আপনাতেই আমি পর্ব ৩৮

আপনাতেই আমি পর্ব ৩৮
ইশিকা ইসলাম ইশা

রিদিকে নিয়ে বিছনায় শুইয়ে দিতেই ফোন বেজে উঠল তীব্রর।লাবিব কল করেছে।তীব্র রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শোনা গেল চিৎকার এর শব্দ। যন্ত্রনায় কাতর হয়ে চিৎকার করছে কেউ।একটু পরেই লাবিবের কন্ঠ শোনা যায়।
বসস এখন কি করব?
হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দে।আর শোন বিল টা দিয়ে দিস।
জি বসসস!!

তীব্র ফোন রেখে চাইল রিদির দিকে। ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসতেই রিদি নড়ে চড়ে উঠল।এপাশ ওপাশ করে আবার এপাশ ওপাশ করল।তীব্র এসির পাওয়ার কমিয়ে রিদির পাশে শুয়ে ওকে টেনে নিজের কাছে এনে জরিয়ে ধরলো।রিদি ঘুমের মাঝেই তীব্রর বুকে মিশে গেল।যেন এটারি অপেক্ষা করছিল। তীব্র হাসল। ক্ষীণ হাসিটায় চমৎকার লাগল তীব্রকে।বাকা মুচকি হাসি যাকে বলে।তীব্র চাইল রিদির দিকে।হাতের কাটা জায়গায় চুমু দিয়ে হাতটা বুকের উপর রেখে দিল।ভাবতে লাগল তখনকার কথা,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অফিস থেকে ফেরার পথেই মলে চেঞ্জ করে পার্টিতে আসে তীব্র।এসব ফ্যামেলি পার্টি কোন কালেই তার পছন্দ না। শুধু রিদি আছে তাই বাধ্য হয়েই যেতে হচ্ছে।তীব্র গাড়িতে বসেই ভিডিও কলে দেখছে রিদি কে।মনে মনে ভাবল,এই বৌ তাকে মেরেই শান্তি পাবে।এতো এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করার কি দরকার।শরীর যে খারাপ সেদিকে কোন খেয়াল আছে।আর এতো সাজতেই বা কে বলেছে।সাজবেই বা কেন?তার বৌ অন্যকেউ দেখবেই বা কেন? মেজাজ খারাপ হলো যেন ।তীব্র গাড কে রিদির আশেপাশের লোকজন কে দেখাতে বলল।গাড ক্যামেরা ঘুরতেই নজরে আসল তীর,রুপ আর তৃপ্তি কে।এর পর মমতা বেগম সহ কিছু মহিলা যাদের সাথে রিদি কথা বলছে।অপরপাশে নজরে আসল আয়ান কে।আয়ানের দিকে ক্যামেরা আসতেই তীব্র থামতে বলল।ভালোভাবে লক্ষ্য করল আয়ান কে!রিদির দিকে ব্যাথিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তীব্রর রাগ হল।বিয়ে করছে একজনকে আর তাকাচ্ছে অন্য জনের দিকে।তবে আয়ানের তাকানোতে কোন লালসা ছিল না।তীব্র ক্যামেরা ঘুরাতে বলতেই নজর আসে একটা সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা পরিহিত সুদর্শন এক লোক।তীব্র থামতে বলল।জুম করে চোখের মনির ভেতর দিয়ে দেখল চোখ কাকে দেখছে।রিদির চেহেরা দেখতেই তরতর করে রাগ বাড়ল।হাতের ট্যাব গাড়িতে ঠাসস করে আছার মারতেই চমকে উঠে লাবিব।
তীব্র রেগে বলল,

গাড়ির স্পিড বাড়াতে বল।আর তোর ভাবির ওপর গাডদের নজর রাখতে বল।লাবিব থতমত খেয়ে তাই করল।তীব্র পৌছাল আরো ১৬ মিনিট পর।রাগে গজগজ করতে করতে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে খুজল লোকটাকে।তীব্র কে দেখে গাড দৌড়ে আসল।গাড আসতেই তীব্রর প্রথম কথা রিদি কোথায়??
গাড:বস ম্যাম ভেতরে গেছে!
তীব্র ভেতরের দিকে যেতেই তাকে দেখে এগিয়ে আসল অনেকে কথা বলতে।তীব্র বিরক্ত হল।ফরমেলিটির জন্য কথা বলল আর ইশারায় গাডদের বলল রিদিকে ডেকে দিতে।গাড কিছুক্ষণ খুজে রিদি কে পেল না। কিন্তু এটা তীব্র কে জানানোর সাহস হল না। হুট করেই রিদি কে ভেতর থেকে দৌড়ে আসতে দেখে একটা গাড রিকু খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,

বসস ঐ যে ম্যাম।
তীব্র সাথে সাথে রিদিকে দেখল।দৌড়ে আসা দেখে ভু কুঁচকে তাকাল।তীক্ষ বাজ নজরে দেখল রিদিকে পুরোপুরি। হাতের চুরি থেকে চুইয়ে পড়া রক্ত ও দেখে সবাইকে উপেক্ষা করে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই সেই পাঞ্জাবি পড়া লোকটাকে বের হতে দেখে ভু আরো কুচকে গেল তীব্রর। মস্তিষ্ক তাকে যেন কিছুর সংকেত দিল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখল ওর হাত। ঠিক তখনি যেন রক্ত টগবগিয়ে উঠলো।লাবিব কে বলল,
ওটাকে উঠিয়ে নিয়ে মেরামত কর।
লাবিব হতবাক হয়ে তাকাল তীব্রর দিকে।এই বস তার ভাবনার বাইরে। কিন্তু বস ও তো বর্তমানের নিউ এমপি আমাদের লোক।শামিম হাওলাদার।
তীব্র কিটমিট করে বলল,
ওঠিয়ে মেরামত কর।যে হাতে রক্তের ফোটা আছে সেই হাত গুড়িয়ে দে।বাকি আর কিছু ভাঙ্গিস না। শুধু ধোলাই করবি।

জি বসসস…
লাবিব জানে তীব্র শাপ মাইন্ডের মানুষ এমনি এমনি কিছু করতে বলবে না তাও তীব্রর জন্য কাজ করা লোক কে।
আর এদিকে তীব্র ছাদের উপর থেকে রিদিকে দেখছে।খুজছে কাউকে।হয়তো তাকে।তীব্রর শরীর রাগে রো রো করছে।সাহস কতো তার কথা অমান্য করে একা একাই এদিক ওদিক ঘুরার।তীব্রর রাগ ১০০% হলেও সে রাগ দেখাতে পারে নি।বৌ যদি এসে জরিয়ে ধরে তাহলে রাগ কি রাগ থাকে কমে যায় না।হলোও তাই। তবুও রক্তের কথা ভেবে রাগ আবার চওড়া হল। কিন্তু সেটাও বেশিক্ষণ টিকল না।
তীব্র ভাবনা থেকে বের হয়ে আসল।রিদির কাছে এসে গলায় মুখ গুজল। সব ছাড়া চলবে কিন্তু বৌ ছাড়া চলবে না সেটা জানে তীব্র।

সকালে আমির চৌধুরী টিভি অন করতেই বড় বড় হেডলাইনে দেখল, ব্রেকিং নিউজ, ব্রেকিং নিউজ
“এমপি শামিম হাওলাদার বাড়ি ফেরার পথে এক্সিডেন্টে গুরুতর আহত হন।শোনা যাচ্ছে তার ডান হাত ভেঙ্গে গেছে।আর বেশ কিছু জায়গায় ক্ষত হয়েছে। সূত্রে জানা গেছে তিনি নাকি একা কোন সুরক্ষা বাহিনী ছাড়ায় ফিরছিলেন তার বাসস্থলে।
সূত্রে আরো জানা গেছে তিনি নাকি অনেক রাতে একা বেরিয়ে পড়ে ।নিরিহ মানুষের খোঁজে।দেশবাসীর কাছে অনুরোধ সবাই এমপি শামিম হাওলাদার এর সুস্থতা কামনা করে দোয়া করবেন”
তীর: কাল তো পাটিতে দেখেছিলাম কিছুক্ষণ তারপর আর দেখিনি।এর মাঝে কখন কি হল।
আমির:কিছু তো একটা ব্যাপার আছে।
রিদি রেডি হয়ে নেমে আসে তীব্রর সাথে।টিভিতে শামিম কে দেখে হতবাক হয়ে তাকালো তীব্রর দিকে।তীব্র কিছু হয়নি এমন ভাব নিয়ে নাস্তার টেবিলে বসল।
রিদি:ওনি কে আব্বু!!
আমির:এমপি শামিম হাওলাদার।
রিদি:এমপি!!!
আমির:হুম কেন?
রিদি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো তীব্রর দিকে।এর মাঝে মারাও হয়ে গেল।তবে মনে মনে ভাবল ঠিক হয়েছে অসভ্য, জানোয়ার ছিল লোকটা।রিদি তীব্রর দিকে আবারো তাকালো।এই মানুষটা ছাড়া তার চলবে না।একদম চলবে না।

দেখতে দেখতে সময় চলে যাচ্ছে।পেরিয়ে যাচ্ছে দিন,বছর,মাস। বিবাহিত জীবনের ৩ বছর আজ।ম্যারেজ এনিভারসিরি আজ তীব্র রিদির।দেখতে দেখতে ৩টা বছর পেরিয়ে গেছে। পড়াশুনার পাশাপাশি, পরিবার সব মিলিয়ে রিদির জীবনে দুঃখ নামের কোন ছোয়া নেই।আজ বিবাহিত জীবনের ৩বছর তাই তীব্র রিদিকে সারপ্রাইজ রেডি করেছে।বিয়ের এতো দিনেও রিদিকে নিয়ে একান্ত কোথায়ও ঘুরতে যায় নি তীব্র।তাই এবার ঘুরতে নিয়ে যাবে।তবে সেটা হবে সারপ্রাইজ।

এদিকে সারাদিন গড়িয়ে রাত তখন ১০টা ১০। ক্ষিপ্ত মেজাজে বসে আছে রিদি।আজ সারাদিন তীব্র না তাকে কল করেছে আর না তার ফোন ধরেছে।সে নাকি ব্যাস্ত।রিদি রাগে দুঃখে কান্নাও করেছে কিছুক্ষণ।সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি দেওয়া মানুষ টা যদি একটু অবহেলা করে তখন সব কিছুই বিষাদ লাগে।রিদি ধৈর্য ধরে তাও অপেক্ষা করল।রাত তখন বাজে প্রায় ১১:৩৭।রুমের দরজা খুলে রুমে ঢুকে তীব্র।রিদিকে সোফায় গুটীশুটি মেরে ঘুমাতে দেখে এগিয়ে আসল।কান্নার ফলে চোখে পানি শুকিয়ে গেছে।তীব্রর বুক কাঁপল।

আপনাতেই আমি পর্ব ৩৭

সে কি বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। অসহায় বোধ করল।এই মেয়েটার কাছে তীব্র অসহায় ভীষণ অসহায়। তীব্র রিদিকে কোলে তুলে নিল।রুম থেকে বেরিয়ে এসে পৌছাল গাড়ির কাছে।লাবিব দাঁড়িয়ে আছে। তীব্র কে আসতে দেখে দরজা খুলে দিল।তীব্র রিদিকে কোলে নিয়েই বসল গাড়িতে।গাড়ির সিট পিছে হেলে দিয়ে রিদি কে নিজের ওপর নিয়ে আরাম করে বসলো।গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে।

আপনাতেই আমি পর্ব ৩৯