অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৪১
ইয়াসমিন খন্দকার
আরহাম রাজীবকে দেখেই অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,”রাজীব ভাই আপনি! এই ছেলেটা কি আপনার?”
রাজীব কিছু বলবে বুঝে উঠতে পারে না৷ এমন সময় জাঈদ এসে রাজীবকে জড়িয়ে ধরে বলে,”সরি,আমি একটু বোর হচ্ছিলাম তো তাই একটু বাইরে চলে এসেছিলাম। তুমি রাগ করো না প্লিজ।”
রাজীব কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারে না। তার কথাগুলো কেমন জড়িয়ে যাচ্ছিল৷ এদিকে রাজীবমে দেখেই হঠাৎ করে আরহামের মনে পড়ে আরুশির সাথে তো রাজীবের ভালো সম্পর্ক ছিল তাই রাজীব হয়তো জানতে পারে আরুশি এখন কোথায় আছে। তাই সে রাজীবকে জিজ্ঞেস করে,”ভাইয়া,আরুর সাথে তো আপনার ভালো সম্পর্ক ছিল। আপনি কি জানেন ও এখন কোথায়?”
রাজীব আমতাআমতা করে বলে,”আমি মানে..”
“আপনিও কি ওর কোন খোঁজ জানেন না..অবশ্য না জানাই স্বাভাবিক। যেখানে আরুশি আপনাদের কারো সাথে কোন যোগাযোগ রাখে নি সেখানে আপনার সাথে কেন করবে। আর এটা বুঝি আপনার ছেলে। অনেক কিউট কিন্তু।”
বলেই জাঈদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। জাঈদও মুচকি হাসে। রাজীব আরহামকে জিজ্ঞেস করে,”তুমি ভালো আছ তো আরহাম? এতদিন পর তোমার সাথে দেখা হলো। খুলনায় কেন এসেছ?”
“জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি..এখানে সেমিনারে অংশ নিতে এসেছি।”
“ওহ।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এমন সময় হঠাৎ করে পেছন থেকে আমিনা ছুটে এসে আরহামকে জড়িয়ে ধরে বলে,”বলো তো আমি কে?”
আরহাম হেসে বলে,”এটা তো আমার আমিনা বুড়ি ছাড়া কেউ হতে পারে না।”
আমিনা সাথে সাথে নেচে ওঠে। আরহাম আমিনাকে কোলে তুলে নেয়। আমিনার গালে হামি খায়। এমন সময় সায়রাও সেখানে এসে বলে,”ওহ আপনি এখানে। আমিনা সেই কখন থেকে আপনাকে খুঁজে চলেছে।”
“একটু ব্যস্ত ছিলাম।”
আমিনা ও সায়রাকে দেখে রাজীব বলে মনে মনে বলে ওঠে,”এরাই কি তাহলে আরহামের নতুন পরিবার? আরহাম তো সত্যিই ভীষণ ভালো আছে দেখছি। আরু তাহলে ঠিকই ভেবেছিল। আমি তো ভেবেছিলাম আরহামকে সবটা জানিয়ে দেব কিন্তু এখন মনে হচ্ছে জানানো টা ঠিক হবে না।”
এদিকে আরহাম আবারো রাজীবের দিকে তাকিয়ে বলে,”ভাইয়া,আরুশি যদি ভবিষ্যতে কখনো আমার সাথে যোগাযোগ করে তাহলে আমাকে জানাবেন প্লিজ।”
রাজীব মাথা নাড়িয়ে বলে,”আমার কিছু জরুরি কাজ আছে। আমি এখন আসছি।”
“আচ্ছা। ভালো থাকবেন।”
রাজীব জাঈদকে নিয়ে দূরে আসলে জাঈদ বলে ওঠে,”ভালো আঙ্কেল ঐ লোকটা কে ছিল? জানো আজকে উনি আমায় পরে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছেন কিন্তু উনি মাম্মার ব্যাপারে কেন জানতে চাইছিলেন? উনি কি মাম্মাকে চেনেন? আর তুমি ওনাকে মাম্মার ব্যাপারে কিছু বললে না কেন?”
“ঐ লোকটা তোমার মাম্মার সাথে ঝগড়া করেছিল অতীতে অনেক কষ্টও দিয়েছে। তাই তোমার মাম্মা চায়না উনি তার ব্যাপারে কিছু জানুক। তুমি কিছু বলো না কেমন?”
“না, বলবো না। ঐ লোকটাকে ভালো ভেবেছিলাম কিন্তু উনি পচা। আমার মাম্মাকে যে কষ্ট দিয়েছে তার সাথে আমি কোন কথা বলব না।”
রাজীব দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”আরু এত গুলো দিন পর একটু স্বাভাবিক হয়েছে। ওকে আমি আর আগের মতো কষ্টকর সময়ে ফিরতে দিতে পারি না।”
এদিকে সায়রা আরহামকে জিজ্ঞেস করে,”ঐ লোকটা কে ছিল ভাইয়া? আপনার চেনা কেউ?”
“আমার আর আরুশির সিনিয়র ছিলেন উনি ঢাবিতে। আমি ভেবেছিলাম উনি হয়তো আরুশির ব্যাপারে কিছু জানেন। কিন্তু উনিও বোধহয় জানেন না।”
সায়রা এব্যাপারে আর কথা বাড়ায় না। আমিনাকে নিজের কোলে আসতে ইশারা করে আর বলে,”তোমার বড় আব্বু এখন তার কাজে যাবেন। তাকে আর বিরক্ত করো না। আমার কোলে আসো,আমি তোমায় হালুম দেখাতে নিয়ে যাই।”
আমিনা বলে ওঠে,”না, আমি বড় আব্বুর সাথেই থাকব।”
“জেদ করো না আমিনা। তোমার বড় আব্বু ব্যস্ত!”
আরহাম বলে ওঠে,”থাক আমার কাছে একটু কোন অসুবিধা নেই। আমি বরং ওকে আশেপাশে একটু ঘুরিয়ে আনি।”
“আচ্ছা, আমিনা ভালো হয়ে থেকো। একদম দুষ্টুমি করবে না। আর বড় আব্বুকে বেশি বিরক্ত করো না।”
“টিক আচে। আমি একদম ভালো মেয়ে অয়ে(হয়ে) থাকব।”
বলেই মিষ্টি হাসে আমিনা।
আরুশি জাঈদকে নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তা করছিল। তাই আর নিজের চেম্বারে বসে না থেকে চেম্বারে থেকে বেরিয়ে পড়েছিল। এখন সে সেমিনারের ওখানে পৌঁছে যায়। এসেই জাঈদ ও রাজীবকে খুঁজে বেড়াতে থাকে। একটু পর হঠাৎ করে তার সামনে চলে আসে রাজীব ও জাঈদ। তাদের দেখামাত্রই আরুশি বলে ওঠে,”রাজীব ভাই!”
রাজীব আরুশিকে দেখে কিছুটা ভীত হয়ে বলে,”আরু..তুমি হঠাৎ এখানে আসতে গেলে কেন? আমি তো জাঈদকে নিয়ে রওনা দিচ্ছিলাম এখনই।”
“আমার কেন জানি খুব চিন্তা হচ্ছিল। জাঈদ যা দুষ্টু ছেলে তোমাকে না আবার বেশি বিরক্ত করে তাই আমি ওকে নিয়ে চলে এলাম।”
“ওহ..এখন তাড়াতাড়ি এখান থেকে যাও।”
“কেন?”
“আসলে..”
রাজীব বুঝতে পারে না তার কি আরুশিকে সবটা বলা উচিত কি না। এমন সময় জাঈদ হঠাৎ বলে ওঠে,”মাম্মা জানো একটু আগে আমাদের একটা আঙ্কেলের সাথে দেখা হয়েছিল যার সাথে তোমার ঝগড়া হয়েছিল; উনি নাকি তোমায় কষ্টও দিয়েছিলেন।”
“কার কথা বলছ তুমি জাঈদ? রাজীব ভাই জাঈদ কার কথা বলছে? কার সাথে দেখা হয়েছিল তোমার?”
“না মানে..”
রাজীব তখনো নিশ্চিত হতে পারছিল না। এমন সময় হঠাৎ করে আরুশির দৃষ্টি যার সামনের দিকে। যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল আরহাম। তাদের থেকে একটু দূরেই। আরহাম এর কোলে ছিল আমিনা। আরহামকে দেখা মাত্রই আরুশির নিঃশ্বাস এর গতি বাড়ে। আরহাম তখনো খেয়াল করে নি আরুশির দিকে। আরুশির মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছিল না। এমন সময় রাজীব বলে,”এটার কথাই তোমায় বলছিলাম। এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম আমি।”
“উনি এখানে কেন? আমি বুঝতে পারছি না। এত বছর পর কেন আমার অতীতের সম্মুখিন হতে হলো?”
এমন সময় আরহামেরও নজর পড়ে আরুশির দিকে। তার দৃষ্টিও স্থির হয়ে যায়। এত দিন যাকে সে খুঁজে বেড়াচ্ছিল সে এই খুলনায়! আরহাম নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না। ধীর পায়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে নেয়। আরুশি জাঈদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,”নাহ, আমার ছেলেকে কাউকে আমি নিজের থেকে কেড়ে নিতে দেব না। অতীতের মুখোমুখি আমি হতে পারব না..”
কিন্তু তার আর কিছুই করার ছিল না। ধীরে ধীরে আরহাম যত এগিয়ে আসছিল তার ভয় বাড়ছিল। রাজীব আরুশির ভরসা হয়ে তার পাশে দাঁড়ায়। রাজীব, আরুশি ও জাঈদকে একত্রে দেখেই দাঁড়িয়ে যায় আরহাম। এদিকে আরুশির দৃষ্টি আরহামের কোলে থাকা আমিনার দিকে। দুজনের মনেই চলছে ভিন্ন ভিন্ন দ্বন্দ।
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৪০
“Aaya Phir Woh Nazar Aise
Baat Chhidne Lagi Phir Se
Aankhon Mein Chubhtaa.. Kal Ka Dhuaan.
Haal Tera Na Hum Sa Hai
Iss Khushi Mein Ik Gham Sa Hai
Basne Lagaa Kyun.. Phir Woh Jahaan.
Woh Jahaan Door Jis Se Gaye The Nikal
Phirse Yaadon Ne Kardi Hai Jaise Pahal
Lamha Beeta Hua Dil Dukhaata Raha
Khaamakhaa, Bewajah, Khwaab Bunta Raha””