আপনাতেই আমি পর্ব ১৪

আপনাতেই আমি পর্ব ১৪
ইশিকা ইসলাম ইশা

পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে যায় রিদির। একটু নড়তে চেয়েও বুঝল সে নড়তে পারছে না।ঘুমের মাঝেই ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে।এটা নতুন কিছু না ভেবে ধীরে ধীরে চোখ খুলে রিদি।চোখ খুলতেই নজরে আসে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখা ব্যাক্তিটিকে।গায়ে কম্বল জরিয়ে রিদির গলায় মুখ গুঁজে শুয়ে আছে।অধেক শরীর রিদির উপর।রিদি মাথাটা নিচু করে মজনুর সিল্কি চুলে হাত বুলিয়ে দেয়।এভাবে জরিয়ে ধরাই নড়াচড়া করতেও পারছে না সে।৭০-৮০ কেজির একজন বলিষ্ঠ পুরুষ তাকে পৃষ্ঠে আছে ভেবেই আবারো নিঃশ্বাস ছাড়ল রিদি।ধীর আওয়াজে ডাকল কয়েকবার কিন্তু মজনু শুনল না।এবার রাগ করে ঠেলে সরাতে চাইলেও পারল না। বিরক্ত হল রিদি।
এই যে শুনছেনননননননন??????? উঠুননননননননন!!!

এভাবে চেঁচামেচি করাতে বিরক্ত হল মজনু।মুখ উঁচিয়ে চাইল রিদির দিকে।রিদি অসহায় ফেস করে রাখল। মজনু ঘুম ঘুম চোখে রিদিকে দেখে ঠোঁট ছোয়াল কপালে।একটু সরে গিয়ে বিছানায় ঘুমালো মজনু।রিদি ছটপট উঠে দাঁড়ালো।হাত খোপা করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে নিচে নেমে আসে।কাল বাইরে সুন্দর একটা বাগান দেখেছে অনেক রকমের ফুলের গাছ ছিল সেই বাগানে।রিদি খুশি মনে বাইরে আসল।বাইরে ফুলের গাছের দিকে এগুতেই থতমত খেয়ে গেল রিদি সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখল কালো সুটবুট পড়া কতো গুলো লোক দাঁড়িয়ে আছে।হাতে বন্দুক।রিদি ভয়ে জমে গেল সেখানে।মনে হাজারো ভাবনা চিন্তা করে অবশেষে ধীর পায়ে আবারো ফিরে গেল।রুমের কাছে আসতেই রিদি দৌড় দিল।ভয়ে কাপছে বুক।নিশ্চয় এই লোক গুলা ভালো না। মজনু কে বিছানায় না দেখে আত্বা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো।খারাপ চিন্তা ধরল যেন ঘিরে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

জোরে আওয়াজ ও করছে না।দরজা খোলার শব্দ পেয়ে রিদি দেখল মজনু ওয়াসরুম থেকে বের হচ্ছে।রিদি একছুটে জরিয়ে ধরলো মজনুকে।মজনুকে তাল সামলাতে না পেরে পিঠ গিয়ে ঠেকল দেওয়ালে। মজনু হতবাক হয়ে গেল।কি হয়েছে জানতে চাইলেও পারল না।মুখে কথা বলতে পারবে না সে।তবে মনে হচ্ছে রিদি ভয় পেয়েছে। পরক্ষনেই মাথায় আসতেই মজনুর রাগ হয় নিজের ওপর।সে কেন কাল বুঝিয়ে বলেনি।ধুররর বাললল!!ইসস রে বৌ তার ভীষণ ভয় পেয়েছে।
মজনু রিদিকে নিয়ে বিছনায় বসাল।ঝটপট খাতায় লিখে এগিয়ে দিল রিদিকে,
আপনি কি গাড দেখে ভয় পেয়েছেন বেগমজান??
রিদি ঝটপট মাথা নাড়ায়!!
মজনু আবারো লিখে,

আসলে ওরা এই বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড।আমরা থাকব ভেতরে ওরা বাইরে পাহাড়া দিবে।সরি কাল আপনাকে বলতে খেয়াল ছিল না।
রিদি রেগে তাকালো মজনুর দিকে,
আপনার এসব আমার একদম ভালো লাগছে না!!আমরা এমন কি যার জন্য এতো গাড রাখতে হবে??
মজনু ভেবে লিখল,
রাগ করেন না প্লিজ….
এটা আমাদের জন্য না ওরা বাড়ি পাহাড়া দিবে।এতো বড় বাড়ি এতো দামি জিনিস তাই!!
রিদি কিছু একটা ভেবে শান্ত হল।তবে সে তো ভীষণ ভয় পেয়েছিল।বাপরে মনে হচ্ছিল যেন চৌধুরী বাড়িতে এসেছে।চারদিকে গাড আর গাড। মজনুর উপর ও সকাল সকাল ক্ষিপ্ত হল।সাজা হিসেবে সে দুদিন রিদিকে ছাড়া ঘুমাবে। কিন্তু মজনু মানতে নারাজ।
বৌয়ের পিছু পিছু ঘুরছে মজনু।কারন একটাই বৌ ছাড়া তার ঘুম হয় না(হু ডং🤧)। রিদির পিছে পিছে ঘুরলেও রিদি পাওা দিচ্ছে না। কিন্তু মজনু ও কম না লেগেই আছে আঠার মতো।এক সময় রিদি বাধ্য হয়ে মেনে যায়।রিদি মনে মনে ভাবে জেদি পোলা হু।

বাগানে গিয়ে ফুলের গাছ দেখে রিদির মন ভালো হয়ে যায়। ফুলগুলো ছুয়ে ছুয়ে দেখছে তখনি মজনু এসে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে।রিদি প্রথমে ভয় পেলেও শান্ত থাকল কিন্তু ঠিক দুমিনিটের মাথায় ঝট করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল গাড তাকিয়ে আছে কিনা।না ভ্যাগিস এদিকে দেখছে না। মজনু বৌয়ের মনোভব বুঝে হাসল।এগিয়ে আসতে চাইলে রিদি হাত ✋ দিয়ে থামিয়ে দিল।
অসভ্য পুরুষ হু…..
রিদি কথাটা বলেই স্তব্ধ হয়ে গেল।আর মজনু মিয়া অসভ্য পুরুষ না। অসভ্য তো ঐ…..
কেন ভাবছিস তুই ঐ নষ্টা পুরুষের কথা।ছি……
মজনু ততক্ষনে খাতা লেখা এগিয়ে দিল,
বৌয়ের কাছে সব বর রাই অসভ্য আমার জান, আমার বেগমজান।
রিদি হেসে দিল,

হয়েছে রোমান্স।আগে বলুন এখানে কি কাজ করবেন আপনি???
মজনু খাতায় লিখতে লাগল,আগে থেকেই কথা সাজানো আছে তার,
বাড়ির মালিকের অনেক বড় ব্যবসা আছে। সেখানে অফিস কেরানির জব এর ব্যবস্থা হয়েছে।
সত্যি!!!
মজনু মুচকি হেসে তাকালো রিদির দিকে,
মেয়েটা অল্পতেই কতো খুশি হয়ে যায় ভেবে মনে মনে হাসল।জানের জান যে ,একদম কলিজা। মজনু নিজের ভাবনায় নিজের অবাক হল।বৌয়ের সঙ্গ তাকে এসব বললতেও বাধ্য করছে।হায়রে…

দুদিন বেশ কাটলো রিদির। সকালে ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে নেই রিদি।লং কামিজ পড়ে হিজাব বেধে নেয়,রেডি হয়ে গেছে। মজনু রিদিকে এই রুপে দেখে মুগ্ধ হল।যদিও মজনুই এভাবে পড়তে বলেছে।শহরে একটু সভ্যর মতো চলাই লাগে।যদিও জরুরি না রিদির জন্য। কিন্তু সে চায় না রিদিকে দেখে কেউ মজা নিক সে তো আর তীব্র না এখন।
রিদি মজনু কে ধাক্কা দিয়ে বলে,
কি হল কি দেখছেন??ভালো লাগছে না!!
মজনু হাতের ইশারায় দেখালো পারফেক্ট।সামনে থেকে রিকশা নিয়ে তাতে বসল দুইজন। মজনু এক হাত দিয়ে রিদিকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো।রিকশা এসে থামল বিশাল বিল্ডিং এর নিচে।রিদি অবাক হল।এখানে কোথাও তো লিখা নাই DMC। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই নজর যায় কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রিদের দিকে।রিদ!! রিদ এখানে কি করছে?

মজনু সাহেব রিদ ভাই এখানে কেন??
মজনু কিছু না বলে রিদের দিকে এগিয়ে যায়।রিদি ও মজনুর পিছু পিছু এগিয়ে যায়।রিদি চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছে রিদ আর মজনু কে!!কেউ কিছু বলছে না দেখে বিরক্ত হয়েই বলে,
কি সমস্যা?এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আপনারা একে অপরের দিকে??আর কিছু বলছেন নাই বা কেন??আমরা এখানে কেন এসেছি?এটা তো ঢাকা মেডিকেল কলেজ না !তাহলে????
রিদ আমতা আমতা করে বলল,
আসলে রিদি তোর DMC তে চান্স হয় নি!
রিদি হতবাক হয়ে তাকালো রিদের দিকে।রিদ মজনুর বলা কথাগুলো সাজিয়ে নিল মনে মনে।
দেখ রিদি সবার তো আর সেখানে চান্স হয় না।তাছারা তুই তোর মতো চেষ্টা করেছিস তো।না হলে সেটা ভাগ্য।শোন রিদি এটা নামকরা প্রাইভেট হসপিটাল।এখানে তোকে ভর্তি করানো হয়েছে।
রিদি একবার রিদ তো একবার মজনুর দিকে তাকায়। তাকে নিয়ে এতো কিছু করেছে আর সে জানেই না।
এতো টাকা কোথায় পেলেন??
রিদ আমতা আমতা করে বলে,
তুই এতো চিন্তা করিস না।সেটার ব্যবস্থা হয়েছে।
রিদি মজনুর দিকে তাকিয়ে বলে,
সেটা কিভাবে??

রিদ মজনুর দিকে তাকিয়ে আবার রিদির দিকে তাকিয়ে বলে ,
মজনু ওর কেনা জমিটা বিক্রি করে দিয়েছে।
রিদি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল মজনুর দিকে।
মজনু রিদির তাকানো দেখে রিদির দিকে একটা কাগজের টুকরা বাড়িয়ে দেয়। রিদি নিয়ে পড়ে,
আমি দুঃখিত বেগম সাহেবা।আপনাকে আগে বলিনি।আগে বললে আপনি কখনো রাজি হতেন না।আমি আপনার স্বপ্নকে নিজের স্বপ্ন মনে করেছি।নিজের স্বপ্ন পূরন করতে তো মানুষ সব করতে পারে।আমিও তাই করেছি।এখন আপনি রাজি না হলে….
তবুও আমি কিছু বলব না আপনার ইচ্ছে আমার কাছে প্রথম ও প্রাধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।তবে শুধু বলব আপনি কিন্তু বলেছিলেন,””লড়াই শেষ পর্যন্ত লড়তে হয়।””

রিদির মনোভব কি তা জানার আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে মজনু রিদির দিকে।যদিও সে ইমোশনাল কথা কিছুটা হলেও লিখেছে।রিদিকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মজনু ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে রিদির হাত ধরে। রিদিকে নিয়ে বাইরের দিকে হাঁটতে থাকে।রিদি কিছুদূর হেটে দাঁড়িয়ে যায়।
আমি পড়বো!!এখানেই পড়ব!!করব আপনার স্বপ্ন পূরন। মজনু বাঁকা হাসল।সে বৌ কে মানাতে পেরেছে।মজনুর ব্যাপারে বৌ তার দূবল জানে সে।তাইতো একটু নিজের সাথে জরিয়ে লিখেছে।রিদ খুশি হয়ে যায়। খুশিতে গদগদ হয়ে জরিয়ে ধরে দুইজনকে।রিদি মজনু হেসে দেয় রিদের কান্ডে।
সব ফরমালেটি পূরন করে রিদি, মজনু আর রিদ বাইরে আসে।কাল থেকে প্রথম ক্লাস শুরু।রিদি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল হসপিটালের নাম। নূরজাহান মেডিকেল কলেজ হসপিটাল (নামটা কাল্পনিক)।নাম ডাক অবশ্য শুনেছে সে এই হসপিটালের।

বাসায় ফিরে এসে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে রিদি। মজনু উরফে তীব্র সিক্রেট রুমে বসে আছে। মিটিং এ ব্যাস্ত সে। ফাঁকে ফাঁকে চোখ বুলাচ্ছে ল্যাপটপের স্কিন এর দিকে।বৌ ঘুমিয়ে আছে।তীব্র ঘড়ি দেখল সময় তখন বিকেল ৫টা।রিদির ঘুম ভাংবে একটু পরেই।তীব্র তাকিয়ে দেখল স্কিন এ।জুম করে রিদির ঘুমন্ত মুখটা দেখল।কি জাদু করেছেন মায়াবতী আপনাকে ছাড়া একদন্ড থাকতে কষ্ট হচ্ছে।লাবিব বসের দিকে একবার তাকিয়ে আবার তাকালো বিদেশি ক্লাইন্ট এর দিকে।যা ল্যাপটপ এ দৃশ্যমান।বসের হাবভাব লক্ষ্য করছে লাবিব
বস তার মিটিং এর থেকে বার বার সিসিটিভি স্কিনে তাকাচ্ছে।ভালবাসা দেখি ভয়ংকর সুন্দর।না হলে তার বসের মতো কেউ এতো পাগল হয়!

তীব্র রিদিকে নড়চর করতে দেখে মিটিং রেখে উঠে দাঁড়ালো।লাবিব ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বাকি টুকু শেষ করল। আজকাল বসের অধেক করা মিটিং এর কাজ তাকেই করতে হয়।রিদির ঘুম ভাঙ্গে তখন ৫টা বেজে ২০মিনিট।তীব্র মজনু বেশ ধারন করে সিক্রেট রুম থেকে বেরিয়ে আসে।গাডদের ইশারায় কাজ করতে বলে রুমের দিকে যাই।রিদি তখন আড়মোড়া ভেঙে আবারো শুয়ে থেকে উঠে এসে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গাছের চারাগুলো দেখছিল।ঠিক তখনই মজনু পেছনে থেকে জরিয়ে ধরে।রিদি চমকে উঠে।মজনুকে দেখে কটমট করে করে বলে,
এভাবে ভয় দেখিয়ে মেরে ফেলবেন নাকি??

মজনু আরো একটু চেপে ধরল রিদিকে।রিদির আর চারা দেখা হলো না। মজনুর বুকে পড়ে রইলো সেভাবে। তীব্র রিদিকে জরিয়ে ধরে শান্তির নিশ্বাস ফেলে। এই ছোট্ট মেয়েটা তার এতো আপন হয়ে যাবে ভাবেনি কখনো।এতোটা জরিয়ে আছে নিজের অস্তিত্ব জুড়ে একবিন্দু ও আলাদা করলে মনে হয় ক্ষতবিক্ষত হবে ভেতরে।
বেশ কিছুক্ষণ পর রিদিকে ছেড়ে রিদির কপালে অধর ছোয়াল। চারদিকে তখন আকাশ মেঘলা।হয়তো বৃষ্টি হবে।বাতাস বইছে। মজনুর ভালবাসাময় স্পর্শে শিহরিত হল রিদি।নিজের ভর ছেড়ে লেপ্টে থাকল মজনুর সাথে। দুইজনেই নিশ্চুপ। দুইজনেই দুইজনের অস্তিত্ব অনুভব করছে।রিদি মজনুর বুকের ঢিপঢিপ শব্দ শুনছে।কি মোহনীয় লাগছে শুনছে।এভাবে জরিয়ে ধরে আজীবন পার করে দিতে পারবে রিদি। মজনুর প্রসস্ত বুকে ভরসা, ভালবাসা পেয়ে রিদি চোখ বুজে পড়ে রইলো সেভাবে। মজনু রিদিকে কোলে তুলে দোলনায় বসল। দোলনায় দোল খেতে খেতে হাত বুলাল রিদির মাথায়।রিদির কাছে তার একমাত্র শান্তির জায়গা এটা।তাই তো আবারো ঘুমিয়ে পড়ল। মজনু খেয়াল করল রিদি ঘুমিয়ে পড়েছে। মজনু হাসল।মজনুর বুকে কিছুক্ষণ থাকলেই বৌ তার শাস্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে। মজনু মনে মনে বলে,

আপনাতেই আমি পর্ব ১৩

“শত কিছুর পরেও আপনি আমার থাকুন বেগম জান।আমি আপনার শান্তির জায়গা হয়ে আপনাকে এভাবেই আগলে নিয়ে ঘুম পাড়াবো। সর্বদা আপনার শান্তির জায়গা হয়েই থাকব””

আপনাতেই আমি পর্ব ১৫