চিত্রাঙ্গনা পর্ব ৫১
ইশরাত জাহান জেরিন
সোহাগ থানায় গিয়েছিল রিপোর্ট করতে। মার্জিয়া এমনিতেই স্বামীর মৃত্যুর পর আরও একগুঁয়ে হয়ে উঠেছে। কারও সঙ্গে কথা বলে না, তর্কে জড়ায় না। জান্নাতের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা শুনে তার কী প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত, সেটা সে নিজেই ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। কোনো আশা না পেয়ে সোহাগ ফিরে আসে বাড়িতে। মাথায় হাত দিয়ে রুমের দরজার সামনে ধপ করে বসে পড়ে। নিজের চুল নিজেই আঁকড়ে ধরে। এই মস্তিষ্ক আর নিতে পারছে না। চিন্তারা যেন প্রতিটি নিউরোন চুষে নিচ্ছে।
মাহাদী এসে ভাইয়ের পাশে বসল। সোহাগের রুমের দরজাটা খোলাই ছিল। রুমের ভেতরের আলনায় ঝুলে থাকা জান্নাতের শাড়ি আর জামা তার নজর কাড়ে। হঠাৎ চোখের সামনে ভেসে ওঠে কিছু একটা। মুহুর্তেই সে হারিয়ে যায় স্মৃতির গহিনে।
সন্ধ্যায় মারিয়ার শরীর আবার খারাপ করে। এই অন্ধকার সময়ে একটা খবর আশার আলো হয়ে আসে। মারিয়া মা হতে চলেছে। মাহাদীর খুশির সীমা নেই। সে বউয়ের জন্য ফলমূল, দুধ-মিষ্টি এনে ঘরভর্তি করে ফেলে। তবুও মারিয়ার মুখে কোনো হাসি নেই। শোক তাকে পেছন থেকে টেনে ধরছে। তার মন প্রশ্নে বিদ্ধ, মাহাদী কেমন করে এমন সময়ও খুশি হতে পারে? তার তো পিতা মারা গেছেন। একদিনেই কি ভুলে যাওয়া যায় তাকে? চুপচাপ উঠে মাহাদী বাড়ির উঠানে গিয়ে বসে। চারপাশে গরমের আঁচ, গা জ্বালিয়ে দেয় যেন। ঠিক তখনই জান্নাত এসে দাঁড়ায় দরজার সামনে। মাহাদী তাকে ডাক দেয়।
“এক গ্লাস লেবুর শরবত বানাইয়া আনতে পারবা?”
“ঘরে তো লেবু নাই।”
“গাছ থেইকা ছিঁড়া আনো।”
“আচ্ছা।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
জান্নাত লেবু আনতে গাছপালার ভিড়ে এগিয়ে যায়। চারদিক নিঝুম। গ্রাম বলে কথা। অন্ধকারে রাস্তা দেখা যায় না ঠিকমতো। গাছের নিচে এসে হাত বাড়ায় লেবু ছিঁড়তে, ঠিক তখনই পেছন থেকে একজোড়া হাত মুখ চেপে ধরে রুমাল দিয়ে।
জান্নাতের হাত থেকে লেবুটা ছিটকে পড়ে যায় মাটিতে। চিৎকার করার আগেই তার সমস্ত জ্ঞান অন্ধকারে তলিয়ে যায়।
রাত বেশ গাঢ় হয়ে এসেছে। বেকারির ভ্যানে করে মাহাদী গান গাইতে গাইতে সোহানের আড্ডাখানার দিকে রওনা হয়েছে। মনের সুখে সুরে সুরে ভেসে যাচ্ছে সে। মাঝে মাঝে শিষও বাজাচ্ছে। মাহাদী যখন খুব খুশি থাকে, তখন শিষ না বাজিয়ে সে যেন থাকতে পারে না। হঠাৎ করেই কানে আসে কিছু অদ্ভুত শব্দ। একটা নয়, দুটো নয়, পরপর কয়েকটা। চমকে উঠে সে ভ্যান থামায়, নিচে নেমে পেছনের দরজাটা খুলে দেয়। আর ঠিক তখনই হুড়মুড় করে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে জান্নাত। মুহূর্তের মধ্যে তাকে ধাক্কা দিয়ে পালাতে চায় সে। মাহাদী এক মুহূর্তের জন্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। এই মেয়ে তো দেখি বেশ চালাক! কিন্তু সামনে তো মেইন রাস্তা, আর একবার যদি চিৎকার করে, তবে সব শেষ! ধরা পড়বে সে, ধ্বংস হবে সব। যেভাবেই হোক, এই মেয়েকে এখনই থামাতে হবে। তার ধ্বংস এই তুচ্ছ মেয়েটার কারণে হতে দেওয়া যায় না। হাতে থাকা কুড়ালটা দিয়ে জান্নাতের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাহাদী। লক্ষ্য শুধু একটাই, তাকে থামানো। কিন্তু মুহূর্তেই ঘটে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু। মাহাদী কুড়াল ছুঁড়ে মারে জান্নাতের দিকে। সে ভুলে গিয়েছিল হাতে যে ধারালো কুড়াল, সেটা খেলার কোনো অস্ত্র নয়। কুড়াল সোজা গিয়ে আঘাত করে জান্নাতের মাথার পেছনে। সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। শরীর নিথর হয়ে যায়। মাহাদী ছুটে গিয়ে তাকে ধরতেই দেখতে পায়, তার হাত রক্তে ভিজে গেছে। থমকে যায় সে।
এই তো মুহূর্ত আগেই একটা জীবন্ত মানুষ। কী করে এমন হয়ে গেল? সে তো মারতে চায়নি! সে তো খুনি নয়! জান্নাতের চোখ থেকে প্রাণটা ধীরে ধীরে উড়ে যায়। অনেক কিছু বলার ছিল, হয়তো প্রতিবাদের, হয়তো প্রার্থনার কিন্তু কিছুই বলা হয় না। তার আগেই নিঃশ্বাস থেমে গিয়েছে। একটা ছোট্ট প্রাণ এত সহজে হারিয়ে গেল! কী বিচিত্র! মাহাদী অন্ধকারে, সেই নিথর দেহের সামনে একঘণ্টার মতো বসে থাকে। ভেবে পায় না কি করা উচিত? কোথা থেকে শুরু করবে, কীভাবে শেষ করবে?শেষমেশ মাথায় আসে একটা সিদ্ধান্ত। এই দেহটা মাটির নিচে পাঠানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। অতঃপর যা ভাবা তাই করা।
মাহাদী কল্পনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে আসে। মারিয়াকে ঘরের ভেতর নিয়ে গিয়ে বসায়। ঠিক তখনই তার ফোনে একটা কল আসে। বাইরে গিয়ে রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসে সিফাতের কণ্ঠ। সিফাত জানায় মাহাদী ইদানীং খুব ভালো কাজ করছে। চতুরতার সঙ্গে মেয়ে সরবরাহ করছে। নজর এড়ায়নি কারো। তবে এবার আরও বড় কাজ এসেছে। এমন কাজ সবাই করতে পারে না। কিন্তু সিফাত নিশ্চিত, মাহাদী পারবে। এটা সোহানদের মূল অপারেশন। মানুষের দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ পাচার। কাজটা নতুন হলেও দ্রুত সফলতা পেয়েছে তারা। এখন প্রশ্ন মাহাদী কি এই ভয়ানক কাজের জন্য উপযুক্ত? তার ভিতরটা দ্বিধায় ভরে ওঠে। যদি শিশুদের টার্গেট করা হয়, তাহলে কাজটা হয়তো সহজ হবে। কিন্তু পরক্ষণেই তার মাথায় হাজারো চিন্তা এসে ভিড় করে। মানুষ মারা কি এতই সহজ? সে কি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে?
ভাবা যায় মাহাদীর মতো ছেলে এসব করার কথা চিন্তা করছে? মাহাদীর এখনি মনে পড়ে সংসারের সব কাজে সোহাগ তার থেকে বেশি ভালো ছিল। তাই ভালোবাসার ক্ষেত্রেও সোহাগকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বেশি। বাবার রেখে যাওয়া দোকানটাও পেয়েছে সোহাগ। খারাপ লেগেছিল তখন। কারন সোহাগের তো তখন বিয়েও হয় নি। সংসার ছিল না। তবে মাহাদীর সবই ছিল। টাকার কারনে বউকে ভালো খাবার খাওয়াতে পারে নি। কত কথা শুনতে হয়েছে। কত কষ্ট করে একটা কেরানির কাজ জুটেছিল৷ নামমাত্র বেতন। সংসারের বড় ছেলে বেকার হলে বুঝা যায় কে আপন আর কে পর।
একটা কথা আছে যার স্বামীর টাকা বেশি তার সংসারে মূল্য বেশি। তেমনই তোমার টাকা নেই তার মানে তুমিও একদিন পরিবারের চোখে অবহেলার পাত্র হয়ে যাবে। একটা পুরুষ মানুষের যে কোনো মুহুর্তেই হোক না কেনো টাকা থাকাটা জরুরী। টাকা না থাকলে ভালো ছেলে হওয়া দুষ্কর, ভালো স্বামী হওয়া দায়। তাই তো লোকে বলে, ❝পুরুষ বাঁচে অর্থে, নারী বাঁচে সৌন্দর্যে।❞ এই সমাজে বাঁচতে গেলে মানুষ নয়, টাকা লাগে।
কথা শেষ করে মাহাদী ফোন পকেটে রাখল। ঘাড় ফিরিয়ে দরজার সামনে অসহায়ের মতো মারিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকলে দেখল৷ কি মায়া এই নারীর ক্লান্ত চেহারায়। মাহাদী কাছে এগিয়ে আসতেই মারিয়া তার শার্ট খামচে বুকের মধ্যিখানে লেপ্টে গেল। মাহাদী কপাল বরাবর চুমু বসিয়ে বলল,”চিন্তার কিছু নাই ময়না। সব ঠিক হইয়া যাইব।”
“সবাই কেমন হারাইয়া যাইতাছে। কথা দাও তুমি আমারে রাইখা হারাইবা না।”
“দিলাম।”
ফুলিকে অবশেষে স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে।
অগাধ চেষ্টার পরেও এই মেয়েটিকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেনি মোহনা।
কী এক অদ্ভুত মায়া! ফুলি তার আত্মার এক বিস্তার হয়ে গেছে। ক’দিন ধরে প্রচণ্ড গরম পড়ছে।
বর্ষার শেষ প্রান্তে এসে আবহাওয়াটা কেমন যেন চঞ্চল হয়ে উঠেছে। গুমোট অন্ধকারের সীমানা ঠেলে আকাশ হয়তো খুব শিগগিরই নীল হবে, বাতাসে বইবে শরতের শীতল পরশ। এখনো পুরোপুরি বর্ষা যায়নি, তবে যাওয়ার আভাস স্পষ্ট। মোহনা টকজাতীয় ফল খুবই পছন্দ করে। আজকে ফুলির চাচা এলাহীদের বাগান থেকে কিছু আমড়া আর লটকন পেড়ে এনেছে। সেখান থেকে মোহনা বেশ কিছু ফল রেখেছে ফুলিকে দিয়েছে। এটা মোহনার স্বভাব। গাছ থেকে কিছু পাড়লে প্রথমেই বাড়িতে কর্মরত মানুষদের কথা ভাবে সে। নিজে খাওয়ার আগে ওদের মুখে তৃপ্তি দেখতে চায়। তাই তো
দুপুরে ফুলি সেই আমড়া আর লটকন দিয়ে দারুণ একটা মাখা বানিয়েছে। ঘরে তেমন কিছু ছিল না।তবুও শুকনো মরিচ পুড়িয়ে, লবণ আর সরিষার তেল দিয়ে যেন জাদুর মতো বানিয়ে ফেলেছে।
এই মেয়ে অল্প বয়সেই একেবারে পাকা রাধুনী!
মাখা তৈরি করে সে নিজেই ছুটে যায় মোহনার কাছে। দুপুরের কাঠফাটা রোদ উপেক্ষা করে বাগানের দোলনায় বসে দু’জনে গল্পে মেতে ওঠে।
সে এক মায়াময় দুপুর। টক মাখা আর আন্তরিক আলাপে ভরা যার প্রতিটি লহমা।
ফুলি একটু থেমে বলল কৌতূহলে ভরা চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আপনি আমারে বাড়ি পাঠাইয়াও, আবার পাঠাইতে নিষেধ করলেন ক্যান?”
মোহনা হেসে উত্তর দিল। “তোকে ছাড়া মন বসে না যে।”
ফুলি ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকল। তারপর ধীর স্বরে বলল, “আপনি সবসময় লিপিস্টিক দেন ক্যান?”
মোহনা চোখ নামিয়ে নরম স্বরে বলল,”মনের দুঃখ দূর করতে।”
ফুলি খানিকটা চুপ থেকে আবার বলল,”আপনার মনে এত দুঃখ?”
মোহনা এবার অবাক হয়ে তাকাল তার দিকে, “তুই বুঝলি কীভাবে?”
ফুলি একটুও না ভেবে বলল, “সবসময় লিপিস্টিক দেন যে। তাই কইলাম। দুঃখ বেশি দেইখাই তো সবসময় দেন।”
মোহনা হেসে বলল “আমাকে খারাপ দেখা যায়?”
ফুলি লাজুক গলায় বলল, “না, ছি! কী যে কন! আপনি তো একেবারে পরীর লাগান সুন্দর।”
মোহনা চোখে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে বলল,
“তবে আমাদের সবার চেয়ে সুন্দরী কিন্তু আরেকজন আছে।”
ফুলি চট করে বলল, “কেডা? চিত্রা আপা?”
মোহনা হালকা ঠোঁট চেপে হাসল, “উফ, বোকা! আয়নার সামনে দাঁড়াইলেই দেখতে পাবি তাকে।”
ফুলি থমকে গেল। তারপর ধীরে ধীরে বলল,”ওমা! আপনি আমার কথা কন?” বলেই লজ্জায় তার গাল দুটো লাল হয়ে উঠল।
মোহনা তখন একটুখানি ঝুঁকে আদর করে বলল,
“হ্যারে। তোর কথাই কইছিলাম। তোর মতন সুন্দর এই দুনিয়ায় আর কে আছে শুনি?”
ফুলি চুপ করে তাকিয়ে রইল মোহনার চোখে। তারপর আস্তে বলল, “আপনি…”
আজ বহুদিন কেটে গিয়েছে। ফারাজ ইতিমধ্যে তার ব্যবসা বানিজ্যের দিকে এক প্রকার গুরুত্ব দেওয়াই বন্ধ করে দিয়েছে। বিদেশ থেকে বার বার কল আসছে। সব ডিল আটকে আছে ফারাজের হুকুমের অপেক্ষায়। কিন্তু ফারাজ নির্বিকার। কিচ্ছু হচ্ছেনা। ইদানীং নিষ্ক্রিয়তার ভেতরেই চিত্রার আড়ালে প্রচুর নেশা করা হচ্ছে। একটার পর একটা সিগারেট জ্বলতেই থাকছে। তবু মস্তিষ্কের তীব্র চিন্তাদের দমন করা যাচ্ছে না। এত দ্বিধা, এত সংশয় নিয়ে বেঁচে থাকা কি আদৌ সম্ভব? চিত্রা আজকাল কেমন যেন মনমরা হয়েই থাকে। কথায় কথায় কেমন যেন বাঘিনী হয়ে উঠছে। বাড়ির নারীদের হয়ে প্রতিবাদ করছে। কি করে বুঝালে সে বুঝবে এই প্রতিবাদই যে বড় বিপদ বয়ে আনতে চলেছে। একে একে বাড়ির সব পুরুষগুলো তার ওপর কেমন যেন শত্রু হয়ে উঠছে। ফারাজকে না হয় এত সহজে ক্ষতি করা সম্ভব নয় তবে চিত্রা? সে তো নিষ্পাপ।
তার মনে তো সবার মতো এত বিষ নেই। যার বিষ নেই তার বিষাক্ত ছোবল খাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। ভয় হয়, যদি ভুল করেও এই নারী চোখের আড়াল হয় তখন কি হবে? মনের আড়ালও কি হয়ে যাবে? তবে মাঝে মাঝে আফসোস হয় বড্ড,চিৎকার করে যদি মনের হাহাকার মিশিয়ে চিত্রাকে সে বলতে পারত,” ❝আমাকে আকাশের সাথে তুলনা করে ভুল করো নি আগুন সুন্দরী। তবে আমি এক বিন্দু ও উদার নই। বিশ্বাস করো বিষাক্তে নীল আমার বিষময় প্রতিটি শিরা-উপশিরা। শুধুই বিষাক্তের ছোঁয়া আমার ত্যাগ করা প্রতিটি নিশ্বাসের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এই শরীর,এই হৃদয়স্থে তোমাকে ঠাঁই দিয়ে কেমন যেন অম্লতায় ঘিরে ফেলছি তোমায় প্রতিটি সময়ের ঘূর্ণিপাকে। তোমার চোখে ভালোবাসার তীব্র হৃদয়কারা চাহুনি আজ-কাল চূর্ন-বিচূর্ণ করে ফেলছে আমার অন্তরের অন্তস্থল। কি করে বোঝাই বলো? তোমার প্রিয়তমর শরীরে যে রক্তের বিন্দুকণা থেকে তিক্ততাই প্রকট। যার প্রতিটি লেলিহানে তোমার ধ্বংস অনিবার্য।❞
ফারাজ লিখতে জানে না। সে তো আর কবি নয়। তবে মনে মনে বহুবার আওড়ায়,❝তুমি আমার কারনে কষ্ট পাবে ভাবলেও পরাণ পুড়ে। হৃদয় ভ্রমর মৃত্যুসুধায় জখম হয়। তবুও এক কথায় বলতে চাই, তুমি খারাপ আছো শুনে আমার ভালো থাকারা ভালো নেই।❞
ফারাজের সম্মুখে জ্বলছে ছোট্ট একখানা টেবিল ল্যাম্প। হালকা কমলা আলোয় ঘরটা আরও নিঃসঙ্গ মনে হচ্ছে। চেয়ারে বসে পা ঝুলিয়ে রেখেছে সে। দুই হাতে চুল খামচে ধরেছে। মাথাটায় প্রচন্ড জ্বালাপোড়া করছে। হুট করে কেউ একজন কাঁধে হাত রেখে নিজের মোলায়েম হাত দিয়ে মালিশ শুরু করে। ফারাজ চুল থেকে নিজের হাত সরিয়ে পেছন থেকে হাত বাড়িয়ে থামিয়ে দেয় সেই হাত। হাতের মালিককে বসায় নিজের উরুর ওপরে।
“চিত্রাঙ্গনা নামের অর্থ কি বউ?”
“জানি না।”
“আমি বলি?”
“বলুন।”
“সুন্দর ও মনোরম নারী। যার দেহশোভা চিত্রের মতোই মনোমুগ্ধকর। নামের সঙ্গে তোমার পুরোপুরি মিল আছে। তোমাকে সৃষ্টি করাই হয়েছে এই নামের শোভা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।”
চিত্রা একটু হেসে বলে,”তাই বুঝি?”
ফারাজ হাসল। হাতের ফোনটা বের করে তৎক্ষনাৎ স্ক্রিনে হাত চালিয়ে পুনরায় পকেটে ভরে রেখে বলল,
“বিবিজান!”
“হুম।”
“তুমি বড় হয়ে গিয়েছ।”
“কি করে বুঝছেন?”
চিত্রাঙ্গনা পর্ব ৫০
“এই যে আগের মতো ফুটো না,খেলো না,গুনগুন করে গান গাও না। এত জলদি বড় হতে আছে বুঝি? যত সময় নিয়ে বড় হবে তত সুন্দর করে দুনিয়া উপভোগ করতে পারবে। জীবনটা তো ছোট্ট বলো? এত জলদি উপভোগ না করে বড় হলে চলে?”
চিত্রা ফারাজের চুলে হাত বুলিয়ে অবাক চোখে তাকায়। কিছু বলতে যাবে তৎক্ষনাৎ রুমের মধ্যে অভ্র ঢুকে। সাধারণত ফারাজের স্টাডি রুমে কেউ প্রবেশ করে না। আজও অন্যকারো প্রবেশ করার কথা ছিল না। তাই হুট করে রুমে ঢুকে পড়ল অভ্র। কিছু খেয়াল না করেই বলে উঠল, “মরিয়ম আর বেঁচে নেই ভাই।”