প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ১৪

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ১৪
অলকানন্দা ঐন্দ্রি

সুহা নিরবে বসে আছে ছাদের এককোণে৷ হাতে তার বেলিফুলের একটা মালা জড়ানো। যা কিছুটা সময় আগে স্বচ্ছই যত্নসমেত পরিয়ে দিয়েছে তার হাতে। স্বচ্ছ মিনিট দুয়েকের জন্য বাসায় গেল ঠিক তবে তার একটু পরই আবার হাতে দুই মগ কফি নিয়ে ফিরে এল ছাদে। সুহাকে একইভাবে নিরব হয়ে বসে থাকতে দেখে সে পা বাড়িয়ে সুহার কাছে গেল। গলা ঝাড়ল কিঞ্চিৎ যাতে সুহা তার দিকে তাকায়। অথচ সুহা তাকাল না। স্বচ্ছ দীর্ঘশ্বাস ফেলেই তার পাশে বসল। একটা কফির মগ তার হাতে রেখে অন্যটা সুহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

“ কফি সুহাসিনী। ”
সুহা পাশ ফিরে চাইল এবারে। এক হাতে স্বচ্ছর হাত থেকে কফি মগটা নিয়ে নিরবে চুমুক বসাল। এমনভাবে নিল যেন স্বচ্ছর হাতের সাথে তার হাতের এইটুকুও স্পর্শ না ঘটে। এমনকি স্বচ্ছর সাথে একটা বাক্যও ব্যয় করল না সে। স্বচ্ছ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কন্ঠ রোধ হয়ে আসে তার।একপলকে তাকিয়ে থাকে নিজের সামনে বসে থাকা নারীটির দিকে। চুলগুলো এলোমেলো, মুখচোখে ফুলো ভাব। এক দৃষ্টিতে অনেকটা সময় তাকিয়ে থেকেই সে রুদ্ধ স্বরে বলে,
“ আমার শাস্তির মেয়াদকাল কি কখনোই শেষ হবে না সুহাসিনী? আর পারছি না এই দীর্ঘসময়ে শাস্তি মেনে নিতে।আর যে অপেক্ষা করা যায় না। আর সত্যিই সহ্য হয় না এই নিরব সুহাসিনীতকে। ”
সুহা কিঞ্চিৎ ভ্রু বাঁকায়। স্বচ্ছর দিকে ফিরে চেয়ে পুণরায় কফির মগে চুমুক বসানোয় মনোযোগ দেয় সে। শান্ত স্বরে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“সহ্য না হলে মুক্তি দিয়ে দিন। গুড সল্যুশন।”
স্বচ্ছ মুহুর্তেই উত্তর করে,
“ সেটা সম্ভব নয় । ”
সুহা এবারে কাটকাট স্বরে উত্তর দেয়,
“ তাহলে আমার মেয়েকে এনে দিন। ”
স্বচ্ছ এই কয়েকমাসে এই একটা কথাই বারবার বুঝিয়ে আসছে। অথচ সুহ্ মানলে তো? বলল,
“ আমাদের মেয়ে আর পৃথিবীতে নেই সুহাসিনী। ”
কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই সুহা টলমল করা চোখ নিয়ে তাকায়। বলে,
“ কি করে থাকবো? আপনি তো সেদিন আসলেন না তাকে বাঁচাতে। চেষ্টা করলেন না তো একটাবারও৷”
স্বচ্ছ চোখ বুঝে। বুকের ভেতর চিনচিনে এক ব্যাথা জাগে। বলে,
“সুহাসিনী? ”
সুহার চোখ বেয়ে ততক্ষনে পানি গড়িয়ে পড়ে। শুধায়,
“ উহ, আমার বুকে যন্ত্রনা হচ্ছে স্বচ্ছ। কি ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ”
স্বচ্ছ এগিয়ে বসে। সুহার দিকে যেই হাক বাড়িয়ে আগলে নিবে মেয়েটাকে ঠিক সেই মুহুর্তেই সুহা ছিটকে দূরে সরে যায়। শুধায়,

“ উহ, না না! আমায় ধরবেন না স্বচ্ছ। ধরবেন না। আমি চলে যাচ্ছি। চলে যাচ্ছি..”
এইটুকু বলতে বলতেই কাঁদকে কাঁদতে মেয়েটা দ্রুত উঠে বসে। মুহুর্তেই এক দৌড়ে ছুটে যেতে লাগে ছাদ ছেড়ে। স্বচ্ছ সেদিক পানে তাকিয়ে চোখ বুঝে ফেলে। এক হাতে কফির মগটা ছুড়ে ফেলে অদূরে। অতঃপর আকাশের পানে তাকিয়ে তীব্র হতাশা আর আপসোস নিয়ে বলে উঠে,
” আমি তার চোখে এতোটা নিস্পৃহতা, এতোটা ঘৃণা কখনোই দেখতে চাইনি বিধাতা। তবুও কেন? কেন আমার ক্ষেত্রেই তার চোখে এত নিস্পৃহতা দেখতে হচ্ছে? এত ঘৃণা দেখতে হচ্ছে কেন বিধাতা? ”

ছুটির পাশে ভিডিও কলে আরো দুইজন যুবতী এবং একজন যুবক উৎসুক হয়ে আবিরকে দেখছিল। আবির তা দেখে ভ্রু কুঁচকায়।ঠিক তখনই ছুটির পাশে থাকা যুবকটি বেশ গদগদ স্বরে বলে উঠে,
” হেই ব্রো? আ’ম আলভি। ছুটি’স বয়ফ্রেন্ড।”
ছুটি আকস্মিক কথাটা শুনে একবার আলভীর দিকে তাকায়।পরমুহুর্তেই সেও বেশ হেসে হেসে উত্তর করে উঠে,
“ আবির ভাই? মিট মাই বি এফ। আলভি। ”
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ছুটির সাথের সোই পুরুষালি মুখটা আবির ভালো করে পরখ করে দেখে। ছেলেটা সাদা ধবধবে। চুল আর চোখ দেখে আন্দাজ করতে পারে ছেলেটা সে দেশের বাসিন্দা। আবির সুচালো চাহনিতেই তাকিয়ে পরখ করল। পরমুহুর্তেই চাপা হেসে বলল,
“ আমি জেলাস ফিল করছি না ছুটি। তারপর বলুন, ভ্যাকেশনে ট্যাকেশনে দেশে ফিরবেন তো নাকি? আর কবে আপনার দর্শন পেতে পারি? ”
ছুটি মুহুর্তেই উত্তর করল,

“ আপনার কেন মনে হলো আপনাকে জ্বেলাস ফিল করাতে আমি তাকে বি এফ পরিচয় দিচ্ছি? আমরা সত্যিই রিলেশনে আছি মাস তিনেক হলো। বিশ্বাস নাহলে
তার গলায় লাভ বাইট দেখুন? ”
আবির তাকায়। ছেলেটার গলায় সত্যিই লালচে দাগ। পরমুহুর্তেি ছুটির গলায় তাকায় সে। না। ছুটির গলায় তো তেমন কোন দাগ নেই। আবির বিপরীতে বেশ কনফিডেন্স নিয়েই উত্তর করে,
“ একজনের সাথে প্রেমে জড়িয়েছিস অথচ আগ্রহ এখনও আমাতেই? আমি সিগারেট টানছি কেন এই নিয়ে রাগের সীমা নেই ওদিকে বয়ফ্রেন্ডের গলায় লাভবাইট ও? বোকা পেয়েছিস আমায়?”
“ এটাই সত্যি। ”
আবির পাত্তা না দিয়ে বলল,
“ আমি তোর মতো বোকা নই যে যা ইচ্ছে তা ভেবে নিয়ে দূরে সরে যাব৷ ভুল বুঝে নিব এক সেকেন্ডেই ছুটি। ”
ছুটি ত্যাড়াস্বরে জবাব দিল,
“ হু, আমি তো বোকা। তাই বলেই আপনার মতো নির্দয়, স্বার্থপর একটা মানুষকে ভালোবেসেছিলাম। ”
আবির মুখ গোল করে শ্বাস ফেলে এবারে। বলে,

“ আমাকে ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগটা দেওয়া হলো কখন?যদি শুধু নিজে নিজেই সব ভেবে নিয়ে চলে যাওয়া হয় এইক্ষেত্রে আমার কিছু করার ছিল?তবুও তো আমি ফোনে বুঝাতে চেয়েছিলাম এলিজা আমার কেউ না। তুই বিশ্বাস করেছিলি?এই জন্য ভেবেছিলাম সরাসরি সবটা বলল, সরাসরি সব মিটিয়ে নিব। কিন্তু হলো কি? এসে দেখলাম আপনি তার আগেই চলে গেছেন।”
“ আবির ভাই? আমি আর আপনার সম্মুখীন হতে চাই না। আপনি কেন আমার সাথে যোগাযোগ করতে চাইছেন বলুন? আমাকে কি একটুও ভালো থাকতে দিবেন না?”
আবির কিয়ৎক্ষন থম মেরে থাকে। কপালের রগ ফুলে উঠে ছেলেটার। বলে,
“ ভেবে বলছিস এসব? ”
“ হু।”
“ আমি ম’রে গেলে অবশ্য তোকে আর আমার সম্মুখীন হতে হতেও না। কেন যে ম’র’লাম না এখনো বল তো। ম’র’লে তো তোর বড্ড সুবিধা হতো।”
ছুটি তাচ্ছিল্য নিয়ে বলল,

“ ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছেন আবির ভাই?”
আবির হেসে বলে,
” মোটেই না। তোর পাশের জনকে দে, বেচারা গলায় লাভ বাইট নিয়ে অনেকক্ষন যাবৎ তাকিয়ে আছে। ”
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আলভি বলে,
“হেই ব্রাদার। কেমন আছেন?”
আবির হাসে। বলে,
“ প্রথমে যে হারে সালাম দিলেন মনে হচ্ছে ভদ্র ঘরের ছেলে। কিন্তু অন্যের বউরে প্রেমিকা হিসেবে চাইতে লজ্জ্বা করে নাই? ”
ছেলেটা বলতে চেষ্টা করল,
“ ব্রো, আপনি বোধহয়..”
পুরো কথাটা বলা হলো না। তার আগেই আবির ঠোঁট বাকিয়ে বলল,

“ মিথ্যে বলল নাকি ছুটি? আপনি ওর বয়ফ্রন্ড নন?অবশ্য আপনাকে দেখেই এতোটা ভদ্র মনে হচ্ছে যে আমি নিশ্চিত আপনি কোন ছেলের ওয়াইফকে গার্লফ্রেন্ড হিসেবে মেনে নিবেন। তাই না ব্রো? ”
কথাটা বলার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ছুটি উত্তর করল,
“ আপনি যদি বিবাহিত অবস্থায় অন্য একটা মেয়েকে নিজের রুমে থাকার অনুমতি দিতে পারেন সে কেন একটা বিবাহিত মেয়েকে গার্লফ্রেন্ড হিসেবে গ্রহন করতে পারবে না? বলুন।
আবির দাঁতে দাঁত চাপে। এই মেয়েটাকে এত বলেও বুঝানো যায় না। যা নিজে ভেবে নেয় তাই। আবির দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ অবশ্যই পারবে,কিন্তু আবিরের বউকে পারবে না। বুঝলি?”

আবিরের হাতে তখন জ্বলন্ত সিগারেট। দৃষ্টি শূণ্যে। আকাশ তখন অন্ধকার। আবির দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। বুকের ভেতর ভার লাগেে তার। যন্ত্রনা হয়। শূণ্য লাগে। আবির নিকোটিনের ধুসর ধোঁয়া গুলো মুখ দিয়ে উড়িয়ে বলে,
“তোর বোন তাহলে প্রেম ভালোবাসাও চিনতে শিখেছে? ভেরি গুড। ”
ছোটন মনোযোগ দিয়ে দেখছিল আবিরকে। এতক্ষন যাবৎ একটাক ন দেখে যাচ্ছ। অতঃপর বলে,
“আবির ভাই? আপুর সাথে যোগাযোগ করেননি কেন অতো গুলো মাস? আমার তো মনে হয় আপনি সত্যিই আপুকে অনেকটা ভালোবাসেন। তাহলে এত অবহেলা ছিল কেন আবির ভাই? ”
আবির শান্তি দৃষ্টিতে তাকায়। শান্তস্বরে ছোটনের দিকে চেয়ে উত্তর করে,
“হসপিটালাইজড ছিলাম ছোটন। কোমায় ছিলাম। তোর আপুর সাথে যোগাযোগ করতাম কি করে বল? নিজের সে এবিলিটি ছিল তখন? ”
ছোটন বিস্ময় নিয়ে তখন বলে,
“হসপিটালাইজড? ”
আবির হেসে বলে,

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ১৩

“বিশ্বাস হচ্ছে না না? এর জন্যই সব রিপোর্ট হতে সব কাগজপত্র সবই সাথে এনেছিলাম যাতে তোর আপুর সামনে সব হাজির করতে পারি। ”
“আপু তোমায় যথেষ্ট বিশ্বাস করে আবির ভাই। তুমি বলেই দেখতে একবার। ”

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ১৫