আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৪
ইশিকা ইসলাম ইশা
তোমার কফি!!
সদ্য গোসল করে শুধু টাওজার পরে বেরিয়ে আসতেই রুপের কথায় পিছনে ফিরে তাকায় তীব্র। মিষ্টি রুপবতী একটা মুখ তার সামনে।সেই মুখে লেগে আছে লজ্জা মিশ্রিত মুচকি হাসি।যুবতী সুন্দরী মেয়ের এই হাসিটা যেকোন পুরুষের মনে দাগ কাটবে।না চাইতেও আটকে যাবে মিষ্টি চাহনিতে। কিন্তু তীব্র!সে নির্বিকার ভঙ্গিতে গায়ে শার্ট জরাতে জরাতে বলল,
রেখে চলে যা!!
রুপের মনটা খারাপ হলো তীব্রর কথায়! তবুও বলল,
কিছু খাবে আমি করে দিব?
নাহহ!যেতে পারিস!!
রুপ চেয়েও আর বেশি কথা বলতে পারল না।কারন তীব্র একবার এর বেশি দুবার কিছু বলা পছন্দ করে না।মন খারাপ করে বের হতেই ছুটে আসে তিরা চৌধুরী।ছেলেকে কতোটা দিন দেখে না সে। উৎফুল্ল হয়েই বললো,
মাঝে মাঝে এখানে আসো যখন বাড়িতেও তো যেতে পারো তীব্র!!
তীব্র কোন কথা বলল না!! চুপচাপ তাকিয়ে আছে কোথাও। দৃষ্টি তার খুব শান্ত।কফির কাপে চুমুক দিয়ে কঠিন কিন্তু শান্ত স্বরে বলল,
রুপালি তোর বড়মা কে নিয়ে এই মুহূর্তে আমার চোখের সামনে থেকে সরে যা!!
তীব্র তু……….
আই সেইড লিভ!!রাইট নাও!!
অপমানে জর্জরিত হয়েও ছেলের দিকে ছলছল নয়নে তাকালো তিরা!!
তীব্র আমি……..
আই সেইড লিভ!!!যাস্ট লিভ!!
পরের বার জোরে চিৎকার করাই কেপে উঠল পুরো বাড়ি।কফির মগটা খন্ড বিখন্ড হয়ে ছিটিয়ে পড়ল ফ্লোরে!!
রুপালি ভয়ে তিরা কে নিয়ে নেমে এলো।রুপালি কিছু বলার আগেই তিরা চৌধুরী ছুটে গেল বাড়ির ভেতর!!রুপ অসহায় মুখে তাকিয়ে দেখল বড়মার চলে যাওয়া। ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। একপলক তীব্র নিবাসের দিকে চেয়ে নিজেও ভেতরে চলে এলো!!!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
থমথমে পরিবেশে সবাই খাওয়া শেষে যার যার মতো চলে গেল ।রিদি এককোনে তখনো ভয়ে তটস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে!!রুপ রিদির দিকে তাকিয়ে বলল,
চলো! ভাইয়া অপেক্ষা করছে!!
ভাইয়া নামটা শুনেই রিদি ঘামচে ধরল চেয়ারের মাথা।রুপ রিদির মনোভাব বুঝে বলল,
অভি ভাই দাঁড়িয়ে আছে এসো!!আমাদের লেট হচ্ছে!!রিদি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। কাঁধে ব্যাগ ঝুলাতে ঝুলাতে বলল,
তুমি কি আমার সাথে পড়ো আপু!!
কি!!আরে না!!আমি ভার্সিটিতে পড়ছি। আমাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে অভি ভাই কলেজে যাবে।
ওহহ আচ্ছা!!!রিদি এইটুকু বলেই আর কিছু বলল না।সকাল সকাল সবার মুড ই খারাপ।রিদি মনে মনে শ খানেক গালাগালি করল তীব্র কে!!
রিদি ব্যাগ নিয়ে গাড়ির কাছে আসতেই দেখে অভি দাঁড়িয়ে আছে!!তাকে দেখে মিষ্টি হেসে দরজা খুলে দিল।রুপ ততক্ষণে মন খারাপ করে বসেছে পিছনে। কতোদিন পর প্রিয় মানুষটার দেখা পেল কিন্তু মানুষ তাকে তার আশেপাশে থাকার সুযোগই দেয় না।
এদিকে রিদি সামনের সিটে বসতেই অভি তার জায়গায় বসে গাড়ি স্টাট দেয়।
দূর থেকে দৃশ্যটুকু দেখে কফির মগ টা টেবিলে রাখল তীব্র।হাতের কাগজ টা দেখা শেষ করে লাবিবের উদ্দেশ্য বলল,
“ছাড় দিলে কি ছেড়ে দেওয়া হয়??”
লাবিব হচকচিয়ে তাকাল তীব্রর দিকে।কথার মর্মার্থ না বুঝে বলল,
জি বস??
নাথিং………
লাবিব শুকনো ঢোক গিলল।বসের মনে কখন কি চলে!! আল্লাহ মালুম!কাগজে কোন ভুল থাকার কথা তো না।তাহলে বস কি ছাড়ার কথা বলল!!!
গাড়ি চলছে আপন গতিতে।পিছে চুপচাপ বসে আছে রিদি।অভিক আইনায় কাচুমাচু করে বসে থাকা মুখটা দেখল।মায়াময়ী একটা চেহেরা। চেহেরায় স্পষ্ট চিন্তার ছাপ।গ্রাম থেকে শহর সম্পন্ন আলাদা। তবে রিদিকে দেখে ভালোই লাগছে মার্জিত ভাবেই নিজেকে গুছিয়েছে।
গাড়ি রুপের ভার্সিটি সামনে এসে থামতেই রুপ নেমে যায়।রিদিকে বাই বলে ঢুকে গেল ভেতরে।রিদি চুপচাপ রুপের যাওয়া দেখল। মেয়েটার মুখটা বেশ মলিন দেখালো।
আবারো গাড়ি চলতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পরে গাড়ি ঢুকল বিশাল বড় গেট দিয়ে।চারদিকে তার মতো ড্রেস পড়া অনেক ছেলেমেয়ে ঘুরছে। পার্কিং এরিয়াতে গাড়ি রেখে রিদিকে নামতে বলে অভিক……
নেমে আসো!!
রিদি ধীরে নেমে আসল গাড়ি থেকে।অভিক রিদির ভয়ার্ত মুখটা দেখে বলল,
ভয় পাওয়ার কিছু নেই!সোজা গিয়ে ডানেই তোমার ক্লাস রুম।বলে অভিক চলে যেতে চাইলে রিদি খপ করে অভিকের হাত ধরল।অভিক চমকে উঠে চাইল ধরে রাখা হাতের দিকে।রিদি কিছুটা ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
ভাইয়া আমার ভয় করছে!!
অভিক তাকালো রিদির দিকে। নতুন পরিবেশ ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। তবে ভয়ে শ্যামরাঙ্গা মুখটা ভীষণ আদুরে লাগল তার কাছে।হাতটা এখনো ধরে আছে তার।অভিক অন্তরালে মুচকি হাসল! কোথাও তো ভাললাগা ছেয়ে গেল।অভিক নরম কন্ঠে বলল,
ভয় পাওয়ার কিছু নেই রিদিতা যাও!!
আপনি একটু আমার সাথে চলুন প্লিজ!!
অভি একই স্বরে বলল,
আমি গেলে সমস্যায় পড়বে তুমি।হাজারো প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।তাই বলছি যাও!! তোমার জন্যই ভালো!!
রিদি আর কিছু বলতে পারল না।অভিকের হাত ছেড়ে ধীর পায়ে হাঁটতে থাকল।চারদিকে এতো এতো ছেলেমেয়ে কিন্তু সব তার আজানা, অচেনা।রিদির ইচ্ছে করছে কান্না করতে। নতুন জায়গায় মানিয়ে নিতে বেগ পোহাতে হচ্ছে তাকে।রিদি সোজা হাঁটতে হাঁটতেই হুট করে থাক্কা খেল কারো সাথে।থপ করে পড়ল ফ্লোরে।
সরি সরি!!তুমি ঠিক আছো???আমি সরি!!
রিদি কাপড় ঝেড়ে বলল,
সমস্যা নেই!!
তোমার কি লেগেছে??সরি!!গো!!সরি!!
রিদি এতোবার সরি বলায় ফিক করে হেসে বলল,
কতোবার সরি বলবে!!থামো!!আমার লাগেনি।আমি ঠিক আছি!!মেয়েটি রিদির কথায় মিষ্টি হেসে বলল,
হাই !!আমি মেঘলা!তুমি??
আমি রিদিতা!
নতুন নাকি!!
হুম!
কোথায় থেকে ট্রান্সফার হয়ে এসেছো?
দেরিতে ভর্তি হয়েছি তাই!!!
ওহহ!!জলদি চলো আজ খারুশ স্যারের ক্লাস আছে!!
কি স্যার??
খারুশ!!মানে জল্লাদ!!
কি!! স্যার তাও জল্লাদ!!
অভিক চৌধুরী আয়ান!!শুনোনি ওনার নাম!!একদম জল্লাদের মতো দেখতে!!
অভিক নামটা শুনে চমকে উঠলো রিদি!অভিক মানে!!নাকি আলাদা কোন অভিক আছে!!রিদির ভাবনার মাঝেই মেঘ রিদির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।রুমের ফাঁকা বেঞ্চে বসতেই মেঘ বলল!!
এতো দেরিতে ভর্তি হয়েছো যে!!
আসলে আমি!! মানে….
বুঝেছি হয়তো কোন সমস্যা হবে!!থাক বলতে না চাইলে বলো না!! তবে আজ থেকে তুমি আমি বন্ধু!!
রিদি মেঘের চঞ্চলতা দেখে মুচকি হাসল!মেঘ ও মুচকি হাসল!!এর মাঝেই কেউ মেঘের মাথায় চাপর মেরে বলল,
সালি আমারে রাইখা আইছোস ক্যাল্যা??
মাথায় মারিস ক্যা!!হিসু মিসু করলে কি হবে!!!
মেয়েটি কিছু বলার আগেই রিদি মেঘের কথায় খিলখিল করে হেসে উঠল!!মেঘ আর মেয়েটা দুইজন ই অবাক হয়ে দেখল রিদিকে!!এবার মেয়েটি ফট করে বলল,
বাহহ!! তোমার হাসি তো সেই মাইরি!!এক্কারে ঝাক্কাস!!
মেঘ ও মুচকি হেসে বলল,
সত্যি তোমার হাসি তো সেই!!ক্রাশ খাওয়ার মতো!!
রিদি কিছু বলার আগেই সবাই হুরমুর করে রুমে ঢুকল ক্লাসের সবাই!!মেয়েটি রিদির পাশে বসতে বসতে বলল,
এই রে ক্রাশের ক্লাস!!বাশ না দিলেই হয়!!
মেঘ ভেঙ্গচি কেটে বলল,
জল্লাদ হাজির হলো!!সালাম ঠুকো!!
রিদি দুইজনের অভিব্যাক্তি দেখে সামনে তাকাতেই তাজ্জব বনে গেল।
অভিক ভাইয়া!!
জি!! জি!!রিদির অভিক ভাইয়াই তাদের টিচার!!!যিনি একজনের কাছে জল্লাদ আর বাকি সবার নাকি ক্রাশ!!হয়তো এই জন্যই তখন তার সাথে আসতে চায়নি।বড়চাচা স্কুলের শিক্ষক হওয়াই বেশ ঝামেলার সম্মুখীন হয়েছিল রিদি।সবাই বলত স্কুলে না এসেই পাশ,কেউ বলত পেপার তো এমনিতেই পেয়ে যায়, আবার কেউ বলত চাচা থাকলে ট্যালেন্ট লাগে না।
কতোজনের তিক্ত কটুক্তি শুনেছে সে!!
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৩
এই রিদু!!এই!!
হু!!হু!!
কি এতো ভাবছিস!!
না কিছু না। ভাবছি আসলে ভাবছি জল্লাদ রা এমন হ্যান্ডসাম হয় কিভাবে।
জল্লাদ হ্যান্ডসাম ই হয় বুঝলি!!ইডেনের বিড়াল কোথাকার!!!
ইডেনর বিড়াল!!! মানে!!!
মেঘ কিছু বলার আগেই ভেসে এলো গভীর কন্ঠস্বর!!
সবাই ক্লাসে মনোযোগ দিন!!
মেঘ কটমট করে বলল,
দেখলি দেখলি!!
রিদি গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্লাসে মন দিল।তবে এদের আগা মাথা কিছুই বুঝল না।