আপনাতেই আমি পর্ব ৬৬

আপনাতেই আমি পর্ব ৬৬
ইশিকা ইসলাম ইশা

দেখতে দেখতে পার হয়েছে দুটো দিন,
দুটো দিনে তীব্রর বাসা সহ হসপিটালের সব কাজ রিদিকে করতে হয়েছে।এতো এতো ডঃ,স্টাফ থাকতে তীব্রর আশেপাশে সবসময় রিদিকে চাওয়াটা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।সবাই নিজেদের মধ্যে এটা নিয়ে আলোচনা করছে,কেউ কেউ আবার হিংসায় জ্বলছে!কারন সবাই চাই তীব্রর সান্নিধ্য।কেউ কেউ হয়তো তীব্রর মতো অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে কাজ করার সুযোগ চাইছে।আর কেউ কেউ হয়তো তার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চাইছে!! কিন্তু তীব্র কারো দিকে তাকানো তো দূর রিদি ছাড়া আশেপাশে কাউকেই এলাও করছে না।

এদিকে রিদি যত চাইছে সে দূরে থাকবে তীব্র তাকে তত বাধ্য করছে তার সাথে না চাইতেও আঠার মতো লেগে থাকার জন্য।কখনো মনসুর আলীর আদেশ, কখনো নীরের পরিবারের হুমকি দিয়ে।তবে একটা জিনিস খেয়াল করেছে রোজ এখন তাকে ছাড়াও তীব্রর কাছে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিচ্ছে। আর তীব্র ও যেন রোজের প্রতি অতিরিক্ত কেয়ারফুল।এটাই ভাবনার বিষয় রিদির কাছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রিদির ভাবনার মাঝেই টিভি অন করে নীর। উদ্দেশ্য এখন সে আর রোজ কাটূন দেখবে। এইটুকু মেয়ে ড্যাবড্যাব করে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকে গম্ভীর মুখে।যেন সে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দেখছে।মনোচ্যুত হলেই অঘটন ঘটে যাবে।রিদি সব ভেবে মৃদু হাসে। কিছু ফাইল দেখার জন্য সোফা থেকে উঠে রুমের দিকে যেতেই থেমে যায় রিদির পা। চট করে ঘুরে তাকাই টিভির দিকে। টিভিতে বড় বড় করে লেখা রয়েছে,
ব্রেকিং নিউজ!!! ব্রেকিং নিউজ !!!!সিটি হসপিটালের কর্মরত ডক্টর ফারুক হোসেনের মৃত্যুতে শোকহত হসপিটালের সকল মানুষ।কাল রাতে ট্যুর থেকে বাসায় ফেরার পথে এক্সিডেন্টে নিহত হন।
তবে বেরিয়ে আসেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ডক্টর ফারূক ছিল অত্যন্ত নোংরা আর লোভী একজন ডক্টর।তিনি নাকি শিশু পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত। ডেলিভারীর সময় তিনি মায়ের বুক থেকে তার সন্তান কে কেড়ে নেন। জীবিত সন্তান জন্ম দিলেও মৃত ঘোষণা করে সেই শিশু পাচার করে।

রিদির ভেতর ধকধক করছে। ডঃ ফারুক হোসেন ই তো তার ও ডেলিভারী করেছে।তবে কি??রিদির ভাবনার মাঝেই কলিং বেল বেজে ওঠে।নীর রোজ কে কোলে নিয়ে দরজা খুলতেই বাসায় ঢুকে তীব্র।মেয়ে কে দেখেই আগে কোলে তুলে নেয়। কলিজার টুকরা তার। তীব্র সামনে যেতেই রিদি কে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভু কুঁচকে তাকাল। দৃষ্টি অনুসরণ করে টিভির দিকে তাকিয়ে ব্যাপার টা বুঝতে পারল।
রিদি টিভি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তীব্রর দিকে তাকালো।ছলছল চোখে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইল তীব্রর দিকে। কাঁপা কাঁপা গলায় উচ্চারণ করল,
তবে কি আমার বাবু!নাকি আমি সত্যি মৃত সন্তান জ……..
তীব্র কিছু বলতে চেয়েও বলল না।রোজ কে রিদির কোলে তুলে দিতে দিতে বলল,
কিছু জিনিস আমরা কাছে রেখে দূরে খুজে বেড়ায়!
রিদি অবুঝের মতো তাকিয়ে রইল তীব্রর দিকে। তীব্র আর কথা বাড়ালো না।মেয়ে তার কাছে অথচ সে মেয়েকে খুঁজছে!সে বলবে না।খুজুক একটু!! অনেক ক্লু তো দিয়েছে!

ভোর পাঁচটায় এলামের আওয়াজ এ ঘুম ভাঙ্গে তীব্রর।এখন তার জগিং টাইম।উঠে লাইট অন করতেই চমকে উঠে তীব্র!!তার সামনে বেডে পাশে বসে আছে রিদি। লম্বা হাটু সমান খোলা চুল গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।গায়ের ওরনাও ঠিক ভাবে নাই। বিধ্বস্ত লাগছে রিদিকে। চোখ মুখ ফুলে গেছে। ‌মনে হচ্ছে অনেক কেঁদেছে।তীব্র ঘাবরে যায়। কিন্তু কিছু বলার আগেই রিদি ভাঙ্গা গলায় বলে,
“ও কি আমার মেয়ে তীব্র”
তীব্র ঘাড় ঘুরিয়ে বিছানায় শুইয়ে রাখা মেয়ের দিকে তাকালো!
ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে রিদিকে উঠিয়ে পাশে বসাল।কি অবস্থা করেছে কেঁদে কেঁদে। তীব্র চোখের পানি মুছিয়ে দিল।আর সাসপেন্স বাড়ালো না।অনেক কষ্ট দিয়েছে সে।রোজ তাদের মেয়ে এটা জানার অধিকার তার আছে। তাই সরাসরি বলল,

হ্যাঁ!!আমাদের মেয়ে !আমাদের!!
রিদি ডুকরে কেঁদে উঠলো।ঝট করেই জরিয়ে ধরলো তীব্র কে।তীব্র অবাক হল।রিদির জরিয়ে ধরাই যেন শরীর মৃদু কেপে উঠলো।কোই যখন সে নিজে থেকে রিদির কাছে যায় তখন তো এমন হয় না।বুকে ছেয়ে গেল শান্তির বাতাস।বুকে ধুকপুক শব্দটা জোড়াল হল।যেন শান্তি পেয়ে তারা জোরেই চলছে। তীব্র দুহাতে রিদিকে জড়িয়ে ধরে আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল।রিদি কাঁদছে!!জোরেই কাঁদছে!!চোখের পানিতে ভিজিয়ে ফেলেছে শার্ট।তবে তীব্র আজকে থামাচ্ছে না। কাঁদতে দিচ্ছে।কাদুক!!!!
কিছুক্ষণ পর রিদি তীব্রর বুক থেকে মুখ তুলে তাকাল তীব্রর দিকে।
আপনি জানতেন রোজ আমাদের মেয়ে!!!
তীব্র রিদির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
জানতাম!!!

রিদি অবাক হয়ে বলল,
রোজ কোথায় ছিল এতো দিন??ওকে কি শিশু পাচারকারী……
তীব্র একটু থেমে বলল,
কিছুটা তেমন ই!!!তবে ব্যাতিক্রম কিছু আছে!!
রিদি অবাক হয়ে বলল,
মানে!!
তীব্র ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলল,
আমার উপর ভরসা আছে??
রিদি কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল তীব্রর দিকে!চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো সেদিনের কথা ভেবে।হুট করে তীবকে ছাড়াতে চাইলে তীব্র আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে!!
ছাড়ুন!!!
তীব্র হাতের বাঁধন টাইট করে বলে,
ছাড়তে পারলে তো ছেড়েই দিতাম জান!!
রিদি অভিমানী গলায় বলল,
ছেড়েই তো দিয়েছেন!!
তীব্র বাঁকা হাসল।তার অভিমানিনী,
ভালোবাসি!!

রিদি থমকে গেল। কতদিন!! কতদিন পর এই শব্দটা শুনতে পেল।চার অক্ষরের একটা শব্দে কি আছে কে জানে!! কিন্তু রিদির কাছে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মধুর শব্দ।রিদিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে তীব্র আবারো হাসল। দুহাতে রিদির মুখটা নিয়ে কপালে চুমু খেল। রিদি আবেগে চোখ বন্ধ করে নিল।চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু কনা।তীব্র কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ের রইল।এরপর ডানগালে শব্দ করে চুমু খেয়ে বাম গালেও খেল।নাকের ডগায় ঠোঁট ছুঁইয়ে থুতনিতে নেমে এলো। জলধারায় ভর্তি চোখের পাতায় চুমু দিতেই রিদি শক্ত করে মুঠোয় ধরল তীব্রর শার্ট। তীব্রর দিকে তাকিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বলল,
“আপনি আমার তাই না ”

রিদির বাচ্চাদের মতো প্রশ্নে তীব্র বাঁকা হাসল,
মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝাল!!!
রিদি আবারো একই সুরে বলল,
আপনি আর রোজ দুইজনেই আমার তাই না!!
তীব্র রিদির গলায় মুখ গুঁজে ফিসফিস করে বলল,
জান!!
রিদি কেঁপে উঠলো। কাঁপা কাঁপা হাতে পিঠের শার্ট আকরে ধরল। তীব্র গলায় বাইট দিতেই রিদি কিছুটা চেঁচিয়ে উঠতৈই রোজ কেঁদে উঠল।রিদি ঝট করে তীব্র কে সরিয়ে রোজ কে কোলে তুলে নিল।পুরো মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিল।হাত, পায়ে ও চুমু দিল
তীব্র অসহায় মুখে বলল,
এটা কোন সময় উঠার!!!

আপনাতেই আমি পর্ব ৬৫

রিদি তীব্রর কথায় ফিক করে হেসে উঠল।রোজ ড্যাবড্যাব করে তাকালো মায়ের দিকে।যেন মায়ের হাসিতে সে মুগ্ধ। তীব্র হাত বাড়িয়ে টেনে আনল নিজের কোলে দুইজনকে।রিদিকে উল্টা বসিয়ে কাধে থুতনি রেখে বলল,
আমার পৃথিবী! সবচেয়ে সুন্দর!!!

আপনাতেই আমি পর্ব ৬৭