আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২৯

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২৯
ইশিকা ইসলাম ইশা

তীব্র রুমে ঢুকে দেখে রিদি ঘুমিয়ে আছে।রিদির কাছে গিয়েই তার মেজাজ চটে গেল। তাৎক্ষণিক কল করল রাইমা কে!!
রাইমার সবেই চোখ টা লেগে এসেছে।তখনি তীব্র গতিতে বেজে ওঠে ফোন। তীব্র গতিতে বেজে উঠা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল জ্বলজ্বল করে জ্বলছে “তীবু “নামটি।রাইমা ফোন রিসিভ করতেই ভেসে এলো,
এই!!এই!!বালের ডক্টর হয়েছিস? আমার বৌয়ের শরীর এতো গরম হয়ে আছে কেন?কি বালের ওষুধ দিয়েছিস!
রাইমা হতভম্ব হয়ে বলল,

সকালের আগেই জ্বর ছেড়ে যাবে।ওষুধের ইফেক্ট হতে তো দিবি??
ওষুধের ইফেক্ট হওয়া পর্যন্ত কি আমি জেগে থাকব!ঘুমাবো না নাকি!!
রাইমা অবুঝ গলায় বলল,
জেগে থাকবি কেন?তুই ঘুমা…..
বাল ঘুমা!বৌয়ের শরীর জ্বলন্ত লাভার মতো জ্বলছে আমি ঘুমাবো কোথায়?ওর শরীর জরিয়ে ধরা যাচ্ছে??
রাইমা তীব্রর কথার মানে বুঝতে পেরে ফুস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
ওর জ্বর হয়েছে ভাই!ও…………
তো!তোকে আমি আনলাম কেন?আমার মুখ দেখার জন্য! তোকে এতো খরচ করে আনলাম বৌ কে ঠিক করে দিতে!অথচ আমার বৌয়ের শরীর জ্বলন্ত লাভার ন্যায় জ্বলছে!
শান্ত হ আগে তুই…..

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শান্ত হ মাই ফুট!বৌ কে জরিয়ে ধরতে পারছি যে শান্ত হবো!!তোরা সব আমার শান্তির দুশমন!!আমি শান্তি না পেলে তোদের কে শান্তি পেতে দিব আমি হ্যাঁ!!
এসবের পেছনে কে দায়ী!!
আমি তোকে বলেছি আগে পিছের হিসাব কর!বাল! তাড়াতাড়ি বল কি করব??
তোকে এটা আমাকে বলে দিতে হবে!তুই না……
দেখ বেশি বকে রাগাস না!বল কি করব??
ওর মাথায় জলপট্টি দে!পারলে হাত পা ঠান্ডা পানি দিয়ে মুছিয়ে দিস!
রাইমা কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেল।ফোন কাটতেই রাইমা অবাকের উপর অবাক হয়ে বলল,
এই ছেলে এতটা ডেসপারেট কবে থেকে হলো! মেয়ে দেখলেই তো ঘৃণায় তাকাই না পর্যন্ত আর আজ!! আল্লাহ এই দিনও দেখতে হতো আশা করিনি!
নাফিস কিছুটা হতাশ হয়ে বলল,
আহারে বেচারি মেয়েটা!!তোমার ভয়ানক বন্ধুর ভয়াবহ রোমান্সে বেচারি বেঁচে থাকলেই হলো!!

রাত তখন ১২ টা বাজে,
তীব্র কাঁপা কাঁপা হাতে চোখ খিচে বন্ধ করে রিদির গলা থেকে কিছুটা নিচে অব্দি ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিল।মোছার সাথে সাথে গায়ের কম্বল টেনে দিয়ে অস্থির হয়ে উঠে দাঁড়ালো!বুকের ভেতর ধরফর করছে।শরীর গরম হয়ে আসছে। তীব্র বড়ো বড়ো শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে হাত রাখল রিদির কপালে। কপালে হাত দিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল!শরীরে জ্বর কিছুটা কমেছে। রাইমার কথা মতো আধঘন্টার বেশি সময় নিয়ে জলপট্টি দিয়েছে।
তীব্র তার কথা রেখেছে।সে নিজে শান্তি পাচ্ছিল না তাই রাইমা কেও শান্তিতে ঘুমাতে দেয় নি।একটু পর পর ফোন করে জ্বর কমছে না কেন?বলে বলে বকাবকি করেছে!
রাইমা বার বার বলছে জলপট্টি দিতে। অধৈয্য তীব্র রিদির শরীরের তাপমাত্রা না কমাই রেগে গিয়েছে বেশ কয়েকবার।তপ্ত মেজাজে রাইমা কে হুমকি ধামকি দিতেও পিছুপা হয়নি। শেষ রাইমা রিদির শরীর মুছিয়ে দিতে বলেছে।

তীব্র তাই করেছে।হাত পা মুছিয়ে দিলেও রিদির শরীর থেকে ওরনা সরাতেই রিদির মৃদু কম্পিত শরীর তাকে অস্থির করে তুলেছে! পুরুষালী সত্তা জেগে উঠছে। রক্ত গরম করে তুলেছে।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এসেছে। তীব্রর সাহস হয়নি এই নারীকে ছোঁয়ার।কোনমতে গলা টুকু মুছে সরে এসেছে।
আল্লাহর অসীম রহমতে রিদির শরীর কিছুটা শীতল হয়েছে। তীব্র একটা চেয়ার টেনে বসে আছে রিদির পাশে।জ্বরে ফ্যাকাশে মুখখানার দিকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে আছে। বিশেষ কোন সৌন্দর্য আছে কি?? তবুও তার কাছেই এতো সুন্দর লাগে কেন? তীব্র আনমনেই গেয়ে উঠল,
“কবির লেখা যত কবিতা,
শিল্পীর আঁকা যত ছবি
তোমার তুমির কাছে ,হার মেনে যাই যেন সবি….
তুমি সাগর নিলীমা নও,
মেঘের বরসা নও,
নও কোন পাহাড়ি ঝরনা,
আইনা…
তুমি এই মনের আইনা…..”
(কেউ আবার ভাবিয়েন না আমি ভুল গান লিখেছি।তীব্রর মতো আমিও একটু তেরামি করে লিখেছি।আমি যা লিখেছি সেটাই ঠিক! শোনাবো নি এক সময় 🤗)

চারদিকে তখন ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। তীব্র চারদিকে একবার তাকিয়ে।বুকের সাথে লেপ্টে ঘুমিয়ে থাকা ছোট্ট বিড়ালছানার দিকে তাকালো।সারারাত তাকে অশান্তিতে রেখে নিজে শান্তিতে ঘুমিয়েছে।রিদির জ্বর ছেড়েছে অনেক আগেই। জ্বর ছাড়ার পর ঘেমে একাকার হয়ে যাওয়া রিদিকে খুব যত্ন করে ঘাম মুছিয়ে দিয়েছে!রিদিও আরাম পেয়ে তীব্রর বুকে চেপে চেপে নিজের জায়গা করে ঘুমিয়েছে।
তীব্র অনেকক্ষণ পর রিদিকে ছেড়ে বিছানা ছাড়ল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বৌয়ের দিকে আর না তাকিয়ে সোজা দরজা খুলে বেরিয়ে এলো।এই এক রোগ হয়েছে তার বৌ কাছে থাকলে সব ভুলতে বসে সে।তাই আর তাকালো না। সারারাত দেখেও এই মন কে ভরাতে পারল না।হাহ…..

তীব্র দোতলার সিঁড়ি বেয়ে নিচে আসতেই কেউ তীব্রর হাত টেনে ধরল!!তীব্র পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখল লতিফা বেগম!! তীব্র ঘুরে দাড়াতেই ওনি চিন্তিত মুখে বলল,
এহন কেমন আছে আমি নাতনি ডা!
জ্বর কমেছে ।নাউ সি ইজ ওকে!
আচ্ছা হুনো!!তুমি পিছনের চিপা দরজা দিয়া বাইরে যাও।রওনাফ উঠছে!ওজু করবার গেছে!যাও যাও….
তীব্র মুচকি হেসে দুকদম হেঁটে আবার ফিরে আসে। তীব্র কে আসতে দেখে লতিফা বেগম চিন্তিত মুখে বলল,
কি হয়ছে???
তীব্র কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
থ্যাংকস!আমাকে বিশ্বাস করার জন্য!
লতিফা বেগম হেসে বলল,
বয়স তো কম হইলো না জামাই!এই লতিফা মানুষ চিনবার ভুল করে না!এহন যাও যাও রওনা আবার আইসা পড়ব!

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২৭+২৮

তীব্র যদিও এসবে ভয় করে না আর না কারো পরোয়া করে। শুধু ঐ একটা বৌ বর্তমানে পরোয়া লিস্টে আছে।তাই না চাইতেও করতে হচ্ছে। তীব্র পেছনে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল।লতিফা বেগম মুগ্ধতায় হাসল!তার চোখ চিকচিক করছে পানিতে!অভাগা নাতনিডা এবার হয়তো ভালা থাকবে!

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৩০