আপনাতেই আমি পর্ব ৪৬

আপনাতেই আমি পর্ব ৪৬
ইশিকা ইসলাম ইশা

আকাশ আজ পরিষ্কার না হলেও কিছু তারা মিট মিট জ্বলছে।তাতে অল্প সংখ্যক আলো ছাড়াচ্ছে ধরনী জুড়ে।সেই আলোয় শ্যামরাঙা মায়াবী মুখখানা দিকের চেয়ে আছে তীব্র।রিদির ফুঁপিয়ে কান্না করা দেখছে তীব্র। মেয়েটার সব কিছুই এমন মায়া মায়া লাগে কেন!!এই যে কান্না করছে তাতেও আদুরে বাচ্চা লাগছে। কতোক্ষণ কাঁদবে আর….
কান্না বন্ধ করেন বেগমজান!!(কন্ঠে আজ তেজ নেই আছে অসহায়ত্ব)
রিদি তবুও কেঁদেই চলেছে দেখে তীব্র শান্ত স্বরে বলে,
আপনি আপনার জীবনের রিস্ক নিয়ে এই বাবুটাকে চান তাইতো!!
রিদি মাথা দুলায় বাচ্চাদের মতো! হ্যাঁ তার চাই!!

তীব্র হাসে। মাতৃস্নেহ সম্পর্কে অনেক শুনেছে সে।আজ দেখছে।ভাবনা ছাড়াই সহজে বলে দিল হ্যাঁ!!! কিন্তু এতে তার জীবন চলে যেতে পারে সেদিকে চিন্তা নেই।
ঠিক আছে!!তবে আমার একটা শর্ত আছে!!!
রিদি অবাক হয়ে তাকালো তীব্রর দিকে।তীব্র সেই দৃষ্টি তোয়াক্কা করল না শক্ত কন্ঠে বলল,
আপনার কিছু হলে আমি ওর দায়িত্ব নিব না!!
রিদি আরো অবাক হয়ে তাকাই,
মানে!!
মানে খুব সোজা!আপনার বেবি চায় আর আমার আপনাকে চায়!!আপনি নাই তো কিছু নাই।বুঝছেন?
রিদি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তীব্রর দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা দুলাল হ্যা সে বুঝেছে!রিদির মাথা দুলানো দেখে তীব্র কটমট করে চাইল।মনে মনে ভাবল এই মেয়ে তাকে এক আনাও ভালোবাসে না।তীব্র আবারো কটমট করে বলল,
আপনার বাচ্ছা আপনি দেখবেন!!
রিদি তীব্রর কথায় তোয়াক্কা না করে শোয়া থেকে উঠে তীব্রর বুকে মাথা এলিয়ে দেয়।
মনে মনে বলল এখানে আমি সবসময় নিরাপদ।আমি জানি আপনি আমার কিছু হতে দিবেন না।আর না বাচ্চার প্রতি অবহেলা করবেন!বাচ্চা কি শুধু আমার নাকি??নিজেও এটা কখনো করতে পারত না।আর আমার উপর যত হম্বিতম্বি হু!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিজের রুমে বসে আছে রিদি।হাতে তার জুসের গ্লাস। কিছুক্ষণ আগেই বমি করে ভাসিয়ে দিয়ছিল।তীব্র সব পরিষ্কার করে রিদির জন্য ফ্রেশ জুস করে নিয়ে এসে হাতে ধরিয়ে দেয়।রিদি অসহায় মুখে একবার গ্লাস তো একবার তীব্রর দিকে দেখছে। দুদিন যাবৎ রিদির সাথে দরকার ছাড়া কথা বলেনি তীব্র।রিদি সারাদিন বকবক করলেও কিছু বলেনি।তবে খেয়াল রাখতে কমতি নেই।দেশের বড় বড় গাইনি ডাক্তার সহ বিশিষ্ট সাজারি ডাক্তার এর সাথে কথা বলছে তীব্র। দুদিন ল্যাপটপ নিয়েই পড়ে আছে।চোখের নিচে পড়েছে কালো দাগ।হয়তো ঘুমাই না তাই।রিদি ছোট একটা শ্বাস ফেলে।গ্লাস টা রেখে সোজা গিয়ে তীব্রর কোলে বসে পড়ে।তীব্র বিরক্ত হয়ে বলে,

দেখছেন না কাজ করছি??
দেখছি!অনেক কাজ করছেন এখন বন্ধ করে রাখুন।
আমাকে ডিস্টার্ব করেন না।জুস শেষ করেছেন!!
রিদি উওর করল না।চুমু খাব!!!
হোয়াট??পাগল নাকি!!!সরুন!!
রিদি সরলো না ওভাবে বসে রইল।তীব্র বিরক্ত হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
রিদি ধৈর্য পরিক্ষা করিস না!আমার এতো ধৈর্য নেই।
রিদি তবুও নড়ল না পর্যন্ত।কাঠ কাঠ গলায় বলল,
আমারো এতো ধৈর্য নেই।
তীব্র রিদির ঠোঁটে আলতো ভাবে চুমু খেয়ে বলল,
এবার সরুন!!
রিদি ঠায় বসে আছে।সরছে না।তীব্র চরম বিরক্ত হয়ে বলল,
আপনি কি চাচ্ছেন আমি কট্রোললেস হয়ে যায়। বলে রিদির দিকে মুখ এগুতেই রিদি ঝটপট করে উঠে দাঁড়াল।তীব্র মনে মনে হাসল।পাগল মেয়ে একটা!!

রিদির রিপোর্ট নিয়ে মাএই মিটিং শেষ করল তীব্র। ল্যাপটপ বন্ধ করে পাশে তাকাতেই অবাক হল। রিদি গুটিসুটি মেরে সোফায় এক কোনে ঘুমিয়ে পড়েছে। মিটিং এর সময় যদিও রিদি অবদার করেছিলো তার বুকে ঘুমাবে। কিন্তু তীব্র এতো টেনশনে ছিল যে রেগে ধমক দিয়েছে।তীব্র ভাবল বিছনায় হয়তো আরামে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু নিজের পাশে দেখে অবাক হল।তীব্র এগিয়ে রিদির মুখের উপর চুল সরাতেই পিটপিট করে তাকাল রিদি। ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
বুকে ঘুমাবো!!
তীব্র আবাক হল। ঘুম ভেঙ্গে গেল এতো তাড়াতাড়ি।তার কাছে থাকলে তো উঠিয়ে নিয়ে গেলেও বুঝে না।তীব্র রাগি কন্ঠে বলল,
নিব না!আমার কাজ আছে!আপনি বিছনায় শুয়ে পড়েন।
রিদি আদুরে গলায় বলল,
বাবুর ভয় করছে একা ঘুমাতে।সে তো মায়ের মতো নীরাপদ আশ্রয়ে ঘুমাতে চাইছে।
তীব্র কিছু বলতে গিয়েও বলল না। চুপচাপ উঠে বিছনায় শুয়ে পড়ল।রিদি তীব্র কে বিছনায় যেতে দেখে বলে,
আমাদের কে নিয়ে যান।
আপনাদের পা আছে হেটে এসে শুয়ে পড়েন!

দেখছো বাবু !!!বাবা আমাদের একদম আদর করে না।আমরাও যাব না।কষ্ট হলেও এভাবেই থাকব।
তীব্র ৫মিনিট অপেক্ষা করে কটমট করে উঠে বসল।রিদিকে জেদ ধরে বসে থাকতে দেখে রেগে কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিল। আর নিজে উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে পড়ল।রিদিও কম যায় না।পেছন থেকে তীব্রর পেট জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়ল।তীব্র কিছু বলল না।এতেই রিদি থেমে নাই।পিঠে নাক মুখ ঘসছে দেখে তীব্র বিরক্ত হয়ে বলল,
কি সমস্যা!! ঘুমাচ্ছেন না কেন??
বুকে ঘুমাবো!!
তীব্র আবারো কটমট করে বলল,
আমার বুক আপনার বাবার সম্পত্তি না!!
বাবার না হোক স্বামীর তো!! তীব্র আর কথা বলল না।রিদি উপায় না পেয়ে ব্যাথার মতো অ,উ করে। তীব্র সাথে সাথে রিদির দিকে ঘুরতেই রিদি ঝটপট তীব্রর বুকে ঢুকে জরিয়ে ধরে।তীব্র চালাকি বুঝে ছাড়াতে চাইলে রিদি হুমকি স্বরূপ বলে,

একদম ছাড়াতে চেষ্টা করবেন না।তাহলে দাদির রুমে ঘুমাবো আজ থেকে!!
হুমকি হয়তো কাজে দিল তীব্র চুপচাপ থাকলেও রিদিকে জরিয়ে ধরল না।রিদি তার শান্তির জায়গা পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল।রিদি ঘুমাতেই তীব্র দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।মুখটা তুলে পুরো মুখে আদর করে দিল। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে নিল।

বিশিষ্ট ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছে তীব্র।এমন কেস অনেক পাওয়া যায়।তবে অনেক কম ই দুইজনকে বাঁচাতে পারে তারা।রিদির রিপোর্ট দেখে সবাই তাদের মতো সাজেশন দেয়।সবার সাজেশন ফলো করে তীব্র ৯ মাসের চাট তৈরি করেছে রিদির জন্য।বিদেশি ডাক্তার কিছু ব্যায়াম ও সাজেষ্ট করেছে যা রেগুলার করতে হবে রিদিকে। খাবারের দিকে বিশেষ নজর দিতে বলেছে।সাথে মেডিসিন তো আছেই।হারানোর ভয়ে তটস্থ তীব্র।দুটাই তার প্রান।যতোই বলুক বেবি তার চাইনা। কিন্তু রিদির চেয়ে অনেক বেশি চায় সে এই বাচ্চা।একটা সুখী পরিবার চাই সে।তবে সেই পরিবার রিদিকে ছাড়া গঠন সম্ভব না।রিদিকে হারালে তীব্রর বাঁচার সম্ভাবনা নেই।তাহলে এই বাবু!সব ভেবে দম বন্ধ হয়ে আসছে তীব্রর।রিদির পেটে হাত রেখে মনেমনে বলল,
মা কে সাথে নিয়েই এসো এই দুনিয়ায়।মা ছাড়া তুমি আমি অচল হয়ে যাব।বাবা মাকে ভীষণ ভীষণ ভালোবাসে সোনা।বাবা তোমাকেও ভীষণ ভালোবাসে। ভীষণ ভালোবাসে।এমন যদি হতো আমার জীবনের বিনিময়ে তোমাদের বাঁচানো যেত!!!

আপনাতেই আমি পর্ব ৪৫

তীব্রর মতো স্ট্রং একজন মানুষ কিনা ছন্নছাড়া কথা বলছে।”ভয়” ভয় এমন একটা জিনিস যা সহজে কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয় না।সেই ভয় যদি সবচেয়ে প্রিয় মানুষটার প্রতি থাকে তবে পুরো দুনিয়া বেকার মনে হয়। তীব্রর ক্ষেএেও তাই।ভয় কি জিনিস তা টের পাচ্ছে।রাতে ঘুমাতেও ভয় পায় যদি তীব্র ঘুমে থাকার কারণে রিদির কিছু হয়ে যায়!!!

আপনাতেই আমি পর্ব ৪৭