মি মাফিয়া পর্ব ৩৯

মি মাফিয়া পর্ব ৩৯
সুমাইয়া সাবিহা

মিটিং শেষে বাসা ফিরেই আরিয়া হল রুমের জিনিস পত্র ভাঙচুর শুরু করে , সার্ভেন্ট রা চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছে ,সবাই সামনে থাকা মেয়েটার রাগ দেখেছে সব সময় কিন্তু আজকের মতো আগে কখনো দেখেনি ,সব সময় সাবলীল চলাফেরা করেছে রাগের কারনে লিমিট ক্রস করে এমন উল্টা পাল্টা জিনিস পত্র ভাঙচুর করতে দেখেনি ।
আরিয়ার চোখে জল এসে গড়ায় ,, তিব্র থেকে তিব্র ঘৃনা ঐ ছোঁয়ায় ঐ স্পর্শে ,কেরেক্টার লেস লোকটার সামনে কেনো আবারো যেতে হলো তাকে ।

মায়া ভয়ে কাঁপছে কিন্তু এই রাগের কারন তার অজানা নয় ,হয়তো খুব কষ্টের নয়তো ঘৃনা ।সে তো মিটিং এ আরিয়ার পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলো সবটা দেখেছে ।এতো বছর পর আফরান চৌধুরীর সামনে গিয়েছে এটা কি সহ্য করবে ম্যাম ?তার উপর এমন অশ্লীল কাজ করেছে তখন সবার গুরুত্বপূর্ণ কথার মাঝে সে সব টা দেখেও প্রোটেক্ট করতে পারেনি ম্যাম কে ।যার থেকে দুরে থাকার জন্য নিজেকে এতো গুলো দিন লুকিয়ে রেখেছে আজ তার সামনেই গিয়েছে ,আবার তার ব্যাবহার টা আজ জঘন্য ছিলো ,হা সে শুনেছিলো আফরান চৌধুরীর কথা সবার মুখে তার নাকি মেয়েদের প্রতি ইন্টারেস্ট নেই তবে আজ কি দেখলো এটা? মিথ্যে তো নয় ।
মায়া পরিস্থিতি সামলানোর জন্য প্রথমে আরিয়ার কাছে গিয়ে এক হাত দুরে দাঁড়িয়ে বললো ,ম্যাম প্লীজ কাম ডাউন ,শান্ত হোন ,আর এমন অস্বাভাবিক ভাবে আপনাকে কিছু না জানিয়ে হবেনা ,
আরিয়া এই মুহূর্তে কারো সাথে শান্ত ভাবে কথা বলার নয় উল্টো এসব কথা ফালতু মনে হচ্ছে , সঙ্গে সঙ্গে টেবিলের উপর থেকে কাঁচের গ্লাস টা নিছক ভেঙে মায়ার গলা বরাবর ধরে বললো ,একদম কথা বলবি না একটাও ,নয়তো খুব বেশি ভালো হবেনা কারো জন্য ,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মায়া ভয়ে কাঁপছে, কপালে ঘাম এসে জমে ,এমন ভাবে কখনো দেখেনি ম্যাম কে।
এমন সময় নাবিল বাহির থেকে দৌড়ে এসে আরিয়ার হাত টা মায়ার গলা থেকে সরিয়ে বলতে লাগলো ,কি করছো কি আরু,পাগল হয়ে গেছো?
আরিয়ার বোধয় রাগটা আরো চেপে বসলো ,নাবিল কে উদ্দেশ্য করে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো I hate this name ,How many times will I say it?
নাবিল দুহাত উপরে তুলে একটু নিচে নামিয়ে মাথা টা নাড়াতে নাড়াতে বললো ,ওকে ভুল হয়েছে লাস্ট বার, কিন্তু তুমি কি করতে যাচ্ছিলে আর…. শ্রাবনী।মাথা টা কি একদম চলে গেছে তোমার? কি হয়েছে আমাকে বলো ।
আরিয়া হাতের ভাঙা গ্লাস টা নিচে ছুড়ে মারে ,কাঁচের টুকরো গুলো চারদিকে ছিটকে পরে ,দুটো কাঁচ ঠিক আরিয়ার ফর্সা মশ্রিন তুলতুলে পায়ের উপর এসেও পরে ,ফলে হালকা আঘাত লেগে একটু আচ পরে রক্তের আভা প্রকাশ পায় ।

নাবিল সঙ্গে সঙ্গে আরিয়ার পায়ের কাছে বসে হাত দিয়ে কাঁচ দুটো সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো -একটু জোড়ে শব্দ করে বলতে লাগলো,কি করছো কি শ্রাবনী ,কি হয়েছে বলবে তো আগে ,কি করেছো এটা ? কিসের জন্য রাগ করে আছো ? আর যাই হোক তার জন্য নিজের ক্ষতি কেনো করবে?
কাঁচ দুটো ফেলে দিয়ে আঘাতের জায়গা দুটো হাত দিয়ে একটু রক্ত টা মুছার চেষ্টা করতেই পাশ থেকে একজন সার্ভেন্ট ফার্স্ট এইড বক্স টা নাবিলের সামনে এগিয়ে দেয় । নাবিল ছোট একটা তুলা দিয়ে রক্ত টা মুছে দিয়ে সেখানে ওষুধ লাগাতে গেলে আরিয়া পা সরিয়ে দিয়ে বললো ,লাগবেনা । বলেই উপরে হাঁটা ধরে ।
নাবিল শুধু তাকিয়ে থাকে ,আরিয়া রুমে ঢুকার আগে নাবিল বলে নিচ থেকে বলে উঠে ,দেখো নিজের কিছু করবেনা নয়তো কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা ।

আরিয়া পেছনে তাকানোর প্রয়োজন মনে করেনি । সোজা রুমে ঢুকে দরজা আটকিয়ে দেয়।
আরিয়া দরজা আটকাতেই মায়াকে জিজ্ঞেস করলো ,কি হয়েছে? মিটিং এ কোনো প্রবলেম হয়েছে? নাকি অন্য কিছু?
মায়া মাথানত করে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বলতে লাগলো ,আসলে হয়েছে কি মিটিং এ….বলে মায়া থামলো ।আর কথা আসছেনা গলা দিয়ে যদি এটা শুনে নিশ্চিত নাবিল স্যারের হাতে মরতে হবে ।
নাবিলের হাত মুঠো বদ্ধ হয়ে আসে ,কপালের রগ গুলোই জানান দিচ্ছে এমন ভাবে চুপ হয়ে যাওয়া টা একদম পছন্দ হয়নি তার।
মায়া ভয়ে আবারো বলা শুরু করে দিল,আসলে মিটিং এর সময় মি চৌধুরী অভদ্রতামী করেছে ম্যামের সাথে।
নাবিল একবার চোখ বন্ধ করে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করলো , পরক্ষনেই আর এক মুহূর্তও না দেরী করে বেড়িয়ে পড়লো ।

মায়া তো ভেবেই নিয়েছিল আজ তাকেও প্রান টা না দিতে হয় ।
আরিয়া গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে উপরের শরীরের সাদা ড্রেস টা খুলেই হাত বাড়িয়ে পানি জাতীয় ভিষন কড়া ঘ্রাণের কিছু একটা নিয়ে শরীরে ঢেলে দিয়ে যতটুকু তে আফরানের ছোঁয়া লেগেছে মনে আছে সব টা শরীরে ঘসামাজা শুরু করে ।
বেশ খানিক সময় নিয়ে জায়গা গুলো তে ঘসে ঝর্না ছেড়ে দিয়েও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবারো পাশে থাকা গোলাপজলের পানিতে নিজেকে এলিয়ে দেয় ,যেখানে তার কিছুটা স্বস্তি বোধ হয় ।

নাবিল ফুল স্পিডে গাড়ি চালিয়ে ঠিক আফরান দের বাড়ির সামনে এসে গাড়ির ব্রেক চাপলো।
দ্রুত পায়ে নেমে গিয়ে কলিং বেল বাজায় ।
মিনিটের মধ্যে একজন সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দেয় , সার্ভেন্ট টা মনে হয় নতুন হবে তাইতো জিজ্ঞেস করলো কে আপনি? বড় সাহেব বাসায় নেই ।
নাবিল লোকটার কথায় পাত্তা না দিয়ে ধাক্কা মেরে সামনে থেকে সরিয়ে সোজা ভেতরে ঢুকে যায় ,
-আফরান ,নিচে নাম বলছি নয়তো খারাপ হয়ে যাবে ,আজকে আমার চেয়েও খারাপ দ্বিতীয় কেউ হবেনা বলে দিলাম ।

পাশ থেকে লোকটা বলে উঠলো ,আসলে আফরান স্যার তো আসেনি বাসায় ,বাড়ির বড় সাহেব আফরান স্যার গত তিন বছর ধরেই নাকি বাসায় আসেনা শুনেছি ।
নাবিল বুঝলো আফরান বাড়িতে আসেনি। আফরান যে আরুকে চিনবে মিটিং এ এটা সে নিশ্চিত ছিলো কিন্তু এমন করবে সেটা ভাবেনি ,আরু কে এমন রুপে দেখে একটু আনকম্পোটেবল হবে এটাই ভেবেছিলো কিন্তু এই আফরান তো উল্টো করে দিলো সব টা । তিন বছর আগের কথা কি ভুলে গেছে ঐ আফরান ।
নাবিল এবার আফরানের অফিসে চলে গেলো ডিরেক্ট। নাবিল কে দেখে প্রথমত গেইটের কেয়ার টেকার ভেতরে যেতে দিতে চায়নি কিন্তু পরমুহূর্তে তানভীরের কল আসলো কেয়ার টেকার এর ফোনে,একে আসতে দাও ।
পরে কেয়ার টেকার গেইট খুলে দিলে নাবিল সোজা আফরানের রুমের দিকে চলে গেলো । নাবিল আসতেই তানভীর গিয়ে দরজা খুলে দিলো ।
আফরান হাতে কিছু কাগজ পত্র নিয়ে টেবিলে হেলান দিয়ে এক পা অন্য পায়ের উপর রেখে কিছুটা হালকা ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে ।

নাবিল ভেতরে ঢুকেই আফরানের কাছে গিয়ে কলার চেপে ধরে বললো ,প্রবলেম কি তোর ,সাহস হলো কি করে ওর শরীরে টাচ করার ? নিজের প্রমিস ভুলে গেছিস? আফরান চোধুরী যে নিজের কথা রাখেনা প্রুভ করে দিয়েছিস।
তানভীর এসে নাবিলের হাত সরাতে যায় কিন্তু আফরান চোখে ইশারা করে সামনে না আসার ।
কিছুটা বিরক্ত নিয়েই নাবিলের হাত টা কলার থেকে সরিয়ে বলতে লাগলো ,তুই তো আমাকে বলিসনি যে ,ঐ মিসেস শবনমের সাথে মিলে কাজ করছিস । আর আরুও সেখানেই আছে । তুই যদি ভূলে যাস তবে আমি কেনো ভুলবো না?
আর তাছাড়া ও এতো দিনেও তো আরুকে নিজের করতে পারলি না আর মাত্র ২৩ দিন বাকি তিন বছর পুর্ন হতে তখন তুই কি করবি? (ডেভিল হেসে )

নাবিল:দেখ আফরান ভালো ভালোয় বলছি ,আরু তোকে কখনো চায়না ভবিষ্যতে ,দুরে থাক ওর থেকে ।আমাকে ভালোবাসে না কিন্তু বন্ধু ভাবতেও ওর কোনো আপত্তি নেই , আমাকে ও ঘৃনা করেনা কিন্তু তোকে ঘৃনা করে । আরু সেদিন আমার কাছে নিজে এসেছিলো ভুলে যাস না আমি জোড় করিনি ।
আফরান:রাইট , সেই জন্যই তো তোর কথা মেনে নিয়েছিলাম ,সেদিন রাতে যখন গাড়ি টা এক্সিডেন্ট করাতে চেয়েছিলি তখনি বুঝে ছিলাম আরু তোর কাছে আছে আর তার জন্যই আমাকে মারতে চাচ্ছিস । তারপর যখন আবার তুই সেটা বুঝে গিয়েছিলিস কি করলি ফালতু একটা গেম চেলেন্জ করে বসলি ,আরু নাকি তোকে বিশ্বাস করে হেনতেন আরো কতো কি ওহ গড ,তিন বছর সময় নিলি আরুকে নাকি নিজের করে নিবি যদিও বিষয় টা জোকস লেগেছে আমার তবুও শুধু ঐ বোকা টা মেয়েটা কতদূর যেতে পারে,সাহস টা কতটুকু বেড়েছে সেটাই দেখার জন্য তোকে টাইম দিয়ে আমি চলে গিয়েছি।আর তুই ভেবেছিস আমি তোর চ্যালেন্জ এক্সেপ্ট করেছি আমি ,,
তবে যদি সত্যি আরু তোর সাথে লুতুপুতু করতো তোর কি মনে হয় আমি তাকিয়ে দেখে যেতাম? ওখানেই পুঁতে রাখতাম ।আমাকে এখনো ভালো করে চিনতে পারিসনি ইয়ার ।

কিন্তু তুই যে ওকে এমন প্রফেশনাল বানাবি সেটাও বলিসনি । আবার শবনমের সাথে হাত মিলিয়েছিস সেটাও বলিসনি । তোর কি মনে হয় আমি তোর সব কথা বিশ্বাস করেছি ? ঐ বোকা টার জন্য আমার ৫/৬ টা সিক্রেট গার্ড আগে থেকেই ছিলো ।আচ্ছা তুই তো বলিস যে আরুকে ভালোবাসিস,তা ভেবে দেখেছিস যার ভেতরে আমাকে নিয়ে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে তার হাতেই আরুকে তুলে দিচ্ছিস,আরুর কিছু হবেনা গ্যারান্টি দিতে পারবি?
নাবিল কি যেনো ভাবতে শুরু করলো ।

আফরান বাঁকা হেসে বললো ,এখন ভেবে লাভ নেই ,মনে কর তোর চেলেন্জ টা আমার কাছে একটা ফালতুর থেকেও জঘন্য ছিলো ,আরু না চাইলেও আমার জোড় করে হলেও আমার ,মরে গেলেও আমারি থাকবে ওকে? বডিটাকে দরকার পড়লে মমি বানিয়ে রেখে দিবো । শুধু শুধু এসব করে আর লাভ নেই । একবার যেহেতু চলে এসেছি মনে কর সব কিছু এখন আমি যেভাবে চাইবো সেভাবেই হবে । বলে আফরান হাতের ফাইল গুলো রেখে কোট টা নিয়ে চলে যেতে যেতে বললো ,

মি মাফিয়া পর্ব ৩৮

আর হ্যাঁ আরেকটা কথা ,শবনম যদি একবার জেনে যায় আমি অরুকে চিনতে পেরে ইচ্ছে করে শেয়ার করেছি তবে কিন্তু আরুকে মারার চেস্টা করবে ,এখন ভেবে দেখ তুই কি শবনম কে সব টা বলে দিবি নাকি দিবি না তোর ইচ্ছা।
আর তাছাড়াও ঐ মেয়ে মরলে কিন্তু আমার কিছুই যায় আসেনা অবশ্য ও মারলেই ভালো ,এতো দিন যা যা করেছে সব টা শাস্তি তো পেতেই হবে তাইনা ? পাখা গজিয়েছে উড়ার জন্য।ওর পাখা আমি মিনিটেই শেষ করে দিতে পারি কিন্তু আপাতত করছি না সেটা । বলেই আফরান রুম ছাড়ে। তারপর….

মি মাফিয়া পর্ব ৩৯ (২)