মি মাফিয়া পর্ব ৫
সুমাইয়া সাবিহা
বাড়িতে থাকতে হলে আমি যেভাবে বলবো ঐভাবেই থাকতে হবে তা নাহলে আমার চেয়ে খারাপ কিন্তু কেউ হবেনা,, বলে আমার ডান হাতের মুঠোর চুরি গুলো চাপ দিয়ে ভাঙ্গলো আমি হাতের ব্যাথায় সহ্যের সীমার বাইরে গিয়ে চোখ বন্ধ করে বাম হাতে ভাইয়ার শার্টের বোতাম দুটো খোলা ছিল এখানেই খুব জোড়ে খামচির মতো করে চেপে ধরলাম কিন্তু কোনো শব্দ করে আওয়াজ করলাম না ,,আমার মনে হলো আমি এখনি নিঃশ্বাস ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমাবো,,ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিলো কখন তা বুজে উঠতে পারলাম না ,, শুধু মিনিট কয়েক পর শান্ত হয়ে চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করলাম ভাইয়ার বুকে ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে ।
আমি ভাইয়া কে ঠিক বুজতে পারলাম না কি হচ্ছে আমি এভাবেই কেঁদে চলছি অনবরত। হঠাৎ কেমন যেনো মনে হলো ভাইয়া আমাকে এমন করে চেপে শ্বাস রূদ্ধ করে মেরে ফেলবে তার জন্য এমন করে ধরেছে ।
কথা টা ভাবতেই আমি ভাইয়াকে আচমকা এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে খাট থেকে নেমে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দৌড়ে চলে যেতে চাইলাম কিন্তু তার আগেই ভাইয়া আমার হাত পেছন থেকে শক্ত করে ধরে আটকে দিলো ।
আমি অনুরোধ করে বলতে লাগলাম
__,ভাইয়া প্লীজ আমাকে মেরো না । বিশ্বাস করো আমি তখন ছোট ছিলাম বুঝিনি সত্যি বলছি ।
ভাইয়া মনে হয় আমার কথার তাৎপর্য বুঝে উঠতে পারেনি চেহারা তেই সেটা প্রকাশ পেলো। কিন্তু আগ বাড়িয়ে প্রশ্ন করলো না । উল্টো আমাকে শক্ত হাতে টেনে খাটের উপর বসালো। আমি ছোটার জন্য ছটফট করতে লাগলাম।
ভাইয়া কর্কশ শব্দে বললো,
__আর একটু নরবি তো মেরে এখানেই পুঁতে দিবো বুঝলি ।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ভাইয়া আমার অন্য হাতের চুরি গুলো এবার আসতে ধীরে খুলতে খুলতে বললো
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
___ কোনো আওয়াজ করবি না নয়তো মেরে এখানেই পিস পিস করে করে কেটে রেখে দিবো ।
ভাইয়ার কথায় আমি ভীত হয়ে নিজের হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরার জন্য হাত কাছে নিয়ে আসতেই লক্ষ্য করলাম হাত থেকে টিপ টিপ রক্ত ঝরছে । ভয়ের গতি আমার রুমে বেড়ে উঠে রক্ত দেখে তাই ফুপিয়ে উঠলাম আমি । এখন চিৎকার করে কাঁদতে চাচ্ছি কিন্তু এই মাফিয়া ভাইটার জন্য কি আমি এভাবে কাদতে পারবো ? বাঁচতে হলে এখন এভাবেই থাকতে হবে । ভেবেই এভাবে ফুঁপিয়ে উঠলাম ।
মিনিটের মাথায় ভাইয়া শান্ত গলায় বললো
__গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়
আমি কিছু না বলে ডান হাতের রক্তের দিকে তাকিয়ে গুঙাতে লাগলাম।
ভাইয়া একবার আমার চোখ বরাবর সেদিকে তাকিয়ে কথা না বাড়িয়ে আমাকে টেনে ওয়াশরুমে নিয়ে গেল । তারপর রক্ত মাখা হাতটা ধুয়ে বলল
__ফ্রেশ হয়ে আস । বলে ভাইয়া ওয়াশ রুম ছেড়ে রুমে চলে গেল ।
এই মেয়েটা কি ওয়াশ রুমেই ঘুমিয়ে গেল নাকি এখনো আসছে না কেনো? ভেবে ওয়াশরুমের দরজায় কড়া নাড়লো আফরান ,
__এই আরু কি করছিস বাথরুমে এতোক্ষণ ? তাড়াতাড়ি বের হবি নাকি দরজা ভাঙবো। কথা টা বলার সাথে সাথে আরিয়া দরজা খুলল।
আফরান একবার আরিয়া কে কপাল কুঁচকে পরখ করে নিয়ে কিছু না বলে ঐদিকে চলে গেল । আরিয়া এটাকে সুযোগ বুঝে এক দৌরে দরজা খুলে ভো…দৌড় ।
আফরান তাৎক্ষণিক বিষয়টা কিছুই বুঝলো না । রাগে দাঁত কটমোট করতে লাগলো । দুহাত মুষ্টিবদ্ধ করে দরজার দিকে তাকিয়ে রইল।
রাত্রে বেলা জাফর সাহেব ডাক্তার ডেকে আরিরিয়াকে দেখিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে হাতে ব্যান্ডেজ করে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে গেছে ।
আরিয়া কে বলল আর যেন আফরানের সাথে কথা না বলে তার আশেপাশেও যেন না যায় শুধু শুধু ওই ছেলেটা তাকে অত্যাচার করে সাহেবের একদম পছন্দ না,,
আরিয়ার এই অবস্থা দেখে আয়শের মাথা বিগরে গেল কিন্তু কিছু করার নেই তার । কি বা করবে? সে কি আফরানের সাথে পেরে উঠবে নাকি তাছাড়া সে উগ্র পরিস্থিতি চায় না ।
জাফর সাহেব বললেন ,
____মা নেই ছেলেটার দিনে দিনে বিগরে গেছে মা থাকলে হয়তো এমন হতো না কথাটা শুনে আয়শ বললো,
___যেখানে সেখানে মাকে টেনে আনার দরকার কি বাবা ? যে যেমন হয়েছে সব কথা নিজের ক্যারেক্টার পরিশ্রমের কারণে হয়েছে , কই আমি তো আফরানের মত এমন নই তোমার ছেলে কাউকে সম্মান করতে পারে না এই কারণে সে এমন হয়েছে তার মধ্যে কোন সম্মানবোধ অথবা আফসোস বোধ কিছুই নেই ।
মোটকথা কথা কি জানো ! এমন ছেলেকে জন্ম দিয়ে আমার মনে হয় তোমরা পাপ করেছো না হলে এইটুকু একটা মেয়ের উপরে এভাবে কেউ অত্যাচার করতে পারে? হাতটা দেখেছো কতটা গভীরভাবে ক্ষত হয়েছে।
আয়শের কথা টা কানে পৌঁছাতেই জাফর সাহেব ঠাস করে চর বসালেন আয়শের গালে।
এত বড় কথা বলার সাহস তোকে কে দিল? মানলাম ছেলেটা দিনে দিনে বিগরে যাচ্ছে মোটকথা হাতের বাহিরেই চলে গেছে ধরলাম । মানলাম সে মাফিয়া গ্যাংস্টারদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে চলে তাই বলে তুই ওর জন্ম নিয়ে কথা বলতে পারিস না এই শিক্ষাই দিয়েছি তোকে ?
আয়েশ বলল ,
__ হ্যাঁ ভালো কথা বললে বাবা, আমার শিক্ষাই কম হয়েছে ঐদিন কলেজে ছিলাম কিছু পুলিশ এসে আমাকে বলো তারা নাকি তোমার নাম্বার বন্ধ পেয়েছিল ও বিধায় আমার খোজ করে তারা কলেজে পৌঁছে যায় কারণ কি? কারণ তোমার ছেলে নাকি একজন ভদ্র লোক কে খুন করেছে।
জাফর আয়শ কে আর কিছু না বলে রুম ছেড়ে চলে গেলো।
আয়শ বিরক্তি নিঃশ্বাস ফেলে,
মিনিট কয়েক পর আরিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে বললো,
___এখন কেমন লাগছে আগের থেকে?
__ জানিনা খুব ঘুম পাচ্ছে
__আচ্ছা তুই ঘুমা ওকে ? আর কিছু দরকার হলে আমাকে একবার কল করিস ।
আরিয়া মাথা নেড়ে সায় দেয় । পরক্ষনেই আবার বললো ভাইয়া আমার তো ফোন নেই ।
___ও.. আচ্ছা তাহলে আমি লতা খালা (কাজের মহিলা) কে তোর রুমে পাঠিয়ে দেই । আরিয়া মাথা নেড়ে সায় দিলো
__বারবার তোকে বলার পরেও আমার পিছনেই লেগে আছিস কেনো রে? তোর কি আর কাজ নেই ? আমি চাইলেই তরে ১বুলেটে মেরে ফেলতে পারি কিন্তু কেনো করছি না জানিস ? কারন ; তোর মা আমার কাছে কয়েকদিন আগেও কেঁদে কুটে পা ধরে তোকে বাঁচিয়ে রাখার মিনতি করে গেলো কিন্তু আমি মনে হয় তোর মায়ের অনুরোধ রাখতে পারবোনা ।
এটুকু বলে একটু উন্মাদ গলায় আবার বললো
__জানিস আমার না সব মায়েদের প্রতি এক আকাশ সমান শ্রদ্ধা আর সকল মেয়েদের প্রতি এক আকাশ সমান ঘৃণা, কিন্তু কেনো বলতে পারিস? মায়েদের মতো কেউ আগলে রাখেনা আর মেয়েদের মতো ধোকাবাজ মন আর কারো হয়না
এছাড়া সব আমার ইচ্ছা তে করি,,
এখন তোকে বলি বল কি চাস
এক / হয়তো আমার পিছন লাগা ছেড়ে দে নয়তো
দুই/ বুলেট বুকে নে ।
কোনটা তোর কাছে ভালো মনে হয় সেটা বল।
কথা টা বলতে বলতে আফরান টেবিলের উপর লাফিয়ে উঠে বসলো ।
পরনে কালো শার্ট হাতা ফোল্ড করে উপরে গুটাতে গুটাতে বললো তোর হাতে সময় ১০ সেকেন্ড যদি ডিসাইড করে থাকিস তাহলে তো ভালো আর না হলেই আমি মনে করব তুই দ্বিতীয় অপশনটাই ডিজার্ভ করিস।
আর যদি ডিসাইড করে থাকিস তাহলে বলব সুন্দরভাবে নিজের কোম্পানিটা আমার নামে ছেড়ে দে। নয়তো ওটা উড়িয়ে দেব ।আমাকে বাধ্য করিস না,,আমার ভিষন খারাপ লাগে যখন আমি কারো সাথে বাধ্য হয়ে কিছু করি।
__স্টার্ট নাউ ।
বলে আফরান হাতের ঘড়িতে চোখ বুলালো।
পরিবেশটা শান্ত কারো কোনো কথা নেই হঠাৎ ই লোকটা তার শার্ট এর পেছনে থেকে বন্দুক বের করে আফরনের মাথায় ঠেকালো,,
আফরান লোকটার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,, আমি তোর ট্যালেন্ট দেখে অবাক হলাম ভীষণ অবাক হলাম তুই সেটা বুঝলি না কার সাথে কি করে বসলি । কিন্তু কি জানিস আমি আগে থেকেই জানতাম এমন কিছুই হবে।
লোকটা থতমত খেয়ে গেলো মাথার সামনে বন্ধুক অথচ আফরানের এমন আচরণের কারনে , জিবনের ভয় নেই নাকি ,?, হ্যাঁ এই মাফিয়ার জীবনের ভয় নেই সেটা তার জানা কিন্তু তবুও সামনে বন্ধুক দেখেও কেউ এমন নরমাল বেহাভিওর করে কিভাবে ,,লোকটার কপাল থেকে কনা কনা ঘাম ঝড়তে থাকলো
আকস্মিক লোকটা আফরানের পায়ের নিচে লুটিয়ে পরে কেদেকুটে বুক ভাসিয়ে বলতে লাগলো ,,
__ভূল করে ফেলেছি বস আর করবো না ,,শেষ বারের মতো মাফ করে দেন আমি আমার কোম্পানি ছেড়ে দেবো আর কখনো আপনার পেছনে লাগবো না । জীবনের ভিক্ষা চাইছি স্যার ভুল করেছি আমি , বলে বলে মিনতি করতে লাগলো আফরানের কাছে।
আফরান বাঁকা হেসে বলল’
__তাই ? ভুল করেছিস ?আচ্ছা?ভূল যখন বুজতে পেরেছিস তাহলে আর কি করার যা ছেড়ে দিলাম ।লোকটা তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে গেলো , উৎফুল্ল হয়ে বলতে লাগল স্যার আমাকে .. কথাটা শেষ করার আগেই আফরান এর টেবিলের উপরে ফল রাখা ঝুড়িটার উপর থেকে ছুরি টা নিয়ে হাত উল্টিয়ে লোকটার ঠিক বুকের মাঝ বরাবর বসিয়ে দিলো,
আফরান:ভূল যখন বুঝতে পেরেছিস তাহলে মাফ না করলে হয় বলতো,,বারবার সুযোগ পেয়েও নিজেই হেঁয়ালি করছিস আমার কিছু করার আছে বল?
লোকটা আফরানের বুকের উপর ঢোলে পরল আফরান বিরক্তি মুখ নিয়ে বলল ,
__ছেহ তোর কি পরার মতো আর জায়গা ছিল না এখানেই পরতে হলো সালে । বলে ধাক্কা দিয়ে লোকটাকে নিচে ফেলে দিলো,আফরানের পাশে থাকা তার এসিস্ট্যান্ট তানভীর কে চোখে কি যেনো ইশারা করে সেখান থেকে চলে গেলো তখন সময়টা প্রায় রাত ১২ টার উপরে হবে।
আয়শ:এটা তোর জন্য
আরিয়া: সত্যি বলছো ভাইয়া
আয়শ হেসে বললো: মিথ্যা বলছি তোর মনে হয় ?
আরিয়া কিছু না বসে খুশিতে লাফিয়ে আয়শের হাত থেকে ফোন টা নিল ।
আয়শ:ফোন দিয়েছি কিন্তু বেশি ব্যাবহার করবি না পড়া থেকে যেনো ফোনের গুরুত্ব বেশি কখনো না হয় ঠিক আছে?
আরিয়া:আমি জানি বলতে হবেনা হুম
এমন সময় সামিরা এসে বললো এখানে কি প্রেম চলছে নাকি আহা কি রোমান্টিক প্রেমিক তার প্রেমিকাকে ফোন গিফট করছে আহা কি সুন্দর দৃশ্য
আয়শ সামিরা কে চোখ ঘুরায়
আরিয়া:আরে কি বলছো ভাইয়া আমাকে এটা দিয়েছে ,,প্রেমিক কেনো দিবে?
মি মাফিয়া পর্ব ৪
সামিরা হুঁ হুঁ করে হেসে বললো তোমার মাথায় তো দেখছি বুদ্ধি একটু কম আছে।
আরিয়া :আমি আবার কি করলাম আমার মাথায় বুদ্ধি কম হতে যাবে কেন আমিও বুদ্ধিমতি ।
ভাইয়া আমাকে ফোনটা দিয়েছে কারন আমার একা ভালো লাগেনা আর প্রয়োজন ও তো হয় তাছাড়া ভাইয়া প্রেমিক কি করে হবে?ভাইয়ারা কখনো প্রেমিক হয় নাকি
আয়শ আরিয়ার কথায় থতমত খায়,এটা বুজে গেছে আরিয়া ভাইয়া বলতে ভাইয়াই বুজে ।আর বেশি কিছু না সেটা অন্য ভাই আর নিজের ভাইয়ের মধ্যে পার্থক্য একটু কম বুজে।আর তার তো কোনো ভাই নাই আফরান আর আয়শই সেটাও চাচাতো ভাই , তারপর…….