প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৩০

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৩০
আদ্রিতা নিশি

বন্ধুমহলের সাথে অনেকদিন পর দেখা হয়ে সারহানের ভীষণ ভালোলাগছে। কতোদিন পরে সবাই একসাথে হলো। প্রায় এক বছর পর এক্সিডেন্টের উছিলায় দেখা তো পেলো। নিজের মাঝেও উৎফুল্লতা অনুভব করছে। মুন, পৃহাল,ইফাত আর রাই কেবিনেই বসে আছে। তারা নিজেদের মাঝে ধীরে কিছু নিয়ে আলোচনা করে যাচ্ছে।এতোটাই ধীরে কথা বলছে আশেপাশে কারও কারনেই আওয়াজ পৌঁছাচ্ছে না। আস্তে কথা বলার কারণ সারহানের অসুস্থতা।
সারহান এখনো আধশোয়া হয়ে বসে আছে। তার দৃষ্টি অরিত্রিকার দিকে নিবদ্ধ। সে নিবিড় দৃষ্টিতে অরিত্রিকার হাবভাব অবলোকন করছে। বোঝার চেষ্টা করছে নিরব মনে কি তো ভেবে চলেছে। অরিত্রিকার মুখশ্রী গম্ভীর। দৃষ্টি মুনের দিকে আবদ্ধ। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু একটা দেখে চলেছে।সারহান অল্প সময়েই বুঝেছে অরিত্রিকার মুনকে পছন্দ হয়নি। অপছন্দ করার কারণ তার কাছে পরিষ্কার নয়।

অরিত্রিকা কেবিনের এক কোণে দাঁড়িয়ে সারহানের বন্ধু মহলকে দেখে চলেছে। তবে তার দৃষ্টি মুন নামক মেয়েটির দিকে।সে মুনকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ব্যস্ত। দুধে আলতা চেহারা,দেখতে সুন্দরী বলা চলে,কোমড় অব্দি কালো ঘন চুল, সাদা কালো সংমিশ্রণ থ্রি পিসে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।উচ্চতা চলনসই। দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটি অসম্ভব মিশুক। কিন্তু অরিত্রিকার কেনো যেনো মুনকে ভালো লাগে নি।সারহানের সাথে কথা বলেছে তাই হয়তো। ইশরার হাত এখনো জ্বলছে। অরিত্রিকা খামচে ধরায় নখ বসে গেছে। একজনের রাগ অন্যের ওপর ঝেড়ে কি হলো?ইশরা ব্যথায় নাক মুখ কুঁচকে আছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সাদাত সারহানের পাশে চুপচাপ বসে আছে। বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। তবে তার নজর সারহান আর অরিত্রিকার দিকে। গোয়েন্দার নজরে পর্যবেক্ষণ করছে পরিস্থিতি। অরিত্রিকার আচরণ সন্দেহজনক মনে হলেও সে তার ভাইয়ের আচরণে সন্দেহ করার কারণ খুঁজে পায়নি এখনো। তবুও নজর রাখবে সে। পণ করেছে মনে মনে।
পৃহাল তাদের বন্ধুমহলের সাথে কথা বলতে বলতে খেয়াল করলো কেবিনের এককোণে দাঁড়ানো অরিত্রিকা আর ইশরার দিকে। একজন তাদের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে আছে। তা দেখে পৃহালের ভ্রু কুঁচকে গেলো।
পৃহাল সারহানকে উদ্দেশ্য করে বললো ~ সারহান এদের তো চিনলাম না।এরা তোর কে হয়?
সাদাত তখনি চনমনে ভাব নিয়ে উত্তর দিলো ~ একজন আমার চাচাতো বোন আরেকজন ফুফাতো বোন।
পৃহাল বললো~ ওহহ আচ্ছা। কোনটা চাচাতো বোন আর কোনটা ফুফাতো বোন?

~কালো ড্রেস পরে আছে ওইটা ফুফাতো বোন আর
সাদাতকে বলতে না দিয়ে পৃহাল বলে উঠলো ~ আর মাথায় ওড়না দিয়ে আছে সে তোমাদের বোন হয়।বুঝতে পেরেছি।
সাদাত হেসে বললো~ হ্যা ভাইয়া।
সারহান এতোক্ষণ চুপ থাকলেও মুখ খুললো এখন। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো~ পৃহাল ওখানে শুধু বোন নয়, চাচাতো বোন হবে।
পৃহাল অবাক হওয়ার ভাণ করে বললো~ চাচাতো বোন আর নিজের বোন একই কথা।
~ উহু। আলাদা।তুই বুঝ বিনা।

সারহানের বন্ধু মহল কিছুটা অবাক হলো। সামান্য বিষয়ে সারহান রিয়েক্ট কেনো করলো বুঝে আসলো না তাদের।
অরিত্রিকা সারহানের পাণে আড় চোখে তাকালো। এই মানুষটার মনে চলছে টা কি?ইশরা অরিত্রিকার কানে কানে বললো~সামান্য বিষয় নিয়ে সারহান ভাই রিয়েক্ট কেনো করলো?
অরিত্রিকা ইশরার দিকে তাকিয়ে কটমটে ভাব নিয়ে বললো~নিজের বোন বললে ভালো লাগতো গাঁধি? চাচাতো বোন বলেছে তাও শান্তি। নিজের বোন বললে সারারাত ঘুম হতো না আমার।
ইশরা মুখ কাচুমাচু করে বললো ~ তাও ঠিক।
মুন অরিত্রিকার দিকে তাকালো। তার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। সে অরিত্রিকার দিকে তাকিয়ে আগাগোড়া পরখ করলো। তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। ইফাতের সকলের কথায় কোনো মনোযোগ নেই। ফোনে কিছু একটা দেখে চলেছে। কপালে দুশ্চিন্তার রেখা। রাই পৃহালের কথা অনুসরণ করে অরিত্রিকা আর ইশরার দিকে তাকালো। দুজনেই বেশ দেখতে। মিষ্টি চেহারা। মায়াবীনি ভাব চোখে মুখে লেপ্টে আছে।

রাই অরিত্রিকা আর ইশরার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললো~ হাই। আমি রাই।
অরিত্রিকা আর ইশরা রাইয়ের দিকে তাকালো। তারা কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না। অচেনা মানুষের সাথে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। কথা না বললেও অভদ্রতা দেখায়।
রাই দুজনের অস্বস্তির কারণটা বেশ বুঝতে পারলো। কম্ফোর্টেবল করার জন্য হাসি বজায় রেখে বললো~ আরে এতোটা হেরিটেজ ফিল করতে হবে না। আমি সারহানের ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড। আমায় আপু ডাকতে পারো। মুন, পৃহাল আর ইফাতকে ভাইয়া আপু বলে ডেকো। বুঝেছো?
অরিত্রিকা আর ইশরা মাথা নাড়িয়ে ইশারায় বললো বুঝেছে।
সারহান গলা খাঁকড়ি দিয়ে বললো~ এদের দুটোকে আগেই মাথায় তুলিস না। পরে পস্তাতে হবে।
রাই কিছু না বুঝতে পেরে বললো~ কেনো?
~এদের যতোটা শান্ত ভাবছিস মোটেও দুজনে শান্ত নয়। বাড়ি হইহই করে মাথায় উঠিয়ে রাখে। যাদের সাথে খাতির জমে ওঠে তারাও ওদের দলে চলে যায়। সাদাতও কিন্তু এদের দলের সদস্য। এদের জ্বালায় বাড়িতে থাকা দায় হয়ে যায়।
~ বলিস কি?আমি তো শান্ত শিষ্ট ভেবেছিলাম।
~সবাই প্রথমে এমনই মনে করে।
অরিত্রিকা সারহানের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো। সকলের সামনে আজও অপমান করলো? সুস্থ হোক আগে তারপর এর শোধ তুলবে সে।

পড়ন্ত বিকেল। সূর্য হেলে পরেছে পশ্চিমে। কিছু সময় পরই সন্ধ্যা নামবে ধরণীতে। পাখিরাও নিজ নীড়ে ফিরে যাচ্ছে দিনশেষে। আপন নীড়ে ফিরতে যেনো পাল্লা দিয়ে উড়ে চলেছে। হাসপাতালের পরিবেশ আজ অধিক শান্ত। এতোটা শান্ত কেনো জানা নেই সারহানের। সারহান শুয়ে শুয়ে প্রায় অধৈর্য হয়ে গেছে। কাজের মাঝে ডুবে থাকা মানুষ হঠাৎ কোনোভাবে বাঁধা পরে যায় তখন নিজেকে জেলখানার কয়েদির ন্যায় মনে হয়। এমন সময়ই পার করছে সারহান। জেলখানাতেও তাও সময় পার হয়ে যায়।কিন্তু হাসপাতালে যেনো সময় থমকে আছে।কেবিনে আপাতত কেউ নেই ঘন্টাখানেক আগেই সারহানের বন্ধু মহল ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাড়িতে গিয়েছে। এখন আপাতত আরশাদ সাহেব আর আজমল সাহেব হাসপাতালে উপস্থিত আছেন। ডাক্তার সারহানকে কিছুক্ষণ পূর্বে চেক আপ করেছেন। কিছু টেস্ট করা বাকী আছে তা সম্পর্কে জানানোর জন্যই আরশাদ সাহেব আর আজমল সাহেবকে ডাক্তার ডেকেছেন। সারহানের মাথায় হালকা হালকা ব্যথা অনুভব হচ্ছে। আজ একটু বেশী কথা বলা হয়ে গেছে বুঝতে পারলো। বুকে ক্ষত থাকায় হাতও ঠিকঠাকভাবে নাড়াতে পারছেনা। হাত নাড়ালেই বুকে ব্যথা অনুভূত হচ্ছে । সাদাতকে দুপুরে বলেছিলো আবিরের কি খবর জানাতে এখনো সাদাত জানায়নি। কি অবস্থায় আবির আছে জানা প্রয়োজন।

সারহান নিজের চক্ষুদ্বয় বন্ধ করলো। যদি একটু ঘুম হয় তবে মাথা ব্যথা কমবে। নেত্রপল্লব এক করার কিছুক্ষণ পরেই কেবিনে কেউ একজন প্রবেশ করলো।সারহান তখনি চোখ খুলে সরাসরি তাকালো দরজার দিকে। কুর্তি পরিহিত রমনীকে দেখে সারহানের ভ্রুযুগল কুঁচকে গেলো। এইখানেও চলে এসেছে মেয়েটি?
মিহি সারহানকে দেখতে এসেছে। এখানে আসার দুটো কারণ আছে নিশাদ আর একজনের দেখা পাওয়া।
মিহি সারহানের বেড সংলগ্ন এসে চেয়ারে বসলো। বসেই সারহানকে বললো~ এখন কেমন আছেন মিস্টার সারহান?
সারহান ভীষণ বিরক্ত হলো মিহিকার আগমনে।সে বিরক্তি প্রকাশ করলো না। স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো ~ এই তো আছি ভালোই।কিন্তু আপনি এখানে কি করছেন?
~ আপনার থেকে এমন প্রশ্ন আশা করি যায় না মিস্টার। এখানে এসেছি তার কারণটা নিশ্চয়ই আপনিই হবেন।
~ আসার কারণ কি?
~ আপনি আহত হয়ে হসপিটালে আছেন তাই দেখতে এলাম।
সারহান গম্ভীর কণ্ঠে বললো ~ দেখা শেষ? এখন আসতে পারেন।
মিহি সারহানের অপমানে কিছু মনে করলো না। সে বললো~ মাত্রই তো এলাম। এতো দ্রুত কেউ যায়? আপনাকে ঠিকঠাক মতো দেখলামও না।

সারহানের মিহির সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই।সে গম্ভীর মুখ করে চুপ করে রইল।মিহিকা কেবিন চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে।এখানে উপস্থিত কেউ নেই দেখে কিছুটা অবাক হয়েছে। ইচ্ছে ছিলো এখানে এসে অন্তত একজনের সাথে দেখা হবে। হাসপাতালে আসার মূখ্য কারণ কারো সাথে সাক্ষাৎ। কিন্তু সে তো নেই। আশাহত হলো মনে মনে। সারহানের সামনে মনে চলা ভাবনা প্রকাশ করলো না।
মিহি স্বাভাবিক কন্ঠে জানতো চাইলো~ আপনার ফ্যামিলি মেম্বার কেউ আসেনি?
সারহান মিহির দিকে বিরক্তিসূচক তাকালো।মুখ হতে “চ” বর্গীয় শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়েও থেমে গেলো। অন্যদিকে তাকিয়ে বললো~ আপনাকে বলতে বাধ্য নই।
মিহি সারহানের দিকে একপলক তাকালো। সে বুঝতে পেরেছে সারহান তার সাথে কথা বলতে আগ্রহী নয়। কিন্তু সে এখনই হসপিটাল হতে যাবে না। মিহি পার্স হতে ফোন বের করলো। ফোন স্কিনে ভেসে উঠেছে নিশাদের মিসড কল।এইটুকু সময়েই বিশ বার কল দিয়েছে। আবারও কল আসতেই মিহি কল রিসিভ করলো। তখনি ভেসে এলো হুংকার।

~ তুমি কোথায়?
মিহি ওষ্ঠ এলিয়ে হেসে বললো~ তোমায় তো সকালেই বললাম এর মাঝেই ভুলে গেছো?
~ তুমি ওই সারহানকে দেখতে গিয়েছো?
~হুমম। এসেছি।
~ বারণ করা সত্ত্বেও ওখানে কোন সাহসে গিয়েছো?
~আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই এসেছি। জানো এখন আমি মিস্টার সারহানের কেবিনে বসে আছি।
নিশাদ রাগে ফুঁসে উঠলো।রাগমিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো~আধা ঘন্টার মধ্যে আমি হসপিটালের নিচে আসছি তুমি আমার সাথে দেখা করবে।
নিশাদ আদেশ করে কল কেটে দিলো। মিহির মুখে ঝুলছে রহস্যময় হাসি।
সারহান গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো~ আপনার মনে হচ্ছে না আপনি আমায় ডিস্টার্ব করছেন?
~একদম নয়। আপনাকে দেখতে এসেছি।
সারহান ভ্রু কুঁচকে বললো~ আপনার সাথে আমার তো কোনো দেখতে আসার সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। আপনাকে ঠিক মতো চিনিও না।
~ আপনাকে আমায় চিনতে হবে না। আমি আপনাকে ভালো করেই চিনি।
সারহানের মিহির হেঁয়ালিপণা কথা একদম ভালোলাগছে না। সহ্যের বাহিরে চলে যাচ্ছে। অন্য সময় হলে বের করে দিতো কেবিন থেকে।

এর মাঝেই অরিত্রিকার আগমন ঘটলো সারহানের কেবিনে। সে তানিয়া বেগমের সাথে হসপিটালে এসেছে। তানিয়া বেগম তাকে কেবিনে আসতে বলে ডাক্তারের চেম্বারে গিয়েছেন। দরজা খুলেই মিহির সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো। অরিত্রিকা মিহিকে দেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অবলোকন করছে। সে হাতে ধরে রাখা খাবারের বক্স নিয়ে প্রবেশ করলো।সারহান কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকালো। দেখলো অরিত্রিকা এসেছে।
অরিত্রিকা হাতে থাকা খাবারের বক্স টেবিলে রেখে চুপচাপ দাঁড়ালো। এখন কি তার বাহিরে যাওয়া উচিত? ভেবে পেলো না সে।
মিহি অরিত্রিকাকে দেখে হেসে বললো~ তোমার অপেক্ষাই করছিলাম। কেমন আছো অরিত্রিকা?
অরিত্রিকা চমকিত নয়নে হাস্যরত মিহির দিকে তাকালো। সে আশ্চর্য হয়েছে অচেনা একটা মেয়ের মুখে নিজের নাম শুনে।

অরিত্রিকাকে অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসি বজায় রেখে বললো~ আরে অবাক হচ্ছো কেনো? আমি তোমায় চিনি এমন কি ছবিও দেখেছি তোমার।ছবির থেকে বাস্তবে দেখতে আরও সুন্দরী তুমি।
অরিত্রিকা যেনো আরও বেশী অবাক হলো।তাকে কিভাবে দেখেছে?আর ছবিই বা কোথায় পেলো?
অরিত্রিকা বিস্মিত কন্ঠে বললো~ আপনি আমায় কিভাবে চেনেন?আর ছবিই বা কোথায় পেয়েছেন?
~ তোমার কথা শুনেই তো দিবারাত্রি পার করি আমি। আর ছবি দেখেছি একজনের ফোনে। শাড়িতে তোমায় অসম্ভব সুন্দর লাগে কিন্তু।

অরিত্রিকা চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। শাড়ি পরিহিত ছবি কোথায় দেখলো।এমন ভাবে কথা বলছে যেনো তাকে অনেক আগে হতে চিনে। অরিত্রিকা কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
মিহি হাতে থাকা ঘড়ি দেখে বললো~ সময় হয়ে গেছে আমায় যেতে হবে। তোমায় দেখার ইচ্ছে ছিলো স্ব চক্ষে। আজ পূরণ হয়ে গেলো। অরিত্রিকা সাবধানে চলাফেরা করো কখন কি হয় বলা যায় না। মিস্টার সারহান নিজের খেয়াল রাখবেন। আসছি।
মিহি আর দেরী করলো না। দ্রুততার সহিত বেরিয়ে গেলো কেবিন হতে।অরিত্রিকা এসে চেয়ারে বসলো।সে ভাবতে ব্যস্ত। মেয়েটা কে? নিশ্চয়ই সারহান ভাইয়ের ফ্রেন্ড হবে।কিন্তু কথার ধরণ দেখে তো মনে হলো না। তাহলে কে হতে পারে? উফ দুই দিন পর পর কোথায় থেকে নতুন মেয়ের আমদানি হয় বুঝে উঠতে পারে না সে। বলতে ইচ্ছে করে “কেনো রে আর কোনো ছেলে কি নেই দুনিয়ায় তোদের সারহান ভাইয়ের সাথেই পরিচিত হতে হবে।”
সারহান এখনো মিহির কথাগুলো নিয়ে ভেবে চলেছে।অতিশয় চিন্তিত সে। কপালের রগ গুলো মধ্যভাগে ফুটে উঠেছে।সে অনেকটাই নিশ্চিত মিহি তাদের বিষয়ে অনেকটাই অবগত। শেষের বাক্য বারবার এটাই প্রমাণ করছে তাদের সাবধান হতে বলা হয়েছে।তবে কি কোনো বিপদ আসছে? মিহির বিষয়ে সবকিছু জানা জরুরী তার। চার দেয়ালে বন্দী থেকে কিছুই তার হাতে নেই।সবকিছু আয়ত্তের বাহিরে চলে যাচ্ছে।

~মেয়েটা কে সারহান ভাই?
অরিত্রিকার সন্দিহান সুর।কন্ঠে বিচলিত ভাব স্পষ্ট। সারহান অরিত্রিকার দিকে তাকালো। অরিত্রিকা তার দিকেই ভ্রু কুঁচকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
সারহান সহজ সরল কন্ঠে উত্তর দিলো ~ মেয়েটিকে আমি চিনি না।
~চিনেন না কিন্তু এখানে কি করছিলেন উনি?
~ আমায় দেখতে এসেছিলেন।
~ তাও বলবেন আপনি চিনেন না?
সারহানের দৃষ্টি সংকুচিত হলো।অরিত্রিকার বড়দের মতো প্রশ্ন করাটা কেনো যেনো ভালো লাগলো।
সারহান ভরাট কন্ঠে বলে উঠলো~ চিনিনা বললে ভুল হবে। ঢাকায় দেখা হয়েছিলো একবার।
অরিত্রিকা চোখ ছোট ছোট করে করে তাকালো। সারহানকে পর্যবেক্ষণ করে দেখে মনে হলো মানুষটি সত্যি বলছে। কিন্তু সারহান ভাইয়ের আশে পাশে কাউকে দেখলে সহ্য হয় না।

~ এতোটা জেলাস ফিল করার মতো কিছু হয়নি। এসব ভেবে রাতের ঘুম হারাম করার দরকার নেই। আমরা পরিচিত শুধু এতোটুকু জেনে রাখ।
অরিত্রিকা সারহানের কথা শুনে মুখ হা হয়ে গেলো। সারহান ভাই তার মনের কথা কিভাবে বুঝলো?
অরিত্রিকা সারহানের দিকে তাকিয়ে বললো~ আপনি কি করে আমার মনের কথা জেনে গেলেন?
সারহান মাদকতা মিশ্রিত স্বরে বলে উঠলো~তোর চোখ দেখে।
সারহানের সোজাসাপ্টা উত্তর অরিত্রিকার ভেতর নাড়িয়ে দিলো। বুক ধরফর করে উঠলো। এই কথায় মাদকতা মেশানো ছিলো।
সারহান অরিত্রিকাকে স্বাভাবিক করার জন্য বললো ~ আমায় উঠতে হেল্প কর। একা উঠতে পারবো না।
অরিত্রিকা কিছুটা স্বাভাবিক হলো যেনো।চেয়ার থেকে উঠে সারহানকে বসতে সাহায্য করতে গেলো।সারহান অতিকষ্টে এক হাতে ভর করে উঠে বসার চেষ্টা করলো। অরিত্রিকা সারহানের বাহু ধরে বসানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তার এইটুকুন শরীরে সারহানের মতো সুঠাম দেহের লম্বা,চওড়া মানুষকে উঠানো প্রায় অসম্ভব। তবুও অনেকক্ষণ চেষ্টার পর সারহান উঠে বসলো।অরিত্রিকা সারহানের পিঠের দিকে বালিশ দিয়ে দিলো। সারহান বালিশে হেলান দিয়ে আধ শোয়া হয়ে বসলো।
অরিত্রিকা হাঁপাতে হাঁপাতে বললো~ আর একটু হলেই তো পটল তুলতাম। আপনি এতো ভারী কেনো? কি খান বলুন তো?

সারহান অরিত্রিকার আজব প্রশ্ন শুনে চাপা স্বরে বললো~ ইডিয়েট একটা। প্রতিদিন তো দেখিস কি খাবার খাই।
অরিত্রিকা সারহানের কথায় রেগে বললো~ এখন তো ষ্টুপিড বলবেন আমায়। আমি যে হেল্প করলাম তা তো মনেই থাকবে না। এরপর থেকে হেল্প লাগলে আপনার ওই মিহিকে বলবেন হেল্প করতে।
সারহান বিস্ময় নিয়ে বললো ~আমার মিহি?
অরিত্রিকা মুখ বেকিয়ে বললো~ হ্যা আপনার মিহি।দেখলাম তো আপনার টানে ঢাকা থেকে ছুটে এসেছে হুহ্ কতো দরদ।

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ২৯

সারহান ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো। কিছুটা নড়ে চড়ে বসলো সে। এবার কিছুটা হলেও আন্দাজ করলো বিষয়টা। সুযোগ বুঝে ঠিকই শুনিয়ে দিলো।
সারহান অরিত্রিকার রাগান্বিত মুখ পাণে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকালো। অরিত্রিকা রেগেমেগে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। সারহান তা দেখে মোলায়েম কন্ঠে বললো~ মনের মাঝে রাগ, ভালোবাসা, অভিযোগ, অভিমান পুষে রাখতে নেই। সময় থাকতে বলে দিতে হয় নতুবা সময়ের ভিড়ে মানুষ হারিয়ে যায়।

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৩১