টেরিবেল পর্ব ২২
অনুপ্রভা মেহেরিন
এডউইন বেলকনিতে বসে আছে হাতে কফির মগ বড্ড বেশি ঘুম আসছে তবে আজ ঘুমানো যাবে না গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে।আন্দ্রিয়ার জ্ঞান ফিরেনি এডউইন অবশ্য জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টাও করেনি।পাইথন সাপটা আন্দ্রিয়া এর আগে দেখেনি মূলত এডউইন তাকে দেখায়নি তবে আজ সুযোগ মতো আন্দ্রিয়াকে কব্জা করা গেছে।এডউইনের ফোন বেজে উঠল মিটিং সময় হয়ে এসেছে।চুপচাপ ল্যাপটপ হাতে নিয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল।এই কক্ষে আন্দ্রিয়া আছে ঘুম ভেঙে যদি এডউইনকে কথা বলা অবস্থায় দেখে তবে হাজারটা প্রশ্ন ছুড়বে।
ল্যাপটপের স্কিনে দেখা যাচ্ছে হাস্যোজ্জ্বল মুখের অধিকারী একটি ছেলেকে।এক ঝলক দেখলেই যে কোন মেয়ে নির্ঘাত ফিদা হবে।এই হাস্যোজ্জ্বল সুন্দর ছেলেটাই সবচেয়ে অসুন্দর কাজ করে বেড়ায়।ছেলেটার বয়স কত হবে?ছাব্বিশ কি সাতাশ।এডউইন এই ছেলেটার বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা না করে পারে না।ছেলেটির নাম নিয়ন।নিয়ন রাশিয়ায় থাকে নিয়নের সাথে এডউইন ইংরেজিতেই কথা বলতে অভ্যস্ত।অবশ্য এডউইন রাশিয়ান ভাষায় টুকটাক কথা বলতে পারে।
” নিয়ন তোমাকে আজ বেশ সুন্দর লাগছে এই রূপের রহস্য কী?”
নিয়ন চমৎকার হাসল।
” তুমিই বলো আমি কেন খুশি।”
” মার্ডার করেছো?”
” এভাবে বলো না।অন্য ভাবে কি বলা যায় না?”
” ওকে ওকে।জনাব নিয়ন আপনি কি আপনার প্রজেক্ট সাবমিট করেছেন?”
” ইয়েস ইউ আর রাইট।এই কাজ শেষ করে স্নান শেষে তোমার সাথে আড্ডায় বসলাম।তবে জানো আজ দারুন একটা অফার এসেছে।”
” তাই নাকি?”
” ইয়েস।মোটা অংকের রুবল (রাশিয়ান মুদ্রা) পেতে চলেছি।”
” আর আমি মোটা অংকের ডলার।”
” গ্রেট ব্রো।মাস পেরিয়ে যাচ্ছে তুমি আসবে না?”
” আসব।তা তোমার কাজটা কী?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” ওয়েল তা নিয়েই কথা বলতে এসেছি।একসাথে তিন ভাইকে মার্ডার করতে হবে তবে কাজটা যতটা সোজা ভাবছো ততটা না। মার্ডার করলে ঝামেলা শেষ ওদের এত সহজে মারা যাবে না একটু একটু করে শেষ করতে হবে।”
” তিন জনকে কি একসাথেই?”
” হুম।একসাথে বন্দি করতে হবে যা হবে সব একসাথে কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না একদিনে তিনজনকে আমি কীভাবে বন্দি করব?ওরা তিনজন রাশিয়ার তিন শহরে থাকে।”
” এদের মারার কারণ কী?”
” আমি জানি না।কাজ হাতে পেয়েছি ব্যস এইটুকুই তবে এখনো কনফ্রাম করিনি তুমি আমাকে আগে বুদ্ধি দাও আমি কি করব?”
” এই মাসে না করলে নয়?না মানে আজকেই একটা মার্ডার করলে আগে সেসবের বাতাস উলটা দিকে বইতে দাও।”
” তা ঠিক বলেছো তবে আমার মনে হয় তুমি আসো কাজটা আমরা একসাথে করব।যা পাব ফিফটি ফিফটি।আই নো দ্যাট, রেখে রেখে মারায় তুমি ভালোই এক্সপার্ট।”
এডউইন অপ্রস্তুত হাসল।এই মুহূর্তে সে দেশের বাইরে যাওয়ার পরিস্থিতিতে নেই মাথায় রাখতে হবে সে এখন একা নেই তার জীবন জুড়ে আন্দ্রিয়া মেরি বিস্তার লাভ করেছে।
” নিয়ন আমার দেশের বাইরে যাওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব না।”
” এডউইন কতবার বলেছি আমার সাথে ডিল কর একটা ডিলেও কেন রাজি হও না?দেশ ছাড়ো এখানে আসো তোমার জন্য অন্ধকার জগৎ এর রাজ্য অপেক্ষা করছে।তুমি কি রাজা হতে চাও না?”
” নিয়ন বেশি কিছু পেতে চাই না।যা আছে যথেষ্ট।তবে আমি তোমাকে সাহায্য করব তবে সশরীরে নয় বুদ্ধি দিয়ে।”
” তাতেও আমার চলবে।আমি তাহলে ডিলটা ফাইনাল করব?”
” অবশ্যই।আমি আছি তোমার সাথে।”
” এখন রাখছি তবে।
আমার গার্লফ্রেন্ড অপেক্ষা করছে।”
” আর কতকাল লিভ ইনে থাকবে?বিয়েটা করে নাও।”
” তুমি তো তাতেও নেই মাঝে মাঝে আমার সন্দেহ হয় এডউইন তুমি সত্যিই কি সিঙ্গেল?না আছে গালফ্রেন্ড না আছে ওয়াইফ এভাবে কি থাকা যায়?বয়স কমছে না বাড়ছে তুমি এবার একটু নিজেকে নিয়ে ভাবো।”
এডউইন হো হো করে হেসে উঠল।দুই হাত দুদিকে প্রশস্ত করে হাই তুলে বলে,
” আমি সাম্প্রতিক বিয়ে করেছি নিয়ন।”
” হোয়াট দ্যা…তুমি আমাকে একবার জানালেও না।”
“জানাতে ইচ্ছে হয়নি।সে আমার জীবনের শুদ্ধতম স্থানে আছে তাই তাকে সবকিছুতে টানতে চাই না।”
” এভাবে বলবে না।এডউইন আমি তোমাকে ভাইয়ের স্থানে দিয়েছি সেখানে এতটা গুরুত্বপূর্ণ কথা কেন বললে না?”
” এখন তো শুনতে পেলে।”
” হুম।তোমার ওয়াইফের ছবি দাও।”
“কখনো না।তুমি দেখে কি করবে?আমার জিনিস আমাকে দেখতে দাও ফোন রাখছি।”
নিয়ন ফোন রাখল ছেলেটা কি কষ্ট পেয়েছে?তাতে এডউইনের কিছুই যায় আসে না।এডউইন আন্দ্রিয়াকে সবার সামনে আনতে চায় না আন্দ্রিয়া মূল্যবান সম্পদ তাকে অবশ্যই আড়ালে রাখতে হবে।
এডউইনের চোখ ভেঙে আসছে ঘুমে। আন্দ্রিয়া পিটপিট চোখে তাকিয়ে আছে এডউইনকে কাছে না পেয়ে খুব বেশি ঘাবড়ায়নি সে কেননা এডউইনের প্রতি জমেছে অভিমান।আন্দ্রিয়ার চোখ দেখে এডউইন বিস্তার হেসে পাশে শুয়ে পড়ল।
” কেমন লাগছে কুইন?”
” যেমন খুশি তেমন।”
” মানে?”
” আপনি সরুন আমার সামনে থেকে।”
” রেগে আছো কেন?”
“এডউইন আপনি যা করেছেন আমি কখনো ভুলব না।এভাবে আপনি আমাকে ভয় দেখালেন!ওটা সাপ নাকি দৈত্য?এডউইন আপনি নিজে মানুষ তো?”
” সত্যি বলব?আমি আসলে মানুষ না আমি এক দুষ্টু আত্মা।দেখছো না এখানে একা থাকি কোন স্বাভাবিক মানু্ষ কী এখানে একা থাকতে পারবে তাও কি না এই গহীন জঙ্গলে।”
আন্দ্রিয়া কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে উলটো দিক ঘুরে শুয়ে পড়ল।আন্দ্রিয়ার কোন প্রতিক্রিয়া না পেয়ে এডউইন নিজেই ঘাবড়ে গেল,
” কুইন কি হয়েছে?”
” এডউইন আপনি আমাকে ভয় দেখিয়ে কলিজাটা এই টুকুনি করে দিয়েছেন এর বেশি ভয় দেখাবেন না।”
এডউইন আন্দ্রিয়াকে টেনে এনে বুকে জড়াল মেয়েটা চোখে পানি।ইসস একটু বেশি ভয় পেয়েছে।
“কাঁদছো কেন?আর ভয় দেখাব না।এইরে কাঁদে না।”
আন্দ্রিয়া চুপচাপ এডউইনের বুকে নিজেকে গুটিয়ে নিল কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে।এডউইন আন্দ্রিয়ার ভয় দূর করতে কত রকম গল্প শোনায় কত মজার মজার কথা বলে কিন্তু মেয়েটার মন ঘুরছে না।নিজের কাজে নিজেই চরম বিরক্ত হলো এডউইন মেয়েটাকে ভয় দেখানো বোধহয় উচিত হলো না।
” এডউইন?”
” হুম?”
” আমরা কী বাড়ি যাব না?মানে বিয়ের অনেকটা দিন হলো এবার তো আমাদের সবাইকে সবটা জানাতে হবে।”
এডউইনের বুকটা ধক করে উঠল।আন্দ্রিয়া একবার এই প্যালেসের বাইরে গেলে এত সুন্দর সম্পর্কের ইতি ঘটবে। না ইতি ঘটবে বলে বলা যায় না তবে সম্পর্কের এই মেলবন্ধনে আঘাত আসবে।
তার ঠাণ্ডা মেজাজটা মুহূর্তে গরম হয়ে গেল নিজেকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
এডউইন চুপচাপ উঠে দাঁড়াল আন্দ্রিয়ার জন্য পানি নেওয়ার উচিলায় কাঁচের গ্লাসটা চেপে ধরে টেবিলের সাথে প্রহার করল।কাঁচ ভাঙার শব্দে আন্দ্রিয়া ঘুরে তাকাল এডউইনের হাতে রক্ত দেখে চমকে গেল সে।
” এডউইন হাত কাটলো কি করে?”
” জ..জানি না।হঠাৎ হাত থেকে পড়ে গেল।”
আন্দ্রিয়ার তাড়াহুড়ো বেড়ে গেল মেয়েটার মাথায় ধরছে না সে কি করবে।এডউইনের হাতের কাটা স্থানে কয়েকটা কাঁচের টুকরো গেঁথে আছে।আন্দ্রিয়া উপায়ন্তর না পেয়ে এডউইনের হাত নিজের জামা দিয়েই চেপে ধরল তার চোখের কোনে অশ্রু জমেছে।
” ব্যথা করছে তাই না?”
আন্দ্রিয়ার গলা কাঁপছে সব কেমন হাওয়ায় দুলছে মাথাটা ভনভন করছে।এডউইনের এত বড় আঘাত তার কিছুতেই সহ্য হলো না।আন্দ্রিয়ার এতটা ব্যতিব্যস্ত ভাব দেখে এডউইন বেশ খুশি হলো আলতো হাতে ছুঁয়ে দিল আন্দ্রিয়ার গাল।
” তুমি শুধু আমায় নিয়ে ব্যস্ত থাকবে ঠিক আছে?আন্দ্রিয়া মেরি,মাই কুইন কিং কে ছেড়ে যাওয়ার সাহস করো না।”
” মানে?”
আন্দ্রিয়া অবাক কণ্ঠে শুধায় অথচ এডউইন রক্তাক্ত হাতে আন্দ্রিয়ার বাকি গাল ছুঁয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মেশায়।এডউইনের রক্তে রাঙা হয় আন্দ্রিয়া নিজেও সে নিজেকে ছাড়াতে অনেক চেষ্টা করলেও এডউইন কিছুতেই আন্দ্রিয়াকে ছাড়ে না।এডউইনের প্রতিটা স্পর্শে আন্দ্রিয়া অনুভব করে কেমন যেন রাগ মিশে আছে এই ছোঁয়ায়।
মালিহা ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে পাপেটের পানে।সে ভাবতেও পারছে না এই মানুষটা একটা সাইকো!এত ভদ্র লেবাসধারী ব্যক্তি কি না সাইকো!পাপেট চুপচাপ তাকিয়ে আছে মালিহার পানে সে বুঝতে পারছে না মেয়েটা তাকে দেখে অদ্ভুত রকম আচরণ কেন করছে?পাপেট ভারি বিরক্ত হলো আজ সারাদিন সে অবসর মালিহা নামক উটকো ঝামেলাটাকে এক্ষুনি বিদায় করতে হবে।না না পাতালপুরী থেকে বিদায় নয় এই পৃথিবী থেকে বিদায় করতে হবে।যে ব্যক্তি একবার পাপেটকে দেখবে সেই ব্যক্তির মৃত্যু সুনিশ্চিত যেহেতু মালিহা পাপেটকে দেখেছে তাই মালিহার ভাগ্যটাও মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে।
” আপনি স..সাইকো।আমি আপনাকে কত ভালো জানতাম।আর আপনি একটা শয়তান!”
পাপেটের ভ্রু কুচক ফেলল।আশ্চর্য এই মেয়েটা তাকে চেনে?কই সে তো চিনে না।অবশ্য পাপেট চিনবে কী করে?পাপেট তো নিজেকেই ভালোভাবে চেনে না আজ যা করে কাল তা এলোমেলো করে ফেলে।যাই হোক মালিহার পেট থেকে কথা বের করা জরুরি।
” আমি শয়তান?তুমি খুব ভালো?”
” আপনি এমন কেন করছেন?আপনাকে কতটা ভরসা করতাম আর আপনি…দয়া করুন আমায় দয়া করে ছেড়ে দিন।”
” আমি দয়া করতে জানি না।”
” আপনি এমন কথা বলবেন না বিশ্বাস করুন আমাকে ছেড়ে দিন আমি কাউকে কিছু বলব না।”
” বিশ্বাস তাও তোমাকে?তোমার স্বামী তোমাকে বিশ্বাস করে ঠকে গেল আর আমি কে?”
মালিহা চমকে গেল উনি এসব জানেন কী করে?কি অদ্ভুত সমীকরণে আটকে গেল মালিহা।
” তোমাকে এভাবে মারা উচিত হবে না তাই না?একটু একটু করে মারলে শান্তি পাব।”
পাপেট মালিহার হাত চেপে ধরল এবং ডান হাতে তুলে নিল ভারি ওয়াল কাটার।চোখের পলকে মালিহার আঙুলগুলো ওয়ালকাটার দিয়ে কেটে ফেলল পাপেট।মালিহার চিৎকারে ভারি হয়ে উঠল পাতালপুরী তবে এতে কিছু যায় আসে না পাপেটের মেয়েটা যত বেশি কষ্ট পাবে পাপেটের ঠিক ততটাই আনন্দ হবে।
বাম হাতের একটি আঙুলো অবশিষ্ট নেই টপটপ করে ঝরছে রক্ত।
পাপেটের সারা শরীরে মুখে রক্তের ছিটা।
টেরিবেল পর্ব ২১
হাতের মেশিন ফেলে কেমন করে যেন সে হাসল।মালিহা ইতোমধ্যে জ্ঞান হারিয়েছে এত যন্ত্রণা কি সহ্য করা যায়?পাপেট উঠে আড়মোড়া ভেঙে বলে,
” আজ এইটুকুই বাকি কাজ না হয় পরেই করব।এই নোংরাটাকে এত সহজে মারা কি ঠিক হবে?একটু একটু করে যন্ত্রণা দিয়ে মারা যাক।কি, তাই না?”