আপনাতেই আমি পর্ব ৫১
ইশিকা ইসলাম ইশা
ফিরবে কি পাখি মন ভাঙ্গা ঘরে…
ভাংলো যে ঝরে ভালোবাসা….
ফিরবে কি পাখি মন ভাঙ্গা ঘরে…
ভাংলো যে ঝরে ভালোবাসা….
যাই পাখি উড়ে যাই দূরে সরে…
থাকে যে পড়ে শূন্য বাসা……
এ ভাঙা আয়না…
এ মন জোড়া যায় না…..
যে মন ভাঙ্গা আয়না…..
সে মন জোড়া যায় না ……..
তবু ডেকে যায়, প্রেম ডেকে যায়
“এসো ফিরে”
সে চলে যায়,ব্যাথা রেখে যায়
“নষ্ট নীরে”
আজ একা পথে ছায়া চলে সাথে
মিথ্যে করে সব স্বপ্ন আশা
এ ভাঙা আয়না…
এ মন জোড়া যায় না…..
যে মন ভাঙ্গা আয়না…..
সে মন জোড়া যায় না ……..
কিছু অভিমান,মন ভাঙ্গা গান…..
যাই না ভোলা…..
তবু কাদে প্রান,চাই আবসান….
দুঃখ জ্বালা……
যে যার পথে,চলে দিন রাতে….
বুক জুড়ে থাকে,ব্যাথা কুয়াশা…….
এ ভাঙা আয়না…
এ মন জোড়া যায় না…..
যে মন ভাঙ্গা আয়না…..
সে মন জোড়া যায় না
🎶🎶🎶🎶
গানটা যেন হাজারো কথা ব্যাক্ত করছে। রিদির চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জলধারা। রিদির কষ্ট হয়তো গানের সুরে বেশ টের পেয়েছে নীলিমা।নীলিমার চোখেও পানি তবে দুইজনের কাদার কারনটা ভিন্ন।
তোমার গলায় গানটা অন্যরকম শোনালো। ভীষণ সুন্দর গান করো তুমি।আচ্ছা আপু!!তোমারও অনেক কষ্ট তাই না!! নীলিমা কথাটা বলে রিদির দিকে তাকাল।
রিদি নিজেকে সামলে নিয়ে আকাশের দিকে তাকাল,
ভুল করলে ভুলের মাসুল দিতে হয়। আমার কষ্টটা সেই ভুলের মাসুল। (এই ভুলটা আমার জীবন থেকে সব কেড়ে নিয়েছে । নিঃসঙ্গ,নিঃস্ব,একা আজ আমি।সব হারিয়েছি নিজের সন্তান,স্বামী,পরিবার,ভালবাসা সব)
ভুল!!!!
হ্যা ভুল!!কিছু ভুল জীবন বদলে দেয়। বিচ্ছিন্ন করে দেয় সবকিছু।
নীলিমা হুট করেই বলল,
আপু আমাকে কিন্তু ওরা ধর্ষন করেনি।তার আগেই আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে নিয়েছে।
রিদি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
জানি!!
নীলিমা অবাক হয়ে বলল,
আমি তো কাউকে বলি নি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আমি মনে হয় ডক্টর নীল তাই হয়তো তোর বলার অপেক্ষায় ছিলাম না।আমি জানি! নিশ্চয় কোন কারন আছে।না হলে কোন মেয়ে নিজেকে ধর্ষিতা উপাধি এমনি দেয় না।
নীলিমা তাচ্ছিল্য হাসল।এই হাসিতে রয়েছে এক আকাশ পরিমাণ অভিযোগ।রিদি আগ বাড়িয়ে আর কিছু জিজ্ঞাসা করল না।মেয়েটা ২ দিন পর আজই হসপিটাল থেকে এসেছে।গান শুনতে চেয়েছে।রিদি মানা করতে পারে নি।তাই গানটা গেয়েছে।
নীলিমা একটু থেমে বলল,
আপু কাউকে ভালোবাসো!!?
রিদি হাসল নীলিমার কথায়।উওর না দিয়ে বলল,
এই আকাশটা কতো বড়ো নীল??
নীলিমা অবাক হল।
আকাশের বিশালতা মাপা যায়!!!
রিদি থেমে বলল,
যাই না!!তাই না!!!
উঁহু!!!!
তাকে আমি কতো ভালোবাসি তা হয়তো মাপা যাবে না।
তুমিও কাউকে ভালোবেসে ঠকেছো!!
না!!!!!
সে তোমাকে ঠকায় নি!!
না!!
নীলিমার আরো আগ্রহ বাড়লো।তাহলে তুমি একা কেন??
রিদি তাকালো নীলিমার দিকে। মেয়েটাকে এতো দিনে আজ একটু আগ্রহী দেখছে।নয়তো সবসময় উদাসীন থাকে।রিদি হাসল।
একা কি থাকা যায় না!!
নীলিমা সঠিক উত্তর না পেয়ে প্রশ্ন করল,
সে কি তোমাকে ভালোবাসে না!!
মন বলে বাসে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।সে সুখে আছে তার নতুন পরিবার নিয়ে।
এটাতো ঠকানোই হলো!!
উঁহু!!!
তুমি তো বললে সে নতুন পরিবার নিয়ে সুখে আছে!
সে আমার উপর বিরক্ত!!বলতে গেলে আমাকে ঘৃনা করে।করাও উঠিত!!আমি এমনি একটা ভুল করেছি যে যার মাসুল এই জীবনে দেওয়া সম্ভব না।এই ভুলের মাসুল হিসেবে সে নতুন জীবন শুরু করতে চেয়েছে অন্যকারো সাথে। আমাকেও রাখতে চেয়েছে।সতীন এর সংসার করতে।বলেই তাচ্ছিল্য হাসল রিদি,কিন্তু আমি তাকে মুক্ত করে এসেছি। ডিভোর্স পেপার সাইন করে এসেছি।যদিও সাইন করা না করা সমান কথা।সে তো আগেই তার জীবনে অন্যকাউকে এনেছে।তাদের হয়তো এখন সুখী পরিবার!! নীলিমা বিষ্ময়কর চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে।রিদি আবারো বলে,
“তার ভালোবাসা আমার নরকের মতো জীবন সুন্দর করেছে। আবার তার ঘৃনা আমার জীবন নরকের চেয়েও ভয়ঙ্কর করেছে।”
জানিস!!যাকে তুই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসিস!!যে তোর পুরো দুনিয়া!সে যদি তোকে ঘৃনা করে তখন কেমন লাগে? রিদি একটু থেমে আবারো ধীর গলায় বলে,
নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ভীষণ কষ্ট!!
রিদি হুট করে চিৎকার করে উঠল ,তাকে আমি অনেক ভালোবাসি রে!তাকে ছাড়া থাকতে ভীষণ কষ্ট হয়।জানিস মাঝে মাঝে মনে হয় দমটা এখুনি আটকে যাবে।কিন্তু আমি দোষী!আমি খুনি!!আমার আমার সন্তানের খুনি!!আমি খুন করেছি আমার সন্তান কে!!আমি খুনি!!আমি শেষ করে দিয়েছি সব!সব দোষ আমার!! সব সব দোষ! বিশ্বাস কর!! অত্বহত্যা মহাপাপ না হলে সেটা এই মূহুর্তে আমি করতাম। কিন্তু এতে আমি আমার সন্তানের দেখা পাব না।ওপারে আমার সন্তান আর আমি একসাথে থাকবো! ওকে কোলে নিব!আদর করব!!শুধু এই আশা নিয়েই বেঁচে আছি পৃথিবীতে। জানিস আমি দোয়া করি আমার মতো খুনি মা যেন এই পৃথিবীতে না হয়।আমি খুনি!!ওনি বলেছে আমি খুনি!!আমি খুন করেছি!মেরে ফেলেছি……..
আপনাতেই আমি পর্ব ৫০
নীলিমা হতভম্ব হয়ে আছে।রিদিকে এমন বার বার খুনি বলতে দেখে আরো অবাক হল তার উপর” মা”কথাটাই আরো অবাক হল। এতক্ষণ ধরে নীলিমা রিদিকে দেখে শকড ছিল কিন্তু এখন মনে হচ্ছে রিদি অস্বাভাবিক আচরণ করছে। নিঃশ্বাস জোরে জোরে নিচ্ছে।চোখ মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। নীলিমা এতোটা শকড যে সে কি করবে বুঝছে না। কাঁপা কাঁপা হাত রিদির কাধে রেখে কিছু বলতেই রিদি ঢলে পড়ে নীলিমার কোলে। নীলিমা রিদিকে এভাবে পড়ে যেতে দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠে,
রিদিতা আপপপপপু!!!!!