প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ২৫

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ২৫
আদ্রিতা নিশি

“ তখন কাঁদছিলি কেন? ”
সারহানের কন্ঠস্বর অতি শান্ত শোনাল। অরিত্রিকার মনোযোগ ছিল তার হাতের পোড়াস্থানের দিকে। উক্ত কথাটি শ্রবণ হতে দ্বিধান্বিত চাহনিতে তাকায়। কৌতুহল নিয়ে শুধায় ;
“ কখন? ”
সারহানের মুঠোবন্দি হাত আলগা হয়ে আসে। ততক্ষনাৎ অরিত্রিকার হাত ছেড়ে দেয়। মেয়েটির অন্য হাতের মুঠোয় ওড়নার কোণায় জড়িয়ে রাখা আইসকিউবটি ধরিয়ে দেয়। কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ায়। টাউজারের পকেটে দুহাত গুঁজে দৃঢ় কন্ঠে বলে ;
“ দরজা আটকে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদলি তখন? ”
অরিত্রিকা থতমত খেল। এই রে! তারমানে সারহান ভাই তার বেসুরে চিল্লিয়ে কান্নার আওয়াজ পেয়েছে? মান সম্মান সব গেল। সে তো বেশী জোরেও কাদেনি। অরিত্রিকা আমতা আমতা করে বলল ;

“ আপনি শুনতে পেয়েছেন? ”
“ গাধীর মতো আওয়াজ করে কাঁদলে আমি কেন পাড়া মহল্লার সবাই শুনতে পাবে। ”
“ আমার কন্ঠ মোটেও গাধীর মতে নয়। ”
“ তোর কন্ঠস্বর শুনলে একটা পশুপাখিও জীবিত থাকবে না। ”
“ দুইদিন আগে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কেউ একজন আমার গান গাওয়ার প্রশসংসা করেছিল। আপনি হয়তো ভুলে গেছেন। ”
“ তোর মতো ষ্টুপিড নই আমি। সবকিছু মনে আছে। ”
“ তাহলে কেন বললেন আমার কন্ঠস্বর গাধীর মতো।”
অরিত্রিকা ফুঁসে উঠে বলল। সারহানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হলো। গম্ভীর কণ্ঠে বলল ;
“ চ্যাটাং চ্যাটাং কথা না বলে যা জানতে চাইছি তার উত্তর দে। ”
অরিত্রিকা কটমট করে তাকিয়ে বলল ;
“ আপনাকে বলতে বাধ্য নই।”
“ বাধ্য নস? ”
“ নাহ। ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ ঠিক আছে চাচাকে তাহলে বলতেই হচ্ছে ভার্সিটির সেই প্রেমিক পুরুষের কথা। ”
“ আমার কোনো প্রেমিক নেই এটা আপনি ভালো করে জানেন। তবুও আমাকে কেন ভয় দেখাচ্ছেন?”
“ তোর সাহস দেখে মাঝে মাঝে সত্যি অবাক হই। আমার কথার বিপরীতে দলের কারোর টু শব্দ করার সাহস হয় না অথচ তুই তর্ক করিস! ”
“ আমি আপনার রাজনৈতিক দলের কেউ নই। ”
“ সাহস থাকা ভালো। তবে অতিরিক্ত সাহস থাকা ভালো নয়। ”
সারহান শক্ত কন্ঠে বলল। অরিত্রিকা একটু দমে যায়। ভয়ও পায় বটে তবে মনের মধ্যে অপ্রকাশিত রাখে। পরক্ষণে ধীর কন্ঠে বলে ;
“ মন খারাপ ছিল তাই কাঁদছিলাম। ”
সারহান একটু নড়েচড়ে দাঁড়ায়। ভ্রুযুগল কুঁচকে নিরেট কন্ঠে বলে উঠে;
“ কাউকে ভালোবাসিস? ”

অরিত্রিকা সরাসরি এহেন প্রশ্নে একটু চমকালো, থমকালো। বিস্ময়ের সাগরে পতিত চাহনিতে তাকাল সারহানের গম্ভীরমুখপানে। মানুষটার অভিব্যক্তি, কথার ধরন বলে দিচ্ছে তাকে নিয়ে অন্যদের থেকে বেশী সিরিয়াস। মনে হালকা হয়ে গেল। শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বইল শীতল শিহরণ। অজানা অনুভূতিরা বক্ষপিঞ্জরে আন্দোলন শুরু করল। তবুও দুষ্ট মন চাইল দুষ্টুমি করতে। এতো সহজে সে এসব পথে পা বাড়াবে না। তবে এমন প্রশ্নের করার কারণ তার মোটা মাথায় ঢুকল না। সেসব ভাবনা একপাশে রাখল। পেট ফেটে হাসি বেরিয়ে আসতে চাইছে। উহু এতো সিরিয়াস সময়ে হাসা চলবে না। কোনো মতো হাসিটুকু গিলে নিষ্পাপ কণ্ঠে বলল ;
“ হ্যা ভালোবাসি। ”
সারহানের কপালে বেশ কয়েকটা ভাজ পড়ল। দৃষ্টি আরো সরু হলো। পুরু কন্ঠে জানতে চাইল ;
“ কে সেই হাঁদারাম? ”
অরিত্রিকা ক্রোধে ফুঁসে উঠার ভাণ করে বলল;
“ আপনি আমার বয়ফ্রেন্ডকে হাঁদারাম বললেন? ”
সারহান বরাবরের মতো প্রশ্নটা উপেক্ষা করল। স্বভাবতই ইচ্ছে করল না কথা বাড়ানোর। দীর্ঘ শ্বাস টেনে বলল ;
“ সেই ছেলে তোকে ভালোবাসে? ”

“ হ্যা ভালোবাসে। কান্না করছিলাম কেন জানতে চাইছিলেন! আসলে আমার উনির সাথে আজ বিকেলে একটু ঝগড়া হয়েছিল তাই একটু বকেছিল সেই দুঃখে কাঁদছিলাম। ”
“ এতো গভীর ভালোবাসা! ”
“ হ্যা।”
সারহান গম্ভীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। ফিচেল হাসে ;
“ তুই মিথ্যা কথাটা ঠিকঠাক ভাবে বলতে পারিস না।”
অরিত্রিকা চমকে যায়। অবাক হয়ে বলে ;
“ আমি কখন মিথ্যা বললাম? ”
“ এতোক্ষণ যা বললি সব মিথ্যা। আমি জানতাম এবং দৃঢ় বিশ্বাস আছে তুই এসব ফালতু রিলেশনে নেই।”
অরিত্রিকার মুখ হা হয়ে গেল। কিঞ্চিৎ ভড়কে গেল। আড় চোখে তাকিয়ে বলল ;
“ কী করে বুঝলেন আমি মিথ্যা বলেছি। ”
সারহান মারাত্মক হেসে স্নিগ্ধ কন্ঠে বলল ;
“ তোর চোখ দেখে।”

অরিত্রিকা যেন থমকে গেল ওই হাসি দেখে। বিমোহিত নয়নে অপলক চেয়ে রইল শ্যামমানবের মুখপানে। মানুষটার ওষ্ঠকোণে বিরাজ করছে হাসির রেখা। মেয়েলী সত্তা তাতেই যেন মুগ্ধ হয়ে গেল। ইশ! এইভাবে কেউ হাসে? অন্য কোনো রমণী আপনার হাসি দেখলে মুহুর্তেই ঘায়েল হয়ে যাবে। এই যে এই মুহুর্তে আমাকে যেমন ভাবে ঘায়েল করলেন। মানুষটাকে সচারাচর হাসতে দেখা যায় না। দুই একবার হয়তো প্রাণখোলা হাসি হেসেছে। তবুও তার সামনে নয়। শ্যামমানবের হাস্যরত মুখ সহজে কেউ দেখতে পায় না। কাঠখোট্টা, বদমেজাজি মানুষটার মাঝে ভিন্নতা যেন আজ চোখে পরার মতো। সারহানের অরিত্রিকার চাহনি অগোচর হলো না। ওষ্ঠে কোণের হাসির রেখা প্রসারিত হয়ে উঠল।
সারহান হঠাৎ হাসি থামিয়ে দেয়। অরিত্রিকার হাতের দিকে তাকায়। দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠে ;

“ এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে দ্রুত রুমে গিয়ে এন্টিস্যাপটিক ক্রিম হাতে লাগা। ”
অরিত্রিকা কি সারহানের বলা কথাগুলো শুনল। বোধহয় না। সে একধ্যানে তাকিয়ে আছে সারহানের পানে। অরিত্রিকার এভাবে তাকিয়ে থাকার কারণে একটু বিব্রত হলো। সে কিছু বলতে যাবে এমন সময় কোনো প্রাণী ডেকে উঠল।
“ ম্যাও ম্যাও।”
সারহান দৃষ্টি নত করে মেঝেতে তাকাল। লেভি এসে উপস্থিত হয়েছে। কেমন ড্যাব ড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে খেয়ে ফেলবে। এতোক্ষণ স্বাভাবিক থাকলেও এখন তা বজায় রাখতে পারল না। নিজেকে স্বাভাবিক রাখা দুষ্কর হয়ে যাবে। অরিত্রিকা নিশ্চয়ই এই বদমাশ বিড়ালটাকে বলবে “ লেভি বেবি এই যে তোমার মামু! এই মামু শব্দটা তার কাছে জঘন্য লাগে। অরিত্রিকাকে উদ্দেশ্য করে বিরক্তিরসহিত বলে উঠল ;
“ তোর বেয়াদব লেভি বেবি এসেছে। নিশ্চয়ই বেয়াদব বিড়ালটা গোয়েন্দাগিরি করতে এসেছে। ”
অরিত্রিকা চমকে যায় রাশভারি কন্ঠে। দ্রুততার সহিত মেঝেতে তাকায়। লেভিকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে মৃদু হাসে। আদুরে ভঙ্গিতে বলে উঠে ;

“ লেভি বেবি কখন এসেছো? ”
“ শুধু লেভি বেবি নয় আমিও এসেছি। আই মিন লেভি এবং লেভির চার নম্বর মামু এসেছে।”
অকস্মাৎ আবিরের কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠে অরিত্রিকা। চমকিত নয়নে তাকায় কিচেনের দরজার দিকে। আবিরকে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরেক দফা চমকে উঠে। সারহান আবিরকে দেখেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানাল না। শুধু স্বাভাবিকভাবে জিজ্ঞেস করল ;
“ কখন থেকে চোরের মতো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস? ”
চোর বলায় আবির কেশে উঠল। গলা পরিষ্কার করে বলল ;
“ ওই যে, কী করে বুঝলেন আমি মিথ্যা বলছি। তোর চোখ দেখে। তারপর লালা লালা…. তখন থেকে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। অথচ দুজনের তো কোনো দিকে খেয়াল নেই। ”
অরিত্রিকা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেল। এসব শুনে হাসফাস করতে লাগল। ইশ! বেহায়ার মতো যে সারহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল নিশ্চয়ই দেখেছে। এখন তাদের নিয়ে উল্টাপাল্টা ভাবছে।
সারহান গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল ;

“ যখন তখন যেখানে সেখানে না বলে আসতে নেই। ”
আবির শব্দ করে হেসে বলল ;
“ আমি তো কিচেনে এসেছি। এখানে আসতেও যে অনুমতি লাগে জানা ছিল না। পরের বার অনুমতি নিয়ে আসব। ”
সারহান বিরক্তি সূচক চাহনিতে তাকিয়ে বলল ;
“ অসময়ে আসার অভ্যাস তোর গেল না। ”
অরিত্রিকার লজ্জায় মরিমরি অবস্থা। এক মুহুর্ত এই স্থানে থাকলে নিশ্চিত লজ্জায় অক্কা পাবে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে পালানো ভালো। সে তড়িঘড়ি করে কিচেন ছুটে বেড়িয়ে গেল। আবির তা দেখে উচ্চস্বরে হেসে দিল।
সারহান রুক্ষ ভরাট কন্ঠে বলে উঠল ;
“ তোর জন্য অরিত্রি লজ্জা পেল। একটু তো লাগাম টান শা*লা । ”
আবির হাসি বজায় রেখে বলে উঠল ;
“ দুইবছর পর ভালোবাসা উতলে পড়ছে? কি বলেছিলি যেন আমায়? ওহহ মনে পড়েছে, আমি চাই না তাকে আমার জীবনে জড়াতে। ”
“ চুপ কর ব্যাটা। ”
“ আজ থেকে আর চুপ থাকতে পারব না। ”

“ কল্লোল ফাউন্ডেশন ” হলো রাজশাহী শহরের একটি সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্টানের আওতায় রাজশাহী শহরের স্থানীয় কিছু এতিম খানা এবং নারী শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সোচ্চার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চালনা করা হয়। চিকিৎসা, খাদ্য, বস্ত্রসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো এতিমখানা ও নারী শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সোচ্চার প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়। আগামীকাল সারহান কল্লোল ফাউন্ডেশন পরিদর্শন করতে করতে যাবে। সেখানে মোটা অংকের টাকা ডোনেট করবে এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতাসহ কর্মচারীদের সাথে মানবাধিকার সংগঠন নিয়ে মিটিং আছে। সারহানের সাথে প্রত্যক্ষদর্শী টিম যাবে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য।
সারহান ও আবির লিভিং রুমে বসে আছে। সিরিয়াস ভঙ্গিতে আগামীকাল কল্লোল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতার সাথে মিটিং করা নিয়ে ডিসকাশন করছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্টেপ এবং অনাথ বাচ্চাদের পড়াশোনার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
সারহান প্রায় একঘন্টার ডিসকাশন শেষে গম্ভীর কণ্ঠে বলল ;

“এতিম বাচ্চাগুলোর জন্য দুপুরের খাবার এবং জামাকাপড় যেন সকালের দিকে পৌঁছে যায়। আমি এগারোটায় কল্লোল ফাউন্ডেশনে যাব তার আগে যেন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং কর্মচারীরা উপস্থিত থাকে। ”
আবির বলল ;
“ মুরাদ সাহেবের সাথে আমার কথা হয়েছে। সময় মতো সবাই পৌঁছে যাবে। ”
“ আই রিপিট ইউ ওয়ান্স এগেইন! কল্লোল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠানটির পুরো ডিটেইলস চাই আমার। ”
“ পেয়ে যাবি। ”
সারহান কিছুক্ষণ মৌন থেকে জিজ্ঞেস করল ;
“ বখাটে তিনটার কী খবর? ”
আবির ওষ্ঠ এলিয়ে হেসে বলল ;
“ কী খবর আবার আগের মতোই।”
“ কোনো উন্নতি নেই? ”
“ আতিক লাইফসাপোর্টে আছে। বাকী দুইজন কিছুটা সুস্থ। যে মা*র মে*রেছিস এখনো বেঁচে আছে কী করে ভাবছি। ”
“ ভুল জায়গায় হাত দিয়েছে এর মাশুল তো গুনতেই হবে। ”

সারহান রহস্যময় হেসে গা এলিয়ে দেয় সোফায়। চক্ষুপটে ভেসে উঠে সেই ঘটনা। শুনশান গোডাউনের নিরবতা ছিন্ন হয়েছিল বুলেটের আওয়াজে। বখাটেদের দুজন আতংকিত ভঙ্গিতে তাকিয়েছিল আতিকের দিকে। আতিকের একহাতে বুলেট লেগেছে। ঝাঝড়া হয়ে গেছে সেই হাত। বুলেট হাত ভেদ করে বেড়িয়ে গেছে। বাহুর মাংস ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। সেখান থেকে গলগল করে র*ক্ত পড়ছে। স্রোতের ন্যায় র*ক্ত মেঝে দিয়ে বেয়ে নিজ গতিতে অন্যত্র যাচ্ছে। বখাটে আতিক তখন চেতনা হারিয়েছে। চেয়ার থেকে শরীরটা নিচ দিকে হেলে পড়ছে। আবির এবং ইনান ভয়ে তটস্থ হয়ে গেছে। দেহরক্ষীরা নির্বিকার ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সারহান অনড় ভঙ্গিতে পরখ করছে বখাটেদের। ওষ্ঠকোণে বিরাজ করছে ফিচেল হাসি। দৃষ্টি স্থির চেয়ারে বাঁধা তিনজনের দিকে। দুজন ভয়ে সিঁটিয়ে আছে। তাদের ভেতর মৃত্যু ভয় কাজ করছে। আতিকের অবস্থা দেখে সারহানের মাঝে কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। মনের মাঝে হিং*স্রসত্তা আজ হঠাৎ জেগে উঠেছে। সহজে শান্ত হবে না। সারহান হাতে থাকা রিভলবার তাক করে আরেকজন বখাটের মাথা বরাবর। বখাটেটা চিৎকার করে উঠে।

“ আমায় মাই*রেন না এমপি সাহেব। ”
সারহান যেন পৈশাচিক হাসিতে মেতে উঠল। পুরুষালি হাত দ্বারা নাক বরাবর ঘুষি মা*রলো কয়েকটা। ছেলেটার নাক ফেটে গলগলিয়ে র*ক্ত পড়তে লাগল। অন্য পাশে বেঁধে রাখা আরেকজন বখাটেকে সজোরে থাপ্পর মারল। ঠোঁট কেটে গেল তখনই।
“ আবির নর্দমার কীটগুলোকে হসপিটালে এডমিট কর। ”
সারহান রাশভারি কন্ঠে বলে উঠল। অতঃপর বখাটে তিনজনকে হসপিটালে এডমিট করানো হয়। দুজন একটু সুস্থ থাকলেও আতিকের অবস্থা ভালো নয়। বুলেটের আঘাতে হাত অকেজো হয়ে গেছে। হাতের হাড় ফে*টে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে। তাই অপারেশনের মাধ্যমে হাত কেটে ফেলা হয়েছে।
“ সারহান।”
আবির উচ্চস্বরে ডাক শুনে সারহানের ভাবনার ছেদ ঘটে। ভ্রুযুগল বাঁকিয়ে তাকায় পাশে। ভরাট কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ;
“ কী হয়েছে। ”
আবির বলল ;
“ আর কিছু জানার থাকলে বল। ”
“ আপাতত কিছু জানার নেই। বাবা তোকে অরিনের আকদ উপলক্ষে ইনভাইট করেছে? ”
“ আমাকে আর ইনানকে ইনভাইট করেছে। ”
“ ইনান কেন আজ আসলো না? ”
“ আন্টির শরীর ভালো নেই তাই আসেনি। ”

অরিত্রিকা লিভিং রুম থেকে কিচেনে বারবার ঘুরাঘুরি করছে। লেভির পেছনে ছুটোছুটি করতে করতে অবস্থা বেহাল। মনে হচ্ছে শরীরে শক্তির বালাইটুকু নেই। হাতের পোড়া স্থানে এন্টিস্যাপটিক লাগিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। কিচেন থেকে পলায়ন করার পরপরই রুমে গিয়ে আদেশটুকু মেনেছে। অরিত্রিকা বাধ্য কিভাবে হলো আজ? সারহানের আদেশ মেনে কাজ করেছে। লেভি অরিত্রিকার হাতে ধরা না দিয়ে ছুটে এসে লিভিং রুমের সোফায় বসল। অরিত্রিকা রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল সেদিকে।

সারহান শান্ত চাহনি অরিত্রিকার দিকে নিবদ্ধ। নিখুঁত ভাবে মেয়েটির ভাবভঙ্গি অবলোকন করছে। ক্রোধান্বিত মুখাবয়ব, জ্বলন্ত চাহনি, নাসিক্যের পাটাতন ফুলছে, ফর্সা গাল লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। অরিত্রিকার ক্রোধে জর্জরিত চেহারা বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করল। এই রুপে যেন আরেকবার বিমোহিত হলো। মেয়েটার রণমূর্তি রুপের সাথে নতুন পরিচয় নয় তার। এর আগেও রাগান্বিত রুপে ঝলসে গিয়েছিল সে। সেদিন শুধু নির্বাক ভঙ্গিতে শান্ত চাহনিতে তাকিয়ে ছিল। ইচ্ছে করে ফাইরুজকে নিজের বক্ষে আগলে রাখুক যত্নে। কিন্তু তা কখনো হওয়ার নয়। মেয়েটা তাকে ভালোবাসে না, পছন্দ করে না। কী তিক্ত সত্য এটা! সেই তিক্ত সত্যিকে নিজের বক্ষে লালন করে পুড়ছে এতোকাল। মাঝে মাঝে তিক্ত অনুভূতিরা কুন্ডলী পাকিয়ে আছড়ে পড়ে বক্ষপিঞ্জরে। প্রণয় সুখের নয়, প্রণয় এক জলন্ত অগ্নিকুন্ড। সেই অগ্নিকুন্ডে যে পা দিয়েছে সে দগ্ধ হয়েছে।
কোনো অদৃশ্য প্রহেলিকা বারবার সারহানকে মনে করিয়ে দেয়

“ সে তোমার নয়। তুমি তাকে পাবে না। ”
মন ডেকে বলে ;
“ যাকে তুমি নিজের করে পাবে না! তাকে নিয়ে কেন ভাবো প্রেমিক পুরুষ? নিজেকে নিঃশেষ করতে পা বাড়িয়ো না তোমার বোকা রমণীর দিকে। সে পথ তোমাকে নিঃস্ব করে দেবে। ”
সারহান বিষাদগ্রস্ত ভঙ্গিতে হাসে। এই মেয়ে তাকে পুড়িয়ে দেবে, নিঃস্ব করে দেবে। ভালোবেসে কাউকে না পাওয়ার যন্ত্রনা কেমন বুঝিয়ে দেবে। একজন পাষাণ মানুষকে ভেঙে চুড়ে গুড়িয়ে দেবে। এই জঘন্য অনুভূতির খবর কী মেয়েটি পাবে?
আবির চক্ষুদ্বয় ছোট করে সারহানকে দেখছে। সচারাচর কখনো একধ্যানে মেয়েদের দিকে তাকায় না। আজ কী হলো এই ছেলের। গলা খাঁকড়ি দিয়ে বলল ;

“ ভাই কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ। ”
সারহান দৃষ্টি স্থির রেখে দৃঢ় কন্ঠে বলে ;
“ আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে জানি ব্রো। ”
“ একধ্যানে তাকিয়ে আছিস। মনে হচ্ছে চোখের পলক ফেললে হারিয়ে যাবে। ”
“ বহু আগেই সে হারিয়ে গেছে আমার জীবন থেকে। তবুও তাকে পাওয়ার আশা ছাড়তে পারি নি। দূরে তো ছিলাম আমি কিন্তু থাকতে আর পারলাম কই! আবারও প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছি এই আশায়, যদি তাকে নিজের করে পাই। ”

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ২৪

সারহানের কন্ঠনালী হতে নিঃসৃত শব্দগুচ্ছে প্রতিধ্বনিত হলো বিষাদের সুর। ভগ্নহৃদয়ের আহাজারি নয় বরং ভালোবেসে কাউকে না পাওয়ার নিরব আত্নচিৎকার। আবির তপ্ত শ্বাস ফেললো। ভাবল, এই বিভীষিকাময় প্রহরের শেষ কোথায়?

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ২৬