আপনাতেই আমি পর্ব ২০
ইশিকা ইসলাম ইশা
রাত প্রায় আড়াইটার কাছাকাছি সময়,বেকানো বিল্ডিং এ ফিরেছে তীব্র।লাবিব ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে আছে বসের দিকে।এই সময়তো তার এখানে থাকার কথা না।কোন নারীর শরিরে মেতে থাকার কথা। তাহলে!!!
তবে প্রশ্নও করতে পারছে না লাবিব।তীব্র শান্ত ভাবে বসে ভাবছে কিছু!!
হুট করেই পাশের ফুলদানি ভেঙে দেয় তীব্র।ঘুম উরান ছু হয়ে যায় লাবিবের।ঝট করেই দূরে সরে যায়।তীব্রর রাগ হলেও শান্ত থাকে দেখে ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে আছে লাবিব!হুট করে ফোন বেজে উঠায় চমকে উঠে লাবিব।স্কিনে তাকিয়ে দেখে মেলিনা নামের মেয়েটি।মেলিনা একজন তুর্কি মেয়ে তুর্কি মেয়ে মানেই ভীষণ সুন্দর।।ব্যাবসার কাজে পরিচিত।তীব্র কে তার ভীষণ পছন্দ তাই নিজ থেকেই অফার করে।তীব্র ও মানা করে নি।আজ রাতে তার বাংলোতেই থাকার কথা দুইজনের কিন্তু হুট করেই লাবিব কে কল করে বলে গাড়ি নিয়ে আসতে বলে।
ফোন রিসিভ করতেই মেলিনা ইংরেজি ভাষার বলে,
এসব কি তীব্র।তুমি আমাকে রিফিউজ করলে।আমার কাছে আসার জন্য হাজারো ছেলে লাইনে থাকে আর তুমি আমাকে……
ব্যসসস ভেঙে চুরমার হয়ে যায় ফোন। লাবিব ভয়ে দেওয়ালে সেটে যায়।তীব্র রেগে আছে।লাবিব ভয়ে ভয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি তীব্র বলে,
গেট আউট!!!!!
লাবিব তীব্রর কথার সাথে সাথে চলে যায়,
জান বাঁচানো ফরজ কাজ।তবে বসের এমন রাগ বুঝলো না লাবিব।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এদিকে তীব্র একের পর এক জিনিস ভাংছে।রাগ কমাতে গিয়ে সাওয়ারের নিচে দাড়ায়।পুরো ১ঘন্টা পানির নিচে থেকে বেরিয়ে আসে তীব্র।টাওয়াল জরিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তাকাই রিদির বেলকনির দিকে।আজ রিদির জন্য তার রাতটা মাটি হল। যতবার মেলিনাকে কাছে টেনেছে ততবার ভেসে উঠছে রিদির মায়াবী মুখশ্রী।ঐ হাসি, ঐ কন্ঠ কেন যেন মনে হচ্ছে মেয়েটা ভালো নেই।চোখে কি এমন দেখেছে যে শান্ত থাকতে পারছে না।রাগ হয়েছে নিজের প্রতি কেন তার চোখের সামনে ভাসছে মেয়েটি।নিজের উপর রাগ দেখিয়েও যখন কমছে না তখন সব রাগ গিয়ে পরলো রিদির ওপর।
রাত বেকানো বিল্ডিং এ থাকলেও কিছু কাজের জন্য তাকে নিজের রুমে আসতে হয়। ফাইল গুলো নিয়ে বেরিয়ে যেতেই চোখ যায় রিদির দিকে।একমনে শশা কাটছে সে।রাতের রাগ রিদিকে দেখেই বেড়ে গেল যেন।এগিয়ে গিয়ে বলল কফির কথা।আর তার রাগকে কেন্দ্র করেই রীদির সাথে রাগে খারাপ ব্যবহার করলেও।ঐ টলমলে দৃষ্টি যেন চিনচিনে ব্যথা তৈরি করল বুকে।
খাবার সময় ও রাগ থেকেই রিদিকে অপমান করে তীব্র। বিরিয়ানির ঘ্রাণ তাকে কাবু করলেও সে তা উপভোগ না করে রাগে অপমান করল রিদিকে।রিদি জোর করে মুখে দিলে রাগ কয়েকশো গুন বেড়ে গেল
তীব্র ঠাসসস করে থাপ্পর মেরে দিলেও মুখের খাবার ফেলে না।রিদি যখন গালে হাত দিয়ে বলেছিল,
কালো মানুষ কে মেরে আপনার হাত কালো করলেন কেন।রক্ত কথা বলে প্রমাণিত হয়েছে!
রিদির ঐ টলমলে অশ্রু যেন শতভাগ করছিল হৃদয় কে। তীব্র বেরিয়ে নিজের বিল্ডিং এ আসে।রাগ না কমায় বেরিয়ে যায় বাইরে। সারাদিন বাইরেই থাকে। অফিসে নতুন কিছু কাজ চলছে তাই আপাতত অফিস বন্ধ।রাতে আবারো মেলিনা তীব্রর সংস্পর্শে আসতে চায়।তীব্র চেষ্টা করেও কাছে টানতে পারল না।কি অদৃশ্য শক্তি তাকে আটকে দিচ্ছে বার বার।
ইচ্ছে করেই আর বাসায় ফিরে নি তীব্র।নিজের বিল্ডিং এই থাকতে হয়েছে তাকে।রাতে খুব করে নিজের জন্য ভেবেছে তীব্র।সব ভেবে রিদিকে শত্রু ছাড়া কিছু মনে হয়নি তীব্রর কারন রিদির কারনেই তার মনের ভেতর অশান্তি শুরু হয়েছে।সে নিজের মনকে কিছুতেই বোঝাতে সক্ষম না।রিদিকে ভালবাসা ভাবার ভুল সে কখনোই করবে না তাই শত্রু হিসেবেই শেষ করতে হবে।তবে ছোট একটা মেয়ের সাথে শত্রুতা ইগোতে বাধল তীব্রর।
কিন্তু মনের ভেতর এই অশান্তি নিয়েও বাঁচা সম্ভব না তার পক্ষে।
বিকেলের দিকে রুমে বসে কাজ করছিল তীব্র। আপাতত তার বাসায় ই কাজ করা লাগবে।তখনি নজরে আসে দুইজন মেয়েকে।তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল দুইজন মানুষের দিকে।কালকের করা কান্ডের পরেও কারো মুখে খুশির ঝলক দেখে ভু কুঁচকে তাকাল তীব্র।রিদির হাসি তার সহ্য হলো না।সে তো কাদাতে চায়। কিন্তু তাকে কাদালেও যেন কষ্ট নিজের হয়।এতেই বেশ বিরক্ত তীব্র নিজের প্রতি। ওদের কথা শোনার জন্য নিজের ব্যাকনির সিসিটিভি ক্যামেরা ওন করে তীব্র। পাশাপাশি বেলকনি হওয়াই কথা শুনতে পাবে।
রিদি হাসলে ওর হাসির দিকে তাকিয়ে আছে তীব্র। রুপালি যখন বলল মন খারাপ করেছিস?
না আপু!!তোমার সাথে প্রেমালাপ হয়েছে!!(রিদি কথা এড়িয়ে বলে)
রুপালি লজ্জা পেয়ে বলে,
আসলে তেমন কিছু না।তবে ওনি তাকিয়ে থাকে আমার দিকে।
দিদি বলল,
আচ্ছা আপু।ভালবাসা নাকি ভয়ংকর সুন্দর।
ভয়ংকর সুন্দর হয় নাকি???
তা তো জানি না। উপন্যাস এ পড়েছি।রিদি কথাটা বলেই সামনে বিল্ডিং এর দিকে তাকাই। বিল্ডিং এর বেলকনিতে ফোন হাতে দাঁড়িয়ে আছে তীব্র।রিদির ভয়ংকর ভালবাসার কথা শুনেই মূলত ফোন হাতে বেলকনিতে দাঁড়াই।
নামের মতোই তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রিদির দিকে।রিদি চোখ সরিয়ে নিল। রুপালিকে ডেকে বলল,
তোমার উনি দাঁড়িয়ে তোমাকে দেখছে আপু,
রুপালি ভুকুচকে তাকাল। ততক্ষনে রিদি রুমে চলে এসেছে। তীব্র আসল আর সে চলে গেল এতেই মেজাজ খারাপ হলো তার।আর কি বলল “তোমার ওনি”!রাগে থাপ্পর মারতে ইচ্ছা করল রিদিকে। রাগে গজগজ করতে করতে রুমে চলে আসল। অকারণ রিদির ওপর রাগ হল।
সকাল সকাল জিম করা তীব্রর রেগুলার অভ্যাস।আজো তার ব্যাতিক্রম হয়নি। টাওয়াল গায়ে জরিয়ে বেলকনিতে দাড়াতেই চোখ যায় বাগনের দিকে।ফুলের বাগানে বেগুনি জামা পরিহিত এক রমনী।হাতে হাতে ছুয়ে দেখছে সব ফুল।তা থেকে কয়েকটা ফুল ছিড়ে মাথার ওরনা ফেলে বেনি করা চুলে গুজল কিছু ফুল। খিলখিল করে একাই হাসল।সেই হাসির দিকেই তাকিয়ে রইল তীব্র।
রিদি এদিকে তাকাতেই চোখাচোখি হল তাদের।তীব্র তাকিয়ে দেখল পা থেকে মাথা পর্যন্ত।রিদি দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেওয়াই এবারও রাগ হল।নেমে আসল নিচে।তবে এসেই পিছনে দাড়াল রিদির।আনমনেই কাছে চলে আসল।রিদির কাছে থেকে ভেসে আসছে মিষ্টি একটা ঘ্রান।সেটাই ঘ্রাণ ই নিল তীব্র।হুট করেই রিদি ঘুরে দাড়াতেই ব্যাঘাত ঘটল রিদির ঘ্রাণ নেওয়াই।রিদি ঘুরতেই ধাক্কা লাগল দুইজনের।রিদি চটজলদি সরেও গেল। তীব্র ঠায় দাঁড়িয়ে রইল।নাম জানতে চাইলে রিদি অনিচ্ছা সত্ত্বেও যে বলল তা বুঝল তীব্র।রিদির সাথে কথা বলতে বেশ ভালোই লাগল তীব্রর। কিন্তু তার টলমলে দৃষ্টি যেন আবারো ব্যাথা বাড়িয়ে দিল।
রিদির সাথে কথার মাঝেই নজর যায় রিদির গায়ে লাল আলো দেখে।ভু কুঁচকে ঝট করেই নিজের সাথে চেপে ধরল তীব্র।আজানা ভয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল নিজের সাথে।হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়লেও যতটা না কষ্ট হল।রিদিকে তখনকার অবস্থায় ভেবেই আত্বা শুকিয়ে গেলো।রিদিকে আরো একটু শক্ত করে ধরল।ভয়ে বুকের বা পাশে ধক ধক শব্দটা প্রখর হয়েছিল যেন। মুহূর্তেই রাগ বেড়ে গেল তীব্রর।কার সাহস তার বাড়িতে গুলি চালানোর।রিদি তীব্রর রাগী চেহেরা দেখে ভয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতেই রাগ আরো বারল তীব্রর। কিন্তু নিজের ক্ষতের জন্য রিদির চেহেরায় কষ্ট দেখে ভালো লাগলো তার।শান্ত হয়ে এলো ভয়ংকর দৃষ্টি।ওরনা বেঁধে দিলেও মানা করল না তীব্র।রিদিতার তার জন্য কষ্ট পাওয়া কোথাও যেন ভালো লাগলো অনেক।
সবার চেঁচামেচির শুনে রাগ বাড়ল তীব্রর।গুলি যে তার ওপর চলানো হয়নি তা সিউর হলেও রিদির উপর চালানো হয়েছে এতেই ক্ষিপ্ত হল তীব্র।রিদি হাত ধরতে আসলেই ভয়ংকর ভাবে গজ্রে উঠে। কিন্তু রিদির সাহসের সাথে তার হাত ধরায় অবাক হয়েই পা মেলালো।
রিদি ব্যান্ডেজ করছে আর তীব্র খুটিয়ে খুঁটিয়ে রিদি কে দেখছে।রিদির প্রতি আকর্ষণ অনুভব করলেও রাগ হলো কেন তার প্রতি আকর্ষিত হবে সে।অভাব নাকি তার!তীব্রর ভাবনার মাঝেই আমেনা বেগমের রিদিকে মারার দৃশ্য রাগ উঠালেও রিদির চুপ থাকার জন্য এবার ভয়ংকর হয়ে উঠল তীব্র।মার যেন তীব্রর গায়েই লাগছে এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে রিদির গলা চেপে ধরল। সমস্ত রাগ যেন রিদির উপরে পড়ল।কেন এই মেয়ে তাকে এমন জালাচ্ছে।মার নিজে খাচ্ছে অথচ যন্ত্রণা তার হচ্ছে।সে কেন সহ্য করবে এসব। জ্বালিয়ে দিবে না!!তাকে এমন অস্থিরতায় রেখে মজা নেওয়া হচ্ছে।সব নতুন অনূভুতি অনূভব করছে, যন্ত্রণা সহ্য করছে কেন করবে সে এসব??
কিন্তু রিদির কষ্টের মাএা দেখে নিজের বুকেই এলিয়ে দেয় মাথা। রাগের বশে করা কাজ তাকেই যন্ত্রণা দিচ্ছে।তীব্রর নিজেকে অসহ্য লাগছে।কেন?কেন এই মেয়েটার জন্য সে খারাপ ফিল করবে এতেই ক্ষিপ্ত সে। ভালোবাসা নামক অধ্যায় কোন কালেই তার পছন্দের তালিকায় ছিল না।বরং অপছন্দ তার।আর সেই অপছন্দ জিনিস ই সে ফিল করছে।তাহলে সে রাগবে না!!
আপনাতেই আমি পর্ব ১৯
রাগের মাথায় কাজটা করলেও রিদিকে ঙ্গানহীন এর মতো দেখে আঁতকে উঠে তীব্র। অদ্ভুত অস্থিরতায় সারা শরীর অবশ হয়ে গেছে তীব্রর।থম মেরে থেকে চেঁচিয়ে উঠল,রিদিকে তার চায় না এই বাসায়।হুমকি দিয়ে চলে গেলেও তাকে ঘিরে ধরল অস্থিরতা।জানতে চাইল রিদির কি বেশি কষ্ট হচ্ছে?? কিন্তু নিজের ইগো বজায় রাখতে সে অস্থিরতায় ই পার করল সারাটা দিন।