নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৩৬
সিনথিয়া
শেষের কথাগুলো যেনো ছিল আয়ানের মোক্ষমাস্ত্র!
বলিষ্ঠ দেহে আঁটসাঁট তরুণ একেবারে নিশ্চিত! শুধু আজকের রাত কেনো? কোনো রাতেই আর তার বন্ধু বউ ছাড়া ঘুমোতে পারবে না!
জিতে যাওয়া সিপাহির খুশি তার চোখেমুখে! শেহজাদের কানে কানে আবার বলে উঠলো,
“ভাই ভেবে দেখ! এখনো সময় আছে! আমাকে নিয়ে ঘুমোবি না বউকে?”
শুকিয়ে আসা গলবিল ঢোক গিলে ভেজালো শেহজাদ। অমনি যেনো আরেকটা সুযোগ পেয়ে বসলো আয়ান!
“দেখলি ভাই দেখলি? এখনি তোর গলা শুকিয়ে যাচ্ছে! দুজন দু’প্রান্তে ঘুমোলে তো রাতে পুরো বাড়ির পানি তুই একাই শেষ করে ফেলবি!”
এটা অবশ্য জোরেই বলে ফেললো ও! নিজেই একচোট হাসিতে লুটোপুটি খেলো পরপর।
আনত মুখে ঠোঁট টিপে হাসলো জারাও!
শুধু আরশিই যেনো বেকুববনে চেয়ে! একসাথে না ঘুমোনোর সাথে পানির কি সম্পর্ক?
বিরক্তিতে চোখ খিঁচলো প্রফেসর! সুতনু কপালে কয়েক পরত ভাজ ফেলে ফের চাইলো আয়ানের দিকে! খানিকটা ঘাবড়ে গেলো মানুষটা। দু’পা পিছিয়ে জারাকে টেনে দাঁড় করালো ওদের মাঝখানে।
“ও কি তোর ঢাল?”
শেহজাদের গুরুগম্ভীর প্রশ্ন! জারাও থতমত খেলো একটু! কিন্তু আয়ানের উত্তর যেনো ঠোঁটের আগায়!
বড় বড় চোখে চেয়ে ফটাফট বললো,
“পৃথিবীর সব প্রমিকাই তার প্রেমিকের ঢাল!”
“তুই রুমে আয়!”
“কাভি নেহি!”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তুই রুমে না আসলে আজ তোর একদিন কি আমার একদিন আয়ান!”
“ইকোনমিক্স বই আর ক্যালকুলেটরের বাইরে যার মুখ তুলে দেখার সময় নেই, তার আবার দিন! আসবো না আমি!”
জারা এবারটায় পিছন ফিরলো। বিরস মুখে তাকালো আয়ানের দিকে! থামার জন্য নিঃশব্দে আকুতি জানাচ্ছে নীল চোখদুটো! ফিসফিস করে পাতলা অধর জোড়া নড়লো অনুরোধে,
“আপনি এমন করছেন কেনো? একটা রাতেরই তো ব্যাপার! এমন তো নয় যে আগে আপনি আমাকে ছাড়া থাকতে পারেননি?”
অফিসারের হেম চোখে বিস্ময়! জারাও ওর বিপক্ষে? ব্যাপারটা হজম করে বলে উঠলো,
“আগে থাকতে পারতাম কারণ তখন তুমি আমাকে বারবার রিজেক্ট করে দিতে! এখন যেহেতু এক্সেপ্ট করেছো, তাই পারবো না!”
কুন্ঠায় মাথা নোয়ালো জারা! গালজুড়ে হুটোপুটি খেলো যেনো সদ্য ফোঁটা পলাশরা! ছোট ছোট চুল গুলো ঢেকে দিলো লাজুক কপালখানা!
আয়ান খেয়াল করলো বিষয়টা!
বাই এ্যানি চান্স ওর বাটারফ্লাই কি লজ্জা পাচ্ছে? ভালো করে চেয়ে দেখতে মাথা নোয়ালো সে-ও!
তখনই কিছু একটু বললো জারা! মুহূর্তেই ফ্যাকাসে হয়ে গেলো অফিসারের মুখ!
ঠোঁটের হাসি গায়েব! অতি কষ্টে মাথা তুলে চাইলো শেহজাদের দিকে! আহত স্বরে বললো,
“চল ভাই! রুমে যাই! ফ্রেশ হয়ে আসি!”
বুকে হাত বেঁধে ভ্রু নাচালো শেহজাদ। জিভ দিয়ে গাল ঠেললো! আগা গোড়া দেখে নিলো আয়ানকে! তার তীব্র প্রতিবাদী বন্ধুর এখন গলায় আওয়াজ নেই! চোখে তেজ নেই! স্ট্রেঞ্জ?
ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল আরশিও। হঠাৎ এমন চুপচাপ হয়ে গেলো কি করে মানুষটা? কি এমন বললো জারা ওনাকে?
ফরমাল বদলে টি-শার্ট আর ট্রাউজার পরেছে শেহজাদ! আয়ানও ইউনিফর্ম বদলেছে! শুধু বদলায়নি তার অসন্তোষ! রুমে এসেই রেডিও চালু!
প্রফেসর নাক-মুখ কুঁচকে ফেললো অমনি। এক হাতে মোবাইল স্ক্রল করতে করতে তাকালো বিছানার উপর বাবু হয়ে বসে থাকা অফিসারের দিকে!
তার দুঃখের শেষ নেই! মনে বিষাদের অন্ত নেই। হাহুতাশ করে বলে উঠলো,
“পৃথিবীতে কত কষ্ট করে মানুষের প্রেম হয় তুই জানিস?”
“সেটা আমি জেনে কি করবো?”
শেহজাদের নিরেট প্রশ্নে উল্টে আরো ক্ষেপে গেলো আয়ান। প্রকট চোখে তাকালো তার দিকে।
“এইজন্য! এইজন্য আমি তোর মত আদা ছেঁচার সাথে ঘুমিয়ে আমার জীবনের মহামূল্যবান একটা রাত নষ্ট করতে চাইছিলাম না!”
প্রফেসর তাজ্জব। জাগতিক খেই হারিয়ে জ্বলজ্বলে স্ক্রিন থেকে মুখ তুললো! অবাক হয়ে শুধোলো,
“কি ছেঁচা?”
আয়ান ফের আওড়ে গেলো নিজের মতো করে!
“আদা ছেঁচা! থেতলে যাওয়া আদা যাকে বলে! যার মধ্যে কোনো ফিলিংস নেই, ইমোশন নেই!”
বিরক্তিতে দুপাশে মাথা নাড়লো শেহজাদ!
শ্বাস ফেলে বললো,
“তাহলে এসেছিস কেনো এই রুমে? ”
মুহূর্তেই মিইয়ে গেলো আয়ান। এটা বলা যাবে না! বললে মানইজ্জত থাকবে না! কথা ঘোরাতে বললো,
“এটা এখন ম্যাটার করছে না বন্ধু! কিন্তু হায়য়! আমার তো শুধু তোর জন্য আফসোস হচ্ছে!”
ভ্রু বাঁকালো মানুষটা!
“আমার জন্য আফসোস কেনো হবে তোর?”
এবারটায় নড়েচড়ে বসলো অফিসার।
“আফসোস হচ্ছে কারণ..! বলবো?”
“বল!”
“তেড়ে আসবি না তো?”
শেহজাদ কঠিন চোখে চাইতেই হড়বড়ালো আয়ান,
“আচ্ছা! বলছি বলছি! দেখ! আজ আঙ্কেল আন্টি বাসায় নেই! তোর খালাতো বোন মানে ঐ কুচুটে এ্যামি! সে-ও নেই! তারউপর তুই ইনজ্যুরড! এই সুযোগে তুই আর ভাবী! আহাহা! আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না!
কি রোম্যান্টিক একটা মোমেন্ট মিস হলো তোদের!”
কুঞ্চিত ভ্রু জোড়া আরেকবার গেড়ে বসলো চোখের ওপর! শুধোলো,
“এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড! আমার ইনজুরির সাথে রোম্যান্সের কি সম্পর্ক?”
আরেকবার নিরাশ হলো আয়ান। উদাস উদাস স্বরে বললো,
“ তুই আমার বন্ধু এটা মানতেই আমার এখন কষ্ট হচ্ছে! শোন! আমি একটা প্ল্যান করেছি! তুই ভাবীর কাছে যাবি! গিয়ে বলবি তোর অসুস্থ অসুস্থ লাগছে! দম নিতে পারছিস না! হাত পা ঘুরাচ্ছে! মাথা ছেড়ে দিয়েছে!”
“ওটা মাথা ঘুরাচ্ছে আর হাত পা ছেড়ে দিয়েছে হবে!”
থতমত খেলো আয়ান।
“এতো সিরিয়াস মোমেন্টেও ভুল ধরছিস আমার? মানে উপকারীর কোনো দাম নেই না রে?”
ক্রস করা পা জোড়া এবার সোজা হলো শেহজাদের। হাতের ফোনটা ট্রাউজারের পকেটে রেখে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়ালো মানুষটা! পরপর এক হাত মুঠো করে মুখের সামনে নিয়ে গলা পরিষ্কার করলো! ইতস্তত স্বরে আওড়লো,
“ইয়ে…মানে আর কি কি করতে হবে?”
ঠোঁটের দুকোণ দু’পাশে সরে গেলো অফিসারের। চকচক করে উঠলো গোল্ডেন ব্রাউন চোখজোড়া। বিস্তর হেসে উঠে এলো বিছানা ছেড়ে। বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে বললো,
“এই তো! পথে এসো বাছাধন! কোনো সমস্যা নেই! আমি বলে দিচ্ছি প্ল্যান এক্সিকিউট করার জন্য তোর ঠিক কি কি করতে হবে!”
শেহজাদের নীলাম্বরে সন্দেহ। গম্ভীর স্বরে শুধোলো,
“আর তুই কি করবি? খবরদার আয়ান! আমার স্টুডেন্টের সাথে যদি উল্টো পাল্টা কিছু করেছিস তাহলে কিন্তু–!”
অসহায়ের মতো হাসলো অফিসার!
“না না! কি করবো? কিচ্ছু করবো না! আমার উপায় আছে কিছু করার? তুই নিশ্চিন্তে থাক!”
কিন্তু মনে মনে বিড়বিড় করলো অন্য কিছু!
“ভাগ্যিস উপরওয়ালা তোর মতো আমার কোনো সম্বন্ধি রাখেনি! নয়তো বিয়ের রাতে আমি বউ নিয়ে ভিতরে ঢুকতাম আর তুই বাইরে থেকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতিস–খবরদার আমার বোনের সাথে যদি কিছু করেছিস! তাহলে তোর একদিন কি আমার একদিন!”
তুষার তান্ডবের শোঁ শোঁ শব্দ। উত্তাল নিউইয়র্কের রাত। বাতাসের দাপটে উড়ে ইয়ার্ডে এসে পড়ছে নরওয়ে ম্যাপল আর পিন ওক গাছের পাতাগুলো। বরফের মোড়কে ঢেকে গেছে উঁচু নিচু ইমারত, হাইওয়ে।
জারা আরশিদের রুমে। দুই রমনীর খিলখিল শব্দে মুখরিত দোতলা! ওভারকোট পাল্টেছে।
ফ্রেশ হয়েই মেতেছে গল্পে।
কথার মাঝেই হুট করে আরশি জিজ্ঞেস করে বসলো,
“তখন আয়ান ভাইকে কি বললি বল তো? অমন এক বাক্যে রাজি হয়ে গেলো মানুষটা ওনার সাথে ঘুমোনোর জন্য?”
নিম্নাষ্ঠ কামড়ে মাথা নোয়ালো জারা। হাসলো নিঃশব্দে!
“থাক আর লজ্জা পেতে হবে না! আমি তো এমনিতেই জিজ্ঞেস–!”
ব্যতিব্যস্ত হয়ে মাথা তুললো মেয়েটা। আরশির হাত চেপে ধরে বললো,
“আরে তেমন কিছু না, ঐ আরকি একটু ভয় দেখিয়ে বলেছিলাম বেশি উল্টো পাল্টা করলে বাটারফ্লাই বলে ডাকা বন্ধ! বিয়ে ক্যান্সেল!”
বিমূঢ় চোখজোড়া ফুটবল আরশির। ওষ্ঠপুট কিঞ্চিত ফাঁক!
“তোরা বিয়ে করার প্ল্যান করে ফেলেছিস? ইশ! আমি কত কিছু মিস করে ফেললাম!”
লাজুক হাসলো জারা।
“আয়ান উপরে অমন ছটফট করলেও ভিতরের মানুষটা ভীষণ ভালো! আমার মতো বিয়ে বিদ্বেষী মেয়েও যার প্রেমে পড়তে বাধ্য!”
ভালোবাসা দেখতেও ভালো লাগে। কাছের মানুষগুলো ভালো আছে শুনলেও খুশি মনে নিজের দুঃখটুকুও টুপ করে গিলে ফেলা যায়!
আরশিরও তাই! আজকের ঘটনার পর যেনো উপলব্ধিগুলো কড়ায় গন্ডায় বুঝিয়ে দিয়েছে শেহজাদ কে ওর জীবনে। কি কি করতে পারে, কত দূর অবধি যেতে পারে মানুষটা
ওর জন্য! অথচ তাকেই কি না বারবার দূরে সরিয়েছে। যদি আজ কিছু একটা হয়ে যেতো
ওনার?
ভাবতেই গলার কাছটায় দলা পাকায়। গাঁট হয় সমস্ত শরীর। এ ভাবনাও যেনো বিষ।
তবুও ভালো জারা সুখে আছে। আয়ানের মতো একজন সৎ দায়িত্ববান অফিসারকে নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে পেয়েছে!
আরশি শেহজাদকে এখন অবধি ভালোবাসি বলতে না পারলে কি হয়েছে?
জারা তো বলতে পেরেছে আয়ানকে!
তাতেই খুশি ও!
তক্ষুনি মেসেজের নোটিফিকেশন ভেসে ওঠে জারার ফোনে। সেদিকেই চাইতেই ঠোঁটজোড়া আপনাআপনি দুপাশে সরে জারার!
আরশি খেয়াল করতেই হাসলো ঠোঁট টিপে!
কনুই দিয়ে ঠেলে ঠেলে বললো,
“কি? আয়ান ভাই নাকি?”
জারা হতভম্ব! নীল অক্ষিপটে কৌতূহল নিয়ে তাকালো আরশির দিকে!
“তুই কি করে বুঝলি?”
“হাসি দেখেই বুঝে গেছি!”
স্তম্ভিত মেয়েটা এবার মিটিমিটি হাসলো। ডাকাবুকো জারা, যার কি না হাত পা চলতো সমানে! প্রেম ভালোবাসা থেকে একশো হাত দূরে রইতো সবসময়! সে-ও আজ সদ্য প্রেমে পড়ে
লজ্জায় লাল-নীল হয়! ছোট ছোট চুলগুলো তর্জনী দিয়ে কানের পিছনে গোঁজে!
পরপরই উশখুশ শুরু হলো ওর!
জড়তা এসে ভেড়ে কন্ঠে!
“আসলে আরশি! উনি না একটু ডাকছেন নিচে! আমি যাই?”
আরশি ভ্রু নাচায়। দুলে দুলে বলে উঠলো,
“ওহো! লেইট নাইট ডেইট? যাও যাও!”
জারা আর অপেক্ষা করলো না। হাসিমুখে তড়িঘড়ি পা বাড়ালো ঘরের বাইরে।
কিন্তু সিঁড়ি অবধি যেতেই দপ করে নিভে যায় সবগুলো বাতি! অন্ধকারে থমকে দাঁড়ায় মেয়েটা!
হাতড়ে হাতড়ে দেয়াল ধরে! মনে পড়ে আরশি তো ঘরে একা? যদি ভয় পায় ও?
কিন্তু ফিরতে নিলেই প্রকান্ড এক ছায়ামূর্তি উপস্থিত হয় পিছনে। ধাক্কার তোপে সিঁড়ি দিয়ে পড়ে যেতে গেলেই পেলব বাহুখানা ত্রস্ত আঁকড়ে ধরে ছায়ামূর্তিটা। টেনে এনে ফেলে বুকের ওপর।
“আর ইউ অলরাইট বাটারফ্লাই? ”
পরিচিত কন্ঠস্বর! এতক্ষণে যেনো হাঁফ ছাড়লো জারা৷ মুখ তুলে তাকাতেই মোবাইলের ফ্লাশ লাইট অন করলো আয়ান।
প্রশস্ত হাসলো সৌম্য পুরুষ। দু’হাতের মাঝে আবদ্ধ করলো মেয়েটাকে।
“মিস করছিলাম খুব!”
“কিন্তু আমি তো উপরে গেলামই এই একটু আগে?”
বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে ফেললো আয়ান!
সুর পাল্টালো! নিরাশ নিরাশ কন্ঠে বললো,
“ঐখানেই তো সমস্যা বাটারফ্লাই! দুপুরের পর থেকে কেনো যেনো এক সেকেন্ডও তোমাকে না দেখে থাকতে পারছি না! কিছু হয়েছিল নাকি দুপুরে?”
দুষ্টুমি ধরে ফেললো জারা।
অফিসারের বাহু গলিয়ে পিঠে হাত রাখলো পরপর। এগিয়ে মিশে গেলো আরো একটু! ঐ হেম চোখের দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে হৃৎস্পন্দন আঁটকে দিলো মানুষটার।
বলে উঠলো,
“হয়েছিল তো! আমি মেয়ে হয়ে আপনাকে প্রপোজ করলাম অথচ আপনি কি করলেন? একটা রিটার্ন প্রপোজাল যে পাই আমি সেটা ভুলে গেলেন?”
শ্বাস আঁটকেই যেনো বললো আয়ান,
“একটা কেনো? হাজারটা পাও তুমি! তোমার সামনে হাজারবার হাঁটু গেড়ে বসতে এই আয়ান হান্টার রাজি!”
জারার পাতলা ওষ্ঠপুটের ভাজে মিটিমিটি হাসি!
“তাহলে একটা গান শোনান! এমন একটা গান যেখানে আপনি মুখে না বললেও আমি বুঝে ফেলতে পারবো আপনার মনের কথাগুলো! গাইবেন তো?”
অন্ধকারে আচ্ছন্ন রুমে একা বসে আরশি।
প্রথমে ভেবেছিল বাইরে ঝড় হওয়ায় কারেন্ট চলে গেছে! কিন্তু জেনারেটরও যখন চালু হলো না তখনই ভয়টা গেড়ে বসলো মনে!
বিছানা ছেড়ে সাবধানে উঠে দাঁড়ালেও চোখে ঠাওর হলো না কিছুই! জীবনে দেখা অদেখা সবগুলো ভূতের সিনেমা মনে পড়তে লাগলো একসাথে।
কিভাবে সিনেমার ভূতগুলো এন্ট্রি নেয়! এক ঝলক দেখা দিয়ে মিলিয়ে যায় হাওয়ায়! তারপর আবার এসে উদয় হয় এক্কেবারে সামনে! ছিন্ন বিন্ন করে ফেলে ঘাড় থেকে মাথা!
আঁতকে উঠলো আরশি! বাইরের বাতাসের শব্দ তার সাথে ঘরের নিকষ কালো অন্ধকারে এর চাইতে ভালো কোনো কথা ভাবতে পারলো না ও এই মুহূর্তে!
ঠিক সেই সময় দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকলো কেউ একজন! শব্দ টের পেয়েই ফিরে চাইলো আরশি! কিন্তু কে এসেছে ভালো করে না দেখেই “ভূত ভূত” বলে চিৎকার জুড়লো তৎক্ষনাৎ! অমনি অবাধ্য একখানা হাত
এসে চেপে ধরলো ওর মুখটা!
“রিল্যাক্স আরশি! আমি…!”
কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে অস্পষ্টে আওড়ালো ফের,
“তোমার জাম্বুবান!”
আরশির চোখ তখন ছানাবড়া। মুখের ওপর থেকে হাত সরাতেই বলে উঠলো,
“আপনি?”
শেহজাদের ব্যান্ডেজ করা হাতে একটা ক্যান্ডেল আর লাইটার। সেটা জ্বালাতেই পরিষ্কার হলো দুজনের মুখ! মোমের স্নিগ্ধ আলো দুটো মানুষের মধ্যখানে! ঘরময় তার মিষ্টি আভা!
নাকে এসে লাগছে বাইরের ভেজা মাটির গন্ধ!
আরশির খেই ফিরলো হঠাৎ! তড়িঘড়ি শুধোলো,
“বাড়ির জেনারেটরটা নষ্ট হয়ে গেছে বোধ হয়? তাই না?”
ঢোক গিললো শেহজাদ! চোর চোর ভাবটা এড়াতে হুহা করলো শুধু। পরপর বলে উঠলো,
“আচ্ছা দেখো তো আমার জ্বর এসেছে কি না?”
ত্রস্ত কপালে হাত রাখলো আরশি! নরম হাতের স্পর্শে কাতর হলো হলো প্রফেসর। উথাল-পাথাল ঢেউয়ে যেনো সে এক তীর হারা নাবিক। নিজেকে সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে বারবার!
হুট করেই আবেশিত মস্তিষ্ক সজাগ হলো আরশির আরেকটা প্রশ্নে! মোম ধরে রাখা হাতের ব্যান্ডেজের দিকে তাকিয়ে ব্যগ্র কন্ঠে মেয়েটা বলে উঠলো,
“টিটেনাস নেয়ার পরও জ্বর জ্বর লাগছে? আপতত একটা প্যারাসিটামল নিয়ে নিন তাহলে এখন? কাল সকাল হলেই–!”
নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৩৫
ঠোঁটের উপর তর্জনীর ছোঁয়া পড়তেই কথা আঁটকালো ওর। চোখ তুলে চাইতেই দেখলো এক অন্য শেহজাদকে। কেমন ঘোরের মধ্যে যেনো লোকটা বলে উঠলো,
“প্যারাসিটামল নয়! অন্য কিছু লাগবে আমার!”
তখনই টুংটাং শব্দ আসতে লাগলো বসার ঘর থেকে! জারাকে সামনে বসিয়ে গিটারে সুর তুলেছে আয়ান। কানে ভেসে এলো এক ভালোবাসার সুর,
“সারা রাত ভোর..চোখের ভেতর,
স্বপ্নে তোমার আনাগোনা!
নেমে আসে ভোর..থাকে তবু ঘোর,
হাওয়ায় হাওয়ায় জানা শোনা!
তুমি দেখা দিলে তাই..,
মনে জাগে প্রেম প্রেম কল্পনা..!
আমি তোমার হতে চাই..,
এটা মিথ্যে কোন গল্প না..!
আমি তোমার হতে চাই..,
এটা মিথ্যে কোন গল্প না..!”