টেরিবেল পর্ব ১৭
অনুপ্রভা মেহেরিন
চোখে দেখা সুন্দরের পেছনে ভয়ংকর কিছু তো আছেই।আমরা সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে ভুলে যাই ভয়ংকরের কথা যেমনটা হলো আন্দ্রিয়ার সহিত।এই জঙ্গলটা দেখতে ভীষণ সুন্দর যেদিকে চোখ যাবে সবুজ আর সবুজ সাথে পাখিদের কলরব থেকে থেকে কয়েকটা পশুর হাক-ডাক।আন্দ্রিয়া এই সৌন্দর্য অবলোকনে এগিয়ে যায় প্যালেসের সীমানা পেরিয়ে।এডউইন অবশ্য পূর্বেই তাকে সতর্ক করেছিল কিন্তু এই সৌন্দর্যের মাঝে যে বিপদ আসবে আন্দ্রিয়া ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারেনি।কই আশেপাশে তো হিংস্র কোন জন্তু জানোয়ার দেখা যাচ্ছে না তাহলে একটু এগিয়ে যেতে কি সমস্যা?
দৃষ্টির অগোচরে যে আন্দ্রিয়ার জন্য বিপদ অপেক্ষা করেছিল তা হয়তো স্বয়ং ভাগ্য বিধাতাই জানে।
আন্দ্রিয়া এগিয়ে যেতেই বুনো বিড়ালটা হামলে পড়ে তার গায়ের উপর।এই দৃশ্যে এডউইনের বুক কেঁপে উঠল।বুনো বিড়ালরা যে কতটা হিংস্র এক্ষুনি আন্দ্রিয়াকে জখম করবে এডউইন সব ফেলে ছুটে যাওয়ার আগেই তার পালিত সবচেয়ে ভয়ংকর শেপার্ড জাতের কুকুরটি ছুটে গেল আন্দ্রিয়ার নিকট।আকস্মিক আক্রমণে আন্দ্রিয়া মেঝেতে ছিটকে পড়ে এই বুঝি ভয়ংকর বিড়ালটি তাকে আঁচড় কাটবে,কামড়ে ছিড়ে ফেলবে দেহ তবে তার আগেই শেপার্ড কুকুরটি যার নাম রক সে আন্দ্রিয়ার উপর থেকে ছিনিয়ে আনল বুনো বিড়ালটাকে।মাঝারি আকারের বিড়ালটি বিশাল দেহের একটা কুকুরের সাথে কি আদৌ পেরে উঠে?কয়েক সেকেন্ড চলল রক আর বুনো বিড়ালের ধস্তাধস্তি চোখের পলকে রক তার শানিত দাঁতের সাহায্যে ছিড়ে ছিন্নভিন্ন করে ফেলল বিড়ালটিকে।আন্দ্রিয়ার মুখে,দেহে ছিটকে আসে বিড়ালের রক্ত।মেয়েটা কাঁপতে কাঁপতে চেচিয়ে উঠল এডউইন দ্রুত তাকে কোলে নিয়ে প্যালেসের ভেতর প্রবেশ করল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হঠাৎ পড়ায় আন্দ্রিয়া পিঠে একটু চোট লেগেছে, কেটে গেছে এই ছাড়া কোন আঘাত লাগেনি।বিশেষ করে বুনো বিড়ালটা আঁচড় কাটার আগেই রক তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
” আন্দ্রিয়া ঠিক আছো?কোথায় লেগেছে?”
আন্দ্রিয়ার কথা বলার শক্তি নেই রকের বীভৎস কার্যক্রম দেখে তার শরীর কাঁপছে গা গুলিয়ে উঠছে।আন্দ্রিয়া এডউইনের বুকে মাথা চেপে শক্ত করে জড়িয়ে রাখল কিছুক্ষণ।মাফিন নাট ছুটে এসে বসল তাদের নিকট হয়তো আন্দ্রিয়ার কার্যক্রমে জানতে চাইছে কুইনের কি হয়েছে?
” আন্দ্রিয়া চোখ খুলো ভয় নেই।আমাকে দেখতে দাও তোমার কোথায় লেগেছে?”
আন্দ্রিয়া হুহু শব্দে কেঁদে উঠল তার কান্নায় এডউইনের ভয় দ্বিগুণ বাড়ল আতঙ্কিত হয়ে চেচিয়ে উঠল সে,
” কথা বলো কোথায় ব্যথা পেয়েছো?”
আন্দ্রিয়া হাত ইশারায় পিঠ দেখিয়ে দিতে এডউইন দ্রুত হাতে আন্দ্রিয়ার জামা তুলে দেখতে যায় কিন্তু সুতির ফ্রকটা সম্পূর্ণ না তুলতে পেরে এডউইনের মেজাজ মুহূর্তে বিগড়ে যায়।এডউইন পিঠের দিক থেকে এক টানে ছিড়ে ফেলে ফ্রকটা।আন্দ্রিয়ার কান্না থেমে যায় রক্তাক্ত চোখে মুখে অবাক দৃষ্টিতে তাকায় এডউইনের পানে,
” আপনি আমার ফ্রকটা ছিড়ে ফেললেন!”
” তো?কি করব আমি?”
” আমার পছন্দের ফ্রক।”
” আর তুমি আমার পছন্দের, সবার আগে তোমার সুরক্ষা দরকার।এমন হাজারটা ফ্রক আমি এনে দিব।”
আন্দ্রিয়ার কান্না থেমে গেছে এডউইন আন্দ্রিয়ার পিঠে দৃষ্টিপাত করেই চোখ বন্ধ করে – গাছের ভাঙা ঢাল লেগে অনেকটা কেটে গেছে সেই সাথে কিছু অংশে চামড়া ছিলেও গেছে।কাটা স্থানে ধীরে ধীরে রক্ত ঝরছে এডউইনের বুকটা হুহু করে উঠল।
“রুমে চলো।”
এডউইন আন্দ্রিয়াকে কোলে তুলে নিজের কক্ষের দিকে ছুটল।নাট মাফিন তারা আতঙ্কিত চোখে তাদের পিছু পিছু ছুটছে।এডউইনের বিচলিত মুখখানি দেখে ম্যাকাও পাখিটি এডউইনের পিছু পিছু ছুটল।
আন্দ্রিয়াকে যথাযথ প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ক্ষান্ত হলো এডউইন।মাফিন নাট ম্যাকাও এখনো আন্দ্রিয়ার পাশে বসেই তাকে পরখ করছে।এডউইন আদেশ সুরে আন্দ্রিয়াকে বলল,
” একদম উঠবে না এভাবে উপুড় হয়ে থাকো।”
” এভাবে কতক্ষণ থাকা যায়?উঠে দাড়াই?”
” একদম না।আমি একটু আসছি মাফিন নাট আর ম্যাকাও আন্দ্রিয়ার সাথে থাকো।”
এডউইনের আদেশ পেয়ে মাফিন মিয়াও মিয়াও শব্দ তুলে আন্দ্রিয়ার মাথার কাছে বসল তার পিছু পিছু এলো নাট।ম্যাকাও পাখিটি বড় আগ্রহের সাথে বলল,
” কুইন সুন্দরী, কুইন সুন্দরী।”
এডউইন চলে যেতেই আগমন ঘটল শালোমীর।শালোমীর আজ ভীষণ মন খারাপ ফেইরিটা বেশ দুঃখি মনে এগিয়ে এসে আন্দ্রিয়ার কপালে চুমু খেল।
” আন্দ্রিয়া মেরি বিয়ের পর থেকে আপনার একেরপর এক অসুস্থতা আমাকে ভীষণ ব্যথিত করছে।এসব কি হচ্ছে কুইন?আপনি কি সাবধানে চলতে পারেন না?”
” শালোমী দুঃখ পেও না দেখো আমি ঠিক হয়ে যাব।”
” আমার প্রার্থনা রইল আপনার জন্য অতি শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠুন।”
শালোমী কয়েক পল চুপ রইল।কিছুটা ভেবে চিনতে আন্দ্রিয়াকে বলে,
” কুইন,এডউইন উইলসন স্বামী হিসেবে কেমন?”
” স্বামী হিসেবে যথেষ্ট ভালো।জানো শালোমী, মাঝে মাঝে মনে হয় আমি স্বপ্ন দেখছি ঘুম ভাঙ্গলেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে।যেভাবে যেমন চেয়েছি এডউইন ঠিক তেমনি আচ্ছা মানুষ কল্পনা শক্তি এত প্রখর যে বাস্তবতায় ধরা দেয়?”
” হয়তো দেয়।তবে আমি খুব করে চেয়েছি কেউ একজন আসুক আপনার বিষাদ ভরা জীবনটায় প্রতিটি কানায় কানায় ভালোবাসায় ভরিয়ে দেয়।”
আন্দ্রিয়া যখন শালোমীর সহিত বিড়বিড় করছিল তখন মাফিন নাট ম্যাকাও অবাক দৃষ্টিতে আন্দ্রিয়ার পানে তাকিয়ে।তাদের কুইন কার সাথে কথা বলছে?অদ্ভুত!
কিছুক্ষণ আগে যে এডউইনের চোখে মুখে ভয়ের আভাস ছিল সেই এডউইনের চাহনি মুহূর্তে পালটা গেছে কক্ষ থেকে বেরিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে সে এগিয়ে চলল রান্না ঘরে।আন্দ্রিয়াকে যে আঘাত করবে যার মাধ্যমে আন্দ্রিয়ার ক্ষতি হবে তাকেই নিঃশেষ করে ছাড়বে সে।যে জীবনে কেউ আসেনি কেউ থাকতে চায়নি সেই জীবনে আন্দ্রিয়ার আগমন ছিল চৈত্রের খরা ভূমিতে এক পাশলা বৃষ্টির রূপে।যে আন্দ্রিয়া এডউইনের জীবনে এতটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে সেই আন্দ্রিয়ার ক্ষতি কি করে সহ্য করবে সে?
এডউইন নিচ তলায় নামল প্যালেসের উঠনে বসে আছে শেপার্ড কুকুরগুলো তার মাঝে রক বসে।রকের মুখে রক্ত লেগে আছে এডউইন ছুটে এসে রককে জড়িয়ে ধরল,
” গুড জব।রক আজ যা করেছো তুমি প্রশংসার দাবিদার।তোমাকে ধন্যবাদ জানিয়েও শেষ করতে পারব না তুমি আমার কতটা উপকার করেছো।”
এডউইন রকের মাথায় চুমু খেয়ে উঠে দাঁড়াল।বুনো বিড়ালটির মাথা দেহ থেকে ছিন্ন হয়ে গেছে বুক পেট ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলেছে রক।এডউইন মৃত বুনো বিড়ালটাকে হাত দিয়ে তুলে প্যালেসের ভেতরে গেল।লম্বা চওড়া দেহের সাথে আটাআটি লেগে থাকা সফেদ গেঞ্জিটায় বেশ কয়েক ফোটা রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছে।এডউইন শিষ বাজাতে বাজাতে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে তার শিষের ডাকে আশেপাশে পাখিরা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।নাহ এই শিষের ডাকে কাউকে ডাকা হয়নি তা প্রত্যেকটা প্রাণি বুঝতে পারে এই শিষের সুরটা ভিন্ন।এই মুহূর্তে এডউইনকে দেখতে হায়না রূপি মানুষ মনে হচ্ছে।
যদি বাইরে থেকে আন্দ্রিয়ার কক্ষের দরজা বন্ধ না করা হতো,তবে মেয়েটা যদি এক্ষুনি উঠে এসে দেখত তার প্রেমিক পুরুষের বাদামী চোখ জোড়ায় হিংস্রতা ঝরছে তবে এডউইনকে পশু রূপে উপাধি দিতো সে।
এডউইন কিচেনে গেল কেভিনেট থেকে তার সবচেয়ে পছন্দের ছুটিটা বের করল।এরাবিয়ানদের দ্বারা তৈরি স্পেশাল ছুরিটি হাতে লাগলেই যেন চামড়া ভেদ করে মাংস কেটে ফেলবে।নিখুঁত সুন্দর ডিজাইনে তৈরি ছুরিটির সাহায্যে এডউইন
এই পর্যায়ে তার সবচেয়ে বিকৃত মস্তিষ্কের কাজটা করল।চপিং বোডে বুনো বিড়ালটার মাংস যতটা পারা যায় কুচিকুচি করছিল।অনেকবার হাড়ের অংশে ধুমধাম কোপ বসানোর ফলে রক্ত ছিটকে এসেছে তার চোখে মুখে।এডউইন দাঁতে দাঁত চিপে নিজের রাগ সংবরন করছে।যখন বিড়ালের মাংস কুচিকুচি করছিল তখন তার চোখে মুখে দেখা গেল আনন্দের আভাস সে ভীষণ আনন্দের সহিত সুরেলা কণ্ঠে আন্দ্রিয়ার উদ্দেশ্যে গাইতে সুরু করল,
“তোর ইশারাতে মন হারাতে ছুঁতে চায়
পেরিয়ে সব সীমানা।
আজ ভেবে দেখ যদি হতো এক
কোনো দিন তোর আমার ঠিকানা।
তোর আশিকি পাগল করেছে আমায়
তোর আশিকি বেধর মেরেছে আমায়।
তোর আশিকি ও ও তোর আশিকি….”
এডউইন যেহেতু বাংলাদেশে আসার পর ছোট থেকেই বাংলা মিডিয়ামে পড়াশোনা করছে তার বাংলা উচ্চারণ কথার ধরণ একদম নিখুঁত।
এডউইন বাকি গানটা গাইতে গাইতে
এক হাড়ি পানি বসিয়ে বুনো বিড়ালের মাংস সিদ্ধ করল এডউইন সেই সিদ্ধ করা মাংস নিয়ে গেল রকের কাছে।
রক যেন তার প্রভুর অপেক্ষায় ছিল এডউইনকে দেখতে পেয়ে চকচক করে উঠল তার চোখ জোড়া।এডউইন বাঁকা হেসে বলে,
“রক মজা করে খাও।তৃপ্তি মিটিয়ে।”
এডউইন রকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল আর রক তার প্রভুর আদেশে ভীষণ তৃপ্তি সহকারে খেতে শুরু করল।
সকাল পেরিয়ে রাত নামল এডউইন স্যুপ রান্না করছে সাথে চিকেন ফ্রাই। আন্দ্রিয়ার পছন্দের খাবার ইদানীং বানাতে তার বেশ ভালো লাগে।আন্দ্রিয়া চুপচাপ বসল কিচেনে থাকা এডজাস্ট টেবিলটায়।আন্দ্রিয়ার পিঠের জখম সেরে উঠেনি তাই এডউইন তাকে জামা পরতে নিষেধ করেছে মেয়েটা কোন মতে ওড়না পরে সারাটা দিন রুমেই কাটিয়ে দিল কিন্তু কতক্ষণ রুমে থাকা যায়?বাধ্য হয়ে এডউইনের ঢিলে ঢালা একটা পাতলা শার্ট পরে নিচে নেমে এলো।
এডউইন তাকে দেখেই ভ্রু কুঞ্চিত করল।
” কুইন জামা পরলে কেন?”
” নিচে আসব তাই।”
” এখানে কেউ আছে?আমি ছাড়া এখানে কে আছে?আমার সামনে এত ঢেকে চলার কি আছে?”
” ইয়ে মানে এডউইন নিজের কাছেই নিজের অস্বস্তি লাগে… ”
আন্দ্রিয়া কথা শেষ করার আগেই এডউইন তাকে ধমক দিল,
” শাট আপ।আমি যা বলেছি তাই হবে জামা খুলো।”
” এডউইন প্লিজ…”
এডউইন আন্দ্রিয়ার বাধা শুনল না দ্রুত হাতে আন্দ্রিয়ার শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করল।যত বোতাম খুলছিল আন্দ্রিয়ার শরীর ততটাই উন্মুক্ত হলো।এডউইন আন্দ্রিয়ার ঘাড়ে চেপে ধরে গলার চুমু খেল এবং গলায় ঝুলিয়ে দিল ওড়না।
” এভাবে থাকো পিঠের ঘা শুকিয়ে যাবে দ্রুত।”
” আপনার কথা না শুনলে জোর করে শুনিয়েই ছাড়েন এতটা ত্যাড়া কেন আপনি?”
” ত্যাড়া?এইটুকুই দেখলে?ভালোবাসে ত্যাড়ামো করি যে তা বুঝো না?”
এডউইন আন্দ্রিয়ার ঠোঁটে ঠোঁট মেশায়। নির্লিপ্ত ভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠল আন্দ্রিয়ার ঠোঁটের মাঝে – আন্দ্রিয়া বাঁধা দেয় না এসবে সে এখন অভ্যস্ত এডউইনের ছোঁয়া পাগলামো এসবি তার সুখ।
ঘুম থেকে উঠে এডউইন দেখল আন্দ্রিয়া নেই সারা প্যালেসে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও এডউইন আন্দ্রিয়াকে পেল না সর্বশেষ প্যালেস ছেড়ে এডউইন ছুটে গেল গহিন জঙ্গলে আন্দ্রিয়াকে অনেকবার ডাকল মেয়েটার সাড়া শব্দ নেই হঠাৎ কানে এলো আন্দ্রিয়ার চিৎকার হিংস্র একটি জন্তু আন্দ্রিয়াকে মুখে কামড়ে ধরে খুবলে খুবলে ছিন্নভিন্ন করছে এডউইনের বুকটা ধক করে উঠল দ্রুত আন্দ্রিয়াকে বাঁচাতে গেলেই বুঝতে পারল ধীরে ধীরে আন্দ্রিয়ার চোখ নিভে আসছে তবে কি আন্দ্রিয়া মারা যাচ্ছে?
” আন্দ্রিয়া!”
আন্দ্রিয়াকে চিৎকার করে ডেকে উঠে বসল এডউইন।ঘুমের মাঝেই সারা শরীর ঘেমে একাকার অবস্থা।এডউইনের বুক কাঁপছে থরথর করে কাঁপছে শরীর।আন্দ্রিয়া তার বুকে নেই মেয়েটা মাফিনকে বুকে নিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।এডউইনের হাঁসফাঁস এখনো কমছে না কম্পিত হাতে বিছানার পাশে থাকা টেবিল থেকে পানির গ্লাস তুলে ঢকঢকে পুরো গ্লাস পানি এক নিমিষে সাবাড় করল।আন্দ্রিয়ার উদাম পিঠে আঘাত স্থানে চুমু খেয়ে আচমকা কেঁদে উঠল এডউইন।
এডউইন যে ভয় পেয়েছে তা বলতে আর বাকি থাকে না।গায়ের জামা খুলে ছুড়ে।ফেলল মেঝেতে ফুল স্প্রিডের ফ্যানেও সে ঘেমেই চলছে দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে ফিরল সে।নাহ এখনো এডউইনের কান্না থামছে না আন্দ্রিয়ার ঘুমন্ত মুখখানিতে চুমু খেয়ে নিজেকে কিছুটা শান্তনা দিল।ধীরে ধীরে তার মস্তিষ্ক যেন স্বাভাবিক হলো ভয় ভীতি কেটে যাচ্ছে ধীরে ধীরে বাস্তবতায় ছিটকে যাওয়ার পরেও এডউইনের কান্না থামল না আপনা আপনি চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল।আন্দ্রিয়ার বুকে গুটিয়ে শুয়ে থাকা মাফিনকে দেখে এডউইনের বেশ হিংসা লাগল।মাফিনকে টেনে সরিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
“আমাদের মাঝে আসবে না হতচ্ছাড়া তোমার না বর আছে?আমার বউয়ের উষ্ণতায় ডুবে থাকে কত বড় সাহস।শুনে রাখো মাফিন আন্দ্রিয়া মেরি শুধু আমার।আমার আমার আমার,শুধু আমার।”
এডউইন মাফিনকে সরিয়ে নিজেই মাফিনের মতো গুটিয়ে শুয়ে পড়ল।আন্দ্রিয়ার বুকের মাঝে এতক্ষনে যেন হারানো শান্তি ফিরে পেল সে।
যদি আন্দ্রিয়া এই মুহূর্তটা দেখত তবে নিশ্চিয়ই বলতো,এডউইন একটা অবলা প্রাণির উপর হিংসা দেখাচ্ছেন?আপনি কি পাগল?
এডউইন নিশ্চয়ই প্রত্যুত্তরে বলত, হ্যা আমি পাগল।তোমার জন্য পাগল।
বেশ অনেক দিন পর,
নিরবতা ছেঁয়ে আছে রাতের শহরে।পাপেটের আজ মন ভালো নাকি খারাপ সে নিজেই বুঝতে পারছে না।ইদানীং খুনের নেশা মস্তিষ্কে চাপছে না,যেন সবকাজ শেষ করে সে আরামে ঘুরছে ফিরছে।তার পরণে শার্ট মাথায় ক্যাপ তাকে দেখতে মনে হবে সাধারণ মানুষ অথচ এই সাধারণ লোকটাই যে অসাধারণ শয়* তান তা আর কয়জনেই বা বুঝতে পারবে?
মধ্যরাতটা দখল করে নেয় নিষিদ্ধ পল্লির মেয়েরা শহরের আনাচে কানাচে ঘুরে ফিরে খদ্দের খুঁজতে থাকে।কাউকে সরাসরি বলে কিংবা কাউকে ইশারায় বোঝায় তেমনি নিষিদ্ধ পল্লির একজন মেয়ে ববিতা।দেখতে যেমন সুন্দরি বয়সটাও কম আজ মন মত খদ্দের পাওয়া যাচ্ছে না।যাদের পেল সবাই কম টাকা দিতে চাইল কম টাকায় কাজ করতে ববিতা একদম রাজি নয়।ববিতা অনেকক্ষণ যাবৎ খেয়াল করল লম্বা চওড়া একজন লোক অনেকক্ষণ যাবৎ রাস্তার ফ্লাইওভারে একবার উঠছে আবার নামছে, আবার কিছুক্ষণ ফ্লাইওভারের উপর দাঁড়িয়ে থাকছে।ববিতা ভাবল লোকটা হয়ত মেয়ে খুঁজছে দেখতে বেশ বড়লোক লাগছে।লোকটার বয়স ববিতা ঠিক ধরতে পারল না কত হবে?ত্রিশ কি বত্রিশ এমন হবে?হয়ত।ববিতার পরনে জরজেট শাড়ি সে নিজের দেহের বেশিরভাগ অংশ উন্মুক্ত করে দাড়াল সেই লোকটার সামনে।সেই লোকটা কে জানেন?পাপেট!
ববিতা বলল,
” কি খুঁজেন?রাইতের রানি নাকি?”
” নাহ।”
পাপেট ভীষণ গম্ভীর কণ্ঠে শুধায় কিন্তু ববিতা ছেড়ে যাবার মেয়ে নয় সে পাপেটের গলা জড়িয়ে বলে,
” চলেন স্যার এমন সুখ দিমু কেউ জীবনে দেয় নাই আপনারে।”
“ছাড়ো আমাকে।”
পাপেট বেশ ধমক দিয়েই কথাটা বলল ববিতা এই পর্যায়ে খেয়াল করল লোকটার কালো মনির দু’চোখে রাগের আভাস মিলছে তবে তাতে পাত্তা দিল না ববিতা সে পুনরায় বলে,
” চলেন বেশি দিতে হইব না দুই ঘন্টা দুই হাজার দিয়েন।”
” শুনো,আমায় ছাড়ো রেগে গেলে কিন্তু এখান থেকে ছুড়ে ফেলে দিব।”
লোকটার ধমকে ববিতা কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
” আমনের কি যন্ত্রে সমস্যা নাকি?একটা সুন্দরী মেয়ে দেইখাও লোভ লাগেনা?শালা সর।”
ববিতা হেলে দুলে উলটো দিকে হাটা দিল। পাপেট আচমকা ডেকে উঠল মেয়েটাকে।
” এই মেয়ে শুনো।”
” বলেন।”
” চারঘন্টার জন্য পনেরো হাজার পাবে রাজি?”
এত টাকা!ববিতার ভাবনার বাইরে ছিল। সে পাপেটের এক কথায় রাজি হয়ে গেল তবে পাপেট শর্ত দিল তার সাথেই যেতে হবে ববিতা এত টাকার লোভ কিছুতেই সামলাতে পারল না সে চলল পাপেটের সহিত।
সুসজ্জিত একটি বাসা অথচ এখানে কেউ নেই!এই লোকটা একাই থাকে!বিশ্বাস হলো না ববিতার।সে যেন পাঁচতারকা হোটেলে এসেছে এত সুন্দর বাসা সে আগে দেখেনি।পাপেটের বাসার মূল অংশ এটাই সুসজ্জিত মনোরম বাসা অথচ এর পেছনে যে লুকিয়ে আছে বীভৎসতা তা কয়জনে জানে?
পাপেট দুটো মদের গ্লাস আনল এবং মদ ঢেলে ববিতার দিকে বাড়িয়ে দিল।ববিতা সংকোচহীন মদের গ্লাস হাতে তুলে নিল এবং একেরপর এক গিলতে থাকল।
” এই বাসায় একা থাহেন কেন,বউ কই?”
” বউ তার বাবার বাড়ি গেছে।”
” ওও আর খামু না নেশা হইয়া যাইতাছে।”
পাপেট শ্লেষ হাসল ববিতাকে বলল,
“যে কাজে এলে সেই কাজটা কখন করবে?”
” চলেন।”
ববিতার বাঁধা নেই একে একে দেহ থেকে সমস্ত জামা কাপড় খুলে পাপেটের সামনে নিজেকে উন্মোচন করল।পাপেট বিনা বাঁধায় আজ ববিতার সাথে শারিরীক সম্পর্কে লিপ্ত হলো।আজ তার শারিরীক ভাবে কোন অক্ষমতা দেখা দিল না।পাপেট নিজের ঘোরে ফিরল ভোরের দিকে আলো অবশ্য তখনো ফুটেনি ববিতা শাড়ি ঠিক করে পাপেটের উদ্দেশ্যে বলে,
“আবার লাগলে রাইত সেই ব্রিজের সামনে যাইবেন আমারে পাইবেন।টাকাটা?”
পাপেট টাকা দিল। ববিতা এতগুলো টাকা পেয়ে ভীষণ খুশি।পাপেট ববিতার উদ্দেশ্যে বলে,
” যাবার আগে আরেকবার খাওয়া যাক?”
” মদ খাইতে ভালাই লাগে প্রথমবার একটু কেমন কেমন পরে খাইতে খাইতে স্বাদ লাগে।”
পাপেট শ্লেষ হাসল ববিতার সাথে আরো কয়েক গ্লাস মদ সাবাড় করে ববিতাকে বিদায় জানাল।পাপেট ক্লান্ত শরীর টেনে এনে শুয়ে পড়ল বিছানায় তার ঠোঁটের কোনে ফুটে আছে হাসি।পাপেট বেশ নায়কীয় ভঙ্গিমায় বলে,
“আপনারা কী ভাবছেন আমি ববিতাকে এত সহজে ছেড়ে দেব?এই পাপেটের খু* নের নেশা জাগেনি তাই হাতে রক্ত লাগাতে চায় না।মৃত্যু দূত যখন কাউকে চিহ্নিত করে ফেলে তার কি আর বেঁচে থাকার উপায় অন্ত আছে?
টেরিবেল পর্ব ১৬
ববিতাকে ছেড়ে দিতাম কি করে বলেন তো?ববিতা আমার দূর্বলতা নিয়ে খোঁচা দিয়েছে আর আমি আমার দূর্বলতা মানতে নারাজ।আমি চাই না কেউ আমাকে দূর্বল বলুক।ইচ্ছে হচ্ছিল ববিতাকে ছি*ড়ে ছি*ড়ে খাই কিন্তু বিশ্বাস করুন ওই যে বললাম রক্ত লাগাতে চাই না।তবে কি ভাবলেন আমি ববিতাকে ছেড়ে দিয়েছি?হা হা হা পাপেটের হাত থেকে তার শিকার কখনো রেহাই পায় না।এই যে দেখলেন ববিতাকে আদর যত্ন করে মদ খাওয়ালাম।এই মদে কি ছিল জানেন?মদে আমি ফ্লুওরোঅ্যাসিটেট মিশিয়ে দিয়ছি।আগামী ৫ ঘন্টার মধ্যে ফ্লুওরোঅ্যাসিটেট তার বিষক্রিয়া কার্যক্রম শুরু করবে ধীরে ধীরে ববিতার বমি হবে,পেট ব্যথা হবে তারপর যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে পতিত হবে।হা হা হা, কি মনে ঘৃণা জন্মেছে পাটের জন্য?