প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৩২
আদ্রিতা নিশি
“ জিজু আগে টাকা দিন নয়তো আপনার বউকে আমরা আপনার সাথে দেখা করতে দেবো না। ”
অরিত্রিকা ও ইশরার কন্ঠস্বর শ্রবণেন্দ্রিয়ে প্রবেশ করতেই ভ্রুযুগল কুঁচকে তাকায় আবির। সামনে তার ছোট দুই শালিকা কোমড়ের হাত গুঁজে বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। আবির আড় চোখে তাকায় পাশে বসা পরানের বন্ধুর দিকে। সারহান গম্ভীরমুখে বসে ফোন স্ক্রোল করছে। আশে পাশে কি হচ্ছে ভ্রূক্ষেপ নেই। বন্ধুর যে টাকা খসতে চলেছে সেদিকে একটু নজর দিলে কী এমন হতো? সে পুনরায় তাকায় ইশরা ও অরিরিকার দিকে গলা খাঁকড়ি দিয়ে বলে ;
“ আমার বউ আমি দেখবো টাকা কেন দেবো? ”
অরিত্রিকা সংকুচিত নয়নে তাকাল। স্বাভাবিক ভাবে বলল ;
“ আগে টাকা দিন তারপর বউ নিন। থুক্কু বউয়ের সাথে দেখা করুন। ”
“ দিনে দুপুরে ডাকাতি করছো তোমরা? ”
“ নাহহ। আমরা সন্ধ্যা রাতে ডাকাতি করছি। ”
ইশরা দাঁত কেলিয়ে বলে উঠল। আবির বুঝল এদের থেকে রেহাই পাওয়া মুশকিল। তাই টাকা দিয়ে দেওয়া ভালো। জিজ্ঞেস করল ;
“ কতো? ”
অরিত্রিকা একগাল হেসে বলে উঠল ;
“ বেশী না মাত্র এক লাখ টাকা।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আবির খুকখুক করে কেশে উঠল। এক লাখ টাকা মাত্র। শালীকারা হলো ডাকাতের মামাতো বোন। ডাকাত অস্ত্রের মুখে লুট করে নিয়ে যায় আর শালীকারা বউ আঁটকে রেখে টাকা লুটে নেয়। আবির হাসার ভাণ করে বলল ;
“ শালীকারা তোমরা কী ডাকাতের মামাতো বোন? না মানে বউ আঁটকে রেখে আমায় লুট করার ধান্দা আটছো? ”
ইশরা মৃদু হেসে বলল ;
“ একদম ঠিক ধরেছেন জিজু টাকা দিন নয়তো বউ পাবেন না। ”
“ তাহলে বউ তোমরা রেখে দাও আমার আপাতত এখন লাগবে না। একবারে রিসেপশনের পরে বউ পেলেই হবে। ”
“ আপনার বউ আপনি নিয়ে যান। ”
“ আমার বউ তোমরা রেখে দাও। আপাতত রিসেপশন পর্যন্ত সিঙ্গেল ফিল করতে চাই। ”
আবির দাঁত কেলিয়ে বলল। অরিত্রিকা ইশরা মুখ বেজার করল। দুজনে মুখ গোমড়া ধুপধাপ গিয়ে বসল অপর পাশের সোফায়। এর মাঝে সাদাত সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে নিচে নামল। লিভিং রুমে এসে আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলল ;
“ আবির ভাইয়া তোমায় অরিন আপু ডাকছে। ”
আবির একপলক অরিত্রিকা এবং ইশারার দিকে তাকিয়ে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটিয়ে বলল ;
“ শালীকারা দেখেছো বউ আমায় ডাকছে। ”
অরিত্রিকা মুখ বেঁকিয়ে বলল ;
“ যান আপনার বউয়ের কাছে। শালীকাদের ডাকাত বলেছেন তাই না আপুকে সব বলে দিবো তখন দেখবেন কী হয়। ”
“ ঠিক আছে বলো। ”
কথাটি বলে আবির হেলেদুলে ফুরফুরে মেজাজে অরিনের রুমের দিকে গেল। সাদাত ধপ করে গা এলিয়ে বসল সারহানের পাশে। অতঃপর মৃদু হেসে বলল ;
“ মন খারাপ করিস না। আমার বিয়েতে তোদের পাঁচ লাখ টাকা দেব। ”
ইশরা মুখ বাকায় এই কথা শুনে। অরিত্রিকা চক্ষুদ্বয় ছোট ছোট করে তাকায়। বড় ভাইয়ের বিয়ের কোনো খবর নেই ছোট ভাই আসছে বিয়ে করতে। মনের কথা মনে গোপন না রেখে ত্যাছড়া স্বরে বলল ;
“ বড় ভাইয়ের বিয়ের কোনো খবর নাই আর ছোট ভাই বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে। আগে তোর ভাইকে বিয়ে করতে বল।”
সাদাত সারহানের দিকে একপলক তাকাল। পুনরায় দৃষ্টি ফিরিয়ে ক্যাবলা মার্কা হেসে বলল ;
“ হে হে। ভাইয়ের বিয়ের আশায় থাকলে আমার বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাবে। ”
অরিত্রিকা মুখ টিপে হেসে বলল ;
“ তা ঠিক বলেছিস। দেখা যাবে আমার, তোর, ইশরার বিয়ে হয়ে গেল কিন্তু তোর ভাইয়ের বিয়ে হলো না। কেমন একটা লাগবে তাই না! ”
“একদম ঠিক বলেছিস। ”
সারহান ফোন পকেটে রেখে দেয়। চিবুক শক্ত করে অরিত্রিকার দিকে রক্তাভ দৃষ্টিতে তাকায়। অরিত্রিকা সেই চাহনি লক্ষ্য ধরফরিয়ে উঠে। হাসি থেমে যায় তখনি। ইশরাও হাসছিল এতোক্ষণ সারহানের জ্বলন্ত চাহনি দেখে কাচুমাচু ভঙ্গিতে বসে রইল। সাদাত ও ওষ্ঠে আঙুল চেপে চুপ করে বসে আছে।
“ তোর বিয়ের শখ হয়েছে পূরণ করে দেবো? ”
সারহান অরিত্রিকাকে উদ্দেশ্য করে গমগমে কন্ঠে বলে উঠল। অরিত্রিকা ভয়ে সিঁটিয়ে গেল। আমতা আমতা করে বলল ;
“ আমি বিয়ে করব কখন বললাম? আমি তো আপনার বিয়ের কথা বলছিলাম। ”
সারহান তির্যক দৃষ্টিতে অবলোকন করল ভীতিগ্রস্ত মুখখানা। ভরাট কন্ঠে বলল ;
“ বিষয়টা একই। ভেবেছিলাম হবু বউ একটু ছোট এবং ইম্যাচিউর, একটু বড় এবং ম্যাচিউর হোক তারপর বিয়ে করব। কিন্তু তোদের জ্বালায় মনে হচ্ছে দ্রুত বিয়েটা করে ফেলতে হবে। ”
অরিত্রিকার বক্ষ কেঁপে উঠল। সারহান ভাই কি তাকে ইঙ্গিত করে কথাটা বলল? দুরুদুরু বুকে নিয়ে তাকাল শ্যামমানবের দিকে। তীক্ষ্ণ চাহনি যেন একটু দিশেহারা করল। ইশরা অবুঝের ন্যায় বসে রইল। সে বুঝল না সারহান ভাই কার কথা বলছে? তবে কি কাউকে পছন্দ করেন? এ প্রশ্ন করার সাহস করল না। সাদাত নড়েচড়ে বসল। সন্দেহবাতিক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল ;
“ ভাই কার কথা বলছো? ”
“ আমার না হওয়া বিবিজানের কথা বলছি। ”
সারহানের নির্লিপ্ত কন্ঠস্বর। অরিত্রিকাকে বিচলিত করল। তারমানে মানুষটা তার কথা বলেনি। উনার না হওয়া বিবিজানের কথা বলেছে। মন বিষন্ন হলো। খারাপ লাগায় মুখ ভার হয়ে উঠল। যেদিন সারহান ভাই জানবে মেয়েটা আর কেউ নয় সে তখন কী হবে? কিন্তু তার মস্তিষ্ক বলছে একজন এমপির কাছে একটা মেয়েকে খুঁজে বের করা মোটেও কঠিন ব্যাপার নয় কিন্তু সারহানের ভাবভঙ্গি সে বুঝতে পারে না। একটা মানুষের এতো রুপ কীভাবে হয় সে ভেবে পায় না।
সাদাতের সন্দেহ গাঢ় হয়। সে সন্দেহবাতিক কন্ঠে বলে উঠে ;
“ ভাই তুমি কার কথা বলছো? ”
সারহান সাদাতের দিকে তাকিয়ে ফিলেচ হেসে বলে ;
“ তুই যাকে সন্দেহ করছিস তাকে। ভাবছি বিয়েটা খুব শীঘ্রই করে ফেলব। কী বলিস সাদাত? এবার বল ভাবী পছন্দ হয়েছে? ”
“ ভাই তুমি এসব কি বলছো? তুমি জানো এমনটা কখনো সম্ভব নয়। ”
সাদাত উদ্বিগ্ন হয়ে বলল। সারহান ভাবলেশহীন ভাবে বলল ;
“ সারহানের ডিকশিনারিতে অসম্ভব বলে কোনো শব্দ নেই ব্রো। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। ”
সাদাত এহেন কথায় অবাক হয়। তাহলে কী তার ভাই বড়দের বিপক্ষে গিয়ে অরিত্রিকাকে বিয়ে করবে? ভাবতে গলা শুকিয়ে গেল। সামনে নিশ্চিত বড় কোনো হাঙ্গামা শুরু হবে৷ সারহানের স্বভাবসিদ্ধ অনড় ভঙ্গিতে বসে রইল।
আজমল সাহেব মেয়ের আকদের পর রুমে মুখ ভার করে বসে আছেন। আরশাদ সাহেব ছোট ভাইকে আবির ভালো ছেলে এটা বোঝাতে বোঝাতে হাঁপিয়ে গিয়েছেন। আজমল সাহেবের অবুঝের ন্যায় ভাব তাকে ভীষণ বিরক্ত করেছে। শেষমেশ বোঝাতে অক্ষম হয়ে নিজের রুমে চলে গেছেন। তানিয়া বেগম এবং সাথী বেগম নতুন জামাইকে আদর আপ্যায়নের জন্য খাবার গরম করছেন। দুজনে ভীষণ খুশি। আবিরের মতো একটা ভালো ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আজকাল এমন ভালো ছেলে পাওয়া দুষ্কর।
লিভিং রুমে নিস্তব্ধতার মাঝে উপস্থিত হয় ইরফান। সাদাতের ওপর পাশে গা এলিয়ে আয়েশ করে বসে । অতঃপর অরিত্রিকার মুখপানে স্থির করে। মেয়েটাকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে একটু বিচলিত হয়। অশান্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে ;
“ অরিত্রিকা মন খারাপ করে আছিস কেন? ”
অরিত্রিকা একপলক ইরফানের দিকে তাকিয়ে অন্যত্র দৃষ্টি ঘুরালো তবুও কোনো উত্তর দিলো না। ইরফানের এমন প্রশ্নে সারহান একটু বিরক্তিবোধ করে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। এই মুহুর্তে সিনক্রিয়েট করে লাভ নেই। অরিত্রিকার নিশ্চুপ ভাবে ইরফান আরও বিচলিত হয়। সাদাত তা লক্ষ্য করে দৃঢ় কন্ঠে বলে ওঠে ;
“ বয়ফ্রেন্ড ছ্যাকা দিয়েছে তাই মুখগোমড়া করে আছে। ”
ইরফান যেন থমকে গেল। অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাকিয়ে বলল ;
“ অরিত্রিকার বয়ফ্রেন্ড আছে? ”
“ হ্যা আছে তো মানে না হওয়া বয়ফ্রেন্ড। বেচারা অরিত্রিকার না হওয়া বয়ফ্রেন্ড তাকে হালকা ছ্যাকা দিয়ে অন্য একজনকে বিয়ে করবে বলেছে। তাই অরিত্রিকা দুঃখবিলাস করছে। ”
“ এসব কথা বিশ্বাস করিনা। মিথ্যা বলছিস তুই। ”
ইরফান শক্ত কন্ঠে বলল। সাদাত তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল ;
“ হ্যা ভাই মিথ্যা বলছি। তবে যখন তখন কাহিনী কিন্তু সত্যি হয়ে যেতে পারে। ”
ইরফান একটু শান্ত হয়। নিচু কন্ঠে বিরবির করে বলে;
“ এমন কাহিনী ঘটার আগে অরিত্রিকাকে নিজের করে নেব। আর মাত্র কিছুদিন তারপর ছোট মামুর থেকে তার ছোট মেয়েকে পার্মানেন্টলি চাইব। ”
সারহানের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে শব্দগুচ্ছ। ওষ্ঠকোণে ক্রূর হাসি খেলে যায়। ওষ্ঠ কামড়ে বিরবির করে বলে ;
“ সরি ব্রো, সেই সুযোগ তোকে আমি দেবো না। একবার যাকে নিজ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি তাকে পুনরায় নিজের থেকে দূরে রাখতে পারব না। এবার যা হবে সবার সামনে হবে, কোনো গোপনীয়তা নয়। ”
সাদাত হতাশ হয়ে তার দুইপাশে বসা দুজনের দিকে তাকায়। মুখ কুঁচকে বিরবির করে ;
“ অরিত্রিকা যদি জানতে পারে দুজন প্রেমিক তার পিছে পড়ছে তখন তার ভাবভঙ্গি কেমন হবে? নিশ্চয়ই গান গাইবে বিধি তুমি বলে দাও আমি কার? একটা মনের দুজন দাবীদার।”
এরমাঝে লিভিং রুমে হেলেদুলে প্রবেশ করল লেভি। দৌড়ে এসে লাফিয়ে অরিরিকার কোলে বসল। হঠাৎ এহেন কান্ডের হচকচিয়ে গেল অরিত্রিকা। চমকিত নয়নে তাকায় কোলের ওপর। লেভি অরিত্রিকা চাহনি দেখে লেজ নাড়িয়ে ডেকে উঠল। অরিত্রিকার মন ভালো হয়ে গেল। দুহাতে আগলে নিলো লেভির তুলতুলে দেহখানা। উৎফুল্ল হয়ে বলল ;
“ কি হয়েছে লেভি সোনা? ক্ষিধে পেয়েছে? ”
লেভি ডেকে উঠে। সারহান তির্যক দৃষ্টিতে অবলোকন করতে থাকে বিড়ালটাকে। লেভি তার দিকে কেমন অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে পূর্ব জন্মের কোনো শত্রুতা আছে আর সেই শত্রুতা এই জন্মে কন্টিনিউ করছে। সাদাতের মাথায় শয়তানী বুদ্ধি আসে। গলা খাঁকড়ি দিয়ে বলে উঠে ;
“ লেভি বেবী দেখো আমার দুইপাশে তোমার আরও দুইটা হ্যান্ডসাম মামু বসে আছে। তোমার কোন মামুকে পছন্দ হয়েছে? ”
সারহান এবং ইরফান সাদাতের দিকে কটমট করে তাকাল যেন চোখ দিয়ে ভস্ম করে দেবে। সাদাত সেই চাহনি লক্ষ্য করে সুযোগ বুঝে সটকে পড়ল। ইশরা এবং অরিত্রিকা খিলখিলিয়ে হেসে দিলো। অরিত্রিকা দৃষ্টি স্থির হলো সারহানের দিকে।একটু করুনা হলো। আহারে! কাঠখোট্টা মানুষটার মামু ডাকটা শোনাতে মন ভেঙে গেছে। ইরফানের মন ভার হয়ে এলো।সে আর একমুহূর্ত বসল না হনহনিয়ে উঠে চলে গেল।
“ অরিন ডেকেছো কেন? ”
আবিরের কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই অরিন পিছু ফিরে তাকায়। আবির রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে। পাঞ্জাবির হাতা গুটাতে গুটাতে এগিয়ে এসে অরিনের সামনে দাঁড়ায়। মুখাবয়ব স্বাভাবিক এবং শীতল চাহনিতে তাকিয়ে আছে। ”
অরিন দুকদম পিছিয়ে গিয়ে বসে বিছানায়। আগ্রহী হয়ে জানতে চায় ;
“ আজকে থাকবেন? ”
আবির শান্ত কন্ঠে বলল ;
“ হঠাৎ এ প্রশ্ন? ”
“ জানতে ইচ্ছে করছিল। ”
“ দুই শশুড় থাকতে বলেছে তাই থেকে যাচ্ছি। ”
“ ওহহ। বাড়িতে জানিয়েছেন বিয়ের কথা? ”
অরিন একটু থেমে প্রশ্ন করে। আবির দৃঢ় কন্ঠে বলে ;
“ এখনো জানাইনি। আগামীকাল বাড়ি ফিরে জানাবো। ”
“ যদি আমাকে মেনে না নেয়?”
“ আমার বউয়ের মধ্যে কোনো কমতি নেই যে মেনে নেবে না। এসব উদ্ভব চিন্তা মাথায় আনার দরকার নেই। ”
আবিরের দৃঢ় কন্ঠের বউ ডাকটা শুনে শরীর শিরশির করে উঠল অরিনের। বক্ষে শীতলতা বইয়ে গেল। কিছুটা লজ্জায় আড়ষ্ট হলো। এদিক ওদিক তাকাল। সুতির ওড়নাটা সুন্দর করে গায়ে জড়িয়ে নিল। আবির দেখল অরিনের লাজে রাঙা মুখ।বক্ষে কেমন শিহরণ বইয়ে গেল। ভাবতে অদ্ভুত লাগছে যে মেয়ে দুইদিন আগে অব্দি বন্ধুর বোন হিসেবে দেখেছে এখন সে তার বউ। এতে অবশ্য সারহানের কারসাজি রয়েছে। ব্যাটা সুযোগ বুঝে বন্ধুকে দুলাভাই বানিয়ে দিল। মাথায় এতো কুটিল বুদ্ধি নিয়ে কীভাবে ঘুমায়?
“ আপনি কী ফ্রেশ হবে না? পাঞ্জাবী পরে আর কতক্ষণ থাকবেন? ”
অরিন নিজেকে সামলে নিয়ে ধীর কন্ঠে বলে ওঠে। মেয়েলী সুমধুর কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করতে ভাবনার ছেদ ঘটে আবিরের। দৃষ্টি সরিয়ে ভরাট কন্ঠে বলল ;
“ ফ্রেশ কীভাবে হবো? একট্রা শার্ট – প্যান্ট নিয়ে আসিনি। ”
অরিন বোকাসোকা স্বরে বলল ;
“ কেনো? ”
“ যদি জানতাম বিয়ের দাওয়াত কবুল করতে এসে নিজের বিয়ে হয়ে যাবে তাহলে শার্ট প্যান্ট নিয়ে আসতাম। ”
আবিরের কথায় থতমত খেল অরিন। বিছানা থেকে নেমে তটস্থ ভঙ্গিতে। আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলল ;
“ আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন আমি আপনার জন্য জামা কাপড়ের ব্যবস্থা করছি।”
কথাটি বলে অরিন রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। আবির তা দেখে নিঃশব্দে হাসল। এখন মনে হচ্ছে সে বিবাহিত।
অরিত্রিকা ফ্রেশ হয়ে মাত্র রুমে বসেছিল কিন্তু এর মাঝে ইশরা এসে বলল সারহান ভাই তাকে ছাদে ডাকছে কোনো জরুরী কথা বলার জন্য। সারাদিনের বিয়ে বাড়ির কাহিনীতে তার মন শরীর ভীষণ ক্লান্ত। এখন ঘুমালে কিছুটা স্বস্তি মিলতো। অরিত্রিকা ভেজা চুল হেয়ার ক্লিপ দিয়ে আটকে নিলো৷ অতঃপর মুখ ভার করে ছুটলো ছাদের দিকে।
রাত দশটা বেজে পনেরো মিনিট। সারহান দাঁড়িয়ে আছে ছাদের রেলিঙ ঘেষে। স্থিরচিত্তে তাকিয়ে আছে অম্বরের পানে। অম্বরের মেঘাচ্ছন্ন আমায় দেখা মিলছে তারকারাজির। অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য। সারহানের মন আজ ভীষণ অশান্ত। কারণটা তার সিক্রেট অ্যামব্রোজিয়া (নিভৃতসুধা)। পাষাণ মনের মানুষের মনে প্রেমিক সত্তার আগমন ঘটেছে। এটা হয়তো আগে কখনো অনুধাবন করতে পারেনি। কিন্তু এখন পারছে। অনুভূতিরা বক্ষ ভেদ করে উগ্রে বাহিরে আসতে চাইছে। এ অনুভূতি দমিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে এসে প্রণয়িনী একান্ত আপন করতে চাইছে মন। কিন্তু কোথাও যেন আঁটকে যাচ্ছে? মন বলছে প্রেমিকপুরুষ ভালোবাসা জোর করে হয় না। সত্যি কি সে জোর করেছে নাকি নিজের ভালোবাসা জাহির করেছে? সারহান দ্বিধায় ভোগে। দ্বিধান্বিত মনে ভাবতে থাকে। মেয়েটার মনে কি তার জন্য কোনো জায়গা আছে? যদি প্রণয়িনীর মনে প্রেমিক পুরুষের অস্তিত্ব না থাকে তবে কীসের জন্য ভালোবাসার মানুষটিকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হচ্ছে। সারহানের কঠোর মন এখন ভীষণ নরম। মন চায় মেয়েটি তাকে অল্প ভালোবাসুক তবুও তার থাকুক। অন্য কারোর পাশে তার একান্ত নিভৃতসুধাকে সে সহ্য করতে পারবে না। এতো গভীর ভাবনায় পুরুষালি মনে উচাটন দেখা দেয়, বিচলিত হয় ভীষণ। নিজেকে শান্ত করতে দীর্ঘ শ্বাস টানে।
“ সারহান ভাই ডেকেছিলেন? ”
অরিত্রিকার সুমধুর মিষ্ট কন্ঠস্বর সারহানের কানে প্রতিধ্বনিত হয়। তড়িৎ বেগে তাকায় পাশে। অরিত্রিকা দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে তাকিয়ে। নিভৃতসুধা তার ডাকে সাড়া দিয়েছে। প্রসন্ন হাসে সারহান। তবে তা রাতের আঁধারে অরিত্রিকার অগোচরে থেকে যায়। রাতের গভীরতা বাড়ছে। শহরে জনমানসের আনাগোনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছুটা দূর হতে ভেসে আসছে যানবাহনের আওয়াজ। উষ্ণ শীতল হাওয়া বইছে প্রকৃতিতে।
“ হ্যা ডেকেছিলাম। ”
সারহানের শান্ত কন্ঠস্বর। অরিত্রিকা স্বভাবসিদ্ধ কন্ঠে শুধায় ;
“ কেন ডেকেছেন? ”
“ এমনি। ”
“ এমনি কেউ ডাকে? সত্যি করে বলুন কেনো ডেকেছেন? ”
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৩১
অরিত্রিকা সারহানের ভাবলেশহীন কন্ঠস্বর শুনে অবাক হয়ে বলে। সরু চোখে তাকায় মানুষটার দিকে। অন্ধকারে মুখের ভাব বোঝা যাচ্ছে না। তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছে সারহান তার দিকে তাকিয়ে আছে।
“ তোকে অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতে এক পলক দেখার ইচ্ছে জেগেছিল নিভৃতসুধা। তাই ইচ্ছেটা পূরণ করলাম।”
সারহানের হিমশীতল দৃঢ় কন্ঠস্বরে মেয়েলী অবয়ব কেঁপে উঠল। অশান্ত লোচনে তাকাল মানুষটার দিকে। পাষাণ মানুষটা তাকে এতোটা ভালোবাসে? আর পুরুষালি স্বরে নিভৃতসুধা ডাকটা এতো স্নিগ্ধ লাগল কেন? তবে কি সে প্রেমে পড়েছে।