একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩৮ (৪)
রনীতা তুশ্মি
আনায়া দরজা খুলতেই দেখে কেনীথ দাঁড়িয়ে রয়েছে। চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। আনায়াকে দেখামাত্রই সে নিজেও খানিকটা কপাল কুঁচকে ফেলল। আনায়ার উদ্দেশ্যে কিছু বলতে নিবে তার পূর্বেই আনায়া দরজা থেকে সরে আসে। ওদিক থেকে লুসিয়া খানিকটা মুচকি হেসে বলল,
“ভেতরে এসো! বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”
কেনীথ আনায়াকে আর কিছু না বলে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে। অন্যদিকে আনায়া কি যেন ভেবে আকস্মিক রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। যা দেখামাত্রই কেনীথ এবং লুসিয়া সেদিকেই নজর ফিরিয়ে তাকায়। আনায়ার ভাবগতিক তার কাছে স্পষ্ট নয়। কেনীথ লুসিয়ার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করে,
“তোমরা কি কোনো প্রযোজনীয় বিষয়ে কথা বলছিলে?”
—“না,তেমন কিছুই…”
—“জ্বী,একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে…”
দু’জনে একসাথে বলে ওঠায়, দুজনেই পরবর্তীতে থেমে যায়। এদিকে দু’জনের কাজকর্মে খানিকটা কপাল কুঁচকে বলল,
“কোনো সমস্যা?”
এবার লুসিয়া কিছুই বলল না। তাই আনায়া বলতে লাগল,
“সমস্যা নয়,তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলছিলাম আমরা।”
—“ও আচ্ছা, তবে আমি না হয়…”
—“এসেছেন যখন তবে থাকুন, একসাথে আলোচনায় বসা যাবে।”
—“কিসের আলোচনা?”
কেনীথ অনেকটা কপাল কুঁচকে কথাটা বলতেই আবায়া নির্লিপ্ত স্বরে বলে উঠল,
“বাবুশকার গেইম প্ল্যান…”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
জার্মানির বার্লিন থেকে প্রায় তেতাল্লিশ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ব্র্যান্ডেনবুর্গে অবস্থিত পরিত্যক্ত একটি স্যানাটোরিয়াম—বেলিট্স-হেইলস্ট্যাটেন। ১৯৩০-এর দশকে যেখানে যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসা হতো।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তা রূপ নেয় নাৎ’সি মেডিকেল এক্সপেরিমেন্টের আঁতুড়ঘরে।আর যু’দ্ধের পর, সোভিয়েত বাহিনী এটিকে সামরিক হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করে। আর এখন তা সরকারি রেকর্ডে ‘ডিকমিশনড”—কার্যত পরিত্যক্ত। কিন্তু সত্যিটা আরও গা ছমছমে।
এই ভগ্নপ্রায় ভবনের নিচেই গড়ে উঠেছে একটি গোপন গবেষণাগার। নাম—”S.P. Hans Biotech & Aesthetics”। বহির্বিশ্বে এটি বিলিয়ন ডলারের স্কিনকেয়ার ও এন্টি-এজিং প্রডাক্ট তৈরির প্রতিষ্ঠান। সেলিব্রিটিরা ব্যবহার করে যেসব ক্রিম বা ইনজেকশন, তার গোপন উপাদানই হলো Neuroderm X—এক ধরনের নিউরোট্রফিন সমৃদ্ধ সিরাম।
Neuroderm X এমন একটি উপাদান যা কোষের বার্ধক্য থামিয়ে দেয়। চোখের নিচের কালি গায়েব করে। ত্বক করে শিশুর মতো কোমল। কিন্তু এর প্রধান উপাদান আসে মানব ভ্রূণের নিউরাল টিস্যু থেকে। বিশেষত সেইসব অংশ, যেখানে আবেগ, অনুভূতি এবং মানসিক প্রতিক্রিয়া গঠিত হয়।
আর এসব সংগ্রহ করা হয় লুকিয়ে থাকা ক্লিনিক থেকে। সবচেয়ে বেশি টার্গেট হয়,সোমালিয়া, ইউ”ক্রেন,সিরিয়া,বাংলাদেশ,ইয়েমেন সহ আর বিভিন্ন দেশ। যেখানে তাদের কাজ করা ব্রাঞ্চগুলোর রয়েছে তারাই মূলত এই বাচ্চা সংগ্রহের কাজ করে থাকে। আশেপাশের এলাকা বা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব শিশুর স্নায়বিক তরল সংগ্রহ করে সিরাম প্রস্তুত করে S.P. Hans। আন্তর্জাতিকভাবে এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু ইউরোপের উচ্চ বিত্ত সমাজের গোপন রুটে এটি পৌঁছায় হাই-ফ্যাশন জগতের সেলেব্রিটিদের হাতে।
কালো পাথরে মোড়া রাস্তা, ভাঙাচোরা দালান চারপাশে ছড়িয়ে আছে এই শহরে। যার শীতল বাতাস যেন, শতাব্দীর পুরোনো কোনো কবরস্থানের…ধীরে ধীরে শহরের গায়ে মিশে গিয়েছে। এই শহর সাধারণ পর্যটকের চোখে নিস্তেজ। অথচ নিভৃতে এখানে গড়ে উঠেছে এস.পি.হান্স নামের একটি কসমেটিক ও বায়োটেকনোলজি কোম্পানি। যার নাম শুনলেই বিশ্ব জুড়ে হাই-ফ্যাশন আর স্কিনকেয়ারের ভ্রান্ত ছবি চোখে ভাসে।
শহরের চূড়ায় ঝুঁকে থাকা গির্জার চূড়াও যেন ঈশ্বরকেও অনুনয় জানায়,এ শহরের পাপ যেন মাফ না হয়।এ শহর শিশুদের বাঁচার অধিকার দেয় না।কেননা তারা উৎপাদিত হয়—গবেষণার জন্য, পরীক্ষার জন্য, প্রসাধনীর জন্য।
একসময় যেখানে যু’দ্ধবিধ্বস্ত মানুষের চিকিৎসা হতো, আজ সেখানে চিকিৎসা হয় নিষ্ঠুরতার। সরকারি নথিতে এলাকাটি ডিকমিশনড। অথচ মাঝরাত পেরোলেই ঘুমন্ত শহরের নিচে সক্রিয় হয় নানান যন্ত্র। জ্বলে ওঠে নীল আলো,বায়োমেট্রিক স্ক্যানিংয়ের অদ্ভুত সব আওয়াজ। কেউ জানে না ঠিক কোথা থেকে শুরু হয় এই নরক সাম্রাজ্যের চক্র। আবার কোথায় গিয়ে শেষ হয় মানব মস্তিষ্ক থেকে নিষ্কাশিত ‘NeuraSerum’ নামের সেই রহস্যময় তরল। যা এখন ইউরোপের বিলিয়ন ডলারের বিউটি ইন্ডাস্ট্রির শ্রেষ্ঠতম গোপন উপাদান।
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে ঠিক ভোর ৪:২৭ এআকাশে উঠে আসে এক বিশেষ ম্যাট ব্ল্যাক কালারে হেলিকপ্টার। যা দূরের অন্ধকার আকাশে যেন ছায়া হয়ে মিশে গিয়েছে। আনায়ারা খুব বেশি একটা সময় নেয়নি। রাশিয়াতে ভোর হবার পূর্বেই তারা তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।যেহেতু রাশিয়ার চেয়ে সময়ের গতিতে জার্মানি পিছিয়ে তাই তারা পৌছাতে পৌছাতে এখানেও এখনো ভোর হয়ে ওঠেনি।
হেলিকপ্টারে পাইলট ব্যতীত আরো তিনজন ব্যক্তি প্রচন্ড সিরিয়াস ভঙ্গিতে বসে রয়েছে। কেনীথের ডান হাতে গাঁথা রয়েছে বিশেষ ধরনের একটি ইলেক্ট্রনিক ব্লে’ড। যা পেশির চাপে বেরিয়ে আসে শব্দহীনভাবে। আর কোমরের পিছনে রয়েছে এক বিশেষ ধরনের কম্প্রেসড সাইলেন্ট-গান।যার শব্দ না থাকলেও ব্যক্তির মৃ’ত্যু চিৎকার নিশ্চিত করে তোলার ক্ষমতা যথেষ্ট ।
অন্যদিকে আনায়া আর পাভেলও নিজেদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে তৈরি৷ বিশালাকার সিলিকন প্যাডে হ্যাকিংয়ের সফটওয়্যার নিয়ে, সকল সিকিউরিটি ট্র্যাকিং নিয়ে আগাম প্রস্তুতি চলছে তাদের।যেন সেখানে পৌঁছেই গোপনে ইউনিভার্সাল কোডগুলো সহজেই এক্সট্রাক্ট করতে পারে।
আনায়া যে একসাথে এতোকিছু প্ল্যান আর ব্যবস্তা করে রেখেছে তা কেনীথ বা পাভেল কেউই টের পায়নি।শেষ মূহুর্তে আনায়া যখন দুজনকে ডেকে তার পরিকল্পনা জানায় তখন দুজনেই খানিকটা বিস্মিত হয়। বিশেষ করে এস.পি.হান্স কোম্পানি সম্পর্কে আনায়ার পাওয়া বিস্তারিত তথ্য জানার পর।
ভোর হতে না হতেই নিজেদের প্রাইভেট হেলিকপ্টারে করে, রাতের গভীর অন্ধকারে পৌঁছায় তারা। শহরের আকাশ থেকে নিচে তাকালে বোঝাই যায়, এখানে কিছু একটা অস্বাভাবিক। খালি রাস্তা, অদ্ভুত সব ধূসর আলো, রাস্তায় থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে কেবল একটা একটা করে ঝুলে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরা। আর ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা মুখোশধারী সব নির্লিপ্ত মানুষজন।
লিকপ্টার নামে শহর থেকে কিছুটা দূরে, এক পরিত্যক্ত রেল টানেলের ধারে।যা এখন ল্যান্ডমাইন দিয়ে ঘেরা এবং সরকারি নথিতে নিষিদ্ধ অঞ্চল।চারপাশে জমে থাকা শৈত্য আর কুয়াশা যেন গিলে খাচ্ছে আবহকে।
তারা তিনজন নেমে পড়ে…কাঁধে কালো রাঙা ব্যাগ।তার ভেতরে মডিফায়েড ড্রোন, ইলেকট্রনিক হ্যাকিং ট্যাব সহ আইডেন্টিটি স্কিন-গ্লাভস। যা তাদের আঙুলের ছাপ বদলে দেওয়ার কাজে লাগবে।তাদের গন্তব্য—S.P. Hans-এর আন্ডারগ্রাউন্ড ল্যাব। যা একটি বায়োমেট্রিক-সিকিওর্ড ট্রান্সপোর্ট টানেল দিয়ে সংযুক্ত।
কেনীথ হালকা শীতল কণ্ঠে বলল,
“এটাই সেই রাস্তা। এখান দিয়ে ভ্যানগুলো আসে বাচ্চা আর রসদ আনতে। এবার না হয় আমরা ওদের রসদ হব।”
তারা তিনজন মাটির নিচের সিক্রেট গেট খুলে ঢুকে পড়ে। এসবের খোঁজ তাদের লোক লাগিয়ে পূর্বেই জেনে রেখেছে। সবাই এদিক ওদিক নজর ঘুরিয়ে দেখে। চারপাশে সাইলেন্ট অ্যালার্ম আর ইনফ্রারেড সেন্সর।
আনায়া তার ট্যাব খুলে এক মিনিটের জন্য সিস্টেম বা ইনফ্রারেড ভিশনকে জ্যাম করে ফেলে। এসব কাজ মোটামুটি আয়ত্ত করা হয়েছে তার। বাকিটা পাভেল সামলে নেয়, কারণ পাভেল আগে থেকেই এসবে এক্সপার্ট।
তারা খুবে বেশি একটা সময় নেয় না।এই সময়ের মাঝেই তারা দ্রুত নেমে পড়ল ভূগর্ভস্থ ঢালু করিডোরে।যা এক সময় ট্রেন যাতায়াতের পথ ছিল।এখন সেখানে গড়ানো হয়ে শি”শুদের মাংসপিণ্ড ফেলার আস্তানা হিসেবে। যেসব শিশু সময়ের অন্ধকারে, মায়ের স্নেহের আদলে না থেকে হারিয়ে গিয়েছিল, আজ তারাই হয়েছে উৎপাদন পণ্য।
এরপর সেই অন্ধকার পথ ধরে সামনে এগিয়ে যায় তারা। আলোর জন্য, হাতে থাকা সামান্য টর্চ লাইট ব্যতীত আর কিছুই নেই। আর খুব তাড়াতাড়িই তিনজনে নিঃশব্দে চলে যায় ল্যাব-সার্ভিস এলিভেটরের দিকে।
কিন্তু এস.পি.হান্সের এই শহরে অবস্থিত শাখাটি যেন এক অন্ধকার ন”রক। এখানে, নবজাতক শিশুদের নিয়ে দিনের পর দিন চলেছে ভ”য়ংকর সব গবেষণা।নতুন ওষুধ ও সৌন্দর্য পণ্য তৈরির নাম করতে, তাদের দেহকে পরিণত করা হয়েছে জৈবপ্রযুক্তির পুতুলে। চামড়া প্রতিস্থাপন, ত্বক সংরক্ষণ, চোখের কর্নিয়ায় রাসায়নিক পরীক্ষার পর চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়া, মস্তিষ্কে ইলেকট্রোড প্রবেশ করিয়ে মানসিক সাড়া বিশ্লেষণ, হাড় গলিয়ে তৈরি হওয়া স্নেহমিশ্রণ…এসব কিছুই হচ্ছে ল্যাবরেটরির নিচের গোপন ফ্লোরে। এর গন্ধ, শব্দ, কিংবা কর্কশ কান্না সাধারণ কারো কানে পৌঁছায় না। কারণ শহরের আশেপাশের আবাসিক ভবনগুলোতে বসবাস করে শুধুই নিঃশব্দতা।
আর আনায়ারা ভেতরে প্রবেশ করে স্পা’ই হিসেবে। সে নিজের ছদ্মপরিচয় ঠিক করে—একজন বায়োকেমিস্ট। যার কাজ হবে কোম্পানির নতুন প্রকল্পে কাজ করা। কেনীথ হয় লজিস্টিক হেড, যে কিনা আগের নিরাপত্তা ইনচার্জের জায়গায় এসেছে। আর পাভেল রয়ে গেল বাহিরে। তার কাজ দূর থেকে বাকিসব কন্ট্রোল করা।
আনায়ার প্রস্তুতি মূলত এখানে সবচেয়ে বেশি আর গোছানো ছিল। তারা মেইন স্পর্টে যাবার পূর্বেই নিজেদের জন্য গুছিয়ে আনা কাপড় আর প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো গুলো পড়ে নেয়। অতিরঞ্জিত কিছু নয়, যতটুকু ছদ্মবেশ ধারণের জন্য না হলেই নয়, ঠিক ততটুকুই। সাদা এপ্রন, চোখে গগলস্, মুখে মাস্ক… এছাড়া প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ভুয়া বায়োডাটা, জার্মান ভাষায় মডিফায়েড অ্যাকসেন্ট…, সব সাজিয়ে সোজা দুজন চলে যায় ভবনের ভেতরে। নিজেদের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করতে।
এছাড়া তাদের আইডেন্টিটি স্কিন গ্লাভসে ছিল দুই মৃ’ত টেকনিশিয়ানের আঙুলের ছাপ ও পেশি-তাপ।যার ফলে তাদের ভেতরে যেতে আর কোনো অসুবিধা রইল না।
তারা দুজন শুরুতে পৌঁছায় লিফট শ্যাফটের সামনে। যা উপরে ওঠে না, বরং নিচে নামবে। প্রতিটি লেভেলে আলাদা প্রহরা, আলাদা সাউন্ড-সেন্সর। লেভেল ৩, “Project RED.FIRE”—শিশু ক্লোনদের নিউরাল রেজিস্ট্রি-তে রাগের জিন কৃত্রিমভাবে সক্রিয় করা হয়। লেভেল ৫-এ ‘ইমোশন কাট সেল’,যেখানে শিশুর মুখে বিশেষ ন্যানো-সা’র্জারি করে ইমোশন গ্ল্যান্ড বাদ দেওয়া হয়। লেভেল ৯-এ হলো ‘স্কিন ফ্লেইম ট্রায়াল’, যেখানে একটা শিশুকে পঁচিশ রকম কেমিক্যাল দিয়ে বানান পরীক্ষা করা হয়। আর লেভেল ১৪ হলো চূড়ান্ত— আর্কাইভ ও লাইভ ট্রায়াল সেন্টার।
যেখানে সফল ও ব্যর্থ ক্লোনদের পরিণতি দেওয়া হয়। যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে মৃ”ত্যু। নয়তো জ্যান্ত কিংবা মৃত ক্লোন কাঁচের কন্টেইনারে সংরক্ষণ করা হয় মিউজিয়ামে মতো। এভাবে সবমিলিয়ে প্রতিটা সেক্টরে নানান কার্যক্রম হয়ে থাকে। সেই সাথে এটাও বোঝা যায় যে এস.পি.হান্স কোম্পানি শুধু কসমেটিক আর মেডিসিন এর উপরই কাজ করে না বরং এরা বাচ্চাদের উপর বিভিন্ন ধরনের এক্সপেরিমেন্টও চালিয়ে থাকে…বিশ্ববিখ্যাত সকল বি”কৃত মস্তিষ্কের সাইন্টিস্টদের দিয়ে।
কেনীথ আনায়া ভিতরে ঢুকতেই, তাদের চোখ আটকে যায় কাঁচের ল্যাবে। একটি নবজাতক শিশু, চোখ দুটি ফাঁকা, মুখ হাঁ করে তাকিয়ে আছে। মুখে সিরাম লাগানো হয়েছে। আর তার স্নায়ু ধীরেধীরে বেরিয়ে আসছে গলার কাছ থেকে। আশেপাশে সাদা অ্যাপ্রনে থাকা গবেষকেরা হাসছে, কেউ কেউ চিপস খাচ্ছে। অন্যদিকে একটা বাচ্চাকে রাখা হয়েছে টেবিলের মাঝ বরাবর। বাচ্চার দেহের মাঝে অদ্ভুত সব ইলেকট্রোড লাগিয়ে কয়েকজন সাদা এপ্রন পড়া সাইন্টিস্ট একসাথে গোল হয়ে, কিসব যেন খাতায় নোট করে ব্যস্ত।
এসব দেখে আনায়ার হুঁশ উড়ে গেল। কাঁপা গলায় ফিসফিস করে বলে উঠল,
” এগুলো মানুষ না, জা”নো’য়ার!”
এস.পি.হান্স ভবনের ভিতরটা আধুনিক অথচ শীতল। খুব বেশি আলো নেই। যা আছে তা নীলাভ—যেন সব কিছুতেই এক রোবোটিক শ্বাস-প্রশ্বাস। দেওয়ালজুড়ে ভার্চুয়াল স্ক্রিন। সিলিং থেকে ঝুলে থাকা অটোমেটিক ড্রোন-গার্ড, মেঝের নিচে ইনফ্রারেড সেন্সর। আর প্রবেশদ্বারে ফিঙ্গারপ্রিন্টের সঙ্গে আইরিস স্ক্যানার। যাতে চোখের রেটিনার জটিল নকশা মিলে না গেলেই লেজার লাইটের দরূন নিমিষেই দেহ ছারখার হয়ে যাবে।
আর ল্যাবের ভেতরের মানুষগুলো যেন মানুষ নয়।সবই যেন একেকটা অমা”নুষ। পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত শিশুদের থেকে আহরিত কোষ দিয়ে তৈরি হয়েছে বায়ো-স্লেভ। যারা চুপচাপ ল্যাবে কাজ করে যাচ্ছে। যাদের মুখে নেই কোনো অভিব্যক্তি, চোখে নেই কোনো সত্তা। এরাই স্যাম্পল আনে, ট্রে নেয়, পরিষ্কার করে। আবার কাজ শেষে সরিয়ে নেয় ডাস্টবিনে পড়ে থাকা আধ-মৃ’ত শিশুদের দেহ।
কেনীথ যে ঘরে প্রবেশ করে, সেটি ‘সেক্টর বি-9’। এখানেই রাখা হয় শিশুদের। হিমঘরের মতো এক এলাকা। যেখানে শিশুদের রাখা হয় কাচের কনটেইনারে। কিছু ঘুমন্ত, কিছু কাঁদছে, কিছু আবার একদম নিঃপ্রাণ। প্রতিটি শিশুর গলায় সেন্সর লাগানো। হৃদস্পন্দনের ওঠানামা বিশ্লেষণ হচ্ছে কম্পিউটারের মনিটরে।
আরেকটি কক্ষ—”নিউরোসার্জিকাল টেস্ট সেক্টর”। এখানে শিশুদের মাথায় বসানো হয় অত্যাধুনিক নিউরো-ম্যাপিং হেলমেট কিংবা প্যাড। যার মাধ্যমে তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে এই কোম্পানির গবেষকরা। পরবর্তীতে তৈরি করে এমন কসমেটিক দ্রব্য, যা মস্তিষ্কে আরাম বা নেশা সৃষ্টি করে। অথচ পণ্যের বিজ্ঞাপন কিংবা ডেসক্রিপশনে বলা হয়—“দিস প্রোডাক্ট ফিলস্ লাইক লাভ”। সবকিছুই যেন সুস্থ মস্তিষ্কেদের তৈরি অমানবিক সকল কার্যক্রম।
আনায়া আর কেনীথ এসব দেখে রীতিমতো স্তব্ধ। কেনীথের এসব সেক্টর নিয়ে তেমন একটা ধারনা নেই। তবে কাজের সূত্রে সে জানত যে, পৃথিবীতে এমন এমন কিছু জায়গা রয়েছে, যেখানে এই ধরনের কাজক্রম গুলো হয়েই থাকে। তাই তার কাছে বিষয়টা একদম নতুন কিংবা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আনায়া যেন এসব কোনোমতে মানতেই পারছে না। চোখের সামনে এইসব কিছু তার অবিশ্বাস্য ঠেকছে। কিভাবে পারে মানুষ এসব করতে? তাও কিনা সদ্য পৃথিবীতে আসা নবজাতকদের সাথে। ওরা তো পৃথিবীতে সৌন্দর্য বোঝার পূর্বেই জেনে গেল, এই পৃথিবী শুধু পিশাচদের।এখানে ভালোদের বেঁচে থাকা, আর ম’রে যাওয়া দুটোই সমান। আর সবচেয়ে কষ্টের বিষয়, এতোবড় জ”ঘন্য পাপের অন্যতম ভাগীদার তার নিজেরই বোন।
গা ছমছমে পরিবেশে দুজনে দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজেদের কাজে লেগে পড়ে। আনায়া ও কেনীথ ধীরে ধীরে সবকিছুর ফাইল করে পাভেলের কাছে পাঠাতে থাকে। তারা ছবি তোলে, রেকর্ড করে, তবে সবকিছুই হয় গোপনে এবং অত্যধিক কৌশল, সাবধানতার মাঝে। কারণ একবার ধরা পড়লে সোজা “ইনভিজিবল সেক্টর” এ ফেঁসে যাবে। যেখানে প্রবেশের পরে কেউ ফিরে আসে না। কেউ জানে না ভেতরে কি হয়। শুধু একটা কালো কাচের দেয়াল আছে।যেটার পেছন থেকে মাঝে মাঝে কেবল কিছু শব্দ আসে। কান্না, আর ধাতব চাবু’কের ন্যায় কিছু একটার স্ল্যাশিং সাউন্ড।
তারা দুজন ঠিক করে, রাতে ভেতরে ঢুকবে ডেটা সার্ভার রুমে। ওখানে রয়েছে এস.পি.হান্সের সব প্রজেক্টের তথ্য।কোথা থেকে বাচ্চা আনা হয়, কে কয়টা ম”রে, কোন প্রোডাক্টে কোন কোষ ব্যবহার হয়…সব!
কিন্তু কেনীথ সব তথ্য নিয়ে জানায় যে, সেখানে প্রবেশ করতে হলে লাগবে বায়োমেট্রিক অ্যাকসেস। যা আছে কোম্পানির “প্রিন্সিপাল সায়েন্টিস্ট” ফ্রাঙ্ক ডেলারোর কাছে। আনায়া আর কেনীথ বহু খুঁজতে খুঁজতে তার সন্ধান পায়। তবে সরাসরি তাকে নয় বরং তার চেম্বার খুজে পায়৷ যেখানে স্পষ্ট করে তার নাম লেখা রয়েছে। আনায়া এক মূহুর্তও দেরি না করে তার ভেতরে পৌঁছে যায়। কেনীথ তখন অন্যকাজে ব্যস্ত।
আনায়া জায়গাটার ভেতরে প্রবেশ করে দেখে, এটা যেন সবচেয়ে ভয়া”নক এক জায়গা। হিসেব ছাড়া শিশু বাচ্চাদের কাঁচের কন্টেইনারে কেমিক্যালের মাঝে ডুবানো রয়েছে। এসব দেখে আনায়া সম্পূর্ণ বাকরুদ্ধ। না চাইতেও বারবার শ্বাস আঁটকে আসছে। গ্লাসের ডেস্কের উপর শিশু বাচ্চা ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ না”ড়ীভুঁড়ি… কিসব দেখে সম্পূর্ণ গা গুলিয়ে আসছে।
আনায়া এসব রেখে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে। বেশি সময় নেই হাতে, সে দ্রুত আশপাশে খুঁজে অ্যাক্সেস পাসওয়ার্ড খুঁজতে লাগে। কিন্তু তেমন কিছু না পেলেও একটা ছোট কফির মগ পায়৷ আর হঠাৎ কি যেন ভেবে আনায়া সেটা নিজের সাথে নিয়ে নেয়। সাবধানে নেয় যেন তাতে লেগে থাকা ফিঙ্গার প্রিন্ট নষ্ট না হয়। এবং সেই সাথে ডেস্কের কাঁচের দেওয়ার কিছু ফাইলের পাশে ফটোডিটেক্টর চিপ লাগিয়ে দিয়ে যায়।
এবং সেখান থেকে সরে আসতেই তার নজর পড়ে ফ্রাঙ্ক ড্রেলারের দিকে। যদিও আনায়া তাকে কখনো দেখেনি তবে এপ্রনের গায়ে লাগানো সোনালী নেইম-প্লেট দেখে সে তাকে ঠিকই চিনে নেয়।
আধপাকা চুল, বিদেশি মুখ, বৃদ্ধ বয়সী এক লোক। হাঁটাচলাও খানিকটা কুঁজো হয়ে করে। তবে আনায়ার নজর সে এখন যাচ্ছেটা কোথায়! কেন জানিনা তাকে আনায়ার খানিকটা সন্দেহ হয়। বিশেষ কোনো কারণ নেই তবে আনায়া তার পিছু নেয়। কিন্তু এরইমাঝে বিপত্তি ঘটে যখন অন্যএক মধ্য বয়স্ক সাইন্টিস্ট যখন, তাকে পাশ থেকে ডাক দেয়।
—“ড.লুনা… ”
আনায়া পাশে ফিরে তাকিয়ে দেখে লোকটি তার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রয়েছে। যা দেখলাত্রই আনায়ার হার্টবিট আকস্মিক থেমে যায়। তার মনে হয়, এই না জানি ধরা পড়ে গিয়েছি। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে শক্ত করতেই বুঝল এখনো তেমন কিছু হয়নি। এই লোকটা অদ্ভুত। শুধু ইনি হয় বরং আশেপাশের সব সাইন্টিস-ই এমন। কেমন যেন অসুস্থ মস্তিষ্কের মনে হয়। কেউ কারোর কাজে ব্যা’ঘাত দিচ্ছে না। নিজেদের মতো কাজ করছে,কখনো কখনো চিপস কফি খাচ্ছে, মজা করছে। যেন এটাই তাদের স্বাভাবিক দুনিয়া।
আনায়া লোকটির কথায় শুনে খানিকটা ঢোক গিলে বলল,”ইয়েস…”
লোকটি আনায়ার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকার পর চোখ জোড়া ছোট ছোট করে। নিজের মুখটা খানিক আনায়ার দিকে বাড়িয়ে নেয়। ওর এপ্রনের নেইম-প্লেটের দিকে তাকিয়ে দেখার পর শান্ত স্বরে বলে,
“ডু বিস্ট দখ ফ্রি-দা লো-রে-লাই।” (তুমি তো ফ্রিদা লোরেলাই)
আনায়া জার্মান ভাষা মোটামুটি ভালোই জানে। লোকটার অবাক অভিব্যক্তিতে আনায়াও জার্মান একসেন্টে স্বাভাবিক ভাবে বলতে লাগল,
ইয়া, ইখ বিন বিয়োকেমিকারিন ফ্রি-দা লো-রে-লাই… ব্রাউখেন জি এপ্স, ডক্টর?”
(জ্বী, আমি বায়োকেমিস্ট ফ্রি-দা লো-রে-লাই।… আপনার কি কিছু প্রয়োজন, ডক্টর?)
—“নাইন, ইখ ব্রাউখে নিখ্টস। ইখ জুখে ডক্টর লুনা।”
(নাহ, আমার কিছু প্রয়োজন নেই। আমি ড.লুনাকে খুঁজছি।)
—“ওহ… ডান, ডক্টর, দার্ফ ইখ ইয়েট্স্ গেন?”
“ওহ… তবে, ডক্টর, আমি কি এখন যেতে পারি?)
—“ইয়া গে!… আল্জো, ম্যুশটেস্ট ডু কাফে?ইখ কান জেয়ার গুটেন কাফে মাখেন।”
(হ্যাঁ,যাও!…আচ্ছা,তুমি কফি খাবে? আমি অনেক ভালো কফি বানাতে পারি।”
লোকটির কথায় আনায়া খানিক বেশম খেল। তবুও কোনোমতে বলে উঠল,
“ডাঙ্কে, আবার হয়্টে নিখ্ট। ফিলাইখ্ট আইন আন্ডারমাল।”
(ধন্যবাদ, কিন্তু আজ না। হয়তো অন্য কোনোদিন।)
আনায়া এই বলেই সেখান থেকে কোনোমতে কেটে পড়ল। সাথে প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বিড়বিড় করে আওতায়,
“সব পাগল ছাগলই আমার কপালে জোটে। কত শখ,আমাকে কফি খাওয়াবে!…কেমিক্যালে চুবিয়ে যে মে’রে ফেলবে না, তার গ্যা”রান্টি কি!”
আনায়ার পাশাপাশি, ওদিকে সেই লোকটিও খানিকটা মুচকি হাসতে হাসতে হেলে-দুলে নিজের কাজে উদ্দেশ্য চলে যায়।
এদিকে আনায়া আবারও ফ্রাঙ্ক ডেলারকে খুঁজতে শুরু করে। সেই সাথে একটু আগে দেখা হওয়া লোকটিকও গা”লাগালি করে।সে বেটা তার কাজে বাঁধা না হলে এতোক্ষণে তার সব কাজ হয়ে যেত।
আনায়া খুঁজতে খুঁজতে দেখে ফ্রাঙ্ক একটা সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। আনায়াও কৌশলে তার পেছন পেছন যেতে লাগল।কিন্তু এরই মাঝে সে আবার আরেকজন সাইন্টিস্টের সাথে কথা বলতে শুরু করে। আনায়া খেয়াল করে দেখে হাতে সময় কম, অথচ এদের কথাও শেষ হচ্ছে না।
আনায়া তাদের আশেপাশেই কাজের বাহানায় দাঁড়িয়ে থাকে। মোটামুটি তাদের কাজ নিয়ে কথা বলছিল বিধায় আনায়ার আর সেসব তেমন প্রয়োজনীয় মনে হলো না। সে অপেক্ষা করছে কখন ফ্রাঙ্ক সেই সরু রাস্তার দিকে এগোবে। কিন্তু আনায়া এরই মাঝে খেয়াল করে, জায়গাটাতে এমনি এমনি যাওয়ার উপায় নেই। নিশ্চিত এর ভেতর প্রবেশ করতেও কোনো অ্যাকসেস পাস ইউজ করতে হবে। পুরো জায়গাটাই তো ইলেকট্রনিক ম্যাটে”রিয়ালস্ এ সাজানো।
আনায়া ভাবছে এই মূহুর্তে তার কি করা উচিত। ঠিক সেই মূহুর্তে তার কানে থাকা ইয়ারবাডে কেনীথের ফিসফিসিয়ে বলা কথার আওয়াজ শুনতে পায়।
—“যেখানেই দাঁড়িয়ে আছিস, ওখান থেকে ফিরে আয়। ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করিস না। চারপাশের লেজার সিস্টেম এক্টিভ রয়েছে। সিকিউরিটি পাস ব্যতীত ভেতরে প্রবেশ করা, সম্ভব না।”
আনায়া কেনীথের কথা শোনা মাত্রই আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেনীথ দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।তার নজর আনায়ার দিকেই। আনায়া কেনীথকে দেখামাত্রই খানিকটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সেখান থেকে চলে আসতে নেয়। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ে তার তো সার্ভার রুমের অ্যাকসেস
অথেনটিশন লাগবে। সেটা ব্যাতীত সে ভেতরে কিভাবে প্রবেশ করবে?
হুট করেই তার মাথায় এলো তার কাছে ন্যানো মাইক্রোফোন রয়েছে। যেটা নিত্যন্তই ছোট হলেও,ভয়েস রেকর্ডের জন্য একদম পারফেক্ট।
আনায়া খেয়াল করে দেখল দু’জনের কথা প্রায় শেষের দিকে। এরই মাঝে আনায়া আর একমুহূর্তও দেরি না করে,ফ্রাঙ্কোর পাশ কেটে চলে আসার ভান করে। সেই সাথে কৌশলে ন্যানোমাইকটা ফ্রাঙ্কোর এপ্রনের সাথে ঘাড়ের কাছে লাগিয়ে দেয়। জিনিসটা ক্লিপের মতো হওয়ায় তার বেশি একটা অসুবিধা হয়না,তা লাগাতে। সেই সাথে ফ্রাঙ্কোও কিছু টের না পাওয়ায়, আনায়া খানিকটা মুচকি হেসে মনে মনে আওরায়,
“আধ পাগল হয়ে, কাজই হয়েছে তবে।”
এরপর সেখান থেকে চলে আসতে আসতে একবার পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে ফ্রাঙ্কো নিজের ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট আর আইরিশ পাস দিয়ে ভেতরের দিকে ঢুকে যাচ্ছে। এদিকে আনায়াও খানিকটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল এই ভেবে যে কাল আবারও আসতে হবে। আজকে কাজের কাজ সেভাবে কিছুই হলো না।
।
রাত আড়াইটা। বাহিরের শীতল বাতাসে যেন সমস্ত চহর জমে আছে। এক অদ্ভুত নীরবতা ব্র্যান্ডেনবুর্গে শহরটাকে আঁকড়ে ধরেছে। শহরের আলোও আজ ঝিমিয়ে পড়েছে। চারপাশে কুয়াশা, আর সেই কুয়াশার ভেতর দিয়ে এস.পি.হান্স ভবনটা দাঁড়িয়ে আছে এক দানবের মতো। নিঃশব্দ, অথচ ভূগর্ভের নিন্ম স্তরের প্রতিটা দেয়ালের ভেতর পৈশাচিক কোলাহল।
কেনীথ আর আনায়া, নিজেদের প্ল্যান খানিকটা পরিবর্তন করেছে। গতরাতে তারা কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনি। তাই আজ আবারও এখানে আসতে হয়েছে। তাদের টার্গেট আজ “ডেটা সার্ভার রুম”—যেখানে লুকিয়ে আছে শিশু নি”র্যাতন, জৈব অস্ত্রের গবেষণা, অ”বৈধ বায়োপ্রোডাক্ট, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের লিস্ট, এমনকি মানব পাচারকারীদের যোগাযোগ নম্বরসহ সম্পূর্ণ তথ্যভাণ্ডার।
সেই সাথে তারা আরো একটা তথ্য পেয়েছে, তা হলো সার্ভার রুমে প্রবেশ করার দুটো পথ রয়েছে। একটা হলো গতকাল ফ্রাঙ্কো যে পথে প্রবেশ করেছিল…আর দ্বিতীয়টি হলো ভবনের একদম আন্ডারগ্রাউন্ড সেক্টর। যেখানে প্রবেশ করতে হলে আগে পৌঁছাতে হবে ইনফ্রারেড করিডোর পেরিয়ে। এটা এমন এক পথ। যেখানে মানুষের দেহের উষ্ণতা বা চলাচলের শব্দে রুম লক হয়ে যায়। এবং ছয় মিনিটের মধ্যে পালানো না গেলে,পুরো চেম্বার ভরে ওঠে নিউরোটক্সিন গ্যাসে। এই পথ শুধু কয়েকজন হাই প্রোফাইল সায়েন্টিস্টই পেরোতে পারে।এর মাঝে ফ্রাঙ্কো অন্যতম। যাদের কার্ডে একসাথে এনক্রিপটেড আইডি, রেটিনা স্ক্যান ও শব্দ সিগন্যাল থাকে।
আনায়া অবশ্য এই কাজগুলো আগেই করে ফেলেছে। তা হলো ফ্রাঙ্ক ডেলার–এর কাছ থেকে ভয়েস স্যাম্পল রেকর্ড করে নেওয়া। গতকাল তার লুকিয়ে ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন সেট করাটা মূলত এই কাজেই লেগেছে। পাভেল কেনীথ যখন ভাবতে ব্যস্ত পরবর্তী কার্যক্রম কি হবে। তখন আনায়া সেসব থেকে রেকর্ড হওয়া ভিডিও ফুটেজ আর ভয়েস রেকর্ড থেকে সে সমাধানও বের করে নেয়। ভয়েস রেকর্ড থেকে পায় সেই অ্যাকসেস পাস।
এবং তারা নিজেদের পরবর্তী মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু জোগাড় করে ফেলে। সার্ভার রুমের অ্যাকসেস পাস হলো ‘হ্যালো অ্যাক্সেস রিকুয়েস্ট’। যা ফ্রাঙ্কো ব্যতীত অন্যকারো কন্ঠস্বরের জন্য প্রযোজ্য নয়৷ তাই রেকর্ড হওয়া এই কথাটি তারা ধারণ করে রাখে একটি বিশেষ ফোল্ডেবল ভয়েস মিনিক ডিভাইসে। এটা এমন একটি যন্ত্র, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কারও কণ্ঠ অনুকরণ করে নির্দিষ্ট কমান্ডে ব্যবহার করা যায়। আর আইরিশ স্ক্যান এর জন্য… বিশেষ রেটিনা স্ক্যান সিমুলেশন ডিভাইস।যা তারা আজ তাদের বিশেষ চশমার সাথে সেট করে নিয়ে এসেছে।এবং এটি আইরিশ স্ক্যানের সামনে নিলে ইনফ্রারেড প্যার্টান প্রজেক্ট হয়ে লক খুলে যায়।আর সেই কফির কাপের গ্লাসে লেগে থাকা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে তারা বিশেষ ভাবে গ্লাভস বানায়।
এক রাত-দিনের মাঝে এতোসব কাজ করা যদিও সহজ ছিল না, তবে এটা তাদের সম্ভব করতেই হতো। মোটামুটি তিনজনে যার যার মতো প্রস্তুতি নিয়ে কাজে লেগে পড়ে।
কেনীথ নিজের জ্যাকেটের ভেতর থেকে বের করে EMF সেন্সর ব্ল্যাঙ্কার। এটা দিয়ে সে ভবনের নিচতলার ইলেকট্রিক ম্যাগনেটিক সেন্সরগুলোর উপর সাময়িক হস্তক্ষেপ করা যাবে। তবে মাত্র ৪ মিনিট সময় পাওয়া যাবে।
রাত ৩:১০। ভবনের পূর্ব পাশের লিফট দিয়ে তারা নামে আন্ডারগ্রাউন্ড করিডোরে। আশপাশে কেবল লাল আলো, হালকা বাজের মতো শব্দ।যা আসছে ভবনের বিদ্যুৎচালিত জেনারেটর থেকে। কার্নিশে ছোট ছোট ড্রোন ইউনিট বসানো, যেগুলোর ক্যামেরা মুভমেন্ট ডিটেক্ট করে।
কেনীথ ড্রোনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে ঠিক সময়ে। আর আনায়া পিছন থেকে মাইক্রো EMP ডিভাইস দিয়ে একেকটা ড্রোনের ইলেকট্রিক সার্কিট ব্লাস্ট করে দেয়। যেন তার সার্কিট নিষ্ক্রিয় হয় কিছু মুহূর্তের জন্য।
আর এতো কিছুর পর, অবশেষে তারা পৌঁছায় সার্ভার রুমের মূল দরজায়।দরজাটি ধাতব নয় বরং একধরনের স্মার্ট ম্যাটারিয়াল দিয়ে তৈরি। যা ন্যানোশিটে আবৃত। এটা টেম্পারেচার, সাউন্ড, প্রেসার, সব চিহ্নিত করে। একটু ভুল করলেই দরজা নিজেই “ডিফেন্স মুড” অন করে দেয়।এবং সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষকে এক প্রকার লেজার স্ন্যাপ দিয়ে টুকরো করে ফেলে।
আনায়া আর দেরি করে না। ভয়েস মিনিক অন করে লুকাসের কণ্ঠে বলে, “Hello, access request.”
দরজা হালকা কম্পন দিয়ে সরে যায়। তারা ভেতরে প্রবেশ করে। সার্ভার রুমের ভিতরটি পুরো অন্ধকারের মাঝে কিছু লাল আলোয় মিশে রয়েছে ।তবে হঠাৎ হঠাৎ একেকটা স্ক্রিন জ্বলে উঠছে। সবগুলোতে বাচ্চাদের ছবি, নাম, বয়স, কী ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে, কাদের কাছে পাঠানো হবে, প্রোডাক্ট নম্বর, ও এমনকি ‘REJECTED’ লেখা লাল মার্কিং। মানে যে শিশু পরীক্ষায় টিকতে পারেনি, তার তথ্য—মৃত।
তাদের সামনে বিশাল এক স্ক্রিনে তখন দেখা যায়—“Project SoulSkin: Phase 03”। এখানে দেখা যাচ্ছে কিছু শিশুর চোখ খুলে দেওয়া হয়েছে। তাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে ন্যানোইলেকট্রোড ঢুকিয়ে এমন প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছে।যা তাদের অনুভূতি চুরি করে বড়দের জন্য আরামদায়ক অনুভব তৈরি করছে। ঠিক যেন মানব ফার্ম।
তারা দ্রুত পেনড্রাইভ দিয়ে তথ্য ডাউনলোড করতে থাকে। এর মাঝেই আবার পাভেল বাইরে থেকে রিমোট সিস্টেমে ঢুকে পড়েছে। তাকে অস্থির হতে দেখে কেনীথ কপাল কুঁচকে বলে,
“কি হয়েছে? এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেনো?”
— “ব্রো! তোমরা দুই মিনিটের মধ্যে বের হও। গার্ডরা কিছু বুঝে গিয়েছে।”
কেনীথ আর আনায়া খুব বেশি একটা সময় নষ্ট করল না।তবে সব ফাইল ডাউনলোড হতে আরো কিছুটা সময় লাগবে। পাভেল কিংবা কেনীথের কোনো তাড়াহুড়োতেই সে উত্তেজিত নয়। বরং মাথায় যেন জেদ চেপে ধরেছে, যেভাবেই হোক সব কিছু নিয়েই সে এখান থেকে বের হবে। কিন্তু কেনীথ তো আর তার কাজে সায় দেবেনা। সে কোনোমতে নিজেদের প্রয়োজনীয় ডিভাইস গুলো দ্রুত গুছিয়ে নেয়। যতটুকু ডাউনলোড হয়েছে তা নিয়েই পেন ড্রাইভটা খুলে নেয়।এবং আনায়ার হাত শক্ত করে ধরে বের হয়ে আসতে নিলে, আচমকা আনায়ার নজর থমকে যায় হঠাৎ স্ক্রিনের একপাশের কোণায়। যেখানে জ্বলজ্বল করে তার নামের মতো কিছু ভেসে উঠেছে।
“Anaya No. A3-094 | Source: Bangladesh (Hospital Collection) | Genetic Type: High Empathy Receptor | Fetal Status: 12 Weeks Post-Conception.
আনায়া থমকে দাঁড়ায়। তার চোখে খানিকটা স্তব্ধতা। ও বুঝতে পারছে না ওখানে ওসব কি লেখা।আর এসবের মানেই বা কি!
আনায়াকে থমকে দাঁড়াতে দেখে,কেনীথ ওকে টেনে ধরে বের হতে হতে বলল “এখন নয়,আজ বাঁচলে কাল আবারও আসা যাবে।”
তারা তিনজন দৌড়ে পালায়। আর পেছন হতে শোনা যায় রেড অ্যালার্মের কঢ়া আওয়াজ। ইনফ্রারেড করিডোর ইতোমধ্যে গ্যাসে ভরে যাচ্ছে। কিন্তু কেনীথ সঙ্গে আনা আক্সিজেন ক্যাপসুল গ্লাভস ব্যবহার করে ৬০ সেকেন্ডের জন্য বাতাস চুষে নেয় গলার কাছে, এবং তিনজনে ছুটে সেখান থেকে বেড়িয়ে পড়ে।
🔺[পরবর্তীতে আরো অনেক কিছু সংযোজন বিযোজন করা হবে ]
ভোর প্রায় হতে চললো। জার্মানির লিচটেনবার্গ শহর এখনো ঘুমিয়ে। কিন্তু বাতাসে যেন কোনো অদৃশ্য শীতল চাপ অনুভব হচ্ছে। পিচঢালা রাস্তায় কিছুক্ষণ পর পর বিভিন্ন গাড়ির চলাচল।পুরোনো রেলস্টেশনের পাশের এক টেলিগ্রাফ ভবন।যা এখন ব্যবহার হয় না। তার নিচেই, অন্ধকার গর্তের মতো গোপন চেম্বারে বসে রয়েছে তিনজন মানুষ। তাদের চোখে ঘুম নেই, শরীরে ভয় নেই। একেকজন যেন চলমান আগুন।
কেনীথ মনিটরের সামনে দাঁড়িয়ে পেছনে তাকাল। পাভেল তখনো রক্তমাখা বাঁ কাঁধ চেপে ধরে আছে, যেখানে রাতের ঘটনায় তাদের পালিয়ে বাঁচাটা খুব একটা সহজ ছিলোনা ।তারা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যেতে নিলে, সেখানে অনবরত গার্ডরা গুলি ছোড়ে। আর একটা গুলি লেগে যায় পাভেলের পেছন কাঁধে। আর আনায়ার ক্ষেত্রে একটা গুলি তার পায়ের সাথে ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।যার ফলে র’ক্ত ঝড়লেও ব্যাথা তেমন অনুভূত হচ্ছে না।অবশ্য সেসব হওয়ার আপাতত সুযোগ নেই। কাজের চাপে আনায়া যেন তা ভুলতেই বসেছে।
এসব থেকে অবশ্য কেনীথ বেঁচে গিয়েছে। কারণ সে ছিল সামনে আর আনায়ারা পেছনে। যদিও আনায়ার হাত পুরোটা সময় কেনীথই ধরে রেখেছিল। আর শেষমেশ আনায়ার গুলি লাগার পর কেনীথ আনায়াকে পাজকোলে তুলে নিতে চাইলে আনায়া বাঁধা দেয়। কিন্তু কেনীথ তা সে বাঁধাকে বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়েই আনায়াকে একপ্রকার কাঁধে তুলে নিয়েই ছুটতে থাকে।আর সবশেষে বিপত্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তারা আশ্রয় নেয় এই জায়গায়।
পাভেলের গায়ে লাগা গুলি সে নিজে এবং কেনীথ আনায়ার সাহায্যে টেনে বের করেছে।এরপর প্রয়োজনীয় মেডিসিন লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। পাভেল খানিকটা ব্যথাতুর চেহেরায় দাঁড়িয়ে।আর আনায়া নিঃশব্দে তার পাশে দাঁড়িয়ে। স্ক্রিনে ভেসে ওঠা অক্ষরগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখে নিচ্ছে। বরফের মতো শীতল মুখ, কিন্তু চোখ জ্বলছে দগদগে আগুনে শিখার ন্যায়।
আজ এই ভোর রাতটা খানিক ভিন্ন। এখন তাদের অভিযানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আজ ট্রান্সমিশনের দিন। তারা যা সংগ্রহ করেছে, সেই ভয়ংকর তথ্যগুলো একসাথে ছড়িয়ে দেবে পৃথিবীর সব ডা”র্কনেট ফোরাম, ওপেন সোর্স সার্ভার, স্যাটেলাইট ব্রডকাস্টে। যাতে এক মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে SP Hans-এর বহু”রাষ্ট্রীয় মুখোশ।
এবার মনিটরের সামনে থেকে কেনীথ উঠে পড়ে। আর পাভেল গিয়ে বাকি কাজ সামলাতে লাগে। যেহেতু এসব কাজে সবচেয়ে বেশি এক্সপার্ট সে, তাই এবার দায়িত্বটা পাভেলের।
কেনীথ গিয়ে আনায়ার পাশে দাঁড়ায়। তাকিয়ে দেখে আনায়া মনিটরের স্ক্রিনে অত্যন্ত মনোযোগের সাথে তাকিয়ে। কেনীথ আনায়ার খানিকটা কাছে ঘেঁষে ওর দিকে মাথা এগিয়ে নেয়, তবে আনায়ার মতো তার নজরও মনিটরের স্ক্রিনে।
—-“ঐ বুড়ো তোকে কি বলছিল?”
কেনীথের ফিসফিস আওড়ানো সিরিয়াস কথার দরূন আনায়ার মনোযোগ সরে যায়। সে পাশে মুখ ফেরাতেই দেখে কেনীথ একদম তার পাশে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। চোখেমুখে সিরিয়াস আবহের ছাপ। আনায়া খানিকটা কপাল কুঁচকে বলে উঠল,
“কোন বুড়ো?”
কেনীথ আনায়ার দিকে মুখ ফিরিয়ে কিঞ্চিৎ ঢোক গিয়ে বলে,
“ঐ যে, লিলিপুটের মতো দেখতে…”
আনায়া কেনীথের হাভভাব আর অভিব্যক্তিতে কপালটা আরো খানিক কুঁচকে ফেলতেই হঠাৎ তার সেই সাইনটিস্টের কথা মনে পড়ল। যেটাও কিনা প্রথম দিনের ঘটনা। আর সে প্রায় ভুলেও গিয়েছিল।
—“হঠাৎ এ কথা?”
—“মনে ছিল না, এখন মনে পড়েছে…যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দে!”
আনায়া কেনীথের দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নির্বিকারে স্ক্রিনের দিকে তাকায়। এবং নির্লিপ্ত স্বরে বলে,
“আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই আমি। আর এমনিতেও এটা তেমন প্রয়োজনীয় নয় যে, আপনাকে বলতে হবে।”
—“উত্তর না৷ দিলে… খারাপ হবে কিন্তুু!”
—“কি খা’রাপ হবে তা আমিও দেখতে চাই।”
কেনীথ আনায়ার নির্লিপ্ত কথায় চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সেও নির্লিপ্ত স্বরে বলে উঠল,
—“ঠিক আছে!তবে তোর এতোসব পরিশ্রম, কষ্ট ভেস্তে দেই…কি বলিস?”
—“মানে?”
—“এই যে এতসব প্ল্যান বানিয়ে হান্সের ডকুমেন্টস গুলো হাতিয়ে নিয়ে এলি।…পাভেলকে বললে, ওর বেশি সময় লাগবে না এইসবকিছু নষ্ট করে দিতে।”
কেনীথ এহেন কথায় আনায়া বিস্ময় আর রক্তিম চাহনিতে তাকায়। খানিকটা হিসহিসিয়ে কেনীথের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
“আপনি কি মানুষ?”
—“নাহ, আমি অমানুষ…জানোয়ার! তুই-ই তো বলেছিলিস, এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গিয়ে এখন আবার নিজেই জিজ্ঞেস করছিস?”
আনায়া জোরে দম নেয়। চোয়াল শক্ত করে বলে,
“এমন কিছু করার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাববে না। নয়তো ঐ দুঃস্বপ্নে ভরা কলিজাকে টেনে হিঁচড়ে বের করতে আমার বেশি কষ্ট হবে না!”
—“বাপরে…এক সেকেন্ড, যদি এমন কিছু না করি আর যদি তোকে বলি আমায় মে’রে ফেলতে, তবে তোর কষ্ট হবে?”
আনায়া এবার কেনীথের এহেন অভিব্যক্তিতে চুপ করে যায়। কিছু না বলে, চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে উঠল,
“বলছিল যে, সে ভালো কফি বানাতে পারে। আমি খাব কিনা, তাই জিজ্ঞেস করেছিল।”
—“ঐ বুড়োটা?”
—“সাইন্টিস্ট উনি…সেই সাথে শয়তানের শি”ষ্য।”
আনায়ার খানিকটা রাগ নিয়েই কথাটা বলতেই কেনীথ আবারও বলল,
“যেটাই হোক,তুই কি বললি?”
আনায়া এবার খানিকটা কপাল কুঁচকে কেনীথের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,
“আপনার কানে না ইয়ারপোড লাগানো ছিলো? আমাদের সবকথাই তো আপনার শোনার কথা৷”
কেনীথ এবার খানিক তব্দা খেয়ে বলে উঠল,
“তোরা জার্মান ভাষায় কথা বলছিলি। আমি জার্মান পারি না।”
কেনীথের সহজ অভিব্যক্তিতে আনায়া ভ্রু কুঁচকে ফেলল। খানিকটা কঢ়া স্বরে বলে,
“মিথ্যা কেনো বলছেন? আপনি সত্যিই জার্মান পারেন না?”
—“নাহ…হ্যাঁ,মানে ঐ একটু আকটু।তবে খুব বেশি না।”
—“ওহ!”
আনায়া আর এই বিষয়ে কথা বাড়ায় না।যদিও কেনীথের নির্লিপ্ত স্বীকারোক্তিটা তার মোটেও সত্যি মনে হলো না। কেনো যেন মনে হচ্ছে কেনীথ মিথ্যে বলল। তবে আনায়ার এতে কিছু আসে যায় হা।সে ব্যস্ত তার মিশনের পরবর্তী প্ল্যানের বিস্তারিত সাজানোতে। আর সেই সাথে, মস্তিষ্কের আবছা ভাবনায় ভেসে থাকা স্ক্রিনের সেই লেখাগুলো। আনায়া এখনো বুঝতে পারেনি সেসব আদতে কি ছিল।
এদিকে আবার কেনীথ নিজের মতো মনে মনে বিড়বিড় করে আওড়ায়,
“আহ্…বুড়োর শখ কত! আমার বউ, আমিই চান্স পাই না। আর বুড়া ব্যাটা আসে, আমার বউকে তার হাতের কফি খাওয়াতে?”
মূলত কেনীথ খুব ভালো ভাবেই জার্মান জানে।এবং আনায়া আর সেই সাইন্টিস্টের সব কথাই সে শুনেছে এবং বুঝেছে। শুধু তাই নয়, বরং তারা যখন কথা বলছিল তখন কেনীথ নিজের কাজ ফেলে রেখে আনায়াকে খুঁজতে খুঁজতে চলে আসে।এবং দূর থেকে কপাল কুঁচকে ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে সবকিছুই দেখতে থাকে।
—“স্ট্যাটিক সিগন্যাল লকড!৩০ সেকেন্ডের মধ্যে নেটওয়ার্কে ঢুকছি।”
পাভেল নিজের কোডিং শেষ করে একবার চোখ বন্ধ করল। এটাই তাদের লাস্ট কার্ড। রুমের ভেতর আলো নিভে গিয়ে আবার জ্বলে উঠল। সার্ভারের মনিটরে ক্লক ডাউন শুরু হলো। 5…4…3…2…
অথচ হঠাৎ করেই, সবকিছু থেমে গেল।মনিটরের আলো নিভে যায়। ল্যাপটপের স্ক্রিন কালো হয়ে আসে। ছাদ থেকে ঝুলে থাকা পুরনো পাখা হঠাৎ করে ঘুরে উঠল। যেন কেউ বাতাসে নোংরা কিছুর গন্ধ ছড়াল। বাইরে মেঘের গর্জন, তারপর সবকিছুই নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেল।
আনায়া বিস্ময়ের সাথে বলে,”কি হলো?”
পাভেল তাড়াতাড়ি সিস্টেমে ঢোকার চেষ্টা করল।কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয় না। একের পর এক ফেইলড এন্ট্রি।
—“আমরা ঢুকতে পেরেছিলাম। কিন্তু কেউ আমাদের আগেই ধরে ফেলেছে। কেউ ট্রান্সমিশন অ্যাকসেস ব্লক করে দিয়েছে। আর শুধু ব্লক না…পুরো সিগন্যাল রিসিভার ডিজঅ্যাবলড।”
কেনীথ ঠান্ডা স্বরে বলল, “মানে ওরা জানত আমরা এসব করতে চলেছি।”
তাদের চোখের সামনে অন্ধকার ছায়ার মতো বাস্তব ফুটে উঠল। আনায়া সহ তাদের এতোসব প্ল্যান, সংগৃহীত ফুটেজ, সার্ভারে রাখা প্রতিটি প্রমাণ—সব এখন অফলাইনে। এমনভাবে ডিজেবল করা হয়েছে যেন কেউ বিশ্বাসই করবে না যে কিছু ঘটেছিল।
—“ওরা শুধু সিস্টেম বন্ধ করেনি, ওরা আমাদের উপরে নজর রেখেছিল। আমাদের ট্রান্সমিশন স্পট, টাইমিং, ফাইল স্ট্রাকচার, এমনকি আমাদের ব্যাকআপ পর্যন্ত ট্রেস করে ফেলেছে। কেউ একজন ভিতর থেকে আমাদের মুভমেন্ট ফাঁস করেছে। বুঝতে পারছি না, এসব কে করছে, আর কিভাবেই করছে! ”
পাভেলের কথায় শেষ হতেই এক মুহূর্তেই চুপচাপ হয়ে রইল তিনজন। বাইরে ভোরের আলো ছড়াতে শুরু করেছে। লাইটের তীব্রতা কমে গিয়ে ভোরের প্রকৃতির শীতল আবহে ছেয়ে যাচ্ছে। তবুও সে বাতাসে একটা ঘন নীরবতা ছড়িয়ে আছে, যা মোটেও কাউকে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে দিচ্ছে না।
অনেকক্ষণ সব সবাই নিস্তব্ধ হয়ে থাকার পর, আনায়া বলল, “এখন কী করবো?”
কেনীথ চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করল। সেই সাথে বলতে লাগল,
“তথ্য প্রকাশ করে কিছু হবে না। এতো বড় এক ইন্টারন্যাশনাল কাম্পানি। এমন সব অনৈতিক কাজ নিশ্চয়, এমনি এমনি করবে না! বুকে কলিজা রয়েছে দেখেই, এতোবছর ধরে এমন দুঃসাহসিকতা দেখিয়ে যাচ্ছে। ওরা হয়তো মিডিয়া কিনে ফেলেছে, পুলিশ-আইনও কিনে ফেলেছে। ডিজিটাল সার্ভার হ্যাক করাতেও ওস্তাদ। আমাদের ট্রান্সমিশন এখন কিচ্ছু না। যদি ওদের অস্তিত্ব শেষ করতে হয়, তাহলে তাদের ভেতর থেকেই নষ্ট করতে হবে।”
পাভেল মুখ তুলে তাকাল।—“মানে?”
—“মানে, এখন আমাদের একমাত্র টার্গেট—SP Hans এর অর্থদাতারা কিংবা মাস্টারমাইন্ড। যার জন্যই এই কোম্পানির উৎপত্তি। এছাড়া তাদের যদি কোনো প্রধান গবেষণাগার আর যদি এককেন্দ্রিক সার্ভার থাকে…যেখানে সবকিছুর উৎস কোড রাখা হয়।… একবার ঐটার ভেতরের বায়োলজিক্যাল নোড ধ্বংস করতে পারলে।ওদের সবকিছু শেষ। ওটাই হান্সের দেহের মেরুদণ্ড।ওটা ভাঙলে শরীর টিকবে না।এমনিতেই সব ধ্বং”স হবে।”
—“তার মানে, তুমি বলতে চাচ্ছো, আমাদের এখন এই এস.পি.হান্সকে বের করতে হবে! কিন্তু সে তো বহু বছর আগেই ম’রে গিয়েছে।”
পাভেলের এহেন অভিব্যক্তিতে কেনীথ খানিকটা বিরক্ত হলো।—”গাধার মতো কথা বলিস না।আমিও জানি এস.পি.হান্স মা’রা গিয়েছে। কিন্তু এই কোম্পানি তো আর হাওয়ার উপর চলছে না। নিশ্চয় হান্সের কোনো উত্তরাধিকারী কিংবা… অন্য কেউ তো রয়েছে, যে এই সবকিছু পরিচালনা করছে।”
—“হুম, হুম, তাও ঠিক। কিন্তু এই হান্সের খোঁজ পাব কোথায়? এতো ইনফরমেশন ঘাটাঘাটি করা হলো, কোথাও তো এর খোঁজ পাইনি। আর কেউ জানেও না আদোও সেই হান্স মানুষ না ভুত।”
এমন সিরিয়াস মোমেন্টেও পাভেলের এমন কথাবার্তা কেনীথের প্রচন্ড বিরক্ত লাগল। চোখ মুখ কুঁচকে কিছু কঢ়া কথা বলতে নিয়েও আর বলল না।
—“তোর এতো চিন্তা করতে হবে না। বহুত করেছিস, বাকিটা এবার আমি করছি।”
ভোর গড়িয়ে সকাল হয়, সকাল গড়িয়ে গভীর রাত…এরপর আসে মধ্যেরাত। পুরোটা সময় তিনজনেই অত্যন্ত মনোযোগী হয়ে নিজেদের কাজ করে যায়। কেনীথ, পাভেল এবং আনায়া, সবাই একসঙ্গে বসে রয়েছেন একটি অন্ধকার কক্ষে। তারা তাদের আগের আস্তানা থেকে সরে এসেছে। এই জায়গাটা লোকালয় থেকে আরো বেশি অগোচরে। চারপাশে কোনো আলো নেই। একমাত্র আলোক উৎস হলো একটি পুরোনো টেবিল ল্যাম্প। যেটি বর্তমানে টিমটিম করে জ্বলছে। তাঁদের সামনে বড় একটা ম্যাপ। একপাশে কিছু নথিপত্রও ছড়িয়ে রয়েছে। আনায়া হাতের মুঠো ভেঙে টেবিলের ওপর রেখে বলে উঠল,
“এই হান্স কিংবা মাস্টারমাইন্ড… কোথায় থাকতে পারে, সেটা জানার জন্য আমাদের দ্রুত একটা পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।”
পাশ থেকে কেনীথ কিছু ডকুমেন্টস প্রচন্ড মনোযোগী হয়ে দেখতে দেখতে বলে,
“কাজ প্রায় হলে এলো বলে…দেখা যাক, কি হয়!”
তারা জানে, এই সন্ধান কোনো সাধারণ কাজ নয়। হান্স…যে ব্যক্তি, বহু বছর ধরে এই আন্তর্জাতিক অপরাধী নেটওয়ার্কের মস্তিষ্ক। তার অবস্থান এতই গোপন যে, সারা বিশ্বে কেউ জানে না সঠিকভাবে, কোথায় থাকে সে। আর তার আসল পরিচয়ই বা কি! কিন্তু তারা আপাতত সব সিক্রেট ইনফরমেশন জোগাড় করার পর এটা জেনেছে যে, একটি গোপন দুর্গ রয়েছে জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলে। যে দুর্গে এস.পি. হান্সের প্রায়ই গোপন তথ্য সরবরাহ করে থাকে তার সঙ্গীদের জন্য।
আর এসব তথ্য মূলত কেনীথই জোগাড় করেছে তার কিছু চেনাশুনা আন্ডারগ্রাউন্ডের বিশেষ স্পাই দিয়ে। যাদেরকে আবার এসব তথ্য দিয়েছে সেই দূর্গের সাবেক সহকর্মী জোহান। এছাড়া কেনীথের লোকজন আরো একটি এনক্রিপ্টেড ফাইল পাঠায় ডেড সার্ভারের মাধ্যমে, যাতে একটি ট্র্যাকিং রিপোর্ট থাকে। গত তিন সপ্তাহে ইউরোপজুড়ে তিনটি কালো অ*স্ত্র কার্গো আটকানো হয়েছে। যার সব কটার উৎসস্থল ছিল জার্মানির ভিটজেনবুর্গের কাছাকাছি।
এছাড়া ফ্র্যাঙ্কফুর্টের একটি পুরোনো আর্কাইভ হাউজে, রাতের আঁধারে এক বেনামি তথ্যদাতার থেকে কেনীথ পেয়েছিল একটি ছেঁড়া কাগজ…যেখানে হাতে লেখা ছিল একটা জায়গার সমন্বয়। সেটিই মূলত শ্লোস ভিটজেনবুর্গ,…যে দুর্গেই পাওয়া গিয়েছিল হান্সের নাম।
“শ্লোস ভিটজেনবুর্গ” জার্মানির সাক্সনি-আনহাল্টের কুয়েরফুর্ট শহরের পাশে নিঃশব্দ এক উপত্যকায় দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রাচীন দুর্গ। যার অস্তিত্ব ইতিহাসে প্রথম পাওয়া যায় নবম শতকের শেষদিকে। এই দুর্গ একসময় ছিল খ্রিস্টান নানদের আবাসস্থল। কিন্তু পরবর্তীতে একে একে বিভিন্ন অভিজাত পরিবারের হাতে এসে…রেনেসাঁস, বারোক, ও নিও-রেনেসাঁস আর্কিটেকচারের মিশেলে এক ভয়ং”কর সৌন্দর্যে রূপ নেয়।
এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এটি ব্যবহৃত হয়েছে শিশুদের আবাসিক স্কুল এবং মানসিক রোগীদের চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে। কিন্তু ১৯৯০ সালের পর এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।জঙ্গলে ঘেরা এই বিশাল কাঠামো এখন একটি অন্ধকার ও নিষিদ্ধ স্থানে পরিণত হয়েছে।যেখানে মাঝে মাঝে অদ্ভুত শব্দ শোনা যায় বলে গুজব রয়েছে। বর্তমানে এটি ব্যক্তিমালিকানাধীন হলেও কোনো সংরক্ষণ নেই, এবং এটি জনসাধারণের প্রবেশের জন্য সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। আর কেনীথের অনুসন্ধান অনুযায়ী এই ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপত্য, অতীত ইতিহাসে মোড়া, নির্জন এলাকাতেই ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে এস.পি. হান্সের মাস্টারমাইন্ড।
দুর্গটির চারপাশে বনভূমি, যেখানে কোনো মানুষ প্রায় প্রবেশ করে না। নিকটবর্তী কোনও শহর বা জনবসতিও নেই। আর এখানে কেনীথদের প্রবেশ করতে হলে, তাদের রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালাতে হবে। এবং তারা জানে, সামান্য কোনো ভুল করলে তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ।
তাদের প্রথম কাজ হল,হান্সের আস্তানা সম্পর্কে মাইক্রোফিল্ম থেকে আরো তথ্য উদ্ধার করা।আর আনায়া সফলভাবে সেই তথ্য বের করে ফেলল। এবং তাদের হাতে চলে আসে সেই মাইক্রোফিল্মে লুকানো নির্দিষ্ট স্থান, দুর্গের প্রবেশদ্বার, গোপন পথ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
তাদের কাছে ছিল জোগাড় করা সেই, একমাত্র একটি পুরোনো ও গোপন তথ্যসমৃদ্ধ মানচিত্র। সেখানে ছিল দুর্গের পশ্চিম দিকের একটি সিক্রেট এন্ট্রান্স। যেখানে কেউ সহজে প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু ভেতরে প্রবেশের জন্য এই একটি রাস্তাই তারা ব্যবহার করতে পারবে। নয়তো মেইন গেইট দিয়ে, সরাসরি গার্ডদের সম্মুখীন হয়ে ভেতরে প্রবেশ একপ্রকার অসম্ভব। আর এতো সহজে থেমে যাওয়ার মানুষ তারা নয়।
তারা ছোট চপারে করে পাহাড়ঘেরা একটা জায়গায় নামে, যেখান থেকে দুর্গ প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। কুয়াশা ঘেরা, পাহাড়ি ট্রেইলে হাঁটতে হাঁটতে এক সময় তারা দেখতে পায়—একটা শ্যাডো টাওয়ারের মতো কিছু যেন ঝাপসা হয়ে পাহাড়ের ঢালে লুকিয়ে আছে।
আর তাদের গোছানো সেই সূত্র ধরেই তাদের যাত্রা শুরু হয়। এরপর একটি কালো SUV গড়িয়ে আসে দূরে, অন্ধকার পাহাড়ের গায়ে।গাড়ি চালিয়ে জঙ্গল, পাহাড়ের গা বেয়ে যখন তারা দুর্গের কাছাকাছি পৌঁছায়। গাড়ি থেকে নামে তিনজন। কেউ কথা বলে না।প্রত্যেকের পরনে কালো মাস্ক। পাভেলের মাথায় অবশ্য একটা কালো ক্যাপও রয়েছে।
তারা জানে, এখানে প্রবেশ মানেই মৃত্যুর স্বাক্ষর। কিন্তু ওদের সামনে এখন বিকল্প নেই। তাদের হাতে ছিল হ্যান্ডগান, সাইলেন্সার, আর অস্থায়ী EMP ডিভাইস।
ান্যদিকে গার্ডরা… যারা আসলে হান্সের নিয়োজিত পেইড মিলিশিয়া। অস্ত্র হাতে টহল দিচ্ছিল। এদের কেউই পেশাদার সেনা নয়। কিন্তু এতটাই ভয়ংকর যে একজন গার্ড একা তিনজনকে সামলে দিতে পারত।তারা প্রস্তুত ছিল পুরো এলাকায়। তারা অস্ত্রসজ্জিত এবং অত্যন্ত দক্ষ ছিল।
এদিকে দুর্গে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব মনে হলেও, তারা শেষ পর্যন্ত সফল হয়। কারণ তাদের প্রস্তুতি ছিল গোছানো ও জোরদার। প্রথমে তারা গোপনে, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে দুর্গের আশপাশের লোকজনের যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ করে নেয়। এবং সেই যোগাযোগের মাধ্যমে তারা বুঝতে পারে যে তারা অল্প কিছু সময়ের সুযোগ পাবে। এই সময়টুকু তারা সতর্ক থাকলে, তারা সুরক্ষিতও থাকবে।
অবশেষে, সকল প্রস্তুতি শেষে তারা তাদের গন্তব্যের দিকে এগোয়। গাঢ় অন্ধকারের এক ভূতুড়ে কুয়াশার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে সেই দুর্গ শ্লোস ভিটজেনবুর্গ৷ যার আশেপাশের জায়গাজুড়েও বেশি সুবিধার নয় ।চারপাশ ঘিরে জঙ্গল, বিপজ্জনক পাহাড়ি রাস্তা এবং মধ্যযুগীয় টাওয়ার। তারা তিনজন দূর্গ হতে প্রায় অনেকটা দীরে পাহারি রাস্তায় দাঁড়িয়ে।আর সামনে বিশাল আকৃতির একটা লোহার গেট।
তারা দুর্গের পাশে পুরোনো এক বনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যায়। আনায়ার হাতে IR ভিশন।যারমাধ্যমে সে আশপাশটা পরীক্ষা করে নিয়ে বলে,
“”এখানে একটা ভূগর্ভস্থ ট্রান্সফার পয়েন্ট রয়েছে।”
—“তার মানে…আমাদের মাটির নিচ দিয়ে ঢুকতে হবে?”
পাভেলের প্রশ্নের প্রতিত্তোরে কেনীথ বলে,
“ওরা এখানেই অস্ত্র আনে। দুর্গে ঢোকার এটিই একমাত্র সুযোগ।”
তারা খুব বেশি একটা সময় নেয় না।চুপচাপ, নিঃশব্দে ঢুকে পড়ে মাটির নিচের করিডরে। কাঁদা আর পচা গন্ধে ভরে আছে পুরো পথ। দূর থেকে গার্ডদের চলাচল ও রেডিও কমান্ডের আওয়াজ ভেসে আসে। অনেকটা পথ ভালোমতোই অতিক্রম করতে পারলেও,আরেকটু সমানের দিকে এগোতেই সামনে পেলো গার্ড এবং স্নাইপারদের একটি দল। যারা চারপাশের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছিল।আর আনায়াদের দূর্ভাগ্যবশত এতো প্লানিং এর পরও গার্ডরা হয়তো তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে যায়।
কেনীথ চোয়াল শক্ত করে হালকা সিগন্যাল দেয়। পাভেল তার পেছনটা কভার নেয়। আনায়া হাত ঘড়ির দিকে তাকায়, তারপর নিঃশব্দে পিস্তলের স্লাইড টেনে ট্রিগারে শক্ত করে আঙ্গুল ছোয়ায়।
আর যেই না তাদের দিকে গার্ডগুলো ধেয়ে আসে।ওমনি তিনজন কৌশলে এবং অত্যন্ত দ্রুততার সাথে তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হারিয়ে ফেলল। পিস্তল ও রাইফেলের আওয়াজের গর্জনে চারপাশ রুদ্ধশ্বাসে পরিণত হয়েছে। র”ক্তের সঙ্গে গুলির বর্ষব মিলে একাকার। পাভেল যখন একজন গার্ডের দিকে তীব্রভাবে গুলি চালাল, তার পাশের এক টাওয়ারে তখন স্নাইপার তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল।তারা নিচু হয়ে এগোতে থাকে। পথরোধ করে আরো দুটি সশস্ত্র প্রহরী। গার্ডরা চুপচাপ, কিন্তু শরীরের মুভমেন্ট থেকে বোঝা যায়, তারা যেকোনো সময় আক্র’মণ করবে।
কথা না বাড়িয়ে, কেনীথ হাতের সিগ সাওয়ার তুলে নেয়, টানা দুটো গুলি।…একজন মাটিতে পড়ে যায়।ওদিকে আরেকজনের পা লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে পাভেল। কিন্তু ঠিক সেই সময় আড়াল থেকে আসে আরও চারজন।
গোলাগুলি শুরু হয়। বনের মাঝের বদ্ধ দুর্গের ভেতরে… গুলির শব্দ ঠাণ্ডা বাতাসে চাপা পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের যু”দ্ধটা খুবই দুর্ধ”র্ষ হয়ে উঠেছে। আনায়া ফ্ল্যাঙ্কিং পজিশনে গিয়ে দুই গার্ডকে নিজে সাইলেন্সার লাগানো পিস্তল দিয়ে একে একে সরিয়ে ফেলে। তবু কেনীথ কাঁধে হালকা গুলিবিদ্ধ হয়, আর পাভেলের কপালের পাশে ছুঁয়ে যায় একটা বুলেট। হাফাতে হাফাতে,তারা রক্তে মাখা জামা পরা অবস্থায় মূল গেটের দিকে এগোয়।
আরো অভ্যন্তরীনে প্রবেশের পর তারা দেখে, জিনিসটা যতটা পুরোনো, তার চেয়ে বেশি ভয়ংকর। ভেতরে ডাস্টি কার্পেট, সেকেলে বাতি, আর দেয়ালে ঝুলে থাকা নাৎসি যুগের কিছু চিত্র।কিন্তু আধুনিক সেনা অস্ত্র গুদামও দেখা যায়। সেখানে আরো তিনজন সশস্ত্র লোক, যারা প্রত্যক্ষ যুদ্ধের জন্য তৈরি। পাভেল তখন আগুনের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে।কেনীথ পিছন থেকে কভার দেয়, আর আনায়া ডান পাশ ঘুরে বুলেট ছুঁ’ড়ে দেয়। তিনজনেই প্রায় শেষ শক্তি দিয়ে লড়াই চালায়। এবং অবশেষে দুর্গের একদম গভীরে পৌঁছে যায়।
তিনজনের মাঝেই আনায়াই ছিল সবচেয়ে দ্রুত এবং নিঃশব্দ। যখন গার্ডরা তাদের দিকে পৌঁছাতে চেষ্টা করছিল, আনায়া তাদের একের পর এক নিঃশব্দে আগুনের ন্যায় মতো শুট করতে লাগে।
কেনেথ এবং পাভেলও মদত দেয়। তাদের গুলি ও কৌশল দিয়ে সাঁজানো। কিন্তু একসময় পাভেল আহত হয়, যদিও সে তা জানায় না। কিন্তু তা আনায়ার নজরের অগোচর হয় না। সে তার উদ্দেশ্যে জোড়ে সতর্ক করে,
“ভাই, সাবধানে!”
আশেপাশে লা’শের স্তু”প জমে গিয়েছে। আশা করা যায় এই দুর্গে আপাতত আর কোনো গার্ড নেই। প্রত্যেকেই জোরে জোরে শ্বাস ফেলে। প্রত্যেকেই হাঁপিয়ে উঠেছে। কিন্তু আনায়া একমুহূর্তও নষ্ট করতে চায় না।সে দৌড়ে দূর্গের আরো ভেতরে প্রবেশ করতে চায়। উদ্দেশ্য, যেভাবেই হোক মাস্টারমাইন্ড আর মেইন সার্ভারকে ডেস্ট্রয় করা।
আনায়াকে ছুটতে দেখে এদিকে কেনীথ খানিকটা থতমত খেয়ে যায়। তার নিজের গায়েও গুলি লেগেছে কিন্তু সে ব্যাথার দরূন ওখানে পড়ে থেকে লাভ নেই। খানিকটা চোখমুখ কুঁচকে আনায়াকে ডাকলেও আনায়ার তাতে পাত্তা না দিয়েই ভেতরে ঢুকে গিয়েছে। আর তা দেখে কেনীথ নিজেও ওর পেছন পেছন ছুটে যায়।সেই সাথে প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বিড়বিড় করে আওড়ায়,
“এই মেয়েমানুষ গুলো এতো ঘ্যাড়ত্যাড়া আর বেশি বোঝে কেনো? হিসেবে তো দুনিয়ায় সব মিউজিয়ামে এদেরকে নিয়ে রাখা উচিত।”
একটি অন্ধকার ঘরে একটি মধ্য বয়স্ক লোক নির্লিপ্ত ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পরনে কালো লম্বা কোর্ট, কালো হ্যাট। এছাড়া তার হাতে ছিল একটি পুরনো চামড়ার ডায়রি। টেবিলের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে নানান কাগজপত্র। এছাড়া এখানেই সার্ভারের মেইন ফাইলগুলো রয়েছে।যেগুলো শেষ করতে পারলে এস.পি.হান্সের সবকিছু ধ্বং”স হয়ে যাবে। এবং এখানে রয়েছে তার আরো পরিকল্পনা। সে যদিও জানত , কেনীথ ও তার দল আসবে। কিন্তু কবে বা কিভাবে তা অজানা ছিল। মূলত কেনীথদের দুর্গের ভেতরের অবস্থান করাটা তার জন্য খানিকটা অপ্রস্তুত বিষয়। অবশ্য এতোক্ষণ ধরে সে দুর্গের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রাখা সিসিটিভির মাঝে সবকিছু তার সামনে থাকা মনিটরে দেখছিল। কিন্তু মাত্র তিনজনে যে এতগুলো লোককে শেষ করে দেবে তা বুঝে উঠতে পারেনি। লোকটি খানিক ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে যথাসাধ্য শান্ত রেখে নিজের পিস্তলের ম্যাগাজিনে গুলি ভড়তে লাগে। যেন তার কিছুই হবে না।যেন তাকে বাঁচানোর জন্য বিশেষ কেউ রয়েছে।
এদিকে আনায়া যখন সেই কক্ষে প্রবেশ করে, তখন লোকটি কিছুটা অট্টহাসি দিয়ে জার্মান ভাষায় বলল,
“মেয়ে মানুষ হয়ে এতো দেমাগি ভালো নয়। কিন্তু কিছুই করার নেই, শয়তানের জালে ধরা দিয়েছো। না চাইতেও এবার মরতে হবে।”
“ওয়েলকাম টু দ্য এন্ডগেম…”
এই বলেই লোকটি আনায়ার দিকে আচমকা শুট করে। আকস্মিক এ ঘটনায় আনায়া কিছু বুঝে উঠতে পারে না। সে চোখদুটো খিঁচে বন্ধ করে নেয় শুটের শব্দ শুনে। হয়তো ভেবেই নিয়েছে গুলিটা তারই গায়ে লেগেছে।কিন্তু পরক্ষণেই অনুভব করে সে কারো উষ্ণ বাহুডোরের বেষ্টনে আবৃত। আর তার মোটেও একটুও কোথাও ব্যাথাও লাগছে না। তবে গুলিটা কার লাগল! আনায়া ত্বরিত চোখ খুলে দেখে কেনীথ চোখমুখ খিঁচে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। মূলত গুলিটা কেনীথের পিঠের বা পাশে লেগেছে। অথচ কেনীথ চিন্তিত স্বরে আনায়ার উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“ঠিক আছিস?”
আনায়া কিছু বলতে নিবে তার পূর্বেই আবারও গুলি ছোঁড়ার শব্দ হলো। এবার শুট করেছে কেনীথ। আনায়াকে প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করেই, কি যেন আন্দাজ করতেই ডানহাতটা পেছনের দিকে নিয়ে সোজা শুট করে দেয়। পেছনে কি হয়েছে তা দেখলো না তবে, ব্যাথার দরূন কারো চেঁচানোর আওয়াজ শুনতেই কেনীথের ঠোঁটের কোণায় কিঞ্চিৎ বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে।
এদিকে আনায়াকে সাইড করে, কেনীথ পেছন ঘুরে দাঁড়ায়। তবে এরই মাঝে আকস্মিক আরো এক ঘটনা ঘটে যায়। আচমকা ধোঁয়ায় ভরে ওঠে চারপাশ। কেনীথ জানে, নিশ্চিত সেই লোকটিই একাজ করেছে। কিন্তু আশেপাশে এতো ধোঁয়ার কারণে আনায়া কিংবা কেনীথ কেউই কিছু দেখতে পারছে না।উল্টো দুজনের কাশি উঠে যায়।তবে কেনীথ ঠিকই আনায়ার হাত শক্ত করে চেপে ধরে রাখে।
কিন্তু এরইমাঝে সেই লোকটি কৌশলে তার পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়। ধোঁয়ার মাঝেই সে কেনীথের দিকে পিস্তল তাক করে ট্রিগার চাপতেই আকস্মিক গুলির আওয়াজে চারপাশ স্তব্ধ হয়ে যায়। চারপাশের ধোঁয়াও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।এরই মাঝে আরো কয়েকটি গুলি ছোঁড়ার আওয়াজে চারপাশটা যেন কেঁপে ওঠে।
এরই সাথে একটি দেহ আকস্মিক মাটিতে পড়ে যেতে ধরে। আর কেনীথ অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
“পা..ভে…ল!”
কেনীথের কথা শুনে সেই লোকটি পেছন ফিরে তাকাতে তাকাতেই সম্পূর্ণ ভাবে শক্ত ফ্লোরে আঁচড়ে পড়ল। মূলত সবগুলো গুলি তার শরীরেই লেগেছে আর প্রত্যেকটা শুট করেছে পাভেল।যে কারণে পাভেল তার মুখ থেকে মাস্ক খুলতেই, শেষবারের মতো একঝলক লোকটি তার নিজের খুনিকেও দেখে নেয়।
লোকটি যখন কেনীথকে শুট করতে ট্রিগারে চাপ দেবে ঠিক ঐ মূহুর্তেই পেছন থেকে পাভেল একেবারে পর একে গুলি ছুঁড়ে লোকটির দেহকে ঝাঁঝড়া করে দেয়।
লোকটিকে একপ্রকার ডেং-ইয়ে পাভেল তার উপর দিয়ে কেনীথ কাছে ছুটে আসে। তার নিজের পায়েও গুলি লেগেছে আর সেখান থেকে অনবরত শ’ক্ত ঝড়ছে।
—“ভাই ঠিক আছো?…তোমাদের কিছু হয়নি তো?”
কেনীথ স্তব্ধ হয়ে মাথা ঝাকিয়ে ইশারায় উত্তর দেয় যে তাদের কিছু হয়নি। যা বোঝা মাত্রই পাভেলও যেন খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। অথচ চারপাশে এখন শুধু নিস্তব্ধতা। আর সেই লোকটিও তাদের দিকে অদ্ভুত এক অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই চোখ বুজে নেয়। কে জানে, হয়তো তার ভাগ্যেও যে এমন আক”স্মিক মৃ”ত্যু রয়েছে তা শেষ সময়ে নিজেও বিশ্বাস করতে পারছেনা।
পাভেল সহ প্রত্যেকের মুখে পড়া মাক্সগুলো খুলে ফেলেছে।এতক্ষণ এতসব কিছু পড়ে থাকা…আর সব ঘটনা মিলিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে। তবে তারা একটুও থেমে নেই বরং এখনো যে যার মতো কাজ করতে ব্যস্ত। চারপাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে নানান কাগজের সহ নানান ফাইল ঘাঁটতে বসেছে। পাভেল সকল সার্ভার ডাটা ডেস্ট্র”য় করতে ব্যস্ত। মোটামুটি তাদের প্রয়োজনীয় সব ফাইলই পেয়ে গিয়েছে। কিছু কিছু আলাদা ভাবে পেন ড্রাইভে ডাউনলোড করাও হয়ে গিয়েছে।পরবর্তীতে কাজে লাগতে পারে, এই উদ্দেশ্যেই। এরই সাথে এটাও জানা গিয়েছে যে লোকটি এস.পি.হান্সের ছেলে নিকোলাই হান্স।
এরই মাঝে কেনীথের হাতে পড়ল সেই ছিঁড়া চামড়ায় মোড়ানো পুরনো ডায়েরিটা। কেনীথ আগ্রহ নিয়ে ডায়েরিটা খুলতেই খানিকটা অবাক হয়। সে ভেবেছিল এই নিকোলাই হয়তো কোনো জার্মানি। কিন্তু ডায়েরির একের পর এক পৃষ্ঠা উল্টেপাল্টে দেখে যে লাইনের পর লাইন সব লেখাই রুশ ভাষায় লেখা। কেনীথ কপাল কুঁচকে ওলোট পালোট করে দেখতে দেখতেই একটা জায়গায় গিয়ে তার নজর আঁটকে যায়। এদিকে তওকে এতো মনোযোগী হতে দেখে আনায়াও এসে তার পাশে দাঁড়ায়। ঠিক সে সময়েই কেনীথ প্রচন্ড বিস্ময়ের সাথে আওড়ায়,
একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩৮ (৩)
“রাদিত্ — ইয়েশ্চো নে জান্চিত্ বিত্ব মাত্য়ের্যু। মায়া মামা লুসিয়া, নিকাগ্দা নে লিউবিলা মিন্যা…”
(জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না। আমার মা লুসিয়া, কখনোই আমাকে ভালোবাসেনি…।)
—নিকোলাই হান্স
শুধু কেনীথ নয়, বরং আনায়ারও নজর আঁটকে গিয়েছে সেই একমাত্র শব্দে…”লুসিয়া”! এসবের রহস্য কি, তার সন্ধান তো এবার এই ডায়েরিতেই মিলবে।