মি মাফিয়া পর্ব ২

মি মাফিয়া পর্ব ২
সুমাইয়া সাবিহা

সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। রং মহলে আবদ্ধ পাখি গুলো যেনো একটু ঠাঁই পাওয়ার আসায় এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে , পাখিরা যেমন তাদের বাসা নতুন করে বাঁধাই করার জন্য নতুন জায়গায় একটু সুযোগ খুজতে থাকে ,,, আমার ও মনে হচ্ছে আমি নিজের বাড়ি শুন্য হয়ে নতুন বাসায় থাকার জন্য একটু সুবিধা খুঁজছি।
সকাল বেলা বৃষ্টির মধ্যে দিয়েই জাফর চাচা আমাদের বাড়ি গিয়ে আমাকে ঠিক দুপুরে কাঁদা মাঠে গাড়ি চালিয়ে পাকা রাস্তায় উঠে । আমি চেয়েও আটকাতে পারিনি বাঁধ্য হয়েই আসতে হয়েছে । হ্যাঁ আমার থাকতে কোনো অসুবিধা তো ছিলো না যদি আফরান ভাইয়া না থাকতো তবে অবশ্য আসার সময় সারা টা রাস্তা একই দোয়া করেছি যেনো ভাইয়ার কিছু মনে না থাকে আমি যেনো ভাইয়ার মুখোমুখি কোনো দিন না হই ।
গাড়ি এসে পার্ক করলো চৌধুরী বাড়ির গেটের সামনে । বিশাল বড় গেইট রাজকীয় কাজ করা তাতে । গাড়ি থেকে নামতেই দেখলাম দুতলা সাদা রঙের মাঝে সোনালী চারুকাজ করা । আমি বাড়ির দিকে তাকিয়ে একটু অবাক দৃষ্টিতে দেখতে লাগলাম ।
জাফর চাচা বলে উঠলেন

__ কিরে মা কি দেখছিস? ভেতরে যা ।
আমি আমতা আমতা করে বললাম
__ চাচা আমাকে এখানে কি সত্যি থাকতে হবে ? না থাকলে হয় না – ?
কথা টা বলার সাথে সাথে বুঝতে পারলাম আমার কথা টা বলা ঠিক হয়নি । চাচার চেহারা টা সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।আসলে আমিও বলতে চাইনি মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে । এখন আর কি করার বলে তো ফেলেছিই এখন তো কিছুই করার নেই । তবুও চাচাকে মানাতে চাইলাম কথা কাটিয়ে
__ সরি চাচা ভূলে..
আমার কথা টা শেষ না হতেই চাচা আমার মাথায় স্নেহের ছোঁয়া দিয়ে বললেন
__মা তোর কি বেশি খারাপ লাগছে? আমার কাছে থাকলে তোর কি বেশি অসুবিধা হবে? আমার বাড়িটা একদম নারী শুন্য খোলা আকাশ মনে হয় রে মা, জানিস যখন তোর চাচী ছিল বাড়ি তে খুব ভালো লাগতো । এক হাতে সব সামাল দিতো কিন্তু….

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আর কিছু বলার আগেই চাচার চোখ ছলছল করে উঠলো আমি সেটা বুঝে নিয়ে চাচা কে আশ্বাস দিয়ে বললাম,,
__চাচা তুমি মন খারাপ করো না । আচ্ছা ছাড়ো আমি এখানেই থাকবো যাচ্ছি না কোথাও তোমাকে ছাড়া । এখন থেকে আমি তোমার মেয়ে হুঁ ।
আমার কথায় চাচা যেনো আরো কয়েক হাজার বছর বেঁচে থাকার আশ্বাস পেলেন । খুশি তে উৎফুল্ল হয়ে বলে উঠলেন,
__ সত্যি বলছিস মা ?
__ হ্যাঁ সত্যি, কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে
___এতে আবার কি শর্ত আছে?
___তোমার বড় ছেলে যদি আমাকে কখনো মারার চেষ্টা করে তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে । বড় কথা হচ্ছে তোমার বড় ছেলে যেনো আমি এখানে আছি সেটা না জানতে পারে ।
কথা টা বলে আমি অভিমানী দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম চাচার দিকে ।
__ঠিক আছে বলবো না কিন্তু….
কথা শেষ না করে চাচা কথা ঘুরিয়ে বললো এখন চল এতো ঝড় হাওয়ায় আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না,,
পাশে ছাতা হাতে ধরে থাকা মধ্যবয়স্ক লোকটি বললো,

__স্যার একটা কথা বলার ছিল । আসলে স্যার ছোট সাহেব আজ…..
কথা টা শেষ করতে দিলো না জাফর চাচা । তার আগেই চাচা বললো,
__তোকে কথা বলতে বলেছি এখন?আর এখন কোনো কথা হবেনা ভেতরে গিয়ে বলিস।
বলে হাঁটতে শুরু করল সামনের দিকে সঙ্গে আমিও চাচার সঙ্গে পা মিলিয়ে হাটতে লাগলাম।
চারদিকে বাড়ির সৌন্দর্য বাহির থেকে যতটা না দেখলাম তার চেয়েও দিগুন অবাক হলাম ভিতরে গিয়ে । কি সুন্দর করে সাজানো । দোতলায় উঠার আগে চোখ পড়লো বাড়ির দুই দিক দিয়ে সিঁড়ি আছে, রাজকীয় একটু ঘূর্ণিয়মান হয়ে নিচের দিকে । সিস্টেম টা আমার বেশ ভালোই লেগেছে। বিশাল বড় ড্রয়িং রুমে চারদিকে দেয়ালে বিভিন্ন টাইপের পেইন্টিং লাগানো । আবার ঘরের প্রতিটা দেয়ালের কর্নারে মাঝারি সাইজের মূর্তি , হয়তো সৌন্দর্যের জন্য রাখা হয়েছে । চারদিকে মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম সব তখন হঠাৎ চাচার কথায় আমার ধ্যান ভাঙে,

__কিরে মা কি দেখছিস ?
___ এমনি আর কি । আমি কোথায় থাকবো? আমি ফ্রেস হবো চাচা আমার ভিষন গরম লাগছে!
__কি বলিস ? এই ঝড় হাওয়ায় বৃষ্টি পাতে তোর গরম লাগছে?
__আসলে অনেক টা সময় গাড়িতে ছিলাম তো তাই একটু,
__আচ্ছা !
চাচার পাশের লোকটি কে চোখে ইশারা করতেই লোকটি আমাকে বলল,ম্যাম আসুন আপনার রোমটা দেখিয়ে দিচ্ছি।
__আপনি মনে হয় চাচার সাথেই সবসময় থাকেন ,আই মিন বিশেষ এসিস্ট্যান্ট?
লোকটি বললো
__ হ্যা আপনি ঠিক ধরেছেন।
__আচ্ছা ঠিক আছে ,আর শুনুন আমাকে ম্যাম ডাকার প্রয়োজন নেই,
লোকটি বললো

___ষতাহলে ম্যাম কি বলে সম্বোধন করবো?
আমি লোকটির কথায় ভাবতে লাগলাম ঠিকই তো তাহলে কি বলে ডাকবে? আমার ভাবার মাঝেই চাচা বললেন,
__তোর কি অসুবিধা হয় ম্যাম ডাকলে?
___অসুবিধা হয়না চাচা কিন্তু….
আমাকে আর বলতে না দিয়ে চাচা বললেন
__তাহলে তো সমস্যা নাই যেটা ডাকছে সেটাই থাক।
__আমিও আর কিছু বললাম না

বিকেলে চাচার সাথে নাস্তা করে রুমে আসলাম । একটু বিশ্রাম নিয়ে ভাবলাম ছাদ থেকে ঘুরে আসি,এমনিতে চাচা বলেছেন তার ছেলে নাকি বরাবরই বাড়িতে থাকেন না । কোথায় থাকে কে জানে । তবে ২/৩ দিন পর পর আসে রাত টা থেকে আবার চলে যায় ।
কথাটা শুনার পর আমি যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম । তার মানে আমি চাইলেই লুকিয়ে থাকতে পারি একদিন এর জন্য । এটা ভেবেই খুশিতে আত্মহারা আমার মন ।

বাসায় কোনো রান্নার লোক নেই তবে বাড়ি টা পরিস্কার আর গুছিয়ে রাখার জন্য ৩/৪ জন গার্ডস প্লাস কাজের লোক আছে । এখন আমি এসেছি তাই রান্না বান্নার লোক রাখবে চাচা বললো । বেশ ভালোই হয়েছে , নিজেকে স্বাধীন মনে হচ্ছে আজ । বাড়িতে এমনিতেই থেকে থেকে বোর হচ্ছিলাম তাছাড়া উঠতে বসতে মায়ের গা ছারা কথা গুলো ও এখন আর শুনতে হবেনা । এটা ভেবেই আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম । ছাদ থেকে চোখ পড়লো বাড়ির সামনের বিভিন্ন ফুলের গাছ দেখে মন টা ভরে গেল ফুলের সুবাস পাচ্ছি কিনা জানি না তবে ফুল গুলোকে একটু ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে এই মুহূর্তে,তাই ঝটপট দেড়ি না করে দৌড়ে সিঁড়ির কাছে নামতে যাবো তার আগেই চোখ পড়লো একটা রুমের দিকে । গলা উঁচিয়ে দেখতে চেষ্টা করলাম আমার কাছে রুম টা খুব আকর্ষণীয় মনে হলো কারন বাকি রুম গুলো থেকে অন্য রকম লাগলো ।

তখন আমার এই রুমটায় যাওয়া হয়নি । এই রুম টা কর্নারে ছিল বিধায় সব গুলো দেখতে দেখতে এটা আর ইচ্ছে হচ্ছিল না তখন । তাছাড়া রুম টা তখন লক করা ছিল মনে হয় । মাথার চুলকিয়ে নিশ্চিত হলাম- হ্যাঁ এই রুম টা তখন লক করা ছিল । এখন খোলা আছে কিন্তু দরজাটা পুরো টা খোলা না হলেও একটু ফাঁকা দিয়ে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে লাইট জ্বলছে আর ফুলের তুরা টা নিচে ভেঙ্গে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে আছে ।

কে ফেললো এই ফুলের টপ টা আশ্চর্য । গার্ড গুলো ঠিক মতো গুছিয়ে রাখতেও জানেনা অবশ্য জানবে বা কি করে মহিলাদের গুছানো আর পুরুষ দের গুছানো এক হলো নাকি । বলতে বলতে রুমে গিয়ে দরজা খুলেই কোনো দিকে না তাকিয়ে বসে পরলাম এটা পরিস্কার করতে । কাঁচা ফুলের ঘ্রাণ নিতে চোখ বন্ধ করে নিলাম অনুভূতি গুলো যেনো উরু উরু শুরু করে দিয়েছে । কি সুন্দর মন মাতানো ঘ্রান । আচ্ছা বাকি সব গুলো রুমেও কি কাঁচা ফুল নাকি প্লাস্টিকের ভাবতে লাগলাম,,তার মধ্যেই হঠাৎ মনে হলো আমার সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে আচমকা চোখের উপর ছায়া পরতেই চোখ খুলে উপরে তাকালাম
সত্যি বলতে এখানে আসাটাই উচিত হয়নি । কে জানতো আজকেই আমার এই বাড়ি তে চির নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হবে ? আমি কি জানতাম যে,আজকেই এই মাফিয়া ভাই টা এই বাড়িতে আসবে ? আমাকে কেউ কেনো বললো না যে আজই আসবে ,,,ভাবতে ভাবতেই ঠোঁট উল্টে কেঁদে দিলাম । এ্যাঁ এ্যাঁ,,,….
হঠাৎ কারো জোড় প্রয়োগ শক্তি আমার বাহুতে লাগতেই চোখ তুলে তাকালাম, আমাকে বসা থেকে উঠিয়ে সব টা শক্তি দিয়েই মনে হয় শক্ত করে ধরে আছে আমি ভয়ে কাঁপতে থাকি,,
দৃঢ় কন্ঠে আমাকে বাহু চেপে ধরে বললো

__ হু আর ইউ ?
আমি কাঁপতে থাকলাম । তার চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে মনে হলো এখনি আমাকে মেরে মাটিতে পুঁতে দিবে ।
আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
__আ..আসলে আমি এখানে …
আমার কথার অপেক্ষায় না থেকে আবারো আরো শক্ত করে আমার বাহু চেপে ধরে বলতে লাগল ,
__আনসার মি,!হু আর ইউ?
আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে,,এতো শক্ত হাতে ধরেছে মনে হচ্ছে এখনি হাত দুইটা বডি থেকে আলাদা হয়ে যাবে , ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে বললাম,আমার লাগছে ছাড়ুন আমাকে।
এবার আর কোনো কথা না বলে আমাকে সিঁড়ি দিয়ে টেনে হেঁচড়ে নামাতে নামাতে চেঁচিয়ে বলতে লাগল – বাবা ! বাবা !
তার কথায় বাড়ির গার্ডস রা ড্রয়িং রুমে এসে দাঁড়ালো ।তখন হয়তো চাচা বাড়ি ছিল না তাই চাচাকে দেখতে পাইনি ।উনি একজন গার্ড এর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগল বাবা কোথায় ?
গার্ড উত্তর দিলো,

__ বড় স্যার ছোট সাব কে আনতে গেছেন ।
__ এই মেয়েটা এখানে কেন ? এই বাড়িতে কি করছে ? কার কি হয় ? হুঁ ইজ শি ?
একজন গার্ড এগিয়ে এসে বললো,
__স্যার আমরা তো জানিনা তবে স্যার কে দেখেছি দুপুরে তাকে নিয়ে আসতে । যাওয়ার সময় বলে গেছেন যেনো তার দিকে খেয়াল রাখি উনি উনার মেয়ে হয় ।
___এ্যাঁ এ্যাঁ ! দিলেন তো ফাঁসিয়ে আমাকে । চাচা বলেছিল তার মাফিয়া ছেলেকে বলবেনা এখন কি হবে ….
ঠোঁট উল্টে কেদে ফেললাম আমি ।
আফরান হঠাৎ ই আরিয়া কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় । আরিয়া টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে যায় ।
আফরান আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে যায়।
গার্ড দের একজন এগিয়ে এসে বলল
__ম্যাম,আসলে বড় সাহেব একটু এমনি রুড । কিছু মনে করবেননা ।
বলতে বলতে আরিয়া কে ফ্লোর থেকে টেনে তুলল। হয়তো আপনাকে চিনতে অসুবিধা হয়েছে সাহেবের তাই আর কি
__ আপনি উনার কি হন?
আমি কান্না থামিয়ে নাক মুছতে মুছতে বললাম
__আমি এই লোকটার কিছু হইনা
বলেই সেখান থেকে নিজের রুমে গিয়ে বালিশে মুখ গুজে কাঁদতে লাগলাম

পরিবেশ টা একটু গরম । জাফর সাহেব রাগান্বিত এই মুহূর্তে, সন্ধ্যা বেলার বিষয় টা তার কান অবদি পৌঁছেছে । তাই জাফর তার বড় ছেলেকে ডেকেছেন ।
আফরান এসে বললো ,
__ এভাবে ডাকার মানে কি ?
কথাটা বলেই খেয়াল করলো জাফরের পাশে আরিয়া কে । সাথে সাথে মাথার রক্ত গুলো যেনো নাড়া দিয়ে উঠলো । আরিয়া আফরান এর চোখ দেখে এই মুহূর্তে বুঝে গেছে এখন তার কপালে আবারো দুঃখ আছে তাই ভয়ে কিছু বলার আগেই দুই ঠোঁট বেঁকে কেঁদে ফেলল।
জাফর সাহেব বুঝলেন না আবার হঠাৎ কি হলো । আরিয়ার কান্নার কারন জিজ্ঞেস করে বলল ,
__ আবার কি হলো কাঁদছিস কেনো?
আরিয়া কিছু না বলে একই ভাবে কাঁদতে লাগল।
জাফর সাহেব একটু তিক্ষ্ম দৃষ্টি ফেললেন এবার বুঝল আরিয়ার কান্নার কারন । তিনি আফরানের দিকে তাকিয়ে বললেন,,

__তুই কি মানুষ হবি না নাকি? মেয়েটা কে ভয় দেখানোর মানে কি? আর তুই সন্ধ্যায় ওর গায়ে হাত তুলেছিল এটা সত্য?
আফরান এক দৃষ্টিতে দুহাত মুষ্টিমেয় করে কপাল কুঁচকে এখনো আরিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে ,,
__আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করছি শুনছিস না
__এ ধরনের মেয়ে কে কি আদর করবো বসে বসে?
আফরানের কথায় জাফর সাহেব তেতে উঠলেন,”ঠাস”

মি মাফিয়া পর্ব ১

আফরান হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । গার্ড রা তো অবাক হয়ে সেসব দেখছে । হঠাৎ কি হলো কারো বোধগম্য হলোনা । আফরান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
__বাবা তুমি আমার গায়ে হাত তুললে তাও এই মেয়েটার জন্য ?
…তারপর…..

মি মাফিয়া পর্ব ৩