হ্যালো 2441139 পর্ব ৩৭
রাজিয়া রহমান
পিয়াসা মহুয়া বেগমের নাকের জল আর চোখের জল দেখে অভিভূত হলো।এই মহিলা তো দারুণ অভিনেত্রী। মনে মনে পিয়াসার হাসি পায়।চোখের সামনে যেনো জমিরনের আরেক ভার্স্ন দেখতে পাচ্ছে সে।
কিন্তু উনি জানেন না।পিয়াসা ঘর পোড়া গরু,যে কি-না সিঁদুরে মেঘ না, সিঁদুরের নাম শুনলেও ভীত হয়।
আর তাই মহুয়া বেগমের আসল উদ্দেশ্য ধরতে না পারলেও পিয়াসা এটুকু বুঝতে পেরেছে মহুয়া বেগম আসলে কোনো একটা প্ল্যানিং করেছেন।আর তার প্ল্যানিং এর গুটি হিসেবে তিনি পিয়াসাকে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন।
কি হতে পারে সেই প্ল্যানিং?
পিয়াসাকে তার বাবা মা’য়ের কাছে ভুলভাবে উপস্থাপন করা?
পিয়াসা মহুয়া বেগমের চোখের পানি মুছে দিলো নিজের ওড়না দিয়ে। মহুয়া বেগমের হাত ধরে বললো, “আপনি কাঁদবেন না দাদী।আপনার নাতির কিছু হবে না।আমি কথা দিচ্ছি আপনাকে।”
মহুয়া বেগমের দুই চোখ ঝিকঝিক করে উঠলো আনন্দে। এই বোকা মেয়েটা তাহলে তার পাতা ফাঁদে পা দিয়ে দিয়েছে!
মহুয়া বেগমের ঠোঁটে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠে। সে-ই হাসিতে পিয়াসার ধারণা আরো দৃঢ় হয়।
মহুয়া বেগম উঠে যাওয়ার পর পিয়াসা নিজের বাবাকে কল করে। কল করে সবকিছু জানায়।
খানিক পরে মহুয়া বেগম আসেন আবার। পিয়াসাকে বই নিয়ে বসে থাকতে দেখে কিছুটা বিরক্ত হন তিনি।
পিয়াসা ঘাড় গুঁজে বইতে তাকিয়ে আছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মহুয়া বেগম ভালো করে পিয়াসাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন।বিশ্রী কমলা রঙের একটা স্কার্ট আর জলপাই রঙের একটা টপস পরনে।হতলাগে মহুয়া বেগমের। কিন্তু এই মুহূর্তে মহুয়া বেগমের বিরক্তির কারণ হচ্ছে এই মেয়েটাকে কেনো জানি এই রঙে ভীষণ ভালো লাগছে।কেমন বুদ্ধিদীপ্ত লাগছে।
গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,”কি হলো,তুমি তৈরি হও নি এখনো?”
পিয়াসা অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো, “কেনো দাদী?কোনো দাওয়াত আছে?”
মহুয়া বেগমের নাকের পাটা ফুলে উঠলো।এই মেয়েটাকে তিনি ভীষণ সহজ ভেবেছিলেন।মেয়েটা অতটাও সোজা না।
থমথমে সুরে বললেন, “হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিলো তোমার, ভুলে গেলে?”
পিয়াসা ঠোঁট উলটে বললো, “আমার যাওয়ার কথা ছিলো না-কি দাদী!আমি যাবো বলি নি তো একবার ও!”
মহুয়া বেগমের ইচ্ছে করলো কষে একটা থাপ্পড় মেরে পিয়াসার নরম ফর্সা গালটা লাল করে দিতে।এতো হেঁয়ালি করার স্পর্ধা পাচ্ছে কিভাবে এই মেয়ে!
পিয়াসার ভীষণ আনন্দ লাগছে।এই ভীষণ তেজী বৃদ্ধার তিরতিরে রাগ পিয়াসাকে আনন্দিত করছে। কে জানে হয়তো এর মাঝে জমিরনের ছায়া দেখে বলেই।
মহুয়া বেগম এগিয়ে এসে পিয়াসার চেয়ারের পাশে দাঁড়ান। টেবিলে থাকা বাবা মা’য়ের সাথে পিয়াসার ছোট বেলার ছবিটা দিকে তাকিয়ে মহুয়া বেগমের এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো এ কোনো সাধারণ মেয়ে না।একেবারে পুতুল কন্যা।এর রূপ দিনদিন যেনো বাড়ছে।
এজন্যই বুঝি আষাঢ় মজেছে এভাবে।
পিয়াসার হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে বললেন, “আমার নাতি কি হাসপাতালে একা পড়ে থাকবে?ওর মা নেই বলে এভাবে অবহেলা করছো?”
“ওনার পরিবারের মানুষই যখন করছে,আমি বাহিরের মেয়ে কি করবো দাদী!”
মহুয়া বেগমের রাগের পারদ তুঙ্গে। এই মেয়েটা মুহুর্তে ভোল পাল্টে ফেললো!
এতোক্ষণ তিনি একে কি বুঝিয়েছেন কেঁদেকেটে!
তখন তো মনে হয়েছে গলে গেছে।মুহুর্তে এতো শক্ত হয়ে গেলো কিভাবে!
মহুয়া বেগম বুঝলেন কঠোর হয়ে স্বার্থ সিদ্ধি হবে না।গলায় মধু ঢেলে বললেন,”তোমাকে তো আমি সবকিছুই বলেছি পিয়াসা।আমাদের মধ্যে কারো পক্ষে যদি সম্ভব হতো নিশ্চয় যেতাম।তাই বলে আমার নাতিটা এভাবে একা থাকবে সেবাশুশ্রূষা বিহীন!”
পিয়াসা মিটিমিটি হাসে।
“তুমি তো তখন বলেছিলে তুমি যাবে,আষাঢ় সুস্থ হয়ে যাবে।এখন তাহলে কেনো না করছো?”
“আপনার ভুল হচ্ছে দাদী।আমি কিন্তু তখনও বলি নি যাবো।আমি বলেছি উনি সুস্থ হয়ে যাবেন।আমি যাবো তা বলি নি!”
“তুমি ওর সেবা না করলে ও সুস্থ হবে কিভাবে?”
পিয়াসা আর কথা বাড়ালো না।কোমল সুরে বললো, “আমি বাবার সাথে কথা বলেছি।বাবা ওই হাসপাতালে কল করে একজন মেল নার্সের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।আমার যাওয়া লাগবে না।”
মহুয়া বেগমের ফর্সা মুখটা মুহুর্তেই অন্ধকার হয়ে গেলো। তিনি যে প্ল্যান করেছেন তার কি হবে তাহলে!
পিয়াসা শান্ত সুরে বললো, “আমি এখানে পড়তে এসেছি দাদী।আমার বাবা মা এখানে আমাকে মানুষের সেবা করতে পাঠায় নি।আমি কোনো প্রফেশনাল নার্স না যে একজন মারাত্মক ইনজুর মানুষের সেবা করতে পারবো।আর না আমার ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল হওয়ার কোনো স্বপ্ন আছে দাদী।আপনার পরিকল্পনা মাঠে মারা গেলো।”
মহুয়া বেগম ভীষণভাবে চমকায়।এই মেয়ে তার পরিকল্পনা কিভাবে জানলো!
পিয়াসা আবারও বইতে মুখ গুঁজে।
শিরিন আর তার বড় মেয়ে নিরা বসেছে গোপন আলোচনায়।নিরা গলা নামিয়ে বললো, “আষাঢ় হাতছাড়া হইছে,নির্জন যাতে না হইতে পারে মা।”
“আমার মেয়েরা এতো গবেট হলো কেমনে আমি বুঝি না।মিরারে যত ভাবে বুঝালাম ও বুঝতে চায় না।এখন যদি মিনি রাজি না হয় তাহলে আর কিছু করার নাই।নির্জনের মা বাড়িতে নাই।এটাই সুযোগ। “
“মা,মিনি রাজি হবে।মিনি নিজেও কিন্তু নির্জনরে পছন্দ করে। একেবারে সিরিয়াস।ওরে নিয়ে প্রব্লেম হবে না।”
নিরা গিয়ে মিনিকে ডেকে আনলো।
মা আর বড় আপা মিলে মিনিকে যা বুঝালো তার মানে হচ্ছে আজকে রাতে তাকে নির্জনের ঘরে ঢুকে পড়তে হবে।তারপর কথা দিয়ে পারুক অথবা শরীর দিয়ে, নির্জনকে আকৃষ্ট করতে হবে।তাতে যদি দুজনের ইন্টিমেট হতে হয় তাতে আরো শাপে বর হবে।
মিনি প্রথমে গাইগুই করলে নিরা বললো, “তুই নিজেই তো নির্জনকে ভালোবাসিস।বাসিস না বল?যদি তোর অসুবিধা লাগে তাহলে মিরাকে পাঠাবো যেকোনো একটা বেড়ালকে থলেতে ঢুকাতেই হবে।আর যদি মিরাও না রাজি হয় তবে আমি যাবো।”
মিনির হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে।নির্জনকে সে ভালোবাসে এটা সত্যি।নির্জনকে নিজের করে পেতে চায় মিনি।কিন্তু তাই বলে এভাবে পেতে চায় না।
কিন্তু আজকে মা যেভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে আছে তাতে সে রাজি না হলে বড় আপা বা মেজো আপাকে পাঠাবে।
কলঙ্কিত হলেও রাজ্যের রানী তো হতে পারবে তার মেয়েরা।রানী হলে এসব কলঙ্ক সবাই ভুলে যাবে।
হ্যালো 2441139 পর্ব ৩৬
শিরিন দৃঢ় সুরে বললো, “তুই যাবি না-কি আমি মিরাকে পাঠাবো।আজকেই সুযোগ। নার্গিস বাড়িতে ফিরে আসার আগেই করে ফেলতে হবে।তা না হলে আর সুযোগ নেই।ওর শকুনের নজর থেকে নির্জনকে মুক্ত করা যায় না এমনিতে ও।এই সুযোগ আমি কিছুতেই ছাড়বো না।”
দিশেহারা হয়ে মিনি বললো, “আমি রাজি মা।”
শিরিন সন্তুষ্ট হয়।এই তো লাইনে এসেছে।