরফান ফাইজের কাঁধে হাত রেখে বলে,
– একদম ঠিক ধরেছিস। ওকে আমি যাস্ট বিয়ে দেয়ার জন্য খুঁজছিলাম। ইরফান তার ফ্রেন্ডকে না পেয়ে পা’গ’লের মতো খুঁজেছে যাস্ট বিয়ে দেয়ার জন্য। আমরা আমাদের কাছের মানুষদের খুঁজে না পেলে কষ্ট পাই। কিন্তু ইরফান নেওয়াজ তো যন্ত্র। তাই তার কষ্ট হয়নি, সে তার জেদ ফলাতে তার ফ্রেন্ডকে খুঁজে বেড়াতো।
বাট, আই থিংক, তোদের খুব সুন্দর একটা করে মন আছে। তোদের সাথে কোনো সুন্দর মনের মানুষদের যাবে। আমার মতো রোবটের সাথে থেকে আর টাইম ওয়েস্ট না করাই বেটার। এবার তোরা যেতে পারিস!
ইরফানের কথাগুলো শুনে শুদ্ধ, ফাইজ বিস্ময় চোখে তাকায়। ফাইজ অসহায় কণ্ঠে বলে,
– বিলিভ মি, আমরা এসব ভাবিনি। তুই আমাদের ভুল ভাবছিস!
ইরফান তার চেয়ারে গিয়ে বসে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– প্লিজ এখান থেকে যা ফাইজ। তোর সাথে তো আমার তেমন দেখা হতো না। পারলে তোর পাশের ফ্রেন্ড কে আস্ক করিস, দিনে কতবার আস্ক করতাম আমি নাছিমের কথা। এসব বাদ দে। তোর ফ্রেন্ড বললো তো, আমার মতো মানুষের সাথে থাকা উচিৎ নয়,, এখনও এখানে দাঁড়িয়ে থাকার মানে কি?
মেমোরি লস হয়ে গেলে মনে করিয়ে দে, আর এখান থেকে যেতে বল।
ফাইজ কিছু বলতে নিলে ইরফান আবারও চিৎকারে করে বলে,
– যেতে বলেছি আমি।
ফাইজ থেমে গেল। ইরফান রে’গে গিয়েছে বুঝল। শুদ্ধর কথাগুলো বলা ঠিক হয়নি। ফাইজ বিরক্ত হলো। তারা ইরফানের রা’গ ভাঙাতে এসেছিল। উল্টে শুদ্ধ এসে রা’গ ঝাড়লো। ফাইজ হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে শুদ্ধকে টেনে বাইরে নিয়ে যেতে চায়, শুদ্ধ ঝাড়া মেরে ফাইজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। গটগট পায়ে এগিয়ে এসে ইরফানের সামনে দাঁড়ায়। ভাঙা গলায় বলে,
– এ্যাই তুই এমন পরদের মতো কথা বলছিস কেন? ওর ফ্রেন্ড, ওর ফ্রেন্ড করছিস কেন? আমি তোর দাদার মেয়ের পেটের ছেলে। তোর বাপের বোনের পেট কেটে বের করেছে আমাকে। আর তুই আমাকে অস্বীকার করছিস? তোর সাহস তো কম না?
ইরফান চোখমুখ কুঁচকে তাকালো শুদ্ধর দিকে। ফাইজ মুখ লুকিয়ে হাসছে। এই শা’লা কাঁদছে। তবুও দেখ মুখ থেকে যা বের করবে, সিরিয়াস মোমেন্টে মানুষকে হাসিয়ে ছাড়বে।
ইরফান ফাইজের দিকে চেয়ে রে’গে বলে,
– ফাইজ তোর ফ্রেন্ড কে নিয়ে যা এখান থেকে।
শুদ্ধ তেড়ে যায় ইরফানের দিকে। কলার ধরে টেনে ইরফানকে তোলে। ইরফান রে’গে শুদ্ধকে ধাক্কা দেয়। শুদ্ধ-ও তেড়ে এসে ইরফানকে ধাক্কা দেয়। শুদ্ধ চেঁচিয়ে বলে,
– আর একবার আমাকে অস্বীকার করে দেখ, তোকে ছাড়বো না বলে দিলাম।
ইরফান বিরক্ত চোখে তাকায়। মানে এতো লজিকলেস কথা এ কীভাবে বলে? ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– অস্বীকার কখন করলাম? যা বের হো এখান থেকে।
শুদ্ধ এগিয়ে এসে ইরফানকে সাপ্টে ধরে। ইরফান শুদ্ধকে ঠেলে সরাতে চায়, শুদ্ধ মেয়ে মানুষের মতো পেঁচিয়ে ধরেছে ইরফানকে। ফাইজ সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসল। এক কাপ কফি হলে মন্দ হতো না!
ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– তোর সম্পদ ঠিক রাখতে চাইলে আমার থেকে সরে দাঁড়া।
ইরফানের কথা শুনে ফাইজ শব্দ করে হেসে ফেলল।
শুদ্ধ দ্রুত ইরফানকে ছেড়ে দাঁড়ায়। চোখমুখ কুঁচকে বলে,
– ছিঃ! তোর নজর এতো বাজে হয়ে গিয়েছে!
ইরফান মাথা নিচু করে একটু ঠোঁট বাঁকালো। এক সেকেন্ড এর মাঝে নিজেকে স্বাভাবিক করে শক্ত গলায় বলে,
– এখান থেকে যা।
শুদ্ধ অসহায় কণ্ঠে বলে,
– তুই বললে কান ধরে উঠবস করব, এরকম বিহেভ করিস না ভাই। এসব আমি নিতে পারিনা। আচ্ছা যা মানলাম, আমি এই পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ,, আমার ভুলের শেষ নাই। আর জীবনে এরকম করব না।
ইরফান শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,
– তোরা ভুল করেছিস? ব্যাপারটা ভুলের নয়। আমি ভ্যালুলেস পার্সন, তোরা বারবার এটাই প্রুভ করেছিস। প্লিজ আমায় একা থাকতে দে। ডিস্টার্ব করিস না।
শুদ্ধ অসহায় চোখ তাকায়। ইরফান আবারও বলে,
– তাছাড়া কিছুক্ষণ আগেই তো বললি, আমার মতো মানুষের সাথে থাকা উচিৎ না। আমিও চাইনা এতো ভালো মানুষেরা আমার মতো মানুষের সাথে থাকুক।
শুদ্ধ আবারও এসে ইরফানকে জাপ্টে ধরে। ইরফানের পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,
– তুই আমার সোনা ভাই। আমি ওটা রে’গে বলেছি।
তুই আমাদের কাছে ভ্যালুলেস না। আমরা বুঝেছি, তুই নাছিমের জন্য কষ্ট পেয়েছিস,, কিন্তু তখন হঠাৎ নাছিমের খোঁজ পেলে তুই অস্বীকার করলেও তোদের মাঝে বিরাট ঝামেলা হতো।
এরপর ইরফানকে ছেড়ে ইরফানের দু’হাত ধরে বলে,
– তুই একটু ভাব তো,নাছিমের সাথে আমাদের আজকের পরিচয়? আমরা ছোটবেলার ফ্রেন্ড না? বড়সড় ঝামেলা হলে সেটা সলভ করতে আরও ঝামেলা হয়। এর জন্য ডিসটেন্স এর দরকার ছিল। নাছিম এর দিক টা একটু বোঝ।
ইরফান শুদ্ধর হাত ঝাড়া মেরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
– ও আমার বউকে নিয়ে ভাববে, আর আমি ওর দিক বুঝব? আমার বার্ডফ্লাওয়ারকে ও ফিল করবে, আর আমি চুপ থাকবো? আমার বার্ডফ্লাওয়ারে জন্য ওর চোখ ভিজবে, আমি তা মেনে নিব? নো। আমার বার্ডফ্লাওয়ার যাস্ট আমার ফিলিংসে থাকবে।
ও যাস্ট আমার কল্পনায় থাকবে। ওকে নিয়ে ভাবার রাইটস কারো নেই।
নাছিমকে আমি খু’ন করে ফেলব।
শুদ্ধ কি বলবে বুঝল না। সে বুঝল, ইরফানের এমন হয়েছে, না তো মানতে পারছে, নাছিম মাইরাকে নিয়ে ভাবে এটা। আর না তো মানতে পারছে, নাছিমের সাথে দূরত্ব। অথৈ জলে হাবুডুবু খাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে ইরফানের।
কিন্তু এ যে নাছিমকে বিয়ের জন্য ১০% খুঁজতো, আর ৯০% দেবদাস হয়ে খুঁজতো। এটা তো এ স্বীকার করবে না। তখনও করতো না। পারে শুধু ঝামেলা করতে। নিজেই নিজেকে চেনে না। শুদ্ধ গলা ঝেড়ে বলে,
– ৯০% দেবদাস হয়েই তো খুঁজতি! এখন অন্তত স্বীকার কর।
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– আমার এতো ফা’ল’তু টাইম নেই, ওর জন্য ভেবে টাইম ওয়েস্ট করব।
শুদ্ধ ফাইজের দিকে তাকালো। ফাইজ মিটিমিটি হাসছে। শুদ্ধ-ও হাসলো। এরপর কিছু একটা ভেবে মনে মনে হেসে বলে,
– নাছিম এক্সিডেন্ট করেছে।
কথাটা শুনেই ইরফান বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। ভীত স্বরে বলে,
– হোয়াট? কিভাবে? কোথায় ও?
শুদ্ধ সাথে সাথে বলে,
– মিথ্যা বললাম।
ইরফান রে’গে যায়। এগিয়ে এসে শুদ্ধর গালে ঠাস করে থা’প্প’ড় মেরে দেয়। শুদ্ধ গালে হাত দিয়ে অসহায় কণ্ঠে করে,
– শা’লা বউয়ের কাছে দাঁত ফেলার ডায়লগ দিয়ে, আমার দাঁত প্রাকটিক্যালি ফেলার চিন্তা করছিস?
ইরফান রে’গে শুদ্ধর কলার ধরে বলে,
– তুই মানুষ হবি না?
শুদ্ধ অসহায় কণ্ঠে বলে,
– মানুষ-ই তো আমি। তুই অস্বীকার করছিস, নাছিমের জন্য তোর ভাবার টাইম নেই। তাই প্রুভ দিলাম। প্রুভ পেয়ে আবার আমার উপর-ই ঝাল মেটাচ্ছিস!
ইরফান চরম বিরক্ত হয়ে তার চেয়ারে গিয়ে বসে চোখ বুজল। শুদ্ধ হাসলো। গালে হাত বুলিয়ে বিড়বিড় করল,
– ব্যাপার না। ভেবেছিল আরও থা’প্প’ড় খেতে হবে। একটা দিয়েই বেচারা হাঁপিয়ে গিয়েছে মনে হচ্ছে।
অতঃপর শুদ্ধ গলা ঝেড়ে ইরফানের উদ্দেশ্যে বলে,
– আচ্ছা যাই। কে যেন বলতো, এসব ভুলে যাওয়া কে সে হেইট করে। কিন্তু এখন তো ভুলে যাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আমাদের আর চেনে না। লাগবে না। ফাইজ গেলাম আমি। আর জীবনেও আসবো না। কারো বাড়িতেও আর যাবো না।
কথাগুলো বলে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। ফাইজ সোফা থেকে উঠলো না। সে মিটিমিটি হাসছে। ইরফান চোখ খুলে শুদ্ধকে বেরিয়ে যেতে দেখে বিরক্ত হলো। টেবিলের উপর থেকে পেপার ওয়েট নিয়ে শুদ্ধর পিঠে ছুঁড়ে মারে। শুদ্ধ পিঠে চিনচিন ব্য’থা অনুভব করে পিছু ফিরে ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
– এ্যাই বে’য়া’দ’ব তুই আমাকে মারলি কেন?
ইরফান ফোন স্ক্রোল করতে করতে গম্ভীর গলায় বলে,
– খাবার অর্ডার করেছি। না খেয়ে যাওয়া যাবে না।
শুদ্ধ হাসলো। এগিয়ে এসে ইরফানের সামনে বসে বলে,
– আমি একটু বেশিই দয়ালু, তাই তোর কথা ফেলতে পারলাম না।
নাছিম তার মায়ের সাথে একটি বাড়িতে এসেছে। নাছিম আর তার মা মূলত আজ সকালে গ্রামে এসেছে। শুদ্ধ, মাইরার গ্রামে তাদের বেশ কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন আছে। তাদের বাড়িতে কিছুদিন থাকবে। নাছিম আর তার মা আবারও রাশিয়া চলে যাবে। এজন্য সবার সাথে দেখা করতে এসেছে।
আপাতত নাছিম তার মায়ের সাথে যে বাড়িতে বসে আছে এই বাড়ি কার সে জানেনা। তার মা শুধু বলল, তার পরিচিত, সাথে তাকেও টেনে এনেছে। আশেপাশে তেমন কেউ নেই। দু’জন মহিলা নাছিমের মায়ের সাথে কথা বলছে। নাছিমের ফোনে কল আসায় সে তার মাকে বলে একটু সাইডে গিয়ে কল রিসিভ করে। বিজনেস রিলেটেড ছিল। কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দেয়। এরপর আবারও তার মায়ের দিকে এগোতে নিলে সামনে একটি মেয়েকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। নাছিম ভ্রু কুঁচকে তাকায়। মেয়েটির বয়স ১৪-১৫ বছর ঠেকল তার কাছে। মেয়েটি ফিসফিসিয়ে বলে,
– ভাইয়া একটু বাইরে আসবেন?
নাছিম অবাক হয়ে বলে,
– কেন? আর কে তুমি?
মেয়েটি আবারও বলে,
– ভাইয়া প্লিজ একটু আসুন। আমার আপু আপনার সাথে কথা বলবে।
– তোমার আপু কে? আমি এখানে কাউকে চিনিনা।
মেয়েটি আবারও অনুরোধের সুরে বলে,
– ভাইয়া প্লিজ আসুন।
নাছিম যদিও বিরক্ত হলো। তবে বাইরে বেরিয়ে এলো মেয়েটির পিছু পিছু। মেয়েটি নাছিমকে বাড়ির একটু পিছনদিকে দাঁড় করিয়ে কোথায় যেন দৌড়ে গেল।
রাত তখন ৯ টা পেরিয়েছে। হঠাৎ-ই পিছন থেকে মেয়ে কণ্ঠে একজনের সালাম ভেসে আসে।
– আসসালামু-আলাইকুম ভাইয়া।
নাছিম পিছু ফিরে তাকায়। সালাম এর উত্তর নেয়। অবাক হয়, মেয়েটিকে দেখে। গ্রাম হওয়ায় আশেপাশে বেশ অন্ধকার,, তবে কোথাও কোথাও আলোর ছিঁটেফোঁটা আছে, সেখান থেকেই মেয়েটির মুখে আলো এসে পড়েছে। গোলগাল ফর্সা মেয়েটি। নাছিমের মনে হলো মেয়েটি অনেক কেঁদেছে। যে কেউ দেখলে বুঝব, মেয়েটি কেঁদেকেটে চোখমুখ পুরো ফুলিয়ে ফেলেছে। নাছিম সেসব রেখে মৃদুস্বরে বলে,
– তুমি আমাকে ডেকেছ? তুমি বলার জন্য স্যরি! বাট তোমাকে আমার চেয়ে অনেক ছোট মনে হয়েছে তাই বললাম। কি বলবে দ্রুত বলো।
সামিয়া একবার নাছিমের দিকে তাকিয়েছিল। আবারও মাথা নিচু করে দু’হাত তুলে অনুনয়ের সুরে বলে,
– ভাইয়া প্লিজ! এই বিয়েটা ভেঙে দিন।
নাছিম অদ্ভুদভাবে বলে,
– মানে?
সামিয়া কান্নামাখা গলায় বলে,
– আপনি চাইলে আমি আপনার পায়ে ধরব, তবুও আপনি এই বিয়েটা ভেঙে দিন। আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না।
নাছিম হতভম্ব চোখে সামিয়ার দিকে চেয়ে আছে। সামিয়ার সব কথা তার মাথার উপর দিয়ে গেল। তার বিয়ে? কবে? কখন? এই মেয়েই বা কে? অবাক হয়ে বলে,
– বুঝলাম না। এসব ফা’ল’তু কথা বলছ কেন? কার বিয়ে? কিসের বিয়ে?
সামিয়া নিজেকে সামলে বলে,
– আমার আর আপনার বিয়ে দিয়ে দিবে। কাজী সাহেব কে ডাকতে গিয়েছে আমার মামা। দয়া করে আপনি না করুন ভাইয়া।
নাছিম এবার বোধয় বুঝলো, তার মা ঠিকঠাক কেন কিছু বলছিল না তাকে। এতোক্ষণ বুঝতে পারছিল না, এই অপরিচিত একটা বাড়িতে তাকে টেনে আনলো কেন! রা’গে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় তার। বিড়বিড় করল,
– কাজটা ঠিক করলে না মা।
সামিয়া নাছিমকে চুপ দেখে অসহায় কণ্ঠে বলে,
– ভাইয়া কিছু বলছেন না যে?
নাছিম চোখ বুজে লম্বা শ্বাস টানলো। শক্ত গলায় বলে,
– ডোন্ট ওয়ারি। বিয়ে হবে না।
কথাটা বলে আর এক সেকেন্ড-ও এখানে দাঁড়ালো না নাছিম।
সামিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। সে আজকেই একটু গ্রামে তার মামাদের সাথে দেখা করতে এসেছিল। অথচ তার মামারা তাকে না জানিয়ে কিভাবে বিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করছিল। সামিয়া ঠিক করল, সে কালকে সকালের আলো ফুটতেই এই গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে। আর আসবে না এখানে।
মলিন মুখে একবার দূর অজানায় তাকালো। তার বিধ্বস্ত মন, যেখানে সে শুদ্ধকে নিয়ে একটি স্বপ্নের ঘর সাজিয়েছিল। তার সেই স্বপ্নের ঘর আজও অ’ক্ষ’ত আছে। শুধু শুদ্ধ সাহেব অন্যের হয়ে গিয়েছে। আর সামিয়ার মন কল্পনাতে আটকে গিয়েছে।
দু’চোখের পাতা বেয়ে অবাধ্য অশ্রু গড়ালো। সযত্নে তা মুছে-ও নিল মেয়েটি। মুছে দেয়ার মানুষ তো শুধু তার কল্পনায়।
নাছিম তার মাকে কল করে জানিয়েছে, তার কাজ আছে। এরপর তার মাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দেয়। অন্যের বাড়িতে সিনক্রিয়েট করতে চায়না বলে আর সেখানে যায়-ই নি।
নাছিম একটি খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।জোছনার রাত। মৃদু বাতাস তার গা ছুঁয়ে দেয়। চাঁদের আলো এখানে ওখানে ছিটিয়ে পড়েছে। নাছিম মাঠের এক কোণায় বেশ বড়সড় এক গাছের সাথে ডান হাত ঠেকিয়ে মাথা নিচু করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
মনে পড়ল, সেই দিনটির কথা, যেদিন মাইরাকে নাছিম প্রথম দেখেছিল।
একটি ছোট্ট মিষ্টি মেয়ে স্কুল ড্রেস পড়ে, কাঁধে একটি ছোট ব্যাগ ঝুলিয়ে বোধয় বাড়ি ফিরছিল। নাছিমের মনে হয়েছিল, একটি আস্ত পুতুল তার সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। নাছিম অবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে ছিল। ভালোবেসে নাম দিয়েছিল বার্বিডল। কতশত স্বপ্ন বুনেছিল সেই বার্বিডলকে নিয়ে,, বিয়ে করবে বলে মনের ঘরে কত আয়োজন করেছিল,, অথচ আজ সেই বিয়ে শব্দটায় কত-ই না তিক্ততা খুঁজে পায় সে। তাকে স্বাভাবিক করতে গিয়ে আর কত কষ্ট দিবে সবাই মিলে?
চোখজোড়া ঝাপসা হয়ে আসে নাছিমের। দূর অজানায় দৃষ্টি রেখে বিড়বিড় করল,
– বার্বিডলকে নিয়ে যতটা নিখুঁতভাবে স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম, সব স্বপ্ন ততটাই নিখুঁতভাবে অপূর্ণ রয়ে গিয়েছে।
রাত তখন প্রায় ১১ টা। ইরফান বাড়ি ফিরেছে। আসার সময় তার মাকে মাইরার কথা জিজ্ঞেস করলে তার মা জানায় মাইরা না খেয়েই ঘুমিয়েছে। ইরফান মাইরার জন্য তার মাকে খাবার দিতে বললে, তিনি মাইরার জন্য একটি প্লেটে খাবার বেড়ে ইরফানের হাতে দেয়। ভদ্রমহিলা মাইরার প্রতি ছেলের যত্নে ভীষণ আপ্লূত হয়। সে মা হিসেবে চাইতো তার ছেলে মাইরাকে মেনে নিক। একটু ভালোভাবে সংসার করুক। কিন্তু তিনি যতটা চাইতেন, ইরফান তার ভাবনার চেয়েও অনেক উপরে।
ইরফান ঘরে এসে মাইরাকে এলোমেলো ভাবে ঘুমাতে দেখল। হাতের প্লেট বেড সাইড টেবিলের উপর রাখে। এগিয়ে এসে মাইরার গলা চেক করল, ঘেমেছে না-কি, ঠাণ্ডা লাগছে। স্বাভাবিক দেখে সে ফ্রেশ হতে গেল। প্রায় মিনিট দশেক সময় নিয়ে সাওয়ার শেষ করে। একটি কালো গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরল। গায়ে কিছু জড়ালো না। এগিয়ে এসে এক পা মাটিতে রেখে আরেক পা ভাঁজ করে মাইরার পাশে বসে। ডান হাত বাড়িয়ে মাইরার গালে হাত দিয়ে মৃদুস্বরে ডাকে,
– বার্ডফ্লাওয়ার?
মাইরার কোনো সাড়া না পেয়ে ইরফান এগিয়ে এসে মাইরাকে দু’হাতে আগলে নিয়ে ঘুমন্ত মাইরাকে বসিয়ে তার সাথে জড়িয়ে ধরে। মাইরা ঘুমের মাঝে নড়েচড়ে আবারও ইরফানের বুকে আরাম করে ঘুমায়। ইরফান মাইরার মুখ উঁচু করল। মাইরার শুকনো ঠোঁটজোড়ায় একটা চুমু খেয়ে আলতো কা’ম’ড় দেয়।
মাইরা বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে নেয়। ঘুম ভেঙেছে বোধয়। বিরক্তি ভরা ঘুমুঘুমু চোখ মেলে তাকায়। মুখের সামনে ইরফানকে দেখে সোজা হয়ে বসে। ইরফান কিছু বলল না, মাইরাকে ছেড়ে দেয়। মাইরা তার ডান হাত ঠোঁটে বুলিয়ে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে,
– মনে হচ্ছে আমাকে তেলাপোকা কা’ম’ড়ে’ছে।
ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। অতঃপর মুখাবয়ব স্বাভাবিক করে মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
– স্টুপিট, আমার এখানে তেলাপোকা কোথা থেকে আসবে?
কথাটা বলে বেডসাইড টেবিলের উপর থেকে ভাতের প্লেট নেয়।
মাইরা দু’হাতে চোখ ডলে ইরফানের দিকে একটু এগিয়ে যায়। এরপর তার দু’হাতে ইরফানের দু’গাল ধরে ইরফানের মুখ তার দিকে ফিরিয়ে বলে,
– আমি কি বলেছি, ওটা আসল তেলাপোকা? ওটা হলো নকল তেলাপোকা। সে দেখতে মূলত ইংরেজ সাদা বিলাইদের মতো। আর স্বভাব তেলাপোকাদের মতো কুটুস কুটুস করে কা’ম’ড়া’নো।
ইরফান অদ্ভুদভাবে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা কথাগুলো বলে ইরফানের গাল ছেড়ে দেয়। এরপর ইরফানের বাহুতে কপাল ঠেকিয়ে মিটিমিটি হাসে। ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
– বাঁদরামি করলে, পুরো বডিতে ট্যাটু বসানো স্টার্ট করব।
মাইরা কিছু বললো না। ইরফান ভাত মাখিয়ে মাইরার সামনে এক লোকমা ধরলে মাইরা অবাক হয়ে বলে,
– আপনি খাবেন না?
ইরফান মাইরার মুখে খাবার তুলে দিয়ে ছোট করে বলে,
– শুদ্ধ আর ফাইজ এর সাথে খেয়েছি।
মাইরা মুখের ভাত চিবোতে চিবোতে একটু মন খারাপ করে বলে,
– ওহ।
ইরফান বা হাতে মাইরাকে তার কোলে বসিয়ে দেয়। এরপর মুখ এগিয়ে নিয়ে মাইরার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। মানে সে খাচ্ছে। আর এই লোক কি শুরু করল! ইরফান মাইরার মুখ থেকে একটা মাংস তার মুখে নিয়ে মাইরাকে ছেড়ে দেয়। মাইরা কপাল চাপড়ায়। এই লোকটা আসলেই এক নাম্বার পা’গ’ল।
ইরফান মাইরার মুখ তার দিকে ফিরিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– স্যরি বউ! আর কখনো বাইরে খাবো না।
মাইরা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় ইরফানের দিকে। মাইরা ইরফানের জন্য-ই না খেয়ে ঘুমিয়েছিল। ইরফানের সাথে খাবে বলে। ইরফান খেয়ে এসেছে শুনে একটু মন খারাপ হয়েছিল। ইরফান সব বুঝে গেল? মাইরা বলার মতো কিছু পায় না। ইরফান ধীরে ধীরে মাইরাকে সবটুকু ভাত খাইয়ে দেয় নিজ হাতে।
এরপর হাত ধুয়ে এসে মাইরার পাশে বসলে, মাইরা এগিয়ে এসে ইরফানকে জড়িয়ে ধরে। ইরফান মৃদু হাসলো। দু’হাতে মাইরাকে জড়িয়ে নেয়। মাইরা ইরফানের উদাম বুকে কয়েকবার নাক ঘষে। এরপর মাথা তুলে ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
– একটা কথা বলি?
ইরফান ছোট করে বলে,
– বলো।
মাইরা কেমন করে যেন বলে,
– আপনি আমাকে আগে মা’র’তেন কেন শিসরাজ?
ইরফান অসহায় চোখে তাকালো। মাইরা সেই আগের ইরফানের সাথে এই ইরফানকে মেলাতে পারেনা, এজন্যই এমন প্রশ্ন করেছে। কথাটা বলে মাইরা চোখ বুজে নেয়। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বিড়বিড়িয়ে বলে,
– আপনি এখন আমাকে মা’রেন না কেন শিসওয়ালা?
ইরফান মাইরাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিল নিজের সাথে। মাইরার কাঁধে চুমু এঁকে বলে,
– স্যরি বার্ডফ্লাওয়ার! আমি রা’গ কন্ট্রোল করতে পারতাম না। অ্যান্ড চঞ্চল মেয়েদের আমি টলারেট করতে পারতাম না। বাট, ইউ আর আ ম্যাজিক্যাল গার্ল। বার্ডফ্লাওয়ারের সংস্পর্শ আমার রা’গ কমিয়ে দিয়েছে। আমার অপছন্দের মানুষকে টলারেট করতে শিখিয়েছে।
তুমি আমাকে পানিশমেন্ট দিতে চাও বার্ডফ্লাওয়ার?
কথাগুলো বলে ইরফান মাইরার দিকে তাকালে দেখল মাইরা ঘুমিয়ে গিয়েছে। একটু পর মনে হলো মাইরা কি যেন বিড়বিড় করছে। ইরফান কান পাতলে এলোমেলো কণ্ঠে শুনতে পায়,
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৭৭
– শিসরাজকে পানিশমেন্ট দিতে চাই।
ইরফান মাইরার কথায় হেসে ফেলল। মাইরার ঘুমের মাঝে কথা বলার হ্যাবিট টা অনেকদিন পর দেখল। মাইরার এই হ্যাবিট টা ইরফানের বেশ ভালো লাগে। মাইরাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– দিয়ে দিব পানিশমেন্ট।