একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩৬ (২)
রনীতা তুশ্মি
“আমরা একজোড়া আগুন পাখি— তুমি হলে ধ্বং’স,আমি সেই ধ্বং’সের আড়ালে থাকা এক রহস্য! তুমি দহনের দীপ্তি, আমি পুনর্জন্মের গান; তুমি পোড়াও হৃদয়, আর আমি সেই দহন থেকে গড়ি নতুন প্রাণ।”
নিরেট কন্ঠে এটুকু বলেই আনায়া কেনীথের ঠোঁট আকস্মিক ঠোঁট ছুঁইয়েই নিমিষেই দূরে সরে এলো। অতঃপর রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলতে থাকলো,
“ফ্রেশ নেও জানপাখি। আরো অনেকের জান তো উড়িয়ে দেওয়া বাকি! আপাতত যেতে হচ্ছে, আবার দেখা হবে আমার আগুনপাখি।”
“শ্লা মীরজা’ফর! হা”রামি! শয়”তান! প্রতারক! তোকে আমি আজ শেষ করেই ফেললো। সব কিছু তুই করছিস। আমার সাথে থেকে আমার সাথেই…ছাড়বো না তোকে আমি। মে’রে, কে’টে বস্তায় ভরে ওই রাশিয়ার স্পেশাল নর্দ’মায় ফেলে আসবো তোকে!”
পুরো ড্রইং রুম ধরে দৌড়া দৌড়ি চলছে দুই মানবের। কেনীথের হাতের প্যান্টের লেদার বেল্ট আর সেটার ভয়েই ড্রইং রুমে উথাল-পাতাল ছুটে চলেছে পাভেল।
কেনীথ জানতো পাভেল শেষমেশ তার এপার্টমেন্টেই আসবে। বেশি পালাতে চাইলে আবার সমস্যা। তখন কেনীথের কাছে ধরা পড়লে এমনিতেই ভবলীলা সাঙ্গ! তবে পাভেল এটুকুও বুঝতে পারেনি যে কেনীথের ক্ষো”ভ এমন উথলে উথলে তার উপর ঝড়বে। বলা নেই, কওয়া নেই।বিকেলের দিকে এপার্টমেন্টে ঢুকেই প্রথমে শান্ত সিংহের মতো পাভেলকে খুজেছে। আর পাভেল যখন শান্ত কেনীথকে দেখে ওর সামনের এসে দেখা দিয়েছে ঠিক তখনই কেনীথ তার আসল রুপে ফিরে এসেছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বর্তমানে দুজন নিরীহ ইদুর আর জং’লী বিড়ালের মতো পুরো ড্রইং রুমে ছোটাছুটি করছে। একবার পাভেল কেনীথের হাতে ধরা পড়লেই কেল্লাফলে। চারপাশের সবকিছু এলোমেলো হয়ে জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে। পাভেল অনবরত এদিকে ওদিক দৌড়াতে দৌড়াতে বলছে,
—“ব্রো!যাস্ট একবার, একবার শুধু আমার পুরো কথা…
আমার সত্যিই কোনো দোষ…”
—“তুই একটা কথাও বলবি না! সব দোষ তোর। সবকিছু তুই আগে থেকেই জানতি। শুধু আমার সাথে থেকেই আমার সাথে… শ্লা মীরজাফর! তুই থাম বলছি, এখনি থেমে যা। নয়তো তোর অবস্থা আরো খারাপ করবো আমি।
পাভেল সে যত চেষ্টাই করুক না কেনো, এখন পর্যন্ত একবারও সে নিজের কথা শেষ করতে পারেনি।কেনীথ ওর কোনো কথাই শুনতে নারাজ।এরই মাঝে আচমকা তাদের ছোটাছুটিতে বাঁধা হয়ে ড্রইং রুমে প্রবেশ করলো আনায়া। পড়নে ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক ড্রেস। সিল্কের চকলেট ব্রাউন কালারের শার্টের সাথে অফ হোয়াইট কালারের প্লাজো প্যান্ট। শার্টটা প্যান্টের সাথে ইন করা,আর শার্টের হাতা কুনুই পর্যন্ত গুটিয়ে রাখা। চুলগুলো সুন্দর করে হালকা কার্ল করা। কিছু চুল সামনের একপাশে ছড়ানো আর বাকিগুলো পিঠে ছড়িয়ে রইছে। গোলাপি ঠোঁটে হালকা চকলেট ব্রাউন কালারের লিপস্টিকের প্রলেপ আর কানে দুটো সোনালী রঙ্গের হালকা দুল ব্যতীত আর তেমন কিছুই নেই। অথচ বুকের মধ্যে হাত গুঁজে একদম বস বেইব ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইছে।
আনায়াকে দেখা মাত্রই পাভেল দৌড়ে গিয়ে অনেকটা আনায়ার পেছনে এসে দাঁড়ালো। অন্যদিকে পাভেলের দিকে নজর রাখতে গিয়ে কেনীথের নজরে পড়লো বস বেইব ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ঠোঁটের কোণায় রুক্ষ হাসি ঝুলিয়ে রাখা আনায়ার দিকে। ওকে দেখা মাত্রই কেনীথের হিং”স্র ভাবমূর্তিতে খানিকটা পরিবর্তন হয়ে তা গম্ভীর্যে পূর্ণ হিং”স্র”তায় জেগে উঠলো। কেনীথ পাভেলের দিকে উদ্দেশ্য করে হিসহিসিয়ে জোরে জোরে বললো,
“পাভেল!ও এখানে কিভাবে এলো?”
পাভেল তো শুরু থেকেই তব্দা খেয়ে বসে রইছে। কেনীথকে দেওয়ার জন্য তার কাছে কোনো উত্তর নেই। এখানে আনায়ার আসার পারমিশনও গার্ডদের কাছে পাভেলই দিয়ে রেখেছে। বাকি এখন পাভেলকে করা কেনীথের প্রশ্নের উত্তরে আনায়া নিজেই নির্বিকারে বললো,
“দরজা খোলা ছিলো, আমি নিজ পায়ে হেঁটে হেঁটে এসেছি।”
আনায়ার নির্বিকার ভঙ্গিমায় কথাবার্তা শুনে কেনীথের মেজা”জ যেন আরো জ্ব’লে উঠলো। অনেকটাই আগুনে ঘি ঢালার মতো ব্যাপার। পারলে যেন পাভেল আর আনায়া দুজনকেই চি”বিয়ে খায়। কেনীথ এবার অনেকটা চিল্লিয়ে হুশি”য়ারি দিয়ে বললো,
“পাভেল ওকে আমার চোখের সামনের থেকে সরে যেতে বল!আমার মেজাজ আরো বিগড়ে গেলে কিন্তু একটাকেও ছাড়বো না।”
কেনীথ আর আনায়ার মাঝের দূরত্ব বর্তমানে অনেকটাই। কেনীথ সোফার কাছে কাঁচের টি-টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে। অন্যদিকে আনায়া আর পাভেল তার থেকে কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে রইছে। আনায়া এবার নির্বিকার ভঙ্গিতে কেনীথের দিকে কয়েক পা এগিয়ে গেলো।তবে পাভেল যাবে না, সুযোগ পেলেই এখান থেকে পালানোর নিয়ত রয়েছে তার। আর এবারও পাভেল কিছু বলার আগেই আনায়া নির্বিকার ভাবে জোর গলায় বললো,
“যাবো না আমি, এখানে আসার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে আমার।”
আনায়ার কথা শুনে কেনীথ তীব্র রাগের মধ্যেও তাচ্ছিল্যের সাথে কিঞ্চিৎ হাসলো। অতঃপর পুনোরায় চিল্লিয়ে বললো,
“কিসের অধিকার? কোনো অধিকার নেই তোর!”
” ভুলে যেও না, বউ আমি তোমার!”
“জাস্ট শা’ট আপ! আই উইল ফা””ক ইউ, ড্যাম ইট!
“সিওর! কাম অন বেইবি, আ’ম রেডি।”
আনায়ার আগুন ঝড়া তীর্যক চাহনি আর জোর গলায় বলা নির্বিকার এহেন কথায়, এবার কেনীথ আর পাভেল দুজনেই খানিকটা তব্দা খেয়ে গেলো। পাভেলের মনে হচ্ছে না এখানে আর থাকা সম্ভব না। একজন সিংহের মতো গ”র্জন করছে তো অন্যজন নি”রব হায়নার মতো আগুনে ঘি ঢালার কাজ করছে। আর দুজনের কথাবার্তাও এখন লাইন ছাড়া চলে যাচ্ছে।
যদিও পাভেলের সাথে সাথে কেনীথ অবাক আনায়ার এহেন ভাবভঙ্গি দেখে। তবে এসবই যেন তার আগুনের মতো জ্বলতে থাকা মে”জাজের উপর ঘি ঢালার কাজ করছে। আনায়ার এমন নির্বিকারে বেহা”য়াপনা করাটা শুরু থেকেই ওর অসহ্য লাগছে।
এরই মাঝে আনায়ার পেছন থেকে পাভেল কেনীথের দিকে উঁকি দিয়ে ইতস্তত ভাবে বেড়িয়ে এসে তোরজোরের সাথে এলেমেলো ভাবে বলতে লাগলো,
“আমার মনে হয়, আমার এখন যাওয়া উচিত। ভাই তোমরা থাকো আমি…”
কেনীথের রক্ত গরম চাহনি এখন আনায়ার দিকে। অন্যদিকে আনায়াও তার শান্ত ভাবসাব পূর্ন চেহেরায় কেনীথের দিকে তাকিয়ে রইছে। অথচ তার শান্ত চোখজোড়ায় আগুন যেন কেনীথের সম্পূর্ণ রাগের প্রকোপের চেয়েও বেশি। এদিকে কেনীথ আনায়ার দিক থেকে নজর না সরিয়েই পাভেলের কথা শেষ হওয়ার আগেই কেনীথ হুশিয়ারি দিয়ে বললো,
“যেখানেই যাবি একে সাথে করে নিয়ে যা। আর এক মূহুর্তও ওকে আমি আমার সামনে দেখতে চাই না।”
এদিকে আবার পাভেল হ্যাঁ বা না কিছু বলার আগেই আনায়াও কেনীথের দিকে তির্যক দৃষ্টিকোণে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই পাশে থাকা পাভেলের উদ্দেশ্যে নির্বিকার স্বরে বললো,
“দেবর মশাই, আপনি নির্দ্বিধায় যেতে পারেন।আমার যেতে হয়তো একটু দেরী হবে। আমার প্রানপ্রিয় পতি মহাশয়ের সঙ্গে কিছু পারসোনাল কাজ রয়েছে।”
এটুকু বলেই আনায়া কেনীথের দিক থেকে নজর সরিয়ে পেছনে ফিরলো। অতঃপর পাভেলের দিকে মুচকি হাসতেই পাভেল একপ্রকার ছুটে এপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে কেনীথের উদ্দেশ্যে বললো,
“ভাই একটু রা”গ কন্ট্রোল করে নিও। বউ কিন্তু তোমারই… সা’বধানে!”
—“পাভেল!”
—“ব্রো,এখন আসছি। আগে জান বাঁচানো ফরজ।”
পাভেলকে চিল্লিয়ে ডেকেও কোনো কাজ হলো না। শেষমেষ ও চলে যেতেই কেনীথ সোফার উপর নিজের হাতে থাকা বেল্ট সোফার উপর ছুঁড়ে মে’রে জোরে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
এদিকে আনায়া তীক্ষ্ণ চোখে কেনীথের ভাবগতিক পর্যবেক্ষণ করছিলো। খুব বেশি সময় অতিক্রম হলো না বরং তার আগেই কেনীথ আচমকা কাঁচের টি-টেবিলটা লা”থি মার”তেই সেটা উল্টে নিচে পড়ে ভে”ঙ্গে চু’র”মা’র হয়ে গেলো। এটা দেখে আনায়া ছোট করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কেনীথের দিকে এগিয়ে গেলো।
কেনীথ একপাশ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। কাঁচের কয়েকটা টুকরো কেনীথের পায়ের কাছেও লেগে খানিকটা চামচা কেটে র”ক্ত পড়ছে। এরই মাঝে হঠাৎ আনায়ার সাদা হাই হিলের ঠকঠক আওয়াজে কেনীথ পাশে ফিরে আনায়ার দিকে তাকালো। কেনীথের চোখে মুখে স্পষ্ট ক্ষো”ভের ছাপ পড়ে রইছে। যেন তা পুরো মুখটাই এক আগু”নের কুন্ডলী।
আনায়া কাঁচের উপর দিয়েই হেঁটে নির্বিকার ভাবে কেনীথের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। অতঃপর আড়ালে ছোট করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শান্ত-গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“আমায় দেখলে কি শরীর জ্বলে? আমায় দেখে তোমার এতো জ্বালাপোড়া কিসের?”
কেনীথ রা”গান্বিত কন্ঠে বললো,
“কি চাই তোর, তাড়াতাড়ি বলে এখান থেকে বিদায় হ!”
“বলেছি তো, সময় হলে নিজেই চলে যাবো। আপাতত কোথাও যাচ্ছি না আমি। তোমার সাথে আমার কিছু কাজ রয়েছে,রুমে চলো!”
আনায়ার গাম্ভীর্যে পূর্ণ স্বাভাবিক কথাটুকু বলেই কেনীথের বেডরুমে দিকে যাওয়ার জন্য উল্টো ঘুরেছিলো। কিন্তু পেছন থেকে কেনীথ তীব্র কন্ঠে বলে উঠলো,
“কোথাও যাবো না আমি, যা বলার এখানে বলে বিদায় হ!”
আনায়া এবার বুকে হাত গুঁজে থাকা অবস্থাতেই পুনোরায় পেছনে ঘুরে কেনীথের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো। আনায়ার ভাবভঙ্গি ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে যখন তখন উল্টো পাল্টা কিছু একটা করে ফেলবে৷ অনেকটা নি”রব ঘা”তক হায়নার মতো।আনায়া এবার জোর গলায় বলতে থাকলো,
“আমি যেতে বলেছি কিন্তু!”
কেনীথও খানিকটা তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে রাগান্বিত স্বরে বললো,
“যাবো না,কি করবি?মা”রবি আমায়?
কেনীথের কথা শুনে আনায়া তাচ্ছিল্যের সাথে কিঞ্চিৎ হাসলো। কেনীথের আরো কাছে গিয়ে দুহাত উঁচিয়ে কেনীথ কাঁধে আর বুকে হাত বুলিয়ে হুডিটা ঠিকঠাক করে দিতে দিতে বলতে থাকলো,
” ছিহ!তোমায় কি আমি মা”রতে পারি নাকি?ওতো সাহস আছে নাকি আমার? এমন চিন্তা ভাবনা কবে থেকে হলো তোমার?”
এই বলেই আনায়া কেনীথের হাত ধরে উল্টো ঘুরে নিয়ে যেতে নিলেই, কেনীথ আকস্মিক হেঁচকা টানে অন্যহাতের সাহায্যে আনায়ার হাত অনেকটাই মুচড়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে সোফায় ফেলতে চাইলো। কিন্তু ভুলবশত আনায়া সোফায় না গিয়ে সোজা কাঁচের উপর আঁচ”ড়ে পরলো। আনায়া হাতের সাহায্যে নিজেকে ব্যালেন্স করে নিলেও নিমিষেই হাতের তালু আর কুনুই কাঁচের দ”রুন কে”টে গিয়ে অঝোর র”ক্ত ঝড়তে লাগলো।
এদিকে কেনীথ এসব ঠিকভাবে খেয়াল না করেই নির্বিকার ভঙ্গিতে পেছন থেকে বলতে থাকলো,
“তোর সাহস না থাকলেও, আমার রয়েছে। পরবর্তীতে এসব থা”র্ডক্লাস তেজগিরি আমায় দেখাতে আসবি না।”
এই বলেই কেনীথ সেখান থেকে চলে যেতে নিয়েছিলো কিন্তু তা আর হলো না। আনায়া এক মূহুর্তও দেরী না করে কোনো মতে উঠে দাঁড়িয়েই কেনীথকে নিশানা করে সোজা ওর মুখ বরাবর নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে স”জোরে ঘু”ষি মা”রলো। আক”স্মিক ঘটনায় কেনীথ তাল সামলাতে না পেরে সোজা মু”খ থুব”ড়ে সোফায় গিয়ে পড়লো। কেনীথ নিজেকে কোনো মতে সামলে নিজের মুখে হাত দিতেই একগাদা র’ক্তে হাত ভিজে গেলো। নাক আর ঠোঁটের অনেকটাই কেটে যাওয়ার পাশাপাশি থেঁ”তলেও গিয়েছে। এদিকে আবার কেনীথ সোফায় আধশোয়া থেকে বসার আগেই আনায়া নিজের র”ক্তাক্ত হাত দিয়েই কেনীথের হুডি চেপে ধরলো। অতঃপর একটানে শক্ত হাতে কেনীথকে সোজা ভাবে বসিয়ে ও নিজেই কেনীথ উপর চড়ে বসলো। আনায়ার হাভভাব দেখে মনে হচ্ছে ও কেনীথকে আরো দুই তিনটা ঘু*ষি মা*রতে প্রস্তুত। কিন্তু আর তেমন কিছু না করে কেনীথর দুই কাঁধে ধাক্কা দিয়ে সোফার সাথে চেপে ধরলো। কেনীথের মুখের কাছে নিজের মুখ এগিয়ে হিসহিসিয়ে বললো,
“আপনাকে মা*রার সাহস নেই, তবে দশটা খেয়ে একটা দেওয়ার মতো দুঃসাহস রয়েছে আমার।”
—“একটা খেয়েই যে অবস্থা, আমি দশটা দিলে আর এই দুনিয়ায় টিকতে হতো না তোকে!”
—“ওতো ধৈর্য নেই আমার।”
আনায়া খানিকটা ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে অস্থির হয়ে বললো,
“এতো জেদ করছো কেনো বলতো? বলেছি তো কাজ আছে, কাজ শেষ হলে চলে যাবো।”
—“তো আমিও তো বলেছি, যা বলার এখানে বল। তোর সাথে এমন কোনো কাজ নেই যে আলাদা করে রুমে…
এই বলতেই বলতেই কেনীথ আনায়ার পিঠের শার্টের অংশ ধরে টেনে দূরে সরানোর আগেই আনায়া আকস্মিক কেনীথের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো। নিমিষেই আনায়ার সিল্কি চুলগুলো কেনীথ আনায়ার মুখের চতুরপাশে সমানতালে ছড়িয়ে ঢেকে গেলো। বাহির থেকে আর কারো সাধ্য নেই তাদের দুজনের মধ্যে হতে থাকা ওষ্ঠদ্বয়ের সং”ঘর্ষ সহজে দেখার। তবে এটুকু তো বোঝাই যাবে দুজনের মধ্যে চলছেটা কি।
কেনীথ যখন এবার তার তীব্র বিরক্তি আর রাগে আনায়াকে অনেকটা খামচে ধরে ছুঁড়ে ফেলতে উদ্বিগ্ন, ঠিক সেই মূহুর্তেই আনায়া শুধু কেনীথের ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁটটা কিঞ্চিৎ সরিয়ে আনলো। তবে দুরত্বটা অত্যন্তই ক্ষীণ, এতোটাই ক্ষীণ যে দুজনের ওষ্ঠের নরম অংশগুলো এখনো একে অপরের সাথে আলগাভাবে লেগে রইছে।
কেনীথ আনায়াকে এই সুযোগে বিরক্তি নিয়ে সরিয়ে দেওয়ার আগেই আনায়ার কিছু কথা শুনে কেনীথ ক্ষণিকের জন্য থমকে গেলো। আনায়া প্রচন্ড সিরিয়াস মুডে, অত্যন্ত ধীর সুরে ফিসফিস করে অতিদ্রুত বলতে লাগলো,
“এখানে সিসিটিভি রয়েছে। বাহিরের দরজায় পাভেল থাকতে পারে। ভেতরে চলো আর্জেন্ট দরকার রয়েছে।”
আনায়া আর কেনীথের নজর একে অন্যের দিকেই ছিলো।
আনায়ার কথা শুনে কেনীথের হাভভাব পরিবর্তন হয়ে কপালে মৃদু ভাজ পড়লো। আনায়া কেনীথের এসব পর্যবেক্ষণ করে নিজের সিরিয়াস ভাবভঙ্গি পরিবর্তন করে কিঞ্চিৎ মুচকি হাসলো। অতঃপর আবারও অপ্রস্তুত কেনীথের ও”ষ্ঠ আঁকড়ে ধরলো। এবার যে শুধু ও”ষ্ঠদ্বয়ের কঠিন সংঘ”র্ষ হলো তা নয়।বরং আনায়া ক্ষণিকরে সময়ের মধ্যেই কেনীথের ঠোঁট পুরো কামড়ে ক্ষত বানিয়েই সোজা কেনীথের কাছ থেকে সরে এলো। কেনীথ ব্যাথায় কিঞ্চিৎ শব্দ করলেও আনায়ার দিকে র*ক্ত গরম চোখে তাকালো।কেনীথ বিরক্তি নিয়ে ঠোঁটে হাত দিতেই র”ক্তের সাথে সাথে চকলেট ব্রাউন কালারের খানিকটা লিপস্টিকও হাতে উঠে এলো।
কেনীথ নিজের ভেজা ঠোঁটটা বিরক্তির সাথে হাতের উল্টো পিঠের তালু দিয়ে ঘষেই পাশে থুথু ফেলে আনায়ার দিকে আগুন ঝরা চোখে তির্যক দৃষ্টিতে তাকালো। তখনই কেনীথের সামনে নির্বিকার দাঁড়িয়ে মুচকি হাসতে থাকা আনায়া বলতে লাগলো,
—“হ্যাপি বার্থ ডে মাই জান, প্রাণ, কলিজা, ফুসফুস, সুইটহার্ট!
অনেক বছর আগে ঠিক এভাবেই তুমি আমায় বার্থ ডে উইশ করে নিজের পতিধর্ম পালন করেছিলে। আমিও আজ আমার জামাইয়ের জন্মদিনে সেইম স্টাইলে উইশ করে ইস্ত্রী ধর্ম পালন করলাম। ব্যাপারটা সুন্দর না?”
কেনীথ যেন আনায়ার কথায় খানিকটা তব্দা খেয়ে গিয়েছে। তার জন্মদিনের হদিশ তো কারোরই জানার কথা না। সে নিজেও হয়তো নিজের জন্মদিনের কথা ভুলে গিয়েছে সেই কত বছর হলো। কেনীথ নিজের বাবা মা হারানোর পর কখনোই আর নিজের জন্মদিনকে বিশেষ কিংবা আলাদা ভাবে বিবেচনা করেনি। অভ্যাসগত কারণে সবার সাথে সাথে এটি সে নিজেও ভুলতে বসেছে। এদিকে কেনীথের হাবভাব দেখে আনায়া রুক্ষ হেসে বললো,
“এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। এইটুকু বিষয় না জানলে, তোমার কিসের বউ আমি! এখন দয়া করে একটু রুমে এসো,কিছু কথা রয়েছে।বেশি সময় নেই হাতে।”
কেনীথের থেকে আর কোনো উত্তর কিংবা প্রতিক্রিয়ার আশা না করেই আনায়া উল্টো ঘুরে সামনের দিকে নির্বিকারে এগোতে লাগলো। এদিকে কেনীথের ঠোঁটে এখনো খানিকটা লিপস্টিক লেগে থাকায় কেনীথ সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আরো কয়েকবার প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ঠোঁট ঘষামাজা করতে করতে কয়েকবার থুতু ফেললো।
—“ইয়াক থু!”
ওর এহেন কাজকর্ম আনায়া পেছনে ঘুরে না তাকিয়েই,শুধু আন্দাজ করে মুচকি হাসলো। অতঃপর খানিকটা তাচ্ছিল্যের সাথে পেছনে না তাকিয়েই সামনে এগোতে এগোতে বলতে লাগলো,
“আমার আমিষ প্রিয় জামাই যে আদতে একটা নিরামিষ, তা বুঝতে পারিনি। বলছি কি, অভ্যাস করে নিও পিও। তাহলে আর এভাবে ঢং করে নাক ছিটকাতে হবে না!
তুমি চাইলে অবশ্য কালার-ফ্লেভার তোমার পছন্দ মতো চেঞ্জ করতে পারি। ব্র্যান্ডের লিপস্টিক;চকলেট পছন্দ না হলে ভ্যানিলা, স্ট্রবেরি, অরেঞ্জ, চেরী, বেরি,কফি, রোজ, ক্যারামেল…যা তুমি চাও!”
কেনীথ আনায়ার কথাগুলো শুধু পেছন থেকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে শুনলো। অতঃপর প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে চোখমুখ বিগড়ে বিড়বিড় করে আওড়ালো,
” বে”হায়া একটা!”
যদিও এটা আনায়া শুনতেই পুনোরায় তাচ্ছিল্যের সাথে মুচকি হাসলো।
দুজনে রুমে প্রবশে করতেই কেনীথ গিয়ে সোফায় গা এলিয়ে বসে পড়লো। অন্যদিকে আনায়া গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে লক করে এলো। আনায়াকে দেখে কেনীথ কিছু বলার আগেই আনায়া কেনীথের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,
“ফাস্টএইড বক্স কি এই রুমে আছে নাকি অন্য কোথায়?”
কেনীথ প্রথমে বিরক্তির সাথে আনায়ার সিরিয়াস হাভভাব দেখে কাবার্ডের দিকে ইশারা করতেই আনায়া দৃঢ় পায়ে হেঁটে কাবার্ড থেকে ফাস্টএইড বক্সটা নিয়ে এলো। অতঃপর কেনীথের পাশে বসতেই তুলোয় খানিকটা এন্টিসেপটিক দ্রবণ লাগিয়ে কেনীথের উদ্দেশ্যে বললো,
“এদিকে ঘুরে বসো!”
কেনীথ হুডির পকেটে হাত গুঁজে সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আনায়ার কথা শুনে একবার পাশে ফিরে ওকে দেখে নিয়ে পুনোরায় সামনের দিকে মুখ করে বললো,
“এসবের প্রয়োজন নেই!তোর কি কাজ রয়েছে তাড়াতাড়ি বল।”
আনায়া কেনীথের কথায় পাত্তা দিলো না। কেনীথের দিকে খানিকটা এগিয়ে বসে একহাতে কেনীথের গালটা চেপে নিজের দিকে ফেরালো। কেনীথ রাগি চোখে তাকালেও আনায়া তাতে পাত্তা না দিয়ে আন্টিসেপটিকে ভেজানো তুলো সোজা কেনীথের ঠোঁটে চেপে ধরলো। ক্ষ*ত জায়গায় এন্টিসেপটিক যেন ঝাঁঝালোর ন্যায় জ্বলাপোড়া করছে। তবে কেনীথ সবকিছুই নিজের রা’গের আড়ালে চেপে যাচ্ছে। কাঁ”টা ঠোঁট আর ফেটে যাওয়া নাকের আশেপাশে এখনো র’ক্ত লেগে রইছে।
আনায়া একে একে পুরো মুখের সব ক্ষ”ত আর র”ক্ত গুলো পরিষ্কার করে দিতেই কেনীথের গাল ছেড়ে দিলো। কেনীথ পুনোরায় পাশে ফিরতে নিলে আনায়া গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“পা দেও!”
কেনীথ ওর কথাকে গ্রাহ্য করলো না। বরং উল্টো নিজেই মেমাজ দেখিয়ে বললো,
“পায়ে কিছু হয়নি আমার!”
কেনীথের কথা শেষ করতে করতেই আনায়া লাঠি দিয়ে সামনে থাকা টি-টেবিলেটাকে খানিকটা দূরে সরিয়ে দিলো। অতঃপর এক মূহুর্তও দেরী না করে কেনীথের ডান পায়ের প্যান্টের নিচের অংশ টেনে ধরে নিজের কোলের উপর তুললো। কেনীথ পা সরিয়ে নিতে ধরলে আনায়া নির্বিকার হেসে বলতে লাগলো,
“ভাবছি একবার আমার প্রাণপ্রিয় হলেও হতে পারতো জামাইয়ের সাথে দেখা করতে যাবো। তোমার কি মত,যাওয়া উচিত আমার?”
কেনীথ আনায়ার কথা শুনে খানিকটা কপাল কুঁচকে ফেলে কি যেন ভাবতে বসলো। এদিকে আনায়া মনে মনে মুচকি হেসে কেনীথের পায়ের র’ক্ত গুলো ভালো ভাবে পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কেনীথ কিছু বলছে না দেখে আনায়া কেনীথের দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস ভ”ঙ্গিতে বললো,
“তোমার সতীনকে ভুলে গিয়েছো?আমি রেহানের কথা বলেছি। আমার হলেও হতে পারতো জামাই,রেহান!
কেনীথ আনায়া কথা শুনে ওর দিকে কটমট দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। অতঃপর একটুও দেরী না করে এক ঝটকায় আনায়ার কোল থেকে পা টা সরিয়ে নিলো। এদিকে আনায়া মুচকি হেসে বললো,
“কোথাও জ্বলছে?আগে ঔষধ লাগতে হবে নাকি বরফ?”
কেনীথ একটা কথাও বললো না। গম্ভীর্যের সাথে চুপচাপ হুডিতে হাত গুঁজে সামনের দিকে মুখ করে তাকিয়ে রইলো।এদিকে এরই মাঝে আনায়া নিজের হাতের অনেকটাই কা”টা জায়গাটা এন্টিসেপটিকে তুলো ভিজিয়ে এমন ভাবে ঘষামাজা করলো যে পাশে বসে থেকে আড় চোখে দেখতে থাকা কেনীথেরও গলা শুকিয়ে ঢোক গিলতে হলো। তার কাছে মনে হচ্ছে আনায়া নিজের হাতের উপর যুদ্ধ চালাচ্ছে। একটু ধীরেসুস্থে করলে মনেহয় দুনিয়াটাই গায়েব হয়ে যাবো। কেনীথ খানিকটা বিরক্তও হলো। অবশ্য শুরু থেকে আনায়ার সব কাজকর্মতেই ও বিরক্ত।
এদিকে আনায়া নিজের হাতে ব্যান্ডেজ প্যাচাতে প্যাচাতে বলতে লাগলো,
“তুমি এতো ক্যারে’ক্টার লেস হলে কি করে?”
আনায়ার অকপটে বলা কথা শুনে কেনীথ আনায়ার দিকে খানিকটা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এদিকে আনায়ার ব্যন্ডেজ বাঁধা শেষ। সেও যথারীতি কেনীথের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে কড়া কন্ঠে বলতে লাগলো,
“তাকিয়ে রইছো কেনো?ভুল বলেছি কি আমি?গত কয়েক বছরে সাইত্রিশ জন নতুন নতুন মেয়ে গিয়েছে তোমার কাছে। গতকাল আমি না গিয়ে ইরা গেলে আটত্রিশ নম্বরটা ইরাই হতো। একে তো ইরা তোমার শা”লী হয়, আবার ওকে ছোট বোনও ভাবো। আবার সুন্দর মতো প্লান করে রাত কাটানোর চিন্তাও করেছো! এরপরও বলতে তুমি সাধুপুরুষ?”
একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩৬
কেনীথ আনায়ার তির্যক কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলো। অতঃপর গা ছাড়া ভাবে তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললো,
“এতো কিছু জেনেছিস যখন এটা জানিস নি যে ওই সাইত্রিশ জন মেয়ের সাথে কি করা হয়েছে?”
আনায়া কেনীথের কথা আর ভাবভঙ্গিতে খানিকটা থমকে গেলো। তবুও চোখমুখ শক্ত করে নিরেট কন্ঠে বললো,
“মানে? কি বলতে চাইছো? ওদেরকে ডেকে এনে কি, তুমি নিজের হাত পা টিপিয়েছো?
কেনীথ খানিকটা বিরক্ত হলো। তবুও নির্বিকারে খানিকটা হাই তুলে বললো,
” নাহ! উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি।”