আযদাহা সিজন ২ পর্ব ২১
সাবিলা সাবি
ক্যাম্পাসের আকাশ আজ মেঘাচ্ছন্ন, হালকা ঠান্ডা বাতাস বইছে। স্টেলার একাডেমির চত্বরে স্টুডেন্টরা যার যার মতো ব্যস্ত—কেউ ক্লাস থেকে বেরিয়ে গুছিয়ে নিচ্ছে নোটস, কেউ ক্যান্টিনে গিয়ে খাবার অর্ডার দিচ্ছে, আবার কেউ বন্ধুদের সঙ্গে গল্পে মেতে আছে।
এথিরিয়নের পা দুটো যেন আজ একটু ভারী লাগছে। কালকের ঘটনাটা বারবার তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এতক্ষণে নিশ্চিত হয়েছে যে সিলভা জুসের বোতলে কিছু লেখেনি, ওটা লিখেছিল অন্য একজন স্টুডেন্ট। অথচ, সে কাল সবার সামনে সিলভাকে অপমান করেছে—তাও এমনভাবে, যা সে নিজেও কল্পনা করেনি।
এথিরিয়ন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সে কারও কাছে সহজে দুঃখপ্রকাশ করে না, কিন্তু আজ তার ভেতরে অস্বস্তি কাজ করছে। সিলভা আজ পরীক্ষা দিচ্ছিল, এতক্ষণে হয়তো বের হয়ে গেছে। তাই আর দেরি না করে সে ক্যান্টিনের দিকে পা বাড়াল। সেখানে না পেলে হয়তো লাইব্রেরি বা গার্ডেনের দিকে খুঁজতে যেতে হবে।
ক্যান্টিনের দরজায় দাঁড়িয়ে এথিরিয়ন একবার চারপাশে তাকালো। আজ ক্যান্টিনটা কেমন যেনো অস্বাভাবিক রকমের ফাঁকা। সাধারণত এই সময়টায় এখানে জায়গা পাওয়াই মুশকিল হয়, কিন্তু আজ যেনো সবকিছু থমকে গেছে।
ঠিক তখনই ক্যাম্পাসের পেছনের দিক থেকে উচ্ছ্বাস ভরা কোলাহল ভেসে এলো। এথিরিয়নের কপালের ভাঁজ গভীর হলো। কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে গেলো সেই দিকেই।
জমায়েতের মধ্যে দিয়ে রাস্তা করে সামনের দিকে গিয়ে যা দেখলো, তা দেখে তার চোখে এক মুহূর্তের জন্য বিস্ময়ের ছায়া নেমে এলো।
একজন স্টুডেন্ট হাঁটু গেড়ে বসে আছে, হাতে লাল গোলাপের তোড়া, আর তার সামনে দাঁড়িয়ে সিলভা!
সিলভার মুখে বিস্ময়—সে যেনো কিছু বুঝতে পারছে না, কিছু বলতেও পারছে না। আর আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রত্যেকটা স্টুডেন্ট একসঙ্গে উচ্ছ্বাসে চিৎকার করছে,
“সে ইয়েস!!”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
চারপাশের উল্লাসের শব্দে সিলভা একটু বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। সে কি করবে বুঝতে পারছিল না। ঠিক তখনই তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক বান্ধবী আস্তে করে তার কানের কাছে ফিসফিস করে কিছু বলল।
সিলভা এক মুহূর্তের জন্য স্থির হয়ে গেল। তারপর ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে ছেলেটার হাত থেকে ফুলের তোড়াটা নিয়ে নিলো।
চারপাশে উল্লাস আরও বেড়ে গেল! সবাই করতালিতে ফেটে পড়লো।
ছেলেটা উঠে দাঁড়িয়ে একগাল হাসি দিয়ে মাইক্রোফোনটা শক্ত করে ধরলো, তারপর ঘোষণা দিলো—
“আমি ক্যালিক্স অ্যালথর, ন্যোভারা রাজ্যের প্রতিনিধি! আজ এতগুলো মানুষের সামনে আমি আমার মনের কথা প্রকাশ করতে চাই…”
চারপাশে উল্লাসের শব্দে বাতাস কেঁপে উঠলো, স্টুডেন্টরা উত্তেজনায় সিলভার প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষা করছে।
এথিরিয়নের চোখ ধীরে ধীরে সংকীর্ণ হয়ে এলো।
ছেলেটা সামনের দিকে এক ধাপ এগিয়ে এলো। চোখে গভীর এক আকুতি, কণ্ঠে একরাশ সত্যতা।
“আমি সিলভাকে অনেকদিন আগে একটা অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম। সেদিন প্রথম ওকে ভালো লেগেছিল। তবে পরে আর ওকে খুঁজে পাইনি।”
একটু থেমে শ্বাস নিলো, তারপর আবার বললো—
“কিন্তু দুদিন আগে যখন প্রথম ওকে আমাদের ভার্সিটিতে দেখলাম, আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। এটাই বোধহয় নিয়তি… কেউ কাউকে মন থেকে চাইলে, তার সাথে দ্বিতীয়বার দেখা হয়।”
ছেলেটা এবার সোজা সিলভার চোখে তাকালো, একরাশ প্রত্যাশা নিয়ে বললো—
“আমি কি একটা চান্স পেতে পারি?”
সিলভা তখন কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলো, তার চোখে যেনো এক ধরনের গভীর চিন্তা। তারপর সে ধীরে ধীরে সামনে তাকিয়ে, গায়েসকে উদ্দেশ্য করে বললো—
“গায়েস, আমি এই মুহূর্তে সরাসরি ‘ইয়েস’ বলতে পারছি না, তবে হ্যাঁ, আমি রিজেক্টও করছিনা। আমি ক্যালিক্সকে একটা চান্স দিচ্ছি। আসলে, আমি চাইলে ও পারবো না ক্যালিক্সকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করতে, কারণ এটা খুব হার্টফেলিং।”
একটু থেমে, গায়েসের দিকে তাকিয়ে সে বললো—
“কোনোদিন যদি আমাদের মন থেকে কেউ আমাদের চায়, আর আমরা তাদের সরাসরি রিজেক্ট করি, সেটা কতটা কষ্টকর হতে পারে, আমি জানি। তাই, আমি ক্যালিক্সকে একটা চান্স দিলাম। কেননা আমিও একদিন তার জায়গায় ছিলাম, আমিও জানি এটা কতোটা কষ্টের হতে পারে।”
সিলভার মুখে কোনো রকম কঠিনতা ছিল না, তার কথায় এক ধরনের সহানুভূতি আর বোঝার চেষ্টার গভীরতা ছিল, যেন সে তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সে অনুভূতির মূল্য জানে।
এথিরিয়ন মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “যাক বাবা, তাহলে সিলভা আর আমাকে ডিস্টার্ব করবেনা, বাঁচা গেলো।”
এটা ভেবে কিছুটা শান্তি পেয়ে, সে দ্রুত পা বাড়ায়, যেন তার মনটা কিছুটা হালকা হয়। সে জানত, এখন আর সিলভার থেকে কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে না। তার অস্থিরতা কিছুটা হলেও কমে গেছে। তবে, তার মনে একটি অদ্ভুত অনুভূতি ছিল—এক ধরনের অস্বস্তি, যে অনুভূতিটা সহজে গায়েব হতে চাচ্ছে না।
থারিনিয়াস আর আলবিরা প্রাসাদের ছাদে বসে ছিল, সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় এক পিচ্ছিল বাতাসের মধ্যে তারা নিজেদের কথা বলছিল। আলবিরার মুখে হঠাৎ একটি প্রশ্ন উঠে এল, “আচ্ছা থারিনিয়াস, তোমার কি মনে হয়, ভেনাসে এখনো এই নিয়ম আছে সফটওয়্যার ম্যাচের মাধ্যমে বিয়ে?”
থারিনিয়াস কিছুক্ষণ চুপ থেকে আলবিরার দিকে তাকিয়ে বললো, “হঠাৎ এই কথা কেনো, আলবিরা?”
আলবিরা একটু চুপ করে থেকে, চোখে এক ধরনের গভীর চিন্তা নিয়ে বললো, “আচ্ছা, প্রিন্স তো এই রুলস না মেনে বিয়ে করে নিলো। তাহলে আমরা কেনো পারছিনা?”
থারিনিয়াস তার কথার গভীরতা বুঝতে পেরে, এক মুহূর্তের জন্য থেমে গিয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে আলবিরার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো, “আমরাও পারবো। প্রিন্স আগে ফিওনাকে নিয়ে ভেনাস ফিরুক।তারপর তারা এখানকার নিয়মে যেটা প্রকৃত নিয়ম,সে অনুযায়ী বিয়ে করুক। তারপর আমরাও করবো।”
আলবিরা এই কথা শুনে তার মুখে এক হৃদয়গ্রাহী হাসি ফুটে উঠলো। সেখানেই, ছাদে দাঁড়িয়ে, সে একলাফে থারিনিয়াসকে জড়িয়ে ধরলো। তার মনে ভরে ওঠলো অপ্রতিরোধ্য আনন্দ আর আশায় বুক বাঁধলো।
থারিনিয়াস তখন আলবিরার কানে কানে, মৃদু স্বরে বললো, “আমি নিজেই বলতাম সঠিক সময়ে। আগে প্রিন্সের সব ঝামেলা মিটলেই আমি চেয়েছিলাম সবার সামনে তোমাকে প্রপোজ করবো।”
আলবিরা তার কথা শুনে এক মুহূর্ত স্তম্ভিত হয়ে গেলো, তারপর ধীরে ধীরে থারিনিয়াসের চোখের দিকে তাকালো। সেই উজ্জ্বল বাদামী চোখগুলো এক অদৃশ্য ভাষায় কিছু বলছিল। তার মধ্যে এক ধরনের গভীর অনুভূতি ছিল, পুরো ভেনাস থেমে গিয়েছিল সে শুধু থারিনিয়াসের চোখে নিজের প্রতিটি অনুভূতি খুঁজে পেয়েছিল।
পৃথিবী: পৃথিবীতে চব্বিশ ঘন্টায় একদিন আর ভেনাসে ১০ ঘন্টায় একদিন,তাই ভেনাসের দুদিন পৃথিবীর একদিনের সমান।
পৃথিবীর এক ব্যস্ত শহর চীন। সিল্কি টেবিলের সামনে বসে থাকা জ্যাসপার একটু উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে।প্রায় আধাঘণ্টা হয়ে গেছে,কিন্তু ফিওনা আসেনি। তার চেহারা একটু বদলে গেছে,চোখে ছায়া জমে গেছে।জ্যাসপার উঠে দাঁড়িয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বললো, “সরি! আমার ওয়াইফ এখনো আসছে না।আমি তাকে নিয়ে আসি।”
কিন্তু, তার পা বাড়ানোর আগেই একজন ক্লায়েন্ট দ্রুত এগিয়ে এসে তার পথ আটকে দিয়ে বললো, “আরে মিস্টার আলভিন অরিজিন,একটু অপেক্ষা করুন। মিসেস অরিজিন বোধহয় অফিস ঘুরে দেখছে।”
জ্যাসপার এই মুহূর্তে খুবই অবাক হয়ে গেলো।
জ্যাসপারের আসল নাম “জ্যাসপার” নয়, বরং পৃথিবীতে সে “আলভিন” নামে পরিচিত। তার ব্যবসার ক্লায়েন্টরা জানে না যে,সে আসলে একজন ভেনাসের ড্রাগন, তবে তারা জানে ভেনাসের ড্রাগন রাজা ড্রাকোনিসের পুত্র প্রিন্স ড্রাগনের সাথে তার সম্পর্ক বেশ গভীর।তারা জানে সেই ড্রাগনের মাধ্যমে আলভিন পৃথিবীতে অমূল্য পাথর নিয়ে আসে,আর তার মাধ্যমেই এই পাথর পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
এই তথ্য ছাড়া, ক্লায়েন্টরা জানে না তার আসল পরিচয় সে নিজেই যে সেই ড্রাগন প্রিন্স।তারা শুধুমাত্র তার বিজ্ঞানের অবদান আর আস্থা ও সম্পর্কের গোপন দিকগুলোই জানে। তবে এখন, ফিওনার আসতে দেরি হওয়া তার মনকে অস্থির করে তুলছে,যেন কিছু একটা মন্দ ঘটতে চলেছে।
হঠাৎ করেই একটা চিৎকারের শব্দ ভেসে আসে। ফিওনার চিৎকার,তার চিৎকারে জ্যাসপার এক মুহূর্তের জন্য হতভম্ব হয়ে গেলো। “ফিওনা!” সে বিস্মিত হয়ে বলে, কিন্তু একটুও দেরি না করেই সেদিকে ছুটে যায়।
তবে, ঠিক তখনই ওপর থেকে একটা কাঁচের বক্স জ্যাসপারের ওপর পড়ে। সে আছড়ে পড়ে, কাঁচের বক্সে আটকে যায়। এক সেকেন্ডে পুরো পরিস্থিতি বদলে যায়। জ্যাসপার চিৎকার করে কাঁচের মধ্যে ঘুষি মারতে শুরু করে, যেন বক্সটা ভেঙে বের হয়ে আসবে।
“কি হচ্ছে এটা?” সে গর্জন করে বলে, তার শরীর তীব্রভাবে কাঁপছে। কাঁচের বক্সে আটকে থাকা অবস্থায় তার চোখে এক ধরনের বিভ্রান্তি আর ক্রোধ ছিল। তাকে এমনভাবে বন্দি করা হয়েছে,তাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে।
জ্যাসপার কাঁচের বক্সে আটকে পড়ে চিৎকার করতে লাগলো, তার কণ্ঠে শত্রুর প্রতি এক অবর্ণনীয় ক্রোধ ছিল। সে বুঝতে পারলো যে, এই বক্সটি বিশেষ ধরনের ক্যামিকেল দ্বারা তৈরি করা হয়েছে যা ড্রাগনদের জন্য নির্দিষ্টভাবে বানানো। তার শরীরের প্রতিটি কোষে টান অনুভব হচ্ছিল, কিছু অজানা শক্তি তার শক্তি কমিয়ে দিচ্ছিল।এমনকি কাঁচের বক্সে আটকে থাকলেও সে বুঝতে পারলো, তাকে বন্দি করা হয়েছে, কারণ তার আসল পরিচয় এখানে তাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।
“ফিওনা! আমার ওয়াইফ কোথায়?!” জ্যাসপার চিৎকার করে বলছিল, তার চোখে ঘোর উঠেছে। “তোরা জানিস না আমি কে! যদি ওর কিছু হয়ে যায়, আমি কাউকেই ছাড়বো না! কেউ বাঁচবে না!”
তার কণ্ঠে এমন এক তীব্রতা ছিল,যা তার আসল রূপের গভীরতাকে তুলে ধরছিল।
কাঁচের বক্সের সামনে হঠাৎ করেই এক নতুন ক্লায়েন্ট হাসতে হাসতে এগিয়ে এলো।তার হাসি ছিল তিরস্কারী,মনে হলো সে কোনো খেলা খেলছে।তার চোখে এক অদ্ভুত তেজ ছিল, আর সে সোজা জ্যাসপারকে লক্ষ্য করে বলল, “ওহো, জ্যাসপার অরিজিন! প্রিন্স অফ ভেনাস। সান অফ কিং ড্রাকোনিস।এতো চিৎকার করছো কেনো?রিল্যাক্স,এখনো ক্লাইমেক্স শুরু করিনি।”
জ্যাসপার তার দিকে অগ্নিদৃষ্টি ফেলল। তার চোখে রাগ স্পষ্ট।সে কিছু সময় নীরবে তাকিয়ে রইল, ষতারপর একে একে বলল, “হু আর ইউ? এসব কেনো করছো? আমার আসল পরিচয় পেয়ে গেছো, ভালো কথা। কিন্তু, একটা কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছি—আমার ওয়াইফ ফিওনাকে ছেড়ে দাও।”
ক্লায়েন্টের মুখে এক মুচকি হাসি ফুটল,সে আরো কিছু বলতে প্রস্তুত। তবে তার হাসি ছিল রহস্যময় আর সতর্কতা জানিয়ে—এখন যেন আর কোনো ভয় ছিল না,আর সময়টা যেন ঝুঁকিপূর্ণ মূহুর্তে পৌঁছাচ্ছিল।
সেই ক্লায়েন্ট তখন শীতল হাসি হাসতে হাসতে বলল, “প্রিয়জনকে হারালে খুব কষ্ট হয়, তাইনা ড্রাগন প্রিন্স? তাহলে অন্যদের প্রিয়জনকে মেরে ফেলার সময় কি তোমার মাথায় সেটা থাকে না?”
জ্যাসপার চমকে ওঠে, চোখে ধোঁয়া, মুখে তীব্র রাগ। সে ঠাণ্ডা মাথায় প্রতিক্রিয়া জানালো, “কি বলতে চাইছো? কার প্রিয়জন? কে তুমি?”
ক্লায়েন্ট তখন হো হো করে হাসতে হাসতে সোজা জ্যাসপারকে লক্ষ্য করে বলল, “এতো সহজে ভুলে গেলে, প্রিন্স অরিজিন? পুষ্পরাজ পাহাড়ে আমার ভাইকে কিভাবে মেরেছিলে, কেমন নির্মমভাবে? তোমার হাতেই তো তার প্রাণ নিস্তেজ হয়েছিল।”
জ্যাসপার তখন চোখ চেপে বলল, “তুই ক্রাবাথন মনস্টারটারের কথা বলছিস?”
ক্লায়েন্ট তখন চিৎকার করে বলল, “ইয়েস! আমি সেই ক্রাবাথন মনস্টারটারের ভাই! আমার ভাইকে তুই মেরেছিলি, প্রিন্স! কেনো মেরেছিলি আমার ভাইকে? তুই কি ভেবেছিলি, তুই আমার ভাইকে মেরে ফেলবি আর আমি জানতেই পারবো না? ক্রাবাথনের চোখে যে সেন্সর থাকে, সব রেকর্ড হয়—ভুলে গেছিলি?”
ক্লায়েন্টের রাগ এক মুহূর্তে আছড়ে পড়ে, আর তার প্রতিটি শব্দের সঙ্গে তীব্র ক্ষোভের ছাপ স্পষ্ট হয়। জ্যাসপার তখন নির্বাক, শুধু নিজের মধ্যে কিছু একটা চাপা অনুভব করছিল, যেন তার অতি শক্তিশালী পৃথিবীটা হঠাৎ ভেঙে পড়তে শুরু করেছে।
ক্লায়েন্ট তখন বললো, “আমি ক্রাবথন মনস্টার থালাস,গত এক বছর ধরে এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম কবে তোকে আমি আমার হাতের মুঠোয় পাবো।”
জ্যাসপার তখন বললো, “আমি তোর ভাইকে খামোখা মারিনি,তোর ভাই আমার ওয়াইফ ফিওনাকে অ্যাটাক করেছিলো,আমি ওকে না মারলে ও আমার ভালোবাসার মানুষকে মেরে ফেলতো,তাই আমি বাধ্য হয়েছিলাম মারতে। ও নিজের দোষে মরেছে।”
থালাস বললো, “দোষ! কোনটা দোষ? একজন হিউম্যানকে অ্যাটাক করা? তুই জানিস না ক্রাবাথনের প্রিয় খাদ্য মানুষ?”
জ্যাসপার তখন বললো, “এটা আনফেয়ার থালাস। এটা রুলসের বাইরে।কোনো হিউম্যানকে বিনা দোষে মেরে ফেলা আনফেয়ার,আর সেখানে আমার ভালোবাসার মানুষের গায়ে হাত দেয়া।”
থালাস তখন চোখ রাগে ছোট হয়ে গেলো, তার গায়ে উত্তেজনার তেজ ফুটে উঠলো। “তুই কি আমাকে রুলস শিখাতে চাস?পৃথিবীতে কোনো হিউম্যানকে মারা রুলসের বাইরে কিন্তু তোর ভালোবাসার মানুষ ক্রাবাথনের এড়িয়াতে ঢুকে পড়েছিলো।যখন কোনো এনিমেল হিউম্যানদের হাতে পড়ে তারা কি সেআ এনিমেলকে ছাড় দেয়?তাহলে আমার কেনো ছাড় দেবো যখন শিকার নিজেআ খাঁচায় ধরা দেয়।
জ্যাসপার শান্ত স্বরে বললো, “তোর বিবেচনা আলাদা, কিন্তু যেকোনো পরিস্থিতিতে বিনা কারনে মানুষকে আ*ক্রমণ করা অমানবিক,এটা তোর ভাইয়েরও জানা উচিত ছিলো। আমি ফিওনাকে রক্ষা করতে বাধ্য হয়েছিলাম।
থালাস এক পা এগিয়ে এসে বললো, “তুই যা বলছিস, সেটা আমাদের জাতির ইতিহাসের বিরুদ্ধে।তুই ভেনাসের রুলস ভঙ্গ করেছিস।আমার ভাইকে মেরে ফেলছিস,তুই জানিস না আমি কি করতে পারি।”
জ্যাসপার কনুইতে শক্তভাবে আঙুল গুঁজে বললো, “এটা তোকে তোর ভাইয়ের মতোই প্রমাণ করতে হবে যে, শক্তি দিয়ে সব কিছু জিতা যায় না। যদি তুই তোর ভুল এখনই বুঝতে পারিস তবে বেঁচে যাবি,আমি তোর মতো একজন ক্রাবাথনকে কোনভাবেই আঘাত করতে চাই না।”
থালাস হঠাৎ করেই ক্ষিপ্ত হয়ে বললো, “আরো বড় ভুল করেছিস, প্রিন্স। এখন তোর ভুলের শাস্তি পেতে হবে।”
থালাস তার গাঢ় উজ্জ্বল চোখে রাগের ঝিলিক নিয়ে জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে বললো, “নিমোখারাম, ক্রাবাথনেথ উপকার ভুলে গেলি?তোদের ভেনাসের পরিবেশ জলবায়ু রক্ষার্থে আমাদের ভূমিকা ভুলে গেলি?” তার কথায় তীক্ষ্ণ এক রাগের ছোঁয়া ছিল,প্রতিটি শব্দ ক্ষিপ্রতার সঙ্গে বেরিয়ে আসছিল।
জ্যাসপার,সে থালাসের প্রতি কোনো সমঝোতা আশা করছিলো না,তীব্রভাবে ঠাণ্ডা স্বরে উত্তর দিলো, “বিনা কারণে তোরা আমাদের জলবায়ুর হয়ে কাজ করিস না,এটার জন্য তোরা উপহারও পাস।” তার কথায় এক ধরনের অপমানের সুর ছিল,সে জানে,থালাস বা তার মতো কেউ তার ভুল ধারণা করলেও সে হার মানবে না।
এ কথা বলার পর, তার চোখে তীক্ষ্ণ এক ঝলক ছিল—এক ধরণের পুরনো দ্বন্দ্ব, যা অনেক আগে থেকেই ভেতরে জমে উঠেছিল। থালাস বুঝেছিল যে, জ্যাসপার তার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা কালেও আর কোনো শর্তে ভয় পাবে না। দুজনের মধ্যে উত্তেজনা কেবলই বেড়ে চলছিল,মনে হলো এই মুহূর্তে কোনো এক বিষাক্ত ঝড় অপেক্ষা করছে তাদের ওপর।
এখন পুরো দৃশ্য এমন যে আকাশের রঙ বদলাচ্ছিল, এক এক করে থালাসের শ্বাসের শব্দ আর জ্যাসপারের উত্তরের মধ্যে বিদ্যুৎ চলছিল। মহাকর্ষ, সময় আর স্থান এই মুহূর্তে সব মিলিয়ে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে—।
থালাসের কথা শেষ হতেই, একে অপরকে অগ্রাহ্য করে, কক্ষে প্রবেশ করল আরেক নতুন ক্লায়েন্ট। তার বিশাল আকার,অন্ধকার ছায়া আর সাঁতরে আসা খোলসের মধ্যে এক গভীর রহস্য আর গম্ভীরতার ছোঁয়া ছিল। সে নিজেকে পরিচয় দিলো, “আমি লুকিয়ান,কিরাতুর মনস্টারটার। মনে আছে জ্যাসপার অরজিন আজ থেকে দশ বছর আগে আমার ভাতিজা থ্রেসথরকে তুমি কিভাবে মেরেছিলে?”
এই নাম শোনামাত্রই, ্জ্যাসপারের চোখে এক ঝলক ভয়াল দৃশ্য ভেসে উঠলো। তার স্মৃতির পর্দায় অন্ধকার এক তাণ্ডব শুরু হলো।অতীতে ফিরে যাওয়ার অনুভূতি তাকে স্পর্শ করল।
ফ্ল্যাশব্যাক:
দশ বছর আগে পৃথিবীতে প্রথমবার পা রেখে,যখন জ্যাসপার ধীরে ধীরে মানবজাতির কাছে নিজেকে পরিচয় দিতে শুরু করছিল,তখনই একটি অন্ধকার বিপদ তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল।
একদিন, আকাশে বিদ্যুৎ জ্বলে উঠছিল আর সাগরের গাঢ় নীল পানিতে অদ্ভুত ঢেউ উঠছিল।সেসময়, কিরাতুর—এক ভয়াবহ মনস্টার,যা ছিল আকাশের আর পৃথিবীর মাঝে, সাগরের নিচে এক অন্ধকার গহ্বরে লুকানো—ভূমির উপর আক্রমণ করেছিল। কিরাতুরের শরীর ছিল বিশাল, প্রায় এক পাহাড়ের মতো, তার পেটের মধ্যে ছিল আগুনের মতো শক্তি। চোয়াল থেকে বের হচ্ছিল ধারালো দাঁত, আর চোখ দুটি ছিল রক্তের মতো লাল। তার শিংগুলো তীক্ষ্ণ,আর শরীরে একাধিক শাঁসের মতো অস্ত্র বের হয়েছিল,যা দেখলেই মনে হতো এক চলন্ত হত্যাযজ্ঞের মেশিন।
জ্যাসপার,তখন মানবজাতির প্রতি সহানুভূতি বজায় রাখার চেষ্টা করছিল,কিন্তু কিরাতুরের হামলা তার পক্ষে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। সাগরের সীমানা থেকে কিরাতুর ভীষণ শক্তি নিয়ে উঠে এসে, পৃথিবীর এক শহরের দিকে রণক্লান্ত নজরে তাকিয়ে তাণ্ডব চালাতে শুরু করেছিল। ঘরবাড়ি ধ্বংস, মানবদের ছি*ন্নভিন্ন করে দেওয়ার পর,সে এক অপ্রতিরোধ্য যন্ত্রণার সৃষ্টি করেছিল।
তখন জ্যাসপার তার ড্রাগন শক্তির প্রয়োগ করেছিলো।আর এক ভয়ানক যুদ্ধে কিরাতুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়। আকাশের অন্ধকারে এক অন্যরকম রকম রক্তঝরা যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, যেখানে একে অপরকে ধ্বংস করতে প্রতিটি শক্তি ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছিল। এক বিশাল আঘাতে কিরাতুরের শরীর কেটে, সে নিচে পড়ে যায়, কিন্তু তার ধ্বংসাত্মক শক্তি সেগুলিকে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি। অনেক কষ্টের পর, জ্যাসপার শেষ পর্যন্ত তার বিপুল শক্তি দিয়ে কিরাতুরকে পুরোপুরি পরাস্ত করতে সক্ষম হয়। কিন্তু সে জানত, তার এই যুদ্ধে পৃথিবী,আর মানবজাতির সঙ্গে তার সম্পর্ক আরো জটিল হয়ে যাবে।
বর্তমান…….
জ্যাসপার গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল, “আমি কিরাতুর মনস্টারটার থ্রেসথরকে সেদিন মারতে বাধ্য হয়েছিলাম,কারণ সে মানুষের জীবনকে ধ্বং*স করার চেষ্টা করছিল।তার শিকার ছিল স্রেফ এক বাচ্চা,নির্দোষ মানবজাতি।,সেটা ছিল এক অদ্ভুত পরিস্থিতি, কারণ আমি জানতাম না সে কেন এখানে এসেছিরো,কিংবা কেন সে আক্রমণ করছিল।”
লুকিয়ান হাসল, “তুমি তাকে মারতে বাধ্য হয়েছিলে, কিন্তু সে স্রেফ একটা একক ঘটনার ফল ছিল না। কিরাতুরের অতীত আর তার প্রেরণা ছিল আরও গভীর আর গোপনীয়।”
থালাস, গম্ভীরভাবে মাথা নেড়ে বলল, “তবে একটা জিনিস নিশ্চিত, প্রিন্স। তুমি এবার বুঝতে পারবে আপনজন হারানোর বেদনাটা ঠিক কেমন হয়।
এমন এক পরিস্থিতিতে, জ্যাসপার বুঝতে পারল যে তার পৃথিবী ভ্রমণের ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়টি শুধু একটাই ছিল না, বরং তার পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে আরও বড় আর ভয়ানক।
জ্যাসপার গম্ভীরভাবে সবার দিকে তাকালো, তার চোখে যেন একটি কালো ঝড়ের বাণী ছিল। দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস নিয়ে, ঠাণ্ডা কণ্ঠে বলল, “তোরা কি চাস?”
লুকিয়ান সটান দাঁড়িয়ে, নিজের ছায়ার মতো অন্ধকার থেকে বের হয়ে এল। তার চোখের মধ্যে এক ধরনের অদ্ভুত তীক্ষ্ণতা ছিল,সমস্ত পৃথিবীটাকেই এক ঝলক দেখার ক্ষমতা ছিল তার।সে অল্প এক ঝলক হাসল,তারপর বলল, “আমরা চাই তোর সেই বিশেষ ক্ষমতা—তোর আয়ু। তুই জানিস, ড্রাগন প্রানী,যে শতাধিক বছর বাঁচতে পারে, আর আমরা? আমাদের মানুষদের মতো কম আয়ু দিয়েই সৃষ্টি করা হয়েছে, সময় আমাদের পিছু তাড়া করছে।তোর শক্তি, তোর অমরত্ব—তুই যদি আমাদের না দিস,তবে আমরা তা ছিনিয়ে নেবো। আমরা তোর সমস্ত শক্তি নিয়ে নেবো,জ্যাসপার।”
তার কথায় এক ধরনের ঠাণ্ডা আতঙ্কের ছোঁয়া ছিল।যা মনে হলো কোনো মৃত্যুর আগাম ঘোষণা। লুকিয়ান আরও এক পা এগিয়ে এসে, তার কণ্ঠে এক চরম ধূর্ততা ছিল, “তোর মতো শক্তিশালী, অমর একটা প্রাণী, যারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে, আমাদের জন্য তুই শুধুই একটা মূল্যবান সম্পদ।”
জ্যাসপারের চোখে কোনো আবেগের ছাপ ছিল না,সেই প্রাচীন শক্তি তাকে একে একে শীতল করে ফেলেছে।সে ভ্রূ কুঁচকে,নিজের তেজের মধ্যে এক তীব্র হুঁশিয়ারি অনুভব করল। “তোরা যা চাস, সেটা তোরা পাওয়ার যোগ্য নোস, লুকিয়ান। তোদের দৃষ্টির মধ্যে কোনো দয়া নেই। তোরা শক্তির পিছনে এতটাই অন্ধ যে, তোরা জানতেই পারবি না কী ভাবে তোদের নিয়ন্ত্রণ হারাতে হবে।”
লুকিয়ান তার ঠাণ্ডা হাসি নিয়ে, মুখে এক ঝলক তীক্ষ্ণতা আনলো। “উফ কিসের নিয়ন্ত্রণ জ্যাসপার? নিয়ন্ত্রণ দেয়ার ব্যাপারে তোর প্রশ্নের উত্তর সোজা—আমরা তোর শক্তি কেড়ে নেবো,আর তোর ক্ষমতা আমাদের হয়ে যাবে।কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—এটাই, তোর ওপর আমাদের প্রতিশোধ।তোর ইতিহাস থেকে আমরা শিখেছি, তোর শক্তি কেড়ে নেয়াই সবচেয়ে ভালো প্রতিশোধ হবে—আমাদের জন্য।”
তার কথা শেষ হতেই, লুকিয়ান একটি সিগন্যাল দিলো। আর তারপরেই, দুজন গার্ড আর সেই দুজন সাইন্টিস্ট একসাথে ফিওনাকে ধরে টেনে নিয়ে এলো।ফিওনার হাত দুটো পেছন দিকে শক্তভাবে বেঁধে রাখা হয়েছিল,যেন সে কোনোভাবেই কোনো প্রতিরোধ করতে না পারে।
ফিওনার চোখে বিভ্রান্তি আর আতঙ্ক, কন্তু তার মুখে কোনো শব্দ ছিল না।সে শুধু নিরুৎসাহিত দৃষ্টিতে জ্যাসপারের দিকে তাকালো।তার হাত,যেগুলো আগেও কখনো এমন শক্তভাবে বেঁধে রাখা হয়নি,এখন অসহায়ভাবে ঝুলছিল।
জ্যাসপার চোখে আগুন নিয়ে গর্জন করে বললো, “বাস্টার্ড! ডোন্ট টাচ হার!”
তার কণ্ঠে এমন তীব্রতা ছিল,সমস্ত মহাবিশ্ব এক মুহূর্তে থেমে গেলো।তার পেটে উত্তপ্ত আগুনের মতো রাগ উঠেছিল,যা তাকে এমন ভয়ঙ্কর বিপদের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছিল।সে চিৎকার করেছিল,যাতে করে সমস্ত পৃথিবী কাঁপে,কিন্তু তার সারা শরীর ছিল উত্তেজনায় আর রাগে যেন অগ্নিদগ্ধ।
লুকিয়ান সশব্দে হেসে উঠল,তার চোখে কোনো ভয় ছিল না। “তোকে যে কষ্ট দেয়ার জন্য আমরা এই মেয়েটাকে ধরেছি, সেটা জানিস,জ্যাসপার?তুই কি এখনো বুঝতে পারছিস না? তোকে প্রতিরোধ করতে গেলে আমাদের প্রয়োজন যে হাত—তাকে আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।আমরা জানি, তোর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা… এই মেয়েটা।”
জ্যাসপারের শরীরে রক্তের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছিল, তার দাঁতগুলো সিটকানো, কিন্তু তার চোখে ঠাণ্ডা ক্ষোভের ভেতর এক গভীর শীতলতা ছিল। “তোদের শত্রুতা আমার সাথে, তোদের প্রতিশোধ আমার ওপর লুকিয়ান,” জ্যাসপার বললো, “কিন্তু ফিওনাকে এখানে জড়াবিনা,ও এসবের কিছুই জানেনা, ওকে ছেড়ে দে, ওকে যেতে দে।”
আরও কিছু বলার আগেই, জ্যাসপারের চোখে অন্ধকার শক্তি দেখতে পাচ্ছিল, যেন সে আছড়ে ফেলতে প্রস্তুত, যেমন এক অগ্নি ড্রাগন আকাশে আছড়ে পড়তে থাকে।
থালাসের হাসি গভীর হলো,মনে হলো তার কথায় কঠিন সুর ছিল। “ওহো,এই মেয়ে কিছুই জানে না? ওর জন্যেই তো তুই আমার ভাইকে মেরেছিস।”
ফিওনা,পুরো পরিস্থিতির চাপে, অস্থিরভাবে বলল, “প্রিন্স, এরা কারা? কেনো আমাদের আটকে রেখেছে?”
থালাস ফিওনার সামনে এগিয়ে গিয়ে আরো একটু শীতলভাবে বলল, “ওহো, মামণি, তোমাকে তো আমাদের পরিচয় দেয়াই হয়নি। ভুলে গেলে তুমি যে মা পুষ্পরাজ পাহাড়ে ক্রাবাথন মনস্টারটারের সামনে পড়েছিলে?আর তোমার জন্যেই এই জ্যাসপার আমার ভাইকে মেরে ফেলেছিলো।”
ফিওনা কিছুই বুঝতে পারছিল না।তার মাথা ঘুরছিল, প্রতিটি কথা আরো জটিল হয়ে যাচ্ছিল।
তখন জ্যাসপার শান্ত হয়ে বলল, “দেখ, ওর স্মৃতি নেই। আগের কোনো কথা মনে নেই।ওকে যেতে দে।তোরা আমার সাথে ডিল কর।”
লুকিয়ান ঠাণ্ডা গলায়, প্রায় উপহাস করে বললো, “সরি, ব্রো, তোর এই শেষ ইচ্ছাটা আমি পূরণ করতে পারলাম না। এই মেয়েটাকে কিভাবে ছেড়ে দেই? ড্রাগন প্রিন্স, যার ব্রেইনে লাভের কোনো ফাংশনই ছিল না,সে হঠাৎ একজন সাধারণ মানবীর প্রেমে পড়ে গেলো, উন্মাদ হয়ে গেলো। এটা তো স্পষ্ট যে,এই মেয়েটার মধ্যে এমন কিছু আছে যা একজন ড্রাগন প্রিন্সকেও পাগল করে ফেলেছে।”
থালাস খানিকটা হেসে বললো, “তাহলে, আমাদেরও দেখতে হবে—কি এমন আছে এই মেয়ের মধ্যে।”
লুকিয়ান তখন আবার তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বললো,
“শী ইজ রিলি বিউটিফুল অ্যান্ড লুকিং টু মাচ ইয়ামি”।
জ্যাসপার তখন এক ভীষণ গর্জনে ফেটে পড়লো, “তোর জীভ আমি টেনে ছিঁড়ব,বাস্টার্ড! ওর দিকে তাকালে, তোর চোখ আমি তুলে নিয়ে আসবো!”
ফিওনার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো, তার মধ্যে আতঙ্ক আর অস্থিরতা এক সঙ্গে মিশে গেলো। তাদের কথাগুলি ধীরে ধীরে তার মাথায় ঢুকতে থাকলো, সে বুঝতে পারলো যে, তারা কি বলতে চায়, আর কেনই বা তার সাথে এমন আচরণ করছে।
লুকিয়ানের ইশারায়, দুজন সায়েন্টিস্ট আবার ফিওনাকে ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। ফিওনা তখন আছড়ে পড়লো, চিৎকার করতে লাগলো, “প্রিন্স!” তার কণ্ঠে অদ্ভুত কাঁপন ছিল,সে চেষ্টার ত্রুটি রাখলো না,তাদের শক্ত হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য।কিন্তু কিছুতেই তাদের শক্তি টলাতে পারলো না।
জ্যাসপার, কাঁচের বক্সের ভিতরে বন্দি হয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো।তার চোখ আগুনের মতো জ্বলছিল,শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সে তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কাঁচের বক্সে ঘুষি মারতে থাকলো,কোনোভাবে ফিওনাকে মুক্ত করতে পারার জন্য আর সেই সাথে,সে চিৎকার করে বললো, “ফিওনা!” তার গলা ভেঙে যাওয়া, ষক্ষোভে ছিঁড়ে যাওয়া শব্দ যেন পুরো জায়গায় গর্জন করে উঠলো।
এতখানি তীব্র উত্তেজনায় চারপাশের পরিবেশ অস্থির হয়ে উঠলো।
ফিওনা যখন চোখের আড়াল হয়ে গেলো, জ্যাসপার এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেলো। তার বুকের মধ্যে ভীষণ চাপ অনুভব করছিল, কিন্তু সে নিজেকে সামলাতে পারলো। এক চূড়ান্ত মুহূর্তে, গলায় ক্ষোভ ও হতাশার মিশেলে সে বললো, “আমি তোদের কাছে রিকোয়েস্ট করছি। ওর গায়ে টাচ করিস না। তোরা আমার ক্ষমতা, শক্তি চাস তো? হ্যাঁ, আমি আমার পুরো জীবন তোদের দিয়ে দিবো,আমি প্রমিজ করছি। আমি স্বেচ্ছায় আমার সব দিয়ে দিবো, শুধু আমার ভালোবাসাকে ছেড়ে দে। রিকোয়েস্ট করছি।”
থালাস আর লুকিয়ান একে অপরের দিকে এক মুহূর্ত চোখে চোখ রেখে তাকালো। তাদের মুখে কিছুটা অট্টহাসি, যেন পুরো পরিস্থিতিটা তাদের কাছে এক খেলনার মতো। শেষে থালাস বললো, “বাহ, এত ভালোবাসা! আগে কখনো তো এমন ভালোবাসা দেখিনি। সত্যি,জ্যাসপার, তোর ভালোবাসা দেখে আমরা মুগ্ধ।”
ফিওনার একটা বিকট চিৎকার হঠাৎ করেই বাতাসে ভেসে এলো। সেই চিৎকার জ্যাসপারের রক্ত জমিয়ে দিলো, হৃদয়ের গভীর থেকে একটা দমবন্ধ করা যন্ত্রণা ছুটে এলো তার সারা শরীরে। সে পাগলের মতো চিৎকার করে উঠলো, “তোরা যা চাইবি, আমি তাই করবো! শুধু আমার ওয়াইফকে ছেড়ে দে!”
লুকিয়ান ঠোঁটে এক নিষ্ঠুর হাসি এনে বললো, “বাহ! ড্রাগন প্রিন্স এখন প্রেমের দাস হয়ে গেছে? ঠিক আছে, আমরা তোর কষ্ট একটু কমিয়ে দেই। এক কাজ কর—আমাদের সামনে মাথা নত করে হাঁটু গেড়ে বস।”
জ্যাসপারের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো, সারা শরীরে রাগ আর অপমানের এক দাহ জ্বলছিল। সে কিছুতেই মাথা নত করবে না, কিছুতেই না। কিন্তু তখনই আবার ফিওনার অসহায় কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, আরও করুণ, আরও ভীত…
“প্রিন্স!!”
এক মুহূর্তের জন্য সবকিছু থেমে গেলো। জ্যাসপারের রাগ, অহংকার—সব এক বিশাল শূন্যতার মাঝে বিলীন হয়ে গেলো। ফিওনা বিপদে! তার ভালোবাসা এখন নিরুপায়!
আর কোনো উপায় না দেখে সে ধীরে ধীরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। শক্ত হাতে কাঁচের বাক্সের ওপর ভর দিয়ে মাথা নিচু করলো।
আযদাহা সিজন ২ পর্ব ২০
লুকিয়ান আর থালাস মুহূর্তের জন্য বিস্মিত হলো, তারপর পরস্পরের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে হাততালি দিয়ে হাসতে লাগলো। “ওহ, আমাদের অবিশ্বাস্য ড্রাগন প্রিন্স! প্রেম সত্যিই এক অদ্ভুত জিনিস, তাই না?”
তাদের সেই ব্যঙ্গাত্মক হাসি পুরো ঘরজুড়ে প্রতিধ্বনিত হলো। আর জ্যাসপার? সে নীরবে বসে থাকলো, কিন্তু তার ভেতরে একটা ভয়ংকর ঝড় উঠছিল…