আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৪৬
ইশিকা ইসলাম ইশা
গাছপালায় ঘেরা জঙ্গলে চারদিকে অন্ধকার হলেও চাঁদের আলোয় পথ দেখা যাচ্ছে।সেই পথ ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে তীর,রিদিতাসহ বাকি পাঁচজন তীব্রর বিশ্বস্ত গার্ড। দুইজন গার্ড সামনে খুব সাবধানতা সহিত ধীরে পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। দুইজন পিছনে হাঁটছে তবে সবাই খুব সাবধানে শব্দহীন হাটলেও রিদির হাঁটায় কিছুটা শব্দ শোনা যাচ্ছে। যেহেতু প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে তারা তাই লাবিব রিদিতার উদ্দেশ্য বলল,
পিচ্চি ভাবি! হাঁটার সময় খুব সাবধানে পা ফেলবেন।
রিদিতা যথেষ্ট চেষ্টা করছে শব্দ বিহীন হাঁটার। কিন্তু তীর বা বাকিদের মতো হচ্ছে না।কারন এরা সবাই আগে থেকেই ট্রেনড।তাদের এই প্রশিক্ষণ আগে থেকেই করা আছে।আবার সবার হতেই একটা করে গান।রিদি প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ালেও পরিস্থিতি মানতে হয়েছে।জীবনে যা দেখে নি আজ তা দেখছে।নিজের জীবনকে তার ট্রাজেডিতে ভরপুর জীবন লাগছে।
ভাঙ্গা বাড়ির কাছাকাছি আসতেই তীর সবাইকে ইশারায় সাবধান হতে বলল।তাদের থেকে কিছুটা দূরে দেখা গেল দুইজন লোককে।হয়তো পাহাড়া দিচ্ছে। তীর ইশারা করতেই একজন গার্ড হাতে থাকা কিছু ফেলে সাউন্ড করতেই লোকদুটো গান তাক করল এদিক ওদিক।দুজন দুদিকে যেতেই তীর ইশারায় রিদিকে এখানে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে অন্ধকারে মিশে গেল।রিদি ভয়ে মনে মনে দোয়া পড়ছে। হঠাৎ কিছুর শব্দে সামনে তাকাতেই চমকে উঠলো।তীর চাকু দিয়ে গলার রগ কেটে ফেলেছে লোকটার।রিদি অবাক হয়ে মুখে হাত চেপে ধরলো।অপর লোকটাকেও গার্ড একই ভাবে মেরে ফেলেছে।রিদির হাত পা জমে গেল। রক্ত দেখার ভয়ে দুহাতে চোখ মুখ ঢেকে রেখেছে।একটু পরেই তীরের ফিসফিস আওয়াজ কানে এলো,
রিল্যাক্স ভাবি!! প্লিজ ঙ্গান ট্যান হারিয়েন না সামনে অনেক রিস্ক আছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রিদি তীরের কথায় নিজেকে কিছুটা সামলে নিল। আবারো তারা হাটতে শুরু করল।পুরানো ভাঙ্গা বাড়ির কাছে আসতেই মাঠের মতো কিছুটা জায়গা দেখা গেল। সেখানে মৃদু আলো জ্বলছে।ওরা আরো কিছুটা এগুতেই রিদি চমকে উঠে চিৎকার করার আগেই তীর রিদির মুখ চেপে ধরল। করুন স্বরে বলল,
প্লিজ ভাবি! সাউন্ড করবেন না। আমার উপর ভরসা করূন।তীব্রর কিছু হবে না।
রিদির চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।তীর রিদির মুখ থেকে হাত সরিয়ে হাতের ইশারা করতেই পাঁচজন খুব সাবধানে ছড়িয়ে গেল।তীর অসহায় দৃষ্টিতে একবার তীব্র তো একবার রিদিকে দেখল।তীব্রকে হাত পা বেঁধে চেয়ারে বসিয়ে রেখেছে। কপাল চুইয়ে রক্ত পড়ছে।মাথাটা ঝুকে আছে যার ফলে স্লিকি চুলগুলো দুলছে।তবে তীব্র ঙ্গানহীন না।তার মস্তিষ্ক সচল। তীব্র সেভাবে থেকেই কথা বলল,
ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দেখ!তোর কলিজা ওজন করতে বেশি সময় নিব না আই প্রমেস!!
সামনে কালো পোশাকে বসা লোকটা হেসে বলল,
তুই আমাকে আবাক করছিস তীব্র!যাস্ট অবাক আমি!বিশ্বাস কর ১০ বছরে এই প্রথম তোকে দেখে অবাক আমি।
তীব্র লোকটাকে আরো অবাক করে দিয়ে বলল,
আমিও নিজেকে চিনতে পারি না।তুই আমাকে ধরে নিয়ে আসার সাহস করেছিস অথচ দেখ আমি তোর সাহসের প্রতিদান দিচ্ছি না।
লোকটা কুটিল হেসে বলল,
দাঁড়ানোর শক্তি নেই তবুও তোর ত্যারামি…..কঠিন ব্রো!!আমি চাইলে তোকে এখুনি উপরে টপকে দিতে পারি।
তীব্র মাথাটা তুলে শরীর টা চেয়ারে এলিয়ে দিয়ে বলল,
সেই সাহস তোর নেই……সাহস থাকলে এতোক্ষণ সময় নিতি না।বেজন্মা কুকুরের সাহস থাকে না।
লোকটা চট করে রেগে তীব্রর দিকে গান তাক করে বলে,
প্রমাণ চাই তোর তাই না।আজ তোকে মেরেই প্রমাণ করব।বলে যেই না গানের ট্রিগারে চাপ দিবে হুট করে একটা গুলি এসে লোকটার হাতে লাগতেই চারদিকে হইচই পড়ে গেল।তীর সহ গার্ডরাও এবার গুলি চালাতে শুরু করেছে।তীর দ্রুত এসে তীব্রর হাতের বাধন খুলতেই তীব্র বলে,
আমার বৌ কোথায়??ওকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিস??
তীর এতকিছুর মধ্যেও অবাক হয়ে বলল,
তুই আর তোর বৌ ব্রো…..!আছে এখানেই…..
তীব্র চমকে উঠে কিছু বলার আগেই ঝরের গতিতে এসে কেউ তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।তীব্র নির্বাক হয়ে বুকের সাথে লেপ্টে থাকা রিদিকে একপলক দেখে সাথে সাথে তীরের পকেট থেকে গান নিয়ে শুট করল তীরের পেছনে।
এই বৌ!আপনি এখানে কেন?
রিদি তীব্রর কথায় আরো শক্ত করে ধরল তাকে।তীব্র তীরের দিকে তাকিয়ে বলল,
ওরে বাসায় রেখে আসিস নি কেন??
তীর ভ্যাবলার মতো হেসে বলল,
তোর বৌ তোর থেকেও জেদি!!বলেই আবারো শুট করতে করতেই বলল।ভাবি কিছুতেই তোকে ছাড়া যেতে রাজি হয়নি।
ইতিমধ্যে মির বাইক নিয়ে পৌছে গেছে।তীব্রর বুকে রিদিকে দেখে কিছুটা শান্তি সে নিজে পেল যেন। কিন্তু এতো রিস্ক নিয়ে রিদিকে এখানে রাখা ঠিক নয়।মির কিছু বলার আগেই মুখোমুখি হলো তীব্রর রাগী চাহনীর। ক্ষিপ্ত স্বরে বলল,
ওর কিছু হলে তোদের দুটোকে পুতে রেখে যাব সালা….
তীর ক্যাবলা হেসে বলল,
ওই সুযোগ তুই এমনিতেও দিবি না।বলতে বলতেই সুট করল অন্যদিকে। এদিকে গুলাগোলির শব্দে রিদি ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে উঠছে।তীব্র, লাবিব,মির,তীর সহ গার্ডরা কেউ থেমে নেই। মুখে কথা বললেও হাত ঠিক চলছে।
তীব্র একহাতে রিদিকে বুকে চেপে কিছুটা সরে গাছের আড়ালে চলে আসে।রিদিকে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতেই রিদি তীব্রর গলা জড়িয়ে ধরতেই তীব্র কিছুটা রাগী গলায় বলল,
এমনে গলা জরিয়ে ধরেছিস কেন?ছাড়!!
উহু !!
গুন্ডা কে আমি কিভাবে মারবো রে!!
রিদি কাঁদতে কাঁদতে জানি না।আপনার গুলি লাগলে আমারো লাগুক।আমি থাকতে পারব না আপনি ছাড়া।
এহহ!!থাকতে পারব না!দুদিনেই এতো অধৈর্য হলে চলবে বৌ!রিদি উওর করল না। টেনে ধরল তীব্র কে।
তীব্র রিদিকে টেনে বুক থেকে সরিয়ে দুহাতে ছোট্ট মুখখানা ধরে বলল,
কিছু হবে না বৌ। কাঁদতে নেই তো জান!
তীব্র কাঁদতে মানা করলেও রিদি এবার হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
শুনছেন!! আমি আপনাকে ভালোবাসি অপ্রিয় রাক্ষস মশাই।
তীব্র খানিকটা গম্ভীর মুখে বলল,
প্রিয় নাকি অপ্রিয়??
রিদি তীব্রর দিকে তাকিয়ে ছলছল নয়নে বলল,
আপনি খুব খারাপ বাজে তাই আপনি অপ্রিয় রাক্ষস মশাই!
তীব্র রিদির কথায় মুচকি হাসল শান্তির শ্বাস নিয়ে রিদির কপালে চুমু এঁকে বলল,
কাঁদতে বারন করলাম না।চুপ করেন।আমি আছি তো।
রিদির কান্না কিছুটা কমে আসতেই তীব্র বলল,
আপনি এখানে থাকুন! আর খবরদার!!এখানে থেকে নড়বি তো!!
বলেই তীব্র গান হাতে গুলি ছুড়তে লাগল।রিদি গুলির এতো শব্দে কান চেপে ধরল।ভয়ে বুক কাঁপছে।রিদির কাছে মনে হচ্ছে সে মুভির শুটিং দেখছে। কিন্তু না এসব তো বাস্তব।রিদি আর পারল না তীব্র কে দেখে দৌড় দিল। আবারো একদম তীব্রর বুকে মিশে গলা জড়িয়ে ধরলো। তীব্র অবাক হয়ে ঝট করেই নিজেকে রিদি সমেত নিয়ে আবারো আড়ালে চলে গেল।বৌয়ের প্রতি এমনিতেই সে দূর্বল আর এই বৌ তার কলিজা বের করে আনছে।বাই চান্স যদি গুলি লেগে যাই।সে বুঝে না এই পিচ্চি একটা বৌয়ের প্রতি সে কিভাবে এতো দূর্বল। তীব্র এবার রাগ মিশ্রিত গলায় বলল,
এমনে বারবার সাপের মতো পেচাচ্ছিস কেন আমার শরীরে!বাল! ছাড়!
উহু……
এদের কে না মারলে এরা আমাকে সাবান পানি ছাড়া ধুবে রে বোন!!
উহু …….
এটা উহু করার সময় না বৌ।পুরোটাই রিস্ক জোন….
আমি কিছু জানি না।আমি আপনার বুকে থাকবো। আমার ভয় করছে!
এই তুই না বললি আমার সাথে মরতেও রাজি আছিস তবে মরার ভয় পাচ্ছিস কেন??
রিদি মুখটা তুলে তীব্রর দিকে তাকিয়ে বলল,
আপনার বুকে আমার মৃত্যু হলে তা আমি সাদরে গ্রহণ করতে পারব। কিন্তু আপনি বিহীন বাঁচা তো দূরে থাক আপনি বিহীন মরতেও প্রস্তুত না আমি।
তীব্র রিদির কথায় অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।এসব ফিল্মি কথাবার্তা তার কোন কালেই পছন্দ ছিল না অথচ রিদির মুখে এই কথাটাই যেন আজ তার হৃদয় স্পর্শ করল।তবে বৌয়ের সাথে সাথে নিজেও এখন পাগলামি করলে বিপদে পড়তে হবে তাই কিছুটা বিরক্ত সুরে বলল,
এখানে থেকে বের হই বৌ! দরকার হলে তোকে সারাক্ষণ কোলে বসিয়ে রাখব। সারাদিন তোকে কোলে নিয়ে ঘুরব।
উহু…….
তীব্র হতাশ হল।বৌ যেন তার সঙ্গ পেয়ে জেদি হয়ে উঠেছে। তীব্র রিদিকে টেনে বুকে ভালোভাবে চেপে ধরল।হাতের ইশারা করতেই সবাই ভাগ হয়ে দুইদিকে ছুটল কোথাও। তাদের পেছনে ছুটল কিছু সংখ্যক লোক। তীব্র এই সুযোগে রিদিকে নিয়ে বসল বাইকে।বুকে জরিয়েই বাইকের সামনে বসিয়ে দিল। রক্তে মাখা ঢোলা টিশার্ট এর ভিতরে রিদিকে ঢুকিয়ে বলল,
শক্ত করে ধর!
রিদি হচকচিয়ে শক্ত করে ধরতেই তীব্র বলল,
ওরনা খোল!!
কি!!
বালের কি!!দে ওরনা দে!!
না…..অনেক মানুষ…
হ্যাঁ সেই!!এই গোলাগুলির মধ্যে মানুষ তো তোকেই দেখবে তাছাড়া তোর মনে হয় আমি তোকে কাঊকে দেখার সুযোগ দিব।দেখ বৌ তুই তো আমার সাথেই লেপ্টে আছিস!! এবার ওরনা ছাড়।
তীব্র রিদির ওরনা দিয়ে রিদিকে নিজের সাথে বেধে নিল।এক হাতে বাইক চালু করে অন্য হাত রিদির পিছনে রেখে রিদিকে আরো একটু মিশিয়ে নিয়ে পা দুটো কোমরে জড়িয়ে নিতে বলেই বাইক চালু করল । আঁকাবাঁকা জঙ্গলের সরু রাস্তা দিয়ে গাড়ি ছুটিয়ে যেতে যেতে পেছন থেকে তীব্র কে ফলো করে দুটো গাড়ি ধেয়ে আসতে শুরু করল। তীব্র বাইক উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে যেন।তবে অপরপক্ষ ও থেমে নেই।স্পিড বাড়ানোর সাথে সাথে গুলিও ছুড়ছে অনবরত। কিন্তু একটাও নিশানামতো লাগছে না।কারন সরু রাস্তা পেরিয়ে এখন মেইন রাস্তায় উঠেছে যার ফলে এঁকে বেঁকে বাইক চলছে। তীব্র বাইরের আইনায় দেখে এহাতে রিদিকে ধরে অন্যহাতে গান তাক করল পেছনে। টায়ার বরাবর একটা গুলি মারতেই গাড়ি উল্টে পড়ল।উল্টে পড়ার মিনিটের মধ্যেই বিষ্ফোরণ ঘটল চারদিকে। তীব্র গতি বাড়িয়ে ছুটল।বিকট শব্দে রিদি তীব্রর সাথে আরো সেটে যেতেই তীব্র বলল,
বেবি!
রিদি সেভাবে থেকেই বলল,
হু….
ইজ দিস পজিশন ইজ গুড?এক্চুলি আই লাইক দিস পজিশন!
রিদি তীব্রর কথা না বুঝে মুখটা তুলে বের করল তীব্রর গলা দিয়ে।পুরো মুখে রক্ত লেগে আছে। তীব্র আবারো কিছু বলার আগেই রিদি অবুঝের মতো বলল,
এখানে আপনি পজিশন…..কথাটা বলেই পরক্ষনেই সবটা বুঝে আনমনেই মুখ হা হয়ে গেল। মানে কোন লেভেলে এসেছে!!এসব মানা যায়।জীবনের গ্যারান্টি নেই আসছে সব পজিশন নিয়ে।রিদি খানিকটা রেগে তীব্রর গলায় দাঁত বসিয়ে দিল। তীব্র আইনায় পেছনের গতি দেখে বলল,
আপনারই সুযোগ জান!কামড়ান!আমি সুযোগ পেলে কিন্তু ছাড়াছাড়ি নেই!
অসভ্য……
তীব্র রিদির কথায় মুচকি হেসে বলল,
বৌ!!!!দ্বিতীয় বাসর না সেরে মরতে হবে?ও বৌ!! চলুন আগে বাসর সেরে নিই!!বাসর না করে মরলে আল্লাহ পাপ দিবে পাপ!
রিদি কি বলবে বুঝতে পারল না। মানুষ মৃত্যু পথেও এমন ভাবনা রাখতে পারে এটা আদো মানুষ!একটার পর একটা গুলি আসছে কোন একটা লাগলে সব শেষ আর এই লোক!! মানে……রিদি আর কিছু বলল না।বলার জন্য না এই লোক আসলেও অসভ্য। তীব্র আবারো কিছু বলার আগেই রিদি বলল,
আল্লাহর ওয়াস্তে মুখটা বন্ধ রাখুন!আপনি তো দেখছি শুধু পাষাণ না অসভ্যর সর্দার!
তীব্র কুটিল হাসল।বৌ কে এভাবে বিভ্রান্ত করে মজা লাগছে যেন।আরো একটু বিভ্রান্ত করতে বলল,
বেবি আই ওয়ানা ডিপ লিপ কিস!মে আই??
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৪৫
রিদি কিংকতব্যবিমূঢ!মে আই??পারমিশন নেওয়ার ধৈর্য হয় তার।এই পরিস্থিতিতে এমন কিছু করবে এটা কল্পনাও করি নি সে।
তীব্র রিদির ঠোঁট ছেড়ে একবার সামনে তাকিয়ে বলল,
“””প্লিজ এট্যাক ফ্যটাক করিস না বৌ।কজ আই ওয়ান্ট ইট এগেইন!!”””