প্রণয়ের অমল কাব্য শেষ পর্ব 

প্রণয়ের অমল কাব্য শেষ পর্ব 
Drm Shohag

মাইরার মুখে হালকা প্রসাধনীর ছোঁয়া। মাথায় ঘোমটা টানা, গায়ে কালো শাড়ি জড়ানো। এটুকুতেই মেয়েটিকে কি সুন্দর লাগছে! ইরফান মাইরার গালে হাত দিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– মাইরা পরী
মাইরা লাজুক হাসলো। ইরফান তাকে পুরো রেডি করিয়ে দিয়েছে। ইরফান ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলে,
– ফাইভ মিনিটস ওয়েট কর।
বেশ কিছুক্ষণ পর ইরফান শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে। মাইরা দেখল ইরফানের পরনে কালো প্যান্ট, বেডের উপর থেকে কালো শার্ট নিয়ে গায়ে জড়ায় ইরফান। মাইরা নতুন করে আর কি অবাক হবে? এই লোক কালো বলতে পা’গ’ল। মাইরাকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইরফান মাইরার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
– হোয়াট?
মাইরা মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়। ইরফান বা হাতে মাইরার হাত ধরে, ডান হাতে তার ক্যামেরা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
সকালের আলো ফুটেছে মাত্র। আশেপাশে তেমন মানুষ নেই। গ্রামের রাস্তা দিয়ে মাঝে মাঝে দু’একজন মানুষ যাওয়া আসা করছে। ইরফান মাইরার হাত ধরে এগিয়ে যায়। মাইরা আশেপাশে তাকিয়ে বলে,

– কোথায় যাচ্ছেন শিসওয়ালা?
ইরফান বা হাত মাইরাকে তার বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
– তোমার পরিচিত এক জায়গায় যাচ্ছি বার্ডফ্লাওয়ার।
মাইরা ইরফানের সাথে হাঁটে। বেশ ভালো লাগছে তার। কিছুদূর যেতেই ইরফান মাইরাকে একটি গাছের নিচে গিয়ে দাঁড় করায়। মাইরা জায়গাটি দেখে হাসলো। কিছু মনে পড়লো যেন। এটা তো সেই জায়গা, যেখানে মাইরা প্রায়-ই মন খারাপ করে বসে থাকতো। বলা যায়, এই গাছটি মাইরার এককালের দুঃখের সঙ্গী ছিল। এখানে বসে কত কেঁদেছে। সেসব দিনের কথা মনে করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ইরফান মাইরাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– এক বিষন্ন বিকেলে বিষন্নতায় ঘেরা একটি ছোট্ট মেয়ে এই গাছতলায় বসে বসে আল্লাহর কাছে আর্জি করেছিল, সে যদি কোটিপতি হত!
ইরফানের কথা শুনে মাইরা ভীষণ অবাক হয়। ইরফান তার পকেট থেকে ফোন বের করে কিছু একটা দেখায়,, যেখানে মনে হলো,, বার্ডফ্লাওয়ার নামে একটি একাউন্ট, যেখানে প্রায় ৫ কোটি টাকা জমানো। ইরফান মাইরার কাঁধে থুতনি রেখে মৃদুস্বরে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– Now you are a millionaire, Birdflower.
মাইরার মনে পড়ে সেদিনের কথা। যেদিন লাবিবের বাবা তার সামনে থেকে খাবারের প্লেট ছুঁড়ে ফেলার পর সে এই গাছতলায় এসে কাঁদছিল আর এসব বলছিল। ইরফান এসব শুনে নিয়েছিল? মাইরার চোখজোড়া ভরে ওঠে। ইরফান তার ছোট্ট ছোট্ট ইচ্ছেগুলো কত নিঁখুতভাবে পূরণ করে! মাইরা নিজেকে সামলে উল্টো ঘুরে ইরফানের দিকে চেয়ে ভেজা গলায় বলে,
– এসব কেন করেছেন শিসওয়ালা?
ইরফান মাইরার ডান হাত তার বুকে চেপে মৃদুস্বরে বলে,
– তোমার ইচ্ছা পূরণ করলে এখানে অনেক শান্তি লাগে বার্ডফ্লাওয়ার।
একটু থেমে আবারও বলে,

– আমি তোমার আগে মা’রা গেলে তোমার কোনো টেনশন থাকবে না। এরকম পাঁচটি একাউন্ট আছে।
ইরফানের কথা শুনে মাইরা ঝাপসা চোখে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান মাইরার জলে ভরা টইটুম্বুর আঁখিজোড়া দেখল, তবে কিছু বলল না। মাইরা ইরফানের চোখে চোখ রেখে বলে,
– একদিন আমি মা’রা যাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম। সেদিন আপনি আমার পাশে এসে আমায় বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে আমায় কত যত্নে আগলে নিয়েছিলেন। তবে এখন আমার আগে চলে যেতে চেয়ে কেন আমায় ক’ষ্ট দিচ্ছেন শিসরাজ?
এটুকু বলতে বলতে মাইরার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। ইরফান চুপ থাকলো। মাইরা নাক টেনে বলে,

– আমি আপনার জন্য বাঁচতে চেয়েছিলাম, এখনও আপনার জন্যই বাঁচি শিসওয়ালা। আমার আপনি ছাড়া কে আছে বলুন তো? আপনি আমাদের আল্লাহকে একটু বলুন না, যেন আমি আমার শিসরাজের সাথে ম’রতে পারি। আমি শুধু রাতে আপনার বুকে ঘুমাতে চাই না,, আমি অনন্তকাল আপনার বুকে ঘুমাতে চাই শিসওয়ালা।
ইরফান অবাক হয়ে মাইরার দিকে চেয়ে রইল। ডান হাতে মাইরার চোখজোড়া মুছে দিয়ে বলে,
– হুশ, কাঁদে না। এই যে আছি। কোথাও যাচ্ছি না আমার হার্ট কে রেখে। আমি ডিসাইড করেছি, বিজনেস-এ যে টাইম দিতাম সেখান থেকে হাফ টাইম কেটে আমার মাইরার পরীর নামে লিখিয়ে দিব। হ্যাপি হও বউ।
মাইরা হেসে ফেলল। ইরফানের বুকে নাক ঘষল। এরপর ইরফানের হাত ধরে সামনের দিকে যেতে যেতে বলে,
– এবার আমি আপনাকে সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি। আসুন।

যেতে গিয়েও পিছে এসে নিচু হয়ে বসে। ইরফানের পা থেকে জোর করে জুতো খুলে দেয়, সাথে ইরফানের দু’পায়ের প্যান্ট হাঁটুর নিচ পর্যন্ত গুটিয়ে দেয়। ইরফান মাইরার কাজে বাঁধা দিল না। মাইরা ইরফানের হাত ধরে এগিয়ে গিয়ে ধানক্ষেতের পাশে যায়। দু’পাশে ধান, মাঝে চিকন আইল। মাইরা ইরফানের হাত ধরে ধরে এগিয়ে যায়। ইরফান মাইরাকে একজায়গায় দাঁড় করিয়ে মাইরার পিক উঠায় তার ক্যামেরার সাহায্যে।
এরপর ধানক্ষেতের একপাশে একটি মেশিন চালু করা যেখানে অনবরত পানি পড়ছে, পানিগুলো আইলের মাঝ দিয়ে বিভিন্ন ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে। মাইরা পানির পাশে গিয়ে দাঁড়ালে ইরফান অনেকগুলো পিক ওঠায়।
মাইরা মেশিন থেকে নির্গত পানি কিছুটা মুখে দেয়। ইরফান হাটুঁর নিচ পর্যন্ত পানির মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। মাইরার শাড়ি-ও অনেকটা ভিজে গিয়েছে। ইরফান মৃদু হেসে ডাকে,

– বার্ডফ্লাওয়ার?
মাইরা মুখে পানি দিয়ে ভেজা মুখে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালে ইরফান সাথে সাথে মাইরার পিক ক্লিক করে। মাইরা ইরফানের দিকে পানি পানি ছিটিয়ে খিলখিলিয়ে হাসে। ইরফান মুখ বাঁকিয়ে আবারও মাইরার দিকে তাকায়। মাইরার হাস্যজ্জ্বল পিক তার ক্যামেরায় বন্দী করে।
এরপর ইরফান তার ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে মাইরার দিকে এগিয়ে গিয়ে মাইরাকে কোলে তুলে নেয়। এরপর দুই আইলের মাঝখানে বেয়ে যাওয়া পানির মাঝ দিয়ে হাঁটে ইরফান। বেশ ভালো লাগছে তার।
মাইরা ডান হাতে ইরফানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– ভালোবসি শিসরাজ।
ইরফান আড়চোখে মাইরার দিকে তাকায়। সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে,
– আই নো বার্ডফ্লাওয়ার।
মাইরা মুখ ফুলিয়ে বলে,

– আপনি আমার কথার অ্যন্সার দেন না কেন?
ইরফান হাত তার দিকে সিটিয়ে মাইরাকে তার সাথে জড়িয়ে নিয়ে আবেগঘন কণ্ঠে বলে,
– ভালোবাসা ফিল করতে হয় বার্ডফ্লাওয়ার। এটা বলার জিনিস নয়।
মাইরা দু’হাতে ইরফানের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। আশেপাশে চোখ ঘুরালে তেমন কাউকেই দেখতে পায় না।
ইরফানের গিরার অনেকটা উপর পর্যন্ত পানি ছুঁইছুঁই। সেভাবেই ইরফান মাইরাকে কোলে নিয়ে হাঁটে। গ্রামীণ পরিবেশে সকালের এমন আবহাওয়ায় নতুন এক অনুভূতির সাথে পরিচিত হলো দু’জন।

সন্ধ্যার পর পর,
ইরফান আর শুদ্ধ ছাদে বসে আছে। ইরফান ল্যাপটপে কিছু কাজ করছে। শুদ্ধ সিগারেট খুব বেশি খায় না, তবে মাঝেমাঝেই না খেয়ে থাকতে পারেনা বেচারা। যেমন ইরফানের পাশে বসে সওগারেট টানতে ব্যস্ত। ভাবনায় আসে, সে প্রায় অনেক দিন যাবৎ, নাহ, শুধু অনেকদিন নয়, বেশ কয়েকমাস হলো ভুল করেও ইরফানের হাতে সিগারেট দেখেনি। ব্যাপারটা বোঝেনা। তার সামনে না খাক, এই কয়েকমাসে ভুল করে একবার হলেও একদিন তো চোখে পড়তো। কিন্তু নাহ, সে দেখেনি। কিছু একটা ভেবে ইরফানের দিকে তার ধরে রাখা সিগারেট বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
– ইরফান সিগারেট খাবি?
ইরফান ল্যাপটপে কাজ করতে করতে ধান্দায় শুদ্ধর হাত থেকে সিগারেট নেয়। লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ঠোঁটের ফাঁকে রাখে। এরপর হাতের লাইটার শুদ্ধর হাতে দিয়ে ডান হাতে সিগারেট ধরে সামনে চোখ পড়লে দরজায় মাইরাকে দেখল।
ইরফান বেশ কিছুক্ষণ মাইরার দিকে চেয়েই সিগারেট ছুঁড়ে ফেলল। মাইরার মুখে বিষাদের ছোয়া ছিল যা ইরফানের কান্ডে মুহুর্তেই তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ইরফানও সূক্ষ্ম হাসে।
শুদ্ধ ইরফানের দিকে চেয়ে অবাক হয়ে বলে,

– সিগারেট ছুঁড়ে ফেললি কেন?”
ইরফান মাইরার দিকে চেয়েই বলে,
– বার্ডফ্লাওয়ার লাইক করে না।
শুদ্ধ অবাক হয়ে বলে,
– না খেয়ে কেমনে থাকিস? ছাড়বি কেমনে?
ইরফানের সহজ স্বীকারোক্তি,
– ইট’স ডিফিকাল্ট। বাট, বার্ডফ্লাওয়ারের জন্য সবকিছু করতে পারি, সেটা যত ডিফিকাল্ট-ই হোক না কেন!
শুদ্ধ মাথায় হাত দিয়ে বলে,
– একটু কম কম ভালো হ ভাই! আমার বউ তো হার্টফেল করবে তোর মতো স্বামীকে দেখে! আমি এসব সিগারেট ছাড়তে পারবো না ভাই! ওরে বাবা! কি ভ’য়া’ন’ক কঠিক কাজ।
ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। মৃদুস্বরে বলে,
– আই ক্যান ডু এনিথিং ফর মাই বার্ডফ্লাওয়ার।
শুদ্ধ চুপ থাকলো। ইরফানের সাথে তার মেলানো যাবে। এই শা’লা অস্বাভাবিক। হাত দু’টোর কি অবস্থা করেছে।

ইরফান ছাদ থেকে এসে ঘুমিয়েছে। এখন রাত বাজে ১২ টা। মাইরা ইরফানের জন্য ভাত এনে বসে আছে।
ইরফান উল্টো হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। মাইরার মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি আসতেই সে ইরফানের দিকে এগিয়ে এসে ইরফানের কানের ভিতর এক আঙুল ঢুকিয়ে ঘোরায়। ইরফানের মুখে বিরক্তির ভাঁজ। মাইরা অনবরত এই কাজ করতে থাকে। ইরফান বিড়বিড় করে,
– স্টুপিট জ্বালিয়ো না।
মাইরা কী আর শোনার বান্দা! সে মিটিমিটি হেসে ইরফানের দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে ইরফানের কানে ফুউউউউ দেয়। ইরফান আবারও ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করে,
– স্টুপিট গার্ল, কি প্রবলেম? জ্বালাচ্ছো কেন?
মাইরা ইরফানের মুখ বরাবর মুখ রেখে বলে,

– উঠুন।
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– নো
মাইরাও বিরক্ত হয়। ইরফানকে আরও জ্বালায়। কিন্তু এই লোক আজ উঠবেনা বলে হয়তো পণ করেছে। মাইরা কিছু একটা ভেবে ইরফানের কানের কাছে মুখ নিয়ে শব্দ করে গেয়ে ওঠে,
– তুই জান রে
আমার জান রে
বেঁচে থাকার তুই কারণ
এটুকু বলতেই ইরফান ঠাস করে মাইরাকে বিছানায় ফেলে, মাইরার উপর আধশোয়া হয়। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরফান ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে,
– আমি তোমার কী?
মাইরা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে আমতা আমতা করে। ইরফান মাইরার দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলে,
– বলো? আমি তোমার কি?
মাইরা মিনমিন করে বলে,

– জ.জাআন
ইরফান মাইরার কাঁধে মুখ গুঁজে চোখ বুজে নেয়। মাইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে একটু টেনে টেনে ডাকে,
– জাআআন?
মাইরা কেঁপে ওঠে। ইরফান চোখ বুজেই মাইরার কাঁধে একটা গাঢ় চুমু আঁকে। আবারও একই কণ্ঠে বলে,
– ডিস্টার্ব করছিলে কেন জান? এবার আমি তোমায় ডিস্টার্ব করব। বি রেডি, ওকে জান?
মাইরা ঢোক গিলে। ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হাসলো। ইরফান মৃদুস্বরে বলে,
– ইউ নো বার্ডফ্লাওয়ার? টুডে, 16th জুলাই। ইওর বার্থডে।
Congratulations on turning 18, my love.
মাইরা দৃষ্টিতে বিস্ময়, সাথে অন্তরে। ইরফান মাইরার গলায় নাক ঘষে বলে,
– বার্ডফ্লাওয়ারকে খাবো বলে ঘুমিয়েছিলাম। আর ইউ রেডি, মাই জান?
মাইরার পুরো শরীর কেঁপে ওঠে। ইরফান মাথা তুলে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরার চোখেমুখে কেমন ভীতি সাথে চাপা উ’ত্তে’জ’না। ইরফান মাইরার চুলের ভাঁজে হাত ডুবিয়ে ঘোরের মাঝে বলে,
– মাইরা পরী তুমি এতো সুন্দর কেন? তুমি বড় হয়ে গেলে কেন বউ? আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ।
মাইরার দু’পায়ের তালুতে শিরশির অনুভূতি হয়। ঢোক গিলে মিনমিন করে বলে,
– ভাত খাবেন…..
ইরফান মাইরাকে কথা শেষ করতে দেয় না। মাইরার ঠোঁটজোড়া তার ঠোঁটজোরার ভাঁজে নিয়ে নেয়। মাইরা আবেশে চোখ বুজে নেয়। ইরফান বেশ অনেকটা সময় পর মাইরাকে ছেড়ে মাতালের
মতো কণ্ঠে আওড়ায়,

– যাস্ট তোমাকে খেতে চাই জান। নাথিং এলস্।
কথাটা বলতে বলতে মাইরার জামা কাঁধ থেকে নামিয়ে দেয়। মাইরার গলায় ছোট ছোট চুমু আঁকতে ব্যস্ত হয়, সাথে অবাধ্য হাতের বিচরণে মাইরাকে এলোমেলো করে।
মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে জড়ানো কণ্ঠে ডাকে,
– ভালোবাসি শিসওয়ালা।
ইরফান মাথা উঁচু করে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরার ভেজা চোখ। ইরফান মাইরার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বুজে আবেশিত কণ্ঠে আওড়ায়,
– লাউ ইউ ঠু মাই জান।

মাইরা চোখে পানি নিয়েও হেসে ফেলল। ইরফান মাইরার সারা মুখে ছোট ছোট চুমু আঁকে। মাইরার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে নেয়। দু’হাতে তার বার্ডফ্লাওয়ারকে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। মাইরা ছটফটিয়ে উঠলেও ইরফান মাইরাকে ছাড়লো না। বরং সময় পাল্লা যত বাড়ে, শিসরাজ তার বার্ডফ্লাওয়ারকে উম্মাদের ন্যায় নিজের করতে ব্যস্ত হয়। এতো বছরের তৃষ্ণা যেন সব আজ রাতে মিটিয়ে নিতে ভীষণ তৎপর মাইরার শিসওয়ালা।
যাকে বুকে নিয়ে গত দু’বছর ঘুমিয়েছে, আজ হঠাৎ-ই যেন সেই ধৈর্যশীল প্রেমিক ভীষণ-ই ধৈর্যহীন হয়ে পড়েছে। বিশালদেহী শিসরাজের বক্ষের নিচে ছোট মাইরা হাসিমুখে তার শিসওয়ালাকে বরণ করে নেয়। দু’জনের মাঝে জমানো হাজারো প্রণয় একত্রিত হয়ে যেন এক সুখময়, কাব্য রচিত করতে ব্যস্ত দু’জন কপোত-কপোতী।

পরদিন সকাল সকাল মাইরা ভার্সিটিতে চলে গিয়েছে তারেক নেওয়াজ এর সাথে। ইরফান সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে মাইরাকে না পেয়ে ভীষণ বিরক্ত হয়। খুব ভালোই বুঝেছে স্টুপিট বউ টাল’জ্জা পেয়ে তার থেকে পালাতে আগে আগে চলে গিয়েছে। ইরফান হালকা একটু নাস্তা করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।
মাইরা মিলাকে নিয়ে ক্লাসের একদম পিছনের দিকে বসেছে। মুখটা কেমন ছোট করে রেখেছে। মিলা মাইরার মুখ দেখতে পায়না নিকাবের আড়ালে, তবে চোখ দেখে-ই কিছু গোলমাল লাগছে। মাইরা মিলাকে তার দিকে জহুরি চোখে চেয়ে থাকতে দেখে থতমত খেয়ে বলে,

– কি?
মিলা গালে হাত দিয়ে বলে,
– আমি এখনো সিঙ্গেল হলেও, আমার যথেষ্ট বুদ্ধি। তোর কি হয়েছে ঝেড়ে কাশ তো!
মাইরা অসহায় চোখে চেয়ে বলে,
– তুই বিয়ে করছিস না বলে আমি শুকিয়ে যেতে যেতে দুর্বল হয়ে গেছি। কিছু কর ময়না।
মিলা পুরো ক্লাসে চোখ বুলিয়ে বলে,
– কাউকে পছন্দ হয় না। তোর জামাই এর একটা জমজ ভাই থাকলে সেই হতো!
মাইরা রে’গে বলে,
– আমার শিসরাজের দিকে নজর দিলে তোর চোখ কিন্তু তুলে নিব বলে দিলাম। বেদ্দপ, যা ভাগ।
মিলা মুখ টিপে হেসে বলে,
– আহারে, আমার ময়না টা তার শিসরাজ কে কত্ত ভালোবাসে।
কথাটা বলে মাইরার বোরখার হাতা গুটিয়ে রাখা হাতের একটা জায়গায় জখম দেখিয়ে বলে,

– অবশ্য এসব ভালোবাসা পেলে সবাই এত্তোই ভালোবাসে, তাই না ময়না?
মাইরা থতমত খেয়ে দ্রুত বোরখার হাতা ঠিক করে নামিয়ে নেয়। তখন-ই ইরফান ক্লাসরুমে প্রবেশ করে। মাইরা ইরফানকে দেখেই চোখ নামিয়ে নেয়। ইরফান ক্লাসে প্রবেশ করে আগে পুরো ক্লাস স্ক্যান করে নেয়। মাইরাকে এক কোণায় দেখে বিরক্ত হলো। মিলা একবার ইরফানের দিকে তাকায়, আরেকবার মাইরার দিকে তাকায়। মাইরাকে সেই যে মাথা নিচু করতে দেখেছে, আর তোলেনি। হলো কি? এ তো ডেইলি তার স্বামীকে জ্বালায়, আজ কি হলো? কিছু একটা ভাবতেই বলে ওঠে,
– ময়না বেশি ল’জ্জা পাচ্ছিস? বেশি হয়ে গেলে আমাকে কিছু দিয়ে তোর অনাহার স্বামীটার দিকে তাকা। বেচারা তোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে টেরা হয়ে যাবে রে!
মাইরা রে’গে বলে,

– বে’য়া’দ’বের বাচ্চা চুপ কর। নয়তো তোকে এক শট মে’রে উগান্ডা পাঠাবো।
ইরফানের গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে আসে,
– লাস্ট বেঞ্চ, স্ট্যান্ড আপ।
মাইরা আর মিলা দু’জনেই তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে আছে। ইরফান আবারও বলে,
– স্ট্যান্ড আপ।
মাইরা ঢোক গিলে দাঁড়ায়। সাথে মিলা। ইরফান মিলার উদ্দেশ্যে বলে,
– তুমি বসো।
মিলা খুশি হয়ে টুপ করে বসে পড়ে। মাইরা রে’গে তাকায় ইরফানের দিকে। কত্ত বড় খারাপ লোক। তাকে দাঁড় করিয়ে রাখছে, আর তার-ই বান্ধবীকে বসতে বলল। ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে লেকচার দেয়। এই স্টুপিটকে ঘুম থেকে উঠে পায়নি, ভার্সিটি একা এসেছে। এখানে এসে আবার লাস্ট বেঞ্চে বসেছে। মে’জা’জ পুরো খারাপ করে দিয়েছে। মাইরার দৃষ্টি বুঝল ইরফান। পাত্তা দিল না।

ভার্সিটির ক্লাস শেষে মাইরা ভার্সিটির মাঠে মিলাসহ তার নতুন আরও তিনজন ফ্রেন্ডদের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। ইরফান মিনিট পাঁচেক হলো দাঁড়িয়ে আছে মাইরার জন্য। তার ভার্সিটির সবাই জানে মাইরা ইরফানের স্ত্রী। কিন্তু মাইরা ইরফানের কাছে আবদার করেছিল, ভার্সিটিতে সবার সামনে যেন তাকে ইরফান বউয়ের মতে ট্রিট না করে। ইরফান মেনে নিয়েছিল। কিন্তু তার বউ তো স্টুপিট, সে পুরো পাঁচ মিনিট হলো এখানে দাঁড়িয়ে আছে, অথচ মাইরার খবর নেই। খুব ভালোই বুঝেছে, ইচ্ছে করে এমন করছে। ইরফান পকেটে দু’হাত গুঁজে রেখে ভার্সিটির মাঠে দাঁড়িয়ে। কিছুটা আওয়াজ করে গম্ভীর গলায় ডাকে,

– মিসেস ইরফান নেওয়াজ?
কাম ফাস্ট। অ্যা’ম ওয়েটিং ফর ইউ।
ইরফানের কথা শুনে মাইরা দ্রুত পিছু ফিরে তাকায়। মাইরার ফ্রেন্ডসহ ভার্সিটির মাঠে আরও অনেকেই ইরফান আর মাইরার দিকে অদ্ভুদভাবে তাকাচ্ছে। এমন নয় কেউ জানে না, মাইরা ইরফানের বউ। কিন্তু ইরফান তাদের সামনে মাইরাকে কখনো এভাবে ট্রিট না করায় বেশ অবাক হয়েছে।
মাইরা দ্রুতপায়ে ইরফানের দিকে এগিয়ে যায়। এই লোকটা কি শুরু করেছে? ধুপধাপ পা ফেলে ইরফানের সামনে দাঁড়িয়ে গলা নামিয়ে বলে,
– এমন করছেন কেন?
ইরফান মাইরার হাত ধরে বলে,
– এসো।
মাইরা ইরফানের হাত আটকে বলে,

– আমি আপনার সাথে যাবো না। ছাড়ুন আমায়।
ইরফান রে’গে কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়। মাইরাকে ক্লাসে দাঁড় করিয়ে রাখায় এমন করছে ইরফান বুঝলো। বউটার এতো জেদ! ইরফান ঠাণ্ডা গলায় বলে,
– স্যরি বউ! এসো আমার সাথে।
মাইরা মুখ ফুলিয়ে বলে,
– যাবোনা আমি আপনার সাথে। আপনি আমাকে এমনি এমনি দাঁড় করালেন কেন? আর আমার ফ্রেন্ড মিলাকে বসিয়ে দিলেন। অ’স’ভ্য হয়ে গিয়েছেন আপনি। সরুন।
ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,
– আমি তো তোমার ফ্রেন্ডকে দেখতে চাইনা। তোমাকে দেখতে চাই।
মাইরা রে’গে বলে,
– আবার মিথ্যা-ও বলছেন? আমার মুখ তো দেখা যায় না। তাহলে কি দেখলেন আপনি?
ইরফান মৃদুস্বরে বলে,

– যা দেখা যায় সেটুকুই দেখি। এসো আমার সাথে।
মাইরা মন খারাপ করে বলে,
– আমার পা ব্য’থা হয়ে গিয়েছে।
ইরফান এগিয়ে এসে বলে,
– ওকে কোলে নিচ্ছি, কাম।
মাইরা চোখ বড় বড় দ্রুত দু’পা পিছিয়ে গিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে,
– নাআআআআ
পাশ দিয়ে তার ক্লাসের এক ক্লাসমেট যাচ্ছিল। মিটিমিটি হাসছিল। মাইরার কান্না পায়। তাকে সবাই ক্ষেপাবে এখন। এই লোকটা তাকে কোথাও একটু শান্তি দেয় না। এগিয়ে এসে রে’গে বলে,
– অ’স’ভ্য লোক, আপনি আমায় একটুও শান্তি দিবেন না?
ইরফান আশেপাশে তাকিয়ে মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
– গতরাতে আদর করলাম যে বউ! এতো ফাস্ট ভুলে গেলে?
মাইরা থতমত খেয়ে তাকায়। ভীষণ ল’জ্জা পায় বেচারি। কথা বলাই যাবে না এনার সাথে। কোনোদিকে না তাকিয়ে ভার্সিটির গেইটের দিকে এগিয়ে যায়। ইরফান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। এরপর খুব দ্রুত তার চিরাচরিত গাম্ভীর্যের ভাব এনে মাইরার পিছু পিছু এগিয়ে যায়। যাওয়ার পথে একটু পর পর কেউ না কেউ সালাম দেয়। ইরফান ছোট করে সালাম এর উত্তর নেয়।
মাইরা বাইরে গিয়ে গাড়ি দেখতে না পেয়ে পিছু ফিরে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান এগিয়ে এসে মাইরার হাত ধরে একটি রিক্সার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

– ওঠো।
মাইরা অবাক হয়ে তাকায় ইরফানের দিকে। বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
– রিক্সায় যাবো?
ইরফান মৃদুস্বরে বল,
– হুম। ওঠো। আজ তোমায় রিক্সায় নিয়ে এই শহর ঘুরবো।
মাইরা ভীষণ অবাক হয়। মাইরার এই ইচ্ছে ছিল। ইরফান কিভাবে যে জেনেছে। মাইরা অবাক হয়ে বলে,
– আপনি ভালোভাবে বসতে পারবেন?
ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
– লাস্ট ওয়ান মান্থ রিক্সায় চলাচল করে প্রাকটিস করেছি।

মাইরা কি বলবে বুঝলো না। মানে তার ইচ্ছে পূরণ করতে ইরফান তার বিলাশবহুল গাড়ি রেখে রিক্সায় চলাচল করেছে। মাইরা ইরফানকে নিয়ে মন্তব্য করার মতো কিছু খুঁজে পায় না। ইরফানকে সেই ছয় মাস আগে সিগারেট না খাওয়ার আবদার করার পর আজ পর্যন্ত ইরফানের হাতে সিগারেট দেখেনি মাইরা। মাইরা যা-ই বলে সব-ই কত যত্ন সহকারে করে দেয়। মাইরা অবাক হয়ে বলে,
– আচ্ছা শিসরাজ, এমন কিছু কি আছে? যা আপনি পারেন না? বা আমি বললেও পারবেন না?
ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে শীতল কণ্ঠে বলে,
– বার্ডফ্লাওয়ারকে কোনোভাবেই হার্ট করতে পারিনা। সে বললেও পারবো না। এটা কমপ্লিটলি ভুলে গিয়েছি।
মাইরা ভীষণ অবাক হয়।
ইরফান কত বদলে গিয়েছে? প্রথম প্রথম তাকে কত থা’প্প’ড় দিতো। এরপর থা’প্প’ড় ছেড়ে দিয়ে শুধু ধমকাতো। এরপর মাঝে মাঝে মারার জন্য হাত তুলেও আবার নামিয়ে নিতো। ধাপে ধাপে যেন ইরফান তাকে আঘাত করার সব পথ ভুলে গেল। এখন ইরফান শুধু তার যত্ন করতে শিখে গিয়েছে। আবেগে মাইরার চোখের কোণে পানি জমে।
ইরফান দু’হাতের মাঝে মাইরার মুখটা নিয়ে বিচলিত কণ্ঠে বলে,

– হোয়াট হ্যাপেন্ড? কাঁদছো কেন বার্ডফ্লাওয়ার? কোথাও ব্য’থা পেয়েছ?
মাইরা মৃদু হেসে বলে,
– আপনি অনেক ভালো, জানেন শিসরাজ?
ইরফান কিছু বলল না। মাইরাকে রিক্সায় বসতে বললে, মাইরা রিক্সায় উঠে বসে। এরপর ইরফান মাইরার পাশে উঠে বসে।
রিক্সা চলতে শুরু করে। মাইরা দু’হাতে ইরফানকে সাপ্টে ধরে উৎফুল্ল কণ্ঠে বলে,
– আপনাকে অনেক ধন্যবাদ শিসওয়ালা।
ইরফান মৃদু হাসলো। ডান হাত পিছন দিয়ে নিয়ে মাইরাকে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। মাইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে লো ভয়েসে গেয়ে ওঠে,

– গোটা পৃথিবীতে খোঁজো,
আমার মতো কে তোমাকে এতো ভালোবাসে!
এই মনের ঘরে এসো,
এই বুকেরই বা পাশেতে তোমার নাম-ই জপে।
একটু আড়াল হলেই কেন,
মনে খোরাক জাগে
তোমার সঙ্গ পেলে কেন
দেহ শিউরে ওঠে
মাইরা গলা নামিয়ে গায়,
– কসম করে বলো,
ছেড়ে যাবে না কখনো।
ইরফান মৃদুস্বরে বলে,
– বার্ডফ্লাওয়ার ইজ মাই হার্ট। আমার হার্ট অলওয়েজ আমার থাকবে, যেখানে তাকে নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রণয়ের ছন্দ সাজাই।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৮১

আই প্রমিস ইউ মাই হার্ট,, কখনো ছাড়ছি না তোমায়। না তো এপারে, আর না তো ওপারে।
একটু থেমে মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
– লিসেন বার্ডফ্লাওয়ার, ইউ আর ওয়ানলি মাইন।
মাইরার মুখে নির্মলহাসি ফুটে ওঠে। ইরফানের কাঁধে মাথা রেখে প্রশান্তিময় হাসি হাসে।
ইরফান-মাইরা সেদিন রিক্সা নিয়ে শহর চড়ে বেড়াতে ব্যস্ত হয়ে গেল। দিন গড়িয়ে রাত পেরোয়, সাথে ইরফান-মাইরা শহর জুড়ে তাদের প্রণয়ের কাব্য গাঁথায় ব্যস্ত হয়ে থাকে।
পরিশেষে, ইরফান ও মাইরার নিঃস্বার্থ ও সূক্ষ মানসিক সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে এবং কোমল ও হৃদয়স্পর্শী আবেগ প্রকাশ দ্বারা তাঁদের জীবনে একটি পবিত্র,নিখাদ,নির্মল ও কলুষিতমুক্ত ভালোবাসার মাধ্যমে তাদের হৃদয়ের অপ্রকাশিত ও প্রকাশিত ভাষাসমূহ প্রেমের গল্প ও কবিতারূপে রচিত হলো।আর এভাবেই “প্রণয়ের অমল কাব্য” নামটিও তাঁর স্বার্থকতা ও স্বকীয়তা পেল।

প্রণয়ের অমল কাব্য সারপ্রাইজ পর্ব