আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২৫
ইশিকা ইসলাম ইশা
তীব্র রিদির দু হাত দু হাত গলা থেকে টেনে রিদিকে বুকে জরিয়ে ধরলো!রিদি চিৎকার আর ছোটাছুটি করছে। তীব্র খুব শক্ত করে রিদিকে নিজের সাথে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
রিল্যাক্স!কিছু হয়নি আপনার সাথে!কিছু করিনি আমি!সারারাত শুধু নিজের ভর আপনার উপর ছেড়ে শান্তিতে ঘুমিয়েছি!৮৫ কেজি ওজন নিজের উপর নিতে শিখুন ব্ল্যাক রোজ!!
তার সাথে কিছু হয়নি কথাটা কানে যেতেই রিদি গা ছেড়ে দিল। ডুকরে কেঁদে ওঠল তীব্রর বুকেই মাঝে থেকে। তীব্র তখনো খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।রিদির শক্তি নেই এখন আর ধস্তাধস্তি করার। তবুও নিজেকে ছাড়াতে চাইলে পারল না। কাঁদতে কাঁদতে বলল,
আমাকে ছেড়ে দে! ছাড় বলছি!
উহু!ছাড়ব না! আমার শান্তি লাগছে এভাবে।
রিদি রাগে ঘৃনায় চেঁচিয়ে বলল,
লজ্জা করে না একটা মেয়েকে এভাবে জরিয়ে ধরতে। ছাড় বলছি!শরীরের শক্তি দিয়ে বাহাদুরি দেখাচ্ছিস? কাপুরুষ কোথাকার!
তীব্র কিছুটা রেগে গিয়ে আরো একটু শক্ত করে নিজের ভেতর টেনে এনে বলল,
বেশি কথা আমার পছন্দ হচ্ছে না!আমি বেশি কিছু করলে সেটা আপনার জন্য ভালো হবে না।
মজনুর গলার স্বর হঠাৎই যেন চেনা চেনা লাগলো রিদির।তবে শরীর থেকে সেই চেনা পারফিউম এর ঘ্রাণ টা পেল না।অন্য কোন কড়া পারফিউম এর ঘ্রাণ পেল তবে!তবে এতোক্ষণ মজনুর স্পর্শে আটকে থেকে রিদির শরীর শীতল আবেশে ছেয়ে গেল।হঠাৎ কিছু মনে করে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কে আপনি?
এক কথা কতোবার বলব !!মানুষ!
রিদির মেজাজ খারাপ হল।সে মনে প্রাণে মানে এটা তীব্র হতে পারে না। তীব্র চৌধুরী!যার নামেই নাকি বড় বড় মন্ত্রীরা কাপে সে কখনো ছদ্মবেশে আসবে না।তাও এখানে!কন্ঠস্বর এক মনে হলেও কি?কতো মানুষের কন্ঠস্বর তো এক হয়।সব ভেবে রিদি রেগে বলল,
কাপুরুষ!ছাড় আমাকে!আমি অন্য কারো বিবাহিত বৌ।আমাকে ছাড় বলছি!
তীব্র ছাড়ল না বরং মৃদু হেসে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।রিদির মনে হচ্ছে তার শরীরের বিষ ব্যাথা আরো বেড়ে গেল। শরীরের হাড়গড় ভেঙে গেল এমন লাগছে।এভাবে কেউ ধরে! তীব্র রিদিকে ভালোভাবে বুকে মিশিয়ে নিতে নিতে বলল,
মাছের মতো এভাবে লাফালাফি করছেন কেন?নিহাৎ আমার বুকে আছেন তাই নইলে রাগ আমার কিন্তু ধংস ডেকে আনে।
রিদি কটমট করে বলল,
বালের রাগ!তুই কি ছাড়বি আমাকে! কাপুরুষ!রাতের অন্ধকারে একটা মেয়ে কে তুলে এনে নোংরামি করছিস। তাও বিবাহিত মেয়েকে!
তীব্র এতো কথার পরেও রাগল না।তার রাগ হচ্ছে না।এটার কারন কি?তার বৌ তার বুকে আছে তাই?নাকি অন্য কিছু? তীব্র রিদিকে বার বার বিবাহিত বলায় কিছু একটা ভেবে বলল,
আপনার বর কে? কোনদিন তো দেখলাম না আপনার সাথে!
আমার বর কে সেটা জেনে তুই কি করবি?
আপনাকে তার কাছে থেকে চেয়ে নিব!বলবো আপনাকে ডিভোর্স দিতে তাহলে আপনার আমার মাঝে কোন ঝামেলাই নাই। নাম কি আপনার বরের?
বলব কেন আমি?তুই আমাকে ছাড়!
না বললে ছাড়ছি না!
তীব্র চৌধুরী! তীব্র চৌধুরী তার নাম!শুনেছিস এই নাম!
ওহহহ!!তীব্র চৌধুরী!কি করে সে?
রিদির মেজাজ খারাপ হচ্ছে।রাগে দুঃখে চিৎকার করে বলল,
মাফিয়া, গুন্ডা, গ্যাংস্টার শুনলি!ছাড় আমাকে নয়তো তোকে কেটে এতোটা টুকরো টুকরো করবে যে কেউ তোর লাশ ও জোড়া দিতে পারবে না।
তীব্র মনে মনে হাসল! না জেনে কথাটা বললেও এটাই চরম সত্যি সে মাফিয়া!তবে তার বৌয়ের এমন তেজ তীব্রর ভালো লাগছে!সে তো বৌয়ের এমন তেজি রুপের সাথে পূর্বপরিচিত না তাই আজ পরিচিত হতে চাচ্ছে।
আপনার বর তো আপনার কাছে আসে না।কেন?
সে আসুক আর না আসুক তাতে তোর কি! আল্লাহর দোহাই লাগে আমাকে ছাড়!
থাকুন না এভাবে। আমার আপনাকে বুকে জরিয়ে আরাম লাগছে। শান্তি লাগছে।
তোর শান্তির গুষ্টি কিলাই।বিয়ে করে বৌ কে এভাবে জরিয়ে ধরে রাখ অন্য নারিকে না। আল্লাহ সব দেখছে ছাড় পাবি না। শরীরের ক্ষমতা দিয়ে আমাকে চেপে ধরে আছিস শয়তান কাপুরুষ!
তবে কি মনের ক্ষমতায় ধরে রাখব!
রিদি হতাশার নিঃশ্বাস ফেলল।রাগে দুঃখে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। তীব্র তবুও রিদিকে ছাড়ল না। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
আমার বুকেই আপনার শেষ ঠাই।আপনার ভালো লাগুক বা খারাপ আপনাকে আমার বুকেই থাকতে হবে। স্বেচ্ছায় বা জোর করে আপনাকে আমার বুকেই রাখব আমি!আমার বুকের সাথে লেপ্টে থাকাই আপনার একমাত্র কাজ।কারন এতে আমি ভালো থাকবো। এখন একটু ঘুমান তো প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে সমানে চিৎকার করে কাঁদা শুরু করেছেন!
মজনুর এতো আদিখ্যেতা দেখে রিদির ইচ্ছে করছে এখনি বটি দিয়ে জবাই করতে। পরপুরুষের সাথে এভাবে লেপ্টে আছে এটা তার কাছে মৃত্যুর সমান।সে ব্যথ। নিজেকে হেফাজত করতে সে ব্যথ।মনে মনে বার বার আল্লাহরকে ডেকে চলছে।যেন এই পাপি শয়তান কাপুরুষের ছোয়ায় কলঙ্কিত শরীরের মৃত্যু হোক।
হঠাৎ রিদির শান্ত হয়ে যাওয়াই ভু কুঁচকে গেল তীব্রর। শান্ত রিদির শরীরের তাপমাত্রা গরম হওয়ার চিন্তার ভাজ পড়ল কপালে। ধীরে ধীরে শরীরের ভর ছেড়ে দিচ্ছে রিদি। তীব্র ঝট করে রিদির কপালে হাত রাখতেই বুঝল বেশ জ্বর উঠেছে।নিথর দেহটা তার উপর ভার ছাড়ছে।রিদির শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি নেই। তীব্র রিদিকে কয়েকবার ডাকার পরেও রিদি নিশ্চুপ। তীব্র রিদিকে ছেড়ে বাচ্চাদের মতো করে নিজের কোলে তুলে বসালো।রিদির চোখ তখন গরমে লাল হয়ে আছে।নিভু নিভু চোখে সে দেখল মজনু নামক দাঁড়ি মুচে ঘেরা মুখখানা। তীব্র জ্বরে কাতর হয়ে ঘোরের মধ্যে বলল,
আমাকে বাঁচাবেন না!আমি বাঁচতে চাই না।আমি আম্মুর কাছে যেতে চাই। আম্মুর কাছে অনেক ভালবাসা আছে। আম্মু আমাকে অনেক ভালোবাসবে। ওখানে কেউ আমাকে মারবে না,ভয় দেখাবে না, ঘৃনা করবে না। পরপুরুষের ছোয়া থাকবে না। অপ্রিয় রাক্ষস মশাই কে বলবেন আমি তাকে মাফ করে দিয়েছি।আমার অপ্রিয় রাক্ষস মশাইয়ের মুখে বৌ ডাক শুনতে……..
অতিরিক্ত জ্বরে কাহিল হয়ে ঢলে পড়তেই তীব্র চট করে বুকে জড়িয়ে ধরল। চিৎকার করে ডাকল লাবিব কে।লাবিব বসের গলা পেয়েই ছুটে এলো। তীব্র ততক্ষণে এলোমেলো রিদিকে ঠিক করে তার বুকে আগলে নিয়েছে।রিদি তখন থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে উষ্ণ স্পর্শ পেতেই তীব্রর বুকে মিশে গেল।
বস ভাবি ঠিক আছে?
জ্বর এসেছে!গাড়ি হসপিটালে নিয়ে চল!
জি বস!!
লাবিব গাড়িতে বসে ইশারায় গাডদের ফলো করতে বলে গাড়ি স্টাট দিল। তীব্র চিন্তিত মুখে রিদিকে আকরে ধরেছে।একটু পর পর ঠোঁট ছোয়াচ্ছে উষ্ণ মুখটায়।
লাবীব তীব্রর চিন্তিত মুখখানা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
৭ মিনিট পর হসপিটালে আসতেই ভর্তি করা হয়েছে রিদি কে। মনসুর আলী রিদিকে চেক করে মুচকি হেসে বলল ,
সি ইজ ফাইন!ডোন্ট ওয়ারি!
তীব্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
আই নো!
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২৪
মনসুর আলী তীব্রর মলিন মুখখানা দেখে বলল,
চা নাকি কফি!উপস ব্ল্যাক কফি!
নাথিং…..
তীব্রকে একধ্যানে রিদির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মনসুর আলী হেসে বললেন,
তোমার রেস্ট দরকার।
তীব্রর সোজাসাপ্টা জবাব,
উহু !বৌ দরকার!
মনসুর আলী অবাক হলেন না। মৃদু হেসে বলল,
তোমার দাদি তবে মিথ্যে কিছু বলে নি।
তীব্র কোন উত্তর করল না। চুপচাপ তাকিয়ে রইল রিদির দিকে।রিদির ঘুমন্ত মুখখানা খুব বেশি মনে ধরল। মনসুর আলী রিদির দিকে এভাবে তাকানো দেখে মৃদু হেসে বেরিয়ে গেল।