মি মাফিয়া পর্ব ১৬
সুমাইয়া সাবিহা
সামিরা : হয়েছে টা কি বল না আরু
আরিয়া একটু বিরক্ত হয়ে বললো, বললাম তো কিছু না বারবার কেন জিগ্গেস করছিস
প্রেমা:বললেই হলো ? কখনো এভাবে তোকে হিজাব বাধতে দেখিনি ,আজ হলুদের দিন এমন হিজাব বেধে বসে আছিস। তাও বাড়ি থেকে বেধে এসেছিস আর এতো লেট করেও এসেছিস। সত্যি বল তো আয়শ ভাইয়া কি আজকেও লাভ বাইট …
আরিয়া :- কথা বলিস না তো এমনিতেই অনেক ক্লান্ত লাগছে । আমি একটু রেষ্ট নেবো ডাকিস না কেউ ঠিক আছে ? আর হলুদ সন্ধায় ডেকে দিবি।
বলেই আরিয়া খাটের এক পার্শ্বে সাইট হয়ে শুয়ে গেলো।
সামিরা: কি হলো কিছুই বুজলাম না তোরা এমন থাকলে আমার তো বিয়ে বিয়ে ফিলিংস টাই আসবে না।
প্রেমা : তা আসবে কি করে? বিয়ের দুদিন আগে তো অন্য আরেক জন কে মন টা দিয়ে দিয়েছেন।
প্রেমার কথায় সামিরার চেহারা টা মলিন হয়ে যায় । আচ্ছা আমি কি সত্যি অসময়ে প্রেমে পড়লাম ,উনাকে পাওয়ার কি আর কোনো উপায় নেই?
প্রেমা : পাগল হয়ে গেছিস নাকি,আয়শ ভাইয়া আর আরিয়ার এংগেজমেন্ট হয়ে গেছে তাছাড়া ভাইয়া আরিয়াকে পছন্দ করে আমরা সবাই জানি তাইনা।
প্রেমার কথায় আড়িয়া শুয়া থেকে হকচকিয়ে উঠে বললো:
__কি বলছিস ?আয়শ ভাইয়ার প্রেমে পরেছে সামিরা?
প্রেমা: আরে শশশ,,, আস্তে বল না।
আরিয়া :আচ্ছা আগে বল এটা কি সত্যি?
প্রেমা সামিরা অবাক হলো নিজের ফিয়নসির ব্যাপারে এটা শুনলে অন্য কেউ হলে এতোক্ষনে গুষ্ঠি সুদ্ধ মাথায় তুলতো।আর এই কিনা আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করছে।
প্রেমা:তা আর বলছি কি ,কাল রাত্রে এদের মধ্যে কি হয়েছে শুনলে তো তুই …
আরিয়া:কি হয়েছে বল না শুনবো
প্রেমা:আসলে রাত্রে সামিরার জামার…..
আয়শ প্রেমার কথার রেশ টেনে দরজার কাছ থেকে বলে উঠলো,,,এসব হচ্ছে টা কি এখানে ।তোমরা কি এখনো ছোট? কার সামনে কি বলতে হয় সেটাও জানোনা।
সামিরা ভয় পেয়ে গুটিয়ে যায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আয়শ:আমি বলেছিলাম এক্সিডেন্ট এটা জাষ্ট এক্সিডেন্ট বুঝোনি কি বলেছি এটা নিয়ে আর একটা কথা শুনলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।
আরিয়া:ভাইয়া আমি শুনবো আমায় বলো না প্লীজ
আয়শ আরিয়ার দিকে তাকায়।কি সুন্দর নিষ্পাপ চেহারা এই মেয়ের , তার উপর আজ আবার দুধ সাদা শরীরে মেরুন কালারে হিজাব বেধেছে ।মনে হয় যেনো ফুটন্ত লাল পদ্ম । এই মেয়ে কি তাকে অস্ত্র ছাড়াই মেরে ফেলবে রুপ দিয়ে,আজব।
__কি হলো চুপ করে আছো কেনো? বলো না।
___শুনবে? আসলে হয়েছে কি ওরা মজা করছে শুধু শুধু কাল থেকে আমাকে রাগানুর জন্য ।
____ওহ আমি ভেবেছিলাম আবার সত্যিই সত্যি।
___আচ্ছা যদি সত্যি হতো তোমার খারাপ লাগতো না?
___খারাপ কেনো লাগবে? ভালোবাসা সময় আসময় মানে নাকি ? দিক বিদিক না দেখেই তো হয়।
আরিয়ার কথায় আয়শ বোধয় একটু ধাক্কা খেলো।
আচ্ছা তুমি কি কখনো প্রেমে পরেছিলে কারো?
___সেটা তো জানিনা ভাইয়া কিন্তু আমার সাথে সব সময় বাজে হয়
__বুঝলাম না ঠিক ।
___কিছু না ,আমাকে কেউ বুজবেনা কোনো দিন ও না।
আরিয়ার কথার রেশটেনে কেউ পেছন থেকে বলে উঠলো,
___ঠিক আছে আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি ,
কারো খাপছাড়া কথার শান্ত কন্ঠ শুনে সবাই পেছনে তাকালো । আফরান দুহাত পকেটে গুজে দাড়িয়ে আছে।পরনে প্রতিদিনের মতোই কোট পেন্ট টাই ।
আয়শ আফরান কে দেখে বোধয় নাখোশ হলো। প্রেমা সামিরা অবাক,এখানে আফরান ভাইয়া ওর বিয়েতে আসবে যা কল্পনার বাইরে ছিলো। প্রেমা সামিরা বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে গেলো।
__ভাইয়া আপনি সত্যি এসেছেন? বিশ্বাস হচ্ছেনা ।বসুন না এখানে ,সোফা দেখিয়ে ইশারা করে কথা টা বললো সামিরা ।
আফরান কারো দিকে না তাকিয়ে সোজা আরিয়ার সামনে আসলো।
আরিয়া থরথর করে কাপছে। সকালের জন্য নিশ্চিত আবারো কপালে দুঃখ আছে ।
___আ..আমি আমি কিছু করিনি সত্যি বলছি । আমি চাচা মানে সামিরা আমাকে আসতে মানে আসলে
আরিয়ার অগুছালো কথা গুলো সবাই খেয়াল করছে। প্রেমা সামিরা কে ফিসফিস করে বলছে ,এমন হ্যান্ডসাম একটা লোক মাফিয়া কিভাবে হলো সেটাই বুজিনা।আজব !
সামিরা প্রেমার কানের কাছে এসে বললো:এসব ছাড় নিজের গাল সামলা আগে যদি ভূলে আমাদের গালেও চর পরে মানসম্মান …
প্রেমা:আরে কি বলছিস ,আমাদের কেনো মারবে আরিয়ার গালে হয়তো পড়বে কিন্তু আমরা তো শুনেছিলাম ভাইয়া দেশের বাহিরে গিয়েছে তাহলে কখন আসলো?
সামিরা :এসব ভাবনা বন্ধ কর আর বাকি সিন দেখ।
আয়শ আফরানের কাছে এসে বললো,এখানে আসার পারমিশন তোকে কে দিয়েছে?
আফরান আরিয়ার দিকে তাকিয়েই বাকা হেসে আয়শের উত্তরে বলে
___আয়শ তুই এখনো বাচ্চা মানুষ শুধু শুধু বড়দের মাঝে আসিস না।
__আমি এসেছি নাকি তুই আসছিস? আরিয়াকে মারার চিন্তা বাদ দে , অকারনে শুধু কেন মারিস মেয়েটা কে ? আর তাছাড়া আমার ফিয়ন্সি এখন ও সো ডোন্ট টাচ । কথাটা বলে আরিয়ার বাম হাতে ধরে আয়শের পাশে দাড় করায়।
আরিয়ার ভয় যেনো দ্বিগুন বেড়ে গেলো।
__ভাইয়া প্লীজ হাত টা ছেড়ে দিন ,আমি ঝামেলা চাইনা ,ছাড়ুন ।
__কিছু না বলে আরো শক্ত করে হাত টা চেপে ধরলো আয়শ ।ভয় পেয়ো না আমি আছি,
আরিয়ার বুক ধুকপুকিয়ে আওয়াজ হচ্ছে।নিশ্চয়ই আজ মেরেই ফেলবে একদম তাকে ।
আরিয়ার হাত স্পর্শ্ব করতে দেখে আফরান সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলো ,কপালের রগ গুলো ভেসে উঠলো ,দুহাত মুঠি করে নিজেকে স্থির রাখার বৃথা চেষ্টা চালালো।
আরিয়া আফরানের অবস্থা দেখে ভয়ে চোখ দিয়ে পানি ফেলে আয়শ কে উদ্দেশ্য করে বললো , প্লীজ ওয়ান রিকোয়েষ্ট আমার হাত টা ছাড়ুন।
আরিয়ার চোখে ভয়ের আভা সংযুক্ত জল দেখে আয়শ ঠিক থাকতে পারলো না আরিয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে আফরান কে উদ্দেশ্য করে বললো ,দেখ তোকে কতোটা ভয় পায় মেয়েটা , তোকে দেখেই ভয়ে কান্না করে দিয়েছে তবুও তুই ওর পিছে লেগে থাকিস ,হুয়াই? ও কি করেছে তোর বলতো।
আফরান এবার চোখ খুলে তাকায় , চোখ দুটি লাল হয়ে আছে। হয়তো আয়শ কে এখনি কিছু করে ফেলবে দেখেই বুঝা যাচ্ছে , কিন্তু এক সেকেন্ড ও দেরী না করে আফরানের রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটার আগেই আরিয়া ধপাশ করে সবার সামনেই আফরান কে জড়িয়ে ধরে ।
আকস্মীক ঘটনায় সবাই স্তব্ধ ,কি হলো কারোই বোধগম্য হলো না। প্রেমা সামিরার চোখ দুটি গোল গোল রসগোল্লা হয়ে আছে,রিয়েলি? এটা কি সত্যি ?
আরিয়া আফরান কে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে দুবার একটু বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো,প্লীজ ঝামেলা করবেন না এটা বিয়ে বাড়ি ভাইয়ার দোষ নেই , ভাইয়া বুজতে পারেনি । শান্ত হন ,সত্যি বলছি এবার থেকে বাধ্য মেয়ের মতো থাকবো ।আর ভূল করবোনা। আর কাউকে আমায় ছোয়ার সুযোগ টুকু কখনো দিবো না।প্রমিস,পাক্কা প্রমিস। কথা গুলো একসাথে বলে থামে আরিয়া, আফরানের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে আফরানের দিকে তাকায় ,
আরিয়ার স্পর্শ পেয়ে সাথে সাথে ছিলো আফরান এখনো চোখ বন্ধ করে আছে ।
__আরিয়া শান্ত গলায় আফরানের গাল দুটিতে হালকা ভাবে নিজের হাত দুটো রেখে বললো ,
তাকান আমার দিকে,দেখুন ! আর রাগ করবেন না প্লীজ।
আফরান চোখ খুললো চোখের লাল আভা কমে এসেছে , এতোক্ষণ বোধহয় রাগ কমানোর জন্যই এমন করে ছিলো । কপালের ভেসে উঠা রগ গুলো বিরক্ত প্রায় ।দুহাতের মুঠি হালকা হয়ে আসলো ।
আয়শের মাথার উপর যেনো কেউ কোনো ভারী জিনিস ছুরে ফেলেছে ,বুক টা লাফাচ্ছে চিনচিন ব্যাথায় ,যার থেকে পালিয়ে এসেছে এতো বছর আজ তার বুকেই সে নিজেকে সুরক্ষীত ভাবছে? এটা কি আদৌ সত্যি? হ্যা সব সত্যি তার চোখের সামনে সেটাই হচ্ছে এই মুহুর্তে । আয়শ এক হাতে বুকের বাম পাশটায় নিজের সব টা শক্তি দিয়ে ধরলো ।
প্রেমা সামিরা হতাশ খুবই হতাশ ,এটাও সম্ভব? সত্যিই সম্ভব । যার নামে সারাবছর খারাপ কথা শুনেছে আজ নিজেই তার মাঝে নিজেকে হাড়িয়েছে। তাছাড়া যাকে কন্ট্রোল করা কারো পক্ষে সম্ভব নয় তাকেই আরিয়া দুটি কথায় থামিয়ে দিলো।
ভেরি ইন্টারেস্টিং দুই জনের মুখ হা হয়ে আছে এখনো।
আফরান আরিয়ার দিকে তাকিয়ে দুহাতে আরিয়াকে কোলে তুলে নেয়।,,
– এই রুম টা এখন আমার চাই ।আফরানের কথায় আয়শ তব্ধ হয়ে রুম ছাড়লো ,প্রেমা সামিরাও দেরি করলো না ।
আফরান আরিয়া কে প্রথমে ওয়াশ রুমে নিয়ে গিয়ে আয়শের স্পর্শ কৃত হাত টায় পানি দিয়ে নিজ হাতে স্লাইড করে ধুয়ে দিয়ে বেড়িয়ে আসে । তারপর খাটের উপর শুইয়ে দিয়ে দরজা আটকিয়ে এসে আরিয়া পাশে বসে মাথায় হাত বুলালো ,আরিয়া ভয়ে এখনো কাপছে।
আফরান বিরক্ত কন্ঠে বললো :এভাবে কাপা কাপির কি আছে? যখন অবাধ্য হও তখন খেয়াল থাকেনা কি করছো?
আরিয়া কিছু বললো না।
আফরান বলল,
__বলেছিলম না সকালে না আসতে ,শরীর কতটা দুর্বল হয়ে আছে তুমি জানো? তবুও আসলে । আর অন্যের ছোয়া হাতে ….
আরিয়া আফরানের কথা শেষ করতে না দিয়ে বললো,
__আমি ইচ্ছে করে দেইনি তো আপনি দেখলেন না। সত্যি বলছি আমি অনেক বার নিষেধ করেছি।
__আবার তর্ক করছো ,তোমার সাহস হয় কিভাবে আমার উপরে কথা বলার
__আমি এমনিতেই অনেক সাহসী, হুম ।
__হয়েছে ? এখন চুপ করে একটু ঘুমাও আর এটা খোলো ঘেমে গেছো অনেক । পরে আবার অসুস্থ হয়ে যাবে।
বলে আফরান নিজেই পিন গুলো ছাড়িয়ে হিজাব খুলে দিলো।
আরিয়ার ঘারে পুরে যাওয়ার দাগ টা এখনো পিনপিনে হয়ে আছে,সারতে সারতে কিছুদিন সময় নেবে হয়তো । আফরান দাগ টির উপরে কয়েকবার হাত বুলালো ।
__খুব জলছে ?
আরিয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যা সুচক বুঝায়
আফরান এবার আরিয়ার জামার হাতা উপর দিক থেকে নিচে নামানোর চেষ্টা করে বাহু ও কাঁধের ক্ষতো গুলো দেখার জন্য কিন্তু আরিয়া লজ্জায় আড়ষ্ঠ হয়ে আফরান কে বাধা দিতে চায়।
আফরান একটু ধমকিয়ে একটা হাতা একটু নিচে নামায় ,বাহুতেও নখের দাগ গুলো কালচে হয়ে আছে।
___খুব ব্যাথা এখনো?
আরিয়া আবারো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়
___আচ্ছা জামার নিচে আজ এটা না পরলে হতোনা ? ব্যাথা লাগেছেনা ? এটুকু বলে ছিলে যাওয়া দাগ গুলোতে তর্জনী স্লাইড করে দিতে দিতে বলল,
__এই যে এখানে- এখানে এই রকম গুলোর উপরে এটার জন্য চাপ সৃষ্টি হচ্ছে তোমার কষ্ট হচ্ছে না?
আরিয়া আফরানের কথা টা ঠিক বুজলো না। তাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আফরানের দিকে তাকায়।
আফরান দ্বিধাহীন ভাবে কাঁধে দৃশ্যমান ইনার টিতে দৃষ্টি ইঙ্গিত করে বললো
__এটা
আরিয়া যদি পারতো এখন এই লোক টাকে মেরে পুতে দিতো নাহয় নিজে মাটির নিচে গর্ত খুড়ে ঢুকে যেতো ।
আফরান আরিয়াকে কাচুমাচু করতে দেখে বললো ,
__ কি হয়েছে ? কোনো সমস্যা?
আরিয়া কোনো কথা না বলে আফরানের কোটের নিচে ঢুকার বৃথা চেষ্টা চালায় । আফরান কপাল কুচকায় । __কি হয়েছে সেটা তো বলবে নাকি ? আমি কি খুব বেশি লজ্জার কথা বলে ফেললাম?
আরিয়া চোখ বন্ধ করে আফরানের কোটের উপর দিয়েই পেট বরাবর মুখ লুকালো। আফরান এক প্রকার বিরক্তি নিয়েই নিজের কোট শরীর থেকে খুলে নিয়ে আরিয়া কে উঠিয়ে নিজের উরুতে বসিয়ে বললো।
__এখানেও ব্যথা লেগেছে তাই বলেছি এভাবে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই । আর .. আর কিভাবে কাবু করতে হয় সব শিখে গেছো দেখছি। (মৃদু হেসে)
আরিয়া কথা না বলে আলতো করে আফরান কে জড়িয়ে ধরলো।
মি মাফিয়া পর্ব ১৫
__কি করেছি?
মৃদু আওয়াজে
___কিছু না
আফরান কথা না বাড়িয়ে আরিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো ।