আপনাতেই আমি পর্ব ৯

আপনাতেই আমি পর্ব ৯
ইশিকা ইসলাম ইশা

সময় টা তখন তপ্ত দুপুর আকাশে সূর্য যেন দ্বিগুন তাপ ছড়াচ্ছে। সূর্যের এর রাগী রশ্নি সহ্য করেই বাড়ি ফেরে মজনু।হাতে তার কিছু বই,খাতা আর একটা বড় ব্যাগ।রিদি তখন পুচির সাথে কথা বলছিল। মজনু কে ফিরতে দেখে রিদি ঝটপট উঠে একগ্লাস পানি এনে দেয়। মজনু পানি খেয়ে উঠোনে বসল।রিদিতা বাজারের ব্যাগের পাশে বই দেখে আশ্চর্য হলো।এতো বই!!রিদি ভালো করে দেখে বুঝল এসব তার বই খাতা, কিন্তু সব গুলোই নতুন।রিদি অবাক হয়ে বলল,
এসব কি??

মজনু খাতা কলম এগিয়ে লিখতে লাগে,
আপনার বই খাতা বেগম সাহেবা।
মানে??
মজনু খাতায় লিখে,
সামনেই আপনার পরিক্ষা বেগম সাহেবা।পড়তে তো হবে নাকি??কি যেন বলে এইচএসিসি দিবেন না ??
রিদি শুধরে দিয়ে বলল,
এইচএসসি হবে।
মজনু মাথা চুলকে রিদির দিকে অসহায় চোখে তাকায়,যার অর্থ সরি ভুল হয়ে গেছে।রিদি এসব তোয়াক্কা করে আবারো বইয়ের দিকে তাকাল।
এতো টাকা কোথায় পেলেন??
মজনু খাতায় লিখে,
আসলে জমানো কিছু টাকা ছিল।
রিদি রেগে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি বলেছি না আমি আর পড়ব না।তবুও বই কেন আনলেন?আমি আর পড়াশোনা করব না।যান গিয়ে ফেরত দিয়ে আসুন।আর আসার সময় আপনার জন্য নতুন দুটো পাঞ্জাবি নিয়ে আসবেন।সেই তো দু’টোর বেশি পাঞ্জাবি নেই আপনার আর আসছে আমার বই কিনতে। এখুনি যান।বলেই রিদি ঘরে চলে গেল।
মজনু ঠায় কিছুক্ষণ বসে থেকে কিছু একটা ভাবল।এরপর উঠে এসে পুকুর পাড়ে বসল।
অনেক সময় পরও যখন মজনু ঘরে আসল না।রিদি বিরক্ত হয়ে বের হল।সব জিনিস সেভাবেই পড়ে আছে। মজনু নেই।রিদি পুচিকে ডাকল,
এই পুচি মজনু মিয়া কোথায় রে?
পুচি এদিক ওদিক খুজে এসে বলল,
আপা ভাইয়ে তো পুকুর পাড়ে বইয়া আছে।
রিদি শুধরে দিয়ে বলল,
বইয়া কি?? বল বসে আছে।আচ্ছা তুই যা আমি দেখছি।রিদি মাথায় কাপড় দিয়ে পুকুর পাড়ে আসে।
মজনু বসে বসে ঢিল ছুড়ছে।রিদি গিয়ে পাশে বসল। মজনু একবার তাকিয়ে আবারো ঢিল ছোড়ায় মনোযোগ দিল।রিদি একটু চুপ থেকে বলল,
এখানে বসে আছেন কেন?

…………
কি হল কিছু লিখছেন না কেন??
………
আরে কথা বলতে পারেন না ।শুনতেও কি পাচ্ছেন না??
……
আমার দিকে তাকান।
…….
উফফফ এমন করছেন কেন?কি চায় আপনার??
এবার চট করেই ঘুরে বসল মজনু রিদিতার দিকে।পকেট থেকে খাতা বের করে লিখল কিছু,
আমার তো আপনাকে চায় বেগম সাহেবা।তবে আমি বর্তমানে এটা চায় আপনি পড়াশুনা করুন।পরিক্ষা দিন।জীবনে এগিয়ে যান।আপনার স্বপ্ন পূরন করুন।আপনি তো ডাক্রার হবেন ।আপনার স্বপ্ন এখন আমার স্বপ্ন।আমার স্বপ্ন কি আপনি পূরন করবেন না।হ্যা আমি মানছি আমি আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কেউ না।একটা সময় পর হয়তো আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন। কিন্তু আমি চায় আপনি আপনার স্বপ্ন পূরন করুন।অনেক পড়াশুনা করেন।অনেক বড় হন।যেন আমার মতো বোবার মুখে কথা ফুটাতে পারেন।

রিদির চোখ ছলছল করছে।বেশি না গুনে গুনে ১টা মাস হয়েছে তাদের বিয়ের।এই ১ মাসে রিদি উপলব্ধি করেছে সে ভালো আছে।ভীষন ভালো আছে।সব কিছুর অভাব থাকলেও ভালবাসার কোন কমতি নেই।ওর জীবনের এই ১৮ বছর সে মায়ের ভালবাসা পাওয়ার জন্য কতো কিছু করেছে।আজ সেই ভালোবাসা, সে না চাইতেও পাচ্ছে।সেও তো চায় পড়াশুনা করতে কিন্তু এতো খরচ কিভাবে চালাবে মজনু মিয়া।বিয়ের পর ঐ বাড়ির কাজ ছেড়ে এখন দিনমজুরের কাজ করছে।প্রথম দিন গিয়ে হাতের কি অবস্থা করেছিল।জায়গা জায়গা ফোস্কা পড়ে গেছিল। তবুও রিদিকে বলেনি।খাওয়ার সময় রিদি খেয়াল করেছিল না করলে তো বলতোই না।এতো কষ্টের পরেও কখনো রিদির সাথে খারাপ ব্যবহার করে নি।বরং রিদি নিজেকে দোষী মনে করলে রিদিকে বুঝিয়েছে সে যা করছে তার বৌয়ের জন্য করছে।রিদিকে খুশি রাখা তার দায়িত্ব।
রিদি বাসায় একা থাকবে তাই পুচিকে ওর কাছে নিয়ে এসেছে।পুচির সব দায়িত্ব নিয়েছে।যেন রিদি একা না থাকে।বিয়ের কয়েকদিন পরেই রিদির জন্য কাপড় এনেছে যাতে রিদির কোন সমস্যা না হয়।অথচ তার নিজের মাএ দুটো পোশাক সেদিকে খেয়াল নাই তার।রিদি যেভাবে ভালো থাকবে সবসময় সেটা করেছে।

এতো কিছুর বিনিময়ে কখনো কিছু চায় নি। এমনকি রিদির ওপর স্বামীর অধিকার ও ফলায় নি।সেদিন রিদি সবার ওপর রাগ থেকেই বলেছিল।সবাই আমার ওপর অধিকার ফলায় আপনি কেন নিচ্ছেন না আপনার অধিকার।মজনু রিদির চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে লিখেছিল,
“আপনি কাউকে ভালবাসলে বুঝবেন, তার চোখের পানি হৃদয়ের মাঝে কি তিক্ত অনূভুতি দেয়।”
আমি মানুষ টা হয়তো পবিত্র না। কিন্তু আমার ভালবাসা আপনার জন্য ,আপনার মতো পবিত্র।আমার পবিত্র ফুল আপনি।তার গায়ে কলঙ্কের দাগ কিভাবে দেয় বলেন। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কি শুধু দৈহিক মিলনেই হয় বেগম সাহেবা!তৃপ্তি তখন যখন সেই মিলনে ভালবাসা থাকে।তাই এসব কথা কখনো বলবেন না।আপনার সম্মতি ছাড়া আমি কখনো আপনাকে জোর করব না।
এতো ভালোবাসা পেয়ে কিভাবে স্বাথপর এর মতো শুধু নিজের কথাই ভাববে। কিন্তু মজনুর চাওয়া সে ফেলতে পারছে না।
ঠিক আছে আমি পড়ব!তবে ১টা শর্ত আছে।
মজনু ভূ কুচখে তাকাল,
আমি নিজেও কিছু করতে চাই।আমি যে বাচ্চাদের পড়াতাম তাদের পড়াতে চাই।
মজনু কিছু লিখতে চেয়েও লিখল না।ঘাড় নেড়ে সায় দিল।রিদি উঠতে উঠতে বলল,
ভালোই তো গাল ফুলিয়ে রেখে আমাকে রাজি করিয়ে নিলেন। মজনু হাসল।

রাতে খাওয়া শেষে পুচিকে এগিয়ে দিয়ে গেছে রিদি আর মজনু।পুচি আসার পর থেকে প্রতিদিন ই রাতে খেয়ে এগিয়ে দিয়ে আসে রিদি আর মজনু। পুচি সকালে আসলে তাকে রেখে বাইরে যায় মজনু। বিকেল হতে হতে বাসায় ফিরে আসে।আর রাতে দুইজন পুচিকে এগিয়ে দিয়ে আসে। আজও ঠিক সেই সময়েই পুচিকে এগিয়ে দিয়ে দুইজনে রাস্তা ধরে হাটছে।রিদির কাছে সময়টা বেশ লাগে। গ্রামের আঁকা বাঁকা মেঠোপথে , চারদিকে শান্ত পরিবেশ , শুধু শোনা যাচ্ছে ঝিঝি পোকার ডাক, আলো ছড়ানো জোনাকি পোকা হোলদে আলোয় আলোকিত করছে। চাঁদ যেন আজ সচ্ছ আলো দিচ্ছে চারদিকে।রিদির মনে হচ্ছে জীবনে এমন সময় সে এতবছরে কখনো উপভোগ করে নি। হঠাৎ একটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করতে করতে এদিকে ছুটে আসে।রিদি ভয়ে পেছনে ফিরে মজনুর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়ে।রিদি নিজের মতো আগে আগে চলছিল আর মজনু ১হাত দূরে পিছু পিছু হাঁটছিল। কুকুর গুলো সেই ঘেউ ঘেউ করেই যাচ্ছে।রিদি ভয়ে মজনুর বাহু জরিয়ে ধরে।
শুনুন!এই কুকুর গুলো এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেন??আমার ভয় করছে।
মজনু ইশারায় বলছে,

চলুন কিছু করবে না।আমি আছি তো!!
রিদি মজনুর কথা বুঝলেও ভয়ে সে এগুচ্ছে না।আর না মজনু কে যেতে দিচ্ছে।
না না !! কামড় দিবে আপনাকে।
মজনু ইশারায় বলছে কিছু হবে না।তবুও রিদি মানতে র
নারাজ।না রিদি নড়ছে আর না মজনু কে ছাড়ছে। মজনু নিচে থেকে ঢিল নিয়ে ছুড়ে মারল।আঘাত পেয়ে কুকুর গুলো চলে গেলেও রিদি ভয়ে এখনো সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।মজনু রিদিকে ইশারায় বলল,
চলুন।নেই ওরা চলে গেছে।
রিদি তখনো স্থির দাঁড়িয়ে। মজনু এগিয়ে এসে হাত ধরলো।রিদি কাপছে। মজনু হতবাক হয়ে তাকাল রিদির দিকে। চাঁদের আলোয় বোঝা যাচ্ছে রিদি মাটির দিকে তাকিয়ে আছে।আর কিছু ভাবছে। মজনু জোরে ঝাকি দিতেই রিদি তাকালো মজনুর দিকে।চোখে পানি টলটল করছে।যেন এখুনি গড়িয়ে পড়বে। মজনু ইশারায় জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে,কি হয়েছে??রিদি ঝট করেই জরিয়ে ধরলো মজনু কে। মজনু হতভম্ব।কি হয়েছে তার বেগমের । মজনু ছাড়াতে চাইলে রিদি মজনুর পিঠের জামা আকরে ধরল। বিরবির করে বলল,

আমাকে বাঁচাও আম্মু!!আমাকে বাঁচাও!
মজনু খেয়াল করলো রিদির শরীর কাঁপছে।সে শক্ত করেই জরিয়ে ধরল রিদিকে। মাথায় ঠোট ছোয়াল।রিদি বিরবির করে বলছে কিছু। মজনু কোলে তুলে নেয়। হাঁটতে থাকে দ্রুত পায়ে।রিদি ভয়ে জরসর হয়ে একহাতে খামচে ধরে মজনুর পাঞ্জাবি।মজনু বাসায় ফিরে রুমে নিয়ে আসে।চৌকিতে বসিয়ে দেয়।রিদির জন্য পানি আনতে গেলে রিদি যেতে দেয় না।মজনুরকে সেভাবেই জরিয়ে ধরে থাকে।বিরবির করে কিছু বলছে আর ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মজনু বার বার নিজেকে ছাড়াতে গিয়েও পারে না।তাই সেভাবেই বসে থাকে। অনেকক্ষণ পর রিদির হাত আলগা হতেই মজনু রিদি কে শুয়িয়ে দেয়। মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে চুল গুলো খুলে দেয়। চুল চৌকির নিচে ছরিয়ে পড়ল।পানি এনে রিদিকে খাইয়ে দেয়।
অনেকক্ষণ পর রিদি চোখ খুলে তাকাই।প্রথমেই চোখে পড়ল মজনুর ভয়ার্ত দৃষ্টি।রিদিকে চোখ খুলতে দেখে রিদির হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ইশারায় বলে,

আমি আছি কিছু হবে না।রিদি দেখে সেই চিন্তিত চেহেরা। মজনু ইশারায় জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে?রিদি উঠে বসে বিছানায়। মজনু ঝটপট খাতা কলম নিয়ে লিখে,
কি হয়েছে আমাকে দয়া করে বলুন!আপনি ঠিক আছেন তো?
রিদি কিছু না বলে শুয়ে পড়ে। মজনু হতাশ হয়ে কিছুক্ষণ বসে থেকে লাইট নিভিয়ে নিচে শুয়ে পড়ে। মজনু এপাশ ওপাশ করছে আর ভাবছেন কি হয়েছে?? কুকুর দেখে এভাবে ভয় পাওয়ার মেয়ে রিদি না। তাহলে কি হয়েছে??মজনুর ভাবনার মাঝে পাশে কারো অস্তিত্ব টের পায়।পাশ ফিরে রিদি কে দেখে উঠতে গিয়েও উঠে না রিদির কথায়!!সেভাবেই সুয়ে পড়ে।
উঠবেন না,আমি আপনার পাশে ঘুমালে আপনার কোন সমস্যা??
ইশারায় না বুঝায় মজনু।

রিদি চুপচাপ শুয়ে থেকে বেশ কিছুক্ষণ পর বলে,
আমি তখন ক্লাস 3 তবে পড়ি।বাড়ির উঠোনে খেলা করছিলাম আমি আর রুপ আপু।সময়টা তখন বিকেল।দাড়োয়ান চাচা সিগারেট খেতে বাইরে গেছে।রুপ আপু কুকুর একদম দেখতে পারত না।তাই বড় একটা ইট নিয়ে কুকুরকে মেরেছিল।কুকুরটা নাকি এলাকার মানুষ কে শুধু কামড় দেয়।মারার কারনে কুকুর টি ঘেউ ঘেউ করতে থাকে।আপু ভয়ে ওখান থেকে দৌড় দেয়।
কুকুর ও আপুর পিছনে দৌড় দেয়। আপুকে বাঁচাতে আপুর পিছনে আমিও দৌড় দিলাম।আমাকে দৌড়াতে দেখে কুকুর আমার পিছনে দৌড় দিল।আমি প্রানপনে দৌড়িয়ে বাইরে চলে এসেছিলাম। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে তা হয় হোচট খেয়ে রাস্তায় পড়ে যায়।কুকুরটা আমার……(আটকে যায় দিদি)

আমার উপর হামলে পড়ে।হাতে আচড় কাটে তখনি দাড়োয়ান চাচা এসে কুকুরটাকে মেরে আমাকে বাচায়।আমাকে সেখানে থেকেই হসপিটালে নিয়ে যায়।ডক্টর আমাকে কয়েকটা ইনজেকশন দিতে চাই।আমি তখন ইনজেকশন ভীষণ ভয় পেতাম আম্মু, আব্বু বলে পুরো হসপিটাল মাথায় করে নিয়েছিলাম। দারোয়ান চাচা আমাকে সামলাতে ব্যর্থ।ঠিক তখনি আমার চিৎকার শুনে একজন মহিলা ছুটে আসে।আমাকে আগলে নিয়ে অনেক কথা বলতে থাকে।এর মাঝে ডক্টর ইনজেকশন দিয়ে দেয়।এরপর মহিলাটি কিছু ক্ষন থেকে চলে যায়।চাচা আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসে।এসে দেখি আম্মু কেঁদে কেটে অস্থির।আমি ভেবেছিলাম হয়তো আমার জন্য কান্না করছে তাই ছুটে গিয়ে জরিয়ে ধরতেই আমাকে ছাড়িয়ে….
ছাড়িয়ে থাপ্পর মারে।আমাকে বলে আমি কোথায় ছিলাম?রুপ আপুর ওপর কুকুর হামলা করেছে আর আমি তাকে রেখে নিজের জান বাঁচিয়ে পালিয়েছি।জামা কিভাবে ছিড়লাম।আমার থেকে বাজে গন্ধ আসছে। সেদিন আমাকে অনেক মারে।আমি হাজার বললেও শুনে না। দারোয়ান চাচা তখন আমার হয়ে বলে সবকিছু।সব শুনে আম্মু বলে আমি নিজের পিছে এতো টাকা ঢাললাম। দারোয়ান চাচা অসহায় হয়ে সেদিন বলেছিল আম্মুকে টাকা দিতে হবে না।ফ্রিতে চিকিৎসা হয়েছে আমার।

আম্মুর মার,কুকুরের কামড়,আর ভয় সব মীলিয়ে রাতে জ্বর আসে। আম্মু আম্মূ করেও সে একবারো আসে নি।দাদি সারারাত আমার পাশে বসে আমার সেবা করেছিল।সুস্থ হলেও ভয়টা আমার থেকে যায়। এইজন্য আজ ওমন ঘৈউ ঘেউ করাতে পুরানো সব চোখে ভাসছিল।তাই তখন এমন ভাবে রিয়্যাক্ট করেছি। তার জন্য আমি দুঃখিত।আমার জন্য চিন্তা করবেন না।আমি ঠিক আছি। কথাটা বলেই রিদি উঠতে চাইলে মজনু হাতের আঙুলের ভাজে আঙ্গুল ঢুকিয়ে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয়।ঘর অন্ধকার হলেও চাঁদের আলোতে দেখল মজনুর মুখখানা। মজনু চোখ বন্ধ করে রিদির হাত চেপে ধরে আছে।রিদি উঠলো না শুয়ে পড়ল।দুইজনের মাঝে বেশ দূরত্ব আছে।রিদি চোখ বন্ধ করে নিল।ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়ল।রিদি ঘুমিয়ে পড়তেই মজনু চোখ খুলে তাকায়। দুরত্ব কমিয়ে হাতে ভর দিয়ে তাকায় রিদির মুখের দিকে। চাঁদের আলোতে মায়াবতী কে আরো বেশি সুন্দর লাগছে।জানলা দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ছে রিদির মুখে। সেই আলোতেই দেখছে মজনু তার মায়াবতী কে।চোখের কোনে পানি শুকিয়ে আছে। মজনু এগিয়ে এসে চুমু বসায় কপালে।মনে মনে বলল,
“আপনার সকল দুঃখ আমার হোক,আমার ভাগের সকল খুশি আপনার হোক বেগম সাহেবা”
ঘুমের মাঝেই মজনু কে জরিয়ে ধরল রিদি।মজনুর শরীরে কাটা দিল রিদির স্পর্শে।এমন মিষ্টি আলিঙ্গন সে হারাতে চাইল না।নিজের দিকে টেনে জরিয়ে ধরলো বুকে।বুকের পাশে ধ্রীম ধ্রীম আওয়াজ টা যেন প্রখর হলো।বার বার চিৎকার করে বলতে থাকলো।ভালোবাসি ভালোবাসি। মজনু মনে মনে ভাবল এবার থাম বৌটা আমার উঠে যাবে এমন জোরে দাপাদাপি করলে।

দেখতে দেখতে সময় তার মতো করেই এগিয়ে যায়।মজনুর ভালবাসায় আজকাল বেশ আদুরে হয়ে উঠেছে রিদি।যার মাঝে আগে দুঃখ, কষ্ট ছাড়া কিছু ছিল না।এখন সে বাচ্চাদের মতো আবদার করে, অভিমান করে, অভিযোগ করে।মজনু ও বৌয়ের আবদার পূরণ করতে পারলেই খুশি।রিদি আজকাল আবদার করতে ভালোবাসে কারন সে জানে তা মজনু পূরন করবে। আজও বাচ্চাদের মতো মজনুর পিছু পিছু ঘুরঘুর করছে রিদি,সে মেলায় যেতে চাই।গ্রামের মেলায় ঘুরতে চায়।আর আজকেই নাকি মেলার শেষ দিন।রিদি সেই কখন থেকে মজনুকে মানানোর চেষ্টা করছে কিন্তু মজনু যেতে নারাজ।কারন কাল রিদির এইচএসসি পরীক্ষা।দেখতে দেখতে ২টো মাস আরো চলে গেল।২মাস মজনু রিদিকে পড়ার চাপে রেখেছে।তার কথা সব বাদ দিয়ে শুধু পড়াশুনা করবেন।আর শুধু রান্না করবেন।কারন রিদির হাতের সুস্বাদু রান্না ছাড়া আজকাল খেতে পারে না মজনু।বৌয়ের হাতের রান্নায় দারুনভাবে আসক্ত সে।

রিদির বাচ্চাদের মতো এভাবে পিছু পিছু ঘুরতে দেখে মনে মনে হাসে মজনু।বৌ তার আবদার করবে আর সে পূরন করবে না তা কি হয়।তবে তার মজা লাগছে এভাবে রিদির বাচ্চামো দেখে।
এই যে মজনু সাহেব প্লিজ নিয়ে চলুন না!!এমন করছেন কেন?কালকের পরিক্ষার সব আমার করা হয়েছে।আয়ি আমি পারব তো বিশ্বাস করূন। মজনু পিছনে ঘুরে রিদির মাসুম চেহেরা দেখে আর মানা করল না।রাজি হলো।রিদি খুশিতে গদগদ হয়ে জরিয়ে ধরলো মজনু কে।রিদির শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ এসে বারি খেল নাকে। মজনু শুকে নিল সেই ঘ্রান।রিদি বুঝল মজনুর অব্যক্ত অনূভুতি।

আপনাতেই আমি পর্ব ৮

রিদির মনেও আজকাল একটা সুর বাজে,”প্রেমে পড়েছে মন, প্রেমে পড়েছে আচেনা মানুষ আমায় পাগল করেছে”।হ্যা সেও ভালোবাসে মজনু কে।এতো ভালবাসা পেয়ে কে না ভালোবাসবে না।তার মতো অভাগীর ভাগ্য আল্লাহ এতো সুখ লিখেছিল জানলে কখনো কষ্ট পেত না।রোজ নামাজে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। মজনু কে তার জীবনে পাঠানোর জন্য।এতো সুন্দর মনের মানুষ তাকে দেওয়ার জন্য।

আপনাতেই আমি পর্ব ১০