আপনাতেই আমি পর্ব ৩৬
ইশিকা ইসলাম ইশা
চারদিকে মানুষ এর সমাগমে যেন এতটুকু ফাঁকা জায়গা নেই।রিদি বেশ কিছুক্ষণ ধরে তীব্র কে খুজে চলছে।তীব্রর সাথে এখনো দেখা হয়নি তার। পার্টিতে এসেই নাকি তার খোঁজ অনেকবার করেছে তীব্র।রেগে আছে নিশ্চয় রিদির না আসায়।রিদি আসতে চেয়েও আসতে পারে নি।মমতার সাথে একদিনেই বেশ ভাব হয়েছে রিদির।মমতা তাকে নিজের কাছাকাছি রেখেছে সবসময়।আর আজ নিজের হাতে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে তাকে।এতেই সে খুশি।মা মা গন্ধটা যেন মমতার থেকে পায় রিদি।মেঘের পরিবার ও রিদিকে খুব ভালোবাসে।তাদের সব কিছুতেই রিদিকে লাগছে।কোনটা করলে ভালো হবে,কোনটা সুন্দর লাগবে হ্যান ত্যান চলতেই আছে।
কক মমতা জানত তার ছেলের প্রথম অনূভুতি ছিল রিদি।মমতা বেগমের ও রিদিকে বেশ পছন্দ হয়েছে।রিদি সম্পর্কে সবই জানে মমতা বেগম, আয়ান সব বলেছে তাকে। অজান্তেই রিদির প্রতি ভীষণ মায়া লাগে তার। মিষ্টি একটা মেয়ে।অথচ মা তাকে সহ্য করতে পারে না তাকে মেরে ফেলতেও নাকি দুবার ভাবে না।সে নাকি অসুন্দর!!কোথায় রিদি অসুন্দর!সে তো দেখতে পাচ্ছে হলুদ বর্ণের মায়াবী একটা চেহেরা।হড়িন টানা চোখ, মিষ্টি হাসি, সুরেলা কণ্ঠ,সাথে অমায়িক ব্যবহার।রিদির মাঝে সৌন্দর্য যেন লুকায়িত যা সবার নজরে যা আসে না।
আজ হালকা সেজেছে রিদি পড়নে তার গর্জিয়াস শাড়ি।কালো আর গোল্ড এর মধ্যে শাড়িটা তীব্র তাকে দিয়েছে।শাড়ির সাথে সাজটা বেশ মানিয়েছে তাকে।শাড়িটা পড়ে অধিক সুন্দরও লাগছে তাকে।।অথচ সে প্রথমে তীব্র কেই দেখাতে পারল না।আর এখন খুজেও পাচ্ছে না।রিদি বাড়ির ভেতরে খুঁজে এবার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। রুমে খোজ করেও পেল না। রিদি সিড়ি বেয়ে ছাদে এসে দেখে তীব্র দু হাত ভাজ করে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।যেন তার ই আসার অপেক্ষায় ছিল।রিদি তীব্রর গম্ভীর মুখ দেখে কিছুটা ঘাবরে গেল। শুকনো ঢোক গিলে ভাবল কিছু।যেই ভাবনা সেই কাজ করতেই শাড়ি পড়েই দৌড় দিল থামল একদম কারো বুকের মাঝে মিশে।তীব্র রাগে গজগজ করতে করতে ছাড়াতে চাইলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল রিদি।তীব্র ক্ষিপ্ত মেজাজে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আপনি কি ভুলে যাচ্ছেন বেগমজান আমি কে??
রিদি মুখ তুলে তাকাল তীব্রর দিকে,
আপনি কি ভুলে গেছেন আপনি কে? আল্লাহ!!এখন আমার কি হবে!! শুনুন শুনুন আপনি হচ্ছে দি তীব্র চৌধুরী।যা পুরো দুনিয়াই একটায় আছে।আর সেটা আমার পারসোনাল বর।
তীব্র রিদির কথায় আজ ভিজল না।অকপটে চুলের মুঠি শক্ত করে চেপে ধরলো।
আমি হাজার আমি বারন করার পরেও আপনি একা একা কেন ঘুরছেন??
রিদি ব্যাথা পেলেও চুপ থাকল।
একা কোথায় সবাই আছে তো!!
তীব্র আরো রাগল যেন।একহাতে চুলের মুঠি ধরে অন্য হাতে রিদির হাত ধরে রিদির মুখের সামনে ধরল।হাতের কাটা জায়গায় রক্ত লেগে দেখে রিদি ঘাবরে গেল। চুড়ির আড়ালে থাকার পরেও কিভাবে দেখল তীব্র।দেখলোই বা কখন?
আসলে হয়েছে কি!আমি!!
পড়ে গেছিলাম,লেগে গেছিল,খেয়াল করিনি কিভাবে হল এসব বাদে কোন অজুহাত দেখিয়ে বলেন।তবে আমি অযুহাত এর থেকে সত্য শুনতে আগ্রহী।
রিদি ঘাবরে গেল।সে যদি বলে আজ একটা ছেলে তার হাত চেপে ধরেছিল যার জন্য চুড়ি ভেঙে হাতে ঢুকেছে তাহলে তো তুলকালাম কাণ্ড করবে তীব্র। বান্ধবীর বিয়েতে সে তো আর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না।এই ঐ কাজে এদিক ওদিক গিয়েছে।রিদির ধারনা কেউ তার দিকে বাজে নজরে তাকাবে না।কারন সে তো আর বাকি মেয়েদের মতো সুন্দর না।এতো এতো সাজুগুজুও করে নি।সিম্পল একটু সেজেছে ব্যাস। কিন্তু এমন কিছু ঘটবে সে নিজেও জানত না।মেঘের ওরনার জন্য সেফটিপিন আনতে রুমের দিকে আসতেই একজন তার হাত টেনে ধরে।রিদি ঘাবরে যায়।হাত ছাড়িয়ে ঠাসস করে থাপ্পর মেরে দেয়।
এভাবে হাত ধরার মানে কি?সাহস কিভাবে হয় আপনার?
থাপ্পর মারায় হয়তো ইগো হাট হয়েছে ছেলেটির। সাথে সাথে আবারো রিদির হাত শক্ত করে চেপে ধরে।আশেপাশে তেমন কেউ না থাকায় রিদি কিছুটা ভয় পেলে।লোকটা কিছু হয়তো বলবে তার আগেই রিদি হাত ছাড়িয়ে আবারো ঠাসস করে থাপ্পর মেরে ধাক্কা দিয়ে দৌড় দেয়।পেছন থেকে হাসির শব্দ সাথে একটা কথা কানে বাজে রিদির কোথায় পালাবে পাখি উড়ে এখানেই আসতে হবে।এরপর কিছু শুনতে পায় না রিদি।যদিও ঘটনাটা তীব্র কে বলত রিদি ।কারন না বললে ,আর তীব্র কোন ভাবে জানলে তুলকালাম কাণ্ড করবে।তবে রিদি ভাবে নি তীব্র এভাবে হাত তুলে ধরবে।
তীব্রর হাতের বাঁধন আরো শক্ত হল।রিদি চোখ বন্ধ করে নিল।
আমি বলতে বলেছি!চুপ থাকতে না!
আসলে তৃপ্তির খেলনার জন্য লেগেছে!!
তীব্র শান্ত স্বরে হুমকি স্বরূপ বলল,আপনি কি চাইছেন আমি আগের রুপে ফিরে আসি!এবার কিন্তু আপনাকে কিছু করব না।কারন টা আপনার জানা।আপনাকে কিছু করার ক্ষমতা আমার নেই।তবে পার্টিতে আসা একটা ছেলেকেও জীবিত অবস্থায় ফিরতে দেব না।আই সয়ার!!
রিদি জানে তীব্র যা বলে তাই ই করবে।রিদি ভয়ে ভয়ে সবটা বলে দিল। কিন্তু তীব্রকে শান্ত দেখে ভয়টা বেশি হল রিদির। কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
আই প্রমিস আমি একা এক পাও নড়ব না!
তীব্র রিদির কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে কিছু বলল না।তীব্র যে রেগে আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই রিদির।কারন তীব্র বেশি রাগলে শান্ত থাকে। তীব্র রিদির মুখের দিকে চেয়ে রইল। আচমকা রিদির কপালে উষ্ণ অধর ছোয়াল তীব্র।রিদি বলল,
প্লিজ এখন কিছু করবেন না।
তীব্র ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
যার শরীরে সামান্য আঘাত আমার সহ্য হয় না।তাকে অন্য কেউ ক্ষত বিক্ষত করবে আর আমি কিছু করব না।বলতে বলতে রিদির হাতের চুরি খুলে হাতে ছোট ব্যান্ডেজ করে দেয়। তীব্র একটু চুপ থেকে বলে,আচ্ছা ঠিক আছে এখন কিছুই করব না।প্রমিস।তীব্র আবারো একটু থেমে বলে,
আপনি চাইলেই আমাকে শান্ত করতে পারেন আবার আপনিই আমাকে অশান্ত করতে পারেন।কি ক্ষমতা আপনার বেগমজান!
রিদি তাকালো তীব্রর দিকে।তা আপনি এমন দৌড়াদৌড়ি করছেন যে আপনার পিরিয়ড সময় চলছে ভুলে যাচ্ছেন!রিদি কিছু বলল না।তীব্র উঠে রিদির জন্য কোথাথেকে গরম পানি নিয়ে এলো।রিদিকে চেয়ারে বসিয়ে হালকা গরম পানিতে পা ডুবিয়ে দিলো।নিজে হালকা হাতে ম্যাস্যাজ করেও দিল।রিদি অবাক হয়ে বলল,
এই সময় এখানে গরম পানি কোই পেলেন??আর আপনি জানলেন কিভাবে আমার পা ব্যাথা করছে আমি তো বলেনি!!
তীব্র হাসল,
আপনাতেই আমি পর্ব ৩৫
আপনার সব দিকে নজর থাকে আমার। কাল পিরিয়ড হয়েছে আর আজ এতো দৌড়াদৌড়ি করেছেন পা ব্যাথা হবে।
রিদি তাকিয়ে রইল তীব্রর দিকে,
একটু রাগ সাইডে রাখলে তার হাজবেন্ড বেস্ট হাজবেন্ড ইন দা ওলাল্ড কথাটা ভেবেই হাসল রিদি। তীব্র আবারো উঠে একটা প্লেটে খাবার নিয়ে আসল।খাবার দেখে রিদি আর অবাক হল না।তীব্র রিদিকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিল। রিদি শুধু তীব্র কে দেখল।যাকে এই পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য মানুষ মনে করত এখন সেই মানুষটিই তার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয়তম মানুষ।যাকে ছাড়া সে অচল।তীব্র বলে তাকে ছাড়া তীব্র অচল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তীব্র ছাড়া রিদির কোন অস্তিত্ব নেই।রিদির ছোট থেকে ছোট বিষয় ও তীব্রত ছোয়া।