মি মাফিয়া পর্ব ২৫ (২)
সুমাইয়া সাবিহা
জাফর সাহেব এবার খাবার অফ করে দিয়ে উঠে দাড়িয়ে বললেন , আরিয়া কে তোমরা তোমাদের সঙ্গেই নিয়ে যেও আমি পরিক্ষার ব্যাবস্থা করে দিবো।বলে জায়গা ছাড়ার জন্য পা বাড়ালে আফরান বললো ,এমনি এমনি টেবিলে বসিনি ,কিছু কথা সবার জানা দরকার । কেউ না চাইলে না শুনতেই পারে ।
জাফর : কি বলার মতো আরো কিছু আছে তোমার ?
আফরান: খাবার শেষ করে নেই । শুনার হলে ওয়েট করো ।
জাফর: নিজেকে কি ভাবো তুমি আফরান?
আফরান কিছু বললো না চুপচাপ খাবার শেষ করে হাত ধুয়ে রুমাল চাইলো হাত মুছার, একজন সার্ভেন্ট সামনে এগিয়ে এসে রুমাল দিলো।
আফরান আরিয়ার হাতে রুমাল টা দিয়ে বললো মুছে দে ,
আরিয়া কপাল কুচকায় ,
আফরান: কি বললাম শুনিস না?
আরিয়া এইখানে কিছু বলতেও পারছেনা ,,ইচ্ছে তো করছে কামড়িয়ে কামড়িয়ে এই লজ্জাহিন ছেলে টা কে মেরে ফেলতে কিন্তু কি আর করার ,,বাধ্য হয়েই মুছে দিলো
জাফর : কি বলবে হ্যা? এতো নাটক করার কি আছে ।
আফরান: ওয়েট ,
সবার নিরবতার মাঝে হঠাৎ কলিং বেল বাজলো।
একজন সার্ভেন্ট গিয়ে দরজা খুলে দিলো ,,কিন্তু লোকটাকে কিছু না জিজ্ঞেস করেই আসতে দিলো ভেতরে ,তারা চিনে তাকে ,কয়েকবার দেখেছে আফরানের সাথে
আফরান:সব ঠিকঠাক আছে?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তানভীর: জি স্যার ,বলে কিছু প্যাপার সামনে এগিয়ে দিলো ।
আফরান কাগজ গুলো একবার দেখে নিয়ে বললো ,,সাইন করলেই সব কমপ্লিট নাকি আরো কাজ আছে?
তানভীর: আইন অনুযায়ী এগুলো প্রমান থাকবে আর হয়ে যাবে কিন্তু শরীয়ত ভাবে কিছু কাজ আছে ,,কিন্তু এখন এগুলোতেই হয়ে যাবে।
আফরান কপাল কুচকায় ,,হয়তো কিছু একটা বুঝেনি ।
তানভীর আফরান কে দেখেই বুজে নিয়ে বললো ,আসলে স্যার ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী কিছু কাজ থাকে যা সাধারনত কোর্টে থাকেনা । কিন্তু এখন বর্তমানে কোর্টেই হয় সব টা ,এটাই নিয়ম তবে কেউ চাইলে দুই ভাবেই হতে পারে ।
আফরান মনে হয় এখন বুজলো সব টা।
আফরান আরিয়া কে কাগজ গুলো দিয়ে নিচে একটা লাইন ধরিয়ে দিয়ে বললো ,এখানে সাইন করো ।
জাফর : হচ্ছে টা কি এখানে আফরান? বলবে আমাদের?
খলিল সাহেব: এগুলো কিসের কাগজ পত্র ?
আফরান : বলছি , আগে তুমি সাইন করো আরু
আরিয়া কিছু বলতে চায় কিন্তু আফরানের দিকে তাকিয়ে আর প্রশ্ন করতে পারেনা মনে হচ্ছে এই মানুষ টাকে অবিশ্বাসের মতো তো কিছু নেই । চেহারায় শান্ত ভাব ।
আরিয়া এগুলো না পড়েই সাইন করে দেয় যেখান টায় আফরান দেখিয়েছে ।
আরিয়ার সাইন করার পর আফরান সাইন করে ,তানভীর কে জিজ্ঞেস করে আর কিছু?
তানভীর নিচের পেপার গুলোতে অভিভাবক দের সাইন নিলে ভালো হয় আবার না নিলেও চলে ঐখান থেকে ব্যাবস্থা করে দেবে।
আফরান নিচের কাগজ গুলো একবার দেখে নিয়ে আরিয়ার বাবার সামনে দিয়ে বললো ,চাচ্চু এখানে সাইন করো ।
খলিল সাহেব: তখন থেকে তোমার নাটক দেখে যাচ্ছি, কিছু বলছি না মানে এই না যে তোমার কথা শুনতে হবে ।
আফরান: ভালোর জন্যই বললাম এখন আপনার ইচ্ছা সাইন দিলে দিবেন নাহলে না দিবেন আমার জিনিস আমি অলরেডি পেয়ে গেছি ,
খলিল: কিসের কথা বলছো ?
আফরান: কিছুনা , সাইন করলে করেন নাহলে আমি গেলাম ।
আয়শ: আহ চাচ্চু আমি দেখেছি পেপার টা তেমন কিছুনা সাইন টা করে দাও ভালো হবে ।
খলিল সাব একটু কপাল কুচকে বললো আগে বলো কিসের কাগজ এটা?
আয়শ: বললাম তো তেমন কিছু না । বিশ্বাস রাখো আর সাইন করো ।
আয়শ একটা বুজদার ছেলে এটা এতোদিনে সবাই জানে ,খলিল সাহেব ও আর কথা না বাড়িয়ে সাইন করে দিলেন ,
আয়শ এবার নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে বললো, বাবা তোমার সাইন ও লাগবে করে দাও ,
জাফর সাহেব একবার কাগজ টা হাতে নিলেন পড়ার জন্য ,কিন্তু কাগজ টা পুরোটাই সাদা শুধু নিচে দুটা অভিভাবকের সাক্ষর লিখা ।
জাফর: কিসের কাগজ বলতে পারোনা ?
আফরান: সাইন না দিলে কিভাবে বলবো বাবা,বল্লাম তো সাইন দেওয়ার পর বলবো।
জাফর সাহেব নাখোশ হয়ে অনেক টা রাগ নিয়েই গদগদ করে নিজের নাম টা লিখে দিলেন।
আফরান তানভীর কে ইশারা করলে তানভীর সব গুলো পেপার একসাথ করে নিয়ে বেরিয়ে গেলো ।
রহিমা : এসব কি হচ্ছে বলবে আমাদের? আর আমার মেয়েকে দিয়ে কি সাইন করালে? সম্পত্তি লিখে নিবে নাকি ? তোমাদের তো কম কিছু নেই,সাইন গুলো দিয়ে কি দলিল বানাবে? যতসব ন্যাকামু করে যাচ্ছে তখন থেকে।
আফরান স্মীত হেসে বললো ,,এক প্রকার সম্পত্তি বলতে পারেন যেটা একান্তই আমার,,বলে স্বস্থীর দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো।
জাফর : আর কতো নাটক করবে তুমি?
আফরান: আমি গেলাম ,খুব ঘুম পেয়েছে আমার ।
জাফর: যদি না-ই বলো তবে এতোক্ষন নাটক কেনো করলে?
আফরান:নাটক করার জন্যই নাটক বানালাম। বলে আরিয়া কে বললো ,উঠো ,,এবার যাও ।
আরিয়া বলার সাথে সাথে উঠে দাড়িয়ে ভো দৌড় উপরে । আফরান আরিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে স্মীত হাসলো ।
খলিল সাহেব: ভাইজান কাল সকালেই মেয়েকে নিয়ে চলে যাবো
আফরান:এতো অধৈর্য কেনো হচ্ছেন শশুড় সাহেব । আপনার মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার আগে তার হাজবেন্ডের অনুমতি নিতে হবে এটাও জানেন না যে,বিয়ের পর মেয়েরা স্বামীর অধীন হয়ে যায় ।
খলিল সাহেব: হুয়াট? মাথা আছে নাকি গেছে সব টা তোমার?
ভাইজান আপনার এই ছেলে কি কখনো মানুষ হবেনা?
জাফর: খলিল আমাকে তুমি এটা বলছো? তুমি কি সব জানোনা?
খলিল সাহেব আর কিছু বললো না।
জাফর : এসবের মানে কি আফরান ?
আফরান কিছু বলার আগে আয়শ টেবিল ছাড়ে ,এখন যদি জানতে পারে তাহলে আয়শের উপর দিয়ে সব টা যাবে ,ভেবেই আয়শ হাত ধুয়ে উঠে সোজা রুমের দিকে যায়। আয়শ কে যেতে দেখে সামিরাও উঠে যায় এখন কি হবে সেটা অনুমান অবশ্য করতে পারছে সে ।
আফরান: হুম বাবা যা বলার পরে বলো ঘুম পাচ্ছে বায় ,, আর হা ,,এতোক্ষন যে নাটক টা করলাম ,,তার জন্য সরি ,,আমার ছোট বউ টা খুব অধৈর্য রোমান্টিক তাই ভাবলাম বিয়েটা করেই ফেলি ,আমার তো কিছু করার নেই ,,তোমাদের কে যদি বলতাম বিয়ে করবো আরু কে নিশ্চয়ই বিশাল নাটক জুড়ে দিতে , তাই ঠান্ডা মাথায় কাজ টা সেরে ফেললাম ঝামেলা ভালো লাগেনা । এতোক্ষন যে সাইন গুলো দিলে ওসব আমার আর আরিয়ার বিয়ের ওকিল হিসেবে ,আর আরিয়া যেই সাইন টা দিলো ওটা রেজিষ্ট্রি পেপার ছিলো । তোমাদের টা সাদা কাগজ থাকলেও বউয়ের টায় সব লেখা ছিলো ,কিন্তু বউকে দেখলে তো, কতটা বিশ্বাস নিয়ে কিছু না পড়েই সাইন করে দিলো ,আমার লক্ষি বউ টা 😚 ।
জাফর : ফাযলামুর একটা লিমিট থাকা দরকার আফরান, এসবের মানে কি ,,এটা কি কোনো খেলনার বস্তু যে বল্লাম আর হয়ে গেলো?
আফরান: কোন টা কি জানার দরকার নেই ,,যেটা বলার বলে দিয়েছি ,বলে আফরান সোজা উপরে চলে গেলো ।
কারো কিছু বোধগম্য হলো না ,,
খলিল:ভাইজান এসব কি হচ্ছে বলবে?
জাফর: তুমি যেখানে আমিও সেখানে ,মেয়ে তোমার একার না খলিল ,,আমারও মেয়ে হয় আরিয়া ।
রহিমা : ভাই সাব আফরান এসব কি বলে গেলো ? এসব কি সত্যি ? যদি সত্যি হয় তবে আমার মেয়ের ভবিষ্যত টা যে আমার চোখে ভেসে উঠছে, রহিমা বেগমের চোখ ভিজে আসছে
খলিল: দেখো রহিমা এখন এসব ভেবে লাভ নেই ,আমরা নিজেও হতাশার মধ্যে আছি ,,আসলে কি হয়েছে ব্যাপার টা নিয়ে কাল আফরানের সাথে কথা বলে দেখবো। সব ঠিক হয়ে যাবে ,।
আয়শ উপরে রুমে গিয়ে নিজেই হাসছে ,সামিরাও পিছে পিছে এসে আয়শের হাসি দেখে নিজেও হাসছে ব্যাপার টা নিয়ে ।
আয়শ হাসির মাঝেই সামিরা কে বললো ,দেখলে ঐ আফরানের কাজ গুলো ,,
সামিরা: আমিও ভাবছি ভাইয়া এতো সিরীয়াস বিষয় গুলো তেও এমন শান্ত কিভাবে থাকে ।
আয়শ: ও ছোট থেকেই এমন ,কিন্তু আজ বাবা চাচ্চু কে কিভাবে বোকা বানালাম ,ভেবেই হাসি পাচ্ছে ।কিন্তু আমাকে দেখলে যদি আবার রেগে চর বসায় আফরানের মতো ঐ ভয়ে এসে পরেছি ।
সামিরা আয়শের কথায় হু হু করে হেসে উঠলো ।
আয়শ সোফা থেকে উঠে কখন সামিরার পাশে বসেছে সেটা বোধয় ওর খেয়াল নেই । নিজের মতো বলেই যাচ্ছে।
অনেক দিন পর এভাবে হেসে কথা বলতে দেখছে আয়শ কে সামিরা ,ঐ বাড়িতে থাকতে কতো মজা হতো ,কতো কি বলে গল্প করে হাসাতো আর এই আজ ওমন হাসতে দেখছে ,তাও এতো কাছ থেকে।সামিরা এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইলো আয়শের দিকে ।
আয়শ : ওভাবে কি দেখিস ?
আয়শের হঠাৎ এমন প্রশ্নে সামিরা ভয়ে কেপে উঠে।
আয়শ : কি হলো ওমন ভয় পেলি কেন ?
সামিরা: কই না তো ।
আয়শ : ঠিক আছে ,ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে পর ।
সামিরা : ওকে ,
বলে উঠে যেতে নিলে আয়শ বলে উঠে ,শুন
সামিরা: বলুন
মি মাফিয়া পর্ব ২৫
আয়শ : দেখ ,আমরা ঐ বাড়িতে অনেক কথা বলেছি গল্প করেছি ,মজা করেছি , তোকে কখনো আমি অন্য নজরে দেখিনি , পরিষ্থিতির কারনে এখন এমন হয়ে গেলো ,তাই বলে কথা বলা অফ করে দিমু এমন কিন্তু না ,এতোদিন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম ,তাই সব বিরক্ত লাগতো । এখন আমি ওকে।
সামিরা কিছু বললো না ।