মি মাফিয়া পর্ব ৪৩

মি মাফিয়া পর্ব ৪৩
সুমাইয়া সাবিহা

সেকেন্ড কয়েক পর আফরান নিজেই ছেড়ে দিয়ে বললো ,ড্রেস চেঞ্জ করে নিচে আসো নয়তো দরজা খুলা হবে না এখানেই থাকতে হবে রাত টা ।
কথাটা বলে আফরান দ্রুত পায়ে বাহির থেকে দরজা আটকিয়ে বেড়িয়ে গেলো ।
আরিয়া দৌড়ে গিয়ে দরজা খোলার জন্য ধাক্কা তে লাগলো,দরজা খুলে দিন বলছি । কিন্তু এই দরজা খোলার নয় আরু ভালোভাবেই জানে । তাই আর বৃথা চেষ্টা না করে খাটের উপর ধপাস করে বসে পড়লো ,মুখের মাস্ক টা এক টানে খুলে ছুড়ে মারলো ।

কেনো সব সময় বাড়াবাড়ি করতে হবে ? এমন কেনো আপনি ?
আরিয়ার রাগের সিমা ছাড়ায় , কিন্তু কি করবে সে? কিছু করার নেই তো ।
রুমের মধ্যেই একবার ডানে আরেকবার বামে হাঁটতে লাগলো , এতোক্ষণ মাথা গরম থাকার কারনে ফোনের কথা ভূলেই গিয়েছে , হঠাৎ ফোনের কথা মাথায় আসতেই খাটের উপর ফোনটা কোথায় আছে দেখতে যায় কিন্তু কোথায় তার ফোন? পুরো বিছানা উলট পালট করে ফেলেছে চোখে পরেনি ,তারপর শিউর হলো নিশ্চিত যাওয়ার সময় ফোনটাও নিয়ে গেছে ।
এদিকে নিচে শবনম এসে বসে আছে ,নাবিল কে বারবার জিজ্ঞেস করছে ও আসছে না কেনো । নাবিল তো প্রায় পাগল অবস্থা,না বলে কোথায় গিয়েছে? মায়ার থেকে জেনেছে উপরে ছিলো সেই রুমটাও খোঁজে এসেছে কিন্তু পেলোনা , আচ্ছা আফরান কাজু করেনি তো?
আফরান হেঁয়ালি ভাব নিয়ে একটু দুরের চেয়ার টায় বসে ফোনে কিছু একটা দেখে যাচ্ছে তখন থেকে আবার মাঝে মাঝে হাসির রেখা ফুটে উঠছে মুখে ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

যদিও কালার বাতিতে আফরানের এমন ডোন্ট কেয়ার ভাব টা বুঝা যাচ্ছে তবে হাসি টা বুঝা যাচ্ছে না ।
নাবিলের বিষয় টা বিরক্তিকর মনে হলো ,আফরানের সামনে গিয়ে বললো ,হেয় সত্যি করে বল আলু কোথায় ।
আফরান ফোনটা হালকা নিজের দিকে ঝুঁকিয়ে নাবিলের দিকে তাকিয়ে বললো ,তোদের সাথে তো আসার কথা ছিলো তা আমি কি জানি ,জলদি কর নয়তো পার্টি বন্ধ করে দেই চলে যা ।
নাবিল:দেখ একদম ভাব নিবি না ,আমি ঠিক বুঝতে পারছি তুই জানিস আরু কোথায়।
আফরান: বিরক্ত করিস না ইয়ার বাচ্চাদের মতো । যেতে বললাম যা , আমার ঘুম পাচ্ছে। মিসেস শবনম কে গিয়ে বল সিইউ কোথায় যদি না আসে তবে তোদের সাথে যেই শেয়ার টুকু দেবার কথা বলেছি ঐটা কেন্সেল ।
নাবিল: বাড়াবাড়ি করছিস ,আরু কোথায় সেটা বলতে বলছি নয়তো আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা আফরান।
আফরান আর কিছু না বলে সোফা থেকে উঠতে উঠতে বললো ,১০ মি টাইম দিচ্ছি এর মধ্যে সব ঠিক ঠাক না হলে সব কেন্সেল হয়ে যাবে ,সাথে তোদের স্বপ্ন কিন্তু স্বপ্নই থেকে যাবে । কথাটা শেষ করে আফরান উপরের দিকে চলে যায় ।

নাবিল কে আফরানের সাথে কথা বলতে দেখে শবনম দ্রুত পায়ে এসে জিজ্ঞেস করলো ,কি বলেছে ঐ আফরান ।
নাবিল:বলেছে সবাইকে ১০ মিনিটের মধ্যে উপস্থিত না হতে পারলে ডিল কেন্সেল । কিন্তু এখন এটা আমি ভাবছি না শ্রাবনী কোথায় গিয়েছে সেটাই ভাবছি । বলেই নাবিল আরিয়া কে খোঁজার জন্য জায়গা ছাড়ে ।
শবনম রাগে ক্ষোভে ফুঁসতে লাগলো ,স্বপ্ন সত্যি হওয়ার আগেই ঐ মেয়েটা না আবার সব ভেস্তে দেয় ।
শবনম বারবার আরিয়ার ফোনে কল দিতে লাগলো ।

সামিরা জাফর সাহেব কে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে,প্রেমার নিচের এসব বিরক্ত লাগছে , মদের গন্ধে পুরো বাড়ি যেনো মদের কারখানায় মতো লাগছে । সামিরার কাছে বলে আগেই চলে গিয়েছে রুমে ।প্রথমেই ওয়াশ রুমে যায় কিন্তু হঠাৎ পেট যেনো ওসবের গন্ধে মোচরে উঠছে বারবার ,মাথাটা কেমন করছে ,ছেহ এসব মানুষ কিভাবে খায় ?আর ভাইয়া এসব করার আর জায়গা পেলোনা বাড়িতেই করতে হলো ।
মাথায় কতক্ষন পানি দিয়ে বেড়িয়ে আসলো প্রেমা । পাশ থেকে তোয়ালে টা নিয়ে মাথা মুছতে লাগলো এখনো যেনো গন্ধ যাচ্ছে না , তাই দরজা টা লক করে দেওয়ার ইচ্ছায় সেখানে গিয়ে চোখ আটকায় এই রুমের দরজার সামনেই আয়শ ভাইয়া আর সাদেক রেলিং এ দুহাত ভর করে নিচের দিকে তাকিয়ে সবটা দেখে যাচ্ছে।
প্রেমা কিছুটা মুহূর্ত সেদিকেই তাকিয়ে কাটলো ,একটু স্পষ্টভাবে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে ওনাকে যেটা আপাতত এখন সম্ভব না ।

আয়শ সাদেকর দিকে ফিরে কিছু একটা বলতে যাবে তখন প্রেমা কে দেখে চুপ করে যায় ,মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো ,কিছু হয়েছে তোমার?
প্রেমা ও স্মীত হেসে বললো,নাহ ,আসলে ওসবের স্মেল টা বড্ড বিরক্ত লাগছে ।
আয়শ দুষ্টু হেসে বললো ,তা এইখানে দাঁড়িয়ে কি দেখছিলে? সত্যি করে বলো তো ,এখান থেকে নিশ্চয়ই স্মেল টা আরো প্রগাঢ় হবে তবে বিরক্ত নিয়েই এখানেই দাঁড়িয়ে ছিলে কেনো?
প্রেমা :আসলে দরজা টা আটকে দিচ্ছিলাম আর কি ।
আয়শ:হ্যাঁ সেটাই তো দরজা আটকাতে গিয়ে দৃষ্টি আটকে গিয়েছে হাসব্যান্ড এর উপর তাইনা।
আয়শের এমন ঠোঁটকাটা কথায় প্রেমা একটু লজ্জা পেয়ে কাচুমাচু করা শুরু করে দিলো ,এই কি পরিস্থিতিতে পরেছে একমাত্র সে জানে ,না পারছে ঠাস করে দরজা টা লাগিয়ে নিজেকে লুকাতে আর না পারছে কোনো জবাব দিতে ।
সাদেক:আহ আয়শ করছিস টা কি । চল এখানে থেকে লাভ নেই ,বাহিরে গেলে আস।
আয়শ : সাদেক কি হচ্ছে এসব? আসার পরে মেয়েটার সাথে একবার কথা বলেছিস? জ্ঞান বুদ্ধি দেখছি সব টা খেয়ে ফেলেছিস। কথা টা বলে আয়শ সাদেক কে আকস্মিক ধাক্কা মারে রুমের ভেতরে।

সাদেক প্রস্তুত ছিলো না তাই টাল সামলাতে পারেনি ।। কিছু বুঝে উঠার আগেই আয়শ দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে বললো ,আজ এখানেই থাকবি দুইজন ,দেখ এখন বিয়ে হয়েছে সেটা যেভাবেই হোক মানতেই হবে তাইনা । বলে আয়শ হালকা ভাবে হাসতে হাসতে চলে যায় ।
সাদেক গিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কয়েকবার আওয়াজ করে কিন্তু আয়শের কোনো নাম গন্ধ নেই।
প্রেমা : ভাইয়া কি বাহির থেকে লাগিয়ে গিয়েছে?
সাদেকের মস্তিষ্ক টা নাড়া দিয়ে উঠলো ,রাগ হচ্ছে ভিষন ভাবে আয়শের উপরের রাগ টা মনে হচ্ছে প্রেমার উপরে ঝারবে, কিন্তু সাদেক যথেষ্ট শান্ত শিষ্ঠ একজন মানুষ,নিজেকে কন্ট্রোল করার শক্তি তার আছে ,তাই কথা না বাড়িয়ে বললো , এই ছেলেটা পাগল হয়ে গেছে ,মাথা টা কি খারাপ হয়ে গেছে ওর ,ওর ও তো বিয়ে হয়েছে আমি কি ওর সাথে এমন করেছি ,আয়শ দরজা টা খোল বলছি ,ভালো হচ্ছে না ।
প্রেমা বুঝলো দরজা বাহির থেকেই লাগানো ।

সাদেক চুপ করে বিছানায় বসে আছে , দুআঙুলে কপাল টা নিজেই ঘসছে মনে হচ্ছে মাথা ব্যাথা করছে ।
প্রেমা কিছু বলছে না ,যদি আবার ওর সাথে রাগ দেখায়? সে কি সামিরা আর আরুর মতো এতো সব সহ্য করতে পারবে নাকি । তাই সব সময় নিজেকে দুরের রাখার চেষ্টা করে ।
কিছু ক্ষন পর সাদেক নিজেই বললো ,তোমার কোনো প্রবলেম হচ্ছে না তো? দেখলেই তো আয়শ কি থেকে কি করলো ,আমি বুঝতে পারিনি আয়শ বিষয় টা এমন ভাবে করে বসবে ।
প্রেমা : প্রবলেম নেই ,বুঝেছি আমি ।
প্রেমা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা তাই সোফায় গিয়ে বসলো কি করবে সেটাই ভাবছে এখন ।
সাদেক প্রেমার দিকে না তাকিয়ে ই বললো : কখন এসেছো এখানে?
প্রেমা ভয় পেলো হালকা ,কারন বিয়ের পর কাউকে না বলে হুটহাট চলে যাওয়াটা মনে হয় সমাজের চোখে ভালো দেখায় না ।

সাদেক: কি হলো ?
প্রেমা:আসলে চাচা অসুস্থ তাই সামিরা আমাকে জোড় করেছিলো ওর সাথে আসতে , এইজন্যই এসেছি ।
সাদেক:ভালো করেছো । বাড়িতে গিয়েছিলে?
প্রেমা : তারপর আর যাওয়া হয়নি ।
সাদেক: ফোনে কথা হয় আম্মুর সাথে?
প্রেমা : হা মাঝে মাঝে বলি ।
আবারো কেটে যায় কিছু মুহূর্ত,সাদেক নিজেই নিরবতা ভেঙ্গে বলে ,একটা কথা বলবো?
প্রেমা: জিজ্ঞেস কেনো করছেন।
সাদেক স্মীত হেসে বললো ,ঐ ছেলে কে আর কল দিয়েছিলে?
প্রেমা বুঝলো সাদেকের প্রশ্নের ছেলেটা আসলে কে । – সত্যি বলতে আমরা অনেক কিছু জিবনে চলার পথে ভুল করে থাকি যেগুলো পরে যখন রিয়েলাইজ হয় তখন ভুল টা কিভাবে সুধরানো যায় সেই প্রচেষ্টায় থাকি । আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে বলতে পারেন ।
সাদেক: আচ্ছা,তার মানে কথা হয়না ।
প্রেমা কিছু বললো না ।

সাদেক : আমাকে নিয়ে তোমার কোনো সমস্যা আছে ? থাকলে বলতে পারো প্রবলেম নেই , মাইন্ড করবো না ।
প্রেমা: হঠাৎ এমন প্রশ্ন? আমি জানিনা আপনার ভেতরে কি আছে ,আমাকে নিয়ে আপনার মনে কেমন ধারনা ,তবে বিশ্বাস করুন আমি সম্পর্কে জরিয়েছিলাম ঠিক কখনো আমাদের মাঝে আর পাঁচটা সম্পর্কের মতো অশালীনতা হয়নি । হয়তো আপনি বিশ্বাস নাও করতে পারেন তবে এটাই সত্যি ।
সাদেক কিছু বললো না ,তবে সামান্য হাসি টুকু ঠোঁটের কোনে ভেসেছিল স্পষ্ট।
প্রেমা:সামিরা কে কল দেবো? দরজা টা খুলে দিতে ।
সাদেক:তোমার কি মনে হয় ? আয়শ আমাদের জন্য দরজা আটকিয়ে দিয়েছে?
প্রেমা :মনে হওয়ার কি আছে এটাই তো বলে গেলো ।
সাদিক একটু হেসে বললো ,উহুম,আয়শ সামিরার সাথে পার্সোনাল কিছু টাইম কাটাতে গিয়েছে সেটা আমার ভালো করেই জানা । সামিরা কে দরজা খুলতে দেবে না।
প্রেমা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে : কিন্তু ভাইয়া তো সামিরা আপুকে সহ্য করতে পারেনা তবে আপনি…. এটুকু বলতে সাদেক বললো ,যেটা ও দেখাচ্ছে সেটা সত্য নয় আয়শ সামিরা কে পছন্দ করে আগে থেকেই ,তবে এমন নয় যে বিয়ের আগে থেকে ,আমি এ বাড়িতে প্রায় আসি জানোই ,আয়শ আমার বন্ধু আমি বুজতে পারি । সামিরা ওর কাছে কিছু না বলে চলে গিয়েছে তাই ওর ভিন্ন রাগ জমে আছে ।
প্রেমা: আসলে আমার মনে হচ্ছে আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে,আয়শ ভাইয়া আগে থেকেই ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করে তাইতো চলে গিয়েছে।

সাদেক আবারো হাসলো , মানছি আগে বাজে ব্যাবহার করতো কিন্তু বিয়ের জন্য নয় আরিয়া চলে গিয়েছিলো তখন সবারই মাথা একটু গরম ছিলো সেজন্য।
প্রেমা বেশ বিস্ময় হলো । ভালোবাসলে এমন করা জায়? তাও আয়শ ভাইয়ার মতো মানুষ দের । হ্যাঁ আফরান ভাইয়ার মতো এমন মেজাজের মানুষ থেকে যেকোন কিছু আকস্মিক আশা করাই যায় কিন্তু আয়শ …
সাদেক:কি ভাবছো?
প্রেমা: কিছু না । আপনার মনে হয় মাথায় ব্যাথা ,ঘুমিয়ে পড়ুন কোনো প্রবলেম হবেনা । আমি এখানেই মেনেজ পারবো।
সাদেক: চাইলে তুমি এখানে আসতে পারো আমি ওখানে যাই ।
প্রেমা:আরে কি বলছেন লাগবেনা ,আমার অভ্যাস আছে ।
সাদেক আর কথা বাড়ালো না ।

সামিরা জাফর সাহেব কে খাবার ওষুধ খাইয়ে দিয়ে রুমের দিকে আসতে চেয়েছিলো কিন্তু আয়শ কোথা থেকে এসে মাঝে পথে আটকায়।
সামিরা: কিছু হয়েছে?
আয়শ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে পকেটে হাত গুজে ।
সামিরা: বলুন না কিছু হয়েছে? সাদেক ভাইয়া কিছু খেয়েছে? বাড়িতে এই অবস্থা তাই রান্না করতে পারিনি ।
আয়শ কোনো কথা না বলে সামিরার হাত ধরে টেনে আয়শের রুমে নিয়ে গিয়ে হাত ছেরে দিয়ে দরজা আটকায় ।
সামিরা:আরে করছেন টা কি? কি হয়েছে বলবেন তো ।
আয়শের মুখে তবুও কথা নেই ।
সামিরা: মুখে কোনো প্রবলেম? নাকি সত্যি বোবা হয়ে গেছেন ।
আয়শ কথা না বলে সামিরার একদম কাছে এসে বললো ,বিয়ে হয়েছে কতো বছর?
সামিরা : কার বিয়ে ?
আয়শ: তোর ।

সামিরা ডান হাতে মুখের উপর হাত রেখে কাশতে থাকে ।
আয়শ : ঢং কম করবি ,সোজা উত্তর দে ।
সামিরা : কেনো ? আমার বিয়ে দিয়ে আপনি কি করবেন?
আয়শ : তোর কি এখন আবার বকা শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে? তাহলে বল আমি ফ্রিতে দিয়ে দিচ্ছি।
আয়ের কথায় সামিরা কিছু টা ভয় পেয়ে কাঁপা গলায় বললো ,তিন বছরের উপরে হবে হয়তো ।
আয়শ: তিন বছর ৩ মাস ১৯ দিন । ডেট টাও ঠিক করে মনে রাখতে পারিস না দেখছি , বাচ্চা কাচ্চাদের জন্ম ডেট মনে রাখতে পারবি তো নাকি …
সামিরা অবাকের চুড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে,এই লোক বলে কি এসব , হঠাৎ কি হলো আজ উনার ।
আয়শ: এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস? বিয়ে হয়েছে এতো দিন হয়ে গিয়েছে তা বাসর রাত উদযাপন করেছিস ?
সামিরার লজ্জায় যেনো মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে কি সব বলে যাচ্ছে তখন থেকে । কথা কাটিয়ে বললো ,আমাকে যেতে দিন প্রেমা হয়তো খোজছে আমায় ,। বলে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে আয়শ সামিরার বাহু ধরে আবার বললো নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো , উত্তর না দিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?

সামিরা : আহ এতো জোড়ে ধরেছেন কেনো ছাড়ুন। আর আপনার মাথা টা মনে হয় একটু ড, এর কাছে দেখানো উচিত। কি সব বলছেন নিজেও জানেন না , সত্যি করে বলুন আপনিও ড্রিঙ্কস করেছেন তাইনা ।
আয়শ কপাল কুঁচকে বললো : তোর কি মনে হয় আমি এসব খাই ।
সামিরা: তাহলে উল্টো পাল্টা কিসব বলে যাচ্ছেন তখন থেকে।
আয়শ : কথা না বাড়িয়ে উত্তর দে ,তিন বছর বিয়েতে বাসর হয়েছে তোর হাসব্যান্ড এর সাথে?
সামিরা কি বলে এই লোকটার মুখ বন্ধ করবে সেটা তার জানা নেই । তাই আবারো বললো ,আমাকে যেতে দিন প্রেমা খোজছে আমায় ।
আয়শ:ওরা বাসর করছে ওদের রুমে তুই মাঝে গিয়ে ডিস্টার্ব করে ওদের আবেগময় মুহূর্ত টা নষ্ট করতে চাস ,এ তো দেখছি তুই আমার চেয়েও বেশি লজ্জা হিন মেয়ে।

সামিরা এবার হঠাৎ করেই আয়শের মুখ চেপে ধরে বললো ,একদম চুপ থাকেন ,আর একটা কথাও শুনতে চাইনা আপনার ‌ লজ্জা শরম নেই সাথে আমার টাও ডুবাচ্ছেন । যেতে দিন বলছি ।
আয়শ সামিরার হাত টা মুখের উপর থেকে সরিয়ে বলতে লাগলো ,তুই তো দেখছি আমার চেয়েও ফার্স্ট।
সামিরা কপাল কুঁচকে বললো ,কি বুঝাতে চাইলেন।
আয়শ:এই যে আমার উপর যখন তখন হামলা করে বসছিস।
সামিরা : ইডিয়টের মতো কথা বলা বন্ধ করুন নয়তো কিন্তু…
আয়শ সামিরার কথা কেড়ে নিয়ে বললো , কিন্তু কি করবি? হুম বল ।
সামিরা : আচ্ছা আপনি আমার পেছনে কেনো এভাবে লেগে আছেন বলবেন ,আমি তো আপনাকে জালাইনি আর ।
আয়শ: নতুন কাউকে পেয়েছিস আমাকে কেনো জালাবি ।
সামিরা এবার একটু উঁচু গলায় বললো , বেশি হয়ে যাচ্ছে এবার প্রিয় মানুষ থাকতে কেউ অন্য কাউকে চুস করেনা ।
আয়শ: আচ্ছা এখন আবার নতুন করে প্রিয় মানুষ ও জুটিয়ে নিয়েছিস ,এই কারনে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিস।
সামিরা এবার বিরক্ত হয়ে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো ,আপনাকে বুঝানোর ক্ষমতা আমার নেই তাই দয়া করে প্রশ্ন করা বন্ধ করুন আর আমাকে যেতে দিন প্লীজ।

আয়শ এবার সামিরা আকস্মিক দুহাতে তুলে নিয়ে বললো ,বুঝিয়ে বল তাহলে আমি একটু কম বুঝি।
সামিরা: আহ কি করছেন টা কি ,নামান বলছি । আজ কি হয়েছে আপনার সত্যি করে বলুন । আমাকে ফেলে দিবেন তাইনা ,এই ছিলো আপনার মনে । কি করেছি আমি আগে বলু….
কথা শেষ হওয়ার আগে আয়শ বললো ,ওহ এভাবে লাফাচ্ছিস কেনো ? আর তোকে কি খাবার খেতে দেয়না বাড়িতে বলতো ,হাওয়ার সাথেই তো মনে হয় উপরে যাবি তখন তো দোষ পর্বে আমার উপর ,আমি তোকে হাইটেক করে নিয়েছি।
সামিরা : আপনার আজগুবি কথা গুলো এবার ছাড়ুন প্লীজ।আর আমাকে নামান ।
আয়শ বিরক্ত হয়ে এবার খাটের উপর গিয়ে পা ঝুলিয়ে বসে বললো ,কি হয়েছে এমন করছিস কেনো মাছের মতো ।
সামিরা:কোল থেকে নামান বলছি ।
আয়শ কোনো কথা বললো না সামিরার এই একটু পরপর মুড চেন্জ হওয়া ইমোজির দিকে তাকিয়ে রইল আর মুচকি হাসলো।

সামিরা ছোটার জন্য বারবার আয়শের বুকের উপর কিল ঘুষি বসাতে লাগলো ।
কিছুক্ষণ পর নিজেই হয়রান হয়ে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা বন্ধ করে চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ।
সামিরা কে এভাবে দেখে আয়শের বেশ মজাই লাগছে , আচ্ছা এই মেয়েটা কখন আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেলো? কি আছে এই মেয়ের মধ্যে? আমি তো কখনো এমন করে দেখতে চাইনি তবে হঠাৎ হঠাৎ ও চলে যাওয়ার পর কেনো দেখতে ইচ্ছে হতো এতো । আচ্ছা কখনো কি ও দেখছে ভার্সিটিতে আমি দাঁড়িয়ে কতোটা সময় পার করেছি একটু দেখার জন্য? হয়তো না ।
সামিরা এবার শরীরের সব টা ভার আয়শের উপর ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে বললো , বজ্জাত ছেলে একটা ,এমন কেনো করছে আমার সাথে আজ ,
আয়শ সামিরার এই বিড়বিড় করা শব্দ বুজতে সমস্যা হয়নি এতোটা কাছে থাকায় । মুচকি হেসে আলতো ভাবে সামিরার কপালে পরশ একে দেয় ।

আকস্মিক ঘটনায় সামিরা চোখ খুলে আয়শের দিকে তাকায় ।
আয়শ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো ,কিছু হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো ।
সামিরা চুপসে আসে ,এটা কি ছিলো বুঝার চেষ্টা করছে । সত্যি ছিলো তো নাকি কল্পনায় ছিলো?
আয়শ এবার সামিরার দিকে তাকিয়ে বললো,কি ভাবছিস এতো?
সামিরা: আপনি কি একটু আগে আমার কপালে…. এটুকু বলে নিজেই থেমে যায় । কি বলবে সে? মুখ দিয়ে বলতে পারবে এসব কথা?
আয়শ: হুম তারপর বল ? কি করেছি আমি?
সামিরা: দেখুন ঢং করবেননা বলে দিলাম । সত্যি করে বলুন আপনি কি….
আয়শ সামিরা কে শেষ করতে না দিয়ে এবার ঠোঁটজোড়ায় হালকা ভাবে চুমু একে বললো ,হুম তারপর বল আমি কি…..?
সামিরার চোখ দুটো কোথায় আটকে আছে নিজেরও জানা নেই , শুধু জানে কোনো এক ভাবনার জগতে সে চলে গিয়েছে সে ।
আয়শ মুচকি হেসে সামিরা কে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো , কিছু বলবি আর ? না বললে আমার রুম থেকে বিদায় হ ।

সামিরা ভাবনা থেকে ফিরে এসে বললো , কি করলেন আপনি এগুলো? আপনার কি লজ্জা নে….
আয়শ:কেনো? তোর আরো লাগলে বল দিয়ে দিচ্ছি।
সামিরা : এএএএএই নাআআআআ বলে খাট থেক উঠে দাঁড়িয়ে ভো দৌড় দরজার দিকে ।
আয়শের এতোক্ষণ খেয়াল ছিলো না প্রেমা আর সাদেক কে এক রুমে আটকে রেখে এসেছে তাই সামিরা বের হওয়ার আগেই বললো ,প্রেমা আর সাদেক কে এক রুমে আটকে এসেছি । তুই গিয়ে ডিস্টার্ব করিস না আবার ।
সামিরা শুনলো কিনা বুঝা গেলো না দরজা খুলেই আবারো 🏃 দৌড় ।
আয়শ স্মীত হেসে মাথা নাড়লো ।

রাত তখন বারোটার কৌটায়, পার্টি বন্ধ হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই । আফরান এর দেওয়া ১০ মিনিট টাইম এর পর পরই তানভীর কে বলেছিলো যেনো সব কিছু বন্ধ করে দেয় আর সেটাই হয়েছে । এদিকে নাবিল প্রায় ছন্নছাড়া হয়ে আরিয়া কে খোজছে ,যেখানে যেখানে যাওয়া সম্ভব সব জায়গায় গিয়েছে , আচ্ছা আফরান কে দেখে আবার রেগে অন্য কোথাও চলে যায়নি তো ? বিভিন্ন চিন্তা করে যাচ্ছে।
শবনমের ভেতরে রাগের চুপ জমে বিশালাকার ধারন করে । হাজার টা কল দিয়ে খুঁজেছে,লোকজন পাঠিয়েছিল ও কিন্তু কেউ কোনো খোঁজ দিতে পারেনি ।
দরজা খোলার আওয়াজে ঘুম থেকে হঠাৎ লাফিয়ে উঠে আরিয়া ,সে তার জিদ নিয়ে জামা পরেনি ,বাহিরে কি হয়েছে সেটা তার দেখার বিষয় না ,তার রাগ ঘৃনা যার উপর তার দেওয়া জামা সে কখনোই পরবেনা ,জামাটা নিচে পরে আছে ।

খাটে বসেই কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছে তার জানা নেই , কিন্তু মাঝ রাতে দরজার আওয়াজ পেয়ে ধরফরিয়ে উঠেই প্রথমে মাস্ক টা খোঁজে লাগলো কিন্তু চোখে পড়লো না ।
তাই পেছন ঘুরে বসে কাঁপা গলায় বললো , এ..তোক্ষণ আটকিয়ে রেখে আপনি যেই ব্যাবহার টা করলেন সেটার জবাব আপনাকে দিতে হবে কিন্তু আপাতত আপনি এখান থেকে চলে যান ।
আরিয়ার ভেতরে ভয়ের ছাপ ,এই লোকটাকে বিশ্বাস নেই , আচ্ছা আবার আমাকে মারবে না তো ,কথাটা ভেবেই ঠোঁট দুটো উল্টে এলো ,এই বুঝি পেছন থেকে চুল টেনে দিবে ।
আফরান চুপ করে এসে আলিয়ার ঠিক পেছনে পিঠ এলিয়ে দিলো ,পা দুটো খাটের নিচে ঝুলছে , বললো ,মিস শ্রা-ব-নী এভাবে পেছন ঘুরে বসে থাকা আপনার অভ্যাস নাকি ?
আরিয়া আবারো নিজেকে শক্ত করে বললো : ভদ্র ভাবে কথা বলুন মি চৌধুরী। দেখুন এখান থেকে চলে যান ,নাইটে মেয়েদের সঙ্গ নেওয়া আপনার অভ্যাস হতে পারে কিন্তু আমি ঐ ধরনের মেয়ে নই একদম ।
আফরান এবার এক কাত হয়ে আরিয়ার পিঠের উপর পরে থাকা চুল গুলো তে হাত বুলাতে বুলাতে বললো , নিশ্চয়ই এতো দিন এই চুল গুলো হাজার টা ছেলেকে দেখানু শেষ হয়ে গিয়েছে ,এক কাজ করলে কেমন হয় মি ,যদি আপনার চুল গুলো কেটে দেই ।

আরিয়ার বুক টা ছ্যাত করে জলে উঠে ,ডান হাতে পিঠের চুল গুলো সরিয়ে সামনে এনে রেখে বললো , দেখুন আপনার মনে হয় মাথায় প্রবলেম আছে ,এখান থেকে চলে যান নয়তো আমাকে যেতে দিন ,আর বাজে কথা বলা বন্ধ করুন ।যখন তখন শরীরে হাত দেওয়া কিধরনের অভ্যাস আপনার ।
আফরান: তুমি জানো তুমি আর এই বাড়ির বাহিরে এক পা ও রাখতে পারবেনা আর কোনো দিন। যদি জামাটা ভালোভাবে পরে নিতে এতো সমস্যা হতো না ।
আরিয়া: আপনি যে একটা পাগল সেটা ভালো করেই বুঝে গেছি । আপনার বাড়িতে আমি কে..কেনো থাকতে যাবো?
কথা টা বলে আরিয়া ঢোক গিললো ।
আফরান বাঁকা হেসে বললো ,তোমার যে অনেক শাস্তি পাওয়া বাকি ।
আরিয়া : আমাকে রাগিয়ে দিবেন না বলে দিলাম ।

আফরান আবারো ডিভিল হেসে আরিয়ার পিঠের উপর ডান হাত টা উপরে থেকে নিচে হালকা ভাবে ঘসতে ঘসতে বললো , দেখতে চাই ,তোমার তীব্র রাগ আর ঘৃনা দুটোই কিন্তু আমার জন্য তাই আমিও দেখতে চাই ।
আরিয়া নিজের পিঠ থেকে আফরানের হাত সরানোর জন্য আরেকটু সামনে যায় , অসভ্যতামীর সিমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন,মেয়েদের সম্মান দিতে জানেন তো? মনুষ্যত্ব বোধ আছে তো ?
আফরান এবার আরিয়ার হাতের নিচ থেকে পেট পেঁচিয়ে ধরে ।

মি মাফিয়া পর্ব ৪২

আরিয়া : ছিহ,বলে আফরান এর হাত টা ছুটাতে চাইলো কিন্তু আফরান উল্টো আরিয়ার পেট খামচে ধরে ।
আরিয়া ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে বলে আহ শব্দ উচ্চারণ করে , কি করছেন ভাইয়া , আমার খুব লাগছে তো ,হাত সরান ।
আফরান: ভাইয়া ডাকছেন কেনো মিস ,মি চৌধুরী বলেই ডাকুন।
তারপর…….

মি মাফিয়া পর্ব ৪৩ (2)