আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৩১

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৩১
ইশিকা ইসলাম ইশা

চারদিকে তখন ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে কেবল।রিদি টিপটিপ পায়ে হেঁটে পৌছাল বাগানে অবস্থিত ছোট্ট কুটিরে। যে কুটিরে বর্তমানে থাকছে মজনু মিয়া।অনেক রাতে তাকে গেটের বাইরে বেরিয়ে যেতে দেখেছে রিদিতা।তাই সুযোগ পেয়ে তল্লাশি করতে এসেছে। আপাতত তার জানা দরকার কে এই মজনু মিয়া। এখানে কি করতে এসেছে?,আর তা কাছেই বা কি চায়?

কাল সারাদিন অধিক ঘুমের ফলে রাতে আর ঘুম আসছিল না। তাছাড়া হুট করে খিদে টাও যেন বেরে গেছে।তাই ধীর পায়ে নিচে নেমে রান্না ঘরে গিয়ে ঝাল ঝাল চাওমিন রান্না করে কিচেনে বসেই খেতে লাগল। হঠাৎ হালকা কিছুর আওয়াজ শুনে আশেপাশে তাকিয়ে ভয়ে জরসর হয়ে গেল। ছোট্ট থেকে দাদির কাছে জ্বীন ভুতের গল্প শুনে ভয় পেত রিদি।এমন ঠান্ডা পরিবেশে এমন শব্দ রিদিকে ভয় পেতে বাধ্য করল।ভয়ে খাওয়া বাদ দিয়ে আয়াতুল কুরসি পড়তে লাগলো। কয়েকবার পড়ে বুকে ফু দিয়ে একটু সাহস করে বাইরে বের হতেই ডায়নিং এর জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।এখানে থেকে বাগানের কুটির টা বেশ বোঝা যায়। আবছা আলোয় দেখল দুইটা মানুষের অবয়ব।রিদি সন্দেহ নিয়ে জানালার কাছে গিয়ে দাড়াতেই দেখল দুইজন মানুষ চলে যাচ্ছে।রিদির হুট করেই মনে হল মজনু হয়তো কোন গুপ্তচর। কিন্তু এটা কিভাবে বুঝবে তাই প্ল্যান করল মজনুর রুমের তল্লাশি করার।আর যেই ভাবা সেই কাজ।তাইতো ভোরেই চলে এসেছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাতে বৃষ্টি হওয়াই আবহাওয়া ঠান্ডা।সবাই ঘুমে মগ্ন।রিদি চুপচাপ ছোট্ট কুটিরের সামনে গিয়ে দাড়ালো। দরজায় ঝুলছে একটা তালা।রিদি মাথার চিকন ক্লিপ খুলে তালার ফুটায় ঢুকিয়ে মোচর দিল।সাথে সাথেই তালা খুলে গেল।রিদি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল সে ভাবে নি এই ট্রিক কাজে লাগবে!তবে মনে মনে খুশি হলো।ছিকল টেনে রুমে ঢুকতেই মেঝেতে রক্তের ছিটা দেখে ভয়ে হাত পা কাঁপতে শুরু করল।সে ভাবেও নি ঘরে রক্ত থাকতে পারে।রিদি কোনমতে দেয়াল ধরে দাঁড়ালো। রক্ত দেখে মাথা ঘুরছে তার।একবার ভাবল চলে যাবে কিন্তু পরক্ষণেই আবার নিজেকে শান্ত করে চোখ বুলালো ঘরের প্রতিটি কোনায়।

ছোট্ট কুটিরে একটি চৌকি রাখা। চৌকির পাশে একটা টেবিল টেবিলের উপরে ঝুলানো একটা কাপড় রাখার দড়ি।ব্যাস আর কিছুই নেই এখানে।রিদি হতাশ হয়ে সবটা দেখল। হঠাৎ ই চোখ গেল চৌকির নিচে কিছু পড়ে আছে।রাদি হাত বাড়িয়ে জিনিসটা বের করতেই রিদির চোখ বড়বড় হয়ে গেল।ধপ করে বসে পড়ল বিছনায়।কারন তার হাতে তীব্র উরফে মজনুর দাঁড়ি মুচ!রিদির জান ধক করে উঠল।তার মানে মজনু মিয়া নামক মানুষটি কোন ছদ্মবেশে এখানে এসেছে।রিদির শরীর ভয়ে আবারো কাঁপতে লাগল।শরীরে মনে হচ্ছে শক্তি শেষ। তবুও রিদি থেমে না থেকে টেবিলের ড্রয়ার খুলে দেখল। সেখানে তেমন কিছুই পেল না।রিদি এবার সোজা এগিয়ে গেল বিছানার দিকে।বিছনার তোশক চেরে দেখতেই চোখ গেল একটা খামের দিকে।রিদি যেই না খামটা তুলতে যাবে ওমনি পাশ থেকে কেউ রিদির হাত ধরে টান দিল।রিদি ভয় পেয়ে চমকে উঠলো। মূহুর্তের মধ্যেই একটা শক্ত পোক্ত বুকে ঠাই হলো তার।
কি করছেন এখানে ব্ল্যাক রোজ??

রিদি কেঁপে উঠলো।ভয়ে ভয়ে মুখটা তুলে দেখল মজনু মিয়া কে।দাড়ি মুচে ঢাকা মুখখানা দেখে অবাক হল।সে তো দাড়ি মুচ দেখেছিল নিচে পড়ে থাকতে!তাহলে!!!
রিদিকে ভয়ে এভাবে বিড়াল ছানার মতো গুটিয়ে যেতে দেখে মজনু বলল,
বলুন তো এখানে কি করছেন??আমার জাসুসি করছেন নাকি ব্ল্যাক রোজ!!
রিদি ভয়কে জয় করার মতোই সাহস দেখিয়ে বলল,
হ্যাঁ করছি! ছাড়ুন আমাকে অসভ্য পুরুষ!!সব সময় এভাবে চেপে ধরা কোন ধরনের অসভ্যতা!!
তীব্র মুচকি হেসে বলল,
এটা এক ধরণের মাদকতা জান! তুলতুলে নরম শরীর জড়িয়ে ধরলে ভালো লাগে! আচ্ছা!! আপনি এতো তুলতুলে নরম কেন? শুধু ভর ছাড়তেই জ্বর বাঁধিয়ে ফেলেছেন। বিস্তারিত কিছু করলে কি করবেন?
রিদি আহাম্মক এর মতো মজনুর কথা শুনে গেল। বিস্তারিত বলতে কি বুঝাচ্ছে তা এখনো মাথায় ঢুকে নি রিদির।তাই জানতে চেয়ে প্রশ্ন করল,

বিস্তারিত মানে???
তীব্র রিদির এমন অবুঝ দৃষ্টি দেখে ফিক করে হেসে উঠলো,
বিস্তারিতর সট ফরম বাসর!!
রিদির চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।রেগে ধস্তাধস্তি করতেই তীব্র ভালোভাবে বুকে মিশিয়ে ধরল।রিদি রেগে বলল,
ছদ্মবেশী কাপুরুষ!ছাড়!!
রিদিকে রাগতে দেখে তীব্র আবারো হাসল,
উহু!নিজেই যখন এসেছেন তখন আর ছাড়ছি না। এসেছেন আপনার ইচ্ছায় যাবেন আমার ইচ্ছায়।
রিদি তাচ্ছিল্য করে বলল,
দাড়ি মুচ নকল!আপনি মানুষটাও হয়তো নকল তাই না!
তীব্র স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
হতেও পারি!!হতেই পারি কি?আসলে আমি নকল!!
রিদি মজনুর এমন সিকারক্তি শুনে বলল,
তবে আসলে কে আপনি?
মজনু রিদির মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
গুনাহগার আমি!!
রিদি রাগে চোখ মুখ খিচে বলল,
উদ্দেশ্য কি আপনার??
মজনু হাতের বাঁধন কিছুটা হালকা করে হাসল।রিদির রাগী রাগী মুখে পড়া চুলগুলো ফু দিয়ে সরিয়ে মিষ্টি হেসে গেয়ে উঠল,

Kiya jana tu mara irada…
La jauanga sasa churaka….
Dil kaharaha gunagar banja….
Bara chan hai iss gunahoka aga….
এইটুকু গেয়েই থেমে গেল মজনু।রিদি এতো সুন্দর গানের গলা শুনে অবাক হয়ে তাকালো।আর গান!!গানের মানে??মজনু কি বলতে চাইল!!
রিদির ভাবনার মাঝেই তীব্র রিদিকে ছেড়ে গিয়ে বিছানার মাঝে রাখা খামটি সরিয়ে ফেলল। টেবিল হেলান দিয়ে বুকে দু হাত ভাজ করে দাড়ালো।
রিদি কিছু বলার উদ্দেশ্য মুখ খুলতেই নজর গেল তীব্রর হাতের দিকে! সেখানে সাদা ব্যান্ডেজ করা।মানে মেঝেতে পড়া ফোঁটা ফোঁটা রক্ত মজনুর! কিন্তু কি হয়েছে?রিদি কিছুটা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

কাকে আবার মেরেছেন?
তীব্র ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
অনেক দিন কাউকে মারা হয়নি!!
রিদি অবাক হয়ে বলল,
মিথ্যাবাদী!আমার সামনে সেদিন…….
তীব্র শ্বাস টেনে বলল,
ওটা!! এমন বিশেষ কিছু না!
রিদিতা আর কতোই বা অবাক হবে তাই এবার রাগী গলায় বলল,
মানুষ মারতে খুব ভালো লাগে বুঝি!নিরিহ মানুষের জীবন নিতে এতটুকু ও কষ্ট লাগে না তাই না! পাষাণ আপনি!!
তীব্র হেসে বলল,
পাষাণ কথাটাও কম হয়ে যাবে ব্ল্যাক রোজ! আমাকে পাষাণের সর্দার বলতে পারেন!তবে এই পাষাণ বিষয়টি শুধু আপনার ক্ষেত্রেই কার্যকর হয় না।
মজনুর কথায় রিদি কিছু না বলে সেদিনের কথা টেনে বলে,
কেন মেরেছেন সেদিন লোকটাকে আর লোকটা কে ছিল!!
বিশেষ কেউ না!আপনার দিকে বাড়ানো একটা হাত ছিল ব্যস!!!
আমার দিকে মানে!!
মজনু উওর করল না একটু থেমে বলল,
আপনার বাপ ও দেখছি ধান্দাবাজ লোক একটা! আমাকে মারতে লোক পাঠায়!
হাহ……

জটিল একটা ক্যালকুলেশন বুঝলেন।আমি আপনাকে বাঁচাতে চাই আর আপনারা বাপ বেটি আমারে মারতে চান!
রিদি ভু কুঁচকে তাকাল মজনুর দিকে,
আব্বু আপনাকে কেন মারতে চাইবে??
চাইবে না চাইছে!এই যে রক্ত তারই প্রমাণ!
আমি বিশ্বাস করি না আপনাকে!
নিজের মেয়েকে মারতে যার বাঁধে না সে আমাকে কেনই বা ছাড় দিবে! এখন তার সবচেয়ে প্রিয় শত্রু তো মজনু মিয়া!

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৩০

রিদির বুক ভার হয়ে এলো।সে জানে রুপেস মির্জা নিজের স্বার্থে তাকে আঘাত করতেও ভাববে না। তবুও বাবা তো!কোন বাবা সত্যি কি এতো স্বার্থপর হয়!!
রিদির ভাবনার মাঝেই তীব্র তুরি মেরে বলল,
কোথায় হারালেন??
রিদি তাকালো তীব্রর হাতের দিকে আনমনেই মুখ থেকে বের হল,
অনেকটা কেটেছে কি??

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৩২