প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৪১
আদ্রিতা নিশি
অরিত্রিকা হঠাৎ চুপ হয়ে যায়। উল্টোপাল্টা বলায় জিভ কাটে। মানুষটার সামনে গতকাল রাতের ঘটনা বলে দিলে তার মান সম্মান সব শেষ হয়ে যেতো। তখন নিশ্চয়ই সারহান ভাই তাকে নির্লজ্জ ভাবতো।
“ গতকাল রাতে কি করেছিলি? ”
সারহানের শান্ত দৃঢ় কন্ঠস্বর। অরিত্রিকা চোরা চোখে তাকায় শ্যামমানবের মুখপানে। দ্বিধায় জড়িয়ে যায় গলদেশ। কী বলবে কী করবে বুঝল না। আড়ষ্টভাব জেঁকে বসলো মনে। ওষ্ঠ ভিজিয়ে মিনমিন করে বলল ;
“ কিছু না। আপনার হাতের কী অবস্থা? ব্যথা কমেছে? ”
সারহানের বুঝতে সময় লাগল না অরিত্রিকা তার প্রশ্ন উপেক্ষা করে অন্য কথা বলছে। সে নিজেও আর এ বিষয়ে আপাতত কিছু বলল না। মাথা নাড়িয়ে ক্ষুদ্র প্রতুত্তর করল ;
“ হ্যা কমেছে। ”
“ এখনো রেগে আছেন? ”
“ রেগে থাকলে তোর সাথে কথা বলতাম ন
ইডিয়েট? ”
অরিত্রিকার মুখ ভার হয়ে এলো। সারহান ভাই এমন কাঠখোট্টা কেনো? সুন্দর করে কথা বললে কী ক্ষতি হয়ে যায়? হয়তো বিশাল বড় ক্ষতি হয় হুহ্। সেসব ভাবনা বাদ দিল। কিছু একটা মনে পড়তেই সাহস সঞ্চার করে বলল ;
“ সারহান ভাই একটা প্রশ্ন করব? ”
সারহান সরু দৃষ্টিতে অবলোকন করল মেয়েলী মুখাবয়ব। অতঃপর স্বভাবসিদ্ধ রুক্ষতা নিয়ে বলল ;
“ বল কী বলবি? ”
“ আপনি রাহাতকে সরিয়েছেন তাই না? ”
“ রাহাতকে সরিয়ে আমার লাভ কী? ”
সারহানের কন্ঠস্বর ভাবলেশহীন। অরিত্রিকা একটু বিরক্ত হলো। মানুষটা শুধু জিলাপির মতো কথা প্যাচায়। এক প্রকার দোদুল্যমান মন নিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল ;
“ আপনার লাভ লস কী হবে জানি না। কিন্তু আমার মন বলছে আপনি এসবের পেছনে আছেন। রাহাতকে আপনি সরিয়েছেন তাই না? ”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সারহান বাঁকা হাসে। বেঞ্চ হতে শিউলি ফুল নেয়। অতঃপর শিউলি ফুলটি অরিত্রিকার কানের পাশে এলোমেলো চুলে গুঁজে দেয়। অরিত্রিকা যেন থমকে গেল। হৃদস্পন্দন অদৃশ্য তাল হারালো। সারহান একটু ঝুঁকে এলো।তার প্রতিটি উষ্ণ শ্বাস ছুঁয়ে গেল মেয়েলী গাল। দৃঢ় কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলল ;
“ ইয়েস! আমি সরিয়েছি রাহাতকে। ”
অরিত্রিকা স্তব্ধ হয়ে যায়। সারহান তার অনেকটা সন্নিকটে আসায় গলা শুকিয়ে যায়। কল্প পুরুষের সামান্য স্পর্শে লজ্জায় আড়ষ্ট হলো। লাজুক ভাব সামলে খানিকটা পিছিয়ে যায়।এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে আশেপাশে। কৌতুহল বশত ক্ষীণ কন্ঠে শুধায় ;
“ কেনো এমন করলেন সারহান ভাই? আপনি ভাই হয়ে বোনের বিয়ে ভাঙলেন? ”
“ ভাই হয়ে বোনের জীবন বাঁচিয়েছি ফাইরুজ। ”
“ কী বলতে চাইছেন আপনি? ”
“রাহাত একজন ধোঁকাবাজ। আমাদের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে সে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। সে এসেছিল প্রতিশোধ নিতে অজানা কোনো ব্যক্তির হয়ে। পরিকল্পনা ছিল, রাহাত অরিনকে বিয়ে করবে তারপর তাকে নানাভাবে অত্যাচার করবে। কিন্তু আমি ওদের সেই নোংরা পরিকল্পনাকে সফল হতে দিইনি।”
সারহান শক্ত কন্ঠে বলল। অরিত্রিকা বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। সে অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাকিয়ে বলল ;
“ এসব কী বলছেন আপনি? অরিন আপুর সাথে কার শত্রুতা থাকতে পারে? ”
সারহান তপ্ত শ্বাস ফেলল। ভরাট কন্ঠে বলল ;
“ অরিনের সাথে কোনো শত্রুতা নেই। ”
“ তাহলে? ”
“ আমার সাথে শত্রুতা তাই অরিনকে টার্গেট করেছিল। আমাকে কাবু করতে না পেরে আমার ফ্যামিলিকে টার্গেট করছে বাস্টার্ডটা।”
“ আপনি তাকে চেনেন? ”
অরিত্রিকা উদ্বিগ্ন হয়ে শুধায়। সারহান গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দেয় ;
“নয়ন তালুকদার, ইলহাম তালুকদার নাকি অন্য আরেকজন। এই মুহূর্তে আমার কাছে কোনো ধারণাই নেই। পরিস্থিতিটা ভীষণ জটিল, ভীষণ গোলমেলে।”
অরিত্রিকার মস্তিষ্ক সচল হলো। ইলহাম তালুকদার নামটা পরিচিত মনে হলো। ভার্সিটির ক্যাম্পাসের কাহিনী হঠাৎ মনে পড়ল। মুহুর্তেই স্তম্ভিত হয়ে গেল সে। তারমানে ইলহাম তালুকদার সারহানে ভাইয়ের শত্রু? কিন্তু তাকে যখন সাহায্য করেছিল তখন অপরিচিত মানুষটাকে খারাপ মনে হয়নি। সব জায়গায় কেন এতো ধোঁয়াশা? কৌতুহলী হলো মন। কুণ্ঠিত ভঙ্গিতে প্রশ্ন করল ;
“ ইলহাম তালুকদার কে? ”
“ বিরোধীদলীয় নেতা নয়ন তালুকদারের একমাত্র ছেলে ইলহাম তালুকদার এবং আমার ব্যাচমেট। ইলহামের থেকে দূরে থাকবি ফাইরুজ। যদি কোনোদিন তুই ওর সাথে কথা বলিস আই সয়্যার তোর ভার্সিটি যাওয়া অফ করে দেব। ”
“ আমি কখন উনার সাথে কথা বললাম আজব? ”
“ ফার্স্ট টাইম ভার্সিটির ক্যাম্পাসে এন্ড সেকেন্ড টাইম ভার্সিটির গেইটে। ”
অরিত্রিকা হচকচিয়ে গেল। এই রে ধরা খেয়ে গেল। সে ইচ্ছে করে অপরিচিত মানুষটার সাথে কথা বলেনি৷ ইলহাম যেচে কথা বলেছিল। সারহানের কথা বলার ধরনে আচ করেছিল মানুষটা হয়তো সবকিছু জানে। তবুও ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বলেছিল যেন বকা না খায়। কিন্তু শেষ উপায় হলো না । এই ভেবে মুখ গোমড়া করল। সারহান অরিত্রিকা কিছু বলল না। সে উঠে দাঁড়াল বেঞ্চ থেকে। একপলক অরিত্রিকার বিরস মুখে তাকিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকল। অরিত্রিকা হতভম্ব হয়ে দেখল সেই যাওয়া। অতঃপর সে পেছন পেছন ছুটল। দ্রুত দৌড়ে গিয়ে পুরুষালী হাত তার দুহাত দ্বারা আঁকড়ে ধরল। কারো হাত টেনে ধরায় সারহান থেমে যায়। ভ্রুযুগল কুঁচকে পেছনে তাকায়। তীক্ষ্ণ সেই চাহনি। অরিত্রিকা তীক্ষ্ণ চাহনি খেয়াল করে। ভয় পেয়ে হাত ছেড়ে দেয়। ছোট বাচ্চাদের ন্যায় পেছনে দুহাত লুকায়। ওষ্ঠ ভিজিয়ে প্রশ্ন করবে এমন সময় দৃষ্টি স্থির হয় কিছুটা দূরে দাঁড়ানো ইরফানের দিকে। আতংকিত হয় তার মনসত্তা। এতোক্ষণ সারহান ভাই এবং সে কথা বলছিল সবকিছু কি ইরফান ভাই দেখে ফেলেছে? যদি এসব কথা বাড়ির কেউ জানতে পারে তাহলে তুলকালাম বেঁধে যাবে।
অরিত্রিকা শঙ্কিত বদনে সারহানের দিকে তাকিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে বলল ;
“ সারহান ভাই! ইরফান ভাই সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দুজনকে কেমন অদ্ভুত নজরে দেখছে। ”
সারহানের ভ্রু বেঁকে গেল। নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল ;
“ ইরফান দাঁড়িয়ে আছে তো কী হয়েছে? ”
“ কী হয়েছে মানে? সর্বনাশ হয়েছে। নিশ্চয়ই এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে আমাদের দুজনের নজর রেখেছিল। ”
“ এখানে সর্বনাশের কী হলো? ”
“ আপনি আমার কানে ফুল গুঁজে দিলেন, আমি আপনার হাত ধরলাম এগুলো যদি বাড়ির সবাইকে বলে দেয় তখন আমাদের কী হবে? ”
অরিত্রিকা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল। সারহান বিরক্ত হলো। ধমকে বলল ;
“ ষ্টুপিড কোথাকার। সামান্য বিষয় নিয়ে কান্নাকাটি শুরু করবি না। ”
অরিত্রিকা ওষ্ঠ উল্টে নাক টেনে বলল ;
“ আম্মু জানলে আমায় অনেক পেটাবে। আমার শুটকির মতো শরীর মা*র সহ্য করার ক্ষমতা নেই সারহান ভাই। পিলিজ আমায় বাঁচান। ”
“ ভেতরে যা। ”
“ আমি আব্বুর বকা খেতে.. ”
“ ভেতরে যেতে বলছি কথা কানে যাচ্ছে না? ”
সারহান চাপা স্বরে ধমকে বলল। অরিত্রিকার চমকে গেল। সারহানের প্রতি অভিমান জন্মালো। কোনো উচ্চবাচ্য না করে দৌড়ে বাড়ির সদর দরজার ফটক পেরিয়ে গেল।
সারহান দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। এলোমেলো সিল্কি চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে স্বাভাবিক ভাবে সদর দরজার দিকে যেতে লাগল। পথিমধ্যে ইরফানকে থম মে*রে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও কোনো কথা না বলে নিজ মনে হাঁটতে লাগল। ইরফান রাগান্বিত ভঙ্গিতে এগিয়ে গিয়ে সারহানের পথ রোধ করল। জ্বলন্ত চাহনিতে তাকিয়ে রাগে ফুঁসে বলে উঠল ;
“সারহান, তুই জানিস অরিত্রিকা আমার হবু স্ত্রী। ভাইয়ের হবু বউকে কানে ফুল গুঁজে দিতে তোর বাধল না?”
সারহান তৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে গেল। তির্যক দৃষ্টিতে তাকাল ইরফানের দিকে। পুরূ কন্ঠে সাবলীল ভাষায় বলল ;
“ যাকে ভালোবাসি তার কানে ফুল গুঁজে দিতে কখনও বাধে না ইরফান।”
ইরফান স্তব্ধ হয়ে নিঃশব্দে দাঁড়িয় থাকে ।সারহানের বলা কথাগুলো যেন বজ্রাঘাত হয়ে আছড়ে পড়ে তার অন্তরে।চোখদুটি স্থির হয়ে যায় সারহানের গম্ভীর মুখের উপর।সেই মুখে কোনো অনুশোচনা নেই বরং ফুটে উঠেছে দৃঢ়তা।
ইরফানের বুকের ভেতর থেকে উঠতে থাকে অনিবার্য চিনচিনে ব্যথা।প্রতিটি নিঃশ্বাসে যেন কেউ কাঁটা বিঁধিয়ে দিচ্ছে বক্ষপিঞ্জরে।
তার সন্দেহ ঠিক ছিল।সারহান অরিত্রিকাকে ভালোবাসে।কিন্তু ভাই হয়ে কীভাবে পারল এমনটা করতে?কীভাবে পারল নিজের ছোট ভাইয়ের ভালোবাসার মানুষকে কেড়ে নিতে?একবারও কি ভাবেনি ইরফানের কথা?চোখদুটি ক্রমেই রক্তিম হয়ে উঠল।রাগ, ক্ষোভ আর বিশ্বাসভঙ্গের তীব্র দাহে জ্বলে উঠল চক্ষুদ্বয়।চোখের লাল আভা যেন প্রকাশ করল অন্তরের দগ্ধ হওয়া আগুন।
ভাই শব্দটা হঠাৎই শোনালো ঘৃণ্য উপহাসের মতো। থমথমে রুষ্ট গলায় চিল্লিয়ে বলল;
“আমি ভালোবাসি অরিত্রিকাকে। পরিবারের বড়রা মিলে আমাদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছে তুই জানিস সেটা।তবুও কেনো তুই ওর কানে ফুল গুঁজে আজেবাজে কথা বলছিস?ভাই হয়েও কীভাবে তুই এমন করতে পারলি? এটা ভালোবাসা না বিশ্বাসঘাতকতা?”
“ কাম ডাউন ইরফান। সিনক্রিয়েট করিস না। ”
“সিনক্রিয়েট কেনো করবো না, সারহান?
তুই কি ভেবেছিস আমি বুঝতে পারি না?
তুই আমার থেকে অরিত্রিকাকে কেড়ে নিতে চাইছিস।”
সারহান এতোক্ষণ স্বাভাবিক থাকলেও এবার পারলো না। ক্রোধে জর্জরিত হয়ে উঠল সে। চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো। দাঁতে দাঁত চেপে চাপা স্বরে বলল ;
“আমি ফাইরুজকে তোর কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছি না ইরফান।আমি শুধু সেই মানুষটাকে কাছে টেনেছি যাকে আমি ভালোবাসি আর যে আমায় ভালোবাসে।তোর অজান্তেই সময় অনেক কিছু বদলে দিয়েছে।তুই দিনের পর দিন নিজের ফিলিংস লুকিয়ে রেখেছিস পারিবারিক সিদ্ধান্তের অন্তরালে লুকিয়ে নিজের ব্যক্তিত্ব এবং অনুভূতি লুকোতে চেয়েছিস। যখন দেখলি ফাইরুজ আমায় ভালোবাসে তখনই ফুপিকে নিয়ে চাচার কাছে ছুটলি বিয়ের তাড়া দিতে।তুই যদি সত্যি ভালোবাসতি ওকে তাহলে ফিলিংস লুকিয়ে রাখতে পারতি না। অনেক আগে সবার সামনে বুক ঠুকে বলতিস ‘হ্যাঁ আমি ভালোবাসি অরিত্রিকাকে ও বিয়ে করতে চাই’। তোর কাছে সময় এবং সুযোগ দুটোই ছিল কিন্তু মেরুদন্ডহীনের মতো সবার সামনে ও অরিত্রিকার সামনে সত্যিটা বলতে প্রতিনিয়ত ভয় পেয়েছিস। ভালোবাসা যদি কোনো শঙ্কায় লুকিয়ে রাখতে হয় তবে সেটা ভালোবাসা নয় ভয় বলে গণ্য হয়।আর ফাইরুজ ভয় নয় ভালোবাসাকে বেছে নিয়েছে।”
ইরফান ধাক্কা খেল ভেতর থেকে। গভীর সেই আ ঘাত ।সারহানের বলা প্রতিটি শব্দ যেন গুলি হয়ে বিঁধে গেল বুকের গভীরে। সে অরিত্রিকাকে ভালোবাসে। আজ থেকে নয় বছর দেড়েক ধরে সেই ভালোবাসা জমে উঠেছে তার হৃদয়ের নিরালায়।কিন্তু তাদের এই সম্পর্কটা যা ভবিষ্যতের স্বপ্ন হয়ে ছিল তার সূত্রপাত তো আরও আগে! প্রায় দুই বছর পূর্বে যখন ইসমা বেগম নিজে অরিত্রিকার পরিবারের সঙ্গে তার বিয়ের কথা পাকা করেছিলেন।এই বিষয়টি সম্পর্কে তখন সে কিছুই জানত না।আর যেদিন জানতে পেরেছিল সেদিন ইরফান যেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখ পেয়ে গিয়েছিল।ছুটিতে রাজশাহী এলেই সে অরিত্রিকার বাড়িতে ছুটে যেত। মুখে কিছু না বললেও চোখে মুখে থাকত অপেক্ষার ভাষা। প্রতিবার ভাবত এইবার বলবে এইবার প্রকাশ করবে মনোবাসনা।কিন্তু না বলা হতো না কিছুই।
ভয় লাগত যদি মনের কথা বললেই মেয়েটা তার থেকে দূরে সরে যায়? কথা বলা বন্ধ করে দেয়?
তাই নিজেকে সংযত রাখত। ভেতরের আবেগের ঝড়কে আটকে রাখত প্রতিবার।
এমনকি সেই সাহস না পেয়ে ইসমা বেগমকে দিয়েই আজমল সাহেবকে বলেছিল অরিত্রিকার বয়স বিশ হলে তখন বিয়ের কথা ভাবা যাবে। ততদিনে মেয়েটা একটু ম্যাচিউর হবে।এভাবেই সময়ের স্রোতে সে নিজের স্বপ্নকে অপেক্ষার পেছনে আটকে রেখেছিল।কিন্তু আজ
যে মেয়েকে হারানোর ভয়েই এতদিন চুপ ছিল, সেই মেয়েটাই ভালোবেসে ফেলেছে অন্য কাউকে।
ইরফানের বুকের মাঝে যেন অদৃশ্য শূল বিঁধে গেল। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।বক্ষে অনুভব করল অসহনীয় ব্যথা। যা কোনো ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়।
“কাউকে ভালোবাসলে তা কখনো গোপন রাখা উচিত নয়। সময় থাকতে বলে দিতে হয় নয়তো ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে যায়। সব সত্যিটা আজ তোর সামনে ইরফান। নাউ ডিসিশন ইয়োরস্। তুই কী করবি, সেটা একান্তই তোর ব্যাপার।তোর কোনো সিদ্ধান্তে আমি বাধা হবো না।কারণ আমি যা পাওয়ার সেটা সাহস করে বলে পেয়েছি চুপ থেকে নয়। ”
সারহান নির্ভীক মনোভাব নিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল। অতঃপর শাণিত পায়ে প্রস্থান করল সেখান থেকে। ইরফান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সেথায়। নির্জীব ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল ফুলের বাগানটার দিকে।
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৪০
এতোদিনের ভালোবাসা যেন নিমেষেই দহনে পরিণত হলো। সারহান ঠিক বলেছে ভালোবাসতে হলে সাহস লাগে। সবাইকে মোকাবিলা করার আত্নবিশ্বাস দরকার হয়। প্রিয় মানুষকে অনুভূতি প্রকাশে ভয় নয় বরং সাহসীকতার সহিত অনুভূতি প্রকাশ করতে হয়।
ইরফান বিষাদগ্রস্ত ভঙ্গিতে হাসে। অতঃপর চোখ মুখ শক্ত করে বিরবির করে বলল;
“ তোকে ভালোবাসি অরিত্রিকা। সত্যিটা জানার পরেও সহজে তোকে ছাড়তে পারবো না। দুইদিনের ভেতরে তোকে আমি নিজের করে নেবো। ”