চিত্রাঙ্গনা পর্ব ৫১ (২)
ইশরাত জাহান জেরিন
রাতে পিয়াস কল করেছিল ফারাজকে। নিশি আর তার মধ্যিখানে কোনো ঝামেলা নেই। এত জলদি দু’জনে এক হয়ে যেতে পারবে কে জানত? তবে এক হওয়ার পেছনে আরেকটা কারন অবশ্য ছিল। তা হলো পিয়াসের মানসিকতা, তার পরিবারের চিন্তা-ভাবনা। এখন নিশির পরিবারও তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। আর ওই রবিন? তার পরিনতি কি হবে? নাকি এতদিনে হয়ে গিয়েছে? যদিও এত জলদি হওয়া উচিত হয় নি। নিশির হাতে তার শেষটা লেখা না থাকলে কেমন যেন হয়ে যায় না? তাকে তো দেখতে হবে নিশি আজ কতটা খুশী। সেদিন মিথ্যা নাটক করে খুলনা থেকে কিশোরগঞ্জ না আনা হলে তো কখনই নিশি পিয়াসের মতো একজন সুপুরুষের জীবন সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করতে পারত না। নিয়তির প্রসংশা করতেই হয়। আমরা মানুষ তো প্রায় ভুলতেই বসে গিয়েছে ওই খোদার কথা যিনি যা কেড়ে নেন তার থেকেও উত্তম কিছু ফিরিয়ে দেন।
চিত্রা মাত্র বাসায় ফিরেছে। মরিয়মের লাশের চেহেরা দেখার সাহস হয় নি। পোড়া লাশ দেখার সাহস কি সবার থাকে? বুধবার মরিয়ম নরসিংদী তার মামার বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসে উঠেছিল। তবে মাঝ পথেই বাসে আগুন লেগে যায়। অনেকে সেই যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিল কেউবা বাঁচতে পারে নি। এই তো সবেমাত্র ভয় কাটিয়ে নতুন করে ফুটতে শুরু করেছিল মরিয়ম নামক কলিটা। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস তাই না? বাসায় এসে চিত্রা মুখে টু শব্দ পর্যন্ত করে নি। বাহিরে থেকে এসেছে। তারপরও এই মেয়ে গোসল করবে না ফারাজ জানে। কিন্তু ফারাজ তো গোসল ছাড়া এক দন্ড থাকতে পারবে না। রুমে এসেই চিত্রা ফারাজের বুকের সঙ্গে মিশে যায়। ফারাজ প্রশ্ন করে না। জড়িয়ে নেয় চিত্রাকে নিজের মধ্যিখানে। চুলে হাত বুলিয়ে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“যাও টুনটুনি গিয়ে গোসল না করে আসো।”
“ইচ্ছে নেই।”
“ওহ রিয়েলি?”
“হুম।”
“যাও বলছি। আমাকে গোসল করিয়ে দিতে বাধ্য করো না।”
“বললাম তো শরীর,মন কারোই গোসলের ইচ্ছে নেই।”
ফারাজ একটা মুচকি হাসি দেয়। কোনো কথা না বলে চিত্রাকে পাঁজা কোলে তুলে গোসলখানায় যায়। চিত্রার ইচ্ছে না থাকা শর্তেও একটা টু শব্দ করে না। ঝর্ণার নিচে চিত্রাকে নামিয়ে দিয়েই ঝর্না ছেড়ে দেয়। মৃদু গরম পানি পড়ছে। সেই পানিতে নিভে যাওয়া আগুনের শেষ ছাই টুকু ধুয়ে মুছে একাকার।
গোসল শেষে ফারাজ চিত্রার জামা বদলে দেয়। জোর করে ভাত খাইয়ে ঔষধটাও খাইয়ে দেয়। ফারাজের আর শোক পালন করতে ইচ্ছে করছে না। ৩০ বছরের জীবনে যা শোক পালন করে নি তা এখন বিয়ের পর একটা একটা করে পালন করতে হচ্ছে। বউটাও না! দুনিয়ার সবার জন্য তার কিসের এত মায়া? সবার কথা ভাবে সে কিন্তু এদিকে যে স্বামীটার অবস্থা নাজেহাল তা কি ভেবে দেখেছে? চিত্রা কোনো কথা না বলে ফারাজের পাশে এসে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ ওপাশ হয়ে শুয়ে থেকে হুট করে ফারাজের বুকের ওপর মাথা রাখতেই ফারাজের বুকের ভেতরটা ধপ করে নড়ে উঠল। কষ্ট করে এতক্ষণ সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছিল। খিচ মেরে বিছানার সঙ্গে লেপ্টে ছিল। কিন্তু এখন? ফারাজ একটা নিশ্বাস ফেলে চিত্রাকে বলে,
“ঘুমাচ্ছো না কেন?”
চিত্রা জবাব দেয় না। ফারাজের ভেতরের জ্বালাপোড়া এখনও কমছে না। বরং লাভার মতো বেগ পাচ্ছে। তার নিশ্বাস ভারী হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর তার অহর রজনীর রাত জাগা বিরহ খানিকটা হালকা হয়েছে। বাঁশ খেলে তো এমনেও খেতে হবে আর ওমনেও। এর চেয়ে ভালো রোমান্স করে একেবারে বাঁশ খাওয়া। সময় নষ্ট করলে তারই লস। মরিয়মের মৃত্যুতে তার খারাপ লাগার কথা ছিল কি? ছিল না মনে হয়। তাই বোধহয় কোনো অনুভূতি জন্মাচ্ছে না। আর ফারাজের কাছে ইমোশন হচ্ছে ছোটোলোকি জিনিস। ফারাজ এলাহীর এসবে পোষায় না। জল্লাদের এত ইমোশন থাকলে কারাগারের পাপীদের ফাঁসি দিবে কে? জল্লাদদের মায়া থাকতে হয় না। ফালতু জিনিস ওইসব।
“ঘুমিয়ে পড়ো।”
চিত্রা এবারও জবাব না দিয়ে ফারাজের বুকে হাত রাখে। সেই হাত ধীরে ধীরে বুক গড়িয়ে নিচে নামতে শুরু করে। ফারাজের অবস্থা এবার সত্যি খারাপ। বউ তার পাশে শুয়ে তাকে বেড টাচ করছে?ছোটোলোক বউয়ের ছোটলোকি সব কারবার। হাত গভীরে হারানোর আগেই ফারাজ খপ করে ধরে ফেলে চিত্রার হাতের কবজি। নিজেকে এবেলায় নিয়ন্ত্রণ করা এত কঠিন কেনো? পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ বোধহয় এটাই। হুট করে চিত্রা ওপাশ ফিরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,”ঘুম ধরেছে। ঘুমালাম।”
মেয়ে কি বলে? ঘুম ধরেছে তার? আসো মেয়ে তোমায় ঘুমের থেরাপি দেই। মুহূর্তের ভেতর ফারাজ চিত্রাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। দু’হাতের কবজি একসাথে জড়িয়ে নিজের এক হাতে শক্ত করে চেপে ধরে। পূর্ণ আয়ত্তে নিয়ে ফেলে তাকে। অতঃপর চিত্রার বক্ষ পাঁজরের ওপর ঝুঁকে পড়ে ফারাজ। হাস্কি কন্ঠে বলল, ” বিবিজান তোমার হাত তো আমার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। তোমার হাতের কাজ শেষ। নাউ ইট’স মাই টার্ন।”
–
জোহান গটগট করে একের পর এক মদের বোতল খালি করে দিচ্ছে। কারন আজ তো তার খুশীর দিন। ওই শালী মরিয়মটা নাকে দড়ি দিয়ে তাকে ঘুরিয়েছিল। এখন দূর্ঘটনায় মরেছে ভালো হয়েছে না? একেবারে উচিত শিক্ষা। তবে জোহান একটু অবাক হয়েছে বটে কারন সেই রাতে মরিয়ম তাঁদের বাড়িতেই ছিল কিন্তু সে কি করে টের পেলো না? যদিও পাওয়ার কথা ছিল না। একে তো এত রাত করে সে বাড়ি ফিরেছিল তার ওপর সেই সময় বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে ছিল। তাই কি করে জানত বাড়িতে কেউ এসেছে? আর সেই ব্যক্তি ওই মরিয়ম মেয়েটাই। তার ওপর ওই মেয়ে যে এই বাড়িতে ছিল তাও তো কখনও জানা হতো না যদি না লাশ যাচাই করতে জোহান মরা বাড়িতে যেত। ভাগ্যিস সেখানে সাবধানের সহিত যাওয়া হয়েছিল তা না হলে না জানতে পারত চিত্রার ক্লাসমেট ছিল ওই মেয়ে আর না জানতে পারত চিত্রা শোক পালন করতে সেখানে হাজির হয়েছে। জোহান আরেকটা মদের বোতল খুলে। একবার নৌকায় বসে থাকা সোহানের দিকে তাকায়। এই কাইল্লার মাথা পোকে খেয়েছে। মেয়ে মানুষের প্রেমে মানুষ এমনে ডুবে? চিত্রার জন্য আজকাল কাজ কর্ম সব ছাড়তে বসেছে। ভাগ্য ভালো তার সঙ্গে এত গুলো মানুষ কাজ করে তা না হলে সে যা শুরু করেছে দেখা যেত কবেই ব্যবসার পেছনে আগরবাতি জ্বলছে।
“রাজন ভাই কই গো?”
রোশান জোহানের দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকানি দিয়ে টেনে বলল, ” তাকে কি আজ-কাল পাওয়া যায়? সে তো এখন নতুন সরাইখানার স্পেশাল কাস্টমার। ঘরের বউ রাইখা বৈশ্যার মোহাব্বতে দেওয়ানা।”
“নদী ভাবীর তো কপাল পুড়ছে তাহলে। কি করার? যদি বউয়ের থেকে বৈশ্যারা সুন্দর হয়?”
“দেখার দৃষ্টি সুন্দর হইলে কয়লারেও সোনা মনে হইব। ঘরের বউরে ভালোবাসলে বাহিরের ছিলা কলার প্রতি এত আকর্ষন জন্মাইত না।”
“ঘরের বউকে এত ভালোবেসে কি লাভ? কই আপনার ভালোবাসা তো খাঁটি ছিল। তবুও বিশ্বাসঘাতকতা জুটল কেন কপালে?”
এই যে আজ বহুদিন হলো জান্নাত তো আর ফিরল না? কেনো ফিরল না? এই দেশ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। পাপ আর পাপ। যে মরছে তার জানাই হচ্ছে না কোন দোষে তাকে নির্মম মৃত্যু দেওয়া হয়েছে। আর যারা মারছে তারাও জানে না কেন মারছে। কেবল জানে মারতেই হবে। সোহাগ ইদানীং নেশা ধরেছে। প্রথমে চিত্রাকে হারালো,তারপর বাবাকে এখন আবার স্ত্রীকে। জান্নাত ভালো পরিবারের মেয়ে কিন্তু অতীত ভালো না। থাক কিছু অতীত সোহাগের সঙ্গেই না হয় ছাই হোক। যেদিন কেউ সেই ছাই দু’হাতে কুড়িয়ে নিবে সেদিন সবাই জানতে পারবে সোহাগ বিশ্বাসঘাতক নয়। সেদিন রাতে সে বিশ্বাসঘাতকতা করে নি। উল্টো তাকে নির্মম ভাবে বিধ্বস্ত করা হয়েছিল। টুকরো টুকরো করা হয়েছিল তার অন্তরের প্রতিটি খন্ডকে। এই তো বাবার মৃত্যুর পর সোহাগ মনে মনে ঠিক করেছিল জান্নাতের সঙ্গে শুরু থেকে সবটা শুরু করবে। মেয়েটাকে আর কতোদিন এই ভাবে প্রেম অঙ্গারে পুড়াবে?
অধিকার আছে তার ভালোবাসা পাওয়ার। অধিকার আছে অধিকার পাওয়ার। সবটা যখন মনে মনে গুছিয়ে নেয় সোহাগ ,তখনই হঠাৎ দূর থেকে আগত একটা ঝড় জান্নাতে দূরে কোথাও ঠেলে নিয়ে যায়। সব শেষ। মায়ের মুখের দিকে আজকাল তাকানো দায়। কেমন কঠোর মানুষটা মোমের মতো গলে গিয়েছে। নিভে গিয়েছে তার অহংকার, আর হিংসা-বিদ্বেষ। সময়ই পারে মানুষকে বদলে দিতে। মারিয়া ভাবীর দিকেও তাকানো যায় না। সংসারের একজন ভেঙে পড়লে আরেকজন কি ঠিক থাকতে পারে? পোয়াতি মানুষ। শরীর ঠিক যায় না। এই সময় মায়ের ওপর যা বয়ে যায় তার প্রভাব গর্ভের সন্তানের ওপরও পরে। মারিয়া ভাবী হাসে না,কথা বলে না কেমন যেন একটা হয়ে গিয়েছে। আর মাহাদী ভাইকে নিয়ে বলার মতো কিছুই নে। তাকে দেখলে রুক্ষ জরাজীর্ণের মরুভূমি লাগে। যার মধ্যে কোমলতা নেই আছে কেবল তিক্ততা।
বাড়িতে তো থাকেই না ঠিক মতো। শুধু বউকে ভালো ভালো খাবার কিনে দিলেই কি সব হয়? এই সময় একটা মেয়ে স্বামীর থেকে একটু যত্ন চায়,একটু সময় চায়। কিন্তু ওইসবেরই বড্ড অভাব মাহাদীর। সে দিন দুনিয়া ভুলে খেয়েছে। ভাবীর হয়তো খুব করে বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু বলি বলি করে কোনোদিন হয়তো বলাই হয়ে উঠবে না। সোহাগ খোলা সড়কের নিচে একা হাঁটতে হাঁটতে অন্ধকারে হারিয়ে যায়। পরনের সাদা-কালো চেক শার্টটি অন্ধকারের অতলে হারিয়ে গিয়েছে৷ সোহাগ ধোঁয়া ছেড়ে বিষাদের জর্জরিত কন্ঠে গলা ছেড়ে মৃদু কন্ঠে একটা আহত নিশ্বাস নিংড়ে দিলো। তাতে বেড়িয়ে এলো চিত্রা নামটি মুখ থেকে। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের কোণে জমে থাকা জল হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে ক্ষতবিক্ষত একটা হাসি আঁকল ঠোঁটের কোণে। অতঃপর গলা ছাড়ল,
“আমায় ডুবাইলি রে আমায় ভাসাইলি রে আকুল দরিয়ার বুঝি কুল নাই রে।”
অনেকটা দিন কেটে গিয়েছে। আজ রাতের গাড়িতেই হানিমুনের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার রওনা হবে আয়েশা আর অভ্র। যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস পত্র ক্রয় করতে হবে। হানিমুন বলে কথা। যদিও ফারাজকে রেখে হানিমুনে যাওয়ার কথা ভাবতেই কেমন কেমন লাগা শুরু করে। কিন্তু ফারাজ ভাইয়ের সঙ্গে তো আর হানিমুন করা যাবে না। অভ্র নিজের মাথায় নিজেই একটা চাপড় মারে। কি সব ছোটোলোকি চিন্তাভাবনা করছে সে? ফারাজ ভাইয়ের সঙ্গে হানিমুন? মুহুর্তেই অভ্রের গা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল। ফার্মেসীর সামনে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ঔষধের নাম মনে করতে লাগল অভ্র। বজ্র আসার সময় ঔষধটা নিয়ে আসতে বলেছে। কিন্তু কি এক কঠিন নাম একবার উচ্চারণ করার পরেই ভুলে খেয়ে-বসে আছে অভ্র। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। দোকানের ছাউনির এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে আয়েশা। বসে বসে ধোঁয়া উঠা কফি পান করছে। অভ্র ঔষধের নামটা মনে করার চেষ্টা করে কিছুক্ষণ। কিছুতেই মনে পড়ছে না। আয়েশা এগিয়ে এসে অভ্রকে তার কফিটা দিয়ে বলে, “এটা মজা না এটা তুমি খেয়ে শেষ করো।” অভ্র ভালো ছেলের মতো কফিটা হাতে তুলে নেয়। বজ্রকে কল লাগিয়ে চুমুক দিতেই দোকানদার এগিয়ে এসে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে, “আরে ভাই বুঝতে পারছি আপনার যে নতুন বিয়া হইছে। ঔষধের নাম কইতে এত লজ্জ পাওয়ার কিছু নাই। প্রথম প্রথম সবারই একটু এমন হয়।”
এক ঝটকায় অভ্রর নাকেমুখে কফি উঠে যায়। সে দোকানকারকে একটা ধমক দিয়ে বলে উঠে, “আরে মিয়া নাউজুবিল্লাহ মার্কা কথা বলেন কেন? শরীর ব্যাথার ঔষধ নিতে আসছিলাম। নামটা ভুলে গিয়েছি দেখে মনে করার চেষ্টা করছিলাম। শালার বেডার কালা মাইন্ড। যা কিনবোই না আপনার দোকান থেকে ঔষধ।”
ছাতা খুলে আয়েশার হাত ধরে সেই দোকান থেকে অভ্র রেগেমেগে বেড়িয়ে পড়ে। লজ্জা শরমেরও একটা লজ্জা শরম আছে কিন্তু এখানে তারও বিন্দুমাত্র ছোঁয়া নেই। দোকানদার বোকা বনে রয়। কি হয়ে গেলো মুহুর্তের মাঝে বুঝে উঠতে পারল না সে। এমন মফিজের মতো বৃষ্টির দিনে ফার্মেসীর সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে দোকানদার হিসেবে তো একটু সহানুভূতি কাজ করবেই। না হয় একটু মাইন্ড কালা হয়েই গিয়েছিল তাই বলে এমন রাগ করে চলেই যাবে? অভ্র আর আয়েশা গাড়ির সামনে আসতেই অভ্র বলে উঠল, “যাও ঘরনী গাড়িতে গিয়ে বসো।”
“সরকার ভাই লোকটা কিসের ঔষধের কথা বলছিল? চলো না আমরাও কিনি।”
“কষার ঔষধ। জিজ্ঞেস করছে আপনার বউয়ের মাথায় কি কষা আছে নাকি? থাকলে ঔষধ দেই কিনে নিয়ে যান। তাহলে চল তোর মাথার কষা ঠিক করার জন্য ঔষধটা কিনে নিয়ে আসি।”
“গু খা।”
আয়েশা রেগেমেগে গাড়িতে গিয়ে বসল। তা দেখে অবশ্য অভ্রর ভালোই লাগছে। এই ঘরনীকে রাগলে আতঙ্ক লাগে। অভ্র আয়েশার পাশে গিয়ে বসতেই আয়েশা আরেকবার মুখ ভেংচি কেটে উঠল, ” শালা গায়ের সঙ্গে টিকটিকির মতো লাগবি না। গায়ে ফোসকা পরে।”
অভ্র হাসে। আয়েশাকে ধাক্কা মেরে গান ধরে, ❝মুখেতে গালি। মিটা মিটা হেয়ালি। যত খুশী গালাগালি করো লাগে ভালো৷ আমাকে সাথে নিয়ে চলো না। চুপটি করে কিছু বলো না। তোমাকে যে আমি ভালোবাসি।❞
চিত্রা এবারও চার সাবজেক্টে বড় বড় রসগোল্লা পেয়েছে। কলেজে ভর্তির পর এটা ২য় ক্লাস টেস্ট গিয়েছে। প্রথমবার তো ২ টায় ফেইল করেছিল। এবার সংখ্যা বেড়েছে। আসলে মেয়েটার জোড়া জিনিস খুব পছন্দ তো তাই ফেইল করলেও জোড়া জোড়া সাবজেক্টেই ফেইল করে। ফারাজের রেজাল্ট দেখে মাটি খুঁড়ে গর্ত করে ভেতরে লুকিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। বউ তার সবেতে একের৷ তবে পড়ালেখার ক্ষেত্রে ডাব্বাওয়ালী। ফারাজ কোমর থেকে বেল্ট খুলে হাতে প্যাচাতে প্যাচাতে চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, “রাতে কাছে আসতে চাইলে তো খালি বলো পড়া শেষ হয় নি। পড়া বাকি। তো এত পড়েও আমার ইজ্জতের চাটনি বানালে কেন?”
চিত্রা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ফারাজ জানে এই মেয়ে আজ আর মুখ খুলবে না। মেয়ে মানুষের যে কি রোগ খোদা ভালো জানে। কি হয়েছে,কেনো হয়েছে কিছু তো বলবেই না উল্টো নিজেই রাগ করে বসে থাকবে, ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চাটার মতো কেঁদে কেঁদে গঙ্গা,যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ভাসিয়ে দিবে। বিজ্ঞান এখনও খুব পিছিয়ে। ভালো করে গবেষণা করলে দেখা যেত পৃথিবীর ৭ ভাগ যে পানি, ওগুলো কোনো সাধারণ পানি নয়,ওগুলো হচ্ছে মেয়ে মানুষের চোখের জল। মেয়ে মানুষ নিজেও জানে না এই চোখের জল আসছে কোথা থেকে,সে কাঁদছেই বা কেন? কিন্তু কথা ওই একটাই,কাঁদছে কেন জানা লাগবে না,রাগ করল কেন জানা লাগবে না। কেবলই কাঁদতে হবে,রাগ করতে হবে,ঝগড়া করতে হবে। এমন বিচিত্র, অদ্ভুত গুনাগুন যার মধ্যে নেই সে তো নারী হয়, নারী নামের মহা মহীয়সী নারী। ফারাজ পুনরায় চিত্রার দিকে তাকায়। ঘাড় নাড়িয়ে মনের অজান্তে বলে উঠল,” আসতাগফিরুল্লাহ মন আমার বাজে বকছে। ঔইসব গুনাগুন যার মধ্যে নেই সে কি মহীয়সী হওয়ার যোগ্যতা রাখে? নারীদের একটু রাগ,একটু অভিমান না করলে পরিপূর্ণ লাগে না। কেমন জানি ব্যাটা ব্যাটা লাগে।”
ফারাজ চিত্রাকে টেনে নিজের কোলে বসায়। বেল্টটা হাত থেকে খুলে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে। জড়িয়ে ধরে শক্ত করে চিত্রার কোমর। নিজের থুঁতনিটা চিত্রার কাঁধের ওপর রেখে নরম গলায় সুধায়, “একটু তো পড়ালেখা করো গো বিবিজান। তোমার এই নাম্বারের থেকে তো তোমার স্বামীর ইয়ের সাইজ বড়।”
চিত্রা চোখ বড় বড় করে তৎক্ষণাৎ ফারাজের দিকে চাইতেই ফারাজ একটা শুষ্ক ঢোক গিলে বলল,” আসতাগফিরুল্লাহ বউ জুতার সাইজের কথা বলেছি বিশ্বাস করো। বিশ্বাস না হলে চেক করে দেখতে পারো আই মিন আমার জুতার সাইজ।”
জলদি ফারাজ প্রমান দেখানোর জন্য নিজের একটা জুতা এনে চিত্রার সামনে ধরে।
“নে আবুলের নাতনি সাইজ দেখ।”
“কোনটার সাইজ।”
“আবার জিজ্ঞেস করে কোনটার? আরে বলদি জুতার সাইজ। জুতা চিনিস বউ?”
চিত্রা জুতার দিকে তাকায়। আসলেই তার নাম্বারের থেকে বেশি বড় ফারাজের জুতার সাইজ। তবুও সে মনে মনে মুচকি হাসে। চোখ দুটো তরমুজের বিচির মতো সরু করে দাঁত কেলিয়ে বলে, “বাহ্ মানতেই হবে। সাইজ তো হেব্বি। আই মিন আপনার জুতার।”
কক্সবাজারে আজকেই শেষ দিন। তারপর বাড়ি ফিরতে হবে অভ্র-আয়েশাকে। এই এক সপ্তাহ ভালোই কেটেছে। যদিও ভালোবাসার থেকে ঝগড়াই বেশি হয়েছে কিন্তু তাতেই কেমন যেন ভালোবাসার গন্ধ পাওয়া যায়। সন্ধ্যায় হোটেল থেকে বের হওয়ার পর সেই চুলোচুলি হয় অভ্র আর আয়েশার মধ্যে। কিন্তু বউয়ের সঙ্গে বেশিক্ষণ রাগ করে থাকা যাবে না। তাও এই রাতের বেলা। মেয়ে মানুষ বলে কথা পরে যদি রাতে হানিমুন এনজয় করতে না দিয়ে খাট থেকে লাথি মেরে নিচে ফেলে দেয় তাকে?এখনই হার ভাঙ্গা যাবে না। শত হলেও কুদ্দুসকে জন্ম দেওয়া এখনও বাকি। কি করে আয়েশাকে নিজের কাছে আনা যায় ভাবতে ভাবতে আয়েশার সেন্ডেলের ফিতা ব্লেড দিয়ে অনেকটা কেটে ফেলে অভ্র। নিশ্চয়ই নিচে বালুর মধ্যে যখন হাঁটতে যাবে তখন এই সেন্ডেলের ফিতা ছিঁড়ে যাবে তখন তো মেয়েটা বালুর মধ্যে হাঁটতে পারবে না। উপায় না পেয়ে স্বামীর নিকট সাহায্যের জন্য আসতেই অভ্র সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আয়েশাকে পাঁজা কোলে তুলে নিবে। তারপর টুকটুক করে হেঁটে একেবারে রুমে এনে দরজা লাগিয়ে বউয়ের সঙ্গে জম্পেশ হানিমুন করবে। যেই ভাবা সেই কাজ। নিচে নামতে তে না নামতেই আয়েশা মুখ ভেংচি কেটে উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করে। অভ্র তার পেছন পেছন যেতে নিবে তার আগেই সুইমিং কস্টিউম পরা একটা যুবতী মেয়ে তার কাঁধে এসে হাত রেখে বলে,
“আর ইউ সিঙ্গেল?”
অভ্র সেই মেয়েকে দেখেই চমকে উঠে। এই রাতের বেলা এই দামড়ি মেয়ে এইসব কি পড়েছে? আহারে মেয়েটার কি অভাব? একটু টাকা বেশি থাকলে জামার সাইজটা আরেকটু বড় হতো। দেশে এদের জন্য গরিবি ভাতার ব্যবস্থা করা হয় নি কেনো এখনও? মেয়েটি আবারও চুল নাড়িয়ে বলে উঠল,
“হেই বয় বলো না। তুমি কি সিঙ্গেল? চলো একসঙ্গে সাঁতার কাটি।”
“না আপা আমি বিবাহিত। চোখ পেছন থেকে সামনে এনে ওই দেখেন আমার সাঁতার কাটার পার্টনার কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে চলে যাচ্ছে। আমিও গেলাম।”
“ওফস নিউলি ম্যারেড কাপ্পাল? ধ্যাত কিছুদিন আগে এলে হয়তো চান্স পাওয়া যেত।”
“কিছুদিন আগে কেনো তুমি আমার জন্মের দিন আসলেও তোমার মতো দামড়ির প্রতি আমার ইন্টারেস্ট জন্মাতো না।”
“এসব তো মুখের কথা। কত জীবনসঙ্গী দেখলাম জীবনে। বউ রেখে আমাদের মতো হুরপরীদের পেছনে ছুটে। মিস করলা চান্দু। এত ভালোবাসা দেখাচ্ছো না কদিন পর দেখব তুমি বউ ছেড়ে অন্যের পেছনে ছুটছো।”
অভ্র আশেপাশে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করে। মেয়েটি তা দেখে জিজ্ঞেস করে,
“কি খুঁজছ?”
“আপা হুরপরী খুঁজছিলাম। কই পাচ্ছি না তো। ওই তো পেয়েছি। আগে বলবেন না আপনি আমার বারুদের মতো বউটার কথা বলছিলেন।”
মেয়েটির গা জ্বলে উঠে। কিছু বলতে যাবে তার আগেই অভ্র মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
“আর চিন্তা নেই আপা আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে তেলাপোকার মতো। জুতা মারলেও উড়ে সেই বউয়ের কাছেই যাবো।”
বলতে না বলতেই আয়েশা রেগে তার পায়ের সেন্ডেলেটা অভ্রর দিকে ছুড়ে মারে। অভ্র না তাকিয়েই ধরে ফেলে সেই সেন্ডেল। মানুষ দেখলে হয়তো মনে মনে বলবে, ছেলেটা বউয়ের হাতের জুতার বারি খেতে খেতে এখন গুড কেচার হয়ে গিয়েছে।
“এই বেডা তুই এদিকে আসবি? বিশ টাকা তো দিয়া যা। আনারকলি ফল মাখা খামু।”
অভ্র ভেতরে ভেতরে একটা নিশ্বাস ছেড় বলে, “শালী তুমি বিষ চাইতে পারো না?”
“কিরে?”
অভ্র নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। আয়েশার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে, “আসছি ঘরনী।” যাওয়ার আগে আবারও সেই মেয়েটির দিকে অভ্র তাকায় বলে, “দেখলেন তো জুতার বারি খেয়েও বউকে ছাড়ছি না। একেবারে বাংলা সাদা মদের মতো পিউর আমার হৃদয় মোচড়ানো পিরিত।”
মেয়েটি অবাক। আপাতত সে পাথর হয়ে গিয়েছে। এমন ছেলে আজকাল পাওয়া যায়? ওই মেয়ের ভাগ্য আছে বলতে হবে।
অভ্র জুতাটা হাতে নিয়ে আয়েশার কাছে এসে বলে, “ওমা ছেঁড়া জুতা? ঘরনী তোমার পায়ে কাঁদা লেগে যাবে তো। ইশরে জলদি আসো, তোমায় কোলে তুলে নেই।”
“লাগবে না। আমার খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস আছে। তুই আগে বল ওই নেংটি মহিলার সঙ্গে কোন রসের আলাপ করছিলি? ”
“কই?”
“আমাকে কি কানা ভাবিস তুই?”
“আসতাগফিরুল্লাহ কি বলছো?”
“নাটক মাত কারো পিও। তুমি যে একটা ভন্ড তা মুই জানি।”
আয়েশা রেগে আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই সন্ধ্যার স্নিগ্ধ সৈকতের একরাশ মুগ্ধতাকে ডিঙিয়ে অভ্রের অধর থামিয়ে দেয় আয়েশার বুলি। আশেপাশের দৃষ্টির দিকে তার নজর নেই। আয়েশা নিজেরকে ছড়ানোর জন্য ছটফট করতেই অভ্র তাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে। এত শক্তি পুরুষের গায়ে? হুট করে আয়েশা ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে একবার আশপাশে তাকায়। তারপর চেঁচিয়ে বলে উঠে, “কি করছো?”
“নির্লজ্জের মতো তোমায় ভালোবেসেছি, আরো বাসতে চাই।” বলেই এক ঝটকায় আয়েশাকে নিজের বাহুডোরে তুলে নেয় অভ্র। হুট করে লোকটার চোখ-মুখের ভঙ্গিমা কেমন করে বদলে গিয়েছে? এই লোকের হুট করে কি হলো? আয়েশা একটা ঢোক গিলে। মিহি কন্ঠে বলে, “না..মাও বলছি। লোকে দেখছে।”
কে শুনে কার কথা? অভ্রর সেদিকে আপাতত লক্ষ নেই। তার লক্ষ অনেক আগেই গভীরতায় ডুব দিয়েছে। এখন কেবল গন্তব্য একটা জায়গায় থমকে আছে। এখন নিষেধ শোনার নয় বরং বেহায়ার মতো বেপরোয়া প্রেমে নিজেকে বিসর্জন করার সময়।
বাড়িতে আজ চিত্রা আর ফারাজ ছাড়া কেউ নেই। সারা বাড়ির মানুষ আজকে পালোয়ান বাড়িতে গিয়েছে। সবার দাওয়াত ছিল। ফারাজ আর চিত্রারও ছিল কিন্তু ফারাজ নিজেও যায় নি আর চিত্রাকে তো ওই কাইল্লা পাঠার সামনে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া বিলাসিতা। চিত্রার চকলেট লাভা কেক খেতে মন চাইছিল সকাল থেকেই। ফারাজ তা শোনা মাত্র এক মুহুর্ত দেরি করে নি। সোজা কিচেনে গিয়ে কেক বানিয়ে আনে। চিত্রাকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেয় নি ফারাজ। বউ তার রান্নাঘরে গেলে ঘেমে যাবে। গরমে কি অবস্থা হবে? চিত্রা রান্নাঘরের দরজার সামনে অনেকক্ষণ ধরে উঁকি ঝুঁকি মারছে। খাওয়ার লোভ তো আছেই সঙ্গে আছে দুষ্টু সব চিন্তাভাবনা। কেকের এত মারাত্মক গন্ধ! কেক তৈরি হয়ে গেলে কিচেন থেকে ঘেমে একেবার হয়ে বাহিরে আসে ফারাজ। কিন্তু তবুও এই লোককে এত সুন্দর লাগছে। পরনের সাদা শার্টের শরীরের সঙ্গে আছে। সুগঠিত দেহ স্পষ্ট। কি দারুণ তার প্রতিটি শৈলী৷
“আপনাকে মারাত্মক লাগছে কিন্তু। বলতে হবে এলাহী আপনি কিন্তু কড়া একপিস।”
“স্বামীকে টিজ করছো? আমি টিজ শুরু করলে কিন্তু পালিয়েও শেষ রক্ষা হবে না। বাড়িতে কেউ নেই। মাথায় আছে তো? আজ বাঁচা মুশকিল।”
“আজ আর বাঁচতে চাই না। মেরে ফেলুন।”
ফারাজ কেকের একটুকরো চিত্রার মুখে তুলে দিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়। চিত্রার নীল রঙের শাড়ি ভেদ করে ফারাজের হাত চলে যায় অজানা কোথাও। তবে ফারাজ চিত্রাকে ছেড়ে দেয়। চিত্রা আরো ঝাপটে ধরে ফারাজের শার্টের কলার।
“ছাড়বেন না প্লিজ।”
“আরে বেডি ছাড় স্বামীর সর্বনাশ করার জন্য দেখি উঠে পরে লাগছিস। এসব লুচ্চামি কই থেকে শিখেছিস বউ?”
“আমার অতি প্রিয় গরু ফারাজেন্দ্র এলাচপধ্যায় থেকে।”
“ আরেকবার বাজে বকলে কেক দিবো না।”
“এই না সরি।”
“ হয়েছে সাইড দাও। না হলে আজ পুরো দমে সর্বনাশ হবে আমার।”
“খানিকটা সর্বনাশ হওয়া তো দোষের কিছু নেই।”
“আমি আগে গোসলটা করে আসি। তারপর কার হাতে কার কি হয় দেখছি। গোসল না করলে এক মুহুর্ত টিকতে পারব না।”
“ফারাজ কোথাও যাবেন না প্লিজ।”
ফারাজ চিত্রার কপালে হাত ছুঁইয়ে তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখে। কই জ্বর তো আসেনি? নাকি জ্বীনে আম্মায় ধরল বউটাকে? এক মাত্র আপন বউ। এর আবার কিছু হয়ে গেলে তো মুশকিল।
“এই বউ শরীর খারাপ লাগছে?”
“মশকরা করবেন না।”
“সরি।”
“সরি রাখেন আপনার পকেটে আর আপনি আসুন আমার মনের গভীরে।” বলেই ফারাজের হাত থেকে কেকের বাতিটা টেবিলের ওপর রেখে চিত্রা ফারাজকে ডিভানে নিয়ে যায়। ফোন একটা গান ছেড়েছে সে। ❝হো মিল যায়ে ইস তারাহ দো লেহরে জিস তারাহ।
ফির হো না জুডা হা ইহে ওয়াদা রাহা।
তু তু হ্যায় ওহি দিল নে জিসে আপনা কাহা
তু হ্যায় জাহাঁ ম্যাঁ হুঁ বহাঁ
আব তো ইহ জীনা তেরে বিন হ্যায় সাজা❞
চিত্রা ফারাজের হাতে হাত ছুঁইয়ে দেয়। সত্যি যেন দুটো স্রোত এক হয়ে গিয়েছে। সে ফারাজের কণ্ঠমণি ছুঁয়ে নেশালো কন্ঠে বলে উঠল,
“ইদানীং আপনি বড্ড লোভ করছেন এলাহী। আপনি কিন্তু খুব লোভী।”
ফারাজ চিত্রাকে মুহুর্তেই উল্টো দিকে ঘুরিয়ে কোমর জড়িয়ে কানের কাছে হাস্কি গলায় হিসহিসিয়ে বলে,❝হ্যাঁ আমি লোভী। তোমার বুকের উষ্ণতায় জড়ানো এখন শুধু আমার অভ্যাস নয় বরং লোভে পরিনত হয়েছে। এই লোভ কোনো যুক্তি মানে না। শুধু কাছে টানে,বুকে জড়ায়,তীব্র কাঁপুনিতে অতল গভীরে ডুবিয়ে রাখে তোমার মধ্যিখানে আমায়।❞
ফারাজ কোলে তুলে চিত্রাকে ডিভানে শুইয়ে দেয়।
চিত্রা ডিভানে শুইয়ে ফারাজের শার্ট ধরে টান দিতেই ফারাজ তার ওপর ঝুঁকে আসে। ফারাজের চোখ একরাশ নেশা। এই নেশায় সে ভেতর ভেতর মরছে। ফারাজ চিত্রার ঘাড়ে ভালোবাসা বুলিয়ে দিতেই কেঁপে উঠল চিত্রার সর্বাঙ্গ। শরীরে তীব্র একটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল। পরক্ষণেই প্রেমতৃষ্ণা দিগুণ হয়ে জ্বলে উঠল দু’টো অতৃপ্ত মনে। অতৃপ্ত শরীর জুড়ে। ফারাজের হাত চিত্রার মুখের ওপর থেকে এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে গালছুঁয়ে হাত নিচের দিকে ভাসিয়ে দিল। ধ্যাত বড্ড গরম। এসির বাতাসেও কিচ্ছু হচ্ছে না। বেপরোয়া ফারাজ শার্টের পরোয়া করল না। এলোপাতাড়ি টেনেহিঁচড়ে খুলে ফেলল গা থেকে শার্টটা। কোথায় ফেলেছে নিজেও জানে না। জানতেও চায় না। স্ত্রীর মধ্যে নিজেকে সে আত্মসমর্পণ করার আগেই দরজার কলিং বেল এক লহমায় সবটা থমকে দিল। ফারাজের মেজাজটা সেই শব্দে মুহুর্তেই চরম বিগড়ে গেল। বিরক্তির ফলে মুখ থেকে চ জাতীয় শব্দ বেড়িয়ে এলো। সে উঠে বসে বসল। বলল,
“কোন তামাশা এই সময় তামাশা করতে আসছে বাল?”
ফারাজ দরজা খোলার জন্য উঠে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতেই চিত্রা তার হাত ধরে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“আপনি থাকুক আমি দেখছি।”
ফারাজ ঘড়ি দেখে। না তো এত জলদি তো তার ফরটিন জেনারেশনের আসার কথা নয়। তাহলে কে এলো? চিত্রা শাড়ি ঠিক করে ঘোমটা দিয়ে দরজা খুলে দিতেই একটা মেয়েকে দেখতে পায়। কোনো অপ্সরার থেকে কম যায় নয় এই মেয়ে। ঠিক যেন বিদেশি মেমসাহেব। মেয়েটি চিত্রাকে একবার ওপর থেকে নিচ অব্দি পরখ করে। চিত্রা ভ্রু কুঁচকে সুধায়,
“কে আপনি?”
মেয়েটি ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বাংলা বলে। “রোজালিয়া শাউলেট। ভালোবেসে সবাই আমাকে রোজ বলে ডাকে।”
ফারাজ ডিভানে পায়ের ওপর পা তুলে জিজ্ঞেস করে, “বিবিজান কোন ফকিন্নী রোমান্সের টাইমে ভিক্ষা চাইতে এসেছে?”
চিত্রাঙ্গনা পর্ব ৫১
“চিনি না আমি। একটা ম্যামসাহেব এসেছে। আপনি আসুন তো এদিকে।”
“ম্যামসাহেব? নাকি বালসাহেব? কোন গোবরপুড়ী ধবল রুগী আসছে আমার পিরিতের চল্লিশা পড়াতে? বলতে বলে একরাশ বিরক্তিভাব নিয়ে ফারাজ দরজার সামনে দাঁড়াতেই মুহুর্তেই তার চারপাশ থমকে যায়। মুখ থেকে আপনাআপনি বেরিয়ে আসে, “রোজ?”
