আপনাতেই আমি পর্ব ৫২

আপনাতেই আমি পর্ব ৫২
ইশিকা ইসলাম ইশা

ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ তাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।রিদি চেষ্টা করেও ব্যর্থ হল চোখ খুলতে।তবে নাকে এসে বারি খেল পরিচিত সুবাস।ভেতরটা ছটফট করে উঠলো।দূবল হাত দিয়ে মানুষটাকে ধরার চেষ্টা করেও পারল না।বুঝতে পারলো সুবাস ধীরে ধীরে হাওয়াই মিলিয়ে যাচ্ছে।
ঝট করেই চোখ খুলল রিদি।দূবল গলায় মুখ থেকে বের হল প্রিয় মানুষটার নাম। তীব্র……
কয়েক মিনিট পর রুমে ঢুকে রায়ান।রিদিকে বার বার তীব্র বলতে দেখে এগিয়ে এলো বোনের কাছে।
রিদু রিল্যাক্স!!!

কেউ নেই এখানে।শান্ত হ।এই যে আমি ভাইয়া আছি।
ভাইয়া তীব্র এসেছিল তাই না!!!
রায়ান অসহায় চোখে তাকাল বোনের দিকে।
আসে নি রিদু….
মিথ্যে বলছ তুমি! এসেছিল!আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিল!
রিদি তীব্র আসেনি!!তোর ভুল হচ্ছে
এসেছিল!!আমি জানি!!তুমি মিথ্যা বলছো!কিছুটা চেঁচিয়ে!!
রায়ান ও একটু জোর গলায় বলল,
তোর মনে হয় আমি মিথ্যে কথা বলব!!ও আসে নি।আসবেও না কোনদিন!তুই দেখিস নি তোর চোখের সামনে সে অন্যকারো!তোকে কত বোঝাবো রিদি!!
চেঁচামেচি শুনে রুমে ঢুকে নীলিমা। ঢুকে দেখে রিদি কাঁদছে আর কি যেন বলছে!রায়ান রিদির বাহু ধরে কথাগুলো বলছিল।নীলিমা শুনতে পেয়েছে।তবে রায়ানের চোখেও পানি টলমল করছে।
এবার রিদি হুট করেই শান্ত হয়ে যায়। ঠান্ডা কন্ঠে বলে,
আসেনি তাই না!!
রায়ান বোনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে।বোনকে কষ্টে দেখে তারও কষ্ট হচ্ছে।ছোট থেকে কষ্ট পেয়ে হুট করেই সুখের সন্ধান পেলেও আবারো সেই কষ্ট। আল্লাহ আর কতো কষ্ট হচ্ছে দিবে!!
ধীরে ধীরে রিদি ঢলে পড়ে রায়ানের বুকে।বোনকে জরিয়ে চিৎকার করেই ডাক্তারকে ডাকে রায়ান।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ডক্টর মনসুর আলী রিদিকে পর্যবেক্ষণ করে বাইরে বের হতেই রায়ান প্রশ্ন করে,
ডক্টর রিদি !আমার বোন কেমন আছে??
ভয়ের কোন কারন নেই রায়ান!সি ইজ ওকে নাও!তবে এমন বার বার হতে থাকলে ব্রেনে ইফেক্ট পরবে।এমনিতেও মানসিক ভাবে অসুস্থ মেয়েটা।
উপায় কি ডক্টর!কমবেশি আপনি সবটা জানেন!
ওকে কাজের চাপে রাখতে হবে!মোট কথা মাইন্ড ড্রাইভাট করতে হবে।কয়েকমাস আগের ঘটনাগুলো ওর মন থেকে বের করার চেষ্টা করতে হবে। তবে রিদিতার জন্য দরকার তীব্রকে।সে ছাড়া রিদি ঠিক হবে না রায়ান।রিদি বেঁচে থাকবে তবে সেটা জীবন্ত লাশ ছাড়া কিছু না। যতটুকু বুঝেছি মেয়েটা অতিরিক্ত ভালোবাসে।
আপনি জানেন সেটা সম্ভব না।(অতিরিক্ত তো সেও ভালোবাসত তবে এমন কেন করল কথাটা মনে মনে ভেবে তাচ্ছিল্য হাসল সন্তান চাই না অথচ সন্তান এর জন্য সে একাই দায়ী)
মনসুর আলী রায়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে,
কিছু জিনিস আমাদের হাতের বাইরে থাকে রায়ান!উপর আলার উপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো হবে।তবে আমি আশা করছি জলদিই সব ঠিক হয়ে যাবে।

দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেট খাচ্ছে রায়ান। আকাশে আজ কোন আলো নেই। চাঁদ যেন আজ মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে। রায়ান তাচ্ছিল্য হাসল। অন্ধকার হয়ে থাকা চারপাশ একবার দেখে রিদির রুমে আসল। ঘুমিয়ে আছে রিদি।পাশের বসে আছে সেই মেয়েটা। হসপিটাল থেকে বাসায় আনা পর্যন্ত রিদিকে একা ছাড়েনি এখানেই আছে।যদিও ওর পরিবারের সবাই অনেক হেল্প করেছে।মেয়েটা তাকে দেখে ভয়ে হাইপার হয়ে গেছিল সেদিন আজ তবে এমন শান্ত হয়ে বসে আছে যে!! রায়ান ভাবনা সাইডে রেখে বলল,
মিস আপনি বাসায় যান!আমি রিদির কাছে আছি এখন! এমনিতেই কাল রাত থেকে সারাক্ষণ আছেন ওর সাথে।
রায়ানের কথায় চমকে উঠে পিছনে চাইলো নীলিমা।
রায়ান কে দেখে মাথা নিচু করে বলল,
আমি আপুর কাছে থাকবো!!
সারাদিন তো ছিলেন!এখন বাসায় ফিরে যান।অনেক রাত হয়েছে!!
সমস্যা নাই আমি থাকবো!!
রায়ান ভূ কুঁচকে বলল,

আপনার ভয় করবে না।আপনি তো আবার পুরুষদের ভয় পান!আমিও তো পুরুষ!!
চট করে তাকালো নীলিমা রায়ানের দিকে। পেশিবহুল পিটানো শরীরে কালো একটা শার্ট আর ট্রাউজার পড়া।ফর্সা হওয়াই কালো রং বেশ মানিয়েছে। সুদর্শন পুরুষ।এক দেখায় মন দেবার মতোই।রিদির ভাই হলেও চেহেরার মিল নেই।না চেহেরায় না গায়ের রং।রিদি তার মতো শ্যামবর্ণ হলেও অদ্ভুত এক সৌন্দর্য আছে তার মাঝে।কি মায়া মায়া চেহারা।যাকে এক কথায় মায়াবী বল যায়। কিন্তু রায়ানের চেহেরা ফর্সা সুন্দর।
রায়ান নীলিমার চাহনি দেখে বলল,
এভাবে কি দেখছেন??এভাবে দেখবেন না!আমি জানি আমি সুন্দর!!
রায়ানের কথায় নীলিমা হচকচিয়ে তাকাল তার দিকে। পরক্ষনেই চোখ সরিয়ে বলল,
রিদি আপুর ভাই কখনো খারাপ হবে না।তাই ভয় করছে না।
রায়ান অবাক হওয়ার ভান করে বলল,

বিশ্বাস করছেন তাহলে!!!
হুম!!
রায়ান মৃদু হাসল,ঔ
আপনাকে আর আপনার পরিবার কে ধন্যবাদ মিস???
নীলিমা সুলতানা নীর।
নীর!ইজ ইট ওকে!!
হুম।

ওকে আপনি গেট লক করে ঘুমিয়ে পড়ুন।আমি পাশের রুমে আছি। দরকার হলে ডেকেন।না হয় রিদির ফোন থেকে কল দিয়েন।আর হ্যাঁ ভয় পাওয়ার কিছু নেই।কথাটা বলেই রায়ান নিজের রুমে চলে আসে। ল্যাপটপ অন করে সোফায় গা এলিয়ে দিল। সারাদিনে কাজের কোন খবর নেয়নি রায়ান।রাদিফ ভাইয়ার মিসিং এর পর সব দায়িত্ব তার কাধেই এসে পড়ে।কতোই বা বয়স। পড়াশুনা আর ব্যবসা দুটোই সামলাতে হয়েছে তাকে।যদিও ছোট কাকা ছিল তবুও তার উপর দায়িত্ব বেশি ছিল। দায়িত্বের চাপে দুদিন আসা হয়নি তার এই গ্রামে রিদির কাছে।তাই রাতেই রওনা দিয়েছিল।তবে এসেই যে এমন কিছু দেখবে আশা করে নি। রিদিকে দোতলায় না পেয়ে চিন্তিত হয়ে ছাদে আসতেই শুনতে পায় রিদির নিজেকে খুনি বলে কান্না করার দৃশ্য।তবে এগুতে এগুতেই মেয়েটার কোলে পড়ে যেতেই ধক করে উঠেছিল বুকের ভেতর।ছুটে বোন কে কোলে তুলে হসপিটালে নিয়ে আসে।এরপর সারাদিন হসপিটালে থেকে এখন একটু সময় পেয়েছে।কাল রাত থেকে আরাম হয়নি।তাই শরীর ম্যাচ ম্যাম করছে।এক কাপ কফি হলে মন্দ হয় না।তাই উঠে রুমের বাইরে আসতেই হুট করে অন্ধকারে কারো সাথে ধাক্কা লেগে যায়।

ভুত ভুত!!!!!!
এই মেয়ে চুপ!!!বলেই লাইট অন করে।
আপনি!!!!
আমাকে তোমার কোন দিক থেকে ভুত মনে হয়!!
না মানে আপনি এতো সাদা তাই!!!
কি???(রায়ান হতবাক হয়ে গেল এই মেয়ে বলে কি?)তো কি আপনার মতো কালাচাঁদ হতে বলছেন??
খবরদার আমাকে কালা বলবেন না!!ধলা মোরগ??
কিহহহ!!!
আচ্ছা বাদ দাও।তুমি বাইরে কেন??
পানি নিতে এসেছিলাম।
ঠিক আছে যাও।
আপনি এখানে??

কফি করতে এসেছিলাম।রিদি বানিয়ে দেয়। কিন্তু এখন নিজে বানাতে যাচ্ছি।
নীর কাচুমাচু করে বলল,
কিছু মনে না করলে আমি বানিয়ে দেব!!
রায়ান ভু কুঁচকে বলল,
তুমি না এই আমাকে ধলা মোরগ বললে!!
আপনিও তো আমাকে কালাচাঁদ বলেছেন??
রায়ান কথা বাড়ালো না।করে দিতে চাইছে যখন দিক।ঠিক আছে দাও!!
রায়ান সোফায় বসার ৮মিনিট পর কফি হাতে হাজির হল নীলিমা। রায়ান কফি মুখে তুলে বলল,
ধন্যবাদ!!যাও ঘুমাও!!

আপনাতেই আমি পর্ব ৫১

কেমন হয়েছে??
চলে আরকি!!
কিহ!!
না মানে ভালো হয়েছে।যাও গিয়ে লক করে ঘুমাও। আবারো বলছি দরকার হলে ডাক দিও।
নীরের হুট করেই রাগ হলো।লোকটা কেন তার তারিফ করলো না।কতোদিন পর সে কিছু রান্না করল। পরক্ষনেই নিজের ভাবনার ওপর নিজেই অবাক হল।সে নিজেকেই প্রশ্ন করল,
এসব আমি কি ভাবছি???

আপনাতেই আমি পর্ব ৫৩