প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৫৪

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৫৪
আদ্রিতা নিশি

অরিন নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে। আবিরের বলা কথাগুলো তাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। বক্ষপিঞ্জর অশান্ত এবং বিক্ষ*ত । কেমন যেন অবর্ণনীয় ক*ষ্ট, যন্ত্রণায় ছটফট করছে অভ্যন্তরীণ হৃদয়। আবিরের বলা কথায় ছিল বিষন্নতার ছাপ। হয়তো তার ব্যবহারে অনুধাবন করেছে স্বামীরুপে আবির মেনে নিতে পারেনি। এটি নিছক ভুল মাত্র। যেদিন তাদের বিয়ে হয়েছে সেদিনই বিয়ে এবং স্বামীকে মেনে নিয়ে নতুন ভাবে জীবন শুরু করতে চেয়েছে। কিন্তু মনের গহীনে কোথাও জড়তা এবং অস্বস্তিতে জর্জরিত হয়ে থাকত। হয়তো কাপুরুষকে ভালোবেসে ঠকে যাওয়াটা এর মূল কারণ ছিল। অতীতকে পিছু ফেলে সব ভুলে তবুও এগিয়ে যেতে চেয়েছিল। নতুন ভাবে সবকিছু শুরু করার মাঝ পথে মনে হলো — নিজেকে স্বাভাবিক করা এবং আবিরের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক ঠিক করার জন্য খানিকটা সময় দরকার। এসব বিষয়ে আলাপে বসতে চেয়েছিল কিন্তু সেসবের পূর্বেই সব গন্ডগোল বেঁধে গেল।

আবির নিশ্চুপ ভঙ্গিমায় নিবিড় চাহনিতে অরিনের কন্দনরত মুখশ্রীতে তাকিয়ে রয়েছে। সূক্ষ্ম এবং তুখোড় সেই চাহনি। ভ্রুযুগল কুঁচকানো খানিকটা। সে হাতাশার শ্বাস ফেলে। মেয়ে মানুষকে বোঝা বড় দায়। ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। এতে পুরুষের কঠোর মন মমের ন্যায় গলে যায়। আবিরের ক্ষেত্রেও তেমনটা হলো। বউয়ের অশ্রুসিক্ত নয়ন জোড়া দেখে মন নরম হয়ে গেল। একমাত্র বউয়ের ভেজা নেত্রপল্লব যেন সহ্য হলো না। কেমন যেন অসহনীয় হয়ে উঠল ভেতরটা। অস্থিরতায় বিপর্যস্ত হয়ে গেল অথচ বুঝতে দিল না। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিরবতা ভেঙে শান্ত কন্ঠে বলে উঠল ;

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“অরিন কান্না থামাও। সামান্য কথায় কেউ কান্নাকাটি করে?”
অরিন ভেজা নেত্রপল্লব উঁচিয়ে অভিমানের সহিত তাকায় আবিরের দিকে। অথচ কোনো জবাব দেয় না। সে শপথ করেছে এই অসহ্য মানুষটার সাথে কথা বলবে না। আবির বুঝতে পারে অভিমানিনী বউয়ের মনের ভাব। সে খানিকটা নড়ে উঠল। ভুলবশত ব্যান্ডেজকৃত হাতটা উঁচিয়ে অরিনের অশ্রুভেজা চক্ষুদ্বয় মুছে দিতে উদ্যত হলো। বিপত্তি বাঁধলো সেখানেই। ক্ষ*তস্থানে টান লেগে ব্যথায় মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠল। অন্যহাতে ব্যান্ডেজকৃত হাতখানা চেপে ধরল। অবর্ণনীয় ব্য*থায় চোখ মুখ খিঁচে বসে রইল। মুখে ফুটে উঠল তীব্র ব্যথা এবং যন্ত্রণার ছাপ। অরিন চমকে গেল। তৎক্ষনাৎ কান্না থেমে গেল। মান অভিমান ভুলে বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করল ;
“কি হয়েছে আবির?”
আবির চোখ মুখ খিঁচে থাকা অবস্থায় ওষ্ঠ কামড়ে ব্যথা চেপে বলল ;

“বউ কে কাঁদিয়েছি তাই একটু শাস্তি পেয়েছি।”
অরিনের মেজাজ গরম হয়ে গেল আবিরের হেঁয়ালিপূর্ণ কথায়। খানিকটা এগিয়ে এসে বসে।সে কটমট করে তাকাল। ক্রোধ চেপে বলল ;
“এতো বড় একটা ফাঁড়া গেল আপনার ওপর দিয়ে অথচ আপনি এখনো মজা করে যাচ্ছেন। অহেতুক মজা না করে বলুন হাতের কোথায় লেগেছে?”
অরিন কথাটা সম্পূর্ণ করে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল ব্যান্ডেজকৃত হাতটায়। উৎকন্ঠা, উদ্বিগ্ন ভাব স্পষ্ট ফুটে উঠেছে মুখশ্রীতে। খানিকটা রেগেও আছে। মানুষটা মোটেও সচেতন নয় নিজেকে নিয়ে। সারাক্ষণ রাজনীতি আর তাকে জ্বালিয়ে মা*রতে পারে। আবির নিজেকে স্বাভাবিক করে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হেলান দেয় পেছনে লম্বা করে বিছানায় লাগানো বালিশটায়। ভাবভঙ্গি পরিবর্তন করে বিরক্ত প্রকাশ করে বলল ;
“ শ্লা*র নয়ন তালুকদারের জন্য বউয়ের চোখের পানি মুছিয়ে দিতে পারছি না। আগে সুস্থ হয়ে নেই তারপর ব্যাটাকে আচ্ছাতাকে ধোলাই দেব।”

“আমাকে কাঁদিয়ে আবার নাটক করছেন?”
“বিয়ের পর বউয়ের মন পাওয়ার জন্য একটুআধটু নাটক শিখতে হয়। নয়তো সংসারে ঝামেলা বাঁধে।”
“আপনি সংসারটা শুরু না করতেই ঝামেলা বাঁধিয়ে দিচ্ছেন। এই জন্য আব্বু আপনার সাথে আমায় বিয়ে দিতে চাননি। তিনি বুঝেছিলেন রাজনীতি করা পুরুষ মানুষ সংসারে ঝামেলা বাধাতে পারে।”
অরিন গমগমে কন্ঠে বলল। আবিরের ভ্রুযুগল কুঁচকে গেল। এটা বউ কম শশুড় মশাইয়ের ডুপ্লিকেট বেশী মনে হচ্ছে। আর কি বলল রাজনীতি করা পুরুষ মানুষ সংসারে ঝামেলা বাধায় শুধু! কিঞ্চিৎ বিরক্তিবোধ করল। কিন্তু তা প্রকাশ না করে বাঁকা হাসল। ডান হাত বাড়িয়ে টান দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিল। দুরত্বটুকু সন্তর্পণে কমিয়ে নিয়ে আসে। অরিন আকস্মিক এহেন কান্ডের অবাক হয়। বিস্মিত নয়নে তাকায় আবিরের মুখপানে। আবির একদম স্বাভাবিক যেন ভাজা মাছটা উল্টো খেতে জানে না।দুজনের চোখাচোখি হয়। অরিন হঠাৎ অপ্রস্তুত হয়ে উঠে। চক্ষুদ্বয় অন্যত্র ঘুরিয়ে নেয়। এতোক্ষণ রেগে থাকলেও আচমকা রাগ কর্পূরের ন্যায় মিলিয়ে গেল। কেমন যেন লজ্জা, অস্বস্তি এবং আড়ষ্টতায় গুটিয়ে গেল। শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগল।। এই প্রথম কোনো পুরুষের সন্নিকটে এসেছে। কেমন যেন এলোমেলো লাগছে। হৃদস্পন্দন বেড়ে চলেছে। নাসিক্যে প্রবেশ করছে পুরুষালী তীব্র গন্ধ। নার্ভাসনেস কাজ করছে ভেতরে। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে কপালে অথচ রুমে এসি চলছে। দুজনের শ্বাস প্রশ্বাসের উষ্ণ হাওয়া একে অপরকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। দমনীয়মান অনুভূতির জোয়ার বইতে শুরু করেছে।
আবির পলকহীন তাকিয়ে পরখ করল অরিনকে। ওষ্ঠ কামড়ে হাসল ;

“কি হলো কাঁপছো কেনো? আমি কি কিছু করেছি?”
অরিনের মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল। লজ্জাবতী লতার ন্যায় নেতিয়ে পড়ল। মুখশ্রী তখনো নত । আবির সূক্ষ্ণ চাহনিতে অবলোকন করল। দৃষ্টি আটকালো গোলাপী ওষ্ঠযুগলে। বিরতিহীন তিরতির করে কাঁপছে—তা আবিরকে নেশার মতো টানছে। ইচ্ছে করছে ওই ওষ্ঠযুগলে ক্ষণকালের জন্য ডুবে যেতে। দীর্ঘ শ্বাস টেনে ইচ্ছেটুকু দমন করল। মেয়েটির কোনো জবাব না পেয়ে পুনরায় দুষ্টমির ছলে বলল;
“বউ তোমার লাজে রাঙা মুখ দেখে কেমন যেন উল্টোপাল্টা ফিলিংস হচ্ছে। এ মুহুর্তে উল্টোপাল্টা কিছু করে ফেললে কিছু মনে করবে নাতো?”
আবির শেষাক্ত কথাটি কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল। অরিনের কর্ণকুহরে নির্লজ্জ ধরনের কথা প্রবেশ করতেই সে হতভম্ব হয়ে গেল। বিস্ফোরিত নয়নে তাকাল আবিরের দিকে। অসভ্য মানুষটার ওষ্ঠকোণে দুষ্টমির ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। সে বুঝতে পারল বদ মানুষটা ইচ্ছাকৃত লজ্জায় ফেলছে। সে আবিরের থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল কিন্তু পুরুষালী মুঠোবন্দি হাতের বাধন দৃঢ় হলো। আবির ইচ্ছাকৃত আরও শক্ত করে ধরল। অরিন মিনমিন করে বলল ;
“হাত ছাড়ুন আবির।”

আবির কথাটা উপেক্ষা করে শান্ত কন্ঠে বলল;
“উহু ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।আমার দিকে তাকাও।”
অরিন লজ্জা লুকিয়ে দুচোখে সংকোচ নিয়ে আবিরের দিকে তাকাল। চোখে মুখে চাপা ভয়ের ছাপ। বক্ষস্থল ভূমিকম্পের ন্যায় কাঁপছে অনবরত । সে ভয় কেনো পাচ্ছে অপর পাশের মানুষটাকে? আশ্চর্য! বিয়ে করা বরকে কেউ ভয় পায়? জানা নেই তার। দ্বিধা,লজ্জা, ভয়ের সংমিশ্রণে মনের যাতা অবস্থা। তবুও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করল। কিন্তু বেশীক্ষণ নিজেকে স্বাভাবিকে রাখতে পারল না। অনুমতিবিহীন আবির এক দুঃসাহসিক ভঙ্গিমায় এতোক্ষণের মনের মাঝে চাপা রাখা ইচ্ছে টুকু পূরণ করে ফেলল। খানিকটা ঝুকে এসে তপ্ত ওষ্ঠাধর ডুবিয়ে দিল অরিনের ওষ্ঠে। আচমকা অপ্রত্যাশিত স্পর্শে থরথর করে কেঁপে উঠল অরিন। স্তম্ভিত হয়ে গেল অন্তঃকোণ। বোধবুদ্ধি হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাকাল আবিরের দিকে। বিস্ফোরিত চক্ষুদ্বয় পুরুষালী তীক্ষ্ণ এবং প্রগাঢ় চক্ষুদ্বয়ে নিবদ্ধ করে তীব্র উৎকন্ঠা নিয়ে দুহাতে আকড়ে ধরল শার্ট। বলহীন কম্পনরত হাত দ্বারা ঠেলে দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করল সুঠামদেহী শরীরটাকে। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। উত্তেজনা দ্বিধার সমুদ্রের অতলে হারিয়ে কিছুক্ষণ সেভাবে রইল। অতঃপর আবির মেয়েলী ওষ্ঠ থেকে ওষ্ঠ সরিয়ে পূর্বের ন্যায় হেলান দিয়ে বসল যেন কিছু হয়নি ভাবলেশহীন এবং শান্ত। অরিন হঠাৎ ছাড়া পেয়ে হাঁপাতে লাগল। অবাক চাহনিতে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে উঠল ;

“ আবির আপনি…। ”
কন্ঠনালী হতে শব্দ বের হলো না। আবির নির্লিপ্ত এবং নির্বিকার। পূর্বের ন্যায় চুপ করে বসে আছে। সে মোটেও নিজের কাজে অনুতপ্ত নয়। সে অরিনের ভাবভঙ্গি অবলোকন করল। অতি শান্ত কন্ঠে বলল ;
“রাজনীতি করা ছেলেরা সংসারে ঝামেলা বাঁধানো ছাড়াও অনেক কিছু করতে পারে। যেমন: বউয়ের সাথে রোমান্স করা। শোনো অরিন,আপাতত আমি অসুস্থ তাই হালকার ওপর ঝাপসা করে চু*মুটুমু খেলাম যদি সুস্থ থাকতাম…।”
কথার মাঝখানে সমাপ্তি ঘটাল। বাকিটুকু ইচ্ছাকৃত বলল না। ভ্রু নাচিয়ে দুষ্ট ইশারা করে ওষ্ঠ এলিয়ে হাসল। অরিন ধরফরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। দুহাতে ওষ্ঠদ্বয় চেপে ধরে বিরবির করে অসভ্য উপাধী দিয়ে কোনো রকমে রুম থেকে ছুটে পালানো। আবির বউয়ের কাহিনী দেখে শব্দ করে হেসে উঠল।

সময় এগারো বিশ মিনিট। চৌধুরী বাড়ির সদস্যরা ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে। ফিরে ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খেয়ে যে যার মতো ঘুমাতে গিয়েছে। কিন্তু ডাইনিং টেবিলে অনুপস্থিত ছিল সারহান, ইরফান এবং সাদাত। একসাথে তিনজনের অনুপস্থিত থাকার বিষয়টা নিয়ে খটকা লাগলেও কেউ তেমন পাত্তা দেয়নি। উপস্থিত সকলের সামনে আজমল সাহেব বলেছেন আগামীকাল সকাল দশটায় লিভিং রুমে সবাইকে উপস্থিত থাকতে — জরুরী কথা বলবেন। অতঃপর খাবার খেয়ে প্রস্থান করেছেন।
কিছুক্ষণ পূর্বে ছাদে এসেছে অরিত্রিকার বন্ধুমহলসহ অরিত্রিকা এবং ইশারা। তারা সবাই ফ্লোরে কার্পেট বিছিয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে। এতো রাতে ছাদে এসে বসেছে অথচ কারো মাঝে ভয়-ভীতির লেশ মাত্র নেই। ছাদের চারপাশে সাদা আলোর বাল্ব লাগানো। আশেপাশে সাদাটে আলোয় ঝলমল করছে। দূরের অট্টালিকা থেকে আলোর ছটাক চারিপাশ দিনের ন্যায় উজ্জ্বল মনে হচ্ছে। মৃদু মন্দ বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে তাদের। থেমে থেমে কথোপকথনের শব্দ বাড়ছে-কমছে। উন্মুক্ত ছাদ এবং একদল রমণীদের কোলাহলে নিস্তব্ধ পরিবেশ যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।
“অরিত্রিকা! আমাদের রুমে বসিয়ে রেখে হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেছিলি?”

কথোপকথনের মাঝখানে হঠাৎ প্রশ্ন ছুড়লো তিশা। গোয়েন্দাদের মতো সন্দিহান স্বর। চক্ষুদ্বয়ে আকাশসম সন্দেহের উৎপত্তি। শ্রবণেন্দ্রিয়ে কথাটা প্রবেশ করতেই কথা থেকে গেল। কয়েক জোড়া চোখ স্থির হলো অরিত্রিকার দিকে। হঠাৎ কয়েক জোড়া সন্দিহান দৃষ্টি তার দিকে ছুটে আসতেই হচকচিয়ে গেল। ভাবভঙ্গি মুহুর্তে পরিবর্তন করে হাসার ভাণ করল। কিন্তু অভ্যন্তরীণ ভাবনায় অপ্রস্তুত হয়ে গেল। কেন যে এদের নিয়ে ছাদে গল্প করতে আসলো। যদি জানতো এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হবে তাহলে কস্মিনকালেও রাত জেগে গল্প করার প্ল্যান করতো না। অতিরিক্ত চিন্তায় কপালের ভাজ প্রগাঢ় হলো। কি উত্তর দেওয়া যায় নিরবচিত্তে ভাবতে লাগল। ইশরা অরিত্রিকার নিশ্চুপ ভঙ্গিমা দেখে ঠাওর করতে পারল কোথায় নিখোঁজ হয়েছিল? সে সকলের অগোচরে হাসল। পরক্ষণে হাসি থামিয়ে গমগমে কন্ঠে বলল;
“সারহান ভাইয়ের রুমে গিয়ে উধাও হয়েছিল। তোমরা জানো, অরিত্রিকা এখন সারহান ভাইয়ের প্রেমে ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে। তাই আমাদের লুকিয়ে প্রেম করতে গিয়েছিল। ”

রাহা এবং ইশরা দুজনেই অরিত্রিকা ও সারহানের ব্যাপারে জানে। অরিত্রিকা বন্ধুমহলের মেসেঞ্জার গ্রুপে জানিয়েছিল কয়েকদিন আগে। কথাটা জানিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিল। তিশা, রাহা, রুদ্র এবং রুহান চারজনে কথাটি শুনে গ্রুপে টেক্সটের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল কিন্তু অরিত্রিকা সম্ভবত লজ্জার কারণে গ্রুপে ঢোকেনি। ঢুকলে নিশ্চিত চারজনের খোঁচানোতে জীবন তেজপাতা হয়ে যেত। অরিত্রিকার ভীষণ লজ্জা লাগল কিন্তু সেসব পরোয়া না করে কটমট করে তাকাল ইশরার দিকে। ইচ্ছে করছে ফুপির পেট পঁচা মেয়েকে এক লাথি দিয়ে অন্য গ্রহে পাঠিয়ে দিতে। ইশরা অরিত্রিকার সেই চাহনি উপেক্ষা করল। তিশা চক্ষুদ্বয় সংকুচিত করে তাকিয়ে আছে। এই মেয়ের পেটে পেটে এতো কিছু? রাহা ভ্রু নাচিয়ে দুষ্টুমি করে বলল;
“আমাদের লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করা হচ্ছে? আমাদের থেকে লুকিয়ে প্রেম করার অপরাধে আংকেলকে সকালে বলে দেব— আপনার মেয়ে বাড়ির বড় ছেলের সাথে প্রেম করছে।”
ইশরা ফোঁড়ন কেটে বলল ;

“লাভ নেই বলে।”
তিশা জিজ্ঞেস করল ;
“কেনো?”
“কারণ সবাই জানে দুজনের প্রেম কাহিনী।”
“এটা কীভাবে সম্ভব? প্রেম শুরু না হতেই বাড়ির সবাই জেনে গেল?”
তিশা হতভম্ব হয়ে গেল। রাহারও সেম অবস্থা। দুই বেচারি যেন সদ্য ছ্যাকা খেয়ে উল্টে গেছে। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না বান্ধবীর ভালোবাসার কাহিনী শুরু না হতেই চৌদ্দগুষ্ঠি জেনে গেছে। অরিত্রিকা গালে হাত দিয়ে বান্ধবীদের থমকানো মুখখানা দেখল। দেখে মনে হচ্ছে প্রেমে দাগা খেয়েছে। ইশরা নাটকীয় ভঙ্গিমায় বলল ;
“দুজনের প্রেম কাহিনী অমুক – তমুকের প্রেম কাহিনীকে হার মানাবে।”
রাহা নড়েচড়ে উঠল। আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করল;
“অমুক -তমুক কে?”
“জানিনা।”
“তাহলে বললে কেন?”
“কথার স্বার্থে বলেছি। তোমরা শুনবে যন্ত্রমানব এবং তার মঞ্জুলীকার প্রেম ঘটিত ঐতিহাসিক কাহিনী?”
“হ্যা শুনবো তাড়াতাড়ি বলো।”

তিশা এবং রাহা একসাথে বলে উঠল। অরিত্রিকা কপাল চাপড়ালো। ছাদে আসলো গল্প করতে আর এরা এসে তার প্রেমের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করছে? সে কিঞ্চিৎ বিরক্তিবোধ করল। ইশরা অরিত্রিকা সারহানের হাতে চু*মু দেওয়া থেকে শুরু করে একদিন আগে ঘটে যাওয়াসহ দুবছর পূর্বে সারহান অরিত্রিকাকে ভালোবাসে সেসব কাহিনী ফটাফট বলল। রাহা এবং তিশা হতবাক হয়ে কথাগুলো শ্রবণ করল। এতো কিছু ঘটে গেছে অথচ তারা কেউ কিছু জানে না। দুজনে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকাল অরিত্রিকার দিকে। অরিত্রিকা ভড়কে গেল চাহনি দেখে। ইশরা শুরু থেকে শেষ অব্দি কাহিনী শুনিয়ে হাঁপাতে লাগল।
তিশা আশ্চর্য হয়ে বলে উঠল;
“এসব কি শুনছি আমি! তোদের প্রেম কাহিনী বাড়িতে এতো ঝড় বইয়ে গেল অথচ আমরা কিছু জানি না। আগামী শুক্রবার আকদের ডেটও তোর নেতা সাহেব ঘোষণা করে দিল। তারমানে আকদ হবেই। কিন্তু আংকেল এখনো মানেননি তো।”

অরিত্রিকা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। আনমনা ভাব নিয়ে হতাশাপূর্ণ কন্ঠে বলল;
“জানিনা কি থেকে কি হয়ে গেল। যাকে ছোট থেকে শত্রুরুপে দেখে এসেছি তাকে হঠাৎ করে ভালোবেসে ফেললাম। যাকে বড় ভাইয়ের মতে ভালোবাসতাম সে আমায় ভালোবেসে ফেলল। তারপর আচমকা জানলাম ইরফান ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে আব্বু। আমার সমস্ত পৃথিবী যেন ঘুরে গেল। এলোমেলো হয়ে গেলাম আমি। এক পর্যায়ে ভেঙে পড়লাম। সবকিছু অসহ্য লাগতে লাগল। নিজের থেকে সারহান ভাইয়ের জন্য খারাপ লাগল। পরমুহুর্তে অভিমান জন্মালো। প্রথমবার আব্বুর সাথে গলা উঁচিয়ে কথা বলেছি। কারণ আমি চাইনি আমার প্রথম ভালোবাসা হারিয়ে যাক। দুই প্রেমময় হৃদয়ের বিচ্ছেদ ঘটুক। দুবছরের অধিক যাকে কষ্ট দিয়েছি সে যেন পুনরায় কষ্ট না পাক। সারহান ভাই আমাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পাওয়ার জন্য পারিবারিক সম্পর্কের পরোয়া না করে আব্বুর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করল। সেদিন বুঝেছিলাম আমার ভালোবাসার মানুষটা ভুল নয়। আমায় সারাজীবন আগলে রাখতে পারবে, অনেক ভালো রাখবে।”

অরিত্রিকা থামল। উপস্থিত সকলে শুনল কথাগুলো। রাহার কেন যেন খারাপ লাগল ইরফানের জন্য। মেয়েলী মনটা বিষন্নতায় ডুবে গেল। একতরফা ভালোবাসা মানে — এক আকাশ পরিমাণ হাহাকার। বিষন্ন, ভগ্ন হৃদয়, নিরব আত্নচিৎকার। ভালোবাসার মানুষকে না পাওয়ার কষ্ট, আফসোস সারাজীবন বইয়ে বেড়ানো। তার বক্ষ কাঁপল। ভেতরটা থিতিয়ে গেল মুহুর্তে। মুখ ফসকে বলে উঠল ;
“এতরফা ভালোবেসে ইরফান ভাইয়া কষ্ট পাচ্ছে অরিত্রি। তবুও নিজের মাঝে যন্ত্রণা আড়াল করে স্বাভাবিক রাখছে। মস্তিষ্কে একটা কথাই ঘুরছে— মানুষ কেন ভুল মানুষকে ভালোবাসে?”
“কারণ ভালোবাসা ভুল কিংবা সঠিক মানুষ দেখে হয় না।হঠাৎ করেই চোখের পলকে কাউকে ভালোলাগে তারপর ধীরে ধীরে ভালোবাসায় রুপ নেয়।”

অরিত্রিকা বাক্যগুলো আওড়ে হাসল। বিষাদগ্রস্ত অদ্ভুত সেই হাসি। ইরফান ভাইয়ের জন্য তারও খারাপ লেগেছে কিন্তু প্রকাশ করার ইচ্ছে নেই। সে মনে মনে চায় — মানুষটার জীবনে কেউ আসুক, ভালোবাসুক। কষ্ট ভুলিয়ে নিজের করে নিক। এর থেকে বেশী কিছু করার ক্ষমতা নেই। রাহা মনোযোগ সহকারে শুনল। অরিত্রিকার কথায় কোনো ভুল নেই। সত্যি ভালোবাসা কখনো ভুল কিংবা সঠিক মানুষ দেখে হয় না। তিশার মনটা খারাপ হয়ে গেল। কাউকে না পাওয়ার যন্ত্রণা কতোটা পোড়ায় তা সে জানে।
“কথায় আছে, তকদিরে যদি কিছু না থাকে তা জোরপূর্বক পাওয়া যায় না। ভালোবাসা নামক নিষ্ঠুর শব্দের ক্ষেত্রেও তাই।”

ইশরা বিষন্ন হেসে বলল। তার ভাইয়ের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে। ভালোবাসার মানুষটাকে পায়নি, পাওয়ার সম্ভবনাও নেই। জোরপূর্বক পাওয়ার চেষ্টা করলেও শতভাগ বিফলে যাবে। অরিত্রিকা উঠে দাঁড়াল। মনটা ভীষণ ভার। আড্ডা দেওয়ার মন মানসিকতা নেই। সে তপ্ত শ্বাস ফেলে। সবার উদ্দেশ্যে বলল ;
“আমি ভেতরে যাচ্ছি। শরীরটা ভালোলাগছে না।”
কথাটা বলে এক মুহুর্ত দেরী না করে তড়িঘড়ি করে ছাদ থেকে চলে গেল। সবাই অরিত্রিকার মনের অবস্থা বুঝতে পারল। তিনজনে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। ইশরা কার্পেট গুছিয়ে নিয়ে দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলল;
“চলো নিচে যাই।”
তিশা সম্মতি জানিয়ে বলল ;

“ আচ্ছা চলো। অনেক রাত হয়েছে।”
রাহা মৃদু হেসে বলল ;
“তোমরা যাও। আমি আব্বুর সাথে কলে কথা বলে আসছি। ”
“একা একা ভয় পাবি নাতো? ”
“আরেহ না। রাতে- বিরাতে ছাদে একা থাকার অভ্যাস আছে। ”
“আচ্ছা আমরা তাহলে নিচে গেলাম। তুই কথা বলে আয়।”
তিশা আর কথা না বাড়িয়ে ইশরার সাথে ছাদ থেকে নেমে গেল। রাহা ধীর পায়ে রেলিঙের দিকে এগিয়ে গেল। হাতে থাকা ফোনটার লক খুলে বাবার নাম্বারে কল করল। সাথে সাথে রিসিভ হলো। মিনিট দশেক কথা বলে ফোন কেটে দিল।

রাতের গভীরতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। মৃদু- মন্দ বাতাসও কিছুটা কমে এসেছে। বৈশাখ মাসের শেষ। তীব্র গরম পড়ছে। জনমানসে স্বস্তি নেই বললেই চলে। ভেপসা গরমের সবার মাঝে বিরক্ত কাজ করছে। রাহা এক ধ্যানে তাকিয়ে রয়েছে অদূর প্রকৃতিতে। কি দেখছে জানে না। তবুও মনোযোগী। মনটা ক্ষীণ খারাপ। হঠাৎ এমন অদ্ভুত অনুভূতি হওয়ার রহস্য ভেদ করতে পারলনা অশান্ত মন।
“এতো ছাদে কি করছো?”

আচমকা গুরুগম্ভীর পুরুষালী কন্ঠস্বর শ্রবণেন্দ্রিয়ে প্রবেশ করল। রাহা প্রকৃতির মাঝে ডুবে ভাবনায় বিভোর থাকলেও হঠাৎ শব্দগুচ্ছ প্রতিধ্বনিত হতেই চমকে উঠল। ভয়ে সিঁটিয়ে গেল। এতো রাতে ছাদে কে? ভূত নয়তো? সে আজগবি চিন্তা করে চোখমুখ খিঁচে ক্যাঙ্গারুর মতো লাফাতে লাফাতে ভয়ার্ত কন্ঠে চিৎকার দিয়ে উঠল;
“ ভূত, ভূত কে কোথায় আছো আমাকে বাঁচাও। এ্যা এ্যা আমি স্বামীর মুখ না দেখে ম*রতে চাই না। কে আছো শয়তান ভূতের থেকে বাঁচাও আমায়। ”
রাহা লাফাচ্ছে আর কাঁদছে। ভূতের ভয়ে উল্টে পাল্টা বকে চলেছে। ইরফান পেছনে দাঁড়িয়ে ভ্রুযুগল কুঁচকে তাকিয়ে রংতামাশা দেখছে। মেয়েটা শুধু হাতে পায়ে বড় হয়েছে কিন্তু মাথায় বুদ্ধির বালাইটুকু নেই। তার বিরক্তিতে ভেতরটা তিক্ত হয়ে আসছে। ইচ্ছে করছে মেয়েটা ধমকে মাথা থেকে ভূত নামিয়ে দিতে। কিন্তু তেমনটা করতে মন সায় দিল না। বাচ্চা মেয়ে ভয় পেয়ে যদি আরও চিল্লাচিল্লি করে তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সে মেজাজ অতি কষ্টে সামলে নেয়। শাণিত পায়ে এগিয়ে যায় রাহার দিকে। দুরত্ব বজায় রেখে টাউজের পকেটে দুহাত রেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। অতঃপর গম্ভীর কণ্ঠে বলে;

“মিস রাহা শান্ত হও। একখানে আমি এবং তুমি ব্যতিত অন্য কেউ নেই।”
পরিচিত কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই রাহা দাঁড়িয়ে যায়। কান্না করা বন্ধ করে দেয়। ভয়,ডর কমে আসে। সে পুলকিত নয়নে তাকায় সামনে দন্ডায়মান মানবটির দিকে। ইরফানকে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আতংকিত ভাব কেটে আসে। খানিকটা অস্বস্তিতে পড়ে যায়। সে এদিক ওদিক তাকিয়ে সুগভীর নয়নে ছাঁদের প্রতিটা জায়গায় নজর বুলায়। কিন্তু ভূত নামক অশ*রীরীর দেখা পেল না। স্বস্তির শ্বাস ফেলল। এতোক্ষণ হুতাশে চিল্লাচিল্লি করছিল।হঠাৎ বিকট শব্দ ভেসে এলো দূর থেকে। রাহা নিজেকে স্বাভাবিক করার আগে পুনরায় পতিত হলো ভূত নামক ভয়ে। শিউরে উঠল তার কায়া। সে ভয়ে আতংকিত হয়ে নিজেকে বাঁচাতে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে জড়িয়ে ধরল। পুরুষালী প্রশস্ত বক্ষে মাথা রেখে থরথর করে কাঁপতে লাগল। ভয়ার্ত কন্ঠে বিরবির করল;
“ভূত,ভূত।”

আচমকা নারী দেহের সান্নিধ্যের ছোঁয়া পেতেই বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলে গেল পুরুষালী দেহে। এক ঝটকায় শীতল শিহরণ বইয়ে গেল পুরো শরীরে। উষ্ণতায় আলোড়িত হলো মাথা থেকে পা। সে চমকিত, থমকিত। স্তব্ধ তার অন্তঃস্থল। স্তম্ভিত নয়ন জোড়া রাহার দিকে নিবদ্ধ। মস্তিষ্ক যেন অচল প্রায়। ঘন ঘন শ্বাস এবং শার্ট ভেদ করে নোনা পানি বক্ষ ছুঁতেই তার মস্তিষ্ক সচল হলো। চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল নিমেষে। দুহাতে রাহার বাহু ধরে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিল। মেজাজ সামলে ধমকে বলল ;
“কোনো ভূত নেই ছাঁদে। শান্ত হও আর কান্নাকাটি বন্ধ করো।”

রাহার কান্না তৎক্ষনাৎ থেমে গেল। ভেজা নেত্রপল্লব মেলে তাকাল ইরফানের দিকে। ইরফান ততক্ষণে রাহার দুবাহু ছেড়ে দিয়ে খানিকটা দূরে অবস্থান করেছে। রাহা শান্ত হয়। মস্তিষ্কে ধরা দেয় কিছুক্ষণ পূর্বের মুহুর্ত। সে এই মানুষটাকে ভয়ে জড়িয়ে ধরেছিল! ভাবতেই হতবাক হয়ে যায়। নিজের বেক্কল মার্কা কাজে অস্বস্তি, লজ্জায় মিইয়ে যায়। হাসফাস করে উঠে সে। আড়ষ্টতায় জড়ানো চক্ষু মেঝেতে নিবদ্ধ করে। লজ্জা আড়াল করে মিনমিন করে বলে ;
“স্যরি।আমি আসলে ভয় পেয়ে গেছিলাম..।”
রাহার কথাটা শেষ হওয়ার পূর্বে ইরফান গমগমে কন্ঠে বলল;

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৫৩

“নিচে যাও রাহা।”
“আমি..।”
“ তোমাকে বলেছি নিচে যেতে। যাও।”
রাক্ষসের মতো হুংকার শুনে রাহা নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে ছুটল নিচের দিকে। ইরফানের ভাবমূর্তি কঠোর। চক্ষুদ্বয় হতে যেন আগুন ঝরছে। মনে মনে বেজায় চটেছে এই মেয়ের ওপর। সন্ধ্যায় তার নামে যাতা বলেছে, নামটা বিকৃত করেছে আর এখন ভূতের ভয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেছে। চোয়াল শক্ত করে বিরবির করে বলে উঠল;
“মাথামোটা মেয়ে কোথাকার!”

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৫৫