মি মাফিয়া পর্ব ৪৪

মি মাফিয়া পর্ব ৪৪
সুমাইয়া সাবিহা

সময়টা যেহেতু বর্ষা কাল , ইদানিং বেশির ভাগ সময় টাই বৃষ্টির দেখা মিলে , সপ্তাহে হয়তো এক থেকে দুদিন হালকা রোদের দেখা মিলে । সামিরা ঘুম থেকেই উঠেই ভেবেছিলো প্রেমা কে নিয়ে বাগানে যাবে কিন্তু ভেতরে সাদেক আছে কথাটা ভেবেই একলা চলে যায় । কিন্তু গিয়ে একটু অবাক হয় প্রেমা কে দেখে ,
-কখন আসলি?
প্রেমা: একটু আগে , কিন্তু তুই কখন উঠলি ? আয়শ ভাইয়ার রুমে তো বন্ধ দেখে আসলাম।
সামিরা: তোর আয়শ ভাইয়ার রুম বন্ধের সাথে আমার তুলনা করছিস কেনো? আর তুই যে সাদেক ভাইয়ার সাথে জুটিয়ে প্রেম করে বেড়াচ্ছিস সেটা আমায় বলিসনি কেনো? এখন বুঝলাম ভাইয়া কাল কেনো এসেছিলো ,কথাটা বলেই সামিরা শব্দ করে হাসতে লাগলো ।

প্রেমা দোলনা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো ,মজা নিচ্ছিস? আমিও কিন্তু তোকে নিয়ে মজা নিতে পারি ,কালকে রাতে ভাইয়ার রুমে কি করছিলি? বল বল ।
সামিরার মুখ টা সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যায় ,রাতের কথা মনে আসতেই একটু লজ্জার সাথে বিরক্তিকর আভা প্রকাশ প্রায় ।
প্রেমা: লা হয়ে যাচ্ছিস কেনো এখন? এতোক্ষণ তো আমাকে নিয়ে বেশ মজা নিচ্ছিলি ।
সামিরা : চুপ থাক তো ,সামনে থেকে সর বলেই পাশ কেটে দোলনায় গিয়ে বসলো।প্রেমাও সামিরার পাশে বসলো ।
সামিরার কাছে আজকের সকাল টা ভিষন রকম ভালো লাগছে কোনো এক অজানা কারনে , আচ্ছা উনি এমন করলেন কেনো? কাপড় বলছিলেন আরো । মনে আসতেই ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি জমে সামিরার ।
সামিরা কে নিজে নিজে হাসতে দেখে প্রেমা বললো ,তার মানে উনি যা বলেছিলেন সত্যি বলেছেন ,তোরা দুজন প্রেম করছিস তাইনা রে , দুষ্টু হেসে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সামিরা আবার নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বললো ,কি সব বলছিস? বাজে কথা বলিস না তো ,চুপ থাক । এখন‌ বল‌ তো সত্যি করে সাদেক ভাইয়ার সাথে কেমন চলছে সব? আচ্ছা রাতের কি সত্যিই এক সাথেই ছিলি?
প্রেমা: এমন ভাবে মিন করছিস কেনো? বাজে চিন্তা বাদ দে ,তোর বর আয়শ ভাইয়াই তো আটকে দিয়েছিলো ।
সামিরা না বুঝার মতো করে বললো ,আয়শ আটকিয়ে ছিলো মানে? কি আটকিয়ে ছিলো?
প্রেমা:দরজা , হঠাৎ করেই উনাকে আমার রুমে দিয়ে বাহির থেকে দরজা আটকিয়ে দিয়েছিলো তাইতো থাকতে হয়েছে । কিন্তু পরে তোকে কল করতে চেয়েছি কিন্তু উনি বলেছিলো ,আয়শ ভাইয়া নাকি তোর সাথে পার্সোনাল সময় চায় তাই তো করিনি ।
সামিরা কেশে উঠে বলে ,মাথা থেকে কয়টা তার ছিঁড়েছে তোর? উদ্ভট কথা বলছিস কেনো?
প্রেমা: হ্যাঁ সত্যি বলছি , ট্রাস্ট মি সামু আয়শ ভাইয়া তোকে ভালোবাসে সেটা আমিও কাল জানতে পেরেছি ।
সামিরা কপাল কুঁচকে বললো , তোর ফালতু কথা তোর কাছেই রাখ।
প্রেমা: ওকে ট্রাস্ট না হলে এটা বল যে ,কাল রাতে ভাইয়া তোর কাছে যায়নি কথা বলার জন্য বা এমন কিছু?
প্রেমার কথায় সামিরা হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে কি যেনো ভাবতে লাগলো ,,

প্রেমা কি হলো বল ।
সামিরা : উপরে তাকা ।
প্রেমা: কি বলছিস? আমি কি বলছি?
সামিরা বাড়ির দিকে তাকিয়ে বললো : আফরান ভাইয়ার বারান্দার দিকে দেখ।
প্রেমা সামিরার দৃষ্টি অনুসরণ করে দুতলায় আফরানের রুমের দিকে দৃষ্টি র্দিতেই অবাক হয়ে গেলো ,এতো সকাল বেলা আফরান ভাইয়া বারান্দায় কি করছে? কখনো তো এতো সকালে দেখেনি সকালে উঠতে ।
-কি হলো যে ভাইয়া এতো সকালে ঘুম থেকে উঠেছে আমার তো বিশ্বাস ই হচ্ছে না।
সামিরা : আমার ভাবনা অন্য কিছু ,
প্রেমা: কি ?
সামিরা : ভাইয়া হাসছে একটু পরপর ।

প্রেমার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেলো ,ভালো করে তাকিয়ে দেখলো মিনিটের মতো , চেয়ারে হেলান দিয়ে একহাত মাথার নিচে দিয়ে অন্য হাতে ফোনের দিকে তাকিয়ে কি যেনো দেখছে আর সেকেন্ড কয়েক পরপর হাসছে মিটিমিটি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, আচ্ছা এটা কি আদৌ সত্য?
সামিরা: দুজনেই ভুল দেখবো? আরিয়া যাওয়ার পর তো ভাইয়াকে দেখাও যায়নি দেশে এতো গুলো বছর ,অথচ ভাইয়ার মুখে কোনো সব কিছু তেই এখনো এমন ভাব যেনো কিছুই হয়নি।
প্রেমা: আরু হয়তো ঠিক বলতো । যাই হোক বাদ দে আমরা এসব ভেবে কি করবো?
সামিরা চোখ সরিয়ে দোলনা থেকে দাঁড়িয়ে বললো , আচ্ছা ভালো লাগছে না ভেতরে চল , কিছু রান্না করে নেই চাচা উঠে যাবে । আর বাবা কল দিয়েছিলো চলে যেতে বলেছে ।
প্রেমা : হুম আজ আরো ইমপর্টেন্ট ক্লাস আছে ওয়াহিদ স্যারের মনে নেই তোর ।
সামিরা: হুম আছে ।

আরিয়া একটু আগেই ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিয়েছে ,প্রথমে ভেবেছিলো জামা টা কোনো কালেই পরবেনা কিন্তু উপায় নেই বিধায় পরতে হয়েছে বিরক্ত নিয়ে ।
পরনের শার্ট কোট এসব না ধুয়েই ভেতরে রেখে দিয়ে চলে আসছে ,এতো গুলো বছরে সেই নিজের হাতে কাজ করার অভ্যাস গুলো চলে গিয়েছে।এখন এসব বিরক্ত লাগে তার কাছে ।
কিন্তু এই রুমে তো কিছুই নেই ,চুল থেকে পানি টপকে পরছে ,একহাতে আরিয়া চুল গুলো ধরে আছে । একটু নয় অনেকটা বিরক্ত হচ্ছে আরু, জামা দিয়েই চলে গেলো অন্য কিছু লাগেনা ? যতো সব এতো বড় ছেলে হয়েছে মাথায় কিছু আছে নাকি , শুধু মেজাজ টাই আছে আর কিছু নেই । আরো অনেক কিছু বলে বকবক করতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো । কিন্তু রোদের ছিটেফোঁটাও দেখছে না ,শীতল হাওয়া গায়ে এসে শিহরণ বইয়ে দিচ্ছে বারবার । আরিয়া চোখ বন্ধ করে একটু হালকা হাসে কিন্তু আবার পরমুহূর্তেই তার অবস্থানের কথা মনে হতেই শরীর রাগে জলে উঠে ,,এই বাড়িতে কি তাকে সত্যিই আটকে রাখবে? এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবেনা ,আমাকে বেরোতে হবে এখান থেকে আবারো ফিরতে চাইনা এমন জিবনে যেখানে আমার কোনো মূল্য নেই ,যেখানে আছে শরীরের চাহিদা ।

আকস্মিক পেছন থেকে কেউ একজন কোমরে জড়িয়ে ধরে দুহাতে, থুতনি টা আরিয়ার ঘারে রাখে।
আরিয়া ভয়ে পেয়ে আ চিৎকার করতে গিয়েই চুপসে যায় যখন‌তার মাথায় আসে লোকটা আসলে কে হতে পারে , কিন্তু কথা হলো কখন আসলো ভেতরে? দরজার আওয়াজ পেলাম না যে ,হয়তো ভাবনার ডুবে ছিলাম তাই ।
কিন্তু ভয় হচ্ছে ভিষনভাবে নিশ্চিত এখন আমার দেখে নিবেন তারপর কুচি কুচি করে কেটে চিকেন ফ্রাই বানিয়ে ময়লার ঝুড়িতে ছুড়ে ফেলে দেবে । কথাটা ভেবেই আরিয়ার শরীর টা কাঁপতে থাকে ,
অথচ আফরান স্বাভাবিক ভাবেই বললো ,গোসল দিতে এতোসময় লাগলো কেনো? তুমি বুঝি এতো লেইট করেই উঠো? কখন থেকে উঠে অপেক্ষা করছি ।
আরিয়া একটু সাহস করেই বললো ,দেখুন অসভ্যতামী বন্ধ করুন এখান থেকে যেতে দিন আমায় ।
আফরান মৃদু হেসে আরিয়ার হাত থেকে ভেজা চুল গুলো ছাড়িয়ে আরিয়া কে ছেরে বিছানার উপর থেকে তোয়ালে টা নিয়ে এসে চুল মুছতে মুছতে বললো ,জানো শ্রাবনী ,তোমাকে লম্বা চুলে আরেকটু বেশিই সুন্দর লাগতো হয়তো। আর চুল কাটবে না আমাকে না বলে ওকে ।

আফরান এর মুখে শ্রাবনী শব্দ টা শুনে আরিয়ার যেনো বুক টা ফেটে যাবে এখনি এমন যন্ত্রণা হচ্ছে।
ইচ্ছে করে আরো কিছু জানার জন্য প্রশ্ন করে ,বিয়ে করবেন আমায় ?
আফরান চুল থেকে তোয়ালে টা সরিয়ে বললো , সন্দেহ আছে?
আরিয়া: অন্য মেয়েদের সাথেও নাইট ক্লাবে থাকবেন বিয়ের পর?
আফরান:হতেও পারে ,শিউর নই। কথা ইচ্ছে করেই আফরান বলেছে , একটু জ্বালাতে ইচ্ছে করছে তার আরুকে,কতোদিন পর এভাবে দেখছে হিসেব আছে এই মেয়ের? একটু তো শাস্তি পেতে হবে , ডিরেক্ট না পারলে অন্য ভাবে দিবো ,আপাতত রাগ করতে একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না আরুর উপর ।
আফরান এর এমন উত্তর পেয়ে কষ্ট হলো নাকি রাগ উঠলো ঠিক বুঝা গেলো না তবে দাত খিচে বলতে লাগলো ,তবে কেরেক্টার লেস ছেলেকে আমি কেনো বিয়ে করবো?
আফরান মৃদু হেসে বললো , জিজ্ঞেস করিনি জানিয়ে দিয়েছি শুধু।

আরিয়ার দুহাত মুঠো হয়ে আসে রাগে ,এখুনি হয়তো আফরানের নাক টা ফাটিয়ে দিবে ।🤦
আফরান আরিয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে আবারো শব্দ হীন ভাবে হেসে ডান হাত টা ধরে একহাতে তোয়ালে টা ছুড়ে বিছানার উপর ফেলে আরিয়া কে বললো,, হাসব্যান্ড কে খুব ভালোবাসবেন মনে হচ্ছে,জেলাসী ওয়াইফ ওয়াও , ইটস গুড ।
আরিয়া নিজেকে শান্ত রাখলো । আজ এই লোকটার স্পর্শে ততটা ঘৃনা নেই যতটা কথাগুলো শুনতে গা জ্বলে যাচ্ছে।
আফরান : চুপ করে আছেন কেনো? আচ্ছা কি খাবেন বলুন ।
আরিয়া বিড়বিড় করে বললো, আপনার মাথা খাবো , দেবেন কিনা সেটা বলুন । তারপর স্বাভাবিক ভাবে কিছু একটা বলতে যায় তার আগেই আফরান দুষ্টু হেসে বললো , আমার সব কিছুই আপনার জন্য ,আমিও চাই যা ইচ্ছা করুন তবে সেটা শুধুমাত্র আমার মধ্যে সীমাবদ্ধতা থাকতে হবে ।

আরিয়া এবার বলল,আমার ক্ষুধা পেয়েছে যেতে দিন আমায় ,আমি আমার বাড়ির নির্দিষ্ট সার্ভেন্ট দের রান্না ছাড়া অন্য কারো হাতের রান্না করা কিছু খেতে পারিনা ।আশা করি বুজতে পেরেছেন ।
আফরান আর কিছু না বলে আরিয়া কে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো ।
আরিয়া যেনো জানটা ফিরে পেলো কিন্তু উনি এতো কাছাকাছি এসেও কেনো তাকে দেখার জন্য কিছুই বলছে না? না দেখেই এতোটা দুর কিভাবে? অবশ্য উনার মতো মানুষের দ্বারা ভালো কিছু আশা করা যায় নাকি ।
কিছুক্ষণ পর আফরান ফিরে এসে আরিয়া কে খাটের উপর মাস।কি পরে শুয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে বললো ,নিজকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করেন মনে হচ্ছে,এটা ভালো জিনিস কিন্তু সব জায়গায় নয় ।
আরিয়া শুয়া থেকে লাফ মেরে উঠে বললো ,আবার এসে গেছেন ,বাহিরে কাজ নেই আপনার? বিজনেস সামলান কি করে?

আফরান:আপনাকে ভাবতে হবেনা বলে খাটের একপাশে বসে কিছু খাবার এগিয়ে দিয়ে বললো ,খেয়ে নিন আমি গেলাম তবে আপনার প্রবলেম না হলে থাকতে পারি ।
আরিয়া: এসব খাবো না,বাসায় যাবো ,যেতে দিন । আপনার কোনো ধারনা আছে কি? বাহিরে কি হচ্ছে? নিশ্চিত মেডিয়া পুলিশ সব একসাথে হয়েছে ,ভালো ভাবে বলছি যেতে দিন নয়তো একবার বেরোতে পারলে সব কিছু বলে দিবো ।
আফরান: চেষ্টা করে দেখতে পারো । বলে আফরান উঠে দাঁড়ালো। এগুলো খেয়ে নিও ,আর পাকামু করোনা কিছুতে বলে দিলাম ,নয়তো যেটুকু ক্ষমা করে দিয়েছি ঐসব টুকু মিলিয়ে শোধ করবো । বলে রুম ছাড়ে ।
আরিয়া আফরানের কথার মানে বুঝলো না । কিন্তু ব্যাবহার ভীষণ ভাবে ভাবিয়ে যাচ্ছে, আচ্ছা আমায় কি উনি কোনো ভাবে চিনতে পেরেছে? যদি চিনে তবে অবশ্যই এতোক্ষণে আমি বেঁচে থাকতাম না ,আর যদি নাই চিনে ব্যাবহার গুলো খুব গুলমেলে লাগছে কেনো?

আজকের ব্রেকিং নিউজ,এসকে কম্পানির সি ইউ রাত থেকে নিখোঁজ ,মেডিয়া তে সব জায়গায় এই একটাই হেডলাইন হয়েছে ।
সিইউ কি কোথাও গিয়েছে নাকি সত্যিই গুম করা হয়েছে তাকে?যদি তাই হয় তবে কে করতে পারে এমন কাজ?
নাবিল আর শবনম কে ঘুরেফিরে একই প্রশ্ন কখন থেকে করে যাচ্ছে সাংবাদিক রা । কিন্তু কোনো উত্তর দিতে পারছেনা কেউ তবে নাবিল জানিয়েছে ,যেই করে থাকুক এই কাজটা এটার শেষ দেখেই ছাড়বে ।
মুহুর্তে একটা গাড়ি এসে ব্রেক চাপে সামনে, বডিগার্ড রা নাবিল আর শবনম কে সাংবাদিক দের থেকে তাকে ছাড়িয়ে কোনো রকমে গাড়িতে উঠালো ।সাথে সাথে গাড়ি অনেক টা দুর চলে যায় আর মিডিয়ার লোকেরা তাদের মতো করে লাইভ জারি রেখে কথা বলেই যাচ্ছে একের পর এক ।

দুপুর থেকে ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে সময়টা বিকেল মাঝামাঝি সময় তাই বাড়ি টাও অন্ধকারে ছেয়ে আছে । আরিয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে এটা কিসের অশ্রু তার জানা নেই ,ব্যাথার? নাকি রাগের তারনায়? নাকি অন্য কিছু যেটা আরিয়ার নিজেরও জানা নেই ।
আর ভালো লাগছেনা তার তাই ভেতরে গিয়ে বসে হঠাৎ করেই একটা প্লেন বানায় । যেহেতু দুপুর বেলা আফরান খাবার দিয়ে গিয়ে আর একবারও আসেনি আরিয়ার বুজতে বাকি নেই আফরান বাড়ি নেই ,তাই নিজের প্লেন মতো মাস্ক আর কেপ টা পাশ থেকে নিয়ে দরজা টা জোড়ে জোড়ে ধাক্কাতে শুরু করলো কিন্তু এই ঝরের আওয়াজে তার আওয়াজ কি কেউ শুনবে? তাই অন্য কিছু দিয়ে জোড়ে আওয়াজ করতে হবে যেনো সার্ভেন্ট দের কান অবদি দরজার আওয়াজ যায় । রুমের চারদিকে একবার তাকিয়ে কিছু দেখলো না ,আসলে এই রুমটা সব সময় খালি থাকে , মানুষ নেই কাজেও লাগেনা তাই কারো এই রুমে আসার দরকার হয়না সেটা আরিয়া ভালো করেই জানে কিন্তু রুম গোছাতে সার্ভেন্ট রা তো আসে তবে আজ কেনো আসলো না? সেটা পরে ভাবা যাবে আগে কাজ টা শেষ করি ।

কিন্তু কিছু যে চোখেই পরছে না । তাই হাত দিয়েই জোড়ে জোড়ে আওয়াজ দিতে লাগলো । প্রায় অনেক ক্ষন এমন করে নিজেই হয়রান হয়ে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে আবারো কাঁদতে কাঁদতে বললো, প্লীজ কেউ তো দরজা টা খুলে দাও , আকস্মিক চমৎকার হলো ,ওপাশ থেকে কারো আওয়াজ শুনতে পেলো ,গলা টা শুনেই বুঝতে পারছে এটা আফরান নয় তাই দ্রুত দাঁড়িয়ে আবারো দরজা ধাক্কিয়ে বললো ,কেউ খুলে দাও দরজা টা ।
ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো ,ভেতরে কি আপনি আটকে আছেন নাকি?
আরিয়া বুজতে পারে আয়েশের গলা এটা । উত্তর দেয় ,হ্যাঁ প্লীজ দরজা টা ভেঙে ফেলুন আমি আটকে পরেছি , হেল্প প্লিজ।
আয়শ বুজতে পারছেনা বাড়িতে মেয়ে মানুষ আটকে আছে ,সামিরা প্রেমা তো সকালে চলে গিয়েছে ,আয়শ ও অফিসে গিয়েছিলো কিন্তু এমন বৃষ্টি দেখে জাফর সাহেব একা তাই চলে এসছে ,ভেতরে আসতেই একজন সার্ভেন্ট তাকে বললো উপরে এই রুম থেকে বারবার কিছুর আওয়াজে আসছে কিন্তু সকালে আফরান স্যার বলে গিয়েছে ঐ রুম আজ ক্লিন না করতে তাই আসেনি কেউ ।
আয়শ বুঝলো আফরান আবারো উল্টা পাল্টা কিছু করতে চাচ্ছে ।
আরিয়া: কি হলো দরজা টা ভেঙে ফেলুন প্লীজ আমাকে কিডন্যাপ করে এখানে নিয়ে এসেছে মি চৌধুরী।
আয়ের কিছু টা রাগ হয় ,বাড়িতেও এসব উল্টো পাল্টা বিষয় জড়ানোর দরকার কি , মানুষ মারা জন্য কি জায়গা নেই আর ।

– হ্যাঁ দেখছি আপনি একটু ওয়েট করুন ।
আয়শ আর একজন লোক মিলে দরজা ভাঙার জন্য টা
রাই করছে কিন্তু এতো সহজে ভাঙবে এমন দরজা কি তারা লাগিয়ে ছিলো নাকি । তবুও চেষ্টা তো করতে হবে এমন একজন ভেতরে অসহায় হয়ে পরে থাকবে চোখের সামনে ।
আফরানের সাথে যা হবার হোক তাতে কি । একজন মানুষ কে এভাবে আটকে রেখে ওর কি লাভ? সেটাই বুঝে আসেনা ।
এসব ভাবার মাঝেই সার্ভেন্ট বলে উঠলো ,স্যার বড় সাহেবের কাছে দো এই রুমের আলেদা চাবি আছে নিয়া আসি?
আয়শ:ওহ গড ,ভুলেই তো গিয়েছিলাম বাবার কাছে চাবি আছে ,
লোকটা দ্রুত পায়ে জাফরের কাছ থেকে চাবি নেওয়ার জন্য গেলো ,জাফর সাহেব চাবি কোথায় রেখেছে বলে দিয়েছে লোকটা সেই জায়গা খোঁজে কিন্তু চাবি তো‌ নেই । নিশ্চয়ই আফরান স্যার নিয়া গেছেগা বুজতে বাকি নেই লোকটার ও ।
খালি হাতে ফিরে আয়শকে বিষয়টা জানালে উপায় না পেলে আবারো দরজা টা সবটা শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিতেই খুলে যায় ।
আয়শ গিয়ে হুমড়ি খেয়ে আরিয়ার উপর পরে । আরিয়া দু কদম পিছিয়ে যায় । মুহূর্তে আবারো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

আয়শ আরিয়ার থেকে দুহাত দুরে দাঁড়িয়ে বললো ,আপনি ….
আরিয়া : আসলে আমাকে মি চৌধুরী আটকে রেখেছিল কাল ,এসকে গ্রুপের সিইউ।
আয়শ আজ ফোনে দেখেছে নিখোঁজ হওয়ার খবর , কিন্তু আফরান একটা মেয়েকে এভাবে আটকে রেখেছে কেনো ?
আরিয়ার শরীর কাঁপছে ভয়ে কখন আবার এসে যায় আফরান ,এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে থেকে দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে দৌড়ে নিচে বাড়ির গেইট পেরোয় ।
আয়শ শুধু হ্যাঁ হয়ে তাকিয়ে আছে । কিছুই বললো না এভাবে চলে গেলো । হয়তো আফরানের ভয়ে কিন্তু আমার মাথায় এটাই ঢুকছে না যে ,আফরান এই মেয়েটাকে কেনো আটকালো? কোনো মেয়ের সাথে বিজনেস নিয়ে ওর শত্রুতা আগে তো কখনো দেখেনি এমন ।

আরিয়া যাওয়ার ১০ থেকে পনেরো মিনিট পর আফরান বৃষ্টি তে ভিজে ছুপছুপ হয়ে দৌড়ে আয়েশের রুমে এসেই আয়শের কলার চেপে ধরলো ,চোখ জোড়ায় বিষাক্ততা প্রকাশ পাচ্ছে,হাতের রগ ঘারের মোটা রগ টাও ফুলে উঠেছে । দাঁতে দাঁত পিষিয়ে বলতে লাগলো ,দরজা খুলার রাইট তোকে কে দিয়েছে ? আজ যদি ওর কিছু হয়ে যায় আয়শ, তোকে আমি খুন করতেও সময় নিবো না ,যতটা ক্ষত ওর শরীরে আমি খুজে পাবো ঠিক ততটা ক্ষতই তোর শরীরে ফেরত দেবো ,যতফোটা রক্ত ওর শরীর থেকে পড়বে হাজার গুণ তোর শরীর থেকে ঝড়বে ,মাইন্ড ইট । কোন দিকে গিয়েছে ও? ফার্স্ট আনসার মি ।
আয়শ আফরানের কথার মানে কিছুই বুঝলো না তবে এতটুকু বুঝেছে মিস শ্রাবনী কে ছাড়িয়েছে সে তাই এমন করছে ।

-দেখ আফরান বিজনেস নিয়ে মেয়েদের সাথে তুই….
এটুকু বলতেই আফরান আয়শের গাল বরাবর ঘুষি মেরে বললো , আনসার মি ,সময় নেই আমার হাতে , ফার্স্ট । বলে আয়শ কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো , আনসার মি আয়শ ,
আফরান কে রাগতে দেখেছে কিন্তু কখনো এমন চেচাতে দেখেনি সে ,নরমাল বিষয় টাকে এমন ভাবে নিচ্ছে কেনো?
– আয়শ শান্ত গলায় বললো ,কি হয়েছে আগে বল এমন রেগে আছিস কেনো ?
– আফরান এবার আয়শের পেট বরাবর একটা লাথি বসিয়ে বললো ,বুঝে গেছি আমি তোকে তো পরে দেখে নিবো ,ছাড়বো না তোকে আয়শ ওর কিছু হয়ে গেলে ।
আফরান দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো সাথে সাথেই ।
আয়শ শুধু বোকার মতো তাকিয়ে আছে , কি হয়েছে ? এমন করছে কেনো ও ,ঐ মেয়ের কি হবে আবার? ঐ মেয়ের জন্য এমন করছে কেনো? আয়শের কেমন যেনো সন্দেহ হতে লাগলো , দুমিনিট চোখ বন্ধ করেই চার পার মিলাতে লাগলো , হঠাৎ করেই চোখ খুলে বলতে লাগলো ,ডেম ইট ,হাউ পসিবল ? ইটস রিয়েল ? মানে সামিরা যে বাবাকে বলতে শুনেছিলাম সকাল বেলা এটাই রিয়েল? ওহ মাই গড । এই জন্যই এমন করছে আফরান । কথাটা ভেবেই আয়শ নিজেও হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে গেলো ।

আরিয়া যেহেতু আসার সময় কিছুই নিয়ে আসেনি তাই দৌড়েই পালাচ্ছিলো,, কিন্তু আর পারছেনা তখন থেকে বৃষ্টি তে ভিজে ক্লান্ত হয়ে রাস্তার এক পাশে বসলো । বৃষ্টির সময় বিধায় হয়তো আশে পাশে দোকান একটাও খোলা নেই ,এমন ব্যবস্থা ও নেই যে গিয়ে একটু কল দেবে । হঠাৎ করে কয়টা লোক এপাশ দিয়েই যাচ্ছিলো ভিজে ভিজে হাতে কয়েকটা লাঠি ,ছুরি ,আবার একজনের হাতে বন্দুক ও আছে ,, কিন্তু একজন আরিয়ার দিকে ইশারা করে কি যেনো দেখালো ।
সব গুলো লোক আলিয়ার সামনে এসে বললো , তুই ঐ সিইউ তাইনা ।কিরে মেডাম এইডারে খুঁজতেই পাঠাইছিলো নারে?
পাশ থেকে একটা লোক বললো ,দেখে তো তাই মনে হইতাছে কিন্তু ছবিতে দো পেন শার্ট পরা দেখছিলাম ।
আরিয়া লোক গুলো কে দেখে বলতে লাগলো ,আপনারা কারা? এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? সামনে থেকে সরে যান ।

মি মাফিয়া পর্ব ৪৩ (২)

-তুই এসকে গ্রুপের সিইউ কিনা হেইডা কো।
-আপনারা জেনে কি করবেন ? দেখে তো একেকটাকে গুন্ডা মনে হচ্ছে ,চলে যান এখান থেকে নয়তো আমাকে আপনারা চিনেন না কি করতে পারি বলে দিলাম ।
-একটা লোক হাসতে হাসতে বললো , এইটুকু মেয়ে কি কয় শুনছস তোরা ,পেটের ভেতর যখন ছুরিটা বসবে তখন বুজবে আমাদের পাওয়ার ঐ মেয়ে । …….
তারপর…

মি মাফিয়া পর্ব ৪৫